#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৬
.
.
🌸
এই হানে তো এই ভাঙ্গা বাড়িডা ছাড়া আর কোন বাড়ি নাই৷ আর এই বাড়িডা তো দেইখা মনে হয়না কোন মানুষজন থাকে৷” ফারহার চোখে মুখে অদ্ভুত হাসি খেলে উঠলো রিকশাচালকের কথা শুনে৷ রিক্সাচালক ফারহার হাসির মানে বুঝতে না পেরে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারহা ভাঙ্গা বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেল৷
৯.
মেঘ নিজের রাগটা দমন করে থানায় চলে গেল৷ থানায় ঢুকতেই মেঘের ফোনটা বেজে ওঠে৷ মেঘ কল রিসিভ করে হ্যালো বলতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,” স্যার ম্যাম কিছুক্ষণ আগে একটা ভাঙ্গা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল৷”
” ওই বাড়িটা কার? ”
” স্যার ওই বাড়িটা কার জানি না তবে এই ওই বাড়িটা ভাঙ্গা অবস্থায় আছে প্রায় পাঁচ বছর৷”
” আমি আসছি ৷”
” ওকে স্যার আমি লোকেশন সেন্ড করছি৷”
মেঘ থানা থেকে বের হয়ে তার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে৷
প্রচন্ড রেগে আছে ফারহা ধাড়ালো ছুড়ি হাতে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাড়িয়ে থাকা দু’জন ব্যক্তির দিকে৷ লোক দুটো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে৷ প্রচন্ড ভয়ে মুখ থেকে একটা শব্দ বের হচ্ছে না কারোর৷ ফারহা প্রচন্ড জোড়ে টেবিলের উপর ছুড়িটা গেঁথে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো,” তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার? আন্সার মি ড্যাম ইট৷”
” মা,, মানে ম্যাম আমরা আপনার কথা মত কাজ করতে ছেলে গুলো তাদের বসের নামটাও বলে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তার আগে জনি নামের ছেলেটি হুট করে ছুড়ি নিয়ে তার বন্ধুদের গলা কেটে দেয় আর তারপর নিজের গলা কেটে ফেলে৷ এত দ্রুত এই সব হয়েছে যে আমরা কিছু করতে গিয়েও করতে পারি নি৷ আই এম সরি ম্যাম৷”
ফারহার মাথায় যেন আগুন জ্বলছে৷ ছেলে গুলোকে কঠিন শাস্তি দিতে চেয়েছিলো ফারহা কিন্তু তা হয়ে উঠেনি যখন তখন না হয় তাদের বসকে ধরে সে স্বাদ পূর্ণ করবে৷ এটা ভেবে ফারহার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো৷ ফারহা ছুড়িটা হাতে নিয়ে ছেলে গুলোর সাথে ঠিক কি কি হয়েছিলো তা সি সি ক্যামেরার ফুটেজে দেখতে লাগলো ফারহা৷ ফারহা পুরো ভিডিও টা দেখে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,” নেক্সট প্লান আজকের মধ্যে এক্সিকিউট হওয়া চাই গট ইট৷”
” ইয়েস ম্যাম৷” এক সাথে লোক দুটো বলে উঠলো৷ ফারহা উঠে যেতে নিবে তৎক্ষনাৎ ফারহার ফোনে একটা মেসেজ আসে৷ ফারহা মেসেজটা অপেন করে দেখতে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো,” মিস্টার মেঘ চৌধুরী কাজটা মটেও ভালো করলে না৷ এর পরিনাম তোমাকে ভুগতে হবে৷” কথাটা বলে লোক দুটোর উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো, তোমরা বাকি টিম মেম্বারদের জানিয়ে দিবে দুদিন যেন তারা কেউ কোন প্রজেক্টে হাত না দেয় আর বাইরে যেন বার না হয়৷ আর তোমরা আজকের দিন এখানে থাকবে আর বাকি প্লান এখান থেকে করা হবে বাইরে বের হবে না৷”
ফারহার কথা শুনে দুজনে সম্মতি জানায়৷ ফারহা খুব সাবধানে সিড়ি দিয়ে উঠে দেওয়ালে থাকা সুইচের বাটনে টাচ করতে উপরের দরজাটি খুলে যায়৷ এদিকে মেঘ সেই ভাঙ্গা বাড়ি তন্যতন্য করে খুঁজেও ফারহার দেখা পায়নি৷ চারিদিকে শুধু বাড়িটির ধ্বংসাবশেষ এখানে কোন মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত নেই৷ সেখানে ফারহাকে খুজে পাবে কি করে মেঘ? মেঘের প্রচন্ড রাগ হলো তার ইনফরমারের উপর৷ মেঘের ধারণা তার লোক তাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছে৷ ফারহাকে না পেয়ে মেঘ ভাঙ্গা বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে যেতে ফারহা বেড়িয়ে আসে৷ আড়ালে দাড়িয়ে মেঘকে রেগে চলে যেতে দেখে রহস্যময়ী হাসি হাসলো ফারহা৷ এই রহস্যময় হাসির রহস্য আদৌ কি মেঘ উদঘাটন করতে পারবে? নাকি সেটা অধরাই থেকে যাবে?
