চিলেকোঠায় অনুরক্তির ছোঁয়া পর্ব -০৮+৯

#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি ও রাফি
#পর্ব_০৮
.
.
🌸
” আমার দি যে অসুস্থ সেটা আপনি নিজ চোখে দেখলেন তো? এবার চলুন৷” মেঘ গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বলে উঠলো,” এক গ্লাস পানি হবে?” মেঘের কথা শুনে রাফিদ কিছুটা বিরক্তি নিয়ে পানি আনতে চলে গেল৷ সে সুযোগে মেঘ ফারহা কাছে এসে ললাটে লেপ্টে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে আলতো করে ঠোঁটের ছুঁইয়ে দিতে শুনতে পায়৷

” স্যার আপনার পানি?” রাফিদের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে মেঘ দ্রুত ফারহার কাছ থেকে দুরে সরে দাড়ায়৷
ততক্ষণে রাফিদ রুমে চলে আসে৷মেঘ পানিটা খেয়ে নিয়ে বলে,” আমি আগামীকাল আসবো আপনার বোনের সাথে কথা বলতে৷”

” তার কোন প্রয়োজন হবে না স্যার৷ মানে বলতে চাইছি আপনাকে এ বাড়িতে আসতে হবে না কারণ দি আগামীকাল ভার্সিটিতে যাবে৷ আপনি সেখানে দি’র সাথে কথা বলে নিবেন৷”

” ওকে তাহলে আজ আমি চলে যাচ্ছি আগামীকাল মিস ফারহা রহমানের সাথে দেখা হচ্ছে ৷”

” অবশ্যই৷” মেঘ এক নজর ফারহার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল৷

১১.
সন্ধ্যার দিকে ফারহা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।আশেপাশে তাকিয়ে রাফিদকে দেখতে পায় না সে।ফোনটা অন করে টাইমটা দেখে সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।ওয়াশরুম থেকে চেন্জ করে এসে তার নিজস্ব কাপবোর্ড থেকে একটা চাবি দিয়ে ড্রয়ার খুলে একটা রিভলবার হাতে নিয়ে কয়েকটা বুলেট সেটার মধ্যে পুরে কোমড়ে গুজে কাপবোর্ড টা বন্ধ করে দেয়।তৎক্ষনাৎ সেই রুমে রাফিদ প্রবেশ করে আর ফারহাকে রেডি হতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে ফারহার কাছে এসে বললো,”একি দি তুই এই অবস্থায় বিছানা থেকে উঠেছিস কেন তোর রেস্টের প্রয়োজন।”

“ছোটু আমি ঠিক আছি তুই চিন্তা করিস না।”

“বাট দি তুই এইসময় কোথায় যাচ্ছিস?যেখানেই যাচ্ছিস আমি তোকে এখন যেতে দিবো না।তোর রেস্টের প্রয়োজন।”

“আমি সারাদিন রেস্ট নিয়েছি এখন আমার আর রেস্টের প্রয়োজন নেই।আমাকে বাইরে যেতে হবে তুই সরে দাড়া।”

“না আমি তোকে এই অবস্থায় কোথাও যেতে দিবো না।”ফারহা এবার রাফিদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,”ছোটু আমি এক কথা দুইবার বলা পছন্দ করি না।”রাফিদ ফারহার চোখ দেখে একটা ঢোক গিলে ফারহার সামনে থেকে সরে যায়।ফারহা ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।ফারহা চলে যেতেই রাফিদ মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কখনো কখনো ফারহাকে বাঘিনীর মতো ভয়ংকর মনে হয় রাফিদের কাছে।আর রাফিদ জানে তখন যদি কোনো শব্দও করে তাহলে একটা থাপ্পরও মাটিতে পড়বে না।

পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুজেও ইমাম হাওলাদারের খোজ পায়নি মেঘ।নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে মেঘের।ইমাম হাওলাদারকে যদি খুজে না পায় তাহলে ডিপার্টমেন্টের যেমন বদনাম হবে পাশাপাশি মেঘের কর্তব্য নিয়েও সবার মনে প্রশ্ন জাগবে।মেঘ সেটা কোনোভাবেই চায় না।মেঘ নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে।তখনই হঠাৎ ওর ফোনটা বন্ধ বেজে উঠে।মেঘ পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে হাবিলদার মুশফিক ফোন করেছে।মেঘ দ্রুত কলটা রিসিভ করে কানে ধরে।

“হ্যালো স্যার।আমরা ইমাম হাওলাদারের অফিসের সামনে যে গাড়িটাকে দেখা গিয়েছিলো সেই গাড়িটা সহ মালিককে পেয়েছি।”

“গ্রেট।তা কি জানতে পেরেছো দ্রুত বল?”

