চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -১৩+১৪

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_১৩+১৪
.
.
🌸
১৬.
গাড়ির পেছনে ফলো করা লোক গুলো ফারহাদের গাড়ি ধরতে না পেরে তাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷ তখনি লোক গুলোর মধ্যে একজনের ফোন বেজে উঠলো৷ লোকটা তার ফোন বের করে ফোনের স্কিনে নামটা দেখে শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, “মেয়েটাকে শেষ করে দিয়েছিস ?”

” না বস আসলে মেয়েটা ভার্সিটি থেকে বের হবার পর পর মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছি৷”

লোকটা কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে লোকটা অত্যান্ত রাগি আর কর্কশ ভাষায় বলে উঠলো,” কু’ত্তার বাচ্চা ওই মেয়েটাকে শেষ করবি নাহলে আমি নিজের হাতে তোদের কে শেষ করবো৷”

” বস মেয়েটাকে আমরা শেষ করবো৷”

” কথাটা যেন মাথায় থাকে নাহলে কী হবে বুঝতেই পারছিস৷ এই মেয়েটাকে শেষ করার জন্য আবারও আমাকে এ দেশে আসতে হলো৷ বার বার এই মেয়েটা আমার পথের কাটা হয়ে দাড়াচ্ছে৷ শুরুতে মেয়েটাকে শেষ করে দিলে এখন আর এই সমস্যাটা হতো না৷”

” বস এবার আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন৷ ওই মেয়েটাকে শেষ করেই আমি আপনাকে সুখবর টা দিবো৷”

” সুখবরটা পেতে যেন খুব একটা দেরি না হয়৷”

লোকটি কথা গুলো বলে কল ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ ছেলে গুলো গাড়ি নিয়ে এদিক-ওদিক ফারহাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷

এদিকে নেহাল ফারহাকে তার বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে চলে যায়৷ ফারহা দো’তালায় চিলেকোঠার রুমে প্রবেশ করতে বাড়িওয়ালা এসে হাজির হয়৷ ফারহা তাকে দেখে মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে কিছু বলবে দিদা ?”

” হ্যাঁ বলবো৷ তোমার বন্ধুরা তোমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে চলে গেল ভেতরে আসতে বললে না যে?”

” দিদা ওরা বড়লোক বাবার ছেলে মেয়ে আমার মত গরিব বন্ধুর বাড়িতে ওদের কি মানায়? তবে এতটুকু বলবো ওরা আর সবার মত নিচু মন মানুসিকতার নয়৷ ওরা কখনো আমাকে ছোট করে কিছু বলে না৷ বড্ড ভালো ওরা৷”

“মিষ্টি একটা কথা বলবো?”

” দিদা প্রথমত আমাকে তুই করে বলে তোমার মুখে তুমি শব্দটা বানায় না৷ আর এত ইতস্থবোধ কেন করছো? বলে ফেলো যা বলার আছে৷”

” মিষ্টি আমার ছেলেটা এই বাড়ি বিক্রি করে দিতে চাইছে৷”

এতটুকু বলে দিদা চুপ হয়ে যায়৷ বাকিটুকু বলার হয়তো আর প্রয়োজন নেই কারণ ফারহা বাকি কথা কী হতে পারে সে ধারণা তার আছে৷ ফারহা একটু চুপ থেকে বলে উঠলো কার কাছে বিক্রি করবে এটা কি তোমার জানা আছে?”

” হ্যাঁ মিষ্টি শুনেছি আমজাতের কোন এক বন্ধু তবে বন্ধুটির নাম মনে পড়ছে না৷”

” চিন্তা করো না৷ আঙ্কেল যা করছে তাকে তা করতে দেও৷”

” কিন্তু তোরা কোথায় থাকবি?”

” আমরা এখানেই থাকবো৷”

” মানে?”

