চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -১০+১১+১২

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_১০
.
.
🌺
” মেঘ চৌধুরীর ফোন ট্রেস করুন৷ নিখিলকে মেঘ চৌধুরী কিডন্যাপ করিয়েছে৷ আমার মনে হয় আজই নিখিলকে খুজে পাওয়া যাবে৷”

” ওকে ম্যাম আমরা মেঘ চৌধুরীর নাম্বার ট্রেস করছি৷”

ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে চিলেকোঠার ছোট্ট রান্নাঘরে গিয়ে খিচুড়ি রান্না বসিয়ে দিয়ে রুমে এসে তার ডাইরী নিয়ে বসে৷ ডাইরীর সাদা পেজে কলমের খোঁচায় ফারহা তার মনে সব কথা গুলো শব্দে আকার দিতে লাগলো৷ আজ প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার, পুরনো ক্ষত যেন আজ আবারও তাজা হয়ে উঠলো৷ বাবা বেঁচে থাকতেও নিজেকে এতিম বলে পরিচয় দেওয়াটা কোন সন্তানের জন্য খুব একটা সহজ না কিন্তু আমার জন্য খুব সহজ কারণ এই বাবার জন্য আমি আমার অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবার আগে মেরে ফেলতে পারে সে কখনো আমার বাবা হতে পারে না৷ কি অপরাধ ছিলো আমার? কেন আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেল? আচ্ছা ভালোবাসা কি অপরাধ? নাকি কোন এতিম চাল চুলো হীন মানুষকে ভালোবাসা পাপ? কোন অপরাধে স্বামী সন্তানকে হারালাম আমি? এতটুকু লিখে ডাইরী বন্ধ করে ফারহা জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠলো,” যাদের জন্য আমি আমার আমার সন্তান আমার স্বামীকে হারাতে হয়েছে তাদেরকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না৷ তীলে তীলে কষ্ট দিয়ে মারবো তাদের৷ কাউকে ছাড়বো না কাউকে না৷

১৩.
বৃষ্টি একটু থামতে ফারহা খেয়াল করলো রাফিদ গেট দিয়ে ঢুকছে তবে রাফিদের মুখে যেন অমাবর্স্যার অন্ধকার ছেয়ে আছে৷ ফারহা বুঝতে পারে তার ভাইয়ের আজ আকাশ সমান মন খারাপ৷ কিছু সময়ের জন্য নিজের রাগ অভিমান প্রতিশোধ দুরে সরিয়ে দিয়ে তার ছোট্ট ভাই রাফিদকে নিয়ে ভাবতে লাগলো৷ রাফিদ রুমে ঢুকে তার দি’কে দেখে অবাক হয় কারণ এই সময় তার দি ভার্সিটিতে থাকে৷ ফারহা রাফিদ কে দেখা মাত্র বলে উঠলো,” এসে পড়েছিস যা ঝটপট গোছল সেরে আয় তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে৷”

” সারপ্রাইজ! কী সারপ্রাইজ দি? আর তুই এই সময় এখানে?”

” ভালো লাগছিলো না তাই চলে এলাম৷ এখন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত গোছল করে আয় সারপ্রাইজ দেখতে চাইলে৷”

রাফিদ আর দেরি করলো না দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে তোয়ালে নিয়ে ছাঁদে চলে গেল৷ রাফিদ সব সময় ছাঁদের ট্যাপে গোছল করে৷ আর আজও তাই৷ ফারহা সে সুযোগে বাড়িওয়ালা দীদুনের দেওয়া জলপাইয়ের আচার বের করে নিলো তারপর মরিচ ভর্তা বানিয়ে নিলো৷ দুটো ডিম ভেজে নিয়ে দুটো প্লেটে ভুনা খিচুড়ি গরম গরম বেড়ে টেবিলের উপর গুছিয়ে রাখলো৷

অন্যদিকে আশরাফকে দেখে মায়রা চৌধুরী ভিষণ খুশি৷ এই লোকটাকে তিনি তার বড় ভাইয়ের আসনে অনেক বছর পূর্বে বসিয়েছে৷ আর আশরাফ খান ও মেঘের মা মায়রা চৌধুরীকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করে৷ এত বছর পর আশরাফকে দেখে মায়রা খানিকটা ইমোশনাল হয়ে পড়ে কারণ একটা ঘটনা তাদের সবার জীবনের মোড় যে ঘুড়িয়ে দিবে এটা তারা কেউ বুঝতে পারেনি৷ মায়রা চোখের পানি মুছে আশরাফ কে বলে,” ভাইজান কত বছর পর আপনাকে দেখলাম৷ কেমন আছেন আর আমাদের মামুনি কেমন আছে?”

মায়রার কথা শুনে আশরাফের মুখটা অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়৷ তা দেখে শাফায়াত চৌধুরী বলে,” আহা মায়রা এখনি এত কথা বলবে? লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে৷ সার্ভেন্টকে বলো লাঞ্চ সার্ব করতে আজ আমরা দুই বন্ধু এক সাথে লাঞ্চ করবো৷ আর শাহিন মেজবাকে ও ডেকে পাঠাও৷”

” তারা বাড়িতে নেই৷ শাহিন ভাইয়ের কোন এক বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত ছিলো সেখানে দুজনে বেড়িয়েছে৷”

” ওহ তাহলে আমরাই বসে পড়ি৷”

” হ্যাঁ তার আগে ফ্রেস হয়ে নিন৷”

শাফায়াত তার বন্ধুকে গেস্ট রুম নিয়ে গিয়ে ফ্রেস হতে বলে নিজেও চলে যায় ফ্রেস হতে৷ মিনিট পনেরো পর দুজনে ডাইনিংয়ে এসে দেখে মায়রা খাবার রেডি করে বসে আছে৷ তাদের আসতে দেখে নিজের হাতে খাবার সার্ব করে দেয়৷