“স্যার খবর খুব একটা ভালো নয়।যিনি গাড়ির মালিক তিনি একটা সংস্থায় গাড়িটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।যেখান থেকে অন্যান্যরা গাড়ি ১-২ দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে চালায়।ওই সংস্থা থেকেই গাড়িটা ভাড়া নেওয়া হয়েছিলো।তার সাথে মালিকের কোনো হাত নেই।”হাবিলদার মুশফিকের কথায় মেঘ চিন্তায় পরে গেলো।খুনিকে ধরার একটা আশা পেয়েছিলো সেটাও কি নিভতে চলেছে।মেঘ আবার হাবিলদার মুশফিককে জিগ্যেস করলো,”ওই সংস্থা থেকে জানতে পারোনি কে বা কারা ওই গাড়িটা ভাড়া নিয়েছিলো?”

“না স্যার, সংস্থা থেকে গাড়ি ভাড়া নেওয়া লোকদের শুধু লাইন্সেস দেখে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। আর তাই আমরা লোকটার পুরো ডিটেইলস পাইনি।”হাবিলদার মুশফিকের কথা শুনে মেঘের রাগ যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।কল টা কেটে দিয়ে মেঘ মাথা চেপে ধরে আর ভাবতে থাকে “খুনিটা আসলেই খুব বেশি চালাক।তাকে ধরার কোনো ক্লু সে বাদ রাখেনি।মেঘ ভাবছে ওকে ধরতে হলে ওর মতো কোনো চাল দিতে হবে।খুনির মতো করে ভাবতে হবে যে খুনিটা আসলে কি করতে চাইছে।মেঘ কিছু একটা ভেবে ওখান থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

রাফিদ নিজের রুমে বই নিয়ে পড়ছিলো হঠাৎ ওর ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।আননোন নাম্বার দেখে সে কলটা ডিসকানেক্ট করে দেয়।কিছুক্ষন পর আবারো কল করলে আগেরবারের ন্যায় এবারও ডিসকানেক্ট করে দেয়।এভাবে ৩ বার হওয়ার পর রাফিদ এবার বিরক্ত হয়ে কলটা রিসিভ করে।

“হ্যালো কে বলছেন?

“বাব্বাহ স্যার এতো রেগে আছেন কেন?”

“আগে আপনি বলুন আপনি কে?বারবার ডিস্টার্ব করছেন কেন আমাকে।”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই ডিস্টার্ব করছি।তুমি বলার কে?”

“আমি বলার কে মানে?আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করছেন আর আমাকেই জিগ্যেস করছেন আমি বলার কে।আজব পাবলিক তো।”

“ধ্যাত হাদারাম একটা আমাকে চিনতে পারছো না আমি বেলা।”বেলা নামটা শুনে রাফিদ একটু শান্ত হয়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে উঠে,”আপনি আমাকে ফোন দিয়েছেন কেন?আর আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?”

“সেটা তোমার না জানলেও চলবে।আর ফ্রেন্ডকে তো কল দেওয়াই যায় তাই না?”

“কিসের ফ্রেন্ড? আমরা কোনো ফ্রেন্ড নই।”

“তুমি ভাবতে না পারো কিন্তু আমি ঠিকই ফ্রেন্ড ভেবে নিয়েছি।”

“ধ্যাত আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।আমি ফোন রেখে দিচ্ছি।”

“এই এই খবরদার ফোন রাখবে না নাহলে কিন্তু”রাফিদ ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,”না হলে কিন্তু কি?কি করবেন আপনি শুনি?”।বেলা কিছু না ভেবেই বলে দিলো”না হলে কচু গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখবো।”বেলার কথাশুনে রাফিদ উচ্চস্বরে হেসে উঠে।রাফিদের হাসি শুনে বেলা বোকা বনে যায়।সে ভাবছে সে কি এমন হাসির কথা বললো যে রাফিদ এভাবে হাসছে।বেলা রাফিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”কি হলো এভাবে এলিয়েনদের মতো হাসার কি আছে?আমি কি কোনো জোকস বলেছি?”রাফিদ কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললো,”জোকস নয়তো কি?কচু গাছ হচ্ছে পাতলা একটা গাছ আর আমি হলাম ৫’৮ ইঞ্চির একটা ছেলে।কচু গাছের সাথে যদি আমাকে ফাঁস দেওয়া হয় তাহলে আমি কচু গাছের নিচে নয় কচুগাছ আমার নিচে ঝুলে থাকবে।”রাফিদের কথা শুনে বেলা মাথা চুলকায়।আসলেই তো রাফিদের কথা ঠিক।কচুগাছের সাথে তো ঝুলিয়ে রাখা যায় না।বেলা বলে উঠলো,”হয়েছে হয়েছে এতো হাসতে হবে না।আগামীকাল তাড়াতাড়ি কলেজ চলে এসো।আর খবরদার রাস্তাঘাটে কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম।”

“কেন মেয়ের দিকে তাকালে কি হবে?”

