চুপি চুপি ইচ্ছেরা পর্ব -১১ ও শেষ

চুপি চুপি ইচ্ছেরা
লেখনী – সাইমা ইসলাম প্রীতি
১১

টুকিটাকি মনোমালিন্য একসময় বিষাদ মিশিয়ে দেয় সম্পর্কে। আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে দুটো মনের মাঝে গড়ে তোলা বন্ধনটা। হয়তবা সম্পর্কটা তখন নাম পায় ‘প্রাক্তন’। কিন্তু আসলেই কি তা? মানুষ কি হতে পারে প্রাক্তন? সম্পর্ক প্রাক্তন হয়? সম্পর্ক তো অমূল্য দান ঈশ্বরের। সময়ের টানা পোড়ায়ই প্রিয় মুহূর্তগুলো হয় প্রাক্তন। সম্পর্ক আর সেই মানুষটা তো হৃদয়ে ধূলো জড়ানো টাংঙ্কে এঁটে যায়।

বিভা বসে বসে ভাবছিল কথা গুলো। কালকের পর থেকে না নিঝুম বিভার স্বামী। আর না বিভা নিঝুমের স্ত্রী। সহ্য করতে পারছিল না বিভা। ধ্যান ভাঙ্গে কলিংবেলে। ভেজা চোখ গুলো মুছে শাড়ির আঁচলে। গোল ফ্রেমের চশমা চোখে এটে চলে দরজার দিকে। দরজা খুলেই ঠোঁটে প্রসন্ন হাসি এঁকে বলে,

‘ তুমি? ‘

নিঝুম কিছু বলে না। কোলে থাকা বাচ্চাটা এগিয়ে দেয় বিভার কাছে। বিভা হুমরি খেয়ে পড়ে নিবৃতির উপর। গত তিনটা বছর কিভাবে নিজের মেয়েকে ছেড়ে থেকেছে বিভা জানেনা। উম্মাদের মতো ঝাপটে পড়ে চুমতে ভড়িয়ে দিল নিবৃতি মুখ।

নিবৃতি কেঁদে ওঠলো ভয়ে। মা নামক ব্যাক্তিটার সাথে সে অপরিচিত। চেনা না সে বিভাকে। মা বলে জানে না। নিঝুমই তার সব। ভয়ে নিঝুমের কাছে গিয়ে পা আকড়ে কান্না শুরু করল। নিঝুম কোলে নিয়ে এটা ওটা বলে কান্না থামালো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নিবৃতি স্বাভাবিক হয়ে গেল বিভার সাথে। মেয়েকে পেয়ে বিভাও আর বাকি সব ভূলে গেছে। নিঝুমের দিকে অপরাধী চোখে তাকিয়ে বললো,

‘ আজ রাতটা নিবৃতি থাকুক আমার কাছে? কাল সকালে না হয়…। ‘

আৎকে ওঠে নিঝুম বললো,
‘ না। যে মা মেয়েকে ছেড়ে আসতে পারে নিজের ক্ষোভের জন্য তার কাছে আমি নিজের মেয়েকে রেখে যেতে পারি না। ‘

‘ প্লিজ শুধু একটা রাত। ‘

‘ একটা সেকেন্ড ও না। আমার মেয়ে আমাকে ছেড়ে থাকতে পারে না। ‘

বিভার চোখে পানি টলমল করছে। নিঝুমের চোখ এড়ালো না তা। কষ্ট-যন্ত্রণাগুলো হাতুড়ি পেটাচ্ছে হৃৎপিন্ডে। বুকে পাথর বেঁধে নিঝুম বললো,
‘ নিবৃতি মা, এসে পরো। ‘

বিভা শক্ত করে ধরে রেখেছে নিবৃতির বাম হাত। ডান হাতে ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল গুলো দিয়ে হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নিবৃতি। ছোট্ট পা টিপেটিপে চলে এলো নিঝুমের কাছে। নিঝুম চলে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল,