সবাই খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো তখনি মায়রা আবারও ফারহার কথা জানতে চাইলে আশরাফ বলে,” বোন আমার সোনা মা আমাকে এখনো ক্ষমা করেনি৷ সেই চার বছর আগে আমাকে ছেড়ে চলে যায়৷ তার পর পর আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ ডক্টরের পরামর্শে ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য আমাকে বিদেশে যেতে বলে৷ এতটাই অসুস্থ ছিলাম যে নিজে এক গ্লাস পানি গড়িয়ে খেতে পারতাম না৷ বিদেশে আমার ট্রিটমেন্ট হলো সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে সোনা মায়ের অনেক খোজ করি কিন্তু কোন খোজ পাইনি কিন্তু তার কিছু দিন পর আমার ছোট বোন মেহরিন আর তার স্বামী রেওজান গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায়৷ তাদের একমাত্র ছেলে রাফিদ তাকেও আর খুজে পাইনি ৷ তবে একদিন রাফিদ ফোন করে জানায় সে আমার সোনা মার সাথে আছে৷ আর আমি যেন কখনো তাদের সামনে না যাই৷ আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা না করি৷” কথা গুলো বলে আশরাফ চুপ হয়ে গেল৷ তখনি শাফায়াত বলে ওঠে ,” দোস্ত সব দোষ আমার৷ আমার জন্য দুইটি প্রাণ ঝড়ে গেল৷ আমি যদি সেদিন ফারহা মামুনিকে না বলতাম মেঘ কে বিয়ে করার কথা হয়তো সেদিন ফারহা মামুনি হুট করে না আয়াশকে বিয়ে করতো আর না এত কিছু হতো৷ ফারহা মামুনিকে এবাড়ির বউ করতে চেয়েছিলাম বলে হয়তো সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো৷ ”

” নাহ শাফায়াত এতে তোর কোন ভুল নেই সব ভুল সব দোষ আমার৷ আমি অর্থ অহংকারে ভুলে গিয়েছিলাম এতিম ছেলেটিকে আমার মেয়ে নিজের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে৷ ওর মাঝে আমার মেয়ের প্রাণ ভোমরা৷ সেদিন যদি নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারতাম তাহলে হয়তো আয়াশ আজ বেঁচে থাকতো৷ আমার সোনা মায়ের একটা সাজানো গুছানো সংসার হতো৷ ”

” দেখ আশরাফ এখন আর আফসোস করে কোন লাভ নেই৷ আমার মনে হয় মামুনিকে খুজে নিজের কাছে নিয়ে আসলে বোধহয় ভালো হতো৷” শাফায়াতের কথা শুনে আশরাফ ত্যাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো,” যে মেয়ে নিজের জন্মদাতা পিতাকে খুন করার হুমকি দিতে পারে সে যে কখনো তাকে ক্ষমা করে তার কাছে ফিরে আসবে না সেটা খুব ভালো করেই জানে আশরাফ৷

আশরাফ মেঘ একজন পুলিশ অফিসার আমার মনে হয় মেঘ পারবে মামুনিকে খুজে বের করতে৷

” প্রয়োজন নেই শাফায়াত কারণ আমি জানি আমার এখন কোথায় আছে৷”

” তাহলে দেরি করছিস কেন? বিকেলে চল মামুনিকে সাথে করে নিয়ে আসি আর সবটা বুঝিয়ে বলি৷ আশা করি মামুনি বুঝবে আমাদের কথা গুলো৷”

” সব কিছু এতটা সহজ ভাবিস না শাফায়াত৷ যাই হোক মেঘ কোথায় তাকে যে দেখছি না?”

” কোথায় আর থাকবে থানায় আছে৷ তোকে তো বললামই মেঘ একজন পুলিশ অফিসার৷”

মায়রা সব শুনে বলতে লাগলো,” ভাইয়া অতিত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন৷ আমাদের উচিত ফারহা মামুনিকে অতিত থেকে বের করে আনার৷ আর এটা হয়তো মেঘ করতে পারবে৷”

বেলা বাড়িতে ঢুকতে মেঘ ফারহাকে নিয়ে কথা বলতে শুনে দাড়িয়ে পরে৷ শুরুর থেকে সব কথা না শুনলেও এতটুকু বুঝতে পারছে মেঘ তাকে রাফিদ সম্পর্কে ইনফরমেশন দিয়েছে তার ফিফটি পার্সেন্ট মিথ্যে৷ রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিঃশব্দে উপরে নিজের রুমে চলে যায়৷

ইমাম হাওলাদারকে খুজতে খুজতে মেঘ তার টিমকে নিয়ে ইমাম হাওলাদারের গোপন ডেরায় যেখানে মেয়েদের তুলে নিয়ে এসে আটকে রাখা হয় সেখানে পৌছে যায়৷ মেঘ সেখানে বাধা অবস্থায় অনেক গুলো মেয়েকে দেখতে পেয়ে প্রথমে ভিষণ অবাক হয়৷ বুঝতে পারে ইমাম হাওলাদার একজন নারীপাচার কারী জঘন্য লোক হয়তো তার এই নিঁখোজের পেছনে তারই রাইভেল কারও হাত আছে৷ মেঘ আরও কিছু ফোর্স এনে মেয়ে গুলোকে উদ্ধার করে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়৷ তবে ইমাম হাওলাদারের লোকজনকে খুজে পাওয়া যায়না হয়তো বা তারা আগেই পালিয়েছে৷ মেঘ কমিশনারকে রিপোর্ট করে৷ সব কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷

ভয়ে কাচুমাচু মুখ করে ফারহার সামনে দাড়িয়ে আছে রাফিদ৷ বেলা সম্পর্কে সবটা জানানোর পর ফারহা প্রচন্ড রেগে যায়৷

” দি এখন আমি কি করবো?”

” বেলার সাথে ঠিক আগের মতই কথা বলে যাবি ইনফ্যাক্ট আরও বেশি করে কথা বলবি৷”

” মানেটা কি? কি বলছিস একটু বুঝিয়ে বলবি প্লিজ?”

” সময় আসলে সবটা বলবো তবে এখন যেভাবে বলবো তুই ঠিক সেভাবে করবি৷ আজ থেকে তুই বেলার সাথে এমন ভাবে বিহেব করবি যেন বেলা ভাবতে বাধ্য হয় তুই ওকে ভালোবাসিস৷”

” কিন্তু দি?”

“যা বলেছি তুই ঠিক তাই করবি৷ আর শোন আশরাফ দেশে ফিরেছে৷ এই লোকটা যেন আমার আশে পাশে না দেখি সেই ব্যবস্থা কর৷”

” ওকে দি৷ দি একটা প্রশ্ন ছিলো৷”

ফারহা বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,” তুই কি প্রশ্ন করতে চাস আমি জানি ছোটু৷”

” তুই জানিস?”

” মেঘ কে ঘিরেই তোর সকল প্রশ্ন তাই তো?”

