চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব -২৯+৩০

#চড়ুইপাখির_অভিমান
#পর্ব_২৯
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

পাকা গিন্নির মত সংসারের কাজে লেগে পরেছি। পড়েছি বলতে আজকেই পড়লাম। শাশুড়িকে বলে কয়ে আজ রান্নাঘরের দায়িত্ব নিয়েছি। এই কতদিন শুধু তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে রান্না দেখেছি আর শিখেছি জানিনা কতটুকু আয়ত্ত করতে পেরেছি। কিন্তু আজকে খুব উৎসাহের সাথে রান্নাঘরে একা দাঁড়িয়ে আছি সবাইকে বলেছি। আজকে আমি রান্না করে খাওয়াবো। সবাই কে রান্না ঘরে থেকে বিদায় করে আমি একা রান্নাঘরে রাজত্ব করছি। পেঁয়াজ বের করে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি কুচি করে কাটছি। পেঁয়াজের ধকে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। নাক টানছি আর কাটছি তখন দেখলাম রান্নাঘরের দরজা দিয়ে কে যেন উঁকি মারছে। আমি ঝাপসা চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি কে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে?

দরজার কাছের লোকটা আমি তাকাতেই দৌড়ে এলো আমার কাছে আর ব্যস্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

‘ কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?’

আমি কন্ঠ শুনেই স্পর্শের চিনে গেছি।

‘ আমি কাঁদবো কেনো? আমিতো পেঁয়াজ কাটছি।’

স্পর্শ বলল,’ তুমি তো কাঁদছো! এই যে চোখের জল! তাকাতেও পারছ না কি হয়েছে তোমার চোখে? আমাকে সত্যি করে বলো। রান্নাবান্না কিছু করতে হবে না চলো আমার সাথে।’

বলেই স্পর্শ আমার হাত ধরে উঠাতে চাইল,

আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, ‘আরে আমার কিছু হয়নি। পেঁয়াজের ধক আমার চোখে লাগছে আর পেঁয়াজ কাটা শেষ আমি এখন রান্না করবো। আপনি এখান থেকে যান।’

‘তোমার রান্না করতে হবে না তুমি আকাম করে ফেলবে। ‘

‘ খুব সুস্বাদু রান্না করবো দেইখেন। আমার হাতের রান্না খেতে গিয়ে না আবার প্লেট খেয়ে ফেলেন সেই চিন্তা করছি।’

‘ বাজে কথা না বলে চল আমার সাথে।’

‘আরে দেখছেনা কত কষ্ট করে আমি রান্নার জোগাড় করলাম। এখন আমি চলে যাব সম্ভব।’

‘তোমাকে এইসব আজাইরা কাজ করার ভূত টা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে কে বলতো?’

‘এইসব আজাইরা কাজ কে বলল আপনাকে? এই সব বউদের কাজ। আমি তো তাই করছি।’

‘তোমাকে ব‌উদের কাজ করে বউ হতে হবে না তুমি এমনিতে আমার বউ ওকে।’

‘ করতে হবে আমি করব।’

‘ উফফফ। আচ্ছা করো। আমিও থাকব তোমার সাথে। তোমাকে হেল্প করব।’

‘আপনি কি জীবনে রান্না ঘরে ঢুকেছেন? জীবনে কাজ করেছেন? আপনি কি না করবেন আমাকে হেল্প?’

‘জীবনে না ঢুকলেও আমি তোমার থেকে সবকিছুতে এক্সপার্ট। দেখবে তোমাকে আমি কি সুন্দর হেল্প করি! ‘

‘ওকে আপনি তাহলে আলু কেটে দেন আমাকে।’

স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ওয়েট আমি কেটে দিচ্ছি।’

স্পর্শ আলু এনে ছুলতে লাগলো আলো ছুলতে গিয়ে স্পর্শ অর্ধেক আলো ফেলে দিল। কিন্তু স্পর্শের কাটার স্টাইল দেখে আমি নিজের আলু কাটা কথা ভাবতে লাগলাম আমিও হাজার বার আলো কাটতে দেখেছি আর কেটেছি আমাকে মাঝে মাঝে আম্মু আলো কাটতে বসা তো। এতবার করে ও‌ আমি স্পর্শর থেকে উন্নতি করতে পারি নাই। আমিও আলু কাটতেই গেলে অর্ধেক আলো ফেলে দেয়।
হাজার বার করে ওই ভুলটা আমি শুধরাতে পারিনি।

‘আমি এখানে থাকলে আসলে তুমি কাজে মন দিতে পারবেনা যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছ! এজন্য আমাকে সরানোর জন্য বলছিলা আমি কাজ পারবো না তাই না!’

