চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -২১ ও শেষ

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_২১
.
.
🌺
পরেরদিন সবাই একত্রে ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছিলো তখনি শাফায়াত চৌধুরীর ফোনটা বেজে ওঠে৷ ম্যানেজারের নাম্বার দেখে শাফায়াত কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে যা বললো তা শুনে শাফায়াত চৌধুরী আতঁকে ওঠে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল৷

” ভাইজান কী হয়েছে? তোমকর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?”

” ড্যাড কিছু তো বলো কী হয়েছে?”

শাফায়াত চৌধুরী গ্লাসে থাকা পানি টুকু খেয়ে দম নিয়ে বললো,” আমাকে এখুনি ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে মেঘ৷”

” কী হয়েছে বলবে তো?”

” আ’গুন আ’গুন লেগেছে ফ্যাক্টরিতে, সব মাল আ,গুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মেঘ৷ আমি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম৷”

” ড্যাড কিচ্ছু হয়নি৷ আমি এখুনি চেন্জ করে আসছি৷” মেঘ নিজের রুমে গিয়ে চেন্জ করে নিচে এসে দেখে তার চাচা বাবা দুজনে তৈরি৷ তিনজনই দ্রুত রওনা হয়ে গেল ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্য৷

“আপা নিউজটা শুনেছিস?”

চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে ফারহা আদিলের কথার জবাব দিলো,” শুনেছি৷ যে অর্থ সম্পত্তির অংহকারের আমার জীবন নষ্ট করেছে৷ তাদের পতনের সময় হয়ে এসেছে পিচ্চি৷”

” আপা আমার একটা প্রশ্ন ছিলো৷”

” কি প্রশ্ন?”

” মেঘের বাবা শাফায়াত চৌধুরীর কোম্পানির সাথে ফুফা মানে আশরাফ খান এর সম্পর্ক কী?”

ফোনের ওপাশ থেকে আদিলের প্রশ্ন শুনে ফারহা মুচকি হেসে বললো,” শাফায়াত চৌধুরী আর আশরাফ খান এরা দুজন বিজনেস পাটর্নার পিচ্চি৷ তাই এই কোম্পানি বা ফ্যাক্টরির ক্ষতি হওয়া মানে দুজনের ক্ষতি হওয়া৷ এখন তুই তাদের কে কিনে নে যারা এদের কাঁচামাল সাপ্লাই করে৷ আর এদের লসের খবরটা শেয়ার মার্কেটে ছড়িয়ে দে৷”

“তারপর?”

” তারপর? তারপর না হয় নিজেই দেখতে পাবি পিচ্চি৷” কথা গুলো বলেই রহস্যময়ী হাসি দিলো ফারহা৷

কখনো রোদ কখনো বৃষ্টি শ্রাবণ মাসে এমনটাই হয়ে থাকে৷ কিন্তু এখন মুশলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ড্রাইভ করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে মেঘের অন্যদিকে তার বাবা আশরাফ খান কে ফোন করে সবটা জানাতে তিনি জানান , তিনি শহরের বাইরে আছে এবং খুব শীগ্রই ফিরে আসবে৷ ততক্ষণে যেন সবটা তারা সামলে নেয়৷

এদিকে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে ফায়ার সার্ভিস আনলেও যা যা ক্ষ,তি হওয়ার সেটা হয়ে গেছে৷ চারিদিকে শুধুমাত্র ধ্বং,সাবশেষ পড়ে আছে৷ শাফায়াত চৌধুরীর চোখ ফেটে যেন কান্না পাচ্ছে৷ তার এত বছরের কষ্ট করে গড়ে তোলা ফ্যাক্টরি আজ ধ্বং,স হয়ে গেল৷ অন্য দিকে এখনো ব্যাংক ঋন নিয়েছিলো ১০০ কোটি টাকা নেক্টস প্রজেক্টের জন্য সেটাও এখনো পরিশোধ হয়নি৷ শাফায়াত চৌধুরী টেনশনে স্টোক করে বসে৷

২৩.

ফারহা তৈরি হয়ে বের হবে তখন রাফিদকে দেখে ফারহা ভ্রু-জোড়া কুচকে রাফিদকে বলে,” কলেজে যাস নি?”

রাফিদ আস্তে করে উওর দেয়৷

” মাথা ব্যাথা করছে দি তাই আজ কলেজে যাই নি৷”

ফারহা রাফিদের পাশে বসে বলে,” সত্যি করে বলতো রাফিদ সত্যি মাথা ব্যাথা করছে নাকি হৃদয়ে ব্যাথা করছে?”

রাফিদ আর লুকালো না ফারহার কাছে সত্যি টাই বললো,” দি আমি বেলাকে সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি৷ ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না৷”

ফারহা মুচকি হেসে রাফিদের মাথায় হাত রেখে বললো,” চিন্তা করিস না বেলা তোরই হবে৷ কথা দিলাম৷”

রাফিদের জন্য এতটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার৷ রাফিদ হাসি মুখে রেডি হয়ে কলেজে বেরিয়ে গেল৷ ফারহাও রাফিদের বের হওয়ার পর পর দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল৷

মেইন গেট দিয়ে বের হওয়ার পর পর একটা গাড়ি এসে ফারহার সামনে থামে৷ ফারহা চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

শহরে একের পর এক খু,ন হচ্ছে কিডন্যাপ হচ্ছে পুলিশ এখনো খুনিকে ধরতে পারেনি৷ পুলিশ সম্পর্কে যা নয় তাই বলছে মিডিয়া৷ পুলিশ কমিশনার কেসটা নিয়ে প্রচন্ড ডিস্টার্ব আছে৷ কি করবে বুঝতে পারছে না৷ এর মধ্যে দরজায় নক পড়তে কমিশনার মেঘকে দেখতে পেয়ে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,” মেঘ খুন কিড,ন্যাপিং কে করছে? এগুলো জানতে পেরেছো?”

