চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -০২+৩

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০২

🕊
মেঘ তার গাড়িতে উঠে বসতে একটা পাগলের সাজে একজন লোক এসে মেঘের গাড়ির জানালায় নক করে।মেঘ তার ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে জানালা খুলতে লোকটি একটা পেনড্রাইভ গাড়ির ভেতরে ফেলে মেঘের হাত থেকে টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।লোকটাকে চলে যেতে দেখে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ চলে যেতেই আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে এসে কাউকে কল করে সবটা বলে তখন ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন সেই ব্যক্তিকে ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে, “জাস্ট কিল হিম।”

৪.
মেঘ নিজের মতো করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।পাশের রাস্তার একটু দূর থেকে একটা ট্রাক দ্রুতগতিতে মেঘের গাড়ির দিকে আসছে।মেঘ পাশে তাকিয়ে ট্রাকটাকে নিজের দিকে আসতে দেখে বাঁকা হেসে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়।মেঘের গাড়ির একটু কাছাকাছি আসতেই ট্রাক টার ব্রেক ফেইল হয়ে যায়।ট্রাক চালানো ব্যক্তিটি হতভম্ব হয়ে যায় হঠাৎ তার ট্রাক ব্রেকফেল হতে দেখে।মেঘ দূর থেকে দেখছে ট্রাকটা এপাশ ওপাশ করছে।মেঘের মুখে বাঁকা হাসির রেশ এখনো লেগে আছে।ট্রাক চালানো ব্যক্তিটি কোনোভাবেই নিজের ট্রাকটাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না।ট্রাক থেকে লাফ দিবে যে তারও উপায় নেই।কন্ট্রোল করতে না পেরে ট্রাকটা একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায় আর লোকটি মাথায় আঘাত পাওয়ার কারন অজ্ঞান হয়ে যায়।কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা ব্লাস্ট হয়ে যায়।মেঘ দূর থেকে গাড়িতে বসে রিভলবারটা আঙ্গুলে ঘুড়াতে ঘুড়াতে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো,” দিল নে এ কাহাহে দিল সে,,, মোহাব্বাত হো গেয়াহে তুমছে……….” গান গুন গুন করে গাইতে গাইতে ফারহার মুখটা মেঘের চোখের সামনে ভেসে উঠলো৷ মেঘ মুচকি হেসে বলে,” খুব শিগ্রই দেখা হচ্ছে ফারুপাখি৷”

অন্যদিকে আগন্তুক ব্যক্তির কানে কথাটা যেতেই রাগে ফ্লোরে মোবাইলটা ছুড়ে মারে সাথে সাথে কয়েক টুকরো হয়ে যায় “ছাড়বো না মেঘ চৌধুরী তোকে আমি ছাড়বো না।এবার তো বেচেঁ গেলি কিন্তু পরেরবার আর বাচঁতে পারবি না।”

___________

ফারহা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে তনু বাইরে দাড়িয়ে আছি।তনু ফারহার দিকে তাকিয়ে দেখে ফারহার চোখ লাল হয়ে আছে।মুখে পানি দেওয়া তবুও তনু বুঝতে পারছে।তনুকে এখানে দাড়িয়ে দেখে ফারহা জিজ্ঞেস করে উঠে, “কিরে তনু তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস যে?”

“তোর জন্যই এলাম।তোকে এতবার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন সুইচড অফ আসছে তাই দেখতে আসছি তুই ঠিক আছিস কিনা।

“হ্যাঁ আসলে ফোনে চার্জ ছিলো না তাই ফোনটা বাসায় চার্জে দিয়ে আসছি।সেইজন্য হয়তো পাসনি।”

“তোর চোখমুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন।ক্যান্টিনে তো একদম ঠিকই ছিলো।”

“আরে চোখে একটা পোকা পড়েছিলো তাই চোখটা লাল হয়ে আছি।সেইজন্য মুখ ধুয়েছি।”ফারহার কথাটা তনুর হজম হলো না তবুও আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।বেশি প্রশ্ন করলে হয়তো রেগে যাবে।তাই জাস্ট এতটুকু বললো “চল ক্লাসে যাই নাহার ম্যাম এর ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।”

“না রে তনু আজ আর ক্লাস করবো না।তুই বরং ক্লাসে যা আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

“তুই ক্লাস করবি না তো আমি আর থেকে কি করবো। এমনিতেও ওই বজ্জাত দুইটার সাথে থাকলে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে।তুই থাকলে তো আমি একটু সাহস পাই।”তনুর কথায় ফারহা হেসে উঠে।তারপর দুজনই ভার্সিটি থেকে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে৷

__________

রাফিদ কলেজ থেকে এসে দেখে ফারহা রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।রাফিদ নিজের ব্যাগটা টেবিলে রেখে সমানে ফারহার দরজা ধাক্কাচ্ছে আর চেঁচিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর এসে ফারহা দরজা খুলে।রাফিদ তাকিয়ে দেখে ফারহার মাথায় টাওয়াল পেচানো।রাফিদ বুঝতে পারলো ফারহা এতোক্ষণ শাওয়ার নিচ্ছিলো।ফারহা আবার রুমে ঢুকে পেছনে রাফিদ ও।ফারহা রুমে ঢুকে রাফিদকে বলে উঠলো,

“আজ তোর ফিরতে এতো লেট হলো কেন?”

