চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব -৩১+৩২

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩১
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

স্পর্শ রান্না করতে গিয়েছে আধাঘন্টা চলে গেছে। বারবার করে বলেছে আমি যেন রুম থেকে বের না হয়। তার বারণ এর জন্য আমি যেতে পারছিনা। কি করছে কে জানে? আমি নিজেই তো পারিনা রান্না করতে। তিনি ছেলে হয়ে এসব করতে গেলেন। কোন ঘটন না ঘটিয়ে ফেলে। আল্লাহ। আমি চিন্তায় বসে থাকতে পারলাম না পায়চারী করতে লাগলাম।
ঠিক এক ঘণ্টা পর স্পর্শ বাটি হাতে রুমে এলো। ঘেমে নিয়ে একদম একাকার অবস্থা স্পর্শের। আমি এগিয়ে এসে দাঁড়ালাম। বাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে খিচুড়ি দেখতে পেলাম ভুনা খিচুড়ি।
ভুনা খিচুড়ি আমার ফেভারিট। তাও আবার গরুর মাংস দিয়ে। আর সেটাই রান্না করেছে স্পর্শ। দেখতে তো খুব সুন্দর লাগছে এত সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি। স্পর্শ ক্লান্ত গলায় বলল,

‘তাড়াতাড়ি বসে পরো।টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে! সরি দেরি হয়ে গেল রান্না করতে।’

আমি ওরনার কোণা দিয়ে স্পর্শে মুখ মুছে দিলাম। স্পর্শ নিজের থেকে আমাকে সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘ ছিহ ছিহ আমার গায়ের উপর আসছো কেনো? দেখো না আমি ভিজে গেছি। তুমি খাও আমি গোসল করে আসি। ‘

বলেই চলে যেতে চাইলো আমি স্পর্শ কে টেনে ধরে জড়িয়ে ধরলাম।

‘আরে করছো টা কি ? এই মেয়েকে ছাড়তে বললে মেয়ে দেখে আরো জাপ্টে ধরে।’

‘হ্যাঁ ধরবইতো‌। একশ বার ধরবো! হাজার বার ধরে থাকবে আপনার কি?’

‘ আমার আবার কি আমার তো ভালোই? আমিও ধরব।’

বলেই স্পর্শ আমাকে দু’হাতে টাইট করে ধরলো। আমার মনে হয় হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে গেল আমি ছটফট করে তাড়াতাড়ি স্পর্শ থেকে সরে আসলাম।

‘এমন দানবের মত কেউ ধরে মনে হয়েছিল আমার হাড্ডি মাংস সব ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে।’

‘আমার কাজ সফল! আমাকে তো ছেড়ে দিয়েছো। নিজে তো ধরতেই পারো না। শরীরে তো শক্তি নাই কিছুই খালি আছে হাড্ডি।’

‘ একদম আমাকে হাড্ডি বলে অপমান করবেন না। এখন আমি ঝগড়া করার মুডে নেই। আমার খিদে পেয়েছে আমি খাব তাড়াতাড়ি বসেন!’

‘আমি এখন খাব না। এটা শুধু তোমার জন্য তুমি খাও। আমি এখন গোসল করব শরীর দিয়ে দুর্গন্ধ ছুটে গেছে। আর তুমি আমাকে জাপ্টে ধরে আছো? বুঝিনা তোমার কি গন্ধ লাগছে না?’

‘না তো কোথায় গন্ধ? আমিতো সুগন্ধ পাচ্ছি। পারফিউম এর থেকেও এই ঘ্রাণটা সুন্দর।’

‘ এতো প্রেম কি রান্না করে খাওয়ানোর জন্য? এত রোমান্টিক হলে তো আমি প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে সব কাজ ফেলে বউয়ের সেফ হয়ে যাব।’

‘ ওকে হয়ে যান। আপনি আমার বিনা পয়সার সেফ।’

‘ পয়সা লাগবে না ব‌উয়ের আদর, ভালোবাসা পেলেই হবে।’ স্পর্শ একদম আর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল। আমি ধাক্কা দিয়ে বললাম

‘ আপনার শরীর দিয়ে গন্ধ বের হচ্ছে। যান গোসল করে আসেন। আমার খিদে পেয়েছে খুব।’

স্পর্শ মুখ কালো করে বলল, ‘এই না বলে পারফিউম এর থেকেও সুগন্ধ বের হচ্ছে । এখন আবার গন্ধ হলো কিভাবে?’