‘ তোমাকে যখন বিয়ে করে ছিলাম, একটা নিশ্পাপ মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে গেছিলাম বাড়িতে। আর ওই বাড়ি থেকে বেড় হয়ে এলে একসাগর হিংসা আর ক্ষোভ নিয়। ভালোবেসেছিলাম আমার বিভাকে। হুম এটা ঠিক তিতির আমার প্রথম ভালোবাসা। শুধু প্রেমিকা নয় ও বন্ধু ছিল আমার। আত্মার বন্ধু। যে জায়গাটা ও নিজে করেছে। আর তোমাকে সে জায়গা দেওয়ার পরও তুমি তা ইগনোর করেছো। ছেড়ে এসছো আমায়। একা করে দিয়েছ। নিবৃতিকে মা হারা করেছো। কি পেয়েছো? আর পাবেও না। হিংসা দিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কিছু পায়নি।
তুমি স্ত্রী হয়ে আমায় ছেড়েছো। মায়ের মৃত্যুর পর একা পেলেছি আমি দু’মাসের বাচ্চাটাকে। নিবৃতি যখন কাঁদতো তোমার অভাবে কলিজা ছিড়ে যেত আমার। আমার এই শক্ত হাত দিয়ে যখন ওকে বুকের সাথে ঝাপটে ধরতাম চিৎকার করে কাঁদতো আমার কলিজার টুকরাটা। ব্যাথায়! নরম হাতের অভাবে। মায়ের অভাবে।দিতে পারিনি তাকে মা। মনে মনে জমেছে ঘৃণা, তোমার প্রতি।
জানো তখন তিতির সামলেছে ওকে। আদর দিয়েছে ভালোবাসা দিয়েছে। মায়ের স্নেহ দিয়েছে। মা বলতে ও এখন কেবল তিতিরকেই চিনে। ও তিতিরকে মামনি ডাকে। যে ডাকটা তিতির ওর ফুফু হয়ে অর্জন করেছে তুমি মা হয়ে পারনি। কাল কোর্টে যাবে। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিব। ভালো থেকো। ‘

বিভা কাঁদছে। মেয়ের জন্য কাঁদছে। নিঝুমের জন্য কাঁদছে। নিজের বোকামির জন্য কাঁদছে। সত্যিই ও অন্ধ হয়ে গেছিল তিতির প্রতি রাগে। অথচ ষশ্মিথ তো এটা করেনি! নিঝুম হাজার বার বলেছে ওকে ছাড়া বাঁচবে না তাও ছেড়ে এসছে নিঝুমকে। শায়লা মারা যাওয়া একমাস আগে হয়েছে নিবৃতি। রাগে ক্ষোভে ওর মত দুধের বাচ্চাটাকে ছেড়ে এসছে একমাসে। নিঝুমে উম্মাদের মতো কেঁদেছিল। শুনেনি। স্বামীর অসহায় মুহুর্তে পাশে থাকেনি। ডিভোর্স টাও দেয়নি। এখন হয়ত কষ্ট নিজে থেকেই দিচ্ছে।
না আর না। ও পারবে না আর। এই ডিভোর্স ও করবে না। মাফ চাইবে নিঝুম, নিবৃতির কাছে। তিতিরের কাছে। ওর সংসার আবার গুছিয়ে নিবে ও।

তিতির গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে নিজের ঘরে। পাশে ষশ্মিথ ঘুমাচ্ছে। তিতির আবেগী দৃষ্টিতে দেখছে ষশ্মিথকে। এত ঘুমায় কি করে মানুষ? বোরিং লাগে না।
তিতির ওঠে বসলো। ষশ্মিথের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাথা রাখলো ষশ্মিথের বুকে। হাত রাখলো বাম পাশের হৃৎপিন্ডের ঠিক উপরে। তিনটা বছর তো এই হৃৎপিন্ডই কথা বলেছে তিতিরের সাথে। ডুকরে কেঁদে ওঠে তিতির ষশ্মিথের বুকে মাথা লুকালো। ও ডাক্তার হয়েও পারল না নিজের মানুষটাকে ঠিক করতে।