“বলেছিলাম না আজ দুটো নতুন টিউশনি পেয়েছি।কলেজ শেষ করে টিউশনি করিয়ে মাত্রই আসলাম।”ফ্লোরে পাতানো বিছানার উপর বসে কথাটা বললো রাফিদ।ফারহা রাফিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর খাবার দিচ্ছি।”রাফিদ ফারহাকে বসিয়ে ফারহার মাথা থেকে টাওয়াল খুলে মাথা মুছে দিতে দিতে বললো ” আজ আমি বাইরে থেকে তোর প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানি এনেছি।”

“কাচ্চি বিরিয়ানি মানে?তুই টাকা কোথায় পেলি?”

“আজ টিউশনি থেকে বেতন পেয়েছি ওখান থেকেই আনলাম।তোর জন্য একটা গিফট ও আছে।”

“ছোটু কেন এসব আজেবাজে খরচ করিস তুই।আমার এসব একদম পছন্দ না।তুই এখনো এসবের জন্য ছোট।”

“আমি ছোট না আমি এখন বড় হয়ে গেছি।আমার একটা মাত্র দি তার জন্য আমি গিফট আনতেই পারি সেটা তুই না করার কে রে?”

“হুম সেটাই জনাব আমি কে সেসব বলার।আপনি গিফট আনতেই পারেন এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছেন।”

“হয়েছে হয়েছে এখন চল খুব ক্ষুধা লেগেছে।আমি কিন্তু তোর ভাগের বিরিয়ানিও আমি খেয়ে ফেলবো তখন কিন্তু তোর খাওয়ার জন্য প্যাকেট ছাড়া আর কিছু থাকবে না।এমনিতেও খেয়ে খেয়ে জলহস্তী হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন।”রাফিদের কথা শুনে ফারহা রাফিদের কান টেনে ধরে বললো,” কি বললি শয়তান ছেলে আমি জলহস্তী।নিজের বড় বোনকে এসব বলতে লজ্জা করে না বজ্জাত।”

“আহহ! দি লাগছে ছাড়।ওকে ওকে এখন তো আর জলহস্তী বলবো না।”

“হুম মনে থাকে যেন।”

“উফফ এটা বলে কান ঢলতে ঢলতে দরজার কাছে গিয়ে ফারহার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,”এখন তো জলহস্তী নয় হাতি বলে ডাকবো।”এই বলে দ্রুত নিজের রুমের দিকে দৌড় দেয়।ফারহা রাফিদের দৌড় দেখে হেসে বলে উঠে,” পাগল ছেলে একটা।”

ফারহা টাওয়াল টা নেড়ে দিয়ে ভাঙা ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করে।কলে কিছু একটা বলে ফোনটা চার্জে বসিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

___________

মেঘ নিজের রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।সে ক্রাইম সিনের প্রত্যেকটা ক্লু খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।মনে মনে ভাবছে খুনি খুব চালাক।এমনভাবেই প্রত্যেকটা খুন করেছে যে তাকে ধরার মতো কোনো চিহ্নও পাচ্ছে না সে।তবে একটা প্রবাদ আছে “যে কোনো খুনি খুনের অবস্থানে একটা ভুল করেই যায়” আর মেঘ সে ভুলটাই খুঁজছে।হঠাৎ তার মনে পড়ে পেনপেনড্রাইভটার কথা।দ্রুত সে নিজের ব্যাগ থেকে পেনড্রাইভ টা বের করে ল্যাপটপ সেট করে পেনড্রাইভের ফাইলগুলো ওপেন করে।ফাইলগুলো ওপেন করেই তার চোখ চড়কগাছ।এর মানে তার ধারণাই ঠিক।সে যেভাবে আগাচ্ছে সেটাই ঠিক।ইতিমধ্যে মেঘকে যে খুন করতে চেয়েছিলো সেটার মাস্টারমাইন্ডকে খোঁজার জন্য নিজের বিশেষ টিমকে মোতায়েন করে রেখেছে।তার ধারণা সেই ব্যক্তিটাই এই খুনগুলো করেছে।