” অনেকটা জানতে পেরেছি স্যার এখন শুধু হাতে নাতে ধরার অপেক্ষা৷”

” তাহলে তোমার পুলিশের চাকরি ছাড়ার নাটকটা করা বিফলে যাইনি ঠিক তো?”

” জ্বী স্যার৷ এটা তো মাত্র খুনি টোপ দিয়েছি৷ যার জন্য খু,নি ওভার কন্ফিডেন্স দেখাতে গিয়ে নিজের করা কাজ গুলোর প্রমান রেখে গেছে৷”

” তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছি না মেঘ৷ তুমি সত্যি আমাদের ডিপার্মেন্টের গর্ব৷”

” স্যার আমি দুদিনের জন্য ছুটির আবেদন করছি৷ দুইদিন পর আসল অপরাধী আপনার সামনে নিয়ে আসবো৷”

” অলরাইট মেঘ৷ তোমার দুইদিনের ছুটি মঞ্জুর করলাম৷”

” আসছি স্যার৷”

মেঘ হেড কোয়ার্টার থেকে বের হওয়ার পর পর একটা লোক আড়ালে চলে গেল৷

ফারহা তার গোপন ডেয়ার বসে আছে৷ চোখে মুখে অসম্ভব রাগ ফুটে আছে৷ সামনে তিনটে মেয়ে ভয়ে রুমের এক কোণে বসে আছে৷ মেয়ে গুলোকে ফারহা ছেড়ে দিয়ে ছিলো৷ সেই মেয়ে গুলো কে মেঘ আজ তার জেরার মুখে ফেলেছিলো৷ মেয়ে গুলো মেঘের কঠিন জেরার মুখে পরে সবটাই বলে দিয়েছে তবে ফারহার নামটা বলার সাহস হয়নি৷ তার আগেই ফারহার লোকেরা মেয়ে গুলোকে সরিয়ে ফেলে৷ ফারহা এটা ভেবে পাচ্ছে না যার বাবা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সে কি না এখন আসামী ধরতে এসেছে৷ বাহ এই হচ্ছে সত দায়িত্বশীল সাহসী পুলিশ অফিসার৷ যে কী না নিজের দায়িত্ব থেকে একচুল নরছে না কিন্তু মিস্টার অফিসার যখন আমার সাথে খেলতে চাইছে তখন না হয় তার সাথে একটু খেলি৷ আমাকে ধরবে তাই না? এবার দেখি কে জিতে আর কে হারে৷

ফারহা তার লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,” আপনাদের ঠিক কী করতে হবে নিশ্চয়ই জানেন?”

” ইয়েস ম্যাম৷ আপনি চিন্তা করবেন না আমরা বাকি টা সামলে নিবো৷ ”

ফারহা মেয়ে গুলোর দিকে আ,গুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডেরা থেকে বেরিয়ে গেল৷

আশরাফ খান হসপিটালে আসতে রিপোটার তাকে ঘিরে ধরে নানা রকম প্রশ্ন করতে থাকে৷ আশরাফ খানের পিএ তাদের কে সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে৷ আশরাফকে দেখে মায়রা কোন টু-শব্দ করলো না৷ শাফায়াতের কেবিনের বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো তার স্বামীর সুস্থ হবার আশায়৷ শাফিন আশরাফকে দেখে তার কাছে গিয়ে ভাইয়ের জন্য কাঁদতে লাগলো৷ মিরা তার স্বামীর কুমিরের কান্না দেখে মনে মনে তার স্বামীকে বাহবা দিতে লাগলো৷ এত ভালো অভিনয় তার স্বামী যে করতে পারে এটা মিরা ধারনা করতে পারে নি৷

আশরাফ খান শাফিনকে শান্ত করে মিসেস মায়রার কাছে যায়৷ মিসেস মায়রা আশরাফকে দেখে কোন কথা বলে অন্য দিকে ফিরে রইল৷ আশরাফ মায়রার এমন বিহেব দেখে কিছুটা অবাক হয় কারণ মায়রা কখনো তার সাথে এমন আচরণ করেনি৷ আশরাফ মায়রার পাশে বসে বলে বোন চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে৷ মায়রা এবার মুখ খোলে বলে,” সব ঠিক হয়ে যাবে? কী করে ঠিক হবে ভাইজান? আপনি আপনার বন্ধু আর মেঘ মিলে একটা অসহায় মা মরা মেয়ের সাথে যা করেছেন তার কী কোন বিচার হবে না বলছেন?”

