চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -১৫+১৬

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_১৫
.
.
🌸
“ম্যাম মেঘ স্যার এখন ঠিক আছে তবে অতিরিক্ত র’ক্ত ক্ষরণের জন্য একটু দূর্বল৷ ডক্টর ঘুমের ইন্জেকশন দিয়েছে৷ মেঘ স্যার এখন ঘুমাচ্ছে৷ ”

কথা গুলো শুনে ফারহা ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,” ইমামের শ’রী’র টা ১০০ টু’করো করে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দিন৷”

” ওকে ম্যাম৷”

ফারহা চোখ বন্ধ করে রইল৷ ভালো লাগছে না৷ সব কিছু কেমন যেন বিশাক্ত মনে হচ্ছে৷ বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে৷ আপনজন যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন জীবিত থেকে নিজেকে মৃত মনে হয়৷ এই কষ্টের ভাগ না নিজে বহন করার ক্ষমতা রাখে আর না অন্য কারোর সাথে ভাগ করে নেওয়া যায়৷ চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো৷ কি অদ্ভুত অনুভূতি জীবনে যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবেসে ছিলো নিজের অস্তিত্বে মিশে গিয়েছিলো সেই মানুষটা তাকে ফাঁকি দিয়ে পড়পাড়ে পাড়ি জমালো সাথে নিয়ে গেল তার পেটের অনাগত সন্তানকে; আচ্ছা ভালোবাসা মানে কী শুধু ছিনিয়ে নেওয়া? নাকি ত্যাগ করা? উওর নেই? ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাতে ধা’ড়া’লো ছুড়িটা তুলে নিলো৷ লাইটের আলোয় চকচক করছে ছুড়িটা৷ ফারহার কেন যেন ইচ্ছে করছে এই ছুড়িটা নিজের গলায় বসিয়ে দিতে৷ কিন্তু সব ইচ্ছেরা যে ডানা মেলে উড়তে পারে না৷ ফারহা তবুও ছুড়িটা নিজের গলায় ধরতে কেউ একজন হুট করে এসে ফারহার হাত থেকে ছুড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে বলে,” যারা অন্যায় করেছে তাদের কে শাস্তি না দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছিস আপা?”

কথা গুলো শুনে চমকে সামনে তাকালো ফারহা৷ সামনে আর কেউ নয় তার আদরের ভাই আদিল দাড়িয়ে আছে৷

” পিচ্চি তুই?”

” কেন অবাক হচ্ছিস আমাকে দেখে? নাকি আমার জন্য নিজেকে শেষ করতে পারিস নি বলে আফসোস হচ্ছে?”

আদিলের কথা শুনে ফারহা চমকে উঠে বলে,” আমি নিজেকে শেষ করতে চাইছিলাম?”

ফারহার কথা শুনে আদিল নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বলতে লাগলো,” আমি যদি আসতে আর এক সেকেন্ড দেরি করতাম তাহলে কী হতো জানিস? আপা তুই নিজের বিষয় এতোটা কেয়ারলেস কেন? তোকে বাঁচতে হবে আর কারোর জন্য না হোক আমার আর রাফিদের জন্য তোকে বাঁচতে হবে৷ যারা তোর সুখ ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের কে নরক ঘুড়িয়ে আনবি সেখানে তুই নিজেকে শেষ করতে যাচ্ছিলি৷ ”

ফারহা আদিলের বুকে মাথা গুজে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো,” বিশ্বাস কর পিচ্চি আমি জানি না কেন এমন টা করতে গেলাম৷ তুই ঠিক সময়ে না আসলে হয়তো আমি নিজের অজান্তে নিজেকে শেষ করে দিতাম৷”

” আপা ভুলে যাস না তোর কাজ এখনো শেষ হয়নি৷ তুই বলেছিলি ওই চৌধুরী পরিবারের ভিত নাড়িয়ে দিবি৷ আর ফুফাকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিবি তাহলে কেন এভাবে দূবর্ল হচ্ছিস? নাকি তুই ওই মেঘ চৌধুরীকে ভালোবেসে ফেলেছিস?” আদিলের লাস্ট কথাটা শোনা মাত্র ফারহা প্রচন্ড রেগে আদিলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে উঠলো,” আমি আয়াশকে ভালোবাসি কোন খুনিকে ভালোবাসি না৷ ওরা খুনি খুন করেছে আমার নিশ্পাপ বাচ্চাকে যে কী না পৃথিবীর আলো পর্যন্ত দেখেনি৷ খুন করেছে আমার স্বামীকে যাকে আমি পাগলের মত ভালোবাসতাম৷ তুই বলছিস আমি তাকে ভালোবাসবো?”

