চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -১৭+১৮

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_১৭
.
.
🌸
“আমাকে এভাবে গাড়িতে তোলার মানে কী পিচ্চি?” খানিকটা রাগ নিয়ে আদিলকে প্রশ্ন করলো ফারহা৷

” সরি আপা এটা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলো না৷ তুই ভালো করেই জানতি ওই গাড়িটা কার? এবং তোর সামনে কেন থেমে ছিলো৷”

” হ্যাঁ জানতাম ওই গাড়িতে মেয়েদের কিডন্যাপ করা হয়৷ ”

” আর তুই জেনে বুঝে কিডন্যাপ হতে চেয়েছিলি?”

” না আমার তো অন্য প্লান ছিলো কিন্তু মাঝখানে তুই এসে গন্ডগোল পাকিয়ে দিলি৷ ”

” বেশ করেছি৷ তোকে আমি কোন রিস্কি কাজ করতে দিবো না৷ এখন থেকে যা যা করার দরকার আমি করবো ৷ তোর প্লান অনুযায়ী আমি কাজ করবো৷”

ফারহা তার ভাইয়ের পাগলামি দেখে মুচকি হেসে বলে,” ঠিক আছে ৷ ” ফারহা আদিলের কথোপকথন এর মাঝে ফারহার ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফারহা কল রিসিভ করার পর ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,” সরি ম্যাম আপনার কথা মত টাইমলি খবরটা দিতে না পারার জন্য,”

” ঠিক আছে বলুন কি জানতে পেরেছেন?”

” ম্যাম লোকটি খুব চতুর এব ধুরন্ধর৷ সবাইকে বলে বেরিয়েছে ওই জায়গা বিক্রি করে দিবে৷ আসলে সত্যিটা হলো তিনি ওখানে মদের বার বানাতে চেয়েছে৷ জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় পুলিশের ঝামেলা কম হবে এটা ভেবে তিনি বাড়ি বিক্রির গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে৷”

ফারহা সব শুনে বললো,” লোকটাকে ধরে কিছুদিন আদর ভালোবাসা দিয়ে দিন৷ আর ভালো করে বুঝিয়ে দিন তার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়৷”

” ওকে ম্যাম৷” ফারহা কল ডিসকানেক্ট করে আদিলকে বলতে লাগলো,” তোকে একটা করতে হবে পিচ্চি৷”

” কি কাজ আপা?”

“মিলন হাওলাদার কে খুব সতর্কতার সাথে কিড’ন্যাপ করতে হবে তবে এটা কেউ যেন জানতে না পারে৷ ছেলেটা বড্ড চালাক আর লো’ভী পিচ্চি তার বাবা আর ভাইয়ের করুণ পরিনতি দেখার পরও নিজেকে সুদরে নেওয়া তো দুরে থাক আরও নতুন উদ্দামতা নিয়ে মেয়েদের কিড’ন্যাপ করছে৷”

” তুই নিশ্চিন্ত থাক আপা এই বিষয়টা আমি দেখে নিচ্ছি৷”

বলতে বলতে ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামে৷ আদিল ফারহাকে নিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে যায়৷ ফারহার সাথে অচেনা একটা ছেলেকে দেখে অনেকে আড়চোখে ফারহা আর আদিলের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তখনি হুট করে নেহাল নিখিল আয়মান তনু এসে ফারহার সামনে হাজির হয়৷ ফারহা নিখিলকে দেখে কেমন আছিস জ্বিজ্ঞাসা করে৷

” ভালো কিন্তু ছেলেটা কে ?”

” ওহ পরিচয় হয়ে নে৷ আদিল ও হচ্ছে নিখিল ও নেহাল তনু আর আয়মান৷ এরা আমার বেস্টফ্রেন্ড আর নিখিল ও হচ্ছে আদিল আমার আর একটা ছোট ভাই কিছুদিন হলো লন্ডন থেকে এসেছে৷”