মেঘ থানায় না গিয়ে বাড়িতে চলে যায়৷ মাথা আজ প্রচন্ড গরম৷ প্রথমত ফারহা তাকে রিজেক্ট করেছে আর দ্বিতীয়তঃ তার ইনফরমারের ভুল ইনফরমেশন৷ দুটো বিষয়ে মেঘ আজ চরম বিরক্ত৷ এদিকে বেলা আজ কলেজ থেকে দ্রুত ফিরে এসেছে কারণ আজ তার বাবা মা দেশে ফিরছে৷ ফ্রেস হয়ে বেলা মেঘের রুমে যেতে দেখে রুমের জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ বেলার ধারণা তার হান্ডসাম দাভাইয়ের মন খারাপ নয়তো এভাবে রুমের জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো না৷ মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেলাকে দেখে নরমাল গলায় বলে উঠলো ,” কি বেপার তুই এখন বাড়িতে? তোর না কলেজ আছে?”
বেলা জিনিসপত্র ঠিক জায়গায় রাখতে রাখতে বলতে লাগলো,” আজ মম ড্যাড আসছে৷ বড় বাবা আমাকে আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছে৷”
” ওহ”
বেলা মেঘের সামনে গিয়ে চোখে মুখে সন্ধেহের ছাপ নিয়ে মেঘকে প্রশ্ন করে৷”হ্যাঁ রে দাভাই সত্যি করে বলতো তোর কি হয়েছে? আমার মনে হচ্ছে তোর কিছু একটা হয়েছে৷”
মেঘ বেলার চুল ধরে সাইডে সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল সেট করতে করতে বলতে লাগলো,” ফারহা আজ আমায় রিজেক্ট করেছে৷” কথাটা বেলার কর্ণগোচর হতে বিস্ময়ের চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইল৷ আয়নায় বেলাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ ভ্রু-জোড়া কুচকে জানতে চাইলো৷” কি বেপার তুই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন? তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই কোন এলিয়েনকে দেখছিস৷”
“দাভাই তুই তার থেকে কোন অংশে কম না৷ যেখানে ভাবি তোকে রিজেক্ট করলো সেখানে তুই এত শান্ত কি করে?”
” তো আমার এখন কি করা উচিত শুনি?”
” বেশি কিছু না মুখে দেবদাস ভাব ফুটিয়ে কেঁদে কুদেঁ একাকার করবি৷ ভাংচুর করবি, মদ খাবি, পাগলের মত বিহেব করবি৷ আর নিজেকে একটা রুমে বন্দি করে রাখবি৷” মেঘ বেলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” তুই কি ইদানিং বাংলা সিনেমা খুব বেশি দেখছিস?” মেঘের এমন প্রশ্ন শুনে বেলা হাসার চেষ্টা করে বলল,” কেন দাভাই আমি কি কিছু ভুল বললাম? আমি তো দেখেছি সিনেমায় প্রেমে ছ্যা’কা খেয়ে হিরোরা এমনটাই করে৷” মেঘ আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না পেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটিয়ে পড়লো৷ বেলা তার এমন পাগলের মত হাসির কারণটা বুঝতে না পেরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে৷ কিছুক্ষণ পর মেঘ হাসি থামিয়ে বেলার কাছে এসে বেলার মাথায় হাত রেখে বললো “শোন বেলুন ফারহা হ্যাঁ বলুক বা না বলুক ফারহাকে তো আমার হতেই হবে৷ আমি কোন সিনেমার হিরো নই যে হিরোইন প্রপোজাল এক্সেপ্ট না করায় কেঁদে কুটে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো৷ মেঘ চৌধুরী খুব ভালো করেই জানে তার ভালোবাসার মানুষকে কি করে নিজের করে নিতে হয়৷ শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা৷ আমি তাড়াহুড়ো করে কিছু করতে চাইছি না৷”
” তারমানে রাফিদের বোন আমার ভাবী হচ্ছে এটা কনফার্ম?”
” হান্ড্রেড পার্সেন্ট৷”
মেঘ আর বেলার মাঝখানে হঠাৎ দুজনেরই ডাক পড়ে নিচে যাওয়ার জন্য।বেলা সিড়ি দিয়ে দ্রুত নামছে পিছনে মেঘ।বেলা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তা মম-ড্যাড ভেতরে ঢুকছে।বেলা এক্সাইটেড হয়ে তার ড্যাড শাহিন চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ড্যাড কেমন আছো তুমি?জানো কত মিস করেছি তোমাকে?”