” তাহলে ওকে বাঁচালি কেন? ওখানে পড়ে থাকতো৷ ”

আদিলের কথা শুনে ফারহা পাগলের মত হাসতে হাসতে বললো,” ওদের কে আমি এত সহজ মৃত্যু দিবো? এটা তুই কি করে ভাবলি পিচ্চি? আমি গত পাঁচটি বছর ধরে ধুকে ধুকে মরেছি আর ওদের কে এত তাড়াতাড়ি মারবো? হাহ্ কখনো না আমি ওদের মাঝে একজন হয়ে গোটা চৌধুরী বংশটাকে একটু একটু করে শেষ করে দিবো৷ কিন্তু তুই এখন এখানে? তোর তো এখন লন্ডন মামা মামীর কাছে থাকার কথা৷”

” আপা তুই হয়তো জানিস না তোর সুরক্ষার জন্য গোপনে তোর পেছনে আমি সিকিউরিটি নিযুক্ত করেছি৷ তারাই আমাকে তোর সব খবর দেয়৷”

ফারহা আদিলকে আর কিছু বললো না দেখে আদিল বলে উঠলো,” মাম্মা তোকে দেখতে চেয়েছে আপা৷”

মামী আমাকে দেখতে চেয়েছে আর আমি যাবো না এটা কি করে সম্ভব? যাবো তবে এদেশে সব কাজ চুকিয়ে ফেলার পর পিচ্চি৷”

“দেন তাহলে আমিও তখন তোর সাথে ওদেশে যাবো৷”

ফারহা মুচকি হাসলো কারণ ফারহা জানে আদিল ওকে না নিয়ে এই দেশ ছেড়ে এক পাও নড়বে না৷

” আপা রাফিদের বিষয় তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো৷”

“বল৷”

” বেলা চৌধুরী রাফিদকে ওর ভালোবাসার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে৷ আর ফুফাও তো বাংলাদেশে আছে৷”

” মিস্টার আশরাফ খান কে নিয়ে আমি কোন কথা শুনতে চাই না পিচ্চি৷ ওই লোকটা মরুক বাচুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না৷ ওই লোকটা তো আমার কাছে চার বছর আগেই মরে গেছে৷ যেদিন আমি নিস্ব হয়েছি সেদিন ওই লোকটাও আমার কাছে মরে গেছে৷ ”

“আপা তোর খুব কষ্ট হচ্ছে না?”

” হ্যাঁ কষ্ট হচ্ছে৷ ভিষণ কষ্ট হচ্ছে পিচ্চি৷ জানিস তো আমার কষ্ট গুলো এতো বছর ধরে ওই চিলেকোঠায় দম বন্ধ হয়ে আছে৷ ”

” জানি আপা তাই তো তুই ওই ভাঙ্গা চিলেকোঠার ঘরে থাকছিস৷”

ফারহা ঘড়ির দিকে সময়টা দেখে নিয়ে আদিলকে বললো,” এখন আর কথা নয় পিচ্চি৷ আমাকে যেতে হবে৷”

” কোথায় যাবি এত রাতে?”

” বাড়ি ফিরবো৷”

” ওকে চল আমি তোকে পৌছে দিয়ে আসছি৷ আর একটা কথা এখন থেকে তোর গাড়িতে তুই যাতায়াত করবি৷ নো রিক্সা নো হাটাহাটি ওকে?”

” ওকে৷”

১৮.

রাগে একের পর এক ড্রিংকস করছে শাহিন চৌধুরী৷ মিরা তার স্বামীর রাগ কমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না৷ এদিকে শাফিন রাগে গ্লাস ছুড়ে ফেলে বলতে লাগলো,” আমার প্লান গুলো আগের বারের মত ফ্লপ হচ্ছে মিরা৷ মেঘের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমাদের সব হারাতে হবে৷ ”

” শান্ত হও শাহিন৷ মেঘের কিচ্ছু হবে না৷ ডক্টর বলেছে মেঘ এখন বিপদ মুক্ত৷ তুমি এখন মেঘ কে নিয়ে না ভেবে ওই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবো৷ ওকে কি ভাবে শেষ করবে? ও না শেষ হলে আমরা আমাদের প্লান কখনো সফল হবো না৷ আমাদের আগে ওকে শেষ করতে হবে৷ তাহলে এক ঢিলে আমরা তিনটি পাখি মারতে পারবো৷ এক- আশরাফ ভাই৷ দুই- শাফায়াত ভাই আর তিন- মেঘ বেলার বিয়ে৷”

” ঠিক বলেছো মিরা৷ আগে যে কাজটা শেষ করতে পারি নি৷ এবার আমরা সেই কাজ টা শেষ করবো৷ কেউ জানতেও পারবে না আমাদের ভয়ংকর প্লানের কথা হা হা হা ৷”