“অতোসতো জানি না ব্যাস কোনো মেয়ের দিকে তাকাবে না বলে দিলাম।”সাথে সাথে কল কেটে দিলো রাফিদকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না।রাফিদ কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা পাশে রেখে মুচকি হাসি দিয়ে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়৷

ইমাম হাওলাদারের সামনে বসে আছে ফারহা।মুখে মাস্ক পরে রেখেছে।কালো সুট পড়ে রেখেছে।পাশের বিভিন্ন টাইপের হাতিয়ার রাখা।ইমাম হাওলাদার রিতীমত চিৎকার করে যাচ্ছে।ইমাম হাওলাদারের চিৎকার ফারহার মনে প্রশান্তি এনে দিচ্ছে।ফারহার দুই পাশে দুজন লোক দাড়িয়ে রয়েছে।ফারহা বাঁকা হেসে বললো”তো কেমন লাগছে আমার এই সুন্দর বাড়িটাতে এসে?আমার লোকরা মেহমান দারির কোনো কমতি রাখেনি তো?”ইমাম হাওলাদার চিৎকার করে বললো,”কে তুই আমাকে কেন নিয়ে এসেছিস এখানে?আমাকে ছেড়ে দে নয়তো তোদের কি হাল হবে তোরাও নিজেও জানিস না।”ইমাম হাওলাদারের থ্রেট ফারহার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনেনি।মুখে এখনো রহস্যময়ী হাসি লেগে আছে।ফারহা বলে উঠলো,”এখান থেকে যেতে পারলে তো কিছু করতে পারবেন ইমাম হাওলাদার।আমার লোকেরা আপনার বোধহয় খুব একটা ভালো খাতির যত্ন করেনি।আমি একটু ভালোমতো খাতির জন্য করি আপনার কি বলেন?”ইমাম হাওলাদার ভয়ে ভয়ে বললো,”কি করবি তুই?”ফারহা ইমাম হাওলাদারের ভীত চেহারা দেখে বাঁকা হেসে তার পাশে থাকা বক্স থেকে একটা সিজার নিয়ে ইমাম হাওলাদারের কনিষ্ঠা আঙ্গুল চেপে ধরে সিজার টা ইমাম হাওলাদারের হাতের দিকে থাকে।ইমাম হাওলাদার বুঝতে পেরে সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে।নড়াচড়া করার চেষ্টা করছে কিন্তু করতে পারছে না।ফারহা ইমাম হাওলাদরের কনিষ্ঠা আঙ্গুল কে’টে দিতেই ইমাম হাওলাদার ব্যাথায় বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে।পুরো বাড়িতে ইমাম হাওলাদারের চিৎকার প্রতিধ্বনি হতে থাকে।ফারহার ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি।ফারহা এবার সিজার টা রেখে গুড়ো লালমরিচ ইমাম হাওলাদারের কা’টা আঙ্গুলে নিয়ে লাগিয়ে দেয়।জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আগের চেয়েও বেশি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে।ফারহা বলে উঠলো,

“তো কেমন লাগছে ইমাম হাওলাদার আমার খাতির যত্ন।”ইমাম হাওলাদার ধীর কন্ঠে বলতে লাগলো,”আমার ছোট ভাই তোদের ছাড়বে না।একবার শুধু এখান থেকে ছাড়া পাই তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।”ফারহা এবার রেগে নিজের বসার চেয়ারটায় লাথি মেরে পায়ের হিল দিয়ে ইমাম হাওলাদারের পায়ের আঙ্গুল চেপে ধরে বলতে লাগলো,”কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না আর বংশের রক্ত কখনো বদলায় না।তোর বাপকে দুনিয়া থেকে বি’দা’য় করেছি।তুই নিজেও মৃ’ত্যুশ’য্যায় আছিস তোর ছোটটাকেও খুব শীঘ্রই মৃ’ত্যুর স্বাদ আস্বাদন করাবো।অনেক করেছিস তোরা কিন্তু এবার তোদের হাল বেহাল করে ছাড়বো।”ফারহা নিজের লোকদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”এই লোকটাকে যতক্ষণ না আমি থামতে বলবো ততক্ষণ মারতে থাকবে।প্রতি ১ ঘন্টা পরপর একটা করে আঙ্গুল কাটবে, নখ উপড়ে ফেলবে গট ইট?”ফারহার লোকগুলো মাথা নাড়ায়।ফারহা দ্রুত করে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়ে।

