চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -০৪+৫

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৪

🕊
আকাশের রুপ যেন হঠাৎ করে পাল্টে গেল৷ কিছুক্ষণ আগে রঙিন আকাশে কালো মেঘেরা ছেঁয়ে গেল৷ পরিবেশটাও মুহূর্তে এক ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে৷ ঝড়ো হাওয়ায় গাছ গুলো যেন উপড়ে পড়ছে এমন অবস্থা, সেখানে ফারহা তার ছোট্ট বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে প্রকৃতির তান্ডব লীলাখেলা দেখতে লাগলো তখনি রাফিদ এসে ফারহার পাশে দাড়িয়ে বলে উঠলো,” এই দি তুই এই ঝড়ো হাওয়ায় এখানে কেন দাড়িয়ে আছিস? আর তোর শাকচুন্নির মত লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিয়েই বা কে দাড়িয়েছিস? কেউ যদি হঠাৎ তোকে এই রুপে এখানে দেখতে পায় তাহলে হয়তো সে সেখানে হার্টফেল করে মারা যাবে৷” কথা গুলো বলে রাফিদ হাসতে লাগলো৷ রাফিদের কথা শুনে ফারহা রাফিদের দিকে তাকিয়ে বললো,” তুই আমাকে ইনডিরেক্টলি শাকচুন্নি বললি তাই না ছোটু?” দাঁত কিড়মিড় করে রাফিদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফারহা৷ ফারহা প্রশ্ন শুনে রাফিদ শুকনো ঢোক গিলে বলে,” আরে দি তোকে কেন আমি শাকচুন্নি বলতে যাবো? শাকচুন্নি হোক তোর শত্রু তুই তো প্রিন্সেস৷”

“ভালোই তৈল দিতে জানিস ছোটু৷” কথাটা বলে লম্বা চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে রুমে চলে গেল৷ ফারহাকে যেতে দেখে রাফিদ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলে “আল্লাহ এই বারের মত বাঁচিয়ে দিলো নাহলে নির্ঘাত আমার মাথার সুন্দর সিল্কি চুল গুলো দি’র হাতে চলে যেত৷”

রুমে এসে ফারহা রাতের রান্নাটা ঝটপট করে ফেলে পড়তে বসে যায়৷ আর রাফিদও মন দিয়ে পড়তে লাগে৷ দশটা বাজতেই ফারহা রাফিদ রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷ সারাদিনে ব্যস্ততার ক্লান্তিতে রাফিদের চোখে ঘুমের দলেরা হানা দিতে ফারহা রাফিদের রুমে গিয়ে চাদরটা রাফিদের গায়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷

__________


চৌধুরী ভিলায় আজ উৎসব মুখর দিন৷ বাড়ির একমাত্র প্রিন্সেস এত দিন পর বাড়ি ফিরেছে যার কারণে মেঘের বাবা মা দুজনে ভীষণ খুশি আরও বেশি খুশি হত তখন যখন তার ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী সহ দেশে ফিরে আসতো৷ তবে খুব শিগ্রই তারাও যে দেশে ফিরবে এটা মেঘের বাবা মা জানে৷ বেলা বাড়িতে ফেরা মাত্র শাফায়াত চৌধুরী এবং মিসেস মায়রা চৌধুরীর সাথে গল্প জুড়ে দেয়৷ রাত এগারোটায় গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বেলা নিজের চিরচেনা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়৷ ড্রেসিং টেবিলে সামনে দাড়িয়ে বেলা ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে হঠাৎ রাফিদের মুখটা ভেসে ওঠে৷ আনমনে বেলা হেসে ফেলে বলে,” এরোগেন্ট বয় তোমাকে তো আমি এই জীবনে আর ছাড়ছি না৷ বাই দ্য ওয়ে তোমার নামটাই তো জানা হলো না৷ নেভার মাইন্ড আমার পুলিশ অফিসার দাভাই আছে কেন? দাভাই কে দিয়ে তোমার ষোল গুষ্টির সব খবর আমি পেয়ে যাবো যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ৷”

মেঘ এবার শুরু থেকে সব সব গুলো মার্ডারের ছোট বড় ক্লু দেখতে লাগলো৷ মেঘের কাছে এমন কোন ক্লু ইম্পটেন্ট মনে হলো না যেটা দিয়ে সে কোন মার্ডারার কে সনাক্ত করতে পারে৷ তাই মেঘ সে সমস্থ এরিয়ার ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করতে লাগলো৷ হঠাৎ করে একটা ফুটেজ দেখে মেঘের চোখ আটকে যায়৷ আর তখনি মেঘের ফোনটা বেজে উঠতে মেঘ কল রিসিব করতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,” স্যার আপনার কথা মত লাশটাকে দ্বিতীয়বার পোস্ট মোর্টেম করানো হয় আর তাজ্জব বিষয় হলো লাশের শরীরে কোন অর্গান পাওয়া যায়নি৷ আমরা ডক্টরকে এই বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিলে তিনি সবটাই অস্বীকার করে এবং আগের রিপোর্ট ভুল ছিলো বলে দাবি করছে৷”