মন খারাপ করে বাড়িতে ফিরে নিখিল ফারহাকে কল করে৷ কিন্তু ফারহা কল রিসিভ না করে উল্টো কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ এতে নিখিলের আরও একধাপ কমে যায়৷ কিছুক্ষণ সময় পর নিখিলের ফোনে একটা মেসেজ আসে৷ নিখিল মেসেজটা অন করতে দেখতে পায় মেসেজটি আর কারও নয় বরং ফারহা পাঠিয়েছে৷ তাতে লেখা আছে আগামীকাল সকাল ১১ টায় ভার্সিটির পাশে ক্যাফেটেরিয়াতে দেখা করবে৷

নিখিল বুঝতে পারে না কেন ফারহা দেখা করতে চাইছে? নিখিল মন খারাপ করে ফোন বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো৷

এদিকে মেঘ বিপদ মুক্ত বিধায় ডক্টর মেঘের পরিবারকে রাতে থাকতে বারণ করে দেয় কারন আগামীকাল মেঘকে ডিসট্রাস করে দেওয়া হবে৷ বেলা এবং মায়রা দুজনে মেঘের কাছে থাকতে চেয়ে ছিলো কিন্তু শাফায়াত বারণ করে দেয় এবং তাদের নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে৷

আদিল ফারহাকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে চলে যায়৷ ফারহা বাড়িতে ঢুকতেই বাড়িওয়ালা দিদার ছেলে আমজাত শিকদার ফারহার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”এত রাত করে ফিরলে ফারহা? আর কে তোমাকে গাড়ি করে পৌছে দিলো?”

ফারহা শান্ত গলায় জবাব দিলো৷ কাজ ছিলো তাই লেট হয়েছে আর যে ছেলে টি আমাকে এখান গাড়ি করে পৌছে দিলো সে আমার মামাতো ভাই আদিল৷”

” তোমার মামাতো ভাই? তোমরা না বলে ছিলে তোমরা এতিম?”

” কেন এখন কি আপনাকে বলেছি আমাদের বাবা মা আছে?”

” না মানে মামাতো ভাই বললে আরকি৷”

” আঙ্কেল আমি খুব টায়ার্ড পরে কথা হবে আসছি৷”

ফারহা চলে যাওয়ার পর পর আমজাত বলে উঠলো,” উফ এই ফকির গুলাকে তাড়াতে পারলে মা বাবা কে বৃদ্ধাশ্রম পাঠিয়ে দিয়ে জায়গাটা কন্সট্রাকশনে দিয়ে দিবো৷ উফফ কত গুলো টাকা পাবো৷ যেভাবে হোক জায়গাটা বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে৷”

ফারহা রুমে ঢুকতে রাফিদ ফারহাকে প্রশ্ন করে,” দি আদিল ভাই দেশে ফিরেছে?”

” হুম৷”

রাফিদ আর কিছু বললো না৷ টেবিলে খাবার গরম করে সার্ব করলো৷ ফারহা ফ্রেস হয়ে খেতে বসে৷ কেউ তেমন একটা কথা বললো না তবে খাবার খাওয়া শেষ করে ফারহা উঠতে উঠতে বললো,” ছোটু আমি চাই বেলা তোর প্রেমে পাগল হয়ে উঠুক৷ তোর জন্য অন্যের সাথে লড়াই করুক৷ তবে….”

” তবে কী দি?”

” তোর প্রেমে পড়া বারণ৷ যদিও তুই প্রেমে পড়ে থাকিস তাহলে পুরো জীবন তোকে পস্তাতে হবে৷”

” দি তুই যেভাবে বলেছিস ঠিক সেভাবে হবে কথা দিলাম৷”

ফারহা টেবিল গুছিয়ে নিজের রুমে চলে গেল৷

পরের দিন সকালে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে প্রখর রোদে নিখিলকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহা যেন গরম হয়ে যায়৷ এই চারটা বছর এই বন্ধু গুলো ওর খেয়াল রেখেছে আর আজ নিখিল ইচ্ছে করে নিজের অবহেলা করছে হয়তো ফারহার একটু এটেনশন পাওয়ার লোভে৷ ফারহা নিখিলের কাছাকাছি আসতে নিখিল কিছু বলে ওঠাে পূর্বে ফারহা বলে উঠলো,” এই কড়া রোদে এখানে কেন দাড়িয়ে আছিস ডাফার? ভেতরে চল৷”

নিখিল ভদ্র ছেলের মত ফারহার পেছন পেছন ক্যাফেটেরিয়াতে ঢুকে এক কোর্নারের বসে দুটো কফি আর স্নাক্সের অর্ডার করে৷

” নিখিল গতকাল তোর কথা পুরোটা শোনা হয়নি৷ এখন বল গতকাল কি বলতে চেয়েছিলি?”

” তার আগে তুই বল ওই অফিসার তোকে ওভাবে টেনে কেন নিয়ে গেল?”

