চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৪৬

0
310

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৪৬

🍂🍂🍂

~এতো তাড়াহুড়া ঠিক হচ্ছে না আহনাফ। ফুপির মৃত্যুর বেশি সময় হয়নি। আর তুই বিয়ের কথা….

~তো তুই কি চাইছিস? আমি এভাবেই শুভ্রতাকে হারিয়ে ফেলি? সময় যত যাচ্ছে, ও ততই এক পা দু পা করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। বিয়ে ছাড়া তো ওর লাশের সামনে দাড়ানোর অধিকারটাও আমার থাকবে না অরণ্য। কিন্তু ও তো আমার, তাই না! তবুও কোন অধিকারে ওর লাশের সামনে দাঁড়াবো আমি? কোন অধিকারে দুনিয়ার সামনে বলবো এই মেয়েটা আমার, এই মেয়েটার ওপর পৃথিবীর সবার থেকে বেশি আমার অধিকার। বান্দা দূরে থাক, আমার আল্লাহও এটা মানবেন না অরন্য।

ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগলো চন্দ্র। অরণ্য আর অর্ণব নিরব দৃষ্টিতে তার দিকেই চেয়ে। অরণ্য চন্দ্রের কাঁধ চাপড়ে বললো,

~চিন্তা করিস না।

চন্দ্র উঠে দাড়ালো। বললেই তো আর চিন্তা কমে না। সে শুভ্রতাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। এই চিন্তার থেকে ভালো হতো সে যদি শুভ্রতার মায়ায় না জড়াতো। মায়া খুব খারাপ জিনিস। না দেয় শান্তিতে বাঁচতে আর না দেয় শান্তির মৃত্যু। এই মায়ায় না জড়ালে অন্তত ভালোবাসাকে হারানোর ভয় থাকতো না। চন্দ্র যাওয়ার আগে বললো,

~তুই না থাকলেও বিয়েটা হবে অরণ্য। বিয়েতে থাকবি নাকি না তা নিতান্তই তোর ব্যাপার।

নির্মল চোখে অরণ্য চেয়ে রইলো দরজার দিকে। কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত কিছুই বুঝতে পারছে না সে।

~তুই কিছু বলবি না? (অরণ্য)
~যা হচ্ছে হতে দাও ভাইয়া। আমি সব ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ যা ভালো মনে করেন। (অর্ণব)

🍂বর্তমান🍂

~তারপর? (নুর)

অর্ণব হাসলো। তরীকে কোলে তুলে নিয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বললো,

~আহনাফ নিজের কথা রেখেছে। ভালোবাসা তার এতই গভীর ছিলো যে পেছন পেছন কবরেও চলে গেছে। এখনও তারা এক সাথেই আছে।
____________________________________

ঘুমানোর চেষ্টা করছে নুর। ঘুম আসছে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এক মাত্র রূপার জন্যেই আজ তাদের বন্ধুত্বের এই অবস্থা। আদৌ কি শুধু রূপার দোষ ছিলো? এত চিন্তা করতে করতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে শুভ্রতার ডায়েরি নিয়ে বসলো। যেখানে শেষ করেছিল, সেখান থেকেই পড়তে শুরু করলো,

~হাসপাতালের করিডোরে বসে আছি। হাতে রিপোর্ট। রিপোর্টে কি আছে জানি না। মিনিট খানেক এর মধ্যেই হয়তো ডাক্তারের কেবিনে যাওয়ার জন্য আমার নাম ডাকবে। রিপোর্টটা কি ভালো আসবে? আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে খুবই খারাপ সংবাদ শুনবো আজ। বাড়িতে মিথ্যা বলে এসেছি। কেউ জানে না হাসপাতালে এসেছি। আজকাল কেমন নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলতে শিখে যাচ্ছি আমি। কারো চোখে সন্দেহের রেশ মাত্র দেখা যায় না। মিথ্যা তো চোখের দিকে তাকিয়ে কেউ বলতে পারে না, বলা উচিতও না। অথচ এই অনুচিত কাজটা আমি দিনে বহুবার করি। কি অদ্ভুত!