রাফিদ হতভম্ব হয়ে মাথা নাড়লো৷ ফারহা মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,” আমার জীবনের সুখ যারা কেরে নিয়েছে৷ আমি যদি তাদের পৃথিবীটা জাহান্নাম বানিয়ে না দি তাহলে আমার নাম ফারহা রহমান নয়৷ ” কথাটা বলতে বলতে ফারহার ঠোঁটের কোণে পৌশাচিক হাসি ফুটে উঠলো৷

মেঘ বাড়িতে ঢুকতে ড্রইংরুমে বসে থাকা মানুষটিকে দেখে মেঘ খানিকটা অবাক হয়ে গেল৷

” আঙ্কেল আপনি?”

” কেন মেঘ এই বুড়ো আঙ্কেলকে দেখে বুঝি তোমার ভালো লাগেনি?”

” না না আঙ্কেল তেমন কিছু না৷ এত বছর পর আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি৷”

” জানি মেঘ তুমিও হয়তো আমাকে দোষি ভাবো তাই না?”

” না আঙ্কেল সত্যিটা আর কেউ জানুক আর নাই জানুক আমি জানি আপনি সত্যি সেদিন কোন অপরাধ করেন নি৷ বরং অন্য কেউ আড়ালে থেকে সবটা করেছে৷ কিন্তু কে সে সেটা এবার বের করতে হবে৷”

” তাতে কি কোন লাভ আছে মেঘ? আমার সোনা মা তো আমাকে ভুল বুঝে দুরে চলে গেছে৷”

” আঙ্কেল ফারহা রাফিদ দুজনে এই শহরে আছে৷ ”

মেঘের কথা শুনে শাফায়াত বলে ওঠে,” মেঘ তুমি জানতে মামুনি এই শহরে আছে?”

” হ্যাঁ ড্যাড আমি জানতাম৷ তবে ফারহার এই শহরে থাকাটা বেশিদিন হয়নি আমি জেনেছি৷”

আশরাফ খান এবার বেশ ইমোশনাল হয়ে মেঘকে বলতে লাগলো,” মেঘ বাবা আমার সোনা মা’কে আমার কাছে কি তুমি ফিরিয়ে আনতে পারো না? আমার অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিতে? ”

মেঘ আশরাফ খানের হাত দুটো ধরে বলে উঠলো,” আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আঙ্কেল৷ আপনার সোনা মা’কে ঠিক আপনার কাছে ফিরিয়ে আনবো৷”

মেঘের কথা শুনে আশরাফ খান , শাফায়াত চৌধুরী ,মিসেস মায়রা চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷

“মম তোমরা গল্প করো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি৷”

” আমি তোমার খাবার গরম করছি তাড়াতাড়ি চলে আসবে৷”

” ওকে মম৷”

মেঘ সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে নিজের রুমের আগে বেলার রুম৷ মেঘ বেলার রুমের সামনে দিয়ে যেতেই বেলা মেঘের সামনে এসে দাড়াতে মেঘ ঘাবড়ে যায়৷

” এই বেলুন এভাবে ভুতের মত সামনে এসে দাড়ালি কেন?”

” তার তুই আমার কিছু প্রশ্নের উওর দে?”

” উফফ মাথা খারাপ করে কেন করে দিচ্ছিস বেলুন? যা বলার ঝটপট বলে ফেল ৷”

বেলা মেঘের হাত টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে রাগি গলায় বলে উঠলো,” তুই আমাকে রাফিদ আর ভাবির সম্পর্কে মিথ্যে কথা কেন বললি?”

মেঘ বেলার কথা শুনে বুঝতে পারলো বেলা সবটা জানতে পেরেছে৷

” দাভাই তুই ভাবি আর রাফিদ সম্পর্কে সবটা যে মিথ্যে বলেছিস এটা আমি জানতে পেরেছি ৷ এবার সত্যি টা কি সেটা কি আমাকে বলবি? আমি জানি ভাবিকে তুই অনেক আগে থেকে চিনিস৷ তোদের চেনা জানা কয়েক দিনের নয় বরং অনেক বছরের তাই তুই এবার সবটা সত্যি বল আমাকে?”

মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,” সময় হলে সব টা জানতে পারবি বেলুন৷ এখনই সবটা জানার সময় হয়নি বেলুন সময় আসুক আমি নিজে তোকে সবটা জানাবো৷” মেঘ বেলার কথা শোনার অপেক্ষা না করে বেলার রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷

১৪.
কালো মেঘ সরে গিয়ে আকাশে তারা গুলো উঁকি মারছে৷ চারিদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ব্যালকনিতে রাখা বেলি ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ রাফিদ টিউশনে চলে গেছে ঘন্টাখানিক আগে৷ ফারহাও রাফিদের বের হবার পর পর বেড়িয়ে যায়৷ ফারহা গেট দিয়ে বের হতেই ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে………
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_১১
.
.
🌺
১৪.
কালো মেঘ সরে গিয়ে আকাশে তারা গুলো উঁকি মারছে৷ চারিদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে৷ ব্যালকনিতে রাখা বেলি ফুলের ঘ্রানে চারিদিকে মৌ মৌ করছে৷ রাফিদ টিউশনে চলে গেছে ঘন্টাখানিক আগে৷ ফারহাও রাফিদের বের হবার পর পর বেড়িয়ে যায়৷ ফারহা গেট দিয়ে বের হতেই ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফারহা ফোন হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে ভেশে ওঠা নাম্বারটা দেখে দাঁত কটমট করে কল কেটে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” আপনাকে কখনো ক্ষমা করবো না মিস্টার আশরাফ খান৷ আপনি আমার কাছে মৃত ৷ ” কথাটা বলতে বলতে বড় রাস্তায় উঠতে একটা বড় গাড়ি ফারহার সামনে থামে ফারহা কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে৷

মেঘ হন্তদন্ত হয়ে ড্রইংরুমে এসে দেখে আশরাফ খান চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখনি মেঘ বলে ওঠে,” আঙ্কেল আমার একটা প্রশ্ন আছে৷”

” প্রশ্ন! আচ্ছা বলো কি জানতে চাও?”