‘মোটেই না। আমি দেখছিলাম আপনি কাজ ঠিকমতো করছেন কিন। আবার গন্ডগোল করলে তো আমারই সমস্যা। আপনাকে আমি মোটেও দেখছিলাম না।’

‘যেভাবে তাকিয়ে ছিলে যে কেউ জানি তুমি আলো নয় আমাকে দেখছিলে।’

‘সব সময় ঘাড়তেরামি করবেন না আমি আপনাকে দেখছিলাম না আমি আলু কাটা দেখছিলাম!’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে ম্যাম। যুগ যুগ ধরেই বউরা কিছু করলে সে অন্যায় স্বামীরাই গ্রহণ করে। ‘

‘ আমি এখানে কি অন্যায় করলাম আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি আমার স্বামী দিকে তাকিয়েছি তাতে অন্যায়ের কি হলো?’

আমার কথা শুনে স্পর্শ হা হা করে হেসে দিল। আর হেসেই আর্তনাদ করে উঠলো। আমি চমকিত চোখে স্পর্শের হাতের দিকে তাকালাম। স্পর্শের হাতে চাকু ছিল সেই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল আর হাসছিল। তখনই অঘটন ঘটেছে হাতের মধ্যে চাকু দিয়ে লেগেছে। আর কেটে যাওয়া স্থান থেকে গল গল করে রক্ত পড়ছে। আমি ছুটে গিয়ে স্পর্শের হাত চেপে ধরলাম। আর বারবার করে সরি বলতে লাগলাম।

‘ইস কতো খানি কেটে গেল। আমার জন্য। আমি যদি আপনার সাথে মজা না করতাম তাহলে আপনার হাত কাটতো না। আমি সত্যি খুব পচা বউ।’

স্পর্শ আমার কান্না মিশ্রিত কন্ঠ শুনে আমাকে শান্ত করতে লাগল নিজের ব্যথা ভুলে। আমি খুব অপরাধবোধে ভুগতে লাগলাম। কেন যে সবসময় মজা করি নিজের মজার জন্য নিজের প্রিয় মানুষটা এখন কষ্ট পাচ্ছে।

স্পর্শর কাটা স্থান টা দেখলেই আমার বুকের ভেতর টা কেমন করে ওঠে।

স্পর্শকে ধাক্কিয়ে কিচেন থেকে বের করে দরজা আটকে দিলাম এবার আমি একাই রান্না করবো। উনি থাকলে শুধু আকাম হবে আর খালি মজা করতে ইচ্ছা হবে। এবার আর কোন মজা আমার মাথায় আসলো না। মন খারাপ করে রান্না করতে লাগলাম। আর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম আজকে রান্না যেন ভাল হয় এত বড় মুখ করে শ্বশুরবাড়ি সবাইকে বলেছি। রান্না করে খাওয়াবো। যদি খাবার ভালো না হয়। তাহলে আর মান সম্মান কিছুই থাকবে না।

দীর্ঘ সময় ধরে আস্তে আস্তে রান্না শেষ করে বেরোলাম। সবাই হাসিমুখে বসে ছিল আমাকে দেখে শাশুড়ি মা বলল,

‘যাও গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আসো। আমাদের তো খিদেয় পেট চো চো করছে। ব‌উমার হাতে রান্না খাবো বলে কথা।’

মাথানিচু করে বললাম, সরি মা আমার জন্য আপনাদের কষ্ট করতে হলো।’