🍂অতীত🍂

শুভ্রতার ডাক পড়তেই হকচকিয়ে তাকালো সে। গভীর চিন্তার মধ্যে থেকে কেউ যেনো আচমকাই তাকে টেনে বের করেছে। তার নাম ডাকা মেয়েটাও অবাক নয়নে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা সেদিকে মাথা না ঘামিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো কেবিনে। ডাক্টার মিজান তাকে দেখেই মুচকি হাসলো। বিনিময়ে শুভ্রতাও হাসার চেষ্টা করলো। তবে শুভ্রতার মনে হলো সে জোর করেও হাসতে পারছে না।

🍂বর্তমান🍂

জানালার কাছে থাকা গ্লাসটা পড়ে যেতেই লাফিয়ে উঠলো নুর। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সেদিকে তাকালো। বাইরে ঝড় শুরু হয়েছে। বাতাসে তার গা হিম হয়ে লাগলো। সে তড়িৎ গতিতে জানালা লাগলো। ভাঙ্গা গ্লাসের টুকরা গুলোর দিকে নজর পড়তেই বুক চিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। ঘর পরিষ্কার করে পুনরায় বসলো ডায়েরি নিয়ে। মনে মনে ঠিক করলো, আজ সম্পূর্ণ ডায়েরি পড়ে তবেই ঘুমাবে।

~মাথাটা ভনভন করছে। একটু আগেই ডাক্তার জানালো আমার নাকি ক্যান্সার হয়েছে। তাও লাস্ট স্টেজ। বাঁচার কোনো উপায় নেই। চিকিৎসা করলে নাকি দীর্ঘদিন বাঁচবো। তবে ঠিক কত দিন জানা নেই। চন্দ্র তো গতকাল বিয়ের কথা বললো আমাকে। এ যেনো নতুন জীবনের সূচনা। কিন্তু আমি তো ওকে ঠকাতে পারবো না। তাই ভেবেছিলাম আগে নিজের চিকিৎসা করাই তারপর বিয়ে। কিন্তু বুঝতে পারিনি এমন খবর জানতে পারবো। আমি কি করবো? নুরকে জানাতে ইচ্ছা করছে। ওর সাথে কথা বললে যেনো হাজার চিন্তা কমে যেতো আমার। অনেকবার কল দিলাম, ধরলো না। মেসেজ দিলাম ১৩ টা, দেখলো না। কি এতো রাগ আমার প্রতি? তার রাগ কি কখনো ভাঙবে না? মৃত্যুর আগে কি একবার তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে না?

🍂অতীত🍂

গাড়ি থামলো তিলোত্তমার বাড়ির সামনে। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুললো তিলোত্তমার মা। শুভ্রতাকে দেখতেই তার মুখভঙ্গির পরিবর্তন ঘটলো। চিন্তা উড়ে গিয়ে মুখে ফুটে উঠলো স্বস্তির হাসি। শুভ্রতাকে টেনে বাড়িতে ঢুকাতেই শুভ্রতা হাসলো। শুভ্রতার প্রশ্নের আগেই তিলোত্তমার মা জানালো,

~এতক্ষণে এলি! উপরে যা। তোর তিলো অপেক্ষা করছে উপরের ঘরে।

তিলোত্তমার ঘরের দিকে চেয়ে ফিসফিস করে বললো,

~বেজায় রেগে আছে আজ। সাবধানে যাস। আমি কাচের জিনিস সব নিয়ে এসেছি। তবুও বলা যায় না কখন কি ছুঁড়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়।

শুভ্রতা সিড়ি ভেঙে তিলোত্তমার ঘরে এলো। শুভ্রতার দিকে তিলোত্তমা শুধু একবার তাকালো, কোনো কথা বললো না। মনোযোগ স্থির করলো ফোনের স্ক্রীনে। শুভ্রতা আরাম করে বিছানায় বসলো। আবার উঠে চলে এলো বারান্দায়। সে জানে তিলোত্তমা কাকে মেসেজ করছে। বাগানে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগিয়েছে তিলোত্তমা। চোখ পড়লো নতুন এক গাছের দিকে। এই গাছটাকে সে এর আগে এখানে দেখেনি। বুঝতে পারলো তিলোত্তমার বাগানের নতুন সদস্য এটা। একটা গোলাপ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে ঘরে এলো শুভ্রতা। প্রতিবারের মত শুভ্রতা কানে তিলোত্তমার বাগানের ফুল গুঁজে দাড়িয়ে আছে দেখে রাগ করলো না। সে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

~কোথায় গিয়েছিলি?