‘জানিনা!’

স্পর্শ চলে গেল আমাকে খেয়ে নিতে বলে। আমি খেলাম না। গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। খিচুড়ি দিকে তাকিয়ে আছি। আর অপেক্ষা করছি স্পর্শ কখন গোসল করে বের হবে। স্পর্শ বের হলো আজ তাড়াতাড়ি ।সব সময় তার গোসল করতে লাগে লম্বা সময়।

বেরিয়ে এসে আমাকে না খেয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল,

‘ খাও নি কেন? খাবার কি খুব খারাপ হয়েছে?’

আমি বললাম, ‘ খাইই নাই তো জানবো কি করে ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে?’

‘ খাওনি কেন?’

‘ আপনার জন্য। একা খেতে ভালো লাগছে না। আসেন না একসাথে খাই!’

‘ আমি খাব না।’

‘ কেন?

‘ তুমি খাবে আর আমি দেখবো তাই।’

‘ আজব কথা বার্তা।’

আমি স্পর্শকে টেনে বসিয়ে দিলাম। আর নিজ হাতে খেতে লাগলাম। খুব একটা ভালো না হলেও খারাপ হয়নি। খাওয়া যাবে। আমি স্পর্শের মুখে জোর করে খাবার ঢুকিয়ে দিলাম। স্পর্শ আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ কেমন হয়েছে? খাওয়া যাচ্ছে কি? ফার্স্ট কিন্তু রান্না করেছি!’

আমি উত্তর দিইনি একেবারে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছি।

‘এবার খেয়ে দেখুন কেমন হয়েছে নিজে টেস্ট করুন।’

‘ভালো হয়নি। তোমার খেতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে
মুখের উপর কিছু বলতে পারছনা।খেতে হবে না রেখে দাও।’

‘পাগল নাকি আমি তো পুরো এই টা একাই খাব। আপনার জন্য আমি ফ্রিজ থেকে গরম করে এনে দেবো তার পরে খেয়েন। এটা খুব ভালো হয়েছে। আর একটা কথা আমি এত এত রান্না দেখেছি। করার চেষ্টা করছি। তবু আপনার মত করে রান্না করতে পারিনা। আর আপনি একবারও রান্না দেখেননি রান্না ঘরে জীবনে ঢুকেননি। ফাস্ট গিয়েই এত ভাল রান্না করছেন। আপনি সত্যিই খুব ট্যালেন্টেড।’

‘তো তুমি কি মনে করছো তোমার কপাল ভালো। এমন স্মার্ট হ্যাণ্ডসাম বর পেয়ে।’

‘জ্বী না আপনি লাকি। বিকজ আমার মত একটা মিষ্টি বউ পেয়েছেন।’

‘তুমি মিষ্টি?’

‘অফকোর্স!’

‘ মিষ্টি না তিতা সেটা তো খেয়ে টেস্ট করতে হবে।’

‘ অসভ্য ফাজিল লোক।’

বলেই স্পর্শের কিল ঘুষি মেরে দিলাম। স্পর্শ হাসতে হাসতে শুয়ে পড়লাম আমি বাটি নিয়ে নিচে চলে এলাম। স্পর্শের জন্য খাবার গরম করে নিয়ে আসলাম।

‘উঠোন আর খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন সোয়ামি।’

‘স্বামী যদি এতই সেবা-যত্ন করার ইচ্ছা থাকে। তাহলে সেবাদার গিন্নির মত খাইয়ে দাও ।’

‘বসতে দিলে শুতে চায় প্রবাদ বাক্যে আছে না ব্যাপারটা তেমন হয়ে গেল না। কষ্ট করে গরম করে আনলাম কোথায় নিজে খাবেন তা না এখন খাইয়ে দিতে হবে।’

‘একটু আগে আমিও কিন্তু হাত পুড়িয়ে কারো জন্য রান্না করে এনেছিলাম।’

কথাটা বলেই স্পর্শ জিভে কামড় দিল। আমি খাবারে রেখে ছুটে গিয়ে স্পর্শের দুই হাত চেক করতে লাগলাম। সত্যিই ডান হাতের দুটা আঙ্গুল পুড়ে গেছে। লাল টকটকে হয়ে আছে ইস আমি ছলছল চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি খুব খারাপ।’