এলোমেলো পায়ে হাটছে ফারহা, বাড়ি থেকে বের হবার পর থেকে মাথার ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে৷ ইমাম হাওলাদারের সাথে সাথে কথা বলার পর থেকে ব্যাথাটা যেন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে৷ ফারহা সেই এলোমেলো পায়ে হেটে কাছাকাছি পদ্মদিঘির পাড়ে গিয়ে বসে পড়ে৷ তখন সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত, আকাশে জ্বল জ্বল করছে একটু চাঁদ আর তার পাশে মিটি মিটি করে জ্বলতে থাকা তারা৷ ফারহা তার পা দুটো পদ্মদিঘির শীতল পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল৷ চোখের কোণ বেয়ে এক বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়তে হু হু করে কেঁদে ওঠে ফারহা৷ নিস্তব্ধ রাতে এমন একলা মানবী তার বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টের পাহাড় চেষ্টায় অনবরত চোখের পানি ঝড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে এক বিন্দু কষ্ট কমেনি বরং হৃদয়ে আগুন যেন দ্বিগুন জ্বলছে৷ নিস্তব্ধ রাত ঝিঝি পোকার আওয়াজে ফারহার কান্নাটা যেন আরও ভয়ানক শোনা যাচ্ছে৷ ঘন্টাখানিক ফারহা চোখের পানি ফেলে উঠে দাড়াতে শুনতে পায় একটা বাচ্চা যেন তাকে মা মা বলে ডাকছে৷ ফারহা আশে পাশে পাগলের মত খুজতে লাগলো বাচ্চাটিকে কিন্তু কাউকে খুজে না পেয়ে ফারহা কাঁদতে লাগলো৷ পেছনের সেই ভয়ংকর স্মৃতি গুলো যে এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায়৷ সে স্মৃতি যে ফারহা ভুলতে পারছে না৷ ফারহা শারিরীক এবং মানুষিক দুটো দিক থেকে অসুস্থ৷ ফারহা কোন ভাবে উঠে দাড়িয়ে হাটতে হাটতে বড় রাস্তায় উঠতে একটা গাড়ি ফারহার সামনে থেমে একজন ব্যক্তি গাড়ি থেকে বের হয়ে ফারহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” অনেক রাত হয়েছে সোনা মা বাড়ি ফিরতে হবে তো? ” ফারহা কিছু বললো না চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

১২.
রাফিদের প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে৷ রাত এগারোটা বাজে তবুও ফারহার কোন দেখা নেই৷ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিকেলে বের হয়েছিলো আর এখন রাত ১১ টা এখনো ফারহার কোন খবর নেই৷ রাফিদ এবার ফারহার নাম্বারে ডায়াল করে৷ দুবার বাজার পর তৃতীয় বারে কল রিসিভ হয় তবে কলটা ফারহা নয় বরং অন্য এক ব্যক্তি ধরেছিলো৷ রাফিদ কিছু বলার পূর্বে ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে,” টেনশন করো না রাফিদ সোনা মা আমার কাছে রয়েছে৷ আগামীকাল সোনা মা ফিরে যাবে৷” ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির কথা প্রত্যুত্তরে রাফিদ কিছু না বলে কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে স্বজোড়ে বিছানার উপর ফোনটা ছুড়ে মেরে বলতে লাগলো,” কেন ফিরে এলে কেন কেন কেন? এই লোকটা যখনি আমাদের জীবনে প্রবেশ করে তখনি আমাদের জীবনটা তসনস হয়ে যায়৷ যেমনটা আমার দি’র সাথে হয়েছে৷ কিন্তু এই বার আমি আর আমার দি’য়ের কোন ক্ষতি হতে দিবো না৷ এর জন্য আমাকে যা যা করতে হয় আমি তাই করবো৷
.
.#চিলেকোঠায়_অনুরক্তির_ছোঁয়া
#ফারহানা_আক্তার_ছবি_ও_রাফি
#পর্ব_০৯
.
.
🌺
মুখে সূর্যের কিরণ পড়তে ভ্রু-জোড়া কুচঁকে চোখ মেলে তাকায় ফারহা৷ বিছানা থেকে উঠে বসে পুরো রুমটা একবার পর্যবেক্ষণ করে রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেল ফারহার৷ বালিশের পাশে থাকা তার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ৬:৩৮ am . ফারহা ঝট করে উঠে ফ্রেস হয়ে ড্রয়ার থেকে একটা পেন আর কাগজ বের করে করে কিছু একটা লিখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়৷

দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে রাফি বুঝতে পারে নিশ্চয়ই তার দি এসেছে৷ রাফি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে ফেলে ৷ রাফি খুব ভালো করেই জানে ওই লোকের বাড়িতে তার দি কখনো থাকা তো দুর পানি ছুঁয়েও দেখবে না৷ গতকাল রাত থেকে তার দি না খেয়ে আছে তাই নিজের হাতে খাবার তৈরি করলো রাফিদ৷

ফারহা ভেতরে ঢুকতে রাফিদ মুচকি হেসে বলে,” দি ফ্রেস হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার বাড়ছি৷”

ফারহা রাফিদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,” অনেক বড় হয়ে গেছিস ছোটু৷” রাফিদ ফারহা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,” আর কত দিন আমাকে ছোট্ট বানিয়ে রাখবি দি৷ এবার তো বড় হতে দে৷ এখন থেকে তোর ছোটু তার দি’য়ের সব দায়িত্ব পালন করবে বুঝেছিস?”

” খুব বুঝেছি এখন দ্রুত খাবার দে আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে৷ আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি৷” ফারহা ফোন চার্জে বসিয়ে হাত মুখ ধুতে চলে গেল৷ এদিকে ফারহাকে রুমে না পেয়ে সেই ব্যক্তির বুঝতে বাকি নেই যে তার সোনা মা চলে গেছে৷ হঠাৎ টেবিলের উপর চোখ পড়তে একটা চিরকুট দেখতে পায়৷ দ্রুত চিরকুটটি খুলে পড়তে লাগলো,” ইন ফিউচারে আমার সামনে কখনো পড়বেন না৷ যদি পড়েন তো আই সোয়্যার সেই দিন হবে আপনার জীবনের শেষ দিন৷”

লেখাটা পড়ে দু’ফোটা চোখের পানি চিরকুটে পড়ে ভিজিয়ে দিলো৷ এত বছর পর ও তার রক্ত তাকে ক্ষমা করলো না৷ ক্ষমার পরিবর্তে যে ঘৃনার সমুদ্রে ভাশিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷ এই অতল সমুদ্রে যে কোন কুল কিনাড়া খুজে পাচ্ছে না সেই ব্যক্তি৷

ফারহা রেডি হয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় মাসখানিক হলো সব টিউশনি ছেড়ে দিয়েছে৷ আপাতত হাতে কোন টিউশনি নেই৷ ভার্সিটিতে ঢুকতে গেটে মেঘ কে দেখতে পেয়ে ফারহার মেজাজ যেন তুঙ্গে ৷ দাঁত মুখ খিচে সোজা ভার্সিটিতে ঢুকে ক্লাসের দিকে চলে গেল৷ তনু নেহাল আয়মান ক্লাসে রয়েছে নিখিলকে দেখতে না পেয়ে ফারহা জানতে চায় নিখিল কোথায়? তখনি আয়মান বলে উঠলো,” গতকাল থেকে নিখিলের ফোন ট্রাই করছি কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে৷ আচ্ছা তুই এখন ঠিক আছিস তো? ”

” হুম ঠিক আছি৷” কথাটা বলে ফারহা কিছু একটা ভাবতে লাগলো কারণ নিখিল কখনো এভাবে ফোন অফ করে রাখে না৷ কিন্তু আজ কেন? আর সেদিন ওই অফিসারের সাথে ঝামেলা হওয়ার পর থেকে তো নিখিল নিখোঁজ কোন খোজ খবর তো পাওয়া যাচ্ছে না৷ ফারহা নেহালকে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে ক্লাসে স্যার চলে আসে৷ ফারহা তখন আর কথা না বলে ক্লাস করতে লাগলো৷ এদিকে মেঘ বাইরে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে ফারহাকে মন দিয়ে দেখে যাচ্ছে৷ তখনি মেঘের ফোনটা বেজে ওঠে৷ মেঘ কল রিসিভ করতে ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,” স্যার ছেলে গুলোকে ধোলাই দিয়ে হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছি তবে আপনার কথা মত একজনকে আটকে রেখেছি৷”

” তাকে ভালো মত জামাই আদর করেছেন?”

” জ্বি স্যার৷ দু’ঘন্টা ধরে ছেলেটিকে আদর করেছি৷ ছেলেটি এখন জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে৷”

“ওকে আমি রাতে আসছি৷”

” ওকে স্যার৷”

মেঘ ফোন রেখে সামনে তাকাতে ঘাবড়ে যায় কারণ সামনে ফারহা দাড়িয়ে আছে৷

মেঘ নিজেকে ধাতস্ত করে ফারহাকে বলে,” এখন কেমন আছো ফারুপাখি?”