ছোট ভাই কথাটা শুনে তনুর মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল কারণ আদিলকে দেখেই বড়সড় একটা ক্রাশ নামক বাশ অলরেডি খেয়ে বসে আছে৷ বাকিরা সবাই আদিলের সাথে আড্ডা জমিয়ে ফেলে৷ আদিল যাওয়ার সময় ফারহাকে বলে যায় ক্লাস শেষ হলে সে এসে তাকে পিক করে নিয়ে যাবে৷ ফারহাও তাতে সায় জানায়৷ আজ তিনটে ক্লাস করার পর টিচারদের মিটিং হওয়ায় ক্লাস আর হয় না৷ আজ সূর্য মামা তার তেজটা বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ফারহা নিখিল নেহাল তনু আয়মান ভার্সিটির ক্যাম্পাসের এক বটবৃক্ষের নিচে বসে গল্প করছে হঠাৎ ফারহা চোখ যায় ভার্সিটির দক্ষিন দিকে যেখানে পরিত্যাক্ত একটি রুম রয়েছে৷ সেখানে ভাঙ্গা বেঞ্চ টেবিল রাখা হয়৷ বেশির ভাগ রুমটা দারোয়ানরা ব্যবহার করে থাকে৷ সে রুমের দরজার লক খোলা এবং কয়েকটা মেয়েকে দেখছে যাদের দেখে মনে হচ্ছে মেয়ে গুলো নেশা করে আছে৷ খানিকক্ষণ বাদে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল৷ মনে হলো ভেতর থেকে কেউ দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফারহা পুরোটা দেখে নেয় এবং নজরে রাখে৷ ফারহার ধারণা আজ এই মেয়ে গুলোই হলো টার্গেট৷ এদের কেই আজ তুলে নিয়ে যাবে৷

২০.
আজ বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ফারহা রুমটার উপর নজর রেখে তার লোকদের মেসেজ করে জানিয়ে দেয় তাদেরকে কি করতে হবে৷ কিছুক্ষণ বাদে ভার্সিটি ফাঁকা হতে পেছনের গেট দিয়ে কিছু লোক মেয়ে গুলো কে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়৷

ফারহা এবার সবাইকে বলে ওঠে,” অনেক সময় হলো এখন যেতে হবে আর নিখিল তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো৷” ফারহার কথা শুনে তনু বলে উঠলো,” তোদের আবার কথা কিসের? যা বলার আমাদের সামনে বল৷”

ফারহা তনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো,” তাহলে তুই আগে বল আজ আমার ভাইকে দেখে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন?” ফারহার কথা শুনে নেহাল বলে উঠলো,” লুচ্চা মাইয়া গো আর কাজ কী ফারহা? পোলাগো দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকায় থাকা তাই না?”

নেহালের কথা শুনে তনু রেগে গিয়ে বললো,” চুপ থাক অশিক্ষিত৷ ভার্সিটিতে পড়ে আবার যে মুখের ভাষা ছিঃ আঙ্কেলকে বলতে হবে তোর দিন দিন অবনতি হচ্ছে এভাবে পড়িয়ে টাকা নষ্ট না করে তোকে রিক্সা কিনে দিতে তুই ওটারই যোগ্য৷” শুরু হয়ে গেল বিশ্ব যুদ্ধ তনু আর নেহালের মাঝে আর আয়মান এখানে ওদের থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না৷ ততোক্ষণে ফারহা আর নিখিল অন্য সাইডে চলে গেল৷

” কি বলবি ফারু?”

” প্রথমত আমাকে ফারহা নাম ধরে ডাকবি ফারু বলে ডাকবি না৷ আর দ্বিতীয়তঃ আমার প্রতি যদি তোর কোন ফিলিংস এখনো বাকি থাকে তাহলে সেটা শেষ করে দে৷ আমি চাই না আমার জন্য আমার বেস্টফ্রেন্ড কষ্ট পাক৷” ফারহার কথা শুনে নিখিল কিছু না বলে হুট করে ফারহাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,” তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড আমার কলিজা আগে যেমন ছিলি এখনোও তেমন থাকবি আর আমার ফিলিংস সেটা আমার ভেতরই থাকবে কখনো কেউ জানবে না তুই আমার ভালোবাসা৷ আর না আমি সে ফিলিংস কখনো কাউকে বুঝতে দিবো৷ ” নিখিলের কথা শেষ হতে না হতে হুট করে মুখ থুবড়ে পড়লো৷ আচমকা এমন আক্রমনের জন্য নিখিল বা ফারহা কেউ প্রস্তুত ছিলো না৷ ফারহা নিখিলকে মাটি থেকে তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মেঘ দাড়িয়ে৷ চোখে মুখে অসম্ভব রাগ৷ রাগে চোখ দুটো রক্ত বর্ণ ধারণ করেছে৷ এদিকে নিখিলের নাক থেকে রক্ত পড়ছে৷ ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে এটা দেখে ফারহা নিজেকে আর সামলাতে পারেনি মেঘের সামনে গিয়ে মেঘকে একটা থাপ্পর মেরে বসে৷ ফারহার এহেন কান্ডে হতবম্ভ হয়ে যায় মেঘ৷ ফারহা এবার মেঘকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,” হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার চৌধুরী৷ আপনার সাহস কী করে হয় আমার বেস্টফ্রেন্ডের গায় হাত তোলার?” ফারহার কথা শুনে মেঘ প্রচন্ড রেগে নিখিলের দিকে একবার তাকিয়ে ফারহাকে বললো,” তোমার শরীরে পরপুরুষের স্পর্শ আমি সহ্য করবো না ফারুপাখি , হোক সে তোমার বেস্টফ্রেন্ড৷ যে হাত দিয়ে তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে সে হাত আমি কে’টে ফেলবো৷ প্রয়োজন পড়লে তাকে জিন্দা মাটিতে পু’তে ফেলবো৷ ডু ইউ আন্ডারস্টান্ড৷”