“ডক্টর কে ছেড়ে দেও আর তার উপর নজর রাখো৷”

” ওকে স্যার৷”

মেঘ ফোনটা বিছানার এক কোণে ছুড়ে ফেলে নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতে ফারহার মুখটা ভেষে ওঠে তখনি মেঘ তড়িঘড়ি করে উঠে বসে তার ফোন নিয়ে কাউকে কল করে৷

” হ্যালো৷” মেঘের গলা শুনতে পেয়ে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে…

” সরি স্যার সময় মত আপনাকে ইনফরমেশন গুলো না দেওয়ার জন্য,”

” ভনিতা রেখে যা জেনেছিস সেগুলো বল৷”

” বস মেয়েটার নাম ফারহা রহমান৷ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে৷ বাবা মা নেই৷ শুধু একটা ছোট ভাই আছে নাম রাফিদ রহমান৷ রাফিদ অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র আর খুব মেধাবী৷ দুই ভাইবোন টিউশন করে তাদের খরচ চালায়৷ আর তারা থাকে হান্নান উদ্দিন সাহেব ছোটখাটো ব্যবসায়ী তার পুরনো বাড়িতে ভাই-বোন দুজনে দোতলার চিলেকোঠার রুমে ভাড়া থাকে৷ ”

সব শুনে মেঘের খুব খারাপ লাগে ফারহার জন্য, কত না স্ট্রাগল করে বাঁচতে হচ্ছে এই দুই ভাই-বোনের ৷ এমনিতে মেঘ প্রথম দেখায় ফারহাকে ভালোবেসে ফেলে আর আজ এই সব শুনে ফারহার জন্য ভালোবাসা সন্মান যেন আরোও কয়েকগুন বেড়ে গেল৷
মেঘ মনে মনে ঠিক করে নিলো আগামিকাল সে ফারহার সাথে দেখা করবে৷”

সেই রুমে থাকা মেয়ে গুলোকে টেনে হিচরে ছেলে গুলো কে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে নিয়ে গেল দুজন মাক্স পরিহিতা লোক৷ মেয়ে গুলো সেই রুমে প্রবেশ করতে ভয়ে চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়৷ জনি সহ বাকি দুজনকে এমন ভাবে নৃ’শংস ভাবে মা’রা হয়েছে যে কাউকে চেনার উপায় নেই৷ লাশ গুলোর হাত পা মা’থা শরীর থেকে বি’চ্ছিন্ন করা৷ রক্তে পুরো ফ্লোর ভিজে আছে৷ মেয়ে গুলো সেগুলো দেখে আর সহ্য করতে পারেনি৷

লোকদুটোর একজন রুমের বাইরে গিয়ে দুজনকে নিয়ে এসে মেয়ে গুলোকে ধরে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিয়ে হাত পা লোহার শেকল দিয়ে বেধে সেখানে ফেলে তারা রুম লক করে বেড়িয়ে যায়৷

_______________

পরদিন সকালে রাফিদ নিজের মতো নাস্তা করে কলেজের জন্য বেড়িয়ে যায় আর ফারহাও ভার্সিটি পৌঁছে যায়।ভার্সিটি ক্যাম্পাসে একটা বটগাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো ফারহা,নেহাল,তনু আর আয়মান।হুট করে কোথা থেকে নিখিল দৌড়াতে দৌড়াতে আসে।রিতীমত হাপাচ্ছে সে।আকস্মিক ঘটনায় ফারহা সহ বাকি তিনজনও অপ্রস্তুত ছিলো।নেহালের হাতে একটা ফুলের তোড়া আর হাতে একটা কার্ড।কোনোরকম শ্বাস নিয়ে হুট করে ফারহার দিলে তোড়া আর কার্ডটা বাড়িয়ে দিয়ে নেহাল বললো,

“হ্যাপি বার্থডে ফারু।ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।”নিখিলের কথা শুনে ফারহা বোকা বনে যায়।নেহাল আর আয়মানেরও কিছু মাথায় ঢুকছে না।এদিকে তনু মুখ চেপে হাসছে।ফারহা ভ্রু কুচকে বললো,

“তোকে কে বললো নিখিল যে আজ আমার বার্থডে?”

“কেন আজ তোর বার্থডে নয়?তনু আমাকে আজ সকালে বললো আজ তোর বার্থডে।তাই দ্রুত করে ভার্সিটিতে আসলাম তোকে উইশ করবো বলে সাথে এগুলোও নিয়ে আসলাম।”ফারহা এবার বুঝতে পেরেছে তনু নিখিলের সাথে ফান করেছে।এদিকে নিখিলের কথা শুনে তনু,নেহাল আর আয়মান পেট চেপে হাসতে থাকে।নিখিল কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

“ওই শা* এভাবে বলদের মতো হাসছিস কেন তোরা?”নেহাল কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললো,”হাসবো না তো কি করবো।তোরা মতো হাদারাম একটাও নেই।তনু তোর সাথে মজা করেছে আজ ফারুর বার্থডে নয় এতগুলো বছর আমাদর সাথে থেকেও ভুলে গেলি কি করে সালা? ফারুর যেদিন বার্থডে থাকে সেদিন আমরা কেউ ভার্সিটি আসি না।সারাদিন ফারুর বার্থডে সেলিব্রেট করি। এটা কি করেভুলে গেলি?”