শুভ্রতা টেবিলের কাছ থেকে চেয়ার টেনে বসলো। মুচকি হেসে বললো,

~এমনি, ঘুরতে।
~বাড়িতে কাউকে জানাসনি কেনো?
~এখন কি সবাইকে কৈফিয়ত দিয়ে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া লাগবে নাকি? মা থাকতেও তো কখনো কৈফিয়ত দেইনি।
~আন্টি নেই বলেই চিন্তা বেশি। আন্টি থাকতে উনিই তোর খেয়াল রাখতো। আর এখন….
~আমি ছোট না তিলো। আমার জন্য কারো চিন্তা আমি করতে বলছি না। অযথা আমার পিছন কাউকে সময় নষ্টও করতে বলছি না।

কন্ঠে গম্ভীর ভাব স্পষ্ট। তিলোত্তমা হকচকালো। অবাক হয়ে বললো,

~এভাবে কথা বলছিস কেন?

শুভ্রতার চাহনি দৃঢ় হলো। কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। অনেকক্ষণ পর শুভ্রতা মুখ খুললো। তার অভিব্যক্তি দেখেই তিলোত্তমা বুঝেছে সে এতক্ষণ নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টায় ছিলো। এবারে শুভ্রতার কন্ঠ শান্ত, শীতল।

~আমি এডাল্ট, যথেষ্ট ম্যাচিউর। অকৈতব মনে, কোনো রকম চাওয়া পাওয়া ছাড়াই কিছু মানুষ আমার পেছনে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। ব্যাপারটা আমার ভালো লাগছে না। আমি চাই তারা বাঁচুক, নিজের মতো করে বাঁচুক। আমার পেছনে সময় নষ্ট না করুক, আমায় নিয়ে চিন্তিত না হোক।

শুভ্রতা একটু থামলো। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট অনুভব করলো। শুকনো ঢোক গিলে এলোমেলো চোখে এদিক সেদিক তাকালো। তারপর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পুনরায় বললো,

~তুই যে একটু আগে চন্দ্রকে মেসেজ করে জানালি আমি এখানে ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি। আমি কারো বন্দিনী নই। মানুষটার নিজস্ব একটা জীবন আছে সেটা তোর, আমার বুঝা উচিত। আমার পেছনে ছুটে কোনোরূপ লাভ নেই।

~কিন্তু ভাইয়া যে তোকে ভালোবাসে?

শুভ্রতা জবাব দিতে পারলো না। দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হতেই সেদিকে ভড়কে তাকালো দুজনে। চন্দ্র দাড়িয়ে হাপাচ্ছে। যেনো অনেকটাই পথ দৌড়ে এসেছে। কাতর দৃষ্টি শুভ্রতার দিকে। অপেক্ষা শুধু ঘরে ঢুকার অনুমতির।

~দাড়িয়ে আছেন কেনো ভাইয়া? আসু…

চন্দ্র এক ছুটে শুভ্রতার কাছে এলো। সম্পূর্ণ বাক্য বলে উঠতে পারলো না তিলোত্তমা। চন্দ্র শুভ্রতার হাত, কপাল চেক করতে করতে বলল,

~ঠিক আছো তুমি? ব্যাথা পাওনি তো কোথাও? কোথায় গিয়েছিলে তুমি? কতটা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি, জানো তুমি? কত জায়গায় খুঁজেছি তোমায়। কোথায় গিয়েছিলে হ্যা? আমাকে বলে যাওয়া উচিত ছিল তোমার। যদি কিছু হয়ে যেতো?