” আঙ্কেল ফারুপাখি আপনার থেকে আলাদা হবার পর ও এত বড় ভার্সিটিতে কি করে পড়তে পারে? আর তাদের এত খরচ কি করে বহন করে? ”

আশরাফ খান বলে ওঠে,” মেঘ তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার ফারুপাখির মায়ের সকল সম্পত্তি সোনা মা’র নামে৷ ফারিজা(ফারহার মা) মৃত্যুর আগে তার সকল সম্পত্তি সোনা মায়ের নামে করে দিয়েছে৷ ”

মেঘ ভাবতে লাগলো,” ফারুপাখি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েও কেন ওই ভাঙ্গা চিলেকোঠার ঘরে থাকছে? আরও অনেক গুলো প্রশ্ন মেঘের মাথায় ঘুরছে কিন্তু এর কোন উওর মেঘের কাছে নেই৷

পায়ের উপর পা তুলে হাতে ধাড়ালো ছুড়ি নিয়ে ইমাম হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ইমাম হাওলাদারের চোখে মুখে ভয় আতঙ্ক আর যন্ত্রনার ছাপ৷ ইতোমধ্যে ইমামের দু’হাত এবং দু’পায়ের আঙ্গুল কাটা আঙ্গুল দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে৷ সাদা ফ্লোর লাল র’ক্তে তলিয়ে গেছে৷ ফারহা তার পাশে দাড়িয়ে থাকা শক্ত পক্ত বলিষ্ঠ পালোয়ানের মত লোক দুইজনকে ফারহা জ্বিজ্ঞাসা করলো,” মুখ খুলেছে এই জা’নো’য়া’রের বাচ্চা?”

ফারহার কথা শুনে লোক দুটো বলে উঠলো,” ইয়েস ম্যাম মোটা মুটি সব ইনফরমেশন দিয়েছে৷”

” তাহলে আর দেরি কেন? এই নিকৃষ্ট কিটকে বাঁচিয়ে কেন রাখলেন?” হুংকার ছেড়ে কথাটা বলে ফারহা উঠে দাড়ালো৷ ইমাম হাওলাদার আতংক ভয়ার্ত চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে৷ লোক দুটো

” ম্যাম আমরা আপনার হুকুমের অপেক্ষা করছি৷”

” তাহলে দেরি কেন কাজ শুরু করুন ফাস্ট৷”

” ইয়েস ম্যাম৷” ফারহার পারমিশন পেয়ে লোক দুটো রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ফিরে এলো দু’মিনিট বাদে৷ হাতে একটা ইয়া বড় বক্স৷ বক্সটা রেখে ইমামকে স্টেচারে শুইয়ে দিলো৷ ইমাম যেন ভয়ে নড়াচড়া করতেই যেন ভুলে গেল৷ ফারহা মুচকি হেসে বক্সটা নিজে খুলে ফেলে৷ বক্সের ভেতর নানা রকম অস্ত্র ৷ ছোট বড় নানা রকম অস্ত্র৷ ফারহা একটা মাঝারি আকারের একটা ছুড়ি হাতে নিতে আর একজন ফারহার লোক রুমে প্রবেশ করে বলে,” ম্যাম একটা খবর আছে৷ পুলিশ হাই কোয়ার্টারে মেঘ চৌধুরীর পাশাপাশি আর একজন অফিসার নিয়োগ দিয়েছে যারা এই কেস টা হ্যান্ডেল করছে৷”

” ফারহা গম্ভির গলায় লোকটিকে বলে উঠলো,” সময় নষ্ট না করে আসল কথা বলুন৷”

লোক গুলো কিছু বলার পূর্বে ইমাম হাওলাদার বলে উঠলো,” আমার ভাই তোদের ছাড়বে না দেখবি ও ঠিকি আমাকে খুজে বের করবে৷ তারপর তোদের কে শেষ করে দিবে৷” ফারহার আর বাকি কথা শোনা হয় না৷ তবে ইমাম হাওলাদারের কথা শুনে ফারহা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,” ওহ বেবি আমি তো ভয় পেয়ে গেছি৷ আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? উমম তোকে না হয় তোর ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি?”

ইমামের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷ ফারহা ভয় পেয়ে যে তাকে এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবে এটা ভাবতে পারেনি ইমাম৷ ইমাম হাসতে হাসতে বলে উঠলো ,” দেখেছিস আমার ভাইয়ের পাওয়ার৷ একবার আমি ছাড়া পাই দেখিস তোদের অবস্থা আমি কি করি৷”

ফারহা ভয় পাওয়ার মত ভঙ্গি করে ইমামের দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” ওহ বেবি এভাবে বলো না আমার যে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে৷ ভিষণ ভয় পেয়েছি বেবি৷” কথা গুলো বলে হাসতে লাগলো ফারহা৷ ফারহার হাসি দেখে ইমাম যেন ভরকে গেল৷ কিছু বলার সুযোগ পেল না তার আগে ফারহা তার হাতের ধা’ড়া’লো ছু’ড়ি টা ইমামের পে’টে গেঁথে দিলো৷ ইমামের আত্মচিৎকারে পুরো রুম কেঁপে উঠলো৷ ফারহা মুচকি হেসে বলে,” কষ্ট হচ্ছে বেবি? জানো বেবি তুমি ঠিক যেভাবে ছোট ছোট মেয়েদের কষ্ট দিয়ে মা’রতে আমি তার থেকে হাজার গুন কষ্ট দিয়ে তোমাকে মা’রবো৷ বিশ্বাস করো এত টুকু করতে একটুও কার্পণ্য করবো না৷” বলতে বলতে একটা বোতলের ছিপি খুলে ইমাদের পে’টে কা’টা অংশে একটু একটু করে এ’সি’ড ঢালতে লাগলো৷ এসিট ঢালার সাথে সাথে ইমাম বিকট চিৎকার করতে লাগলো৷ ফারহা সে দিকে মন না দিয়ে নিজের মত করে পেটের কা’টা অংশে তখনি ইমার অতি কষ্টে বলে উঠলো,” আমাকে এভাবে না মে’রে দয়া করে একে বারে মে’রে ফেলো৷ আমি আর পারছি না এই য,, যন্ত্রনা সহ্য করতে৷”

ফারহা এ’সি’ডের বোতল রেখে ইমামকে বলতে লাগলো,” উহু বেবি এত তাড়াতাড়ি তোমাকে মা’রছি না৷ একটু একটু করে মা’রবো তোমাকে আর তারপর তোমার ভাইকে; বিশ্বাস করো তোমাকে যে যন্ত্রনা দিয়ে মা’রবো তার থেকেও একশো গুন বেশি কষ্ট দিয়ে মা’রবো তোমার ভাইকে আপাদতো এই যন্ত্রনা টুকু সহ্য করো তারপর নতুন যন্ত্রনা দেবার জন্য আমি হাজির হবো৷ ” এই বলে ফারহা ইমামের পায়ের একটা র’গ কে’টে দিয়ে বলে,” আজ এই পর্যন্ত বাকিটুকু না হয় পড়ে হবে ওকে বেবি?” ইমাম য’ন্ত্র’নায় আর কিছু বললো না দ’ম বেড়িয়ে যাচ্ছে ইমামের৷ ফারহা বেসিনে হাত পরিষ্কার করে লোক গুলো কে বলতে লাগলো হাতে সময় বেশ কম বাকি এরিয়া গুলো এ্যা’টাক করতে হবে৷ আপনারা তৈরি হন আগামিকাল এই অপারেশনে আমিও বের হবো৷”