” মানে কী বলছো বোন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷”

” আপনারা তিনজন ফারহার সাথে ঠিক কী কী করেছেন তা কী আপনার মনে আছে ভাইজান? দেখুন পাপের শা,স্তি আল্লাহ আপনাদের দেওয়া শুরু করে দিয়েছে তার সব চেয়ে বড় প্রমান আপনার বন্ধু, দেখুন এই হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে৷”

আশরাফের মুখে কোন কথা নেই৷ সে জানে সে যা করেছে কোন মেয়ে কোন মা কোন স্ত্রী তাকে ক্ষমা করবে না৷ আশরাফ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো৷

” আমিও যে শাস্তি পাচ্ছি বোন৷ আমার একমাত্র মেয়ে যে কী না কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালকিন সে কী ভাঙ্গাচোরা এক চিলেকোঠায় থাকছে৷ নিজেকে এতিম বলে পরিচয় দিচ্ছে যেখানে তার জন্মদাতা পিতা এখনো বেঁচে আছে৷ আমার মেয়ে আমাকে বাবা পর্যন্ত বলে না গত চার বছর ধরে৷ এটা কি আমার জন্য শাস্তি নয়?

মায়রা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে,” এটা অতি সমান্য শাস্তি ভাইজান৷ আপনারা যা করেছেন তার কোন ক্ষমা হয় না৷ আর এই শাস্তি তো কিছুই না৷” মায়রার কথা শেষ হতে না হতে আশরাফের পিএ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলে,” স্যার সর্বনাস হয়ে গেছে আপনার বড় ক্যামিকেল ফ্যাক্টরিতে আ,গু,ন ধরে গেছে৷ ইতোমধ্যে পনেরো জন শ্রমিক নিহত হয়েছে আর চল্লিশ জন আহত হয়েছে৷ তাদের কে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে৷”

পিএ যা বললো তা শুনে আশরাফ খান আর বসে থাকতে পারলেন না দ্রুত ফ্যাক্টেরিতে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো তখনি মায়রা বলে ওঠে,” দেখুন ভাইজান যে সম্পত্তির অহং,কারে আপনি দুটো প্রাণকে বিনাকারণে শে,ষ করে দিয়েছেন তার পাপের শা,স্তি শুরু হয়ে গেছে৷ আপনাদের অহং,কার আজ আগুনে ছাই হয়ে যাচ্ছে৷ দ্রুত গিয়ে সে আগুন থেকে নিজেদের অহং,কার বাঁচাতে পারেন কী না দেখুন ভাইজান৷”

আশরাফ খান আর একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গেল এদিকে শাফিন আর মিরা দুজনে হতবাক হয়ে মায়রার দিকে তাকিয়ে রইল৷

২৪.
ফারহার কথা মত মেয়ে গুলোকে আবার তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়৷ মেঘ যেহেতু দুদিনের ছুটি নিয়েছে তাই মেঘ সরাসরি কাজে অংশ না নিয়ে ফোনে তার টিম কে ইন্সট্রাকশন দিয়ে আসছে৷ অন্যদিকে হুট করে মিলন হাওলাদার মিসিং ওনাকে কোথাও খুজে না পেয়ে মৃ’ত ইমাম হাওলাদারের স্ত্রী থানায় এসে অভিযোগ জানায়৷

শাফায়াত আপাদতো বিপদ মুক্ত রয়েছে কথা শোনা মাত্র শাফিন চৌধুরীর মুখটা অন্ধকারে ছেঁয়ে গেলো৷ কিন্তু বিপদ যেন তাদের পিছু ছাড়ে নি৷ একের পর এক অঘটন তাদের ফ্যাক্টেরিতে ঘটে যাচ্ছে৷ মেঘ হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে সমস্যা গুলো সামলাতে৷ সেদিনটা পুরো কেটে গেলো৷ মেঘ একমিনিটের জন্য বসার সুযোগ পায় নি৷ এদিকে আদিল ফারহার কথা মত সব কাজই প্রায় শেষ করে ফেলেছে এখন শুধু সেই শুভ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে দুজনে৷

রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি ফারহা তখন লাইট নিভিয়ে ল্যাপটপে কোন কাজ করছিলো৷ হঠাৎ করেই বাইরে দমকা হাওয়া আর আকাশে বজ্রপাতের শব্দে পুরো বাড়ি যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে৷ ফারহা ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ধীর পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ চারিদিক নিস্তব্ধ অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ফারহা প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিচ্ছে৷ বেলী ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ফারহা ঠিক ভাবে বৃষ্টি ছুতে পারছে না বিধায় ঠোঁট ফুলিয়ে ভেতরে যেতে নিলে হঠাৎ সোডিয়াম লাইটের আলোয় কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহা চমকে যায়৷ এতো রাতে কেউ একজন এভাবে রাস্তায় কে দাড়িয়ে থাকবে? ফারহার মনে বেশ সন্ধেহ হয়৷ ফারহা আর একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে দাড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় মেঘ৷ বৃষ্টির বেগ সময়ের সাথে সাথে যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ ফারহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছাতা নিয়ে রুম থেকে বের হয়৷

” আপনি এত রাতে এখানে কী করছেন মিস্টার চৌধুরী?”