“আই এম ফাইন এন্ড আই মিস ইউ টু মাই প্রিন্সেস।”পাশ থেকে বেলার মম মিরা চৌধুরী বলে উঠলো,”শুধু ড্যাডকেই মিস করেছো আমাকে করোনি?”বেলা তার ড্যাডকে ছেড়ে দিয়ে তার মমকেও জড়িয়ে ধরে বললো,”তোমাকে তো সবচেয়ে বেশি মিস করেছি মম।”
“আই মিস ইউ টু।”ততক্ষণে সেখানে মেঘ,শাফায়াত চৌধুরী,মায়রা চৌধুরী তিনজনেই উপস্থিত হয়।মেঘ এগিয়ে গিয়ে শাহিন চৌধুরী ও মিরা চৌধুরী দুজনকেই জড়িয়ে ধরে বললো,”চাচ্চু ছোট মা তোমরা কেমন আছো?আমাদের কথা তো ভুলেই গেছো তাই না?”শাহিন চৌধুরী মেঘকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো, “হ্যাঁ ভালো আছি।আর ভুলে গেলে কি দেশে আসতাম।তোমাদের সবাইকে অনেক মিস করছিলাম তাইতো চলে এলাম তোমাদের কাছে।”পাশ থেকে মায়রা চৌধুরী বলে উঠলো,”খুব ভালো করেছো শাহিন।এখন তোমরা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো অনেক জার্নি করে এসেছো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”তারপর শাহিন চৌধুরী ও মিরা চৌধুরী নিজেদের রুমে চলে যায় আর বাকিরাও।রাতে সবাই ডিনার শেষে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে গল্প করছে।হঠাৎ শাহিন চৌধুরীর একটা কথা শুনে বেলা ও মেঘ দুজনেই দাড়িয়ে যায়।কেননা শাহিন চৌধুরী হঠাৎ করে শাফায়াত চৌধুরীকে মেঘ আর বেলার বিয়ের কথা বলে বসে।কথাটা শুনে দুজনেই চমকে যায়।বেলা কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললো,”এটা কি করে হতে পারে ড্যাড? আমার আর দাভাইয়ের বিয়ে?”
“কেন নয় প্রিন্সেস।তোমাদের ছোট থেকেই আমি আর ভাইয়া ঠিক করে রেখেছি তোমরা বড় হলে তোমাদের বিয়ে দেওয়া হবে।আর সেটার উপযুক্ত সময় এখনই।”
“কিন্তু চাচ্চু আর বেলাকে সবসময় ছোট বোনের চোখে দেখেছি বোনের মতো স্নেহ করেছি।আমার কোনো আপন বোন নেই তাই বেলাকেই আপন বোনের মত করে দেখেছি।ইভেন বেলাও আমাকে বড় ভাইয়ের মতো দেখে। সরি চাচ্চু এই বিয়ে সম্ভব না।”মিরা চৌধুরী দাড়িয়ে বলে উঠলো,”মেঘ তুমি আপন বোনের চোখে দেখেছো কিন্তু আপন বোন তো নয়।আমরা ছোট থেকেই ঠিক করেছি তোমাদের বিয়ে হবে দ্যাট’স ইট।”বেলা চিৎকার করে বললো,” নো মম।আমি কিছুতেই দাভাইকে বিয়ে করতে পারবো না।তোমরা যদি জোর করো তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবো ।”ঘটনা বেগতিক দেখে শাফায়াত চৌধুরী দাড়িয়ে বলে উঠলো,”শাহিন কুল ডাউন।তুই আর আমি ঠিক করে রেখেছিলাম মেঘ আর বেলা মামুনি বড় হলে তাদের বিয়ে দিবো কিন্তু যেখানে ওরা নিজেদেরকে ভাইবোন মনে করে সেখানে আমরা জোর করতে পারি না।ওরা এখন বড় হয়েছে।ওদের নিজেরও ডিসিশন নেওয়ার রাইট আছে।”কথাটার সাথে মেঘের মম মায়রা চৌধুরীও সম্মতি জানালেন।কিন্তু বেলার মম-ড্যাড দুজনই মনে মনে নাখোশ।তারা দুজনই চাচ্ছিলেন মেঘ আর বেলার বিয়েটা হোক।কিন্তু বড় ভাইয়ের মুখে কথা বলার সাহস তাদের নেই তাই কিছু বললো না।শাহিন চৌধুরী চোখের ইশারায় মিরা চৌধুরীকে শান্ত থাকতে বললো।
“ঠিক আছে তাহলে।ওরা যখন বিয়েতে রাজি নয় তাহলে আর আমরা এই বিষয়ে আগাবো না।মেঘ আই এম সরি ফর দিস টপিক।”
“ইটস ওকে চাচ্চু।ইউ নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ।বাট এই টপিকে আর কোনো কথা বলোনা প্লিজ।”
“ওকে মাই বয়।”