নেহালের কথা শুনে নিখিল মাথা চুলকিয়ে বললো,”তাহলে আমি যে এগুলো নিয়ে এসেছি সেগুলো কি করবো?”তনু দুষ্টুমি করে বললো,

“কি আর করবি ওই যে দেখ রাস্তায় যে পাগলিটাকে দেখছিস ওকে দিয়ে প্রপোজ করে ফেল এক্সেপ্ট করে ফেলবে? কারণ তোর কপালে তো আর কোন মেয়ে জুটবে না৷”বলেই আবার হাসতে লাগলো।তনুর কথায় বাকিরাও হাসছে।নিখিল তনুর দিকে রাগি একটা ফেস নিয়ে তাকিয়ে তোড়াটা একটা পিচ্চি মেয়েকে দিয়ে এসে ওদের সাথে আবার জয়েন করে।নেহাল বলতে শুরু করলো,

“কি গভীর ঘুমে ছিলাম জানিস।ফারুর বার্থডে শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে এক পায়ে স্যান্ডেল আর এক পায়ে শু পড়ে এসে পড়েছি।আমার কপালটাই খারাপ৷” নিখিলের কথায় সবাই ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি ওর এক পায়ে স্যান্ডেল আর এক পায়ে শু পড়ে আছে।সবাই আরো একধাপ হেসে নিলো তনু বললো”সত্যি আজ তোর কপালটাই খারাপ।সকালে কার মুখ দেখে উঠেছিস?”তনুর কথায় নিখিল ভাবনায় চলে গেলো।কারন সে তো রোজই ফারহার ছবি মোবাইল দেখে ঘুম থেকে উঠে।কিন্তু এটা তো ফারহার সামনে সে বলতে পারে না।কথা ঘুরানোর জন্য নিখিল বলে উঠলো”আরে এসব কুপ্রথা আমি বিশ্বাস করি না”।আয়মান বলে উঠলো,

“বাহ নিখিল আমাদের কারো বার্থডে আসলে তো তোকে খুজেই পাওয়া যায় আর না ফারুর বার্থডে নিয়ে তোর এতো মাথা ব্যাথা।কেন রে?”নিখিল বিড়বিড় করে বলছে,”আমার মাথাব্যথা আর না থাকলে আর কার থাকবে।।ফারহা বলে উঠলো,

“কি বিড়বিড় করছিস।জোরে বল?”

“আরে ফারহা তো আর আমারই বান্ধবী তাই না।ওর বার্থডে মনে রাখাই উচিত।তোদের টাও আমি মনে রাখি কে বলেছে মনে রাখি না।”

“হুম সেটা তো বার্থডে আসলেই বোঝা যায় মনে থাকে নাকি থাকে না।”ফারহা এবার বলে উঠলো,”আচ্ছা এসব বাদ দে এখন।ক্লাসে চল বেল দিয়ে দিয়েছে।”সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,”

“হুম চল”

___________

মেঘ নিজের রুমে রেডি হচ্ছিলো।হঠাৎ কে যেন এসে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়।মেঘের চুলে কেউ হাত দিলে মেঘের ভিষনই রাগ হয়।কিন্তু পাশে তাকিয়ে যখন বেলা কে দেখে তার সব রাগ গলে যায়।মেঘ সবার সামনে নিজেকে কঠিন দেখালেও তার পিচ্চি বোনের কথা সে একদম নরম।কখনোই একটু বকঝকা করে না রাগ দেখানো তো দূরের কথা।

“বেলুন হঠাৎ তুই আমার রুমে আসলি যে?”বেলা মেঘের চুলে টান দিয়ে বললো,”ওই তোকে কতবার বলতে হবে আমাকে বেলুন বলে ডাকবি না।এই বেলুন নাম দিয়ে আমাকে ডাকবি না।”

“আচ্ছা আচ্ছা ডাকবো না এখন তো ছাড়।”

“হু।এরপর থেকে ডাকলে তোর মাথার প্রিয় সব চুল টেনে টেনে ছিড়ে ন্যারা করে ফেলবো।”

“তখন তোকেই সবাই ন্যাড়া মেঘ চৌধুরীর বোন বলে ডাকবে।তখন সেটা শুনতে ভাল্লাগবে।”

“ডাকুক তবুও এই নামে আমাকে আর ডাকবি না।”

“আচ্ছা ডাকবো না।কি জন্য এসেছিস সেটা বল?”