‘ জানি।’

‘ অনেক খারাপ। এতটা কষ্ট পেয়েছেন আর আমাকে জানালেন না। কি সুন্দর মজা করছেন আমার সাথে! এত খারাপ কেন আপনি? এজন্যই বলেছিলাম আপনাকে রান্না করে খাওয়াতে হবেনা। আমি তো এগুলোই খেতাম আপনাকে কেন কষ্ট করে রান্না করতে হবে‌। খুব ব্যথা করছে তাই না।’

‘ উহু একটু ও না ব্যথা তো করছে বুকে।

বুকের মধ্যে হাত দিয়ে বলল,’এখানে যে তুমি আমাকে বুঝো না খালি ভুল বুঝ। যেটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। যন্ত্রণা দেয়।’

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দেন। আর আমি রাগ করবো না কখনোই না। সন্দেহ ও করব না। এই কানে ধরছি।’

আমার ইনোসেন্ট ফেস দেখে স্পর্শ হেসে দিল।

‘এই ফেসটা কিন্তু খুবই কিউট।’

‘ধ্যাত।’

স্পর্শের হাতে আমি মলম লাগিয়ে দিলাম। তারপর খাইয়ে দিলাম। স্পর্শ খাচ্ছে আর আমার হাতে কামড়ে দিচ্ছে।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘ এটা কি হাত পোড়ার শাস্তি নাকি?

‘ জি না এটা আমার ভালোবাসার। তোমাকে কেন শাস্তি হতে যাবে কেন?’

‘দিতেও পারেন হাত পুড়িয়ে রান্না করেছেন।এখন কামড়িয়ে আমার হাত ক্ষত করতে চাইছেন। কিন্তু এখন আর পারবেন না আমি কথার তালে আপনার খাওয়া শেষ করে ফেলেছি।’

বলে আমি প্লেট রেখে হাত ধুয়ে আসলাম। আমি বিছানার কাছে আসতে স্পর্শ আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে এক টানে নিজের উপর ফেলে দিল‌ আমি তাল সামলাতে না পেরে একদমই স্পর্শর বুকের উপর আছড়ে পড়লাম।

‘ওরে আম্মু আমার কপালটা ফেটে গেল গো। এমন করে কেউ টান মারে।’

আমি রাগান্বিত চোখে স্পর্শে দিকে তাকালাম।
#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩২
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

হানিমুন সবাই যায় বিয়ের এক সপ্তাহে? আমরা যাচ্ছি দুমাস পর। সাথে আছে আরেকটা কাপেল। বেস্টু মিষ্টির বিয়েটা ফাইনালি হয়েই গেল ওর বিয়ের আজকে চারদিন তো ওকে আমরা হানিমুনে টিকিট গিফট করেছি। সাথে আমি আর স্পর্শ যাব। আমাদের তো আর যাওয়া হলো না আমার লেট লতিফ যাব আর এই প্ল্যান টা করেছি আমি। যেই শুনেছি মিষ্টির বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেই ভেবে নিয়েছি যে ওদের এই হানিমুনের ট্রিপ গিফট করবো আর দুই বান্ধবী একসাথে হানিমুনে যাবো। অনেক আগেই আমরা পাঁচ বান্ধবীর সাথে গল্প করতাম। আমরা সবাই একসাথে হানিমুনে যাব। কিন্তু দুঃখের কপাল হলো না। তাই আমরা দুজনই যাবো। ইনশাল্লাহ একদিন সবার জোড়া হয়ে গেলে আবার যাব।
তো আজকে আমরা রওনা হয়ে গেছি দুই জোড়া কাপেল। উদ্দেশ্যে এখন কক্সবাজারে। আমার মনে আছে ছোটবেলায় একবার কক্সবাজারে গিয়েছিলাম আমি আব্বু আম্মু আপু আমি। সেটা ছিল আব্বুর অফিসের ট্যুর। তো তখনি আমার কক্সবাজারে এসে এতো ভালো লেগেছিল যে আমি নিয়ত করে নিয়েছিলাম বিয়ের পর প্রথম হানিমুন আমি কক্সবাজারেই আসবো।