ফারহা দুহাত ভাজ করে চুপচাপ মেঘের কথা গুলো শুনে বলে উঠলো,” আপনার বলা শেষ? শেষ হলে আপনি আসতে পারেন৷ আর নিখিল তুই আমার সাথে সামনের ফার্মেসিতে চল৷”

” প্রয়োজন নেই ফারহা৷”

“প্রয়োজন আছে কী না নেই সেটা আমি বুঝবো৷ চল আমার সাথে৷” ফারহা নিজ থেকে মেঘের সামনে নিখিলের হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো৷ ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট কম থাকায় তেমন একটা কেউ মেঘ ফারহার দিকে খেয়াল করলো না তবে আয়মান নেহাল তনু এসে হাজির হয়৷ পুরো কাহিনী না বুঝতে পারলেও নিখিলের মুখের অবস্থা দেখে ধারণা করে নিয়েছে কী হতে পারে৷

ফারহা নিখিলের হাত ধরা দেখে মেঘ পারে তো নিখিলকে সেখানে শেষ করে দেয় কিন্তু নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করলো৷ আর মনে মনে বলতে লাগলো,” ফারুপাখি একদিন আসবে যখন তোমার হাত ধরা কেন তোমাকে স্পর্শ করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার থাকবে৷ এত বছর যখন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছি আরও কিছু দিন না হয় অপেক্ষা করবো৷ তবে দিন শেষে তোমাকে এই মেঘের বুকেই আসতে হবে৷ সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম৷”

মেইন গেট থেকে বের হওয়ার পর পরই নিখিল ফারহাকে সাইডে নিয়ে বললো,” ফারহা একটা প্রশ্নের উওর দিবি?”

” আমি জানি তুই কী প্রশ্ন করবি৷ এটাই তো মেঘ চৌধুরী কেন আমার পেছনে পড়ে আছে?”

নিখিল মাথা নেড়ে সায় জানায়৷ ফারহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে তোকে যে গল্পটা বলেছিলাম মনে আছে নিশ্চয়ই? মেয়েটার বাবা যে ছেলেটার সাথে বিয়ে দিবে বলে ঠিক করে রেখেছিলো এই মেঘ চৌধুরী হলো সেই ছেলে৷

ফারহার কথা শুনে নিখিলের চোখ দুটো কপালে ওঠে যাওয়ার উপক্রম৷

” ম,,মানে যার সাথে তোর বিয়ে…..” বাকিটা বলার পূর্বে ফারহা বলে ওঠে,”হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস৷ আমার জীবনটা নষ্ট হওয়ার পেছনে এই লোকটারও বিশাল অবদান রয়েছে৷”

নিখিলের এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে মেঘকে মাটিতে পুতে ফেলতে৷ ফারহা সবার আগে তার বেস্টফ্রেন্ড৷ একজন বেস্টফ্রেন্ডের কষ্ট অন্য জন কখনো সহ্য করতে পারে না৷ নিখিল রেগে ভার্সিটির ভেতরে যেতে নিলে ফারহা নিখিলকে আটকে দিয়ে বলে,” নিখিল এটা আমার যুদ্ধক্ষেত্র৷ আমাকেই লড়তে হবে আর আমাকেই জিততে হবে৷ আমি চাই না তুই বা অন্য কেউ এই লড়াইয়ে সামিল হ ৷”

” আই কান্ট বিলিভ দিস ফারহা৷ তুই এত কিছু সহ্য করার পরও এতটা স্ট্রং
কি করে থাকতে পারিস? আর কেনই বা এদেরকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিচ্ছিস না?”

” নিখিল একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবি৷ আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না৷ আর ওরা ওদের শাস্তি পাবে তবে এক ঝাটকায় সেই শাস্তি ওদের আমি দিবো না৷ ওদের কে আমি তীলে তীলে শেষ করবো৷ মানুষিক ভাবে গুড়িয়ে দিবো৷”

” সেটা কবে ফারহা?” নিখিলের প্রশ্ন শুনে ফারহা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো, “খুব শীগ্রই৷”

নিখিল ফারহা কথা বলতে বলতে আদিল এসে উপস্থিত হয়৷ নিখিল পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক আর ঠোঁটের রক্ত মুছে বলে,” ফারহা আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি ট্রিটমেন্ট না হয় বাড়িতে থেকেই নিবো৷ তুই দেরি না করে আদিলের সাথে চলে যা৷

ফারহা কিছু একটা ভেবে নিখিলের কথায় সায় জানায়৷ নিখিল বাকিদের বিদায় জানিয়ে চলে যায়৷ ফারহা ও দেরি না করে আদিলের গাড়িতে উঠে বসে৷ আদিলকে প্রশ্ন করে৷

” কাজটা হয়েছে?”