” নিখিল কোথায়?”

মেঘ হঠাৎ চমকে গেল ফারহা প্রশ্ন শুনে৷ মেঘকে চমকাতে দেখে ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,” আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছি মিস্টার মেঘ চৌধুরী৷ নিখিল কোথায়?”

মেঘ এবার ফারহার আর একটু কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,” নিখিল তার যথাযোগ্য স্থানে আছে৷ ওকে নিয়ে টেনশন না করে আমাকে নিয়ে ভাবো মাই লাভ৷ কারণ এখন থেকে আমি তোমার প্রেজেন্ট এন্ড ফিউচার৷”

ফারহা মেঘের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো ,” ইন ইউর ড্রিম মিস্টার অফিসার৷ বাই দ্যা ওয়ে একজন সিনসিয়ার পুলিশ অফিসার হয়ে এমন ছ্যাচড়ামি করতে আপনার লজ্জা লাগে না?”

” লজ্জা নারীর ভূষণ৷ তাই আমার লজ্জা পাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না জানেমন৷”

” যাস্ট স্টপ ইট মিস্টার অফিসার৷ এই সব ফালতু নামে আমাকে মটেও ডাকবেন না৷ আর নেক্টস টাইম ছ্যাচড়ামি করার ইচ্ছে হলে দুনিয়াতে অনেক মেয়ে আছে তাদের সাথে করবেন৷ ভুলেও আমার সাথে করার চেষ্টা করবেন না৷ তাহলে এর ফল ভালো হবে না৷ ” কথা গুলো বলে ফারহা যেতে নিলে মেঘ ফারহার হাত ধরে আটকে দিয়ে বলে,” এই দুনিয়ায় মেঘ নারী বলতে দুজন নারীকে চেনে এক হলো আমার মম আর অন্য জন তুমি৷ তাই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এই জন্মে আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না৷ তুমি আমার আমার আর শুধু আমার৷ অন্য কেউ তোমার দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে আমি সেই হাত ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো৷ আর যারা তোমার দিকে তাকাবে তাদের চোখ আমি উপড়ে ফেলবো৷”

মেঘের কথা শুনে তনু পাশ থেকে বলে ওঠে,” আমি সত্যি কনফিউজ আপনি পুলিশ নাকি গুন্ডা স্যার?”

” আমি তোমার বান্ধবীর পাগল প্রেমিক৷” অকপটে মেঘ এভাবে সবার সামনে নিজেকে ফারহার প্রেমিক হিসেবে দাবি করবে এটা ফারহা ভাবতে পারেনি৷”

” আপনার সাহস দেখে আমি সত্যি স্পিচলেস মিস্টার অফিসার৷ আপনার মত ছ্যাচড়া কোন অফিসার হতে পারে এটা আমার জানা ছিলো না৷”

” এই ফারু থাম না আর এত রাগের কি আছে হাহ! এত কিউট হ্যান্ডসাম ড্যাশিং অফিসার তোর প্রেমে পড়েছে এটাতে তো তোর প্রাউড ফিল করা উচিত ৷ ইস কেন যে তোর মিস্টার অফিসার তোর প্রেমে পড়লো? আনরোমান্টিক মাইয়া৷” তনুর কথা শুনে ফারহা দাঁতে দাঁত চেপে তনুর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে উঠলো,” এতই যদি এই অফিসারকে তোর ভালো লাগে তাহলে দয়াকরে এই অসভ্য অফিসারকে নিজের গলায় ঝুলিয়ে নে৷”

” কাস যদি এটা সম্ভব হতো দোস্ত৷ বিশ্বাস কর আমি নিদ্বির্ধায় আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকয়াপ করে এই হ্যান্ডসামকে বিয়ে করে নিতাম৷”

তনুর কথা শুনে আয়মান নেহাল ফারহা তিনজনই প্রচন্ড বিরক্ত তা তাদের চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে৷ ফারহা এবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” একজন পুলিশ অফিসার হয়ে আপনার উচিত ক্রিমি’নাল ধরা কোন মেয়ের পেছন পেছন ঘোরাটা আপনাকে মানায় না আশা করি আপনি বুঝবেন আমার কথা গুলো আর না বুঝলেও সমস্যা নেই কারণ এর পরও যদি আমাকে ডিসট্রাব করেন তাহলে এর ফলাফল আপনার জন্য মটেও ভালো হবে না৷”

মেঘ অসহায় চোখে ফারহার দিকে তাকিয়ে থেকে খুব আস্তে করে বলে উঠলো,” আমাকে কি একবার ক্ষমা করা যায় না ফারুপাখি?”