রহস্যময় হাসি দিয়ে নিজের ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয় ফারহা।এতক্ষণ সে ল্যাপটপে বসে একজন ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখছিলো।এই ল্যাপটপটা ফারহার সিক্রেট যেটা শুধু সে ছাড়া আর কেউ জানে না এমনকি রাফিদও না।ফারহা মনে মনে কিছু একটা ভেবে তার চোখ দিয়ে নোনাজল বের হয়।পুরো দুনিয়ার সামনে সে নিজেকে শক্ত দেখালেও একাকি অবস্থায় অন্য সবার ন্যায় সেও দুর্বল হয়ে পড়ে।চোখের পানিটা মুছে সে ডায়রি লিখতে বসে।ডায়রি তে সে মনের সব আনন্দ দুঃখ কষ্টের কথা লিখে রাখে।তারপর ডায়রিটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

___________

ভোর বেলা সুমধুর আজানের ধ্বনি কানে পৌছাতে ঘুম ভেঙে যায় ফারহার৷ বাসি বিছানা ঠিক করে ওযু করে নামাজ পড়ে ছোট্ট বেলকনিতে গিয়ে দাড়াতে ভোর বেলার ফুরফুরে শীতল হাওয়া গায়ে মেখে অন্ধকার আকাশে দিকে তাকিয়ে রইল৷ পুরনো বাড়ি বিধায় বাড়িটার চার দিকে নানা রকমের পুরনো গাছ রয়েছে৷ পূর্বাকাশে সূর্য মামা উকি দিতে পাখিরা তাদের বাসস্থান ছেড়ে নিজেদের খাদ্য সন্ধানে পাড়ি জমালো তা দেখে ফারহা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, জীবন যুদ্ধের আর একটা দিন তোমাকে স্বাগত জানাই৷” আকাশের অন্ধকার কেটে সূর্যের কিরণ বিস্তর ছড়িয়ে আছে৷ ঘন্টাখানিক বেলকনিতে কাটিয়ে রুমে আসতে দেখে বাড়ির মালিক দিদা এসে হাজির হয়৷ ফারহা তাকিয়ে দেখে দিদার হাতে ট্রে বুঝতে বাকি নেই সব দিনের মত আজও তাদের দুই ভাইবোনের জন্য নিজের হাতে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসেছে৷ দিদা যে তাদের দুই-ভাইবোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে সেটা ফারহা খুব ভালো করে জানে তাই মুখের উপর কিছু বলতেও পারে না৷ ফারহা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,” দিদা তোমাকে না বারণ করেছি প্রতিদিন আমাদের নাস্তা বানাবে না৷”

” এই শুরু হয়ে গেল ছুড়ি হয়ে বুড়িদের মত কথা বলা৷ বলি তোকে কিউট করে মিষ্টি বলে ডাকি তা মেয়ে একটু মিষ্টি মেয়ে হতে তো পারিস৷ খালি মুখে তেতো তেতো বুড়িদের মত কথা বলিস৷ চুপ করে নাস্তা খেয়ে ভার্সিটিতে যাও৷”

” বুড়ি তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই এখন বলো আমার কিউট বয়ফ্রেন্ড কোথায় হাহ?”

দিদা ভেংচি কেটে বলে,”আপনার বয়ফ্রেন্ড তো তার দ্বিতীয় গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত৷” কথাটা শোনা মাত্র ফারহা ঢং করে বলে ওঠে নায়য়য়য়া বয়ফ্রেন্ড শুধু আমার একার বুঝেছো বুড়ি৷ রুমে গিয়ে নিজের নাতনি কে বলে দিও আমার বয়ফ্রেন্ডের উপর যেন নজর না দেয়৷” বলতে বলতে পরোটা ছিড়ে মুখে দিয়ে আবারও বলে,” ছোটু কোথায় দিদা?”

” সে তো খেয়ে পড়তে চলে গেছে৷”

৫.
ফারহা ভার্সিটির উদ্দেশ্য বের হতে কিছুদুর যেতে বুঝতে পারে কেউ তাকে ফলো করছে৷ ফারহা কয়েক পা হেটে থমকে দাড়ায়৷ ফারহা পেছনে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে বাঁকা হেসে আবারও হাটতে লাগলো৷ ভার্সিটি পৌছে ফারহা তার বন্ধুদের কাছে চলে যায়৷ আর এদিকে ফারহাকে ভার্সিটিতে ঢুকতে দেখে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে চলে গেল৷

মেঘ থানায় পৌছাতে এক হাবিলদার এসে মেঘ কে বলে “স্যার একটা খবর আছে৷ গতকাল যে লোকটি খুন হয়েছিলো তার পুরো ইনফরমেশন পাওয়া গেছে৷ স্যার ওই লোকটা….. থামো মুশফিক এখানে নয় আমার কেবিনে চলো৷

“ওকে স্যার চলুন৷”

মেঘ মুশফিক কে নিয়ে তার কেবিনে গিয়ে বলে,” এবার বলো কি ইনফরমেশন পেয়েছো?”