সেদিন খাগড়াছড়ি যাওয়ার পর ক্যান্টনমেন্টে একটি ক্যাম্প ব্লাস্ট হয়। যেটাতে অনেকজন ডাক্তার ছিল। ষশ্মিথ বেঁচে গেলেও তিনবছর যাবৎ কোমায়। নিবৃতি তখন তিতিরকে সেই শোক কাটিয়ে ওঠার একমাত্র টনিক ছিল।

বিকাল গড়িয়ে এসছে। নিঝুম নিবৃতির বায়না রাখতে তিতিরদের বাড়ি নিয়ে এসছে ওকে। ইরিনাও বেশ আদর করে মেয়েটাকে। তিতির নিবৃতিকে নিয়ে ছাদে আসে। ছোট খাটো খুনসুটিতে মেতে ওঠে দুজন। তখনি বাড়ির কাজের মেয়ে দৌড়ে ছাদে আসে। উৎকন্ঠা বলে,

‘ আফা তাড়াতাড়ি নিচে চলেন। ষশ্মিথ ভাইয়ে জাগছে। ‘

ষশ্মিথের মাথা ঝিম ধরে আছে। বাম পাশটায় ব্যাথা প্রচন্ড। চোখ পিট পিট করে খুলতেই দেখল নিঝুম অধীর আগ্রহে ষশ্মিথের দিকে চেয়ে বসে আছে। ষশ্মিথ ওঠে বসলো। ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
‘ ভাই তুমি এখানে। ‘

নিঝুম হাসলো। এই হাসিতে অনেক পাওয়া মিশ্রিত। ষশ্মিথ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো নিঝুমকে। তারপর নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো,

‘ কয়দিনেই দেখি বয়স বারিয়ে ফেলছো। ব্যপার কি হে? ‘

নিঝুমের পেটে হালকা চাপর দিয়ে বললো ষশ্মিথ। নিঝুম প্রসন্ন হেসে বলে,
‘ কয়দিন না, ঠিক সাড়ে তিন বছর। ‘

ষশ্মিথ অবাক হয়। ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ দিতেই দেখে তিন বছর পরের সাল। মনে পড়ে যায় খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা। মৃত্যু ওর চোখের সামনে ছিল। কিন্তু বেঁচে গেল কিভাবে? তিতিরের জন্য? বুকটা সঙ্গে সঙ্গে ধক করে উঠে। তারত তিতির কই? কেমন আছে তাকে ছাড়া। তিতিরের খোঁজে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখ পরে দরজার কাছে। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে তিতির। একদম বদলায়নি দেখি মেয়েটা। যেমনটা ছিল তেমনি আছে। পাশের বাচ্চা মেয়েটা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছে ষশ্মিথের দিকে।
ষশ্মিথ নিবৃতির দিকে তাকাতেই নিঝুম বলে,

‘ ও নিবৃতি। আমার কলিজার টুকরা। ‘

ষশ্মিথ মুচকি হাসে। নিঝুম আবার বলতে থাকে,
‘ আচ্ছা আমি যাই এখন হে? বাসায় অনেক কাজ আছে। ‘

‘ বিভা কই? ‘

নিঝুম দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
‘ কাল বলব সব।নআজ আসি। ‘

নিঝুম আর দাড়ালো না। নিবৃতিকে নিয়ে বের হয়ে গেল। শৈলী এতবছর পর ছেলেকে সুস্থ দেখে পাগলের মতো কাঁদছেন। ইলমিও কাঁদছে। ষাহবাবের চোখেও পানি। শৈলী ছেলেকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ বাবা আমি আর তোমাদের কাওরে কোথাও যেতে দিবনা। আমার চার ছেলে মেয়ে আমার কাছে থাকবে। ‘

ষশ্মিথ মৃদু হাসলো মায়ের পাগলামিতে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
‘ মা ওটা আমার কর্তব্য ছিল। দেশের জন্য জীবন দিতে পারাও যে অনেক সুখের মা।”