“দাভাই আসলে গতকাল থানায় যাওয়ার আগে এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় একটা ছেলের সাথে দেখা হয়।”তারপর বেলা পুরো ঘটনা টা খুলে বললো মেঘকে।পুরো কথা শুনে মেঘ দুস্টুমি হাসি দিয়ে বললো,”বাহহ আমার বনু দেখে প্রেমে পরে গিয়েছে।”মেঘের কথায় বেলা একটু লজ্জা পেল।মেঘ আবার বলে উঠলো,”তা ছেলেটার নাম ঠিকানা কিছু জানিস?”

“না দাভাই।সেইজন্যই তোর কাছে এলাম।তুইতো পুলিশ অফিসার দ্রুত খুজে বের করতি পারবি কোথায় থাকে।”

“আচ্ছা তুই নিশ্চিন্ত থাক আমি খুঁজে বের করবো ওই ছেলেকে।এখন তুই যা আমি বের হবো।”

“ঠিক আছে।লাভ ইউ আমার কিউট হ্যান্ডসাম দাভাই।”

“লাভ ইউ টু বনু।”

_____________

মেঘ গাড়ি থামায় ফারহার কলেজে।পুরোই হিরো লুকে এসেছে আজ।ফর্সা জিম করা বডিতে কালো শার্ট কালো পেন্ট পায়ে শো।আজ সানগ্লাস টা চোখেই দিয়ে এসেছে।সোজা ক্যাম্পাসে ঢুকে যায় সে।অন্যদিনের মতোই ফারহা ও তার বন্ধুরা ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে ছিলো।মেঘও সেখানে প্রবেশ করে।আজও মেঘকে এখানে দেখে অবাক হয়ে যায় সবাই।মেঘ ফারহা রা যেই টেবিলে বসা সেখানের একটা চেয়ারে পাশের বসে যায়।সানগ্লাসটা খুলে টেবিলে রাখে।ফারহা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঘের কার্যকলাপ দেখছে।মেঘ বলে উঠলো,

“তোমরা কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট?কিন্তু কেউ কিছু বললো না।মেঘ আবারও বললো,”আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি।”তনু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,”স্যার আমরা অনার্স ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্ট।”মেঘ ফারহার দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলো,”তোমরা কি ওই ছেলেমেয়েগুলোর খোজঁ জানো যারা তোমাদের ব্যাচমেট অন্য ডিপার্টমেন্ট পড়ে।”

“কাদের কথা বলছেন স্যার?”নেহাল জিজ্ঞেস করলো,

“যারা গতকাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে।আমার কাছে তাদের পেরেন্টস মিসিং কম্প্লেইন করেছে।তাদের এই ভার্সিটিতেই পড়ে।আর তোমাদের ভার্সিটির একজন বলেছে তাদের গতকাল তোমাদের সাথে কথা বলতে দেখেছে।”এবার তনু বলে উঠলো,

“হ্যা স্যার গতকাল অন্য ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন স্টুডেন্ট আমাদের কাছে এসেছিলো।বলছিলো ফারহার সাথে কিছু কথা বলবে।তাই ওকে কোথাও একটা নিয়ে গেলো।”তনুর কথায় এবার মেঘসহ সবাই ফারহার দিকে তাকালো।কিন্তু ফারহার কোনো হেলদোল নেই।মেঘ ফারহার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”তো মিস ফারহা সত্যিটা কি বলবেন আসল ঘটনাটা কি?”হঠাৎ করে গতকালের দুটো মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্যান্টিনে এসে উপস্থিত হয়।উপস্থিত সবাই তাদের দেখে অবাক হয়।ফারহার মুখে রহস্যময়ী হাসি।মেঘ তাদের দেখে বলে উঠলো,”তোমরা কোথায় ছিলে?তোমাদের পেরেন্টস থানায় এসেছিলো মিসিং কম্প্লেইন করতে।গতকাল বিকাল থেকে তোমরা মিসিং তাই।”মেয়ে দুটো বলতে লাগলো,

“স্যার জনি আর ওর বন্ধুরা আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে।ফারহা অনেক ভালো স্টুডেন্ট।আমরা চাচ্ছিলাম ওদের ডিপার্মেন্টে শিফট হতে।তাই এই বিষয়ে জানার জন্য ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।ওইদিন সন্ধ্যায়ই আমরা দুজন আর জনি ও জনির বন্ধুরা জনির একটা ছোট্ট বাড়িতে যাই পার্টি করতে।এক পর্যায়ে জনি আর ওর বন্ধুরা আমাদের উপর জবরদস্তি শুরু করে।হাতাহাতিতে একটা ঝুলন্ত বাল্ব এলকোহলের উপর পড়ে যায় আর আগুন ধরে যায়।জনি আর ওর বন্ধুরা নেশাক্ত ছিলো অনেক।আমাদের শোরগোলে ফারহা ওই বাড়িতে এসে আমাদের বাঁচিয়ে নেয়।আমরা ঠিকই বের হয়ে যাই কিন্তু সিলিন্ডারে আগুন লেগে জনিসহ ওর বন্ধুরা আর ওই বাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে যায়।”