” স্যার এই লোকটার নাম ইয়ামিন হাওলাদার ৷ স্যার এই ব্যাটা খুব খারাপ পিচাশ বললে হয়তো পিচাশকে অপমান করা হবে৷ স্যার এই লোকটা নিজের ব্যাবসার আড়ালে খুব খারাপ কাজ করে৷”

মেঘ খানিকটা বিরক্তি নিয়ে মুশফিককে বলে,” আসল কথায় বলো মুশফিক৷”

” সরি স্যার , স্যার ওই ব্যাটা বাচ্চাদের দুধের প্যাকেটে ক্যামিকাল মিক্স করে দুধ ঘণ আর দীর্ঘ সময় রাখার জন্য যেটা বাচ্চাদের জন্য খুবই বিপদজনক৷ স্যার আপনি জানলে অবাক হবে এর সাথে সাথে ইয়ামিন হাওলাদার মেয়েদের কিডন্যাপ করে তাদের শরীরের অর্গান গুলো বিদেশে পাচার করে৷ আর ছোট ছোট মেয়েদের বিদেশে পাচার করে৷”

” এই বিজনেস কয়জন পরিচালনা করে মুশফিক?”

” স্যার আমার কাছে খবর আছে ইয়ামিন হাওলাদার আর তার দুই ছেলে ইমান হাওলাদার এবং মিলন হাওলাদার মিলে এই বিজনেস করে৷ ”

মেঘের কেন যেন মনে হচ্ছে এর পরের টার্গেট হয়তো ইয়ামিন হাওলাদারের ছেলেরা হতে পারে৷ মেঘ কিছু একটা ভেবে মুশফিককে বলে,” মুশফিক সাহেব এই ইনফরমেশন গুলো অন্য কাউকে ভুলেও বলবেন না৷ ”

” জ্বি স্যার বলবো না৷”

“ঠিকাছে এখন আপনি যেতে পারেন৷”

মুশফিক যেতে মেঘ পায়ের উপর পা তুলে ফোন বের করে কাউকে কল করলো৷ ওপাশ থেকে কল রিসিব হতে উৎসাহিত মেয়ে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,” কবে আসছিস বেলুন?” বেলুন নাম টা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে মানুষটা ক্ষেপে গিয়ে বলে,” তুই আর ভালো হলি না মেঘের বাচ্চা৷ আমার নাম বেলুন না বেলা৷ অটিস্টিক নামটাও ঠিক করে বলতে পারিস না৷ বড় মা কেন যে তোকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় না৷”

মেঘ ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,” বোন হিসাব করে কথা বল৷ আমি তোর বড় ভাই আর আমি এখনো পিওর সিঙ্গেল তো বাচ্চা পয়দা করবো কেমনে হা? তার চেয়ে বড় কথা আমি তোর বড় মায়ের এক মাত্র ছেলে আমাকে কেন বার করে দিবে৷ বার করে দেওয়ার হলে তোকে দিবো৷”

” ভাই প্লিজ তোর ফালতু কথা বন্ধ কর আর আমার ভাবিকে জলদি খুজে বের কর৷ তারপর না হয় আমাকে জামাই সহ বাড়ি থেকে বার করে দিও, আমি মাইন্ড করবো না৷”

মেঘ হাসতে হাসতে বললো, “খুব শিগ্রই তোর ভাবিকে তোর সামনে হাজির করবো৷ যাই হোক তোর একটা হেল্প লাগবে৷”

” বিকেলের ফ্লাইটে আমি আসছি৷”

” ওকে তাহলে দেখা হচ্ছে৷”

” ইয়াপ , ভাই আমার প্যাকিং করা এখনো বাকি আছে রাখছি দেশে এসে দেখা হচ্ছে৷”

” সাবধানে আসিস আর নিজের খেয়াল রাখিস৷ আল্লাহ হাফেজ৷”

” আল্লাহ হাফেজ৷”

___________

ক্লাস শেষ করে ফারহা নেহাল নিখিল তনু আয়মানকে নিয়ে ক্লাস থেকে বের হতে তাদের সামনে অন্য ডিপার্মেন্টের কয়েকজন ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে বলে,” তুমি ফারহা তো?” অন্য একটা মেয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…

ফারহা গম্ভির মুখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,” হ্যাঁ, আমি ফারহা৷”

” আচ্ছা আমাদের সাথে তোমাকে একটু আসতে হবে৷”

ফারহা কিছু বলার আগে নিখিল বলে বলে ওঠে, ফারহাকে কোথায় নিয়ে যাবে? আর ও তোমাদের সাথে যাবে কেন?”