‘আরে মেয়ে সরি বলছো কেন? মেয়ে কষ্ট করে রান্না করেছে। বাবা-মা সেটাতো উপভোগ করে।’

আশেপাশে স্পর্শ আছে কিনা খুঁজতে খুঁজতে রুমে এলাম। না পেয়ে গোসল করতে চলে গেলাম প্রচণ্ড গরম লেগেছে। এখন ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে ভালো লাগবে।

কিন্তু এই গোসল করতে আসার তাড়ায় তো জামা কাপড় ছাড়াই চলে এসেছি। গোসল করে এখন জামাকাপড় আনি নাই দেখলাম। এখন কি পড়বো আর এই ভেজা পোশাক কতক্ষণ পরে থাকবো কি এক যন্ত্রণা। রুমে উঁকি মারতেই দেখলাম স্পর্শ পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আমি তাকে দেখেই আবার দরজা আটকে দিলাম।

স্পর্শ সেই শব্দ পেয়ে দরজার কাছে এসে দরজা ধাক্কা মেরে বলল,

‘কি হয়েছে বের না হয়ে আবার ভেতরে ঢুকে পড়লে কেন? চলো সবাই ডাইনিং টেবিলে ওয়েট করছে ।’

‘আপনি যান আমি একটু পর আসছি‌। আমার একটু লেট হবে।’

‘ওকে আমি ওয়েট করছি একসাথে যাব!’

‘ আরে বলছি না আপনি যান। আমি একটু পর আসছি। আপনার আমার জন্য ওয়েট করতে হবে না।’

‘ তুমি কি সেই কারনে আমার উপর রেগে আছো? দেখো তখনকার ব্যবহারে কিন্তু আমি তোমার উপর রাগ করেছি। উল্টা তুমি এখন আমাকে রাগ দেখাচ্ছো কেন?’

নিজের মাথায় নিজে বাড়ি মারছি।আমি রাগ দেখালাম কোথায়? কোন কথাই বলা যায় না। খালি ভাবে আমি রাগ করেছি কপাল আমার।

স্পর্শ জোরে জোরে ধাক্কাসে ভাবছে আমি রাগ করেছি তাই আওয়াজ করছি না।

আমিও তাও দরজা খুললাম না। স্পর্শের কাছে পোশাক চাইতে লজ্জা করছে আর আমি এখন যে অবস্থা সেই অবস্থাই স্পর্শের সামনের দরজা খুলে উঁকি মারতে পারবো না। তাই আমি তাকে চলে যেতে বললাম। এবার চলে গেল স্পর্শ কিন্তু কঠিন রাগ করেছ আমার উপর। তা আমি নিচে এসে দেখতে পারলাম। মহাশয় রাগের চোটে আমার দিকে তাকালো না পর্যন্ত আমি খাবার টেবিলে বসে সরি বললাম। স্পর্শ তাকালো না পর্যন্ত। সবাইকে খাবার তুলে দিয়ে আবার বসে পড়লাম। স্পর্শ চুপচাপ খাচ্ছে আমি তার দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম খাবার কেমন হয়েছে? তিনি কোনো কথাই বলল না। আমি ঢোক গিলে র‌ইলাম।
এই রাগটা আমি ভুলে গেলাম ভাবলাম হয়ত রাগ কমে যাব। স্পর্শ খাবার খেয়ে কোথায় যেন চলে গেছে আগেভাগে খাবার থেকে উঠে গেছিল। বাসার সবাই খেয়ে অনেক অনেক প্রশংসা করল। অতটাও ভালো হয়নি কিন্তু অতটাও আখ্যাত হয়নি খাওয়া যাবে ভালো না হলেও। সবার প্রশংসা শুনেও খুশি হতে পারলাম না স্পর্শ কিছুই বলল না উল্টো রাগ করলো। কিন্তু আমি জানি তিনি আমার উপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। রাগ তো করি আমি। সে কখনো আমার উপর রাগ করে না।