‘ আর আমাদের প্রতি কর্তব্য নাই। ‘

‘ আছে তো, আছে। তবে আমার মা তো খুব স্ট্রং। যার স্বামী, সন্তান উভয়েই দেশের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এমন সাহসী মা ক’জনের আছে? ‘

‘ থাক! এতটি বছর কষ্ট দিয়ে এখন আর মন ভুলানোর চেষ্টা করতে হবে না। ‘

সবার সাথে কথা বলার পর সবাই ষশ্মিথকে রেষ্ট নিতে বলে চলে গেল। তিতির তখনো একই ভাবে দরজায় দাড়িয়ে। ষশ্মিথ তিতিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তিতির কাঁদছে। মায়াকন্যা লাগছে ওর তিতিরকে। ষশ্মিথ পাঁচ মিনিট তাকিয়ে রইল তিতিরের দিকে। ওর নড়ার কোন নামই নাই। নাকের পাটা ফুঁলিয়ে কেঁদে চলেছে। ষশ্মিথ অনেক আদর কন্ঠে মিশিয়ে বলে,

‘ আমার বুকে এসে ঝাপিয়ে পড়বে এমন মানুষটাও দেখি নাই! ‘

তিতিরের হাব-ভাবের কোনো পরিবর্তনই দেখল না ষশ্মিথ। ষশ্মিথ নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো,
‘ আশে-পাশে কেউ আছো? যে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখতে চাও। ‘

তিতির তাও একি ভাবে দাঁড়িয়ে কেঁদে চলেছে।

‘ আমার বোধ হয় জাগাটাই ঠিক হয় নাই। ‘

তিতির এবার চোখ তুলে তাকালো ষশ্মিথের দিকে। আর নিজেকে ঠিক রাখতো পারলো না। দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে ষশ্মিথের বুকে। আকস্মাৎ তিতিরের হামলা সামলাতে না পেরে পেছনের দিকে হেলিয়ে পড়লো ষশ্মিথ।

ষশ্মিথের বুকে নাক ঘষেঁ চিৎকার করে কাঁদছে তিতির। ষশ্মিথ ওর উন্মুক্ত চুলের ভেতর হাত গুঁজে তিতিরকে চেপে ধরলো নিজের সাথে। চিবুক ঠেকালো তিতিরের মাথায়। প্রাণ খুলে কাঁদতে দিল তিতিরকে। বেশ কিছুক্ষণ ফোঁপিয়ে ফোঁপিয়ে কাঁদার পর ঠান্ডা হলো তিতির। ষশ্মিথের পিঠ খামচে ধরে আছে। জড়িয়ে ধরেই মাথা তুলে তিতির। ষশ্মিথ দুই হাত দিয়ে তিতিরের মুখের সামন থেকে সব চুল সরিয়ে গাল চেপে ধরলো। তিতির তাকিয়ে আছে ষশ্মিথের চোখে।

তিতির ষশ্মিথের চোখে চোখ রাখতে পারেনা। লজ্জায় হাবু-ডাবু খায়। তবে আজ দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। চোখ নামাতে ইচ্ছে করছে না ষশ্মিথের চোখ থেকে। এক অদৃশ্য বন্ধনে বাধা পড়েছে।

ষশ্মিথ তিরিরের চোখে চোখ রেখে নিচু স্বরে বলে,
‘ এভাবে তাকিয়ো না। মারা পড়বে ষশ্মিথের বানে। ‘

তিতির লজ্জা পেয়ে নতজানু করে। ইশঃ কি করম বেহায়ার মতো চেয়ে ছিল ও। সত্যিই মানুষ প্রেমে পড়লে বেহায়া হয়। নির্লজ্জ হয়, হয় ভয়ংকর। মারা পরে প্রেমের তীরে। যেমনটা তিতির পড়েছে, ষশ্মিথ পড়েছে, নিঝুম পড়েছে। পড়েছে বিভাও।