ছেলে মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একটা ছেলে দাঁত কটমট করে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো,” ফারহাকে কোথায় নিয়ে যাবো সেটা তোমার না জানলেও চলবে৷ আর বেশি জানতে চাইলে অসুবিধা নেই আমি তোমাকে বেশ ভালো করে জানিয়ে দিবো৷” শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বললো ছেলেটি৷ আয়মান নেহাল কিছু বলতে যাবে ফারহা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে,” তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে বস খাবার অর্ডার কর আমি কিছুক্ষণ পর আসছি৷”

” ফারহা তুই এদের সাথে একা যাবি? এদেরকে একদমি আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না৷ মনে হচ্ছে এদের ভেতর কোন ঘাপলা আছে৷” তনু ফিস ফিস করে ফারহার কানের কাছে মুখটা এনে বললো৷ ফারহা তনুর কোন কথা কানে না নিয়ে সে ছেলে মেয়ে গুলোর সাথে হাটতে লাগলো৷

ফারহাকে নিয়ে ছেলে মেয়ে গুলো একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের ঢুকতে তাদের পেছন পেছন আরও দুজন ছেলে ঢুকে ক্লাস রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়৷ সাথে সাথে ছেলে মেয়ের গুলোর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক পৌশাচিক হাসি৷ যেটা ফারহার চোখ এরায়নি তাদের আড়ালে ফারহার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসি৷
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৩

🕊

ফারহাকে নিয়ে ছেলে মেয়ে গুলো একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের ঢুকতে তাদের পেছন পেছন আরও দুজন ছেলে ঢুকে ক্লাস রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়৷ সাথে সাথে ছেলে মেয়ের গুলোর ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে এক পৌশাচিক হাসি৷ যেটা ফারহার চোখ এরায়নি তাদের আড়ালে ফারহার ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো এক রহস্যময় হাসি৷

ছেলে মেয়েদের ভেতর থেকে একটা ছেলে খুবই নোংরা দৃষ্টিতে ফারহার দিকে তাকাতে তাকাতে ফারহার চার দিকে ঘুরতে লাগলো আর ফারহার দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” দোস্ত মালটা কিন্তু জোস অনেক দিন ধরে এই মালটার দিকে আমার নজর ছিলো কিন্তু মালটার নাগর গুলার জন্য আশেপাশে যেতে পারি নি তবে এবার মালটাকে মনের আশ মিটিয়ে তৃপ্তি নিয়ে টেষ্ট করবো৷” ছেলেটার কথা শুনে এক মেয়ে বলে উঠলো,” খবরদার জনি ভুলে মেয়েটাকে টাচ করার চেষ্টা করবি না বস কিন্তু আমাদের আগে বলে দিয়েছিলো সলিট মাল চাই৷ আর দশটি মেয়ে বসকে দিতে হবে এটাকে নিয়ে দশটা পূর্ণ হবে৷ এটার গায়ে একটা ফুলের টোকা যেন না পরে জনি৷”

” দোস্ত প্লিজ একবার একটু টেস্ট করি না তোরা শুধু বসকে বলবি না৷”

জনির কথার জুড়াজুড়িতে মেয়ে গুলো রাজি না হলেও ছেলে গুলো রাজি হয় কারণ তাদেরও ফারহার উপর নজর ছিলো৷ ফারহা শুরু থেকে তেমন কিছু বলেনি কারণ ফারহা জানতে চাইছিলো ছেলে মেয়ে গুলো ঠিক কি কারণে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে ৷ এখন কারণ গুলো ফারহার কাছে পরিষ্কার৷ ফারহা এক ব্যাঞ্চের উপর উঠে বসে ছেলে মেয়ে গুলোর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,” এই তোরা আগে ঠিক কর কে প্রথমে আমার কাছে আসবি কারণ আমার কাছে সময় কম, বন্ধুরা আমার জন্য ক্যান্টিনে বসে আছে৷ আমাকে যেতে হবে৷”

ফারহার কথা শুনে ছেলে মেয়ে গুলো বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে উঠলো,” উহু মামনি তোমার তো আর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না৷ কারণ এই মুহূর্ত থেকে তুমি আমাদের কাছে বন্ধি আর এখান থেকে তোমার গন্তব্য স্থান হলো আমাদের বসের ডেরা৷ সেখানে তোমাকে নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু তার আগে তোমাকে যে একটু আদর করবো সোনা৷” এই বলে জনি ফারহার দিকে এগোতে লাগলো ফারহা শীতল দৃষ্টিতে জনি নামক ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল৷ জনি ফারহার কাছে এসে ফারহার ওরনায় হাত দিতে যাবে তখনি ফারহা পাশে ভাঙা ব্যাঞ্চের পা তুলে নিয়ে সুচালো লোহা থাকা অংশটা জনির পেটে ঢুকিয়ে দিলো৷ কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে জনি মাটিতে পড়ে গেল৷ চোখের সামনে হঠাৎ শান্তু মেয়েকে এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করতে দেখে ছেলে মেয়ে গুলো হতবম্ব হয়ে গেলো৷ কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ফারহা আবারও ব্যাঞ্চের উপর বসে পড়ে ছেলে গুলোর উদ্দেশ্য বলে,” বলেছিলাম আমার হাতে সময় কম যা করার দ্রুত করো তোমরা৷ আর না হলে আমাকে যেতে দেও৷”