এবার পুরো ঘটনাটা সবার বোধগম্য হলো।কিন্তু তবুও মেঘের কোথাও ডাউট হচ্ছে কিন্তু প্রুফ নেই বিধায় কিছু বলতেও পারছে না।মেঘ ওই মেয়েগুলোর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,”ঠিক আছে তোমরা এখন বাড়িতে যাও।তোমাদের পেরেন্টস তোমাদের জন্য টেনসড হয়ে আছে।”ফারহা মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলে।মেয়েগুলো ঢোক গিলে ওখান থেকে চলে যায়।মেঘ এবার সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”ঠিক আছে গাইজ তোমরা তোমাদের কাজ করো।সরি ফর ডিস্টার্বিং।”যাওয়ার পথে ঘুরে সানগ্লাসটা চোখে দিয়ে ফারহার কানের কাছে আস্তে করে বললো,”বাট নট ফর ইউ ফারুপাখি।তোমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করবো না।আমার মনের খাচায় জায়গা করে নিয়েছো তুমি।তোমার গানটা আমাকে ডিস্টার্ব করে দিয়েছে জান।আমার থেকে তোমার নিস্তার নেই।”বলেই মুচকি হেসে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।আর মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দেয় ফারহা।
.
.
#চলবে……………..#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৫

🌸
রাতে মেঘ নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।তখনই মেঘের রুমে নক করে বেলা বলে উঠলো,”দাভাই ভেতরে আসবো?”মেঘ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে দরজায় তাকিয়ে বেলাকে দেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে বেলাকে ভেতরে আসতে আসতে বললো,”দাভাই বিজি আছিস নাকি?তোকে বিরক্ত করিনি তো?”

“না বনু একদমই বিরক্ত করিসনি।আয় বস বল কি হয়েছে?”

“দাভাই সকালে তোকে যে কাজটার কথা বলছিলাম সেটা কি করেছিস?ওর ইনফরমেশন পেয়েছিস?”

“হ্যা পেয়েছি।”বেলা উত্তেজিত হয়ে মেঘকে জিজ্ঞেস করলো,”কি জানতে পেরেছিস তাড়াতাড়ি বল না দাভাই।”মেঘ একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,” ওর নাম রাফিদ রহমান।ওর পৃথিবীতে মা-বাবা কেউ নেই।শুধু একটা বড় বোন আছে ওর নাম ফারহা রহমান।রাফিদ একটা কলেজে পড়াশোনা করে আর পার্টটাইম জব হিসেবে ৩-৪ টা টিউশনি করে। ”

রাফিদের মা-বাবা নেই সেটা শুনে বেলার মনে মনে একটু রাফিদের জন্য খারাপ লাগলো।কতই না কস্ট করে জীবনযাপন করছে।একটা ছোট্ট বাড়িতে কোনোরকম থাকে।বেলা বেশি আকৃষ্ট হয় রাফিদের নিষ্পাপ চেহারাটা দেখে।বেলা দেখেই বুঝতে পেরেছিলো রাফিদ খুবই শান্ত প্রকৃতির একজন ছেলে।বেলা ঠিক করলো সে রাফিদের সাথে দেখা করবে।তাই মেঘকে বলে উঠলো,”দাভাই একটা হেল্প করে দিবি?”

“কি বল?”

“আমি ওই কলেজে এডমিশন নিতে চাই?”।

“কিন্তু কেন?তুই তো অলরেডি এবরোডে “ল” নিয়ে পড়েছিস?”

“হ্যা করেছি বাট আমি ওর কলেজে একজন সাধারণ স্টুডেন্ট হিসেবে ওর ডিপার্মেন্টে ভর্তি হতে চাই।”বেলার কথার মানে মেঘ বুঝতে পারলো তাই বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”ঠিক আছে আমি আগামীকালই তোকে ওই কলেজে এডমিট করিয়ে দিবো।”

“থ্যাংকিউ আমার হ্যান্ডসাম দাভাই।”

“ওয়েলকাম বনু।বনু তোকে একটা কথা বলার ছিলো।”

“বল দাভাই।”

“আমি একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।”বেলা মেঘের কথায় অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে মেয়েদের আশেপাশেও যায় না সেই ছেলে কিনা একটা মেয়েকে ভালোবেসে। কথাটা বেলার হজম হলো না।”

“ফান করছিস দাভাই।তুই যে কিনা কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকায় না আর যে রাস্তা দিয়ে গেলে সব মেয়ে চোখ দিয়ে গিলে খায় সে কিনা একটা মেয়েকে ভালোবাসে অসম্ভব।”মেঘ ট্যারা চোখ করে বললো,”সত্যি আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি।”

“তাই! কে সে?”