আজও ফারহার ভার্সিটিতে হাজির মেঘ।মুখে তার দুষ্টুমি হাসি।মেঘ কলেজে প্রবেশ করতেই সব মেয়ের ভীড় লেগে যায় তার চারপাশে।সবাই মেঘের সাথে হ্যান্ডশেক করছে আর হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম বলে মেঘকে পাম দিচ্ছে।ভীড় দেখে ফারহা ও তার বন্ধুরা এগিয়ে এলো এখানে কি হচ্ছে দেখতে।মেঘকে দেখে ফারহার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।আজও মেঘ তার ভার্সিটি এসেছে আর কি জন্য এসেছে সেটাও জানে ফারহা।হঠাৎ মেঘের চোখ যায় ফারহার দিকে।মেঘের মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটে উঠে।সকল মেয়েদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,”গাইজ তোমরা এখন যাও তোমাদের পরে কথা হবে।”মেয়েগুলো মেঘের কথা শুনে ওখান থেকে মেঘকে ফ্লাইং কিস দিতে দিতে চলে যায়।মেঘ সেগুলো হাত দিয়ে ক্যাচের মতো করে নিজের গালে লাগায়।মেয়েগুলোর ঢং দেখে ফারহার ইচ্ছে করছে মেয়েগুলোকে পানিতে চুবাতে।এভাবে ফ্লাইং কিস দেওয়ার কি আছে এই বজ্জাতটাকে।এরা কি জীবনেও হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেনি।মেয়েগুলোর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতে হঠাৎ মেঘকে সামনে দেখে ঘাবড়ে পরে যেতে নিলে মেঘ ফারহার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে।তনু,নেহাল,নিখিল,আয়মান ৪ জনই বেশ অবাক হয়ে যায়।ফারহাকে টাচ করায় নিখিলের বেশ রাগ হচ্ছে।মেঘ আর ফারহাকে এতটা কাছে দেখে নিখিলের একদমই সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছে করছে মেঘের হাতটা কেটে ফেলতে।ফারহার বিরক্ত হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো,
“মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন আমাকে।আমাকে টাচ করার সাহস আপনার হলো কি করে?”মেঘ বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,”সাহসটা আমার বরাবরই একটু বেশি ফারুপাখি।”মেঘের মুখে ফারুপাখি শুনে ফারহার সব বন্ধুরা আকাশ থেকে পড়লো।সবাই কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো মেঘ ফারহাকে কোন উদ্দেশ্যে এই নামে সম্বোধন করলো।ফারহার আবারও বলে উঠলো,” মিস্টার চৌধুরী ছাড়ুন বলছি আমাকে।আমার ভালো লাগছে না এসব?”এই বলে ফারহার বড় বড় নখ মেঘের হাতে বসিয়ে দেয়।তাতেও মেঘের কোনো হেলদোল নেই।ফারহা অবাক হয়ে যায় এখনো মেঘ তাকে ছাড়ছে না এই নখের ব্যাথা কিভাবে সহ্য করছে।নিখিল এবার সইতে না পেরে মেঘের কাছে এসে মেঘের কলার ধরে বললো,” ফারুকে টাচ করার সাহস হলো কিভাবে আপনার?আমাদের কলেজে এসে আমাদেরই সামনে আমারই বন্ধুকে আপনি টাচ করেন।আপনি জানেন না আমি আপনার কি হাল করতে পারি।”নিখিলের কথায় এবার মেঘ ফারহাকে ছেড়ে ভ্রু কুচকে নিখিলের দিকে তাকায়।নিখিল এখনও মেঘের কলার ধরে রেখেছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা কেউই ভাবেনি যে নিখিল এইভাবে রিয়েক্ট করবে।কেউই নিখিলকে এই রূপে দেখেনি।মেঘের চোখ লাল হয়ে যায় কেউ মেঘের কলার ধরুক এটা মেঘের পছন্দ নয়।মেঘ নিখিলের হাত ধরে নিখিলকে ঘুরিয়ে নিখিলের হাত ওর পিঠের পিছনে এনে চেপে ধরে।এদিকে নিখিলের হাত চেপে ধরায় সে ব্যাথায় কুকরে যাচ্ছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা ভাবেনি এরকম কিছু হবে।মেঘ নিখিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”নেক্সট টাইম থেকে আর আমার কলার ধরার চেষ্টা করবি না।আর কি বললি তুই আমার কি হাল করবি তাইতো?এই মেঘ চৌধুরী কাউকে ভয় পায় না।অন ডিউটি পুলিশ অফিসারের কলারে হাত দিলে কি হতে পারে সেটা তোর ধারণাতেও নেই।”এই বলে নিখিলের হাত ঝটকা দিয়ে ছেড়ে দেয় মেঘ।ছাড়া পেয়ে নিখিল নিজের হাত ঢলতে থাকে।এবার মেঘ বাঁকা হেসে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললো,”ফারুপাখি তুমি যতই আমাকে রিজেক্ট কর না কেন আমি তোমাকে ছাড়ছি না।