” পার্ফেক্টলি কাজ টা হয়ে গেছে আপা৷”

” গুড আব আয়েগা উট পাহাড়কে নিচে৷ পিচ্চি আরও কিছু কাজ আছে যেটা তোকেই করতে হবে৷ এই শহরের গার্লস স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে কড়া নজরে রাখতে হবে৷ এবার অনেক গুলো মেয়েকে কিড’ন্যাপ করা হয়েছে৷ তাদেরও উদ্ধার করতে হবে৷”

” আপা আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না৷ এদেশে পুলিশ অফিসার আর্মি থাকা সত্যেও এই অপরাধ গুলো মানুষ কী করে করতে পারে?”

” যদি এই অফিসারদের কেউ অসৎ হয় তাহলে সব কিছুই সম্ভব৷ যাই হোক আমাকে একবার আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হবে৷ আমাকে ওখানে নামিয়ে দে তারপর বাকি কাজ গুলো সেরে ফেল৷”

” আপা আর একটা প্রশ্ন আছে?”

” আর কোন প্রশ্ন নয় পিচ্চি৷ যা বলেছি সেগুলো করা চাই ফাস্ট৷ ”

” ওকে৷”

ভার্সিটি থেকে ফারহার বন্ধুরা চলে যাওয়ার পর পর পুরো ভার্সিটি একবার চক্কর কাটে মেঘ৷ মেঘকে এভাবে ভার্সিটিতে ঘুরতে দেখে পিওন মেঘের কাছে তার পরিচয় জানতে চায় মেঘ কিছু না বলে পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা পিওনের সামনে ধরতে পিওনের চোখ দুটো লোভে চকচক করছে৷ মেঘ টাকা গুলো পিওনের হাতে দিয়ে বলে আমার কিছু ইনফমেশন দরকার দিতে পারবে?

” হ পারমু৷ পারমু না কেন? টাকা পাইলে আমি সব কাজই করতে পারুম৷ ” মেঘ পিওনের কথা শুনে বাঁকা হাসলো৷ যে হাসির মানে পিওনের বোঝার সাধ্য নেই৷

অন্যদিকে মেয়ে গুলোকে ডেরায় না পৌছাতে দেখে মিলন তার লোকদের ফোন করতে থাকে তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউ ফোন রিসিভ করছে না৷ মিলন বেশ রেগে গেল কারণ আজকেই পচিঁশ টা মেয়ে সাপ্লাই দেবার কথা৷ আজ যদি কথা মত মেয়ে গুলোকে সাপ্লাই না দিতে পারে তাহলে বড় সর বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে৷ কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে আবারও সেই কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে ডায়াল করতে লাগলো৷

এদিকে মেয়েদের কে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো তাদের জ্ঞান ফিরতে তারা নিজেদের কে অন্য একটা গাড়িতে আবিষ্কার করে আর তার চেয়েও বড় কথা ভার্সিটির পেছনের দিকে বড় দিঘিটার মধ্যে তাদের গাড়িটা, মানে তারা এখন দিঘির মধ্যে আর তাদের জ্ঞান ফেরার কারণ হলো গাড়ির ভেতর পানি ঢুকে যাওয়ার জন্য, লোকগুলো গাড়ির দরজা খুলে ফেলার ট্রাই করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই দরজা খোলা তো দুরে থাক ভাঙ্গতেও পারছে না পানি তাদের বুক পর্যন্ত উঠে গেছে৷ একজনের ফোন বাজার শব্দ পেয়ে দ্রুত ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করে বলে উঠলো,” বস আমাদের বাঁচান আমরা মারা যাচ্ছি৷” লোক গুলোর কথা শুনে মিলন চমকে উঠে বলে তোরা কোথায় ? আর মেয়ে গুলো কোথায়?” মিলন একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর ফোনের ওপাশ থেকে শুধু একি আওয়াজ ভেষে আসছে৷ ” বস আমাদের বাঁচান আমরা ডুবে যাচ্ছি৷” কয়েকবার কথা গুলো কানে শুনতে পেলেও এক সময় আর কোন আওয়াজ শুনতে পেল না মিলন৷ দিঘির পানির অতলে তলিয়ে গেল গাড়িটা৷
.
.
#চলবে………..#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
#পর্ব_১৮
.
.
🌸
ঘুটঘুটে অন্ধকার রুমের ভেতর হুট করে আলো জ্বলে উঠতে আমজাত শিকদার চোখ বন্ধ করে ফেললেন৷ শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে৷ আবারও শরীরে কারেন্ট শক্টড পেতে আমজাত শিকদার ছটপট করতে লাগলো তা দেখে ফারহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে,” কি হলো আমজাত শিকদার উপস আঙ্কেল আমার লোকেরা আপনার আপ্যায়ন বুঝি ঠিকঠাক মত করেনি?”