” ওকে ম্যাম আমরা তাহলে সে ভাবে সবটা গুছিয়ে রাখছি৷”

ফারহা ফোনে সময়টা দেখে বললো,” আমাকে যেতে হবে৷ আপনারা এই জা’নো’য়া’র টার দিকে নজর রাখবেন দেখবেন এত তাড়াতাড়ি যেন ম’রে না যায়৷”

” ওকে ম্যাম, ম্যাম চলুন আপনাকে পৌছে দি৷”

” তার কোন প্রয়োজন নেই৷ আমি একাই যেতে পারবো৷”

ফারহা আর দেরি করলো না দ্রুত আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে একজন বলে উঠলো , ” ম্যাম নিখিল স্যারের খবর পেয়েছি৷ ওনাকে ওই অফিসারের বাবার লোকেরা বাগান বাড়িতে আটকে রেখেছে৷” ফারহা সবটা শুনে বেড়িয়ে গেল৷ ফারহার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে মেঘের উপর নয় নিখিলের উপর, ছেলেটার চোখে যে ফারহা ওর জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে অনেক আগেই কিন্তু কখনো নিখিলকে বুঝতে দেয়নি৷ কিন্তু মেঘের বাড়াবাড়ি নিখিলকে ধিরে ধিরে হিংস্র করে তুলছে৷ ফারহা তার এই সুন্দর বন্ধুত্বটাকে নষ্ট হতে দিতে চায়না তাই নিখিলের এই অনুভূতি গুলো বুঝেও না বোঝার অভিনয় করতো৷ ফারহা পায়ে হেটে হেটে আজও সেই পদ্মদিঘির পাড়ে গিয়ে বসে পড়লো৷ আজ আকাশে পূর্ণ চাঁদ৷ চাঁদের আলোয় চারিদিকটা স্পষ্ট৷ চারিদিক নিস্তব্ধ শীতল হাওয়া বইছে৷ ফারহার শরীর টা যেন ছেড়ে দিচ্ছে৷ ফারহার ইচ্ছে করছে এই খোলা আকাশের নিচে শুয়ে থাকতে৷ ফারহা বেশিক্ষণ আর বসতে পারলো না ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো৷

” পালিয়ে যাও ফারুপাখি পালিয়ে যাও৷ আমাদের বাচ্চাকে বাঁচাও ফারুপাখি৷ আমাদের বা,,,,,,” বাকি টুকু বলার পূর্বে ধা’ড়া’লো একটা চা’পাতি আয়াশের বুক চি’রে দিলো৷ মূহূর্তে আয়াশের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো৷ তা দেখে ফারহা আয়াশের নাম ধরে চিৎকার করতেই ফারহার শোয়া থেকে উঠে বসে৷ থর থর করে কাঁপছে ফারহার শরীর৷ কপাল বেয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়লো৷ ফারহা উঠে দিঘির পানিতে চোখে মুখে পানি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,” বড্ড ভালোবাসি তোমায় আয়াশ৷ প্লিজ আয়াশ আমার কাছে ফিরে এসো না৷ জানো আয়াশ তোমাকে ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে বাঁচতে হচ্ছে কেন জানো? তোমাকে যারা আমার থেকে বহু দুরে সরিয়ে দিয়েছে তাদের কে জাহান্নাম দর্শণ করানোর জন্য আমি বেঁচে আছি৷ আমার কলিজার টুকরো কে ওরা বাঁচতে দেয় নি আয়াশ৷ আমার পেটেই ওকে মেরে ফেলেছে৷ বড্ড কষ্ট হয় আয়াশ বিশ্বাস করো বড্ড কষ্ট হয় এই পৃথিবীতে শ্বাস নিতে , আজ অঝরে কাঁদছে ফারহা৷ হৃদয়টায় যেন কেউ ছু’ড়ি চালিয়ে দিচ্ছে৷ ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের ঘা গুলো যেন আজ আবারও তাজা হয়ে উঠলো৷ নিস্তব্ধ পরিবেশ এখন কেমন যেন বেশ গুমোট পরিবেশে বদলে গেল৷ ফারহা চোখের পানি মুছে উঠে দাড়ায়৷ এখন আর ফারহার চোখে পানি নেই৷ চোখে মুখে কঠোরতার ছাপ৷ ফারহা ফোনের স্কিনে সময়টা দেখে নিয়ে পদ্মদিঘির এরিয়া দ্রুত ত্যাগ করে৷

হাত-পা বাধা অবস্থায় জ্ঞান হারিয়েছে নিখিল৷ নিখিলকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে টেবিলের উপর থেকে পানির জগ নিয়ে পুরো পানি টা ছুড়ে মারে নিখিলের মুখে মেঘ৷ মুখে পানি পড়তে জ্ঞান ফিরে আসে নিখিলের৷ চোখ মেলে নিখিলকে দেখে বুঝতে বাকি নেই নিখিলের যে তাকে কিডন্যাপ মেঘ করেছে৷

মেঘ নিখিলের সামনের চেয়ারে বসে নিখিলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,” তো মিস্টার নিখিল এখন আপনি বলুন আমার লোকেরা আপনাকে ঠিক মত খাতেমদারি করেছে তো? কোন কিছুতে কার্পণ্য করেনি তো?”