” ওটা তোর না জানলেও চলবে নিখিল৷”

” উহু ভুল বললি ফারু৷ তোর প্রত্যেকটা বিষয় আমাকে জানতে হবে বিকজ আই লাভ ইউ৷”

ফারহা নিখিলের কথা শুনে শান্ত দৃষ্টিতে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বললো,” একটা গল্প শুনবি নিখিল?”

নিখিল একটু বিরক্ত হলো কারণ ফারহা তার কথার উওর না দিয়ে বরং গল্প শুনাতে চাইছে৷ তবুও নিখিল সায় জানালো সে শুনবে৷

” এক দেশে একটি মেয়ে ছিলো তার মা ছিলো না৷ তার বাবাই তার মা বাবা দুটোই ছিলো৷ মেয়েটি যখন কলেজে এইচ এস সি পড়ার জন্য ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলো তার কিছু দিন পর ওই কলেজের সিনিয়র একটি ছেলের সাথে মেয়েটির বন্ধুত্ব হয়৷ ছেলেটি থার্ড ইয়ারে পড়তো৷ ভিষণ ভালো ছাত্র ছিলো৷ মেয়েটিকে পড়ালেখায় গাইড করতো৷ তারা এক সাথে ঘুরতো আড্ডা দিতো৷ কিন্তু কিছুদিন পর মেয়েটি ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে৷ মেয়েটি ভালোবাসার কথাটি ছেলেটিকে জানাতে ছেলেটি না বলে দেয় কারণ সে ছিলো এতিম আর মেয়েটি ছিলো বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান৷ ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে মেয়েটি৷ মেয়েটির বাবার প্রিয় বন্ধু আর তার ছেলে হাজির হয় তার দুদিন পর, তারা মেয়েটিকে খুব আদর করতো৷ তবে মেয়েটি আঙ্কেলের ছেলের সাথে খুব কম কথা বলতো৷ ছেলেটি যে তাকে পছন্দ করতো এটা মেয়েটি বুঝতো কিন্তু পাত্তা দিতো না কারণ মেয়েটি তাকে ভালোবাসে না৷ কিছুদিন তারা তাদের বাড়িতে থাকে কিন্তু একদিন মেয়েটি জানতে পারে তার বাবা তাকে না জানিয়ে তার বন্ধুর ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে৷ মেয়েটির পড়াশুনা শেষ হলে তাদের বিয়ে হবে৷ কিন্তু কথাটি মেয়ের কানে পৌছানো মাত্র মেয়ে টি পাগলের মত ছুটে যায় তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে৷ ছেলেটি মেয়েটিকে ভালোবাসতো শুধুমাত্র নিজের দারিদ্রতা চাকরি বিহিন বেকারত্বের জন্য মেয়েটির ভালোবাসা স্বীকার করতে চায় না৷ তা দেখে মেয়েটি নিজেকে শেষ করার হুমকি দিলে ছেলেটি তাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে স্বীকার করে সেও তাকে ভালোবাসে৷ সে দিনই তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলে৷ তারপর খুব সুন্দর কাটছিলো তাদের জীবনটা, অনেক গুলো মাস কেটে যায়৷ তাদের ভালোবাসাময় খুনসুটি দিন গুলো খুব ভালো কাটছিলো৷ ফাস্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারে তার ভেতর আর একটি নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে৷ জানিস নিখিল সেদিন ছেলে টি মেয়েটিকে ধরে খুব কেঁদে ছিলো৷ সে বাবা হবে আদো আদো গলায় কেউ তাকে বাবা বলে ডাকবে৷ ছোট ছোট হাত পা গুলো ছুঁবে৷ তাদের একটা সুন্দর পরিবার হবে৷ কিন্তু তারা জানতো না তাদের জীবনে কি ঝড় আসতে চলেছে৷ তাদের সুন্দর জীবনটা যে কাল বৈশাখী ঝড় ধ্বংস করে দিবে এটা তারা কেউ জানতো না৷” এত টুকু বলে থামলো ফারহা তার চোখে পানি৷ এদিকে নিখিলের খুব আগ্রহ হচ্ছে বাকিটুকু শুনবে৷

” তারপর তারপর কি হলো ফারু?” ফারহা চোখের পানি মুছে বলে উঠলো……..
.
.
.
#চলবে…………#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_১৬
.
.
🌸

” তারপর তারপর কি হলো ফারু?” ফারহা চোখের পানি মুছে বলে উঠলো,” তারপর কি হলো জানতে চাস নিখিল?”

” হ্যাঁ ফারু বল প্লিজ তারপর কি হলো?”

ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবারও বলতে লাগলো,” মেয়েটি তখন দুই মাসের প্রেগনেন্ট৷ এই সময় প্রত্যেকটা মেয়েই কিছু শারিরীক সমস্যা হয়৷ ওই মেয়েটিরও হয়ে ছিলো৷ খাবার খেতে গেলে গন্ধ পেতো বমি বমি ভাব হতো৷ মেয়েটির বাবা প্রথমে বুঝতে না পারলেও কাজের মহিলা সবটা বুঝতে পেরে মেয়েটির বাবা কে জানায়৷ মেয়েটির বাবা বিশ্বাস করতে না পেরে মেয়েটিকে না জানিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়৷ ডক্টর পরীক্ষা করে কর্ণফাম করে জানায় মেয়েটি দুই মাসের প্রেগনেন্ট৷ মেয়েটির বাবা সব জানতে পেরে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে৷ মেয়েটি তার বাবাকে সবটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করে৷ কিন্তু তিনি সব টা জেনেও রেগে মেয়েটির গায়ে হাত তোলে ওই অবস্থায় প্রচন্ড মারধোর করে৷ জানিস নিখিল সেদিনই মেয়েটির বাবা তার বন্ধুর ছেলের সাথে মেয়েটির বিয়ে দিবে এবং সেদিনই বিয়েটা হবে বলে মেয়েটিকে জোড় করে বধু সাজানো হয়৷ আর অন্যদিকে মেয়েটির ভালোবাসার মানুষটিকে শেষ করে দিতে মেয়েটির বাবা গোপনে বেড়িয়ে পরে৷ মেয়েটি পাগলের মত তার স্বামীকে একের পর এক ফোন করতে লাগলো কিন্তু ফোন কল রিসিভ হলো না৷ কিন্তু হঠাৎ কল রিসিভ হলে মেয়েটি তার স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পেলো৷ মেয়েটি পেটে প্রচন্ড ব্যথা ভুলে গিয়ে জোর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷ মেয়েটির পেছন পেছন ছেলেটিও ছুটে আসে কিন্তু….”

” কিন্তু কী ফারু? মেয়েটি নিশ্চয়ই তার স্বামীকে বাঁচাতে পেরেছে?”

ফারহা মলিন হেসে বলে উঠলো,” না নিখিল সেদিন মেয়েটি তার স্বামীকে বাঁচাতে পারে নি আর না পেরেছে নিজের অনাগত সন্তানকে বাঁচাতে৷ সেদিন মেয়েটি দিক-বেদিক শূন্য হয়ে রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে৷ তারপর সব শেষ সব৷ সেদিন মেয়েটির জীবনের সব রঙ বির্বণ হয়ে গেল৷ সর্বস্ব হারালো মেয়েটি,”

” তারপর কী হলো?”

” মেয়েটি তিন মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করার পর হসপিটাল থেকে মুক্তি মেলে মেয়েটির৷ মেয়েটি এতটাই দূর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলো যে শেষ বারের মত তার স্বামী সন্তান কে শেষ দেখা দেখতে পারেনি নিখিল৷ নিজের জন্মদাতা পিতার এত নিষ্ঠুরতা মেয়েটি মেনে নিতে পারে নি সেদিন৷ জন্মদাতা পিতা বিধায় নিজের হাতে খুন করতে পারেনি কিন্তু ছেড়ে ও দেয়নি৷ সেদিনই মেয়েটি ওই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যায়৷”

” ওয়েট ওয়েট ফারু কাহিনীটা শুনে আমার সত্যি এখন ওই মেয়েটির বাবা কে খুন করতে ইচ্ছে করছে৷ কিন্তু এখানে তো শুধু মেয়েটির বাবার একার দোষ ছিলো না৷ তার বন্ধু এবং ছেলেরও দোষ ছিলো৷ কারণ তারা চাইলে মেয়েটির বাবাকে বুঝাতে পারতো৷ আর ছেলেটি মেয়েটিকে সাহায্য করতে পারতো৷ সেদিন যদি ছেলেটি মেয়েটিকে আটকানোর চেষ্টা না করে সাহায্য করতো তাহলে হয়তো মেয়েটির আর পূর্ণ সংসার হতো৷ এখানে প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার দোষি৷ এখন তুই আমাকে বল এই কাহিনীটা আমাকে শুনানোর কারণ?”

” আর মেয়েটি এখন কোথায়?”

” তোকে মেয়েটির গল্পটা শুনানোর নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে রাইট৷ রইল বাকি মেয়েটি কোথায়? মেয়েটি তোর সামনে বসে আছে৷” ফারহার কথা শুনে নিখিলের মুখটা শুকিয়ে গেল তার পরক্ষণে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, “”তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না ফারু?”