খুব পরিচিত গলা শুনতে পেয়ে আমজাত কষ্ট হলেও চোখ মেলে তাকিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা দেখে প্রচন্ড রকমের অবাক হলো৷ সেটা ওনার চোখ মুখ দেখে যে কেউ বলে দিবে৷ আমজাত প্রচন্ড রকমের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফারহার দিকে তা দেখে ফারহা বলে উঠলো ,” এভাবে অবাক দৃষ্টিতে কি দেখছেন আঙ্কেল?” ইনোসেন্ট ফেস করে বললো ফারহা৷

” ফা ফারহা তু তুমি?”

” কেন আঙ্কেল আমাকে দেখে আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না এটা আমি? ওয়েট আপনার বিশ্বাস করার মত একটা কাজ করছি৷” ফারহা আবারও ইলেক’ট্রিক তার নিয়ে আমজাতকে কারেন্ট শক্টড দিলো৷ আমজাত একরাশ বিস্ময় নিয়ে ফারহাকে বললো,” আমার সাথে কেন এমন করছো? কী করেছি আমি? আর তুমি কে?” আমজাতের কথা শুনে ফারহা তার সামনের চেয়ারে বসে বলে,” এত গুলো প্রশ্ন এক সাথে! যাই হোক মেইন টপিকে আসি৷ বাড়িটা ভেঙে আপনি ঠিক কি বানাতে চেয়েছেন আঙ্কেল?”

ফারহার প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেল আমজাত৷ আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিলে ফারহা আবারও ইলেক’ট্রিক শক্টড দেয় আমজাত কে তখনি আমজাত বলে ওঠে,” বলছি বলছি আমি ওই পুরনো বাড়িটা ভেঙে বার বানাতে চেয়েছিলাম৷”

” তো এবার কি করবেন? বার বানাবেন?” ফারহার কথা শুনে আমজাত আতঁকে উঠে বলে উঠলো,” কোন দিন ও না আমি কোন বার টার বানাবো না যেমন বাড়ি আছে তেমনি থাকবে৷”

” গুড বয়৷ আর একটা কথা আজকের কথা গুলো যদি কেউ জানতে পারে তাহলে…..”

” না না না কেউ জানবে না৷ আমি কাউকে বলবো না আল্লাহর কসম৷”

ফারহা আমজাতকে কিছু না বলে তাদের লোকদের বললো “এই জঞ্জালটাকে বাইরে ফেলে এসো৷”

” ওকে ম্যাডাম৷” আমজাতকে কিছুক্ষণ পর একটা ইনজেকশন ইনজেক্ট করে দেওয়ার পর পর আমজাত সেন্সলেস হয়ে যায়৷ তার পর পরই আমজাতকে ডেরার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়৷

” ম্যাম আদিল স্যার মেয়ে গুলোকে তাদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে৷ ”

” শুনুন ভার্সিটির পিওনকে তুলে নিয়ে আসুন আগামীকাল৷ লোকটার বড্ড বেশি লোভ বেড়েছে৷ ওর লোভটা একটু কমাতে হবে৷”

” ওকে ম্যাম ৷ ম্যাম আদিল স্যারের কথা মতো লোক গুলোকে অজ্ঞান করে অন্য একটা গাড়িতে বসিয়ে ভার্সিটির পেছনের দিঘিতে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷”

” গুড৷ এতক্ষণে তো মিলন হাওলাদার খবরটা জানতে পেরেছে৷ এবার হবে আসল খেলা৷ শুনুন আমি এখন চলে যাচ্ছি আপনি এদিকটা ভালো করে দেখে রাখবেন৷ আর ভার্সিটির কয়েকটা মেয়ের ইনফরমেশন এই ফাইলটা আছে আপনি এদের উপর নজর রাখবেন৷ এরা যদি কোন ভাবে আমার নাম প্রকাশ করে তো এদের কে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিবেন৷” গার্ড ফাইলটা চেক করে বলে, ম্যাম এই তো সেই মেয়ে গুলো যাদের আপনি ছেড়ে দিয়ে ছিলেন৷”

” হুম এদের উপর নজর রাখবেন৷”

“ওকে ম্যাডাম৷”