মেয়ে গুলো কোন কথা না বললেও ছেলে দুইজন তাদের বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে প্রচন্ড রেগে গেল৷ দুজনে রেগে ফারহার দিকে এগিয়ে আঘাত করতে নিলে ফারহা কৌশলে প্রথম এগিয়ে আসা ছেলেটার বুকে লাথি মারে আর দ্বিতীয় ছেলেটার গলায় ডান হাতে দুই আঙ্গুল দিয়ে আঘাত করতে ছেলেটার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে৷ তিন বন্ধুর এমন ভয়ানক অবস্থা দেখে মেয়ে তিনজন প্রচন্ড ঘাবড়ে যায়৷ ফারহা তার লম্বা চুল গুলো হাত খোপা করতে করতে ধীর পায়ে মেয়ে গুলোর দিকে এগিয়ে বলতে লাগলো,” কি হলো আপুরা তোমরা কিছু কি বলতে চাও?” মেয়ে গুলো ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,” না আমরা কিছু বলতে চাই না? ”

ফারহা বাঁকা হেসে তার ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে কাউকে একটা মেসেজ করে৷ ফারহা মেসেজ করে মেয়ে গুলোর দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,” বাকি মেয়ে গুলো কে কোথায় রাখা হয়েছে?”

ফারহার কথা শুনে চমকে তাকালো মেয়ে গুলো৷ মেয়ে গুলোর মনে হলো ফারহার শীতল দৃষ্টি যেন মুহূর্তে তাদের ভেতরকার সব কথা গুলো পড়ে নিচ্ছে৷ ভয়ে মুখগুলো শুকিয়ে গেছে মেয়ে গুলোর৷ ফারহা ঘাড় বাঁকা করে মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আমি সবাইকে মাত্র একটা সুযোগ দি আর তোমরা সে সুযোগ হারিয়েছো৷ ” বলে বাঁকা হাঁসলো ফারহা৷ মেয়ে গুলো ভয়ে কেঁদে দিলো৷ ফারহা মেয়ে গুলো ভয়ার্ত মুখ দেখে আর কিছু বললো না ততক্ষনে দরজায় দু’বার নক হতে ফারহা মেয়ে গুলো কে দরজা খোলার ইশারা দিতে একটা মেয়ে দরজা খুলে দৌর দিতে নিলে সামনে প্রায় ৬ ফুট লম্বা কয়েকজন লোক ভেতরে ঢুকলো৷ লোক গুলোর মুখে মাক্স আর চোখে কালো সানগ্লাস পড়া লোকগুলো ফারহার সামনে এসে দাড়াতে ফারহা বলে,” ছেলে গুলোর ঠিকঠিক ব্যবস্থা করো আর এমন অবস্থা করবে যেন ছেলে গুলো বেঁচে থাকবে কিন্তু প্রতি নিয়ত নিজের মৃত্যু কামনা করবে৷ আর এই মেয়ের গুলোর থেকে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করো৷ যদি কিছু বলতে না চায় তাহলে নিশ্বাসটাই বন্ধ করে দিবে৷” ফারহার কথা শুনে লোক গুলো রোবটের মত ফারহার নির্দেশ পালন করে৷ ফারহা তার ব্যাগটা নিয়ে কিছু হয়নি এমন ভাবে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ ফারহা বের হতে মেয়ে গুলোর প্রথমে চিৎকার শুরু হলেও পরবর্তী কোন আওয়াজ শোনা যায় নি৷ ফারহা ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে ক্যান্টিনে প্রবেশ করতে নেহাল নিখিল তনু আয়মান ফারহাকে দেখে স্বস্থির শ্বাস ফেলে বলে,” কি বললো ওই ফাজিল ছেলে মেয়ে গুলো?”

” তেমন কিছু না খাবার অর্ডার দিয়েছিস তো? আমার কিন্তু প্রচন্ড খিদে পেয়েছে৷”