” এই যে বুড়ি এখন এত কথা না বলে নিজের ঘরে যাও আমাকে এখন রান্না বসাতে হবে৷” ফারহার কথা শুনে বুড়ি মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,” বুড়ি তোর শত্রু আমি এখনো কত ইয়াং দেখেছিস? পাড়ায় বের হলে ছেলেরা আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে৷”

ফারহা দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে,” ওটা শুধু ছেলেরা হবে না বুড়ো ছেলেরা হবে হি হি হি৷ ” ফারহার কথা শুনে দিদা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,” তোর সাথে কথায় পারবো না মিষ্টি৷ আর শোন এই অবেলায় তোকে রান্না করতে হবে না৷ আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি৷”

” না দিদা এখন খাবার দিলেও তো রাতের জন্য রাঁধতে হবে৷”

” না রাতের জন্য রাধঁতে হবে না তোকে৷ আমি রাতের খাবারও দিয়ে যাবো৷ এখন গোছলটা সেরে নে ততক্ষণে আমি খাবার নিয়ে এসে পড়বো৷” ফারহার কথা না শুনে দিদা চলে গেলেন৷ ফারহা দিদার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল৷ এই মানুষটা তাকে আর রাফিদ কে নিঃর্স্বাথ ভাবে ভালোবাসে এটা ফারহা খুব ভালো করেই জানে৷ আর এই বাড়িটায় যে দিদার প্রাণ বসে এটাও জানে তবে দিদার ছেলেটি সুবিধার নয়৷ এই বাড়ি বিক্রির পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে৷ ফারহা তার ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে বলতে লাগলো,” আপনাকে একটা কাজ করতে হবে৷ আমজাত শিকদার ছবিটা পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ এই লোকটার সব খবর চাই৷ ”

” হয়ে যাবে ম্যাম৷ আমি রাতে আপনাকে সবটা জানাবো৷”

” ওকে৷”

ফারহা ফোনটা চার্জে রেখে গোছল করতে চলে গেল৷

মেঘ রানিং কেস গুলো নিয়ে বেশ হাবুডুবু খাচ্ছে৷ তিন বছরের চাকরিতে এমন হেনস্তা তাকে কখনো হতে হয়নি৷ কিন্তু এই বার এই কেস গুলো সমাধান করে উঠতেই পারছে না মেঘ৷ সবটা কেমন যেন জড়িয়ে যাচ্ছে৷ মেঘের মনে হচ্ছে আগের খুন গুলোর সাথে ইমাম হাওলাদারের কিডন্যাপের কোন যোগ সূত্র আছে৷ মেঘ প্রথম থেকে কেস গুলোর ফাইল দেখতে লাগলো৷ যদি কোন ক্লু খুজে পেয়ে যায় সেই আশায়৷ কারণ খুনি কোন প্রমানই রেখে যায় নি৷ হঠাৎ কন্সট্রাবেল এসে জানায় তার সাথে ইমাম হাওলাদার এর ছোট ভাই দেখা করতে চাইছে৷ মেঘ ভেতরে পাঠিয়ে দিতে বলে নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো৷ ত্রিশ সেকেন্ড বাদে কারোর গলা শুনে মেঘ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে সুটবুট পড়া কম বয়সি একটা ছেলে৷ ছেলেটার দিকে মেঘ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,” বলুন মিস্টার আপনার জন্য কি সাহায্য করতে পারি?”

” আমার বড় ভাই নিখোঁজ আর আপনারা এত দিনেও আমার ভাইয়ের কোন খোজ এনে দিতে পারলেন না?”

” বসুন আপনি৷”

ছেলেটি বসতে বসতে করুন চেহারা করে বলে উঠলো,” অফিসার আমার ভাইকে দয়া করে খুজে বের করুণ৷ ভাইয়ে চিন্তায় ভাবি পাগল প্রায় আর বাচ্চারা বাবা বাবা করে দিন রাত৷”

” দেখুন মিস্টার আমরা আমাদের সব রকম সোর্স লাগিয়ে দিয়েছি মিস্টার ইমামকে খোজার জন্য কিন্তু কোন ভাবে ওনাকে ট্রেস করা যাচ্ছে না৷ যে বা যা ওনাকে কিডন্যাপ করেছে তারা কোন প্রকার প্রমান রাখেনি৷ তবে আমার মনে হচ্ছে এরা তারাই যারা এত দিন ধরে খুন করে আসছে৷”

মেঘের কথা শুনে ছেলেটি উঠে দাড়িয়ে বলে,” আপনারা দ্রুত আমার ভাইকে খুজে বের করুণ৷ আর আমিও আমার লোক লাগিয়ে ভাই কে খোজার চেষ্টা করছি৷”