ফারহা মুচকি হেসে বলে উঠলো,” শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তোকে যা যা বলেছি প্রত্যেকটা কথা সত্যি আর সেই মেয়েটি আর কেউ না আমি৷”

ফারহার কথা শুনে নিখিলের মুখের হাসি মিটিয়ে গেল৷ প্রচন্ড রকমের শক্টড পেলে মানুষ যেন হতভম্ব, হতবিহ্বল হয়ে পড়ে ঠিক তেমন অবস্থা হলো নিখিলের৷ তা দেখে ফারহা মুচকি হেসে বলে উঠলো,” আজ তোর ক্লাস করতে হবে না নিখিল বাড়ি চলে যা৷ আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি৷”

ফারহা বিল পে করে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে গেল কিন্তু নিখিল উঠলো না ওভাবেই স্টাচু হয়ে বসে রইল৷

১৯.
হাওলাদার বাড়িতে আজ আহাজারি কান্নার আওয়াজে পুরো পরিবেশটা যেন ভারি হয়ে উঠলো৷ বাড়ির কর্তার পর বাড়ির বড় ছেলের এমন নৃ’শং’স মৃত্যু হতে পারে এটা কেউ ভাবতেও পারে নি৷ মিলন হাওলাদার কঠোর এবং গম্ভির মুখে বসে বাড়ির সি সি ক্যামেরার ফুটেজ গুলো চেক করছে৷ রাতে কে বা কারা গিফ্ট বক্স তার বাড়ির দরজার সামনে ফেলে যায়৷ মিলন ফুটেজ চেক করে কোন রকম ক্লু খুজে পায়নি৷ রাগে পুরো শরীর রি রি করে মিলনের, তার বড় ভাইয়ের এমন মৃ’ত্যু’র খবর যদি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের বিজনেসের যে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে৷ সে কারণে মিলন গোপনে তার ভাইয়ের টু’ক’রো করা শরীর দাফন কাফনের ব্যবস্তা করলো৷

ইমামের দাফন কাফন সম্পূর্ণ হবার পর মিলন হাওলাদার যেন আরো এগ্রেসিব হয়ে উঠেছে৷ আগের থেকে আরও বেশি হিংস্র হয়ে মেয়েদের কিডন্যাপ করা শুরু করলো৷ সাধারণ কলেজ ভার্সিটির মেয়েদের টার্গেট করে কিটন্যাপ করাচ্ছে মিলন৷ এদিকে মেঘ কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর জানতে পারে৷ মাডার্র এবং কিডন্যাপিং কেসটা অন্য অফিসারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ খবরটা শুনে মেঘের ইগোতে লাগে৷ সে দিনই মেঘ রেজিকনেশন লেটার পাঠিয়ে দেয়৷ খবরটা শুনে মেঘের বাবা প্রচন্ড খুশি হয় কারণ তিনি কখনোই চাইতেন না তার একমাত্র ছেলে সামান্য বেতনের চাকরি করুক ৷ মেঘ কে দুই হসপিটালে রাখার পর রিলিজ করে দেওয়া হয়৷ এই দুইদিনে মেঘ ফারহার কোন খবর না পেয়ে পাগল প্রায়৷ একটু সুস্থ হতেই মেঘ ফারহাকে দেখার জন্য বের হতে নিলে মেঘের বাবা মেঘকে আটকে দিয়ে বলে,” মেঘ তুমি এখন অসুস্থ আর এই মুহূর্তে তোমার বাইরে বের হওয়াটা একদম উচিত হবে না৷ তোমার এমনিতেও খারাপ চাওয়া লোকের অভাব নেই তাই আমি চাই না তুমি এই মুহূর্তে বের বাড়ি থেকে বের হও৷”

” কিন্তু ড্যাড আমার এই মুহূর্তে যাওয়া খুব জরুরী প্লিজ বাধা হয়ে দারিয়ে ও না কারণ আমি শুনবো না৷”

” শুনতে হবে মেঘ৷ এখন যদি তুমি বাড়ি থেকে বের হও তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে৷”

মেঘ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে তার বাবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়৷ শাফায়াত চৌধুরী রেগে গিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বললো না৷ তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন৷ এতক্ষণ দুরে দারিয়ে সবটা দেখছিলো বেলা৷ যখন শাফায়াত চলে গেল তখনি বেলা এসে মেঘের দরজায় নক করে মেঘ রেগে গিয়ে দরজা খুলে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখে দরজার বাইরে বেলা দারিয়ে৷

” দা ভাই ভাবির সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস?”

” এত জেনে তুই কি করবি?”

” উহু প্রশ্ন নয় উওর দে ভাবির সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস কিনা?”