মেঘের কথা শুনে নিখিল দাঁতে দাঁত চেপে মেঘকে বলে উঠলো,” তোকে পস্তাতে হবে অফিসার৷ আমাকে তুই চিনিস না৷ তোকে আমি ছাড়বো না৷” নিখিলের মুখে তুই তুকারি শুনে মেঘের মাথা গরম হয়ে যায়৷ হুট করে নিখিলের চোয়াল শক্ত করে ধরে বলে,” তুই আমাকে ছাড়বি কি ছাড়বি না? এটা আমি জানি না তবে তোকে আমি ছাড়বো না৷ আমার কলিজায় তুই হাত দিতে চেয়েছিস তাই না? এবার দেখ তোর এই হাতের অবস্থা কি করি৷” মেঘ নিখিলের চোয়াল ছেড়ে দিয়ে পেছনে হাত বাড়াতে একজন গার্ড একটা লোহার রড মেঘের হাতে দেয়৷ নিখিল লোহার রড টা দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে তবে কিছু বলতে পারে না তার পূর্বে মেঘ স্বজোড়ে নিখিলের ডান হাতে রড দিয়ে আ’ঘা’ত করে৷ ব্যাথায় যন্ত্রনায় নিখিল চিৎকার করে ওঠে৷ সাথে সাথে অন্য আর একজন গার্ড নিখিলের মুখে কাপড় ঢুকিয়ে দেয়৷ যাতে শব্দ না করতে পারে৷

মেঘ পরবর্তী আঘাত করতে নিবে তার পূর্বে পুরো বাগানবাড়ির বিদ্যুৎ চলে যায়৷ জেনারেটারও অন হয়নি৷ মেঘ রাগে গজ গজ করতে করতে তার গার্ডদের মেইন বোড সুইচ দেখতে বললো আর নিজের ফোন বের করে ফ্লাশ জ্বালিয়ে নিখিলের সামনে ধরতে মেঘ চমকে যায়৷ কারণ নিখিলকে যে চেয়ারে বাধা হয়েছিলো সে চেয়ারটি ফাঁকা, সেখানে নিখিল নেই৷ মেঘের বুঝতে বাকি নেই নিখিল পালিয়েছে৷ কিন্তু নিখিল একা কখনো এভাবে পালাতে পারে না ওকে কেউ নিশ্চয়ই সাহায্য করেছে কিন্তু কে সে?
.
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_১২
.
.
🌺
১৫.
ফজরের আজানের পর পর জ্ঞান ফিরে আসে নিখিলের, চোখ মেলে তাকিয়ে চারিপাশটা দেখে নিখিল বুঝতে পারলো সে তার বাড়ির সামনে পড়ে আছে৷ শরীরে অজস্র ব্যাথা নিয়ে কোন ভাবে বাড়ির কলিংবেল কয়েকবার বাজানোর পর নিখিলের মা বাবা দুজনে দরজা খুলে নিখিলকে আহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে চিৎকার করে উঠলো৷ নিখিলের বাবা কোন ভাবে নিখিলকে ধরে নিয়ে তার রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়৷ নিখিলের বাবা নিখিলকে হসপিটালে ভর্তি করতে চাইলে নিখিল বারণ করে দিয়ে আস্তে ধীর কন্ঠে বলে,” বাবা যা যা করার তা বাড়িতে করো৷ আমি হসপিটালে যাবো না৷”

একমাত্র ছেলের কথা মতই ডক্টরকে ফোন করে তার বাসায় আসতে বলে৷ নিখিলের মা বাবা নিখিলের এই অবস্থা কি করে হলো? কে করেছে? আর বাড়ির সামনে বা কি করে এলো? সেটা জানতে চাইলে নিখিল বলে,” বাবা সবটা জানতে পারবে সঠিক সময় আসুক৷ আর আমি এখানে কি ভাবে এলাম আমি নিজেও জানি না৷ তবে কেউ একজন আমাকে বাঁচিয়ে এখানে পৌছে দিয়েছে৷” কিছুক্ষণ পরে ডক্টর এসে নিখিলকে চেকয়াপ করে শরীরের কা’টা স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে কিছু মেডিসিন আনতে বলে নিখিলের বাবাকে, নিখিলের বাবা বাসার দারোয়ানকে মেডিসিন আসতে পাঠিয়ে দেয়৷ ডক্টর নিখিলদের পরিবারের অনেক বছরের চেনা জানা বলতে গেলে ডক্টর নিখিলের বাবার বন্ধুর মত৷ সে সুবাদে ডক্টর নিখিলকে প্রশ্ন করে৷ ” নিখিল বাবা তোমার এই অবস্থা হলো কি করে?”

” তেমন কিছু না আঙ্কেল৷ রাতে বন্ধুদের নিয়ে লংড্রাইবে গিয়ে ছিলাম তখনি এক্সিডেন্ট করি৷”

” ওহ আচ্ছা এখন থেকে সাবধানে চলাফেরা করবে৷ আর আমি যে মেডিসিন গুলো আনতে দিয়েছি সেগুলো কি ভাবে কোনটা কখন খেতে হবে তা লিখে দিয়েছি৷ সেভাবে খাবে৷ তাহলে এখন আমি আসছি৷ নিজের খেয়ান রেখো আর এখন থেকে দুদিন সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকবে৷” কথা গুলো বলে ডক্টর চলে যাওয়ার পর পর নিখিলের বাবা নিখিল কে জ্বিজ্ঞাসা করে এই সব কি বললে নিখিল? তুমি লংড্রাইবে গিয়ে ছিলে? তাহলে গত পরশুদিন তোমার নম্বর থেকে যে একটা মেসেজ আসলো তুমি আয়মানের বাড়িতে থাকবে৷ ওখানে গ্রুপ স্টাডি করবে?”

নিখিল দম নিয়ে শুধু একটা কথাই বললো,” বাবা ওই মেসেজ টা আমার পাঠানো নয়৷ আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো৷ আমি ডক্টর আঙ্কেলের প্রশ্ন থেকে বাঁচতে মিথ্যে লংড্রাইবের কথা বলেছি৷ এখন আর কোন প্রশ্ন করো না ড্যাড আমি খুব ক্লান্ত ঘুমাবো৷”

নিখিলের বাবা আর কোন প্রশ্ন না করে নিখিলের মাকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷

বেলা আটটা পর্যন্ত ফারহাকে ঘুমাতে দেখে রাফিদ বেশ অবাক হয় পরক্ষণে মনে পড়ে তার দিয়ে শেষ রাতের একটু আগে ফিরে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে৷ বাড়িওয়ালা দিদা এসে দুই ভাই-বোনের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসে৷ ফারহাকে ঘুম দেখে ওর মাথার কাছে বসে আস্তে আস্তে মোলায়েম কন্ঠে ফারহাকে ডাকতে লাগলো৷ মাথায় হাত বুললিয়ে দিতে ফারহা যেন বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে অন্য দিকে ফিরে ঘুমালো৷ তাদেখে রাফিদ দিদা দুজনে মিটি মিটি হাসতে লাগলো৷ তখন আর দিদা ফারহাকে ডাকলো না চলে গেল৷ আর রাফিদ নাস্তা করে কলেজে চলে গেলো৷ ফারহা তার চিলেকোঠায় ঘুমিয়ে আছে এমন সময় তার ফোন টা বিকট শব্দ করে বাজতে থাকে৷ প্রথমবার বেজে কেটে যায় তারপরও আবার ফোন বাজতে থাকে৷ ফারহার ঘুম ভেঙ্গে যায় ফোনের বিকট শব্দে৷ একরাশ বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে হ্যালো বলতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,” ফারুপাখি” যাস্ট এই নামটা শুনে ফারহার ঘুম চোখ থেকে উধাও হতে যথেষ্ট৷ ফারহার মাথায় যেন রাগ চড়া দিয়ে উঠলো৷ রাগি কন্ঠে বলে উঠলো,” কে আপনি আর কাকে আপনি ফারুপাখি বলছেন?”