ফারহা ডেরা থেকে বেড়িয়ে যায়৷ বাইরে বের হয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷ বাড়িতে এসে গোছল সেরে নিয়ে রান্না সেরে ফেলে৷ ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ায়৷ সময়টা গোধূলীলগ্ন ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো৷ এই সময়টা ফারহার বড্ড পছন্দের সময়৷ পাখিরা তাদের নিড়ে ফিরছে৷ মৃদু বাতাস বইছে চারিদিকে৷ সাথে বেলী ফুলে ঘ্রাণে পুরো পরিবেশটাই যেন মাতাল করা৷ ফারহা গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে আয়াশের কথা ভাবতে লাগলো৷ তাদের প্রায় এক বছরের সংসার জীবনে প্রায়সই তারা একই সাথে এই গোধূলীলগ্নে বসে সময় কাটাতো৷ খুনসুটিতে মাতিয়ে রাখতো দুজনে৷ সে সমস্থ স্মৃতির পাতায় ডুবে ছিলো ফারহা তখনি তার ফোনটা বিকট শব্দ করে বেজে উঠলো৷ তৎক্ষনাৎ ফারহা তার ধ্যান ভাঙে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে রুম থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার৷ ফারহা কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে ,” ফারুপাখি এভাবে উদাসিন আনমনা বিষন্ন ফারপাখিকে আমি চিনি না৷ আমার সেই দূরন্ত অভিমানিনী লজ্জাবতী ফারুপাখি কে দেখতে চাই৷ সে কি আমার হবে? আমার ব্যাকুল হৃদয় যে সারাক্ষণ তারই নাম জপ করে৷
তার ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাই আমি৷ পাবো কি আমি তারে আমার সণে? নিবে কি আমায় তার ভালোবাসায় জড়িয়ে!”

মেঘের আবেগ মাখা কথা গুলো শুনে ফারহা হাসতে লাগলো হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে৷ মেঘ মন মুগ্ধ হয়ে ফারহার হাসির শব্দ শুনে যাচ্ছে৷ কে বলবে এই মেয়েটা সারাক্ষণ গম্ভির হয়ে থাকে৷ কে বলবে এই মেয়ে নিজেকে নিয়ে সারাক্ষণ উদাসি হয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকে? কে বলবে এই নীলাক্ষি চোখের কেউ ভয়ংকর ভাবে প্রেমে পড়বে৷ কে বলবে এই মেয়ের হাসি কারও হৃদয়ে প্রেমের ঝংকার তুলে দিতে যথেষ্ট! কে বলবে এই মেয়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ একজন সাতজনম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে আবার এই মেয়েকে নিজের করে পাওয়ার জন্য খুনি হতেও দ্বিধাবোধ করবে না৷”

মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ফারহা গম্ভির গলায় বলে ওঠে, আমার জীবনে প্রথম পুরুষ আমার আয়াশ আর শেষ পুরুষও আয়াশ৷ এখানে অন্য কারোর প্রবেশ নিষিদ্ধ৷ বিশেষ করে আপনার মত খুনিদের প্রবেশ একে বারে নিষিদ্ধ৷ ”

ফারহার কথা শুনে মেঘ হাসতে হাসতে বলে উঠলো,” ফারুপাখি আমায় তুমি ভালোবাসো বা নাই বাসো তোমার দিন আমাতেই শেষ আর শুরু আমাতেই ঘিড়ে হবে৷”

” ইন ইউর ড্রিম মিস্টার অফিসার উপস সরি মিস্টার চৌধুরী৷” ফারহার খোঁচা মারা কথা শুনেও মেঘ শুধু হাসলো৷

” বাই দ্যা ওয়ে ফারুপাখি নীল সালোয়ার কামিজে তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগছে৷” মেঘের কথা শুনে ফারহা বেলকনিতে গিয়ে গেটের দিকে তাকাতে রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোয় মেঘকে দেখে কপাল কুঁচকে দাঁত কিড়মিড় করে মেঘকে বলে ওঠে,” আপনি আমার বাড়ির সামনে কী করছেন?”

” এখানে আসতে বা দাড়াতে নিশ্চয়ই আমি কারও পারমিশণ নিবো না কারণ এটা সরকারি রাস্তা৷ এখানে যে কেউ দাড়াতে পারবে৷”

ফারহা মেঘের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,” আপনাকে আমি সত্যি একদিন খুন করে ফেলবো মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷”

ফারহার কথা শুনে মেঘ মৃদু হেসে বললো,” আমি তো কবেই তোমার প্রেমে খুন হয়ে গেছি ফারুপাখি৷”

ফারহা বুঝলো মেঘের সাথে কথা বলাটাই হলো অনর্থক৷ তাই কথা না বারিয়ে বললো কি চান আপনি?”