মেঘ কিছু না বলে হুট করে ফারহাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” ভালোবাসি ফারুপাখি৷ বড্ড ভালোবাসি তোমায়, আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবে না তো ফারুপাখি? বলো আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?” ফারহার আর সহ্য হলো জোর করে নিজের থেকে মেঘকে সরিয়ে দিলো৷ মেঘ হঠাৎ ঝাপটে ধরায় ফারহার হাত থেকে ছাতা টা পড়ে যায়৷ মেঘের সাথে সাথে ফারহাও বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে৷ ফারহা সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মেঘের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,” আমি কখনো আপনাতে জড়িয়েছি যে ছেড়ে চলে যাবো মিস্টার চৌধুরী? আপনার ভালোবাসা হয়তো আমি কিন্তু আমার ভালোবাসা আপনি নন৷ তাই ভবিষ্যতে আমাকে জড়িয়ে ধরার স্পর্ধা করবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ যদি করেন আই সোয়্যার আপনার ওই বুকে আমি আ,গুন জ্বালিয়ে দিবো৷” কথা গুলো বলে ফারহা চলে যেতে নিলে মেঘ ফারহার হাত চেপে ধরে পেছনে মুড়ে বলে,” ভালোবাসি বলে তোমায় এত ছাড় দিচ্ছি ফারুপাখি৷ আমাকে বাধ্য করো না এমন কিছু করতে যা তুমি কখনো কল্পনাও করবে না৷” ফারহা ত্যাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে মেঘ কে বলে,” এই তো আপনার আসল রুপে ফিরে এসেছেন৷ তো বলুন কী করবেন আপনি?”

” তেমন কিছু না তোমার প্রিয় মানুষ গুলোকে একটু কষ্ট দিবো৷”

ফারহা ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি৷ মেঘ সে হাসি দেখে বেশ সংঙ্কিত হলো৷

” তাই মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার প্রিয় কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট দিবেন তাই তো?”

” ওকে ডান কষ্ট দিয়ে দেখান৷ আমিও দেখতে চাই অফিসার মেঘ চৌধুরীর কত ক্ষমতা৷” মেঘ ফারহার হাত ছেড়ে দিয়ে ফারহাকে বললো……
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#শেষপর্ব
.
.
🌺
ফারহা ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি৷ মেঘ সে হাসি দেখে বেশ সংঙ্কিত হলো৷

” তাই মিস্টার চৌধুরী আপনি আমার প্রিয় কাছের মানুষ গুলোকে কষ্ট দিবেন তাই তো? ওকে ডান কষ্ট দিয়ে দেখান৷ আমিও দেখতে চাই অফিসার মেঘ চৌধুরীর কত ক্ষমতা৷” মেঘ ফারহার হাত ছেড়ে দিয়ে ফারহাকে বললো,” আগামীকাল তৈরি থেকো ফারুপাখি৷ আগামীকাল আমরা বিয়ে করছি৷”

ফারহা মুখে রহস্যময় হাসি দিয়ে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,” ডান মিস্টার চৌধুরী৷ আমি বধু সেজে তৈরি থাকবো কিন্তু আপনি বিয়ের করতে আসবেন তো?”

মেঘ চমকালো ফারহার কথা শুনে তবুও সেটা মুখে প্রকাশ না করে দৃঢ় গলায় বলে উঠলো,” আসবো৷ ”

মেঘ আর কিছু বললো না ধীরে ধীরে অন্ধকারে হারিয়ে গেল৷ ফারহা রাস্তা থেকে ছাতাটা তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল৷

কাক ডাকা ভোর বেলায় ফোনের কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফারহার৷ বিছানা হাতরে ফোন খুজে কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনে ফারহার চোখের ঘুম যেন উড়ে গেল৷ ফারহা কথা বললো না চুপ করে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটার কথা শুনে গেল নিরবে৷ কিছুক্ষণ পর ফোনের ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে ফারহা বুঝলো কল কেটে গেছে৷ তবুও কিছুক্ষণ ফোনটা ধরে বসে থাকে৷

ফারহা ফ্রেস হয়ে নিজের হাতে রাফিদের জন্য নাস্তা বানালো৷ রাফিদ নাস্তা করতে এসে নিজের পছন্দ মত খাবার দেখে বেশ অবাক হয়৷ আলুর পরোটা, হালুয়া, মাংস ভুনা, আর আচারে খিচুড়ি ৷

“দি আজ এত কিছু তুই বানিয়েছিস?”

” না পাশের বাসার আন্টি বানিয়েছে৷ এত কথা না বলে ঝটপট খেয়ে নে তো৷”

ফারহা আজ নিজের হাতে রাফিদকে খাইয়ে দিলো৷ রাফিদের মনটা যেন আজ কেমন করছে৷ তার দি’কে হারিয়ে ফেলার এক তীব্র ভয় তার মনে কাজ করছে ৷ তবুও তার দি’কে বুঝতে দিলো না৷ ফারহারাফিদ কে খাইয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,” ছোটু আগামী সপ্তাহে বেলা বাংলাদেশে আসবে৷ তখন তোরা রেজিস্ট্রি করে রাখিস৷ তোদের পড়ালেখা শেষ হলে বড় করে আয়োজন করে বিয়ে করিস আর শোন এই বাড়িটা যেন এমনটাই থাকে৷ যদি কখনো বাড়িটা ভাঙ্গার প্রয়োজন হয় তাহলে তুই সে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করবি৷ আর দাদু দিদা কে নিজের সাথে রাখবি৷ আর একটা কথা ফুফির যাবতীয় সম্পত্তির দলিল ব্যাংকের লকারে আছে আর চাবিটা আমার আলমারির উপরের কাপড়ের ভাজে আছে৷ আর…..” বাকিটা বলার আগে রাফিদ বলে উঠলো,” দি কি হয়েছে আজ তোর? এত কিছু আমাকে কেন বলছিস? এমন ভাবে বলছিস যেন তুই কোথাও চলে যাবি আর যাওয়ার আগে সবটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছিস উদ্ভুত৷” রাফিদের কথার বিপরীতে ফারহা শুধু হাসলো৷ এই হাসিতে কোন প্রাণ খুজে পেলো না রাফিদ৷

“ছোটু মানুষের জীবনে কী হয়না হয় কেউ বলতে পারে না তাই শুধু একটা কথাই বলবো বেলার হাত কখনো ছাড়বি না৷ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে ভালোবেসে যাবি৷ আর শোন আজ তোকে কলেজ যেতে হবে না৷”

” ওকে দি৷ তাহলে তো তুই ও ভার্সিটিতে যাচ্ছিস না?”