” হুম চাই৷”

” ওকে আমি তোর রুমে থাকছি সবাই ভাবতে তুই রুমে আছিস৷ আর সে সুযোগে তুই গিয়ে ভাবির সাথে দেখা করে আয়৷”

বেলার কথা শুনে মুহূর্তে মেঘের সব রাগ বিলিন হয়ে গেল৷ বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷

বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ফারহা৷ গোধূলি বেলা আকাশে রঙিন মেঘের আনাগোনা৷ পাখিরা ফিরছে তাদের নিড়ে৷ বাইরে শীতল বাতাস বইছে৷ লোহার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা৷ এই সময়টা ফারহার ভীষণ পছন্দের, একাকি সময় কাটানোর জন্য এই সময়টা ফারহা নিজের সাথে সময় কাটায়৷ কিন্তু মুহূর্তে আকাশে কালো মেঘ ছেঁয়ে গেল৷ মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হতে ফারহা ছুটে যায় বাগানে রাফিদ অনেকবার বারণ কারার পরও ফারহা না শুনে বাগানে গিয়ে ভিজতে লাগলো৷ ফারহা আনমনে দুহাত মেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভিজতে লাগলো৷ আকাশের যে আজ বড্ড মন খারাপ৷ বড্ড কান্না পাচ্ছে তার আর তাই তো তার কান্না অঝরে ঝড়ে পড়ছে জমিনের বুকে৷ ফারহা চোখ মেলে তাকাতে গেটের দিকে চোখ পড়তে দেখে বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে আছে একজন সুদর্শন যুবক৷ ফারহা আরও একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে সেই সুদর্শন যুবক আর কেউ নয় মেঘ৷ মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে৷ মাথায় হাতে এখনো ব্যান্ডেজ করা৷ ভিজে একাকার অবস্থা৷ ফারহা কয়েক মুহূর্ত মেঘের দিকে তাকিয়ে থেকে দোতালায় চলে গেলো৷ সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে এখনও বৃষ্টি কমেনি বিন্দুমাত্র৷ ফারহা ড্রেস চেন্জ করে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোয় বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে ফারহা চমকে ওঠে৷ মেঘ এখনও ঠায় সেখানে দাড়িয়ে আছে৷ ফারহার সাথে সাথে রাফিদও বেলকনিতে এসে মেঘকে দেখে বলে উঠলো,” ছেলেটা কি পাগল দি?”

ফারহা নির্লিপ্ত গলায় উওর দিলো৷

“পাগল নয় খুনি৷ ওর জন্য আমার সন্তান… ” বাকিটা টা আর বলতে পারলো না কন্ঠনালীতে যেন কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আছে৷ বৃষ্টির গতি আরও তীব্র হতে দেখে রাফিদ ফারহার হাত টেনে ধরে রুমে নিয়ে যায়৷ বেলকনিতে থাকলে হয়তো ফারহা আবারও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে পারে৷ আর অন্য দিকে মেঘ ঠায় দাড়িয়ে থাকে ফারহার বেলকনির দিকে তাকিয়ে ৷ মনে তীব্র কষ্ট যন্ত্রনা নিয়ে বলতে লাগলো,” ভালোবাসি ফারুপাখি৷ আমি জানি ফারুপাখি তুমি আমাকে ভুল বুঝে আছো বাট ট্রাস্ট মি তখন তোমাকে নিজের করে নেওয়ার জন্য নিজের মনুষ্যত্বটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম৷ আজ তার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে৷ আমি সত্যি একটা অমানুষ কিন্তু তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি জান৷ তোমাতে আশক্ত আমি, তোমার নেশা ছাড়ানোর সাহস আমার নেই৷ আমার হৃদয় নিংড়ানো সব টুকু ভালোবাসা তোমার জন্য, ভালোবাসি ফারুপাখি বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়৷”

ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজার ফলে মেঘের শরীর যেন ফ্যাকাশে সাদা হয়ে গেছে৷ রাফিদ দুর থেকে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ অবস্তা বেগতিক লাগছে রাফিদের কাছে তাই দেরি না করে বেলাকে ফোন করে৷

” বেলা তোমার ভাইকে দ্রুত নিয়ে যাও৷ ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে দাড়িয়ে ভিজতে তোমার ভাই৷” সবে মাত্র চায়ের কাঁপ টা হাতে নিয়েছিলো বেলা৷ রাফিদের কথা শুনে চায়ের কাঁপটা পড়ে যেতে নিলে নিজেকে এবং চায়ের কাঁপ সামলে নেয়৷ আর ফিসফিসিয়ে বলে “আমি আসছি রাফিদ৷” বলে কল কেটে দিয়ে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরে বেলা৷

ফারহা তার সমস্থ মনোযোগ বৃষ্টি দেখছে অথচ দুইটি চোখ আকুল হয়ে যে তাকেই দেখছে সেদিকে ফারহার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷ রাফির রুমের ছোট্ট জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার৷ এদিকে মেঘের মাথায় আঘাত লাগা জায়গায় হঠাৎ করে চিনচিন করে ব্যথা অনুভব করতে লাগলো মেঘ৷ তার সাথে তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধকার হতে লাগলো৷