কিন্তু এবার আমাকে ভুল প্রমাণ করল স্পর্শ। কঠিন রাগ করেছে বাসায় ফিরল রাত করে এসে আমার সাথে কথা বললো না। আমি কথা বললেও আমার সাথে কথা বলে না। কেমন যেন ইগনোর করে। আমার কেন যেন কান্না কান্না পেল। আমি কান্না করলাম। স্পর্শ দেখেও তার মন গললো না। কেমন যেন পাষানের মত কান্না দেখেও না দেখার ভান করল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম স্পর্শের কান্ড দেখে সামান্য কারণে এতটা রাগ।

সকালে শাশুড়ি মার কাছে বসে বসে বলছি আর কাদছি। তিনি আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।
#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩০
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

‘আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না তো?’ আমি নাক টানতে টানতে বললাম। স্পর্শ কথা বলল না। আমি টিস্যুর বক্স নিয়ে বিছানায় কাঁদতে লাগলাম আর নাক মুছতে লাগলাম।কাঁদতে কাঁদতে আমার ঠান্ডা লেগে গেছে। আধাঘন্টা পর স্পর্শ বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে বসল। আর আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

‘ ফ্যাচ ফ্যাচ করা বন্ধ করে আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও‌। তোমার যন্ত্রণায় তো আমি শুয়ে থাকতে পারছিনা। এখন কি রুম থেকে বেরিয়ে যাব। ‘

আমি কান্না মাখা মুখে স্পর্শের দিকে ঘুরে বসলাম। তারপর কান্নাজড়িত গলায় বললাম,

‘ আপনি এত হৃদয়হীন কবে হয়ে গেলেন। আমার কান্না আমার চোখের জল আপনাকে গলাতে পারছে না। আপনি আমার কান্না দেখে বিরক্তিকর মুখে বসে আছেন‌‌। আগে তো কাঁদতে দেখলে পাগল হয়ে যেতেন। সব ভালোবাসা বুঝি বিয়ের পরেই হারিয়ে গেল। তাহলে তো বিয়ে না করে ওই ভাবেই ভালো ছিল‌‌। বিয়ে করে দেখি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম।’

বলেই আমি আরো শব্দ করে কাঁদতে লাগলাম।

‘ তুমি আমাকে রুম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করলে। ওকে তুমি বসে বসে কান্না করো আমি চলে যাই তোমার ন্যাকা কান্না আমার দেখতে ইচ্ছা করছে না।’

বলেই স্পর্শ বিছানায় থেকে উঠে রুম ছেড়ে চলে যেতে চাইলো। আমি তা দেখে কান্না অফ করে স্পর্শের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম পথ আটকে।

‘কি হলো আমার পথ আটকে দাড়ালে কেন?’

‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’

‘বললামই তো বাইরে যাচ্ছি! আজকে বাইরেই রাত কাটাবো তুমি শান্তি মত কাঁদো।’

‘ এ্যা আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না।’

‘ দরকার কি? যখন গলা ব্যথা হবে তখন একাই কান্না থেমে যাবে!’

‘গলা ব্যথা হলে তো আমার কষ্ট হবে।’

‘জানি।’

‘ তাও যাচ্ছেন কান্না করতে করতে আমার গলাব্যথা হোক। আমার কষ্ট হলে আপনার কষ্ট হবে না?’

‘ আমার তো গলা ব্যাথা হবে না। তাহলে আমার কষ্ট হবে কেন?’

‘ আমার ব্যাথায় আপনার কষ্ট হবে।’

‘ জি না।’

‘ আপনি পাষাণ।’

‘ জানি।’

‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।’

‘ আচ্ছা।’

‘ কিসের আচ্ছা?’

‘ সব কিছুই।’

‘ আমার চোখের জলের দাম নাই আপনার কাছে?’

‘ আছে।’

‘ তাহলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন না কেন?’