” না তবে তনু, নিখিল , নেহাল, আয়মান আসবে৷ দুপুরে ওদের জন্য রান্না করবো৷”

” দারুণ হবে দি৷ তাহলে আমি বাজার টা সেরে ফেলি?”

“হুম৷”

রাফিদ খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বাজারে চলে যায়৷ রাফিদ বের হওয়ার পর পরই ফারহা আদিলকে কল করে৷

” হ্যালো পিচ্চি৷”

” হা আপা আমি তোকেই কল করতে যাচ্ছিলাম৷ আপা রাতে মেসেজে আমাকে যা যা করতে বলেছিস আমি সব কাজ করে ফেলেছি কিন্তু আপা এটা তো বেশ রিস্কি হয়ে গেল না? তোর যদি কিছু হয়ে যায় তখন? ”

” ওপারে যে আয়াশ আমার জন্য অপেক্ষা করছে পিচ্চি৷ আমাকে তো যেতেই হবে আজ হোক বা কাল৷”

” আপা৷” ফোনের ওপাশ থেকে রেগে চিৎকার করে উঠলো আদিল৷

” ভুলেও দ্বিতীয়বার এই কথা যেন তোর মুখে না শুনি আপা৷ আই সোয়্যার যদি আর কখনো বলিস তাহলে তুই কোন দিন আমার মুখ দেখবি না৷”

আদিলের কথা শুনে বিষাদময় হাসি দিয়ে ফারহা বললো,” ঠিক আছে বলবো না তবে কাজে একচুল ভুল হলে আমাকে আর দেখতে পাবি না পিচ্চি৷”

” না আপা কোন ভুল হবে না আই প্রমিজ৷ আর আমার কথা আমি রাখবো কিন্তু তুই তোর কথা রাখবি তো?”

” রাখবো৷ রাখবো তোর কথা৷”

” ঠিক আছে তাহলে রাতে কথা হচ্ছে৷”

” হুম৷”

২৫.

শাফায়াত চৌধুরী আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে৷ এটা শুনে মায়রা নিশ্চিন্ত হলো কিন্তু মেঘ তারপর যা বললো তা শুনে মায়রার মনের ভেতর কু ডাকছে৷ ফারহাকে মেঘ আজ বিয়ে করবে৷ কথাটা না যতটা ইজিলি মেঘ বলতেছে৷ শাফিন আর মিরা ততটা ইজিলি মেনে নিতে পারেনি৷ দুজনের মনের ভেতর রাগে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে৷ মেঘ ফারহাকে বিয়ে করলে যে তাদের সব কিছু হারাতে হবে৷ এটা তো তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না৷ স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক কঠিন সিধার্ন্ত নিলো হয়তো এই সির্ধান্ত তাদের পথে বসিয়ে দিবে আর নয়তো তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে৷

মেঘ ডক্টরের সাথে কথা বলে শাফায়াত চৌধুরীকে বিকেলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পারমিশন নেয় যদিও আলাদা ভাবে বেশি কেয়ারফুলের জন্য একজন নার্স ঠিক করেছে মেঘ৷ ফ্যাক্টরির বিষয়টা আপাতত ম্যানেজার সামলাচ্ছে তাই মেঘকে ওই বিষয়ে নাক গলানোর প্রয়োজন পরেনি৷ মেঘ একাই ফারহার জন্য বিয়ের কেনাকাটা করে ড্রাইভারকে দিয়ে ফারহার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে হাবিলদার মুশফিককের কল রিসিভ করে৷

” স্যার আপনার কথা মত মেয়েদের হালকা ডোজ দিতে মেয়ে গুলো সেই ব্যক্তির নাম বলে দিয়েছে৷ যে এতদিন যাবত খু’ন আর কিড’ন্যা’পিং করেছে৷ কিন্তু স্যার আশ্চর্যের বিষয় হলো মিলন হাওলাদার কেন নিজের বাপ ভাইকে খুন করবে? শুধু টাকার জন্য? স্যার আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থানায় আসুন৷”

” মুশফিক আমি আগামিকাল আসছি থানায় আজ আসবো না৷”

” স্যার আজ আসবেন না কেন?”

” আজ আমার বিয়ে তাই আসবো না মুশফিক৷”

” স্যার আপনার বিয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল৷”

” ধন্যবাদ মুশফিক৷ বিয়েটা পারিবারিক হচ্ছে বলে তেমন কাউকে বলছি না তবে বড় করে যখন করবো তখন সবাইকে জানাবো৷”

” ওকে স্যার৷”

মেঘ কল কেটে আশরাফ খান কে ফোন করে বিয়ের বিষয়টা জানাতে তিনি বেশ চমকে যায়৷ তিনি তার মেয়েকে চিনে, ফারহা এত সহজে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে এই বিষয় টা যেন তার কোন ভাবে হজম হচ্ছে না তবুও মেঘকে তেমন কিছু না বলে বললো,” এড্রেস পাঠিয়ে দিয়ো মেঘ সঠিক সময়ে চলে আসবো৷”

” আঙ্কেল বিয়েটা চৌধুরী ভিলায় হচ্ছে রাত আটটায়৷”

“শাফায়াত!”