৬.
রাফিদ তার ক্লাস শেষ করে একটা টিউশনি করানোর উদ্দেশ্য কলেজ থেকে বের হয়৷ কলেজের কাছাকাছি ছাত্রের বাড়ি থাকায় রাফিদ এই সময়ে টিউশনিটা ঠিক করে নেয়৷ রাফিদ তার হাতে ঘড়িতে টাইম দেখে আরও দ্রুত গতিতে পা চালিয়ে হাটতে লাগলো৷ রাফিদ হাটতে হাটতে খানিকটা বড় রাস্তায় উঠে গেছে হঠাৎ তখনি একটা গাড়ি রাফিদের পাশ ঘেষে চলে যেতে রাফিদ ভয়ে সরে যেতে নিলে রাস্তায় কাঁদা পানির উপর পরে যায়৷ রাফিদ শান্ত স্বভাবের হলেও এই সময় এমন এক্সিডেন্ট মোটেও কাম্য ছিলো না তার রেগে হাতের কাছে থাকা ভাঙা ইট নিয়ে গাড়ির দিকে ছুড়ে মারে৷ ইট সোজা গিয়ে গাড়ির পেছনের লাইটে লেগে লাইট ভেঙে যায়, সাথে সাথে গাড়ি থেমে যায়৷ ততোক্ষণে রাফিদ উঠে দাড়ায়৷ তখন গাড়ি থেকে একটি মেয়েকে নামতে দেখে রাফিদের বিরক্তি যেন আরও বেরে গেল৷ রাফিদের ধারনা বড়লোক ছেলে মেয়ে এমন অর্থসম্পত্তির কারনে মানুষদের মানুষ মনে করে না তার চাক্ষুষ প্রমান হলো এই মেয়ে৷

রাফিদের ভাবনার মাঝে মেয়েটি এসে রাফিদের সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,” আই এম সরি মিস্টার আমার বেঁখেয়ালী গাড়ি চালানোর জন্য আপনার এক্সিডেন্টটা হলো৷ আসলে ভাইয়ের সাথে এত বছর পর দেখা হবে সে এক্সসাইটমেন্টে হয়তো এই ভুল আমার দ্বারা হয়েছে৷ এন্ড এগেইন সরি৷”

মেয়েটির মুখে সবটা শুনে রাফিদের মনটা যেন হুট করে ভালো হয়ে গেল৷ তাই কথা না পেঁচিয়ে বলল,” ইট’স ওকে এন্ড এর পর থেকে চেষ্টা করবেন এভাবে বেঁখেয়ালী হয়ে গাড়ি না চালানোর৷”

” ওকে আচ্ছা আপনার ড্রেস তো নোংরা হয়ে গেল৷ সামনে কোন শপিং মল আছে? থাকলে চলুন আপনার ড্রেস চেন্জ করা টা প্রয়োজন৷”

রাফিদ মুচকি হেসে বললো,” তার কোন প্রয়োজন নেই৷ আমার কাছে টাকা আছে নিজের ড্রেস কেনার আপনার কিনে দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই৷”

” এই যে মিস্টার আমি আপনাকে দয়া করছি না আর না ভিক্ষা দিচ্ছি৷ আমি একটি ভুল করেছি আর সেটা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি৷”

” প্রয়োজন নেই মিস, শুধু এভাবে গাড়ি চলাবেন না৷ আসছি আল্লাহ হাফেজ৷”

রাফিদ আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটতে লাগলো তখন পেছন থেকে মেয়েটি বলে উঠলো,” মিস্টার এরোগেন্ট বয় তোমাকে তো আমি দেখে নিবো৷ নাহলে আমি বেলা চৌধুরী নই৷ ” মেয়েটি তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে রাফিদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

ফারহা মাসকাবারি বাজার করে বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখে রাফিদ গল্পের বই পড়ছে৷ ফারহাকে আসতে দেখে রাফিদ বই রেখে ফারহার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ দুইটা নিয়ে বলতে লাগলো,” দি তোকে কতবার করে বলেছি এত ভারি ব্যাগ নিয়ে তোর আসতে হবে না আমি টিউশন শেষে বাজার করে আনবো৷” রাফিদ ব্যাগ রেখে ফারহার জন্য একগ্লাস ঠান্ডা পানি ফারহার দিকে এগিয়ে দিলো৷ ফারহা পানি খেয়ে রাফিদকে বললো,” আজ এই সময় তুই এখানে কেন? তোর না টিউশন থাকে?”

রাফিদ গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে বললো,” আর বলিস না দি আজ টিউশনটা একটা মেয়ের জন্য মিস দিতে হয়েছে৷”

একটা মেয়ে! কথাটা শুনে ফারহা চোখজোড়া ছোট ছোট করে রাফিদের দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা মেয়ে মানে!”

রাফিদ এবার পুরো বিষয়টা ফারহাকে খুলে বললো৷ সবটা শুনে ফারহা গম্ভির মুখে বলে উঠলো,” এটা কখন ঘটেছে?”

” কলেজ শেষে৷”

ফারহার কন্ঠ আরও গম্ভির করে বলে উঠলো রাফিদকে,” আজ থেকে তুই আর কোন টিউশন করবে না ছোটু৷ সামনে যে এতিমখানা আছে সেখানকার বাচ্চাদের পড়াবে যে সময় টা তুই ফ্রি থাকবি৷ ” ফারহার কথা শুনে রাফিদ চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো মানে কি! তুই কি ওই মেয়েটাকে ভয় পাচ্ছিস দি? আমার কোন ক্ষতি হবার ভয়ে তোর এই ডিসিশন?”