” তোমাকে৷ তোমাকে চাই ফারুপাখি৷ দিবে কি তোমায় আমাকে?”

” না কারণ আমি শুধু আয়াশের আর কারও না৷”

আয়াশের নাম শুনে মেঘের মুখের ভাবভঙ্গি হুট করে বদলে গেল৷ রাঙ্গানিত গলায় বলে উঠলো,” আয়াশ আয়াশ আয়াশ এই নামটা আর কতদিন নিজের সাথে জড়িয়ে রাখবে? সে নেই তার কোন অস্তিত্ব নেই৷ তাকে ঘিড়ে কি করে বাঁচবে তুমি? মনে রেখো আজ হোক বা কাল তুমি আমারই হবে৷ আমার ভালোবাসায় তুমি নিজেকে রাঙ্গাবে৷”

মেঘের প্রত্যেকটা কথা শুনে ফারহা ক্রুর হাসি দিয়ে মেঘকে বললো,” কন্ফিডেন্স ভালো কিন্তু ওভার কন্ফিডেন্স ভালো না৷ এমন না হয় নিজের জালে নিজেই এমন ভাবে জড়িয়ে গেলেন যে কোন ভাবে সেই জাল ছিড়ে বের হতে পারলেন না৷ আর না আমাকে পাবেন৷” ফারহা মেঘকে বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো,” এভাবে নয় মেঘ চৌধুরী আপনার শাস্তিটা হবে সব চেয়ে ভয়াবহ৷ আমাকে পেয়েও পাবে না৷ ছুঁয়ে দেখতে চাইলেও ছুঁয়ে দেখতে পারবে না৷ উমম তোমার জন্য বিশেষ শাস্তি ওয়েট করছে মিস্টার চৌধুরী যাস্ট ওয়েট এন্ড সি৷”

ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি নিয়ে ভেতরে চলে গেল ফারহা৷ মেঘ ফারহাকে চলে যেতে দেখে গাড়ি উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

ফারহা রুম বসে হৈ চৈ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলো আমজাতকে দেখে বাড়ির সবাই হৈ চৈ করছে৷ ফারহা হেসে বই পড়তে বসে পড়লো পরীক্ষার যে আর বাকি নেই৷

২১.
শাফিন চৌধুরীর একের পর এক ষরযন্ত্রের জাল ছিড়ে ফারহা বেড়িয়ে যায়৷ মিরা চৌধুরী ও বুঝতে পারছে না ফারহা ঠিক কি করতে চাইছে?

“শাফিন আমাদের হয়তো মেয়েটাকে শেষ করতে দেরি না হয়ে যায়৷”

” মিরা জান এই মেয়েটা প্রচন্ড চালাক ভেবেছিলাম মেয়েটা ওই দিনের পর ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে কিন্তু আমার সব ভাবনায় জল ঢেলে দিলো মেয়েটা৷ মেয়েটার সম্পর্কে লোক গুলো যা যা বলেছে তা শুনলে তুমি ঘাবড়ে যাবে মিরা৷”

” তাহলে তুমি এবার হুট করে ওর উপর আক্রমন করো শাফিন৷ মেঘ বেলার বিয়েটা যত দ্রুত সম্ভব হয় ওদের দিয়ে দিতে হবে৷ আমার মনে হচ্ছে সামনে আমাদের জন্য বড় কোন ঝড় অপেক্ষা করছে৷ ”

” চিন্তা করো না মিরা এবার ফুল প্রুফ প্লান করবো যে মেয়েটা বেঁচে ফিরতে পারবে না৷”

” তাই যেন হয় শাফিন৷”

কথা গুলো বলেই দুজনে মিলে ড্রিংকস করতে লাগলো৷ অন্যদিকে দরজার পাশে দাড়িয়ে সবটা শুনে থরথর করে কাঁপছে বেলা৷ তার মা বাবা এতোটা জঘন্য হতে পারে এটা তার জানা ছিলো না৷

” না মম ড্যাড আমি তোমাদের এই আশা পূর্ণ হতে দিতে পারি না৷ কিন্তু এর পেছনে আরও গল্প আছে সে গুলো আমাকে জানতে হবে কিন্তু কে বলবে আমাকে? দাভাই ও সবটা জানে৷ আজ দাভাই আমাকে সবটা জানাবে না হলে আমি ফারহা ভাবির কাছে চলে যাবো৷”

বেলা দ্রুত পায়ে হেটে মেঘের রুমে গিয়ে নক করে৷ মেঘ সবে মাত্র ফারহার সাথে দেখা করে এসেছে মন টা বেশ ভালো৷ গুন গুন করে গান গাইছে৷ দরজায় টোকা পড়তে একটু বিরক্ত হয়ে বলে,” দরজা খোলা আছে৷”

বেলা থম থমে মুখ নিয়ে ভেতরে ঢুকে বলে,” দাভাই তোমার থেকে আমার কিছু জানার আছে৷”

” কি জানতে চাস?”