ভোর বেলা মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে তার নিজের রুমে শুয়ে আছে৷ আর পাশে চেয়ারে বেলা বসে বসে ঘুমাচ্ছে৷ বেডের পাশে একটা ছোট বোল আর কাপড় রাখা মেঘের বুঝতে বাকি নেই যে রাতে তার বেশ জ্বর এসেছিলো আর তার ছোট বোন সারারাত জেগে তার সেবা করেছে৷ কিন্তু সে এখানে কি করে এলো? মেঘ গতকাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনে পড়ছে না৷ মেঘ ধীর কন্ঠে বেলাকে ডাকতে লাগলো কয়েকটা ডাক শুনে বেলা জেগে যায়৷ চোখ মেলে মেঘকে দেখে বলে,” দাভাই তোর গায়ে আর জ্বর নেই তো?”

” না জ্বর নেই৷ ছোট বোনের সেবা পেয়ে জ্বর পালিয়েছে৷ এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়৷ আজ আর কলেজ যেতে হবে না৷”

” ওকে দাভাই৷” বেলা সাবধানে কেউ যাতে না দেখে তাই পা টিপে টিপে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে৷

ফোনের রিংটোনের শব্দে ফারহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঘুমের ঘোরে হাতড়ে ফোন খুজে কল রিসিভ করে কানে ধরতে কোলের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,” শুভ সকাল ফারুপাখি৷ ”

ঘুমের ঘোরে ফারহা বললো,”কে৷”

” তোমার না হওয়া একমাত্র জামাই জান৷” লাস্ট কথা গুলো শুনে ফারহার চোখের ঘুমের রেশ যেন কেটে গেল৷ বিছানা থেকে উঠে বসে ফোনের স্কিনে নাম্বারটা ভালো করে দেখে বলে চোখ মুখ শক্ত করে ফারহা বলে,” কেন ফোন করেছেন? ”

” আমার ফারুপাখিকে শুভ সকাল জানাতে৷”

” কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আপনার মুখে শুভ সকাল শুনে আমার সুন্দর সকালটা অশুভে পরিণত হয়েছে কারণ আপনি আমার জীবনে অশুভ ছায়া কাল হয়ে দাড়িয়েছেন৷”

ফারহার কথা শুনে মেঘ খুব কষ্ট পেয়েও বলে,” ওহ জান এভাবে নিজের হবু জামাই কে বলে? লোকে শুনলে কি বলবে বলো? যাই হোক আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ থেকে তুমি গাড়িতে যাতায়াত করবে৷ বুঝতে পেরেছো?”

” আপনার কী মনে হয় আমার গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই নাকি আমার গাড়ি নেই? আমার নিজের সম্পত্তি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স যা আছে তার একভাগও কী আপনার আছে মিস্টার অফিসার উপস স্যরি স্যরি আপনি তো এখন আর অফিসার নেই মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷”

” সম্পত্তি টাকা তোমার থেকে কম হলেও ভালোবাসাটা তোমার থেকে অন্তত বেশি জান৷”

” ভালোবাসা শব্দ টা আপনার ওই নোংরা মুখে বার বার উচ্চারণ করে অপমান করবেন না মিস্টার চৌধুরী৷ যাই হোক আমাকে ফোন করে নেক্টস টাইম ডিসটার্ব করার চেষ্টা করবেন না তাহলে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে৷”

“কী হবে? প্রথম বার মরি নি এবার মরে যাবো এটাই তো? তাতেও আমার আক্ষেপ নেই ফারুপাখি৷ তোমাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালোবাসি বলে যাবো৷”

ফারহা আর কিছু না বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো৷ ভীষণ রাগ হচ্ছে ফারহার তবুও নিজের রাগটা দমন করে বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়৷ রুমে এসে দেখে টেবিলের উপর খাবার ঢাকা দিয়ে রাখা ফারহার বুঝতে বাকি নেই দিদা এসে সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে৷ বুড়িটা যে তাদের দুই ভাই বোন কে ভিষণ ভালোবাসে এটা ফারহা খুব ভালো করেই জানে৷ ফারহা মুচকি হেসে রাফিদকে নিয়ে এক সাথে বসে নাস্তা করে ফারহা ভার্সিটিতে আর রাফিদ তার কলেজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লো৷ রাফিদের কলেজ ফারহার কলেজের বিপরিতে হওয়ায় রাফিদ চলে যায়৷ ফারহা হেটে তার ভার্সিটির দিকে কিছুদুর হাটার পর একটা গাড়ি এসে ফারহার সামনে এসে থামে৷ গাড়িটা দেখে ফারহা না দেখার ভান করে অন্য পাশ থেকে হেটে যেতে লাগলো৷ তখনি আর একটি গাড়ি এসে ফারহার সামনে থেমে গিয়ে দ্রুত ফারহার হাত ধরে ফারহাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷
.
.
.
#চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here