ষশ্মিথ মুগ্ধ হয় তিতিরের লজ্জায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
‘ জানো তো তিতিরপাখি মেয়েরা যখন লজ্জা পায়, ছেলেদের তখন একটু চরিত্রহীন হতে হয়। ‘

তিতির হিতাহিতজ্ঞানশূণ্য হয়ে তাকায় ষশ্মিথের দিকে। ষশ্মিথ তিতিরকে আর কিছু ভাবার সময় না দিয়ে ঠোঁট ঢুবায় তিতিরের ঠোঁটের ভাঁজে। তিতিরের ঠোঁটের গভীর থেকে গভীরে। চারপাশ স্তব্দ হয়ে আসে তিতিরের কাছে।

বিভা খাটের কোনো বসে কাঁদছে। তিতির বসে আছে পাশে। ষশ্মিথ পানির গ্লাস এগিয়ে দিলে পানি খেল বিভা। নিঝুম মাত্র এসেছে পৌঁছেছে ষশ্মিথের বাসায়। এসে বিভাকে এখানে দেখে সচকিত হয় নিঝুম।
ক্ষীণস্বরে ষশ্মিথকে বলে,

‘ তুমি যদি এই ব্যাপারটা সল্ট আউট করার জন্য আমাকে ডেকে থাকো, তাহলে বলছি আমার বিভার সাথে থাকা আর সম্ভব না। ‘

ষশ্মিথ নিঝুমে কথা শুনে ওকে ঠান্ডা হয়ে বসতে বলে।

‘ ভাই, দেখো এখন বিভাও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। মাফ চেয়েছে তোমার কাছে। ‘

‘ মাফ করা সম্ভব হলে করতাম। ‘

‘ তুমি ভালোবাসো বিভাকে। তাহলে অবশ্যই সম্ভব। ‘

‘ হয়ত। কিন্তু এত দ্রুত পারবো না। ‘

ষশ্মিথ বড় একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ হুম, যত লাগে সময় নাও। তবে নিবৃতির প্রয়োজন বিভাকে। ‘

‘ তিতির তো আছে। ‘

ষশ্মিথ চোখ বুজে আবার বলে,
‘ তিতির নিবৃতিকে মেয়ের মতো ভালোবাসলেও সারাক্ষণ পাশে থাকছে না ওর। তিতির ওর মা নয়। নিবৃতির মা দরকার। আর তাছাড়া বিভার ও চায় নিবৃতিকে, তোমাকে। ‘

নিঝুম তাচ্ছিল্য হাসলো। কন্ঠে অভিমাণ জড়িয়ে বললো,
‘ যদি চাইতো আমার কপালে মিথ্যার অপবাদ চাপিয়ে ছেড়ে যেত না। নিবৃতিকে কিভাবে ছেড়ে যেতে পারলো যদি ওর মাঝে মাতৃত্ব থাকতো? এখন ওর হঠাৎ মাতৃত্ব জেগে ওঠেছে? ‘

ষশ্মিথ এবার ভাষা খুঁছে পেলনা। নিঝুমের কথার উত্তর দেয়ার মতো শব্দ ওর শব্দভান্ডারে নেই। তাও বললো,
‘ ভাই,বিভার হয়ে আমি মাফ চাইছি। ও ছোট বুঝতে পারেনি। এখনত ওর ভুল স্বীকার করছে। ‘

দুই মাস পর…

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে নিঝুম। বিভা পা টিপেটিপে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাথা রাখলো নিঝুমের পিঠে। নিঝুম বললো,
‘ নিবৃতি কই? ‘

‘ ঘুমিয়েছে। ‘

নিঝুম কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
‘ তুমি কেন এলে এখানে? ‘

‘ চলে যাব? ‘

‘ হুম। ‘

‘ উহুম। ‘

‘ যাও। ‘

‘ আচ্ছা। ‘

বিভা নিঝুমকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিঝুম টেনে এনে রেলিং এর সাথে চেঁপে ধরে বিভাকে। বিভা হচকিত। নিঝুম নেশাতুর কন্ঠে বলে,