” ফারহা ভাবি আর তোমার গল্প যেটা আমি জানি না৷”

মেঘের মুখটা আধারে ছেঁয়ে গেলো বেলার কথা শুনে কারণ ফারহা আর তার গল্প গুলো যে একটুও যে মধুময় ছিলো না৷ তাদের সম্পর্ক টা শুরু থেকে তিক্ততা বহন করে আসছে৷ একতরফা ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে এমন কিছু করেছে যে সে গুলো তার পক্ষে বলা সম্ভব নয়৷

” দাভাই আমি সবটা জানতে চাই?”

” আমাকে একা থাকতে দে বেলা৷” গম্ভির গলায় বলে উঠলো মেঘ৷ বেলা বুঝতে পারছে তার দাভাই তাকে সবটা বলবে না এখন একমাত্র আশা হচ্ছে রাফিদ৷ বেলা সময় নষ্ট না করে মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷

রাতের খাবার খেয়ে ফারহা আর রাফিদ গল্প করছিলো তখনি রাফিদের ফোনটা বেজে ওঠে৷ ফোনের কাছাকাছি ফারহা থাকায় ফারহা বেলার নামটা দেখে রাফিদকে কল রিসিভ করতে বলে৷ রাফিদ নিদ্বির্ধায় ফারহার সামনে কল রিসিভ করে৷

” হ্যালো রাফিদ৷”

” হুম বেলা বলো৷”

” আমি এখুনি তোমার সাথে দেখা করতে চাই৷”

” এখন!”

” হ্যাঁ, আমি তোমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি৷”

রাফিদ দ্রুত উঠে বেলকনিতে গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি বেলা তার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে৷ চোখ মুখ কেমন যেন লাগছে বেলার৷ রাফিদ কল কেটে দিয়ে রুমে এসে ফারহাকে সবটা বলতে যাবে তার আগে ফারহা বলে ওঠে,” মেয়েটার সাথে দেখা করে আয়৷ অনেক প্রশ্ন নিয়ে মেয়েটা তোর সাথে দেখা করতে এসেছে ছোটু৷”

” তুই কিভাবে জানতে পারলি ও এসেছে? আর ওর মনে অনেক প্রশ্ন?”

ফারহা রাফিদের কথার প্রত্যুত্তরে হাসলো শুধু৷

” মেয়েটা অনেকটা সময় ধরে দাড়িয়ে আছে ছোটু যা গিয়ে কথা বলে আয়৷ আর হ্যাঁ আজ ও যা যা জানতে চায় ওকে সবটা জানাবি৷”

” ওকে দি৷”

রাফিদ বেরিয়ে গেল বেলার সাথে দেখা করতে এদিকে ফারহা বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে বিড় বিড় করে বলতে লাগলো,” চৌধুরী পরিবারের ধ্বংসের আজ এক ধাপ আরও এগিয়ে গেলাম মিস্টার চৌধুরী৷ তৈরি থাকুন ঝড় আসছে আপনার জীবনে, যে ঝড় সব কিছু ধ্বংস করে দিবে৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা৷”

” কি হলো সেই কখন থেকে দেখছি চুপ করে আছো৷ কিছু বলবে নাকি আমি চলে যাবো?” বিরক্তি নিয়ে বললো রাফিদ৷

” আমি দাভাই আর ফারহা আপুর বিষয়ে সবটা জানতে চাই?”

” এক মিনিট বেলা তোমার সাথে তো আমি আমার দি’র সম্পর্কে তেমন আলোচনা কখনো করেনি তাহলে তুমি কি জানতে চাইছো? আর তোমার দাভাই কে?” জেনেও না জানার ভান করলো রাফিদ৷ বেলা তার ভুলটা বুঝতে পেরে বললো,” আমার দাভাই হলো মেঘ চৌধুরী৷ শাফায়াত চৌধুরীর একমাত্র ছেলে মেঘ চৌধুরী৷ রাফিদ দাঁতে দাঁত কটমট করে বেলার দিকে তাকিয়ে বলে তুমি ওই খুনির কি হও বেলা ৷” ধমকের সুরে জ্বিজ্ঞাসা করলো রাফিদ৷ রাফিদের কথা শুনে বেলা বলে উঠলো,” আ আমি মেঘ চৌধুরীর আমার বড় ভাই৷ সম্পর্কে আমরা কাজিন৷” আর কিছু বলার পূর্বে রাফিদের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল৷
.
.
.
#চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here