আমি আর মিষ্টি গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছি। আর সামনে বসেছে স্পর্শ আর মিষ্টির হাজবেন্ড দিগন্ত ভাইয়া। স্পর্শ তো গাল ফুলিয়ে একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। কারণ তার ইচ্ছে ছিল আমি আর স্পর্শ একসাথে বসবো। দিগন্ত ভাইয়া ও মিষ্টি দিকে তাকাচ্ছে অসহায় মুখে। তাদের মনের আশা অপূর্ণ করে আমি আর মিষ্টি পেছনে বসে সারা রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছি।

স্পর্শ ড্রাইভ করছে হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। নিরিবিলি শোনশান একটা জায়গা স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে এলো। আমি আর মিষ্টি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। স্পর্শ আমার সাইটে এসে বলল,

‘ তারাতারি গাড়ি থেকে নামো।’

আমি চরম উত্তেজনা নিয়ে বললাম, ‘ মানে কি? এখনি নামবো কেন? এতে তোমার অনেক দেরি।’

‘ দরকার আছে নামো।’

‘ নো। আপনি আমাকে সামনে নেওয়ার জন্য এমন করছেন তাই না। আমি সামনে যাবনা। আমি আর মিষ্টি একসাথে যাব।’

স্পর্শ আমার কথা শুনে মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে জোর করে টেনে আমাকে গাড়ি থেকে নামাল।ওদিক দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি কে নামিয়েছি! গাড়ি থেকে নেমে বললাম,

‘ কি হচ্ছে এসব দুজনের মাথায় ভূত চাপলো নাকি?’

মিষ্টি দিগন্ত কে বলল, ‘ এই আপনার সমস্যা কি? আপনি আমাকে এইভাবে টেনে গাড়ি থেকে না নামালেন কেন?’

আমি ওদের স্পর্শকে বললাম, ‘ সমস্যা কি কি হয়েছে আপনাদের? এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে কি করতে চাইছেন শুনি? ‘

কোমরে হাত দিয়ে বললাম। স্পর্শ আমার কাঁধে হাত রেখে নিজের সাথে চিপকে নিয়ে হাঁটতে লাগল।

আর বলল,’ কি সুন্দর রোমান্টিক একটা রাস্তা তাই না! আমাদের জন্য; আসো আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটু প্রেম করি।’

আমি বললাম, ‘ আপনার মাথাটা গেছে। চলুন তো তাড়াতাড়ি আমাদের পৌঁছাতে হবে। এখন এই রাস্তায় হেঁটে টাইম নষ্ট করতে পারবো না।’

‘ কি সুন্দর জায়গাটা প্রেম করার জন্য পারফেক্ট। আসো এখানে হানিমুন সেরে ফেলি। ওই পানি দেখার জন্য কক্সবাজার যাওয়ার লাগবেনা।’

কথাটা শুনতেই আমি ধাক্কা মেরে স্পর্শকে নিজে থেকে ছাড়িয়ে একহাত কোমরে দিয়ে বললাম,

‘আপনি তো মহা কিপটা! টাকার জন্য বউকে নিয়ে এই আদ পছা জায়গা পছন্দ করে রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল আনার চেষ্টা করছেন। আমি এত বোকা না ওকে।’

‘তুমি তো বোকাই তুমি হচ্ছে মহা বোকা। না হলে কি আর দুজন নতুন হাসবেন্ড ওয়াইফ কে এভাবে আলাদা করে বসায়? আমরা না হয় পুরাতন হয়ে গেছি। কত প্রেম করেছি। আর ওরা কেবল কালকে বিয়ে শেষ করলো। আর আজকে তুমি ওদের আলাদা করে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে বসে আছো।’

আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘কি বললেন আমি কাবাব মে হাড্ডি? আমি কার বারা ভাতে ধান দিয়েছি শুনি?’

স্পর্শ বলল, ‘ এখন তুমি আমার সাথে সামনে বসবে আর মিষ্টিকে দিগন্ত সাথে পিছনে ছেড়ে দিবে। দিগন্তের মুখটা দেখেছো আর মিষ্টি মুখটা দেখেছো? তোমার জন্য বেচারী কিছুই বলতে পারিনি লজ্জায়।
নিজেতো রোমান্টিকতার কিছুই বোঝনা খালি আছো সবাইকে ডিস্টার্ব করতে।’