ছেলেটি দ্রুত বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে, মেঘের কেন যেন ইমাম হাওলাদারের ছোট ভাইয়ের উপর সন্ধেহ হচ্ছে৷ মেঘ কেসের ফাইল গুলো বন্ধ করে ফোনের স্কিনে ফারহার ছবি দেখতে লাগলো৷ সেই নিলাভ চোখ ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি দেখলেই মেঘের মনটা এমনিতেই ভালো হয়েই যায়৷ মেঘ ফারহার ছবিতে চুমু দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” নিজেকে ভালো রাখতেই তোমাকে চাই ফারুপাখি৷ এই শূন্য হৃদয়ে ভরিয়ে তুলতে তোমাকে চাই৷ তোমার এলোকেশে ফুল গুজে দিতে তোমাকে চাই৷ তোমার ঠোঁটের এক চিলতে হাসি হতে চাই৷ আমার ভালোবাসার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাই ফারুপাখি৷ ভালোবাসতে চাই তোমায়৷ যে ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যাবে না৷”

মেঘের মনটা হঠাৎ করেই আনচান করে উঠলো ফারহাকে দেখার জন্য কিন্তু কাজের চাপের জন্য ফারহার কাছে যাওয়াটা মুশকিল৷ মেঘ কিছু একটা ভেবে থানা থেকে বেড়িয়ে যায় উদ্দেশ্য ফারহাকে দেখা৷

১৭.

নিখিল নিজে নিজে হাটা চলা করতে পারছে৷ পায়ে তেমন একটা আঘাত লাগেনি৷ নিখিল ফারহার কথা ভেবে যাচ্ছে৷ নিখিল হেটে ছাঁদে চলে যায়৷ নিখিল ওখানে দোলনায় বসে ভাবতে লাগলো কি করে ফারহাকে নিজের করে নেওয়া যায়৷ কিন্তু নিখিল কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না৷ ফারহার চোখের দিকে তাকালে নিখিলের বুকের ভেতর টা ধক করে ওঠে কেমন যেন বুকের ভেতর একটা ভয় হয়৷ নিখিলের মনে হয় ফারহা হয়তো এক নজরেই তার মনের সব কথা জেনে যাবে৷

” নাহ আমাকে হার মানলে হবে না৷ ওই অফিসার কিছু করার পূর্বে আমাকে কিছু করতে হবে৷ ফারুকে আমি কিছুতেই হারাতে পারবো না৷”

বেলা আর রাফিদ দুজনে এক সাথে গল্প করতে করতে কলেজ থেকে বের হয়ে হাটতে লাগলো৷ সেদিনের পর থেকে রাফিদ খুবই নরমাল বিহেব করছে বেলার সাথে বেলা প্রথমে ভিষণ ভয় পেয়ে ছিলো এটা ভেবে রাফিদ সবটা জানার পর হয় তো তাকে ভুল বুঝবে কিন্তু তেমনটা কিছুই হয়নি৷ উল্টো রাফিদ বেলার সাথে আগের থেকে যেন আরও বেশি করে মিশছে৷ বিষয়টা বেলার ভিষণ রকম ভালো লাগছে৷

” আচ্ছা রাফিদ ধরো যদি এখন আমি তোমাকে প্রপোজ করি তাহলে তুমি কি করবে?”

রাফিদ বেলার দিকে মুচকি হেসে বললো,” তোমার ধরা কথাই বলছি আগে প্রপোজ করো তারপর না হয় ভেবে বলবো৷ তোমাকে গ্রহন করবো কি করবো না৷”

কথা গুলো বলে রাফিদ একাই হাটতে লাগলো৷ বেলা রাফিদের কথা গুলো শুনে ভাবনায় পরে গেল৷ এদিকে রাফিদ অনেকটা দুর একাই হেটে চলে গেল৷ সেটাদেখে বেলা দৌড়ে গিয়ে রাফিদের হাত ধরে হাটতে লাগলো৷

মাগরিবের নামাজ পড়ে নিয়ে ফারহা দরজা বন্ধ করে বেড়িয়ে যায়৷ রাফিদ বিকেলে ফিরে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিয়ে এতিম খানায় চলে যায় বাচ্চাদের পড়াতে৷

ফারহা মেইন গেটে এসে দাড়াতে একটা গাড়ি এসে থামে৷ ফারহা ভ্রু কুঁচকে বলে নিখিল তুই এখন এখানে?”

নিখিল গাড়ির দরজার লক খুলে দিয়ে ফারহাকে বলে,” তোর সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে৷”

” কী কথা বলবি?”