মেঘের কথা গুলো ফারহার কর্ণগোচর হতে ফারহা কঠিন দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,” না৷” ফারহা আর কথা বাড়ালো না দ্রুত পায়ে ক্যান্টিনে ঢুকে গেল৷ এদিকে নেহাল আয়মান তনু মেঘ ফারহার কথা বুঝতে না পেরে ফারহার পেছন পেছন ছুটতে লাগলো৷ এদিকে মেঘ মন খারাপ করে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে গেল৷

শাফায়াত চৌধুরী আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্য অফিস থেকে বেড়িয়ে গেল৷ কিন্তু মাঝ রাস্তায় হঠাৎ শাফায়াত চৌধুরীর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়৷ শাফায়াত চৌধুরী গাড়ি থেকে নেমে আকাশের দিকে তাকাতে দেখে কালো মেঘে আকাশ ছেঁয়ে গেছে৷ হয়তো এখনি হয়তো বৃষ্টি পড়বে৷ শাফায়াত চৌধুরী খানিকটা বিরক্ত হয়ে ড্রাইভারকে বলে উঠলো,” আর কতোক্ষণ লাগবে গাড়ি ঠিক হতে ?””

” বুঝতে পারছি না স্যার , আমার মনে হয় গাড়িটা গ্যারেজে নিয়ে যেতে হবে৷”

” তাহলে দাড়িয়ে না থেকে ট্যাক্সি ডাকো আর কতোক্ষণ এখানে দাড়িয়ে থাকবো?”

” জ্বি স্যার৷” ড্রাইভার ট্যাক্সি ডাকার জন্য এগিয়ে যাওয়ার পর পর একটা বড় গাড়ি এসে শাফায়াত চৌধুরীর সামনে দাড়ায়৷ শাফায়াত বেশ অবাক হয় এটা দেখে তখনি গাড়ি থেকে একজনকে নামতে দেখে শাফায়াতের মুখ যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল৷ ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সেই ব্যক্তিকে৷

” আরে দোস্ত তুই এত বছর পর, আমি কি সত্যি দেখছি তুই বাংলাদেশে এসেছিস আশরাফ?”

” হ্যাঁ দোস্ত যে ভুল গুলো আমি করেছি তা ঠিক করতেই আমি এসেছি৷ সন্তানের থেকে দুরে আর কত বছর থাকবো বল?”

” মামুনি এখনো ফেরে নি তোর কাছে তাই না?”

” না সোনা মা ফেরেনি৷ সে দিনের পর আর সোনা মা আমার কাছে ফিরেনি৷ ”

” দেখ দোস্ত চিন্তা করিস না৷ আগে যে ভুল গুলো আমরা করেছি মামুনির সাথে এবার আর সেটা করবো না৷ আমি তোর পাশে আছি দোস্ত৷”

কথা বলতে বলতে ঝরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে লাগলো৷ তা দেখে আশরাফ বলে উঠলো,” দোস্ত বৃষ্টি পড়ছে গাড়িতে উঠ আমি তোকে বাড়ি পৌছে দিচ্ছি৷ আর ড্রাইভার কর বল গাড়ি ঠিক করে নিয়ে আসতে৷”

শাফায়াত ড্রাইভারের সাথে কথা বলে আশরাফের গাড়ি উঠে পড়লো৷ বহু দিন পর দুই বন্ধু এক সাথে হয়ে নানা রকম গল্প জুড়ে দিলো৷

অন্যদিকে রাফিদ লাস্ট ক্লাস করে বের হয়ে দেখে বেলা ফোনে কারও সাথে কথা বলছে৷ রাফিদ বেলার সাথে কথা বলার জন্য বেলার কাছাকাছি গেলে শুনতে পায়৷

” নো সানিয়া আমি এখনি কানাডা ফিরতে পারবো না৷ আমাকে বাংলাদেশে থাকতে হবে৷ আর এক্সাম টাইমে আমি কানাডা গিয়ে এক্সাম দিবো৷ আর আমি ভালো করেই জানি আমি ‘ল’ নিয়ে পড়ছি৷”

ফোনের ওপাশ থেকে কি বললো রাফিদের জানা নেই তবে বেলা আবারও বলতে লাগলো,” দেখ সানিয়া আমি সবে মাত্র ফার্স্ট ইয়ারে আর এখানে থেকেও আমি স্টাডি করতে পারবো৷ তুই টেনশন করিস না৷ রাখছি পড়ে কথা হবে৷” সানিয়াকে বলার সুযোগ না দিয়ে বেলা কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে পেছনে ফিরতে থমকে যায়৷

“তু তুমি?”