আমি স্পর্শ কে কঠিন কয়টা কথা বলতে যাব তার আগেই স্পর্শ আমাকে টেনে দেখালো মিষ্টি আর দিগন্ত ভাইয়া খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কি যেন বলছে। স্পর্শ খুব সাবধানে তাদের কাছাকাছি নিয়ে এলো আমাকে। ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম ওরা দুজন একসাথে বসতে চায়। শুধু আমার জন্যই দুই বেচারা বেচারী এতক্ষণ মুখে কুলুপ এঁটে ছিল। ওদের কথা শুনে আমার ভীষণ লজ্জা লাগলো। আমি লজ্জা পেয়ে সবার আগেই সামনের সিটে বসে পড়লাম। স্পর্শ ড্রাইভিং সিটে বসে মিষ্টি করে হাসলো।

দিগন্ত ভাইয়া আর মিষ্টি এসে দেখল আমি আর স্পর্শ সামনে বসে আছি। তা দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করল মিষ্টি,

‘ ওই তুই সামনে বসেছিস কেন? পেছনে আয় আমার সাথে বসবি না?’

আমি বললাম, ‘ না আমি আমার জামাই ছাড়া বসবো না। এতক্ষণ তো এমনি বসেছিলাম। তুই ভাইয়ার সাথে বস। খালি আমাকে ডাকিস কেন?’

আমার কথা শুনে মিষ্টি থমকাতে থমকাতে পেছনে গিয়ে বসলো। দিগন্ত ভাইয়া তো খুশিতে বাকবাকুম। আর আমি সামনে বসে রইলাম গাল ফুলিয়ে। স্পর্শ যেহেতু এতই বোঝে আমাকে আগে কেন বলল না?

স্পর্শ একটু পরপর আমাকে বউ বউ করে ডাকছে আমি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছি। একটু একটু করে পেছনে তাকালে দেখতে পারি দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি হাতে হাত রেখে খুব চিপকে বসে গল্প করছে। আর মিষ্টি একটু পরপর লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিচ্ছে।

সেই মুহূর্তেই আমার মনে হলো আমার কোলের উপর থেকে আমার হাতটা কেউ টেনে নিচ্ছে। স্পর্শ ছাড়া এই কাজ আর কে করতে পারে? তিনি আমার হাত টেনে ডাইভিং এর মাঝেই দুই তিনটা চুমু খেলো হাতের পিঠে। আমি চোখ রাঙিয়ে হাত টেনে নিয়ে নিলাম আর বললাম,

‘নির্লজ্জ।’

স্পর্শ অবাক গলায় বলল, ‘এখানে নির্লজ্জ এর কি করলাম আমি? আমার বউ তাকে আমি স্পর্শ করেছি। এখানে কার বাপের কি? এতে লজ্জাই বা কেন পাবো আজব?’

‘ দেখতে পাচ্ছেন না পেছনে মিষ্টি আর দিগন্ত ভাই আছে তাদের সামনে। আপনি আমাকে এইভাবে চুমু খেলেন কেন? ছিহ।’

‘ওদের তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নাই আমরা কি করছি সেসব দেখতে আসবে। একবার ওদের দিকে তাকিয়ে দেখো ওরা তো আমাদের থেকেও বেশী নির্লজ্জ্বের কাজ করছে।’

আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম স্পর্শের দিকে। মন চাচ্ছে এই চোখ দিয়ে আগুনের গুলি বের করে ওনাকে ভষ্স করে দেই‌।

কিন্তু আমি পেছনে তাকালাম তাও। পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেলাম মিষ্টি দিগন্ত ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে । আর দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

স্পর্শ চোখের ইশারায় বলল, ‘ কি ব্যাপার ম্যাডাম এবার কিছু বলেন।’

‘ আপনি চুপ থাকুন তো।’

আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ট্রাই করলাম। তারপর কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।
যখন চোখ খুলি নিজেকে পেছনের সিটে স্পর্শের বাহুতে পাই। সামনে মিষ্টি আর দিগন্ত ভাইয়া ড্রাইভ করছে।

আমি ঘুমঘুম চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম,

আমরা এখানে কেন?’

স্পর্শ বলল, ‘ ব‌উকে আরামশে ঘুম পাড়াতে আসছি।’

‘ মানে!’

‘ কিছু না। ওই দেখো চলে আসছি।’

‘ আপনি বুঝিয়ে বলুন।’

‘ পাগলি নামো।’

#চলবে…
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here