চন্দ্র অবিরত কথা বলেই যাচ্ছে। শুভ্রতা নিশ্চুপ হয়ে চেয়ে আছে চন্দ্রের গায়ে লেগে থাকা রক্তের দিকে। চন্দ্রের কপালে কিঞ্চিৎ রক্ত লেগে আছে। কপাল থেকে চোখ সরিয়ে নজর বুলালো হাত আর গলায়। ঘাড় আর কান বেয়ে রক্ত পড়ছে, কিছুটা শুকিয়েও গেছে। শুভ্রতা আতঙ্কিত হয়ে কাঁটা স্থান ছুঁয়ে দিতেই চন্দ্র চোখ চেপে, দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো।

~এই জখম? এসব কি করে হলো?

চন্দ্র সহ্য করতে না পারে তার হাত আস্তে করে সরিয়ে নিলো।

~সেসব কথা রাখো। কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
~আমার কথা পরে শুনলেও হবে চন্দ্র। আপনার গায়ে এই জখম কি করে এলো?

~আহনাফ ভাই মাহতাব আপনার সঙ্গে কথা বলবে।

চন্দ্র হাত বাড়াতে নিলে বাধা দিলো শুভ্রতা। ধীর কন্ঠে বলল,
~ফোন লাউড স্পিকারে দে।

~ভাইয়া তুমি ঠিক আছো? ওমর বললো তোমার নাকি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে আর অনেকটাই আঘাত পেয়েছো? আমি কি তোমাকে নিতে আসবো?
~না, দশ মিনিটের মধ্যে তোর বউয়ের বাড়ির সামনে গাড়ি পাঠা।

কল কেটে চন্দ্র চুপ করে রইলো। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করলো শুভ্রতার ধমকানি শুনার জন্য। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে শুভ্রতা কিছুই বললো না তাকে। কি করে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তাও জিজ্ঞেস করলো না। গাড়ি আসতেই চুপচাপ চন্দ্রকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়িতে উঠার আগে শুধু একবার তিলোত্তমাকে বলেছে,

~সময় হলে বাসায় আসিস। জরুরি কথা আছে।

তিলোত্তমা ঘাড় কাত করে সম্মতি দিতেই আর সেখানে দাড়ায়নি শুভ্রতা। সারা রাস্তায় নিশ্চুপ ছিলো। চন্দ্রের সাথেও কোনোরূপ কথা বলেনি।
___________________________________

সন্ধায় শুভ্রতার বাড়ি এলো চিত্রা আর রাত্রি। চিত্রাদের আসার খবর পেতেই ড্রয়িং রুমে আসে শুভ্রতা। শুভ্রতা এসে সামনে বসলেও চিত্রা গম্ভীর মুখে বসে থাকে। রাত্রি ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে। শুভ্রতা চোখ পিটপিট করে তাকায়।

~বিয়েতে মানা করলি কেনো শুভ্রতা? আমার ছেলেকে কি তোর পছন্দ না?

শুভ্রতা জবাব দিতে একটু সময় নেয়। কি বলবে তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় আছে সে। জবাব দেওয়ার জন্য মুখ খুলতে নিতেই চিত্রা সাবধানবাণী শুধায়,

~জবাবে যেনো বিন্দু মাত্র মিথ্যার ছোঁয়া না থাকে।

শুভ্রতা একবার রান্না ঘরের দিকে তাকায়। তার ভয় যেকোনো সময় রেনু চলে আসবে। রেনু শুনতে পেলে সবাই জেনে যাবে। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল পড়বে আবারো। শুভ্রতা নিজেকে বুঝালো। একদিন না একদিন সবাই জানতে পারবে। লুকিয়ে লাভ নেই। শুভ্রতা উঠে চিত্রার পাশে বসলো। ডান হাতটা নিলো নিজ হাতের মুঠোয়। বহু কষ্টে সাহস যুগিয়ে বলতে লাগলো,

~চন্দ্র খুব ভালো মানুষ। তাকে আমারও ভীষণ পছন্দ।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে নিলে শুভ্রতা বললো,