‘ একবার ছেড়ে গিয়ে খুব জ্বালিয়েছ। আর যাওয়ার কথা মুখা নিলেও পা ভেঙ্গে দিব। ‘

বিভা লজ্জা পায়। একই সঙ্গে খুশিও হয়। নিঝুমের বুকে মাথা ঠেঁকিয়ে বলে,
‘ আর কখনো যাব না আমার মানুষটাকে ছেড়ে। সব কথা শুনব তোমার। খুব ভালোবাসবো, সব সময়। ‘

‘ তাই বুঝি! তাহলে তো আরেকটা ছোট্ট বিভা চাওয়া যেতেই পারে। ‘
নিঝুম মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয়। বিভা নিঝুমের বুকে মুখ লুকায়।

“শুভ্র বসন্তে চেয়ে ছিলাম তোমায়। তুমি বলেছিলে,
ধরা দেবে রক্তিম রোদমাখা বিকেলে।
ফুরলো বসন্ত,কাটলো শীত
এলো আরেক বসন্ত,
নেই তুমি।
একলা কুঁড়ে ঘরে খুঁজেছি তোমার ছায়া।
হাতের মুঠোয় বড় কষ্টে জমা করেছি একগুচ্ছ শিউলী।
তুমি ছিলে এক ছলনাময়ী নারী,
আমি খুঁজেছি তোমার সেই ছলনা সহস্র বর্ষ,
এক মুঠো দহনে মেরেছ আমায়, মেরেছ তুমি।
ভালোবেসে মেরেছ,না বেসে মেরেছ।
শুভ্র বসন্ত চেয়েছিলাম তোমায়। ”

ছাদে পাতা ছোট্ট মাচাং এর মতো খাটে বসে আছে তিতির-ষশ্মিথ। আঙ্গুলে আঙ্গূলে মাখামাখা করছে দু’জনা। তিতির মুচকি হেসে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
‘ ইশঃ! দিনে দিনে ডাক্তারি ছেড়ে কি কবি হতে চাইছো নাকি? ‘

‘ তোমার চোখ তাকালে তো মাঝে মাঝে হতে ইচ্ছে করে। যদিও কিছুই পারিনা। ‘

‘ উমম, বুঝলাম। ‘

‘ কি? ‘

‘ কিছু না। ‘

‘ ও আচ্ছা! ‘

‘ জ্বি। ‘

‘ তোমার জন্য একটা জিনিস আছে। ‘

তিতির খুশিতে লাফিয়ে ষশ্মির বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
‘ কি? ‘

‘ হাত বাড়াও। ‘
তিতির হাত বাড়াতেই ষশ্মিথের তিতিরের হাতে অনেক গুলো শুকনো বকুল ফুল দিলো। তিতির হেসে বললো,
‘ ওফ! কি সুন্দর ঘ্রাণ। ‘

‘ হুম। ‘

‘ ভালোবাসি। ‘

ষশ্মিথ তিতিরের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপর একে একে চোখ, নাক, কান, ঠোঁট গলা সব জায়গায় স্পর্শ করায় ঠোঁট। তিতিরকে ছেড়ে চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তিতিরও ডুবে যায় ষশ্মিথের ভয়ংকর চাহনীতে। সহস্র প্রেম মিশ্রিত কন্ঠে ষশ্মিথ বলে,

‘ আর আমি মৃত্যুর পর অবদি ভালোবাসতে চাই। তোমার প্রেমের বৃষ্টি চাই। তোমার লজ্জার কারণ হতে চাই। তিতির নামক মোহ চাই। এক সমুদ্র নেশা চাই। মাতালতা চাই। তোমার শরীরের ঘ্রাণ চাই। রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার বিচলন চাই। ভালোবাসি তিতির। নিজের অস্তিত্ব থেকে বেশি ভালোবাসি। ‘

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here