“আমার ফারু পাখি,আমার ভালোবাসা,আমার প্রিয়তমা ফারহা রহমান।”এইবার বেলা অবাকের শীর্ষে পৌছে যায়।তার মানে কি রাফিদের বড় বোনকেই দাভাই ভালোবাসে।

“ওয়াও দাভাই।তারমানে ফারহা আপুই আমার হবু ভাবি হতে যাচ্ছে।”

“হ্যাঁ,তবে শোন এখনই এই ব্যাপারটা মম ড্যাডকে জানানোর দরকার নেই।আগে ফারুপাখিকে আমার ভালোবাসার কথাটা জানাই তখন সবাইকে জানাবো।”

“তো তাড়াতাড়ি জানিয়ে দে দেরি করছিস কেন?”

“হ্যাঁ জানাবো খুব শীঘ্রই জানাবো।তুই এখন যা ঘুমিয়ে পড়।সকালে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যাস কলেজে।আমি প্রিন্সিপালকে ফোন করে জানিয়ে দিবো তোর এডমিশনের কথা।”

“ঠিক আছে দাভাই।” তারপর বেলা মেঘের রুম থেকে চলে যায় আর মেঘ আবার ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে বসে।

____________

পরদিন সকালে রাফিদ কলেজে চলে যায় আর ফারহা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ফারহা একা একা রাস্তা দিয়ে হেটে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।হঠাৎ একটা গাড়ি অনেক স্পিডে এসে ফারহার সামনে কষে ব্রেক করে।ফারহা সেখানেই দাড়িয়ে যায়।১০ সেকেন্ড পর গাড়ি থেকে একজন বের হয়।সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।মেঘকে এই সময়ে এখানে এক্সেপক্ট করেনি ফারহা।মেঘ ফারহার সামনে এসে দাড়িয়েছে।ফারহা মেঘকে বলে উঠলো,

“কি হলো মিস্টার চৌধুরী এভাবে আমার পথ আটকে দাড়িয়েছেন কেন? সরে যান।”

“ওয়েট ফারুপাখি।তুমি আগে গাড়ি উঠে বসো তোমার সাথে কথা আছে।

“ওয়াট!কে ফারুপাখি?আমার নাম ফারহা রহমান।”

“নো ইউ আর মাই ফারুপাখি।নাউ যেটা বলছি সেটা করো গাড়িতে উঠে বসো।”

“আমি আপনার সাথে কেন যাবো।আমার আপনার সাথে কোনো কাজ নেই।”

“বাট আমার আছে।ইউ নো আমি একজন পুলিশ অফিসার।আমি যেভাবে বলবো সেভাবে তোমাকে করতে হবে।যদি তুমি অপরাধী না হও আর ভুল না করো তাহলে আমার সাথে যেতে প্রবলেম হওয়ার কথা না।”মেঘ ফারহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরকন্ঠে বলে উঠলো,”আর ইউ,,,”মেঘ আর বলতে পারলো না তার আগেই ফারহা নিজে গিয়ে মেঘের গাড়িতে বসে।মেঘ একটা মুচকি হাসি দেয় আর চোখে সানগ্লাস টা পড়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো।মেঘ কয়েকবার আর চোখে ফারহার দিকে তাকায়।ফারহা নিজের মতো করে বাইরে তাকিয়ে আছে।এই পর্যন্ত একবারও মেঘের দিকে তাকায়নি।বিষয়টা মেঘের খুব একটা ভালো লাগেনি কিন্তু ওটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি।মেঘ ফারহাকে নিয়ে নদীর পারে আসে।বিস্তৃত পরিবেশে সবুজের সমারোহ পাশে বণফুলে সমারোহ। কচুরির ফুল গুলো নদীর ঢেউ সমান্তরাল ভাবে ভেসে চলছে।মাথায় উপর সূর্যটা চিকচিক করছে আর হালকা বাতাস চলছে।বাতাসে ফারহার চুলগুলো উড়ছে আর ফারহা বারবার সেই চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিচ্ছে।মেঘের ইচ্ছে করছে চুলগুলোকে ছুঁয়ে দিতে কিন্তু ফারহা হয়তো এটাতে ওভার রিয়েক্ট করতে পারে তাই করছে না।মেঘ ফারহা কেউই কথা বলছেনা।অনেকক্ষণ ওর ফারহা বিরক্তি নিয়ে বললো,”মিস্টার চৌধুরী অনেকক্ষণ হলো আমরা এসেছি।আপনি কি জিজ্ঞেস করার তাড়াতাড়ি করুন আমার ভার্সিটি যেতে হবে।লেট হয়ে যাবে নয়তো।”

“তোমার আজ ভার্সিটি যেতে হবে না ফারুপাখি।আজ দুপুর পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।”

“মিস্টার চৌধুরী আমার মনে হয় না আপনার জিজ্ঞাসাবাদ এতক্ষণ চলবে সো যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”