মেঘ চৌধুরী থেকে তোমার নিস্তার নেই।এখন থেকে রোজ তোমার জীবনে আমার আনাগোনা হবে।যত যাই করো না আমি ২৪ ঘন্টা আমার চোখের নজরে থাকবে।”পাশে তাকিয়ে তনু,নেহাল আর আয়মানকে উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,” আজ থেকে আমার হবু বউকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমাদের।ওর যেন কোনো অসুবিধা না হয়৷ আর যদি কোন অসুবিধা হয় তাহলে……… ।”এই বলে মেঘ চোখে সানগ্লাসটা চোখে পরে নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।যায়।এদিকে ফারহার বাকি বন্ধুরা হ্যাঁ হয়ে মেঘের কথা গুলো শুনে মাথা নেরে সম্মতি জানালো৷ এদিকে ফারহা রাগে হাত মুঠ করে ফেলে।ইচ্ছে করছে এখানেই মেঘকে মেরে ফেলতে কিন্তু নিজের এই অদম্য ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলো।তনু ফারহার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”এইসব কি ফারু?মেঘ চৌধুরী এসব কি বললো?”ফারহা তনুর দিকে তাকিয়ে গতকালের সব ঘটনা খুলে বললো।সব শুনে নিখিলের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।ফারহা ও তার বন্ধুরা ওখান থেকে চলে যেতে নিখিল কাউকে একটা ফোন করে সেও ওখান থেকে চলে যায়।
ফারহা কোন ভাবে ক্লাসগুলো শেষ করে৷ ক্লাস থেকে বের হতে আচমকা ফারহা তার মাথা দু’হাত ধরে চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে তৎক্ষনাৎ ……
.
.
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৭
.
.
🌸
ফারহা কোন ভাবে ক্লাসগুলো শেষ করে৷ ক্লাস থেকে বের হতে আচমকা ফারহা তার মাথা দু’হাত চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে তৎক্ষনাৎ আয়মান ফারহাকে সামলে নিয়ে আলাদা খালি ক্লাস রুমে নিয়ে যায়৷ ফারহার হঠাৎ এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে এটা আয়মান নেহাল তনু কেউ বুঝতে পারেনি৷ নিখিল যেহেতু এখানে নেই আয়মান নিখিলকে ফোন করতে নিলে নেহাল বাধা দিয়ে বলে,” আয়মান এখন নিখিলকে নয় রাফিদকে ফোন কর আর ডক্টরকে সাথে নিয়ে আসতে বল ফার্স্ট৷”
“ওকে ” আয়মানের কাছে রাফিদের ফোন নাম্বার থাকায় দেরি না করে দ্রুত ফোন করে রাফিদকে৷ রাফিদ ক্লাসে থাকায় প্রথমবার ফোন বেজে যায় রাফিদ কল রিসিভ করে না৷ কিন্তু আয়মান আবারও কল দিতে রাফিদ ক্লাস থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করে৷
” হ্যালো আয়মান ভাইয়া৷”
” রাফিদ দ্রুত আমাদের ভার্সিটিতে আসো ফারুর হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ হয়ে গেছে৷ ” আয়মানের কথা শুনে রাফিদের ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে যায়৷ ভয়ে ভয়ে রাফিদ বলে উঠলো ,” ভাইয়া দি’র কি মাথা ব্যাথা করছে?”
” হ্যাঁ ঠিক ধরেছো৷ ক্লাস শেষ করে বের হওয়ার পর পর ফারু মাথা চেপে ধরে পড়ে যেতে নিলে আমরা সামলে নি৷”
” ভাইয়া আপনারা আপুর কাছে আরও কিছুক্ষণ থাকুন প্লিজ আমি এখুনি আসছি৷”
” ওকে বাট দ্রুত এসো৷” রাফিদ আর কিছু না বলে দৌড়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেল৷ যেটা বেলা দুর থেকে দেখলো ৷
১০.
মেঘ অফিসে ঢোকা মাত্র হাবিলদার এসে জানায় কমিশনার স্যার এসেছে কিছুক্ষণ আগে আর তিনি মেঘের সাথে দেখা করতে চান৷ মেঘ কথাটা শোনা মাত্র দ্রুত কেবিনের দিকে হাটতে লাগলো৷ কেবিনের ভেতরে ঢুকতেই কমিশনার বলে উঠলো,” মিস্টার চৌধুরী এটা আপনার কাছে আমি একদমিই আশা করি নি৷”
” কি হয়েছে স্যার আপনাকে এত বিচলিত কেন দেখাচ্ছে? আর আমার থেকে কি আশা করেন নি আপনি?”