” ড্যাডকেও হসপিটাল থেকে বিকেলে ডিসট্রাস করে দেওয়া হবে৷”

” ঠিক আছে আমি চলে আসবো৷”

দুপুরে চার বন্ধু এসে হাজির হলো ফারহার ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে৷ বড়বাড়ির ছেলে মেয়ে হয়েও তাদের ভেতর যে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই সেটা দেখে রাফিদের বেশ ভালো লাগলো৷ দুপুরে এসে চার বন্ধু ফারহার সাথে গল্প হাসি মজা করতে করতে রান্নায় হেল্প করে দিলো৷ এদিকে নিখিল একদম স্বাভাবিক আচরণ করছে ফারহার সাথে ঠিক যেমন আগে করতো৷ এটা দেখে ফারহা মৃদু হাসলো৷ রান্না শেষ হলে সবাই এক সাথে ফ্লোরে মাদুর পেতে একসাথে বসে খাবার খেলো সবাই৷ খাওয়া শেষ হওয়ার পর পর ফারহা উঠে যায়৷ আর কিছুক্ষণ পর দুটো ব্যাগ হাতে করে নিয়ে আসে৷

” এই ব্যাগ গুলো তে কী আছে ফারহা?” (তনু)

ফারহা মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে পাঁচটা ঘড়ি বের করলো৷ সবাই ঘড়ি গুলো দেখছে একি রকম ডিজাইনের ঘড়ি৷

” এই ঘড়ি গুলো তোদের জন্য৷”

ফারহা একে একে সবার হাতে ঘড়ি গুলো পড়িয়ে দিলো৷ রাফিদ, তনু , নিখিল, নেহাল আর আয়মানের হাতে৷ ঘড়ি গুলো যে বেশ দামী সেটা দেখলেই বুঝা যায়৷

আয়মান কপোট রাগ দেখিয়ে ফারহাকে বললো,” এত খরচ করার কোন প্রয়োজন ছিলো না ফারহা৷”

” জানি ছিলো না কিন্তু এই ঘড়িটা আমার স্মৃতি হয়ে না থাক৷ দেখ আমার হাতেও সেম ডিজাইনের ঘড়ি৷”

আয়মান দেখলো সত্যি ফারহার হাতেও সেম ডিজাইনের ঘড়ি৷ বাকিরা আর কিছু বললো না৷ গল্প করে পুরো বিকেলটা কেটে গেল ফারহার সন্ধ্যার আগেই সবাই চলে যায়৷ সবাই চলে যাওয়ার পরই রাফিদ ফারহার কাছে এসে বলে,” দি ভাইয়া আপু আসার আগে বেলাদের বাড়ি থেকে এতো কিছু তোমাকে কেন পাঠালো? আর ড্রেস গহনা দেখে মনে হলো কারও বিয়ের শপিং কিন্তু বিয়ের শপিং এখানে কেন পাঠাবে?”

ফারহা নির্লিপ্ত গলায় বলে উঠলো,” কারণ আজ আমার বিয়ে আর এগুলো তোর বেলার ভাই পাঠিয়েছে৷”

” মেঘ চৌধুরী!”

ফারহা মাথা দুলালো৷ রাফিদের চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠলো৷ তবে তার দি’কে কিছু বললো না৷ ফারহা ব্যাগ থেকে ড্রেস গুলো বের করে ছবি তুলে আদিলকে পাঠিয়ে দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,” আজ নাহলে এস্পার হবে নয় ওস্পার৷”

শাফিন আর মিরা দুজনে রিলাক্সে বসে খাচ্ছে৷ তাদের যেন এই বিয়ে নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই৷ পুরো চৌধুরী ভিলা রঙ্গিন আলোয় রাঙ্গিয়ে তুললো মেঘ৷ কয়েক ঘন্টার ভেতর পুরো বাড়ি বিয়ে বাড়ির রুপে রুপান্তর হয়েছে৷ মেঘ তার বিয়ের শেরওয়ানী ছুঁয়ে দেখছে৷ কয়েক বছর পূর্বে এমন একটা শেরওয়ানী সে পড়েছিলো কিন্তু আফসোস তার ভালোবাসাকে সে পায়নি কিন্তু আজ! আজ সে তার ভালোবাসাকে নিজের করে পাবে৷ মেঘ শেরওয়ানী পড়ে তৈরি হয়ে নিজেকে আয়নায় দেখছে৷ আর মাত্র কিছুক্ষণ কিছুক্ষণ পর সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজে গিয়ে নিয়ে আসবে৷ মেঘ রেডি হয়ে নিচে নামতে জানতে পারে শাফিন অলরেডি ফুলে সজ্জ্বিত একটি গাড়ি ফারহাকে আনতে পাঠিয়ে দিয়েছে আদঘন্টা পূর্বে৷ এর মানে দাড়ায় গাড়িটি নিশ্চয়ই মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসেছে?