“ফারুপাখি এই জায়গাটা দেখেছো কত সুন্দর।আমি প্রায়সময়ই এই জায়গায়টায় আসি।যখনই মন ভালো থাকুক অথবা খারাপ থাকুক আমি এইখানে এসে বসে থাকি।আজ প্রথমবার কাউকে আমি আমার সাথে করে এখানে নিয়ে এলাম।ফারুপাখি আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”মেঘ ফারহার হাতজোড়া নিজের হাতের নিয়ে বলে উঠলো,”আই লাভ ইউ ফারুপাখি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।”মেঘের কথায় ফারহার অনেক রাগ হয়।ফারহা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো মেঘ হয়তো এরকম কিছু একটাই বলবে।ফারহা হাত ঝাড়া দিয়ে বললো,”হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার চৌধুরী!আপনি এসব বলার জন্য আমাকে নিয়ে এসেছেন।মিথ্যা বলতে আপনার লজ্জা করলো না।”

“সরি ফারুপাখি বাট ওটা না বললে তুমি আসতে না।তাই বাধ্য হয়ে বলেছিলাম।ট্রাস্ট মি ফারুপাখি যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন যেন আমার হৃদস্পন্দন কয়েক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলো৷ তোমার হরিনীর ন্যায় চোখ, ঠোঁটের হাসি এক মুহূর্তে যেন আমাকে পাগল করে তুলেছিলো৷ যখন তোমার ওই সুমধুর কন্ঠে গান শুনেছিলাম সেদিনই আমার হৃদয়টা তোমাকে দিয়ে ফেলেছি।তারপর যখন তোমার পরিবার তোমার স্ট্রাগল তোমরা কিভাবে কি পরিস্থিতিতে থাকো সেটা শুনে তোমার প্রতি আরো বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম।আই রেইলি লাভ ইউ ফারুপাখি।” বলতে বলতে মেঘ ফারহার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে তৎক্ষনাৎ ফারহা আগুন চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ মিস্টার চৌধুরী।আপনাদের মত বড়লোকদের মতে এই সব ভালোবাসা হলো মোহ।এই যে বললেন না আমার অসহায়ত্ব দেখে আপনার মায়া হলো এইসব দুইদিন পর ঠিকই চলে যাবে যখন বড়লোক ঘরের কোনো মেয়ে দেখবেন।আপনাদের মতো বড়লোকদের আমার ভালো করেই জানা আছে।”

“তুমি কোন ছেলেকে কি রকম ভাবো জানি না তবে আমি মোটেও এরকম নই।আমার ফ্যামিলি আমাকে ভালো শিক্ষা দিয়েছে।বিলিভ মি ফারুপাখি আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।আমি যথেস্ট চেষ্টা করবো তোমাকে সুখে রাখার।কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে আমি।সবসময় তোমার বিপদে ঢাল হয়ে দাড়াবো আমি।”

“আপনার এইসব ফালতু কথা শোনার সময় আমার নেই।নেক্সট টাইম এই নির্লজ্জ চেহারাটা নিয়ে আমার সামনে আসবেন না।আপনার মতো লোককে আমি আমার সামনে দেখতে চাই না।”এই বলে ফারহা একটা রিক্সায় বসে ওখান থেকে চলে যায়।মেঘের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।হাত মুঠো করে ফেলে কপালের রগগুলো ফুলে যায়।মেঘ দাতেঁদাত চেপে বললো,”ফারুপাখি এতো সহজে এই মেঘ চৌধুরী তোমাকে ছেড়ে দেবে না।ছেড়ে দেবার জন্য ভালোবাসিনি তোমাকে।তোমাকে ভালোভাবে বুঝিয়েছিলাম তুমি বুঝনি।এবার যা যা হবে তার জন্য তুমি দায়ী থাকবে ফারুপাখি।”মেঘ গাড়িতে বসে অনেক জোরে গাড়ি চালিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।

____________

৮.
রাফিদের কলেজে প্রবেশ করে বেলা।নিজেদের গাড়ি নিয়েই কলেজে আসে।গাড়িটা ড্রাইভারের সাথে কলেজের বাইরেই পার্কিং করে রাখে বেলা।কলেজে ঢুকে সে দেখে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে নিজেদের মতো কথা বলছে।কেউ দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে কেউ বসে।কলেজটা বেলাদের ক্যাটাগরির না হলেও বেলা মানিয়ে নিচ্ছে কোনোরকম।আশেপাশে তাকিয়ে রাফিদ কে খুঁজছে বেলা।কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।হঠাৎ একটু দূরে তাকিয়ে দেখে রাফিদ ক্যান্টিনে বসে আছে একা একটা টেবিলে।রাফিদকে দেখেই বেলার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।সোজা ক্যান্টিনে চলে যায়।রাফিদ ক্যান্টিনে বসে ছিলো আর কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলো হঠাৎ সে দেখে একটা মেয়ে ওর বসা টেবিলেই আরেকটা চেয়ারে বসে পড়ে।মেয়েটাকে দেখে তার খুব চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।হঠাৎ বেলা রাফিদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”হাই আমি বেলা চৌধুরী।কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছি।”রাফিদ ভদ্রতার খাতিরে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো,”হাই আমি রাফিদ রহমান।”রাফিদ আর কিছু বললো না।বেলা ভাবছিলো হয়তো কিছু একটা বলবে।বেলা নিজেই জিজ্ঞেস করলো,”আমাকে চিনতে পারছেন না?ভুলে গেলেন নাকি।”এবার রাফিদ কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বললো,”হ্যাঁ আসলে আপনাকে দেখে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো।কিন্তু কোথায় দেখেছি সেটা মনে করতে পারছি না।”