” এখানে না৷ আগে গাড়িতে ওঠ বাকিটা পরে বলছি৷”

ফারহা আর কোন প্রশ্ন করলো না চুপচাপ নিখিলের গাড়িতে উঠে বসে৷ যেটা দুর থেকে কেউ একজন দেখে রাগে ফুঁসতে লাগলো৷

নিখিল গাড়ি চালিয়ে দুরের একটা নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে গেল৷ যেখানে মানুষের ভীর খুব কম৷ ফারহা গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক তাকিয়ে প্রাণ খুলে শ্বাস নিতে লাগলো৷ চারিদিকে নানা রকম গাছ৷ ফুলের বাগান, আর বাগানের মাঝে ছোট্ট একটা রেস্টুরেন্ট৷ প্রকৃতি প্রেমিদের জন্য এটা একটি পার্ফেক্ট জায়গা৷ এখানে এসে ফারহার মনটা যেন এক নিমেষেই ভালো হয়ে গেল৷

” জায়গাটা পছন্দ হয়েছে তোর?”

নিখিলের দিকে না তাকিয়ে ফারহা বললো দারুণ৷ এত সুন্দর পরিবেশ ইচ্ছে করছে এখানে সারাটা জীবন কাটিয়ে দি৷”

” তুই চাইলে তোর আর আমার জন্য একটা বাগান বাড়ি বানিয়ে ফেলবো কি বলিস?”

ফারহা নিখিলের কথার মানে টা বুঝতে না পেরে বললো,” মানে?”

নিখিল শুকনো ঢোক গিলে ফারহার সামনে হাটু গেরে বসতে ফারহা বলে,” নিখিল এভাবে কেন বসছিস? তুই অসুস্থ উঠে দাড়া৷”

” হুস আমাকে আগে বলতে ফারু৷ ফারু অনেক দিন তোকে একটা কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু বলে উঠতে পারি নি৷ আজ বলবো, ফারু আমি তোকে ভা,,, ” বাকিটা আর বলতে পারলো না তার আগে একটা শক্ত পক্ত বলিষ্ঠ হাত ফারহা হাত টেনে নিখিলের সামনে থেকে নিয়ে গেল৷ খানিকক্ষণের জন্য ফারহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মেঘের দিকে, এই সময়ে মেঘকে একদমিই আশা করেনি৷ অন্য দিকে নিখিল রাগে হাত মুঠ করে ফারহা আর মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে৷

মেঘ ফারহাকে তার গাড়িতে বসাতে নিলে ফারহা ড্রাইভিং সিটে বসে পরে৷ মেঘ কিছু বললো না ফারহার পাশের সিটে বসে পড়লো৷ ফারহা স্থির চোখে মেঘের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

ফারহা ধীরে ধীরে গাড়ির স্পিড বাড়াতে লাগলো৷ প্রথমে মেঘ বিষয়টা বুঝতে না পারলেও একটু পর বেশ বুঝতে পারলো ফারহা গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিচ্ছে৷

অন্যদিকে ফারহাকে খুঁজতে থাকা লোক গুলো ফারহাকে ড্রাইভ করতে দেখে ফেলে৷ সময় নষ্ট না করে দ্রুত ফারহার গাড়ির পেছনে যেতে লাগলো৷ মেঘ সরকারি গাড়ি নিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মেঘ নিজস্ব কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে না৷ নিজের গাড়ি ব্যবহার করে৷ লোক গুলোর মধ্যে একজন তাদের বসকে ফোন করে৷

” হ্যালো বস মেয়েটাকে পেয়েছি৷” ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভির আর রাগি গলায় বলতে লাগলো,” তাহলে দেরি করছিস কেন শেষ করে মেয়েটাকে৷”

” বস মেয়েটার সাথে এক পুলিশ অফিসার আছে৷”

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে ফোনের অপাশে থাকা লোকটি বলে উঠলো,” ওই অফিসারের একটা ছবি এক্ষুনি আমাকে সেন্ড কর৷”

” বস গাড়ি প্রচন্ড জোড়ে চালাচ্ছে মেয়েটি হয়তো এখুনি কোন এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে৷ ছেলেটির ছবি কি করে পাঠাবো?”