স্পর্শ কথা ঘুরিয়ে বলল, ‘ সরো।’

আমি স্পর্শ কলার চেপে ধরে একদম স্পর্শের কাছে চলে গেলাম। ওর বুকের সাথে লেপ্টে গেলাম।

‘ আমার মুখের দিকে তাকান। দেখি কতক্ষণ কঠিন হয়ে থাকতে পারেন।’

স্পর্শ মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে। আমাকে নিজে থেকে সরানোর চেষ্টা করছে । যতই সরাতে চাইছে আমি আরো তার সাথে চিপকে যাচ্ছি। আমি একদম স্পর্শ এর বুকের উপর মাথা রেখে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি। স্পর্শ আমার কাঁধ ধরে সরাতে চাইছে পারছেনা তাই বিরক্ত হয়ে এবার ধমক মারলো।

আমি ধমক খেয়ে ভয়ে স্পর্শকে ছেড়ে দিলাম। স্পর্শ নিজেও ধমক দিয়ে অবাক। এতোটা রিয়েক্ট করতে চায়নি। কিন্তু করে ফেলেছে। আমি দৌড়ে সীফার কাছে চলে এলাম। স্পর্শের ধমক খেয়ে আমার খুব অপমানে লেগেছে।
সীফা দরজা খুলেই ঘুমায়। আমি ওর রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। সীফা লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমাকে কান্না রত অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কি হয়েছে ভাবি? তুমি কাঁদছো কেন? আর এই রুমে কেন?’

‘ সীফা আমি আজ তোমার সাথে ঘুমাতে চাই। প্লিজ না করো না।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু ভাইয়ার সাথে কি তোমার কিছু হয়েছে?’

‘ এখন কিছু জিজ্ঞেস করো না। আমি ঘুমাবো।’

বলেই সীফার পাশে শুয়ে পড়লাম।ঘুমালাম না। কিন্তু সেটা ওকে বুঝালাম না। আমি ঘুমিয়ে পড়েছি এমন ভান ধরে পরে রইলাম।

স্পর্শ আজ ইচ্ছে করেই আজ রাগ দেখিয়েছে আমাকে। সব সময় আমি রাগ করি অভিমান করি তাই আজ স্পর্শ রাগ করে আমাকে বুঝাতে চাইছিল
এমন করলে স্পর্শ কতোটা কষ্ট পায়‌‌। কিন্তু সবকিছু পাঞ্চাল হয়ে গেল। স্পর্শ চিন্তিত মুখে পায়চারি করছে ও বুজতে পারছি রাগ দেখাতে গিয়ে আমাকে বোঝাতে গিয়ে আমাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

স্পর্শ অনেক কিছু ভেবে সীফার রুমে আমাকে ডাকতে এলো। ছোট বোনের রুমে এসে ডাকতেও লজ্জা করছে ওর। কিন্তু এখন না ডেকেও তো ও থাকতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে লাজ লজ্জা ভুলে এসেছে।

স্পর্শ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় করাঘাত করল। প্রথমে আমার নাম ধরে ডাকলো। আমি শুনেও না শোনার ভান করে পড়ে আছি। কয়েকবার ঢাকার পর সীমার নাম ধরে ডাকতে লাগল। সীফা খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল। ও স্পর্শের ডাক শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে দরজা খুলল!

ঘুম ঘুম চোখে বলল কি হয়েছে ভাইয়া?

স্পর্শ ওকে সরিয়ে ভেতরে চলে এলো। আর জোরে বলল,

‘ সীফা তুই একটু চোখ বন্ধ করে দাঁড়া তো।’

‘ কেন ভাইয়া?’

‘ আমি বলছি তাই। সব কিছুতে তোর কারণ জানতে হবে কেন?’

ভাইয়ের ধমক খেয়ে সীফা চোখ বন্ধ করে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ভাবছি স্পর্শে কি করতে চাইছে? আমি শক্ত হয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। হঠাৎ মনে হল কেউ টান মেরে আমার উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে দিলো। আমি তাও চোখ খুললাম না। ওই ভাবেই চোখে চেয়ে বন্ধ করে আছি। ফট করে চোখ খুলে ফেললাম স্পর্শ আমাকে দুই হাতে তুলে ধরেছে শূন্যে। আমি বড়বড় চোখ করে বললাম,

‘ এবার আছাড় মেরে আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন?’