ফারহা সত্যি গাঢ় লাল রঙের লেহেঙ্গা সোনালী ওড়না আর ভারি গহনা পড়ে তৈরি হয়ে নিলো৷ ফারহা নিজেই নিজেকে হালকা সাজে সজ্জ্বিত করে ফেলে৷ রাফিদ তখন রুমে এসে ফারহা কে দেখে ওখানে স্থির হয়ে দাড়িয়ে বলে,” আল্লাহ আমি কী সত্যি দেখছি নাকি ভুল দেখছি? এটা কী আমার দি নাকী আসমান থেকে নেমে আসা কোন হুর পরী?” নীলাভ চোখে গাঢ় কাজল দেওয়া আখিদ্বয় থেকে কাজল খানিকটা আঙ্গুলে ছুইয়ে ফারহার কানের লতিতে লাগিয়ে দিয়ে বললো,” আল্লাহ আমার দি’র উপর যেন কোন বদনজর না পরে৷”

” তোর হয়েছে?” বিরক্ত হয়ে বললো ফারহা৷ ফারহার কথা শুনে রাফিদের ধ্যান ভাঙে৷ উফ দি বলতেই তো ভুলে গেছি৷ তোর জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে অনেকক্ষণ হলো৷” ফারহা রাফিদের দিকে রাগ দেখিয়ে বললো,” তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে ছাগল৷” রাফিদের গাল টেনে দিয়ে ফারহা তার ফোনটা হাতে নিয়ে বের হতে হতে বলে ,” ছোটু দরজাটা খোলা রাখ লক করার প্রয়োজন নেই৷ আর তুই আমার সাথে নিচে চল৷”

রাফিদ তার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,” উফফ দি কি জোরে গাল টেনে দিলি? গালটা জ্বলছে৷”

ফারহা সিড়ি দিয়ে নামার সময় চিলেকোঠার রুমটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ কারণ এখানে যে #চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া রয়েছে৷ চোখের কোণ ভরে এলো ফারহার সেটা আড়াল করতে ধীরে ধীরে নিচে নামতে নামতে বললো, ” হয়তো আর কখনো তোর গাল জোরা টানতে পারবো না তাই তো আজ একটু টেনে দিলাম যাতে আমাকে সব সময় মনে রাখিস বুঝেছিস ছোটু?”

ফারহা মেঘদের বাড়ি থেকে পাঠানো গাড়িতে উঠে বসার পর পর রাফিদ উঠতে নিলে ফারহা চেঁচিয়ে বলে,” ছোটু তুই এই গাড়ি তে উঠবি না৷”

” কেন দি?”

” কারণ পেছনের গাড়িটায় গিয়ে বস৷ এই গাড়িতে একমাত্র আমি থাকবো আর ড্রাইভার মামা আপনি ছোটুর সাথে ওই গাড়িতে বসুন৷”

” কিন্তু স্যার যে বললো আমাকে আপনার সাথে আসতে?”

” আপনাকে যা বলেছি আপনি সেটা করুন নাহলে আমি গাড়ি থেকে নেমে যাবো৷”

” না না ম্যাম আমি নামছি৷” ড্রাইভার নামার পর পরই ফারহা ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷ আর পেছনের গাড়িতে রাফিদ আর ড্রাইভার বসে৷ ফারহা গাড়ি তার নিজের মত করেই চালিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে মেঘ গাড়ি নিয়ে বের হবার পর পরই শাফিন আর মিরা চৌধুরী বের হয়৷ মিরা ফোনে কোন এক নার্সের সাথে কথা বলে শাফিনকে বলে,” ডান শাফিন৷ কিছুক্ষণের মধ্যে সুসংবাদটা মেঘ পেয়ে যাবে৷”

” গ্রেট আর সামনে হবে ধামাকা৷” বলতে বলতে গাড়ির স্পিড যেন আরও বাড়িয়ে দেয়৷ মেঘ দুটো গাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলো একটা ছিলো তার বাবা কে আনার জন্য যেটা মেঘ গেটের সামনে রেখেছিলো কিন্তু হসপিটালে পাঠানো হয়নি আর যেই গাড়িটা ফারহার জন্য পাঠানোর জন্য ছিলো সেটা সাজানো কম্পিলিট করে আগের গাড়িটার পাশাপাশি রাখা হয়৷ শাফিনের লোকেরা শাফিনের কথা মত প্রথম গাড়িটার ব্রে’কফে’ল করিয়ে দেয়৷ কিন্তু ভুল বসত ফারহাকে আনতে দ্বিতীয় গাড়িটি পাঠিয়ে দেয়৷ মেঘ যেহেতু অন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে তাই বাধ্য হয়ে প্রথম গাড়িটি অর্থাৎ ব্রে’ক’ফেল করা গাড়িটি নিয়ে স্বামী স্ত্রী বেরিয়ে পড়ে৷

শাফিন দ্রুত গতিতে অন্য রাস্তা ধরে মেঘের আগে ফারহার কাছে পৌছাতে চায় কারণ শাফিন মিরা দুজনে নিজ চোখে ফারহার মৃ’ত্যু উপভোগ করতে চায়৷ যেটা গত কয়েক বছরে পারে নি৷