“আরে ওইদিন রাস্তায় আপনার সাথে দেখা হয়েছিলো।আমি খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম আর ভুল করে আপনার উপর কাঁদা ছিটকে পরে।”

“”ওহ হা মনে পরেছে। আপনিই তাহলে সেই।”

“হ্যাঁ আমিই সেই।সেদিনের জন্য সরি আসলে খুব তাড়াহুড়োয় ছিলাম তাই খেয়াল করিনি।”

“ইটস ওকে নো প্রবলেম।”বেলার মনে মনে বেশ রাগ হলো।সে চাচ্ছে রাফিদের সাথে আরো বেশিসময় কথা বলতে কিন্তু এই ছেলেটা অল্পতেই কথা সেরে নিচ্ছে।বেলা রাফিদকে জিজ্ঞেস করলো,”আপনি কোন ইয়ারে পড়েন?”

“অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি আমি।”

“ওয়াও গ্রেট!আমিও তো অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি।তাহলে আমরা কি বন্ধু হতে পারি?আসলে আজকে প্রথম তো তাই কাউকে চিনি না।আপনাকে ওইদিন দেখলাম তাই কলেজে এসে আপনাকে দেখে আপনার কাছেই আসলাম।”

“না।আমি কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করি না।”

“কেন?মেয়েরা কি আপনার সাত জন্মের দুশমন নাকি?”

“না সেরকমটা নয়।আমি কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না।একা থাকতে পছন্দ করি।”রাফিদের কথা শুনে বেলা বিড়বিড় করে বলে উঠলো,”কি নিরামিষ ছেলে রে বাবা।একে বিয়ে করলে তো আমার সারাজীবন চুপচাপই কেটে যাবে।জামাইয়ের সাথে এতো কথা বলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।”

“কি বিড়বিড় করছেন?”

“না কিছু না।এই আপনি কেমন ছেলে হা।ফ্রেন্ডস ছাড়া জীবন চলে নাকি।”বেলা জোর করে রাফিদের সাথে হাত মিলিয়ে বলে উঠলো,”আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস।এখন আমি তোমাকে তুমি বলে ডাকবো আর তুমি আমাকে তুমি বলে ডাকবা ওকে?”

“না আমি কাউকে কিচ্ছু বলে ডাকতে পারবো না।”এই বলে রাফিদ উঠে চলে যেতেই বেলা পথ আগলে দাড়িয়ে বললো,”এই ছেলে কি মনে করো তুমি নিজেকে।একটা মেয়ে নিজে থেকে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছে আর তাই তুমি ভাব নিচ্ছো।এতো দেমাগ তোমার?”

“কোথায় ভাব নিলাম আমি?”

“তাহলে আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে সমস্যা কোথায় তোমার?”

“আমি আগেই বলেছি আমি কারো সাথে ফ্রেন্ডশিপ করি না।এখন আমার পথ ছাড়ুন ক্লাস টাইম হয়ে যাচ্ছে।”এই বলে রাফিদ ওখান থেকে চলে যায়।বেলা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে বললো,”ফ্রেন্ডশিপ তো আমি তোমার সাথে করবোই মিস্টার এরোগেন্ট সেটা যেভাবেই হোক না কেন বাই হুক অর বাই ক্রুক।”

____________

প্রচন্ড রাগ নিয়ে ফারহা রিকশা ওঠে তো বসে তবে আর ভার্সিটি যায় না ভার্সিটির উল্টো দিকে চলে যায়৷ রিকশা থেকে নেমে ফারহা রিকশাচালকের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটা ভাঙ্গা বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিলে রিকশাচালক বলে ওঠে ,” আফামনি আপনে কই জান? এই হানে তো এই ভাঙ্গা বাড়িডা ছাড়া আর কোন বাড়ি নাই৷ আর এই বাড়িডা তো দেইখা মনে হয়না কোন মানুষজন থাকে৷” ফারহার চোখে মুখে অদ্ভুত হাসি খেলে উঠলো রিকশাচালকের কথা শুনে৷ রিকশা চালক ফারহার হাসির মানে বুঝতে না পেরে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারহা ভাঙ্গা বাড়িটার ভেতর ঢুকে গেল৷
.
.
.
#চলবে……………

[সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here