~আমার সম্পূর্ণ কথাটা আগে শুনুন প্লীজ। সে ভালো মানুষ। যেকোনো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষের স্থানে সে নির্দ্বিধায় জায়গা করে নিতে পারবে। তার মতো মানুষকে নিজের স্বামী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

শুভ্রতা দম ছাড়লো। কথাগুলো যেনো গলায় আটকে আসছে। লম্বা শ্বাস নিয়ে শুভ্রতা ফের বললো,

~সে যেমন মানুষ, তার জন্যও তেমনি মেয়ে খুজে আনা উচিত। আমি তার জন্য সঠিক না। বিয়ে মানেই তো সারাজীবন এক সাথে থাকা। কিন্তু আমার জীবনকাল খুবই সীমিত।

~মানে? (রাত্রি)

শুভ্রতার গলা ধরে এলো। উত্তর কি দিবে তা নিয়ে সে প্রচন্ড দ্বিধায় পড়লো। ঠোঁট কামড়ে বসে রইলো কয়েক সেকেন্ড। অতঃপর সাহস যুগিয়ে অকপটে জবাব দিলো,
~আমার ক্যান্সার হয়েছে, লাস্ট স্টেজ।

বিস্ময়ে চিত্রা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো। শুভ্রতা ছাড়লো না। আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরলো। শুভ্রতার চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি চিত্রার হাতে পড়লো। চিত্রার আর রাত্রির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছে। কি রিয়েক্ট করবে বুঝে উঠতে পারছে না। মস্তিষ্ক যেনো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

~আমি কতদিন বাঁচবো জানি না। হয়তো ১-১.৫ বছর, হয়তো কয়েক মাস, হয়তো ২/১ সপ্তাহ, আবার হয়তো আজই। নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আপনাদের সাথে নিজের জীবন জড়ানোর মত সাহস আমার নেই। চন্দ্র আমাকে খুব ভালোবাসে আমি জানি। কিন্তু…
~কিন্তু? (রাত্রি)
~বিয়ের আগে আমার মৃত্যু হলে উনি হয়তো এই কষ্ট মানিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু বিয়ের পর হলে উনি হয়তো মানতে পারবেন না।

~আমার ছেলেটা তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না শুভ্রতা। ও তোর স্মৃতি নিয়েই সারাজীবন পার করে দিতে পারবে। তুই আমার ছেলেকে এভাবে ফিরিয়ে দিস না।
~এই জন্যই বিয়ে থেকে মানা করেছি আমি। হয়তো এই জিদ ধরেই ভুলে যাবে আমাকে। মায়া কেটে যাবে আমার থেকে। আমি চাই না চন্দ্র আমার স্মৃতি ধরে সারাজীবন একাকীত্বে পার করুক।

শুভ্রতা উঠে দাড়ালো। চোখের পানি মুছে বললো,

~আমার ক্যান্সার এর কথাটা আপাতত কাউকে বলবেন না প্লীজ। বিশেষ করে চন্দ্রকে বলবেন না। সে ভেঙে পড়বে। আমার এই অবস্থা শুনলে হয়তো বিয়ের জন্য আরো পাগলামি করবে। আপনারা ওনাকে বুঝিয়ে ভালো একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন।

শুভ্রতা যেতেই কল কাটলো চন্দ্র। ফোনের দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো রাত্রি। পাশেই চিত্রা মুখ চেপে কান্না করছেন। মায়ের কান্নায় তার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হচ্ছে। কল এ থেকে সব কথা শুনে হয়তো ওখানে তার ভাইটাও কান্না করছে। রাত্রির একবার মন চাইলো ভাইকে কল দিয়ে তার কান্নার আওয়াজ শুনতে। ছোট থেকে কখনোই ভাইকে কাঁদতে দেখেনি সে। ভাই যে কান্না করতে পারে, সেও যে মানুষ এই কথাটা প্রায় সময়ই ভুলে যায় রাত্রি। কারণও তাই। ভাইকে কখনো কাঁদতে দেখেনি রাত্রি।
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here