স্পর্শ কিছু বললো না। বড় বড় পা ফেলে সীফার রুমে থেকে বেরিয়ে চেঁচিয়ে বলল,

‘ সীফা ঘুমিয়ে পর।’

আমি বললাম, ‘এসব কি আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। সীফার রুম আমাকে দিয়ে আসেন আমি এখানেই থাকব এখন থেকে।’

‘ নিজের রুম থাকতে অন্যের রুমে গিয়ে অন্যকে ডিস্টার্ব করো কেন?’

‘ কি বললেন আমি ডিস্টার্ব করেছি তাকে ডিস্টার্ব করলাম? বুঝেছি আপনাকে করেছি ওকে সরি। কালকে আমি আমাদের বাড়ি চলে যাব। তাহলে আর আমাকে অন্যের রুমে থাকতে হবে। আপনি নিজের রুমে শান্তিতে থাকেন কারো অসহ্যকর কান্না আপনার শুনতে হবে না।’

স্পর্শ আমার দিকে তাকিয়ে খুব নরম সুরে বলল সরি! আমি কিছুই বললাম না আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল আমার খুব খারাপ লেগেছে স্পর্শ এর ব্যবহারে। স্পর্শ আমাকে নিয়ে বেলকুনিতে এল আমাকে ওই ভাবেই নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিজেও বসলো।

আমি ছটফট করতে লাগলাম উঠে চলে যাওয়ার জন্য। স্পর্শ জোর করে ধরে রাখলো আমাকে। আর নরম গলায় বলতে লাগল,

‘ ব‌উ সরি। আমি অনেক অনেক সরি। আমি তোমাকে একটু কষ্ট দিয়ে এটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম যে তুমি যে আমার উপর অভিমান করিও, রাগ করিও, কিন্তু কথা বলা অফ করো না ইগনোর করো না যেটা আমি সহ্য করতে পারিনা। খুব কষ্ট বুকের ভেতর। বুকে ব্যথা হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু সেসব বলে তোমাকে বোঝাতে পারিনা। তাই আমি ইচ্ছে করে আজকে সারাদিন তোমার সাথে নাটক করালাম। কিন্তু তোমাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম। তার জন্য স্যরি। আমি তোমাকে শুধু আমার কষ্টটা অনুভব করাতে চেয়েছিলাম। তোমাকে ইগনোর করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার প্রতিটা হৃদস্পন্দন জানে আমি এই মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসি।’

‘মিথ্যা আপনি শুধু আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেন! আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। ভালবাসলে সারাদিন আমার কান্না মাখা মুখ দেখে, আমাকে না খেয়ে থাকতে দেখে। আপনি এভাবে চুপ থাকতে পারতেন না। আপনার হৃদয় এতটা কঠিন হতে পারত না।’

‘ আজ আমি বাড়িতে কতক্ষণ ছিলাম? তোমার সামনে বা কতো সময় ছিলাম? তোমাকে এভাবে দেখে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই এই কষ্ট দিয়েছি কিছু কিছু সময় কষ্ট দিতে হয়। না হলে সারাজীবন কষ্ট ভুল-বোঝাবুঝি থেকে যায়।’

‘ এসব তো আপনি আমাকে ভালো করে বলে বোঝাতে পারতাম। সারাটা দিন এইভাবে ইগনোর করবেন। কত কষ্ট পেয়েছি জানেন কত খিদে পেয়েছে তাও আপনার জন্য কিছু খাইনি।’

‘কাল তুমি আমাকে রান্না করে খাওয়াই ছে এজন্যই তো আজ তোমার জন্য আমি রান্না করব! তো ম্যাডাম বরের রান্না খেলে কি আপনার রাগ কমবে?’

আমি অবাক চোখে স্পর্শ দিকে ঘোরে স্পর্শ চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,’ আপনি আমাকে রান্না করে খাওয়াবে? ”

‘ইয়েস।’

‘সামান্য আলো কাটতে গিয়ে তো হাত কেটে ফেলেন। আপনি কি করে রান্না করবেন?’

‘সেতো বউয়ের নজর পরায়। না হলে আমি স্পর্শ সবই করতে পারি। তুমি বসো আমি আসছি।’

#চলবে….
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here