ফারহার কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে একটা মৃদু হাসির আওয়াজ এলো তার পর বলতে লাগলো,” এখনো আমাকে চিনতে পারো নি ফারুপাখি? জানো তোমার ঘুম জড়ানো কথা গুলো যেন আমার হৃদয়ে লাগে৷ এত কিউট কেন তুমি? ইচ্ছে করে এই বুকে তোমাকে লুকিয়ে রাখি যেন পৃথিবীর কেউ তোমাকে খুজে না পায়৷” বলেই কাউচে শরীর এলিয়ে দিলো মেঘ৷

ফারহা প্রথমে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটা কে চিনতে না পারলেও এখন আর চিনতে অসুবিধা হয়নি৷ আসলে ফোনের ওপাশে মেঘ রয়েছে৷

ফারহা বিছানা থেকে উঠে বসে তারপর রাগি কন্ঠে বলে উঠলো,” ফারপাখি বলে আমাকে ডাকার কোন অধিকার আপনার নেই মিস্টার অফিসার৷ সে অধিকার শুধু মাত্র একজনের ছিলো সে হলো আয়াশ৷ আর জেনে শুনে আগুনকে বুকে জড়াতে চাইছেন? এটা নিশ্চিত হয়ে আমাকে আপনার বুকে জড়িয়ে নিলে আপনার বিনাস অবধারিত৷ শুধু আপনি নন আপনার চারপাশ আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যাবে৷”

” ফারুপাখি তুমি তো নিশ্চয়ই জানো? আগুন নিভাতে প্রয়োজন পানি৷ এখন তুমি যদি আগুন হও আমি নাহয় পানি হলাম৷ তুমি না হয় আমাতে বিলিন হলে৷ ”

” অসম্ভব৷ ”

” অসম্ভব বলে মেঘের জীবনে কিছু নেই৷ তুমি আমার ফারুপাখি৷ শুধু আমার৷ আর একটা কথা তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে একটু কম মেলামেশা করো৷ তনু , নেহাল, আয়মানকে নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই তবে নিখিলের সাথে তুমি মিশবে না ইভেন কথাও বলবে না৷”

ফারহা মেঘের এমন অধিকার খাটিয়ে কথা বলতে শুনে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো৷

” হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার অফিসার৷ আপনার স্পর্ধা দেখে আমি সত্যি অবাক৷ আমি কার সাথে মিশবো আর কার সাথে মিশবো না সেটা আপনার বলে দেওয়ার কোন অধিকার নেই৷ আর হা আমাকে ফলো করা সাহস নেক্টস টাইম করবেন না যদি করেন তো সেটা আপনার জন্য খুব একটা ভালো হবে না মিস্টার অফিসার৷” বলে কল ডিসকানেক্ট করে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলতে লাগলো “কেন বার বার এই মানুষ গুলো আমার জীবনে অধিকার ফলাতে চায়? কেন?

ফারহা আজ একটু দেরি করে ভার্সিটিতে যায়৷ ফারহা ভার্সিটিতে প্রবেশ করতে করতে বুঝতে পারে অলরেডি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে৷ তাই ফারহা ভার্সিটির ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে গিয়ে ক্লাস শেষ হবার অপেক্ষা করতে থাকে৷ ফারহা ক্যান্টিনে বসতে খেয়াল করে কয়েকটা ছেলে শুধু তাকেই খেয়াল করছে তাকিয়ে রয়েছে৷ ফারহা ছেলে গুলোর ফেস দেখে একদমি চেনা লাগলো না কারণ ভার্সিটিতে এত বছর পড়ছে যদি নতুন কোন ছাত্র-ছাত্রী এসে থাকতো তাহলে তারা মুখ দেখে খানিকটা হলেও বুঝতে পারতো৷ আর এদের কে একদমিই চেনা লাগছে না৷ ফারহা সে দিকে না তাকিয়ে খাবার সার্ব করা ছেলেটা ফারহাকে চা দিতে এলে ফারহা ছেলেটাকে বলে,” মামা এই ছেলে কে নতুন লাগছে৷ এই ভার্সিটিতে তো কখনো আগে দেখেনি৷ আপনি চিনেন এদেরকে?”

” আরেহ কি কন মামা এদেরকে আমি কেমনে চিনমু? এরা সকালে ক্যান্টিন খোলার পর থেকে এসে বসে আছে৷ আর এটা সেটা অর্ডার দিয়ে খাচ্ছে৷”

” ওহ আচ্ছা ঠিক আছে মামা৷” ছেলেটা চলে যাওয়ার পর পর ফারহা অল্প সময়ে চা খেয়ে বিল পে করে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে যায়৷ ততক্ষণে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে৷ ফারহা ক্লাসে ঢুকতে নেহাল তনু আয়মানদের মুখে হাসি চলে আসে৷ ফারহা গিয়ে তনুর পাশে বসে৷ ক্লাসে স্যার ম্যাম না থাকায় নেহাল বেশ ফারহাকে বলে দোস্ত নিখিল সকালে আমাকে ফোন করেছিলো৷ ওর নাকি ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ আমরা ভাবছি ক্লাস আর করবো না নিখিলকে দেখতে ওর বাড়িতে যাবো৷”

ফারহা কিছু একটা ভেবে সায় জানায়৷ তারা আর ক্লাস না করে নিখিলের বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷ আয়মান ড্রাইভ করছে আর পাশে ফারহা বসে পেছনে নেহাল আর তনু৷ ফারহা সাইড মিররে তাকাতে দেখতে পায় অন্য একটা গাড়ি ওদের গাড়িটা ফলো করছে৷ ফারহা আবারও কিছু ভেবে আয়মানকে বলে ওঠে,” আয়মান দোস্ত এই রাস্তা নয় ডান দিকের রাস্তা নে আর ফুল স্পিডে রাইড কর৷”

” কেন?”