ফারহার গাড়ি চলতে চলতে অন্ধকার রাস্তায় হারিয়ে যায়৷ রাফিদ ফারহার গাড়ি হুট করে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় কিন্তু কয়েক মিনিট পর আবার ফারহার গাড়িটি দেখতে পায়৷ দেখতে পায় বধু সাজে কেউ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে৷ অন্ধকার রাস্তা পার হওয়ার পর পর সোডিয়াম লাইটের আলোয় রাফিদ দেখতে পায় আর একটি ফুলে সজ্জ্বিত গাড়ি তাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে৷ তখনি ড্রাইভার তাদের গাড়িটা স্লো করে ফেলে কিন্তু ফারহার গাড়ির স্পিড তখন যেন বেড়ে যায় যা দেখে রাফিদ প্রচন্ড ভয় পেতে থাকে৷

অন্যদিকে শাফিন চৌধুরী তার গাড়ি নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না৷ বুঝতে বাকি নেই তার গাড়ি ব্রে’ক’ফে’ল করছে৷

” শা শাফিন কি হলো গাড়ি আস্তে চালাও৷”

” মি মিরা আমাদের গাড়ি ব্রে’কফে’ল করেছে৷”

” ওয়াট! শাফিন কী বলছো এই সব? ব্রে’কফে’ল করেছে মানে? তারমানে ব্রে’কফে’ল করা গাড়িটিতে আমরা আর অন্য গাড়িটায় ফারহা৷ শিট৷”

শাফিনের গাড়ির পেছনে মেঘের গাড়ি মেঘ গাড়িতে বসে সবটাই দেখছে কিন্তু তার ছোট চাচা যেভাবে গাড়িটা চালাচ্ছে সেটা দেখে মেঘের ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো সেই অজানা ভয়ে৷ রাফিদ মেঘ দুজনে দুদিক দিয়ে সবটা দেখলেও কিছু করার ছিলো না৷ কিন্তু তৎক্ষনাৎ ফারহার গাড়ি আর শাফিন মিরার গাড়ি সামনা সামনি সংঘর্ষে গাড়ি উল্টে আগুন ধরে যায়৷ কয়েক মুহূর্তে চোখের সামনে দুটো গাড়িতে ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে মেঘ রাফিদ গাড়ি থেকে নেমে জ্বলন্ত গাড়ির দিকে যেতে নিলে ড্রাইভার মেঘ আর রাফিদকে আটকে দেয়৷ দুটো গাড়িতে তাদের আপন জনেরা আগুনে পুড়ছে ৷ রাফিদ ওখানে বসে পরে দি দি বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো৷ অন্যদিকে মেঘ পাগলের মত জ্বলন্ত গাড়ির দিকে যেতে চাইছে৷ ড্রাইভার অনেক কষ্ট করে মেঘকে ঝাপটে ধরে রেখে৷ ইতোমধ্যে মানুষের ভীর জমে গেছে৷ পুলিশের গাড়ি এসে সবটা সামলে নেয় কিন্তু একটা ফোন কল মেঘ কে মুহূর্তের মধ্যে বাকিটুকু ভেঙে দিতে সক্ষম ছিলো৷ মেঘের আর্তচিৎকার আর পাগলামির মাঝে মেঘের ফোন টা বেজে ওঠে ড্রাইভার কল রিসিভ করে লাউডে দেয়৷ ফোনের ওপাশ থেকে কান্নারত গলায় মায়রা চৌধুরী মেঘের নাম ধরে কেঁদে উঠতে মেঘ শান্ত হয়ে ফোন হাতে নিয়ে বলে,” মম কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?”

” মে মেঘ তোর বাবা, তোর বাবা আর নেই ৷” মায়রা চৌধুরীর কথাটা শোনা মাত্র মেঘ বসে পড়লো৷ একদিনে চার চারটে আপনজনকে হারিয়ে মেঘ বাকরুদ্ধ৷ একদিকে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর যন্ত্রণা অন্য দিকে নিজের জন্মদাতা পিতাকে হারানোর যন্ত্রনা ৷ বাবা মা’র সমতুল্য চাচা চাচীকে হারানোর যন্ত্রনায় মেঘ যেন পাথরে রুপান্তর নিলো৷ মেঘ জ্বলন্ত আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, ” জিতে গেছো তুমি৷ শুনতে পাচ্ছো ফারুপাখি তুমি জিতে গেছো তোমার আর আয়াশের ভালোবাসা জিতে গেল৷ আমি হেরে গেলাম৷ হেরে গেলাম আমি তোমাদের ভালোবাসার কাছে৷ দেখো ফারুপাখি আজ আমি সব হারিয়েছি৷ সর্বহারা আমি৷ সব শেষ সব শেষ তুমি জিতে গেছো ফারুপাখি তুমি জিতে গেছো৷” বলতে বলতে মেঘ উল্টো দিকে হাটতে লাগলো৷ রাফিদ পেছন থেকে অনেকবার মেঘ কে ডেকেছে কিন্তু মেঘ সায় দেয় নি৷ অন্ধকার রাস্তায় হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেলো মেঘ৷

#সমাপ্ত

বিঃদ্রঃ বড্ড অগোছালো ভাবে শেষ করলাম #চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া প্রথম খন্ড ৷ গল্পটা শেষ করার প্রয়োজন ছিলো কারণ লেখায় এক প্রকার অনিহা ধরেছে আমায় আর সাথে রয়েছে ব্যস্ততা৷ আচ্ছা তার আগে বলুন তো ফারহা কী আদৌ মা’রা গেছে? নাকী এটা কোন নতুন গল্পের সূচনা? যাই হোক কেমন হলো জানাবেন আর ভুল ত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসসালামু আলাইকুম৷
.
.
#………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here