কমিশনার এবার রেগে বললো,” শহরে একের পর এক মার্ডার হচ্ছে৷ আর আপনি এখন পর্যন্ত খুনিকে ধরতে পারলেন না৷ রির্পোটার পুলিশের ব্যর্থতা ডিপার্মেন্টের সন্মান সব জনগনের সামনে কি করে নষ্ট করবে তার প্লানিং করছে৷ আপনাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি সে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন না৷”
“স্যার খুনি কে সেটা খুব শীগ্রই আমরা জানতে পারবো৷”
” কিন্তু কবে মিস্টার চৌধুরী? আপনি কি জানেন ইয়ামিন হাওলাদারের পর এখন তার বড় ছেলে ছেলে ইমাম হাওলাদার কিডন্যাপ হয়েছে?”
“হোয়াট! ”
” খবরটা রিপোর্টারদের থেকে আড়াল করা হয়েছে৷ যদি তাড়া জানতে পারে ইমাম হাওলাদার নিখোঁজ তাহলে কি হবে তার বিন্দুমাত্র ধারণা আপনার আছে মিস্টার চৌধুরী?”
” আছে স্যার আর আমার টিম যেভাবে হোক ইমাম হাওলাদারকে খুঁজে বের করবো৷”
” হাতে সময় বড্ড কম আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করতে হবে মিস্টার চৌধুরী৷”
” ওকে স্যার৷”
কথা গুলো বলে কমিশনার বেড়িয়ে গেলেন৷ মেঘ দ্রুত তার ইনফরমারকে ফোন করে৷
রাফিদ ভার্সিটিতে যাওয়ার পূর্বে একটা বড় ফার্মেসিতে ঢুকে কিছু মেডেসিন কিনে নেয়৷ ভার্সিটিতে ঢুকে আয়মানকে ফোন করতে তারা জানায় কত নম্বর ক্লাসরুম আর কোন বিল্ডিংয়ে আছে৷ সে অনুযায়ী রাফিদ গিয়ে হাজির হয়৷
” তনু আপু তোমার কাছে পানি আছে?”
” আছে রাফিদ এই নেও৷” ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে রাফিদ কে দিলো৷ ফারহা এখনো সেন্সলেস হয়ে আছে৷ রাফিদ ফারহার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়৷ কিছুক্ষণ পর ফারহার জ্ঞান ফিরতে রাফিদ খুব দ্রুত কয়েকটা মেডিসিন ফারহাকে খাইয়ে দেয়৷ ফারহা মেডিসিন গুলো খেয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইল৷ তনু ফারহাকে মেডিসিন খেতে দেখে রাফিদকে প্রশ্ন করলো৷” এগুলো কিসের মেডিসিন দিলে ফারুকে রাফিদ?” তনুর প্রশ্ন শুনে রাফিদ কিছু একটা ভেবে বলে, ” আপু দি’র মাইগ্রেনের প্রব্লেম আছে ৷”
” ওহ তাই বলো৷ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম৷”
রাফিদ আর কাউকে কোন প্রশ্ন করতে না দিয়ে বললো,” আপু ভাইয়া দি’র এখন রেস্টের প্রয়োজন৷ আমি আপুকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি৷” রাফিদের কথা শুনে আয়মান বলে উঠলো, আমরা তোমাদের বাড়িতে পৌছে দিচ্ছি৷” রাফিদ বারণ করলো না কারণ এই মুহূর্তে তার দি’র রেস্ট প্রয়োজন৷ আর এখানে সেটা সম্ভব নয়৷ তাই রাফিদ আয়মানের গাড়িতে যাওয়ার সির্দ্ধান্ত নিলো৷
মেঘ তার পুরো টিমকে ইমাম হাওলাদারকে খোজার জন্য লাগিয়ে দিয়েছে তবে সেটা গোপনে৷ মেঘ কোন ক্লু পাচ্ছে না৷ ইমাম হাওলাদারের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন ক্লু পাওয়া যায়নি৷ মেঘ তবুও হতাশ হলো৷ সে মুহূর্তে মেঘের এক ইনফরমার জানায় ইমাম হাওলাদার কিডন্যাপ হওয়ার পূর্বে তার অফিসের বাইরে একটা গাড়ি ঘুরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে৷ সি সি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে তবে আর একটা ভালো খবর হলো গাড়ির নাম্বারটা দেখা গেছে৷ খবরটা শোনা মাত্র মেঘ ঘন গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে এক বিন্দু আলোর দেখা পেল৷
” খোঁজ নেও গাড়িটা কার?”