ফারহা রাফিদের কথার কোন জবাব না দিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে রাফিদ কে বললো,”যা বলেছি সেটা যেন হয় ছোটু এর বাইরে যেন তোকে একপা যেতে না দেখি৷”

ফারহা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিতে রাফিদ মুখ ফুলিয়ে বলতে লাগলো,” এই মাসটা যদি টিউশন না করি তাহলে তো দি’র জন্য ওর বার্থডে তে সারপ্রাইজটা দিতে পারবো না৷ উফ এই দি টা না আদেশ দিয়ে চলে গেল এদিকে আমি এখন কি করবো৷” ভাবনায় বিভোর হয়ে ফারহার জন্য খাবার রেডি করতে চলে গেলো৷

________

মেঘ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল মনোযোগ দিয়ে দেখছে৷ হঠাৎ মেঘের হাত থেকে কেউ ফাইলটা ছিনিয়ে নিলো মেঘ প্রচন্ড রেগে সামনে তাকাতে দেখে তার কলিজার টুকরো তার ছোট চাচার মেয়ে বেলা৷ মুহূর্তে সব রাগ গলে জল হয়ে গেল এত বছর পর বোন কে দেখে৷ বেলা যে তাকে সারপ্রাইজ দিতে যে থানায় এসে হাজির হবে এটা মেঘ একদমই ভাবতে পারেনি৷ বেলা মুচকি হেসে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বলে,” কেমন আছো দাভাই ?”

মেঘ বেলার মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলে আমার পুচকি বেলা যখন তার দাভাইয়ের কাছে তখন তার দাভাই ভালো থাকবে না এটা হতে পারে৷ এখন বল বাড়িতে গিয়েছিলি?”

” না দাভাই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে৷”

“লক্ষী বোন আমার বল কি খাবি?”

“খাওয়া দাওয়া পরে হবে এখন বলো কোন কেস নিয়ে তুমি এত চাপে আছো?”

” তুই এতটুকু পুচকি মেয়ে তুই কি করে আমার সমস্যা সমাধান করবি?”

” উফ দাভাই ভুলে যাচ্ছো আমি ল নিয়ে পড়ছি৷ যাই হোক বলতো তোর সমস্যা গুলো৷”

মেঘ এবার বলতে লাগলো শহরে প্রত্যেক মাসে একটা করে মার্ডার হওয়ার কথাটা, আর এটাও বলে সব মা’র্ডার একি পের্টেনে হওয়াটাও… সব শুনে বেলা বলে,” ভাই তুই তো মাথা মোটা না তাহলে এই সিম্পল জিনিস গুলো তোর চোখের আড়াল হলো কি করে? যাই হোক একটা কথাই বলবো তুই একজন সাধারণ মানুষের মত না ভেবে একজন ক্রিমিনালের মত করে ভাব দেখবি তুই তোর সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবি৷

মেঘ বেলার গাল টেনে দিয়ে বললো, এই জন্য তোকে এত ভালোবাসি বেলুন৷ আমার কিউট বেলুন বনু৷”

বেলা কপোট রাগ দেখিয়ে বললো, ” দেখ দাভাই তখন আমি ছোট ছিলাম আর একটু গলুমলু ছিলাম তখন না হয় বেলুন ডাকতি কিন্তু এখন তো আর গলুমলু নেই ৷ তবে এখন কেন এই বিশ্রি নাম ধরে ডাকো দাভাই?”

মেঘ কোন উওর না দিয়ে ফাইল গুলো ড্রয়ারে রেখা লক করে বেলাকে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে যায়৷

লাল নীল আলোর জ্বলছে চারিদিকে সাথে বিকট চিৎকার৷ এই চিৎকার যেন কারো হৃৎপিন্ড কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট৷ কলেজের সেই মেয়ে গুলো থরথর করে কাঁপছে তাদের সাথে থাকা ছেলে বন্ধুদের আর্তনাদ শুনে৷ কারও মুখে কোন কথা নেই তারা কেউ বুঝতে পারছে না এখন রাত না দিন৷ কারণ তাদের যেখানে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানে বাইরের আলো বাতাস ঢোকার বিন্দু মাত্র জায়গা নেই৷ ভেতর টা কেমন ঠান্ডা অনুভব করছে মেয়ে গুলো৷ এই ঠান্ডা পরিবেশেও দরদর করে ঘামছে৷ হঠাৎ কিছুক্ষণ বাদে ছেলে গুলো আর্তনাদ থেমে যায়৷আর শুনতে পায় কারও পায়ের আওয়াজ…………
.
.
.
#চলবে…………
.
.
#চলবে…………….
[ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here