” সাইকেলের মত গাড়ি না চালিয়ে ঝটপট ডান দিকে গাড়ি ঘুড়া৷”

ফারহার কথা মত আয়মান গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে ফুল স্পিডে অন্য রাস্তা ধরে৷ ফারহা সাইড মিররে তাকিয়ে গাড়িটি দেখতে পেল না৷ কারণ হুট করে আয়মান গাড়ি ঘুড়াতে আর ফুল স্পিডে চালাতে পেছনের গাড়িটা আয়মানের গাড়িটা আর ধরতে পারলো না৷ কিছুক্ষণের মধ্যে তার নিখিলের বাড়িতে পৌছে গেল৷ বাড়ির কলিংবেল বাজাতে একজন মধ্যে বয়সি পুরুষ এসে দরজাটা খুলে দেয়৷ নেহাল নিখিল তনু আর ফারহাকে দেখতে পেয়ে লোকটি হাসি দিয়ে বললো,” ভালো আছো বাবারা?” তনু মুখ ফুলিয়ে লোকটিকে বললো,” চাচা আমি কিন্তু মাইন্ড করলাম৷”

” কেন মা ?”
” এই যে আপনি ওদের কে কি সুন্দর করে জ্বিজ্ঞাসা করলেন বাবারা কেমন আছো? আমরা নদীর জলে ভেসে আসছি?”

লোকটি নিজের ভুল বুঝতে পারলো কিন্তু তনুর এমন বাচ্চামো দেখে লোকটি কানে হাত দিয়ে বললো,” ক্ষমা করো মা জননী ভুল হয়ে গেছে৷ এখন বলেন মা জননীরা আপনারা কেমন আছেন?”

এবার ফারহা মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলো,” আলহামদুলিল্লাহ চাচা আমরা ভালো আছি৷ আপনি কেমন আছেন? আর এই পাগলিটার কথায় কিছু মনে করবেন না৷”

” না না মা জননী আমি কিছু মনে করি নি৷”

নেহাল এবার বলে উঠলো,” চাচা আমরা নিখিলের রুমে যাচ্ছি৷”

” আচ্ছা বাবারা আমি ওখানে তোমাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে আনছি৷”

আয়মান নেহাল নিখিল তনু ফারহা আগেও নিখিলদের বাসায় এসেছে যার কারণে এই বাড়ির মেইড সার্ভেন্টদের সাথে তারা পূর্ব পরিচিত৷ যার সাথে এতক্ষণ সবাই কথা বললো তিনি নিখিলদের বাড়িতে কাজ করে প্রায় অনেক গুলো বছর৷

নেহাল আয়মান তনু ফারহা নিখিলের রুমে নক করতে নিখিল বলে ওঠে,” ভেতরে আয়৷ দরজা খোলা আছে৷”

তনু সর্ব প্রথম রুম ঢুকে নিখিলের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে ছোটখাটো একটা চিৎকার দেয়৷ তা দেখে নিখিল কপাল কুঁচকে বলে এই ড্রামা কুইন তোর ড্রামা বন্ধ কর৷ আমি ঠিক আছি মরে যাই নি৷”

ফারহা দু’পা হেটে নিখিলের পাশে বসে বলে,” এখন কেমন আছিস নিখিল?”

নিখিল ফারহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷ তুই কেমন আছিস?”

” ভালো আছি৷ দ্রুত সুস্থ হয়ে যা দোস্ত আগামি সপ্তাহে ভার্সিটি থেকে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের নিয়ে টুরে যাবে৷ এখন তুই যদি সুস্থ না থাকিস তাহলে আমাদের টুরে তো যাওয়া হবে না৷”

ফারহার কথা শুনে আয়মান বলে উঠলো,” শিট আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোদের টুরের কথা বলতে কিন্তু ফারু না মানে ফারহা তুই জানলি কি করে?”

এই সব নিউজ আমরা কোথা থেকে জানি হাদারাম? আমি সেখান থেকে জেনেছি৷”

আয়মান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,” আসলে আমি একটা হাদারাম৷ যাই হোক তুই এক্সিডেন্ট কি করে করলি? তুই খুব ভালো ড্রাইভ করিস ইভেন নেহাল আর আমার থেকে তো ভালো ড্রাইভ জানিস৷”

” আসলে আমার শরীর টা ভালো ছিলো না ৷ আর তখন কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি৷”

ফারহা গম্ভির গলায় এবার বলে ওঠে,” যা করেছিস তা দ্বিতীয় বার করার দুঃসাহস করবি না৷ ” ফারহার কথা শুনে তনু বলে ওঠে,” এই ফারহা কি বলছিস এই সব? কি করেছে এই এই ছাগলটা?”

” এই যে দেখছিস তো কিভাবে এক্সিডেন্ট করে জখম হয়েছে৷ এটাই বলছি এভাবে যেন আর গাড়ি না চালায়৷” ফারহা কথা শেষ হতে না হতে সার্ভেন্ট হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হয়৷ সবাই গল্প করতে করতে নাস্তা করে নিখিলকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়৷ নিখিল ফারহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলো,” তুই শুধু আমার ফারু ওই অফিসারকে তো আমি দেখে নিবো৷ আমার শরীরে হাত দেওয়া! ওকে আমি দেখে নিবো৷ কিন্তু আমি কি করে বাড়ি ফিরে এলাম? যতদুর মনে পরে ওই অফিসার আমাকে আঘাত করতে নিবে তৎক্ষনাত চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়৷ তারপর দুটো হাত আমার বাধণ খুলে দিলো৷ তারপর তারপর কি হলো? নিখিল মাথা চেপে ধরে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলো না৷ কারণ যখনি তার জ্ঞান ফিরেছে চোখ মেলে নিজেকে নিজের বাড়ির সামনে আবিষ্কার করেছে৷

” কিন্তু পৃথিবী উল্টে গেলেও ফারুকে আমি ছাড়বো না ওকে আমি নিজের করেই ছাড়বো৷” নিখিল কথা গুলো বলে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল৷

১৬.
গাড়ির পেছনে পলো করা লোক গুলো ফারহাদের গাড়ি ধরতে না পেরে তাদের গাড়িটা খুজতে লাগলো৷ তখনি লোক গুলোর মধ্যে একজনের ফোন বেজে উঠলো৷ লোকটা তার ফোন বের করে ফোনের স্কিনে নামটা দেখে শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে…………
.
.
.
#চলবে………….
.
#চলবে…………..
.
.
#চলবে……..
{ প্রিয় পাঠক/পাঠিকা সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক৷}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here