রাফিদ এক দৃষ্টিতে বেলার দিকে তাকিয়ে ঝুম বৃষ্টির ভেতর বেড়িয়ে যায়৷ আর এদিকে বেলা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল৷ বেলার বুঝতে আর বাকি নেই যে রাফিদ তার সানিয়াকে বলা কথা গুলো শুনে নিয়েছে৷

ফারহা আনমনা হয়ে বৃষ্টির দেখছে৷ আর এদিকে নেহাল আয়মান তনু নানা রকম কথা বলে যাচ্ছে ফারহাকে কিন্তু সে দিকে ফারহার কোন ধ্যান নেই৷ ফারহা বৃষ্টি দেখতে দেখতে হঠাৎ পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে৷

অতিত…….

” এই ফারুপাখি এভাবে ছুটো না পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে৷”

” ইস বললেই হলো আমি পড়ে যাবো? তুমি যতক্ষণ আমাকে ধরতে পারছো ঠিক ততক্ষণ আমি ছুটবো৷” বলতে বলতে ফারহা পা পিচলে পড়ে গেল৷ ফারহাকে পড়তে দেখে ছুটে এলো আয়াশ৷

” ফারুপাখি বেশি ব্যাথা লেগেছে? কোথায় লেগেছে?” কথা গুলো বলতে বলতে আয়াশ ব্যস্ত দৃষ্টিতে ফারহার হাত পা দেখতে লাগলো কোথাও কেটে গেল কি না? ফারহা ভেবে পায় না এই আয়াশ নামক ব্যক্তিটা তাকে এত কেন ভালোবাসে? ফারহা কিছু না বলে আয়াশ কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,” আয়াশ কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না তাহলে আমি সত্যি মরে যাবো৷” আয়াশ রাগান্বিত কন্ঠে বলে ওঠে,” হাউ ডেয়ার ইউ ফারুপাখি? তোমার সাহস কি করে হয় এই ধরনের কথা বলার? তুমি জানো না আমার পৃথিবী তুমি হীনা আমি নিস্ব ৷ আমার যে এতিম তুমি জানো না? ফার্দার যদি তোমার মুখে মরার কথা শুনি তাহলে সত্যি সেদিন আমি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবো৷ সে দিনের কথা মনে পড়তে কেঁপে ওঠে ফারহা৷

ফারহাকে কেঁপে উঠতে দেখে তনু ফারহার হাত ধরে বলে,” কি হয়েছে ফারু এভাবে কেঁপে উঠলি কেন?”

ফারহা শান্ত দৃষ্টিতে নেহাল আয়মান আর তনুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,” তোদের আমি লাস্ট বার ওয়ার্ন করলাম আমাকে আর কখনো ফারুপাখি বলে ডাকবি না৷ যদি ডাকিস সেদিন তোদের সাথে আমার বন্ধুত্ব শেষ৷” কথা গুলো ঠান্ডা গলায় বললেও এর গভিরতা ব্যপক ছিলো যেটা আয়মান নেহাল তনুর বুঝতে বাকি নেই৷

ফারহা কারও কোন কথা শোনার অপেক্ষা না করে বৃষ্টির মধ্যেই এলোমেলো পায়ে হাটতে লাগলো৷ তনু আয়মান নেহাল ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে ফারহার পেছন পেছন হাটতে লাগলো নিঃশব্দে৷

ফারহা পুরোটা পথ পায়ে হেটে বাড়ি পর্যন্ত যেতে নেহাল আয়মান তনু নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্য চলে যায়৷ ফারহা ভেতরে ঢুকতে বাড়িওয়ালার নাতনি বৃষ্টিতে ভিজছিলো হঠাৎ ফারহাকে গেট পেরিয়ে ভেতরে আসতে দেখে ছুটে আসে ফারহার দিকে, ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া রিমঝিম দেখতে বেশ মিষ্টি৷ দৌড়ে এসে ফারহাকে জড়িয়ে ধরতে ফারহার ধ্যান ভাঙে৷

” এই যে মিষ্টি আপু তুমি আমার মত ভিজছো?”

ফারহা রিমঝিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,” আর ভিজতে হবে না রিমঝিম রুমে গিয়ে চেন্জ করো৷” ফারহার কথা শুনে রিমঝিম মন খারাপ করে চলে গেল৷ ফারহা দোতালায় উঠে আগে চেন্জ করে নিয়ে কাউকে ফোন করে বলে,,,,,,,
.
.
.
#চলবে……..
.
#চলবে……..
[ভুলত্রুটি সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here