” ওকে স্যার৷ আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি৷”
মেঘ চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে লাগলো,” ইমাম হাওলাদারকে তো জীবিত খুঁজে বের করতেই হবে তার সাথে এই খুন গুলো কে করেছে আর কেন করেছে সবটা আমাকে জানতে হবে৷”
ফারহাকে রুমে শুইয়ে দিয়ে রাফিদ ফারহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে৷ মাথা যন্ত্রনায় ফারহার চোখমুখ কেমন যেন নির্জীব হয়ে গেছে৷ রাফিদ মায়াভরা দৃষ্টিতে তার বোনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,” দি তুই কবে সুস্থ হয়ে যাবি? কবে তোর সবটা মনে পড়বে? কবে তোর এই জেদ ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাবি? তোর কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না দি৷ প্লিজ তুই দ্রুত সুস্হ হয়ে যা না দি৷ ” বলতে বলতে দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো৷
এদিকে মেঘ যখন জানতে পেরেছে তার ফারুপাখি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তখন থেকে মন আনচান করছে তার ফারুপাখিকে দেখার জন্য কিন্তু দায়িত্বের খাতিরে মেঘ তার ফারুর কাছে যেতে পারছে না৷ সে কষ্ট ও অস্থিরতা নিয়ে মেঘ তার টিম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো খুনিকে খোঁজার উদ্দেশ্য৷
নিখিল হাজার টাকার দুটো মোটা বান্ডিল আট-দশ জন ছেলের দিকে বাড়িয়ে দিতে ছেলে গুলো টাকার বান্ডিল ছোঁ মেরে নিয়ে বললো,” কাজ হয়ে যাবে বড় ভাই৷ তবে লোকটা যে সে লোক নয় বড় ভাই তাই এই কাজে অনেক রিক্স যদি একবার ধরা পড়ি তো সারা জীবন জেলে পঁচে মরতে হবে৷”
” জেলে পঁচে মরবি কি মরবি না সেটা আমি শুনতে চাইছি না রনি৷ আমার কাজ না সম্পূর্ণ হলে আমি নিজে তোদের লাইফটা হেল করে দিবো মাইন্ড ইট৷”
ছেলে গুলো নিখিলের কথা শুনে একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল৷ মনে মনে নিজেদের গালি দিচ্ছে নিখিলের কাজ হাতে নিয়ে৷
” কাজটা আজই হওয়া চাই রনি৷”
” ওকে বড় ভাই৷”
মেঘ তার টিমকে দুটো ভাগ করে দিয়ে দুদিকে পাঠিয়ে দিয়ে মেঘ একাই গাড়ি নিয়ে এক ইনফরমারের সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু মাঝপথে কয়েকটা ছেলে মেঘের গাড়ি আটকে ফেলে৷ মেঘ বুঝতে পারে তার উপর এখন এই ছেলে গুলো এ্যাটাক করবে৷ ছেলে গুলোর মুখ কাপড়ে ঢাকা বিধায় কারোর মুখ দেখা যাচ্ছে না৷ ছেলে গুলো মেঘের উপর হকিস্টিক দ্বারা আঘাত করতে নিলে হুট করে পেছন থেকে কয়েকজন কালো সুটবুট পড়া লোক এসে ছেলে গুলোকে বেধরক পিটিয়ে আদমরা করে ফেলে৷ মেঘ গাড়ি থেকে নেমে চোখের সানগ্লাস খুলে কালো সুটবুট পড়া লোক গুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,” স্টপ গাইজ৷ ছেলে গুলোকে ছেড়ে দেও আর এদের কে নিয়ে যাও আমি আসছি৷”
” ওকে স্যার৷” মেঘের কথা শুনে লোক গুলো ছেলে গুলোকে ছেটে হিচরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে চলে গেল৷ রাস্তাটায় জনগনের যাতায়াত কম থাকায় লোকজনের তেমন ভীড় হয়নি৷ মেঘ এক মুহূর্তের জন্য ইমামের কেস ইনভেস্টিকেট করার কথা ভুলে তার ফারহাকে এক নজর দেখার জন্য ফারহার বাড়ির উদ্দেশ্য গাড়ি স্টার্ট দেয়৷