” যে ভাবে হোক পাঠাও এন্ড রাইট নাও৷” বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিলো লোকটি৷ ফারহার পেছনে থাকা লোক গুলো তাদের গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে মেঘের গাড়ির কাছাকাছি এসে মেঘের এক সাইডের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়৷ ছবি পাঠিয়ে দেওয়ার দশ সেকেন্ডের মাথায় লোকগুলোর বসের কল আসে৷ লোকটি কল রিসিভ করে সাথে সাথে ফোনের ওপাশ থেকে বস বলে ,” তোরা ওদের কোন ক্ষতি করবি না৷ ছেলেটার যেন কিছু না হয়৷ যদি ছেলেটার কিছু হয়তো আমি নিজে তোদের কে নিজের হাতে খুন করবো৷”

লোক গুলো তাদের বসের কথা শুনে ভয় পেল৷ তারা গাড়ির স্পিড কমিয়ে দিলো৷ অন্যদিকে মেঘের মনের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে৷ ফারহা যে ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে সেভাবে আর কিছুক্ষণ চালালে যে কোন সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে৷

” ফারুপাখি গাড়ির স্পিড কমাও যে কোন সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট করতে পারে৷”

ফারহা মেঘের কথা শুনে গাড়ির স্পিড চুরান্ত পর্যায়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো৷

মেঘের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে৷ হয়তো মরার ভয় নয় তো হারানোর ভয় মেঘকে পেয়ে বসেছে৷ সামনে দুটো বাস আসছে৷ তারা হর্ণ দিচ্ছে বার বার কিন্তু ফারহা সেটা শুনেও না শোনার ভান করে গাড়ি চালাতে লাগলো৷ হুট করে মেঘ ফারহার গাড়ি বাসের সামনে আসতেই ফারহা গাড়িটা অন্যদিকে টার্ন করে৷ গাড়ির স্পিড বেশি থাকায় গাড়িটা সোজা গিয়ে স্বজোড়ে গাছের সাথে ধাক্কা লাগে৷ মেঘ গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পড়ে মাথায় আঘাত লাগে আর ফারহা গাড়ির ভেতরে সেন্সলেস হয়ে যায়৷ জায়গাটা শহর থেকে বেশ দুরে আর মানুষের আনাগনাও বেশ কম বিধায় কেউ আসেনি সাহায্যে করার জন্য, ফারহার জ্ঞান ফিরলে গাড়ি থেকে নেমে যায়৷ দুরে মেঘ কে আহত অবস্থায় দেখে ফারহা গাড়ির ভেতর থেকে তার পার্সটা বের করে ফোন খুজতে লাগলো৷ মেঘের মাথা থেকে প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে অথচ ফারহা সে দিকে তেমন না তাকিয়ে এম্বুলেন্সে কল করে এক্সিডেন্ট স্পটে আসতে বলে৷ ৩০-৪০ মিনিটের মাথায় এম্বুলেন্স এসে হাজির হয়৷ ফারহার তেমন একটা চো’ট লাগে নি৷ আর মেঘ যে এভাবে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়বে এটাও ভাবে নি ফারহা তবে এতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই৷ মেঘকে এম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার পর পর ফারহার সামনে আর একটি গাড়ি এসে থামে৷ গাড়ির দরজা ভেতর থেকে খুলে দিতে ফারহা গাড়িতে উঠে যায়৷

অন্যদিকে শাফায়াত চৌধুরী, মায়রা চৌধুরী, মিরা চৌধুরী আর বেলা এসে হাজির হয় হসপিটালে৷ মেঘের ট্রিটমেন্ট করে ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে ডক্টর তাই মেঘ গভীর ঘুমে মগ্ন৷ ডক্টর কেবিন থেকে বের হতে শাফায়াত চৌধুরী ডক্টর বলে,” ডক্টর আমার ছেলে এখন কেমন আছে? বেঁচে আছে তো?”

” চিন্তার কোন কারণ নেই মাথায় সামান্য আঘাত লেগেছে৷ তবে র’ক্ত ক্ষরণ বেশি হওয়ায় পেশেন্ট বেশ দূর্বল৷ তবে চিন্তার কোন কারণ নেই কয়েকদিনে পেশেন্ট সুস্থ হয়ে যাবে৷”

ডক্টরের কথা শুনে সবার মুখে ভয় আতঙ্ক বিষন্নতা ছাপিয়ে হাসি ফুটে উঠলো৷

“ম্যাম মেঘ স্যার এখন ঠিক আছে তবে অতিরিক্ত র’ক্ত ক্ষরণের জন্য একটু দূর্বল৷ ডক্টর ঘুমের ইন্জেকশন দিয়েছে৷ মেঘ স্যার এখন ঘুমাচ্ছে৷ ”

কথা গুলো শুনে ফারহা ইজি চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,…….
.
.
.
চলবে…………
শব্দ সংখ্যা- ২১০২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here