” এই কে তোরা? কি চাস আমার থেকে? আমাকে কেন এখানে আটকে রেখেছিস?” জ্ঞান ফিরে লোহার শেকলে হাত পা বাধা অবস্থায় দেখে বুঝতে বাকি নেই যে সে কিডন্যাপ হয়েছে৷ ইমাম হাওলাদার কথা গুলো কালো মাক্স পড়া লোক গুলোর উদ্দেশ্য ছুড়ে দিলেও লোকগুলো ইমামের কথায় কোন প্রত্যুত্তর করলো না৷ তারা নিজেদের মত কাজ করতে লাগলো৷ এদিকে ইমামের মাথায় বাজ পড়ার মত অবস্থা৷ আগের ডিল ক্যান্সেল হবার পর মোটা এমাউন্টের লস হয়েছে আর আগামীকাল যদি পঞ্চাশটা মেয়েকে ডেলিভারি করতে না পারে তাহলে মিস্টার এলান ওকে বাঁচতে দিবে না৷ মিস্টার এলান এক গুঁয়ে এবং এক কথার লোক প্রথম ডেলিভারি দিতে না পাওয়ায় প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলো বলে কয়ে দ্বিতীয় চান্স নিয়েছিলো পঞ্চাশটা মেয়েকে ডেলিভারি দেওয়ার কিন্তু এবার কি হবে? আর লোক গুলো তো কিছু বলছে না তাহলে কি করে জানবো কে আমাকে কিডন্যাপ করেছে? আর কেন করেছে?” ইমাম হাওলাদার তার ভাবনায় বিভোর তখনি দু’জন লোক ইমামকে ধরে স্টেচারে শুইয়ে দিয়ে এটা হাতুড়ি নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো৷
পুরনো আমলের ভাঙ্গাচোরা বাড়িটার সামনে দাড়িয়ে আছে উদ্দেশ্য তার ফারুপাখিকে দেখার৷ রাফিদ কাপড় ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দিতে বাইরে গেটের সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে রাফিদ কপাল কুঁচকে সন্ধেহের চোখে তাকিয়ে রইল৷ রাফিদ কি যেন ভেবে দ্রুত কাপড় গুলো দড়িতে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷
“এক্সকিউজ মি আপনি এখানে?”
মেঘ কারো গলার আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে রাফিদ৷
” আপনি এই বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছেন যে? কাউকে কি খুজছেন?” রাফিদের কথাশুনে মেঘ ঝটপট উওর দিলো” হ্যাঁ আমি ফারহা রহমানকে খুঁজছি৷ উনি তো এ বাড়িতে থাকে তাই না?”
মেঘের কথা শুনে রাফিদের সন্ধেহ যেন আরও একটু গাঢ় হলো৷ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো৷” দি’কে কেন খুঁজছেন?”
রাফিদ যে ফারহার ভাই এটা মেঘ না জানার ভান করে বললো,” এ্যাকচুয়ালি ফারহা রহমানের ভার্সিটিতে তিনজন ছেলের ডেথ নিয়ে মিস ফারহাকে আমার কিছু প্রশ্ন করার আছে৷”
” সরি স্যার তাহলে আজ আপনার দি’র সাথে দেখা করতে পারবে না৷ কেননা আপু বেশ অসুস্থ রেস্ট নিচ্ছে এই মুহূর্তে আমি আপনাকে আপুর সাথে দেখা করতে দিতে চাইছি না৷ আপনি আগামিকাল আসুন৷ কিন্তু মেঘ নাছরবান্দা সে তার ফারুপাখিকে দেখে তারপর যাবে৷
” মিস্টার রাফিদ এটা আমার কাজ আর আপনি আমাকে বলে দিতে পারেন না আমি কখন কি কাজ করবো৷ বাই দ্যা ওয়ে আপনি যে সত্য বলছেন আপনার দি অসুস্থ সেটা আমি কি করে বিশ্বাস করি? হতে পারে আপনি মিথ্যা বলছেন?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ বেশ রেগে যায়৷ আর মেঘকে বলে আসুন আমার সাথে……
মেঘ রাফিদের পেছন পেছন দো’তোলার চিলেকোঠার রুমে গিয়ে প্রবেশ করে৷ একটা সিঙ্গেল বেডে ফারহা ঘুমিয়ে আছে৷ চোখে মুখে চিন্তা আর ক্লান্তির ছাপ৷ বাতাসে চুল গুলো উড়ে ললাটে আঁচড়ে পড়ছে বারংবার, মেঘে না চাইতেও এক নিষিদ্ধ ইচ্ছে মনে চেপে বসেছে৷ হঠাৎ মেঘের ধ্যান ভাঙ্গে রাফিদের কথা শুনে৷
” আমার দি যে অসুস্থ সেটা আপনি নিজ চোখে দেখলেন তো? এবার চলুন৷” মেঘ গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলে উঠলো,” এক গ্লাস পানি হবে?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পানি আনতে চলে গেল৷ সে সুযোগে মেঘ ফারহা কাছে এসে ললাটে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের ছুঁইয়ে দিতে শুনতে পায়………
.
.
.
#চলবে……….
#চলবে………
((দুঃখিত ব্যস্ততার জন্য গল্প দিতে বেশ দেরি হলো৷ ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷)