চড়ুইপাখির অভিমান পর্ব -৩৩+৩৪

#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩৩
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

আমি ভ্যাবলার মত স্পর্শ দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি পেছন কিভাবে এলাম এই সামান্য বিষয়টা আমার মাথায় ঢুকলো না। এই ঘুমের কারণে আমি জ্ঞানশুন্য হয়ে গেছি। ফালতু প্রশ্ন করে করে স্পর্শের মাথা খেয়ে নিচ্ছিলাম। স্পর্শ আমার এরকম বাচ্চাদের মতো বিহেভিয়ার দেখে প্রচন্ড রেগে আর আমার সাথে কোন কথাই বলল না। আমাকে কোলে তুলে রিসোর্ট এর দিকে রওনা হলো। আশেপাশের এতো মানুষের সামনে এভাবে স্পর্শ কোলে নিয়ে হাঁটাতে আমি লজ্জা ছটফট করতে লাগলাম নামাজ অন্য। কিন্তু স্পর্শ আমাকে নামাল না। ওইভাবেই নিয়ে গেল। আর দিগন্ত ভাইয়া রুম বুকিং করা নিয়ে কথা বলেছিলেন। স্পর্শ আমাকে পাঁজকোলে রাখার জন্য কিছু করতে পারল না। এমনকি দিগন্ত ভাইয়া শেষে আমাদের রুমের দরজাটা খুলে দিলো। আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করেছিলাম। কিন্তু যখন যখন চাচ্ছিলাম। আমার দিকে শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মিষ্টি। তাকিয়ে চোখ টিপছিল হাসছিল। আর আমি শুধু ওকে ভেংচি কেটেছি।

রুমে এসে স্পর্শ আমাকে বিছানায় ছুড়ে মারল এক প্রকার। মনে হল আমি না জানি কি? আমি যে তার প্রিয়তমা স্ত্রী। সেসব তিনি আদৌ মনে রেখেছে কিনা কে জানে? মনে রাখলেই জীবনেও ছুড়ে মারতে পারতো না। এমন ভাবে ছুড়ে মেরেছে মনে হলো বিছানায় পড়ে আমার হাড্ডিগুড্ডি ভেঙ্গে গেছে সব।

‘ ও মা গো। এমন জল্লাদ এর মত কেউ আছাড় মারে? আমাকে কি আপনার মানুষ মনে হয় না! যেনো আমি কোন পুতুল সেই ভাবে ছুড়ে মারলেন।’কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম।

স্পর্শ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল, ‘ তুমি কি সত্যি মানুষ? আমার তো তোমাকে মানুষ মনে হয় না।’

আমি অবাক গলায় বললাম, ‘কি বললেন আপনি? আমাকে আপনার মানুষ মনে হয় না? তো আমাকে কি মনে হয়?’

‘ তোমাকে তোমার মেয়ে বলে মনে হয়।’

আমি বিকৃত গলায় বললাম, ‘এ্যা আপনি কি পাগল? মেয়েরা কি মানুষ না? এরা কি মানুষ এর বাইরে কোন প্রাণী? আজব পাগল তো আপনি।’

‘আমি কি বলেছি আমি পাগল না? আমি তো পাগল‌ই। আমার বউ মানে তুমি পাগলি। পাগলের পাগলী। নাইস না নাম দুটো।’

‘মোটেই না। আমি পাগলী হতে যাবো কেনো? আমি হলাম জ্ঞানী মারিয়া। আর আপনি হলেন পাগল। আপনার বউ পাগলী না আপনার বউ হচ্ছে মারিয়া।’

‘যথা আজ্ঞা মহারানী। কিন্তু একটু আগে আপনি নিজে নিজেকে পাগলি প্রমাণ করেছেন। সেটা কি আপনার মনে আছে মহারানী?’

‘মোটেই না। আমি তখন ঘুমিয়ে ছিলাম।ঘুমের ঘোরে কি বলেছি? কি করেছি? আমি মনে নাই!’

‘তাই নাকি তো আপনার এটা মনে আছে আপনি তখন কিছু বলেছে। আর কিছু আজাইরা প্রশ্ন করেছেন!’

‘আমার প্রশ্নকে একদম আজাইরা বলবেন না। আমি সব সময় সিরিয়াস কথা বলি।’

‘তুমি যদি সিরিয়াস কথা বলো তাহলে সিরিয়াস কে অপমান করা হবে। কারণ তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত আমি কোন সিরিয়াস কথা শুনি নাই।’

‘আমার কথাগুলো আপনার সিরিয়াস মনে হয় না। আমি কোন সময় আজাইরা কথা বলি হ্যা। আপনি আসলে আমার কথাগুলো সব সময় আজাইরা মনে করেন। আমার কোন কথায় আপনি সিরিয়াসলি নেন না এটা আপনার সমস্যা। নিজের সমস্যা আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন আপনি আসলেই খুব পঁচা!’

স্পর্শকে পঁচা বলতেই আমার উপর দিয়ে একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। আমি স্পর্শকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিজে থেকে সরিয়ে। ঠোঁট মুছে বকতে বকতে বাথরুমে ঢুকে গেলাম‌।

আমরা যেহেতু সকালে রওনা দিয়েছিলাম পৌঁছাতে রাত হয়েগেছে রাতভর আর কি করবো? বসে থাকলাম! আমি একাই ঘুম পারলাম না‌। উঠে ডিনার করলাম। রিসোর্টটাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তারপর আবার ঘুম সকালে উঠে আমরা সাগরপাড়ে আসলাম।
সকাল-সকাল পরিবেশটা খুবই ঠাণ্ডা। ঠান্ডা বাতাস সাথে খুবই ভালো লাগছে। স্পর্শ জরাজুরিতে আমি শাড়ি পড়ে এসেছি। তাও আবার স্পর্শের ফেভারিট নীল শাড়ি। যাইহোক এই শাড়ি পরে এখন আমি চলাফেরা হালকা করতে পারি । স্পর্শের যেহেতু শাড়ি পছন্দ তাই আমাকে এটা পড়া শিখতেই হয়েছে।

আমি আর মিষ্টি হাত ধরে পানিতে নেমে পরলাম। সকাল সকালই পানিতে নামায় স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিল‌ কিন্তু আমাদের আর পায় কে? আমরা তো অলরেডি ভিজে গেছি! কিন্তূ এই ভিজে যে কি আকামটা করেছি একটু পরেই বুঝতে পারলাম।

স্পর্শ জোর করে আমার হাত ধরে টানতে টানতে উঠিয়ে এনে বলল, ‘তুমি যে একটা পাগল সেইটা আবার প্রমাণ করলে! এতবার বারণ করার সত্ত্বেও কেন তুমি পানিতে নামলে? এখন এই ভেজা শাড়ি পড়ে তুমি কতক্ষণ থাকবে? কোন পোশাক নিয়ে এসেছো? আর সকালবেলা গোসল করে এসেছে আবার গোসল করলে এখন তোমার জ্বর আসলে তুমি কিভাবে আনন্দ ফুর্তি করবে। যেসব প্ল্যান করে এসেছো জ্বর আসলে বিছানায় শুয়ে সেসব কিছু করতে পারবে? মাথামোটা গাধা একটা! সবকিছুতেই তার পাগলামী করতে হবে।’

আমি গাল ফুলিয়ে মাথা নিচু করে বসে বললাম, ‘ তাই বলে ঘুরতে নিয়ে এসে আপনি আমাকে ধমকালেন?’

‘তো কি করব ধরে চুমু খাবো নাকি? সব সময় তোমার পাগলামো ভালো লাগেনা। এখন আমরা এখানে সকালের নাস্তা করে। আমরা আরেক জায়গায় বেড়াতে যাব। আর তোমরা কি করলে শাড়ি ভিজিয়ে আকাম করে দিলে। চলো এবার রুমে গিয়ে বসে থাকো। আজকে আর কোথাও নিয়ে যাব না। ‘

আমি চমকে উঠে স্পর্শের বাহু খামচে ধরে বললাম,’সরি সরি সরি এবারের মত ক্ষমা করে দিন আমার ভুল হয়েছে‌। দেখুন কান ধরছি। এবারের মতো কিছু একটা করুন আমার খুব ঠান্ডা লাগছে! আমি রুমে বসে থাকবো না আমি বেড়াতে যাব প্লিজ।’

‘আরে ছাড়ো আমার হাত। নিজের সাথে এখন আমাকেও ভেজানোর প্ল্যান করছে নাকি ছাড়ো আমাকে।’

‘ধুর ভাল লাগে না সরি বললাম তো ক্ষমা করো না।’

স্পর্শ অবাক গলায় বলল, ‘তুমি করে বললে?’

‘ হুম বললাম। এবার তো রাগ কমেছে এবার আমাকে ড্রেসের ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।’

‘এই বিষয়ে তুমি খুবই বুদ্ধিমতি।’

‘আর কোন বিষয়ে আমি বুদ্ধিমতী হতে চাই না। আপনারা কন্ট্রোল করতে পারলেই আমি ধন্য।’

‘ আচ্ছা চলো দেখি আশেপাশের কোন ছোটখাটো শপিং মল পাওয়া যায় কিনা। সিম্পল কিছু কেনার জন্য। এখন রিসোর্টে ফিরে গেল অনেক সময় লেগে যাবে।’

স্পর্শ আমার শরীরে ভালোভাবে শাড়িটা পেছিয়ে ঢেকে দিল তারপর আমাকে ওই ভাবেই নিজের সাথে চেপে ধরে হাটতে লাগল। আমি বললাম,

‘এমন জাপ্টে ধরেছেন কেন আপনিতো ভিজে যাচ্ছেন।’

‘তোমাকে গরম দেওয়ার চেষ্টা করছি! যাতে ঠান্ডা কম লাগে।’

‘আপনার পোশাক ভিজে গেল তো আপনি ও বিপদে পড়ে যাবেন। আমাকে গরম দিতে হবে না। আমাকে সরে পরে হাঁটুন।’

স্পর্শ আমার কথা শুনলাম আমাকে ওইভাবে ধরে দিগন্ত ভাইয়াদের কাছে নিয়ে আসলো। দিগন্ত ভাইয়া মিষ্টি কে বকছে। আমি চোরের মত মুখ করে মিষ্টি দিকে তাকাচ্ছি। কারণ এই সম্পন্ন বুদ্ধিটা আমার ছিল। মিষ্টি রাগী চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অসহায়ের মত করে ওর দিকে তাকাচ্ছি।

অনেক ঘোরাঘুরি করে শপিংমল পেলাম না একজনকে জিজ্ঞেস করে একটা ছোট্ট দোকান পেলাম সেখানে একটা লোক কিছু জামা কাপড় বিক্রি করে। সেখান থেকে আমি আর মিষ্টির দুই সেট থ্রি পিস নিলাম। আমারটা লাল, মিষ্টির টা সবুজ। এই ড্রেস এখন কোথাই পরব। সেই লোকটা তার বোনের বাড়ি দেখিয়ে দিল। আমরা সে বাসায় গেলাম তারপর আমি আর মিষ্টি পোশাক পরিবর্তন করে আসি। সেখানে শুকাতে দিয়ে আসলাম শাড়ি দুটো।
#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#পর্ব_৩৪
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা

ঠান্ডা পানিতে এতক্ষণ গোসল করার জন্য আমাদের রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। মিষ্টি আর আমি জ্বরে ভুগতে লাগলাম বিছানায় পরে। স্পর্শ আর দিগন্ত ভাইয়া হন্যে হয়ে ডাক্তার ধরে নিয়ে এসেছে। তারপর আমাকে ওষুধ খাইয়ে বিছানায় ফেলে রেখেছে। আর পায়চারি করছে আর আমাকে যা নয় তাই বলে বকাঝকা করছে। আমি তিতা মুখে স্পর্শ দিকে তাকিয়ে অসুস্থ গলায় বললাম,

‘ আমি অসুস্থ আর আপনি আমাকে বকতেছেন?’

‘ হ্যাঁ বকছি। তুমি বকার মতো কাজ করলে না বকে কি আদর করবো?’

‘ আদর করবেন। অসুস্থ হলে বকা বারণ। তখন আদর সোহাগ করতে হয়। এখনকার যত রাগ বকা আছে সব তুলে রাখুন যখন আমি সুস্থ হবো তখন বকবেন।’

‘ তোমাকে আমি যত‌ই গাধা বলিনা কেন তুমি কিন্তু মোটেও তা নয়। যথেষ্ট চালাক চতুর।’

‘ সে তো আমি সবসময় বলি। আমার বুদ্ধির কাছে আপনি কিছুই না। কিন্তু আপনি বিশ্বাসই করতে চান না আমার বুদ্ধি আছে।’খুব গর্বের সাথে বললাম।

স্পর্শ বলল, ‘ জী ম্যাডাম আপনার বুদ্ধির কাছে তো আমি শিশু।’

‘ইয়েস, আজকে বুঝতে পারলেন। আমি তো সেই কবে বুঝতে পেরেছি।’

‘পারবেন ই তো মাথা মোটারা ফালতু জিনিস আগে বুঝে।’ স্পর্শ বিড়বিড় করে বলল।

আমি স্পর্শের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ‘ কি বললেন? বিরবির করে জোরে বলুন আমি শুনবো।’

‘কেন তুমি না বুদ্ধিমান। তাহলে আমার জোরে বলতে হবে কেন? আমার বিরবির কথাই বুঝে নাও‌।’

‘আমি নিজেকে বুদ্ধিমান বলেছি। আমিতো বলিনি আমি সব কথা বুঝতে পারব।’

‘ সরি আমি আর বলতে পারবো না।’

‘ আমি ভীতু। নিশ্চয়ই আমাকে কিছু বলেছেন। যার জন্য এখন বলতে পারছেন না। কারণ আপনি আমাকে ভয় পান।’

স্পর্শ চোখ কপালে তুলে আমার দিকে তাকালো,’হোয়াট আমি তোমাকে ভয় পাই?’

‘পেতেই পারেন! কিন্তু স্বীকার করতে চান না। আপনি আমাকে ভয় পান‌। এজন্যই তো আমাকে বাজে কিছু বলেছেন বিড়বিড় করে। যেটা এখন জোরে বলার সাহস পাচ্ছেন না। আপনি একটা ভীতুর ডিম।’

স্পর্শ পায়চারি অফ করে একদম আমার পাশে এসে দুহাত আমার দু পাশে রেখে তোমার মুখোমুখি হয়ে নিজের মাথা নিচু করে। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমি তোমাকে ভয় পাই?’

‘হ্যাঁ ।’

‘তখন আমি বলেছিলাম মাথামোটারা সবকিছু আগে বুজে। এখনো বলছি তুমি একটা মাথা মোটা।’

আমি বললাম, ‘আমার মাথা কোথায় মোটা আমার মাথা যথেষ্ট সুন্দর ছোট। এই ছোট মাথা আপনার মোটা লাগছে আপনি আসলেই একটা পাগল।’

“ওরে আমি কার সাথে কথা বলছি? আমি তোমার এই মাথামোটা বলিনি।’

‘সিস্টেম ছাড়া কথা বলছেন এখন আমাকে ধমকাচ্ছে।’

‘তোমাকে বোঝানো আমার কম্ম না দয়া করে চুপ করো। অসুস্থ তাই তোমাকে আর আমাকে ধমকাচ্ছে চাচ্ছি না। এমনিতে আমার মাথার প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। এক জায়গাতে এসে আনন্দ ফুর্তি করব তা আমার রোগীর সেবা করতে হচ্ছে। ফাটা কপাল আমার।’

‘যান আপনার আমাকে সেবা করতে হবেনা। আপনার আনন্দ করুন। ঘুরেন বেশি করে।’

‘একা ঘুরতে গেলে বিয়ে করেছি কেন? এ কক্সবাজার ভাজা ভাজা করে ঘুরা আমার শেষ সে অনেক আগেই। এখন তো আমি বউ নিয়ে রোমান্টিক ওয়েদারে ঘুরব। কিন্তু তোমার জন্য কিছুই হচ্ছে না। কতটা জ্বর এসেছে দেখো। তোমার মুখটা কেমন লাল হয়ে আছে। তাকিয়ে থাকতে পারছে না। অথচ মুখ চালিয়ে যাচ্ছ আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য।’

‘আমি আর আপনার সাথে কথাই বলব না। কথা বললেই নাকি খালি ঝগড়া করি।’

স্পর্শ আমার কপালে স্পর্শ করে বলল, ‘এই অবস্থাতেও অভিমান? ‘

‘ হুম। আমি আপনার সাথে আর কথা বলবো না।
রাগ করেছি। আপনি আবার আমাকে ঝগড়াটি বলেছেন, মাথামোটা বলেছেন অনেক কিছু বলেছেন। অসুস্থতা মাঝে কোথায় শুধু আদর যত্ন করবেন, মিষ্টি করে কথা বলবেন তা না আমাকে ধমকাচ্ছেন।’

‘ তো তুমি ধমক খাওয়া‌ মতো কাজ করলে কেন?’

‘ভুল হয়ে গেছে বললাম তো! ‘

‘ আচ্ছা কান্না করতে হবে না। আর ধমকাবো না সরি।’

আমি মাথা বাম কাত করে রইলাম কথা বলবোনা স্পর্শের সাথে।
স্পর্শ আমার মাথা টেনে সোজা করে আমার কপালের আর নাকে চুমু খেল। আর সাথে সাথেই বললো,

‘ইস আমার ঠোঁট টা পুড়ে গেল।’

‘ ঢং। ভালোই হয়েছে। আমাকে টাচ করতে আসবেন তো জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন। আমাকে মাথামোটার বলার শাস্তি এটা আপনার।’

‘ শাস্তি হলেও তো আমি তোমাকে দূরে রাখতে পারব না। তাই এই শাস্তিটা ও আমি মাথা পেতে নিলাম।’

রাতে আমার জ্বরের মাত্রা আরো ভালো আর আমি জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল কথা বলতে লাগলাম। স্পর্শ ভয় পেয়ে আমার মাথায় জলপট্টি নিয়ে বসে ছিল। সারারাত তিনি কি ছটফট যে করেছে। এসব দেখে আমার গর্বে বুকটা ভরে উঠেছিল। ইশ কতইনা ভালবাসেন উনি আমাকে এমন একটা হাজবেন্ড পেয়ে আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবতী। উনার মত একজন জীবনসঙ্গিনী পেয়ে আমি খুব লাকি।
সকালে আমার জ্বর কমে আসায় আমি যখন চোখ মেলি দেখি স্পর্শ আমার পাশে বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে ওই ভাবে ঘুমিয়ে আছে। আমি ওইভাবে স্পর্শকে টেনেটুনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। সারারাত ঘুমাতে পারিনি চোখ দুটো ফুলে আছে। এখন একটু ঘুমাক। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে এলাম শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, মাথা ঘোরাচ্ছে মুখ তো তিতা বিষ হয়ে আছে। স্পর্শ মনে হয় সকালেই ঘুমিয়েছে কারণ এখানে কফির কাপ রাখা আমি একটা নিয়ে খেলাম।

স্পর্শ উঠে আমাকে বসে থাকতে দেখে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এলো আমার কাছে। আর বলল,

‘ এই শোনো তুমি উঠেছ কেন? কিছু দরকার হলে তুমি আমাকে বলবে তা না করে নিজে নিজে পাকনামি করে আবার উঠেছ। আবার কোন অঘটন ঘটাতে চাও তাই না।তুমি কি আমাকে একটু শান্তি দেবেনা ?’

বলতে বলতে আমার কাছে এসে আমার কপালে গালে গলায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কেমন। আমি স্পর্শের এত চিন্তা দেখে বললাম,

‘আই এম ফাইন! আমি এখন অনেকটা ঠিক আছে। খুব ভালো লাগছে। শরীর ব্যথা কমে এসেছে। তাই ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। আপনি তো সারারাত অনেক কিছু করলেন। বসে থেকে একদম নেতিয়ে গেছেন। এজন্য আপনি একটু শুয়ে বিশ্রাম নিন। একটু পরে না হয় আমি ডেকে দেবো আপনাকে।’

‘আমার বিশ্রাম নেয়ার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। সবকিছু তুমি নিজে ঠিক করতে যাব না। আর পাকনামি করে আমাকে কষ্ট দেবে না প্লিজ। তুমি অসুস্থ থাকলে, কষ্টে থাকলে আমি ঠিকমত শ্বাস নিতে পারি না।
বুকে ব্যথা করে তুমি কি আমাকে বুঝবে না।’

স্পর্শ কথা শোনে আমি গলে ক্ষীর হয়ে গেলাম। স্পর্শকে জাপ্টে ধরে বললাম, ‘আচ্ছা আই এম সরি। আমি আপনাকে আর কষ্ট দেব না। আপনার সব কথা বাধ্য মেয়ের মত শুনবো।’

স্পর্শ আমাকে জড়িয়ে ধরল। সকালের নাস্তা করার পর জোর করে রেডি হয়ে গেলাম বেড়াতে যাব। স্পর্শ কিছুতেই যাবে না। কিন্তু আমি আর মিষ্টি তো রেডি হয়ে বসে আছি।

স্পর্শ শুধু বলছে, ‘একমাস থাকব তোমরা সুস্থ হও তারপর যত খুশি ঘুরবো। এখন এই শরীর নিয়ে ঘোরাঘুরি করে আর তোমাদের অসুস্থ করতে চাইনা।’

কিন্তু আমি আর মিষ্টি নাছোড়বান্দা আমরা এভাবে যাব আমরা। একদম ঠিক আছি আমাদের কিছু হবে না। এসব বলে পাগল করে দিচ্ছি দুজনকে।
অবশেষে আমরা দেখা করতে যাওয়া হলো। দিগন্ত আর স্পর্শ মুখটা হাঁড়ির মতো করে রাখলো। কিন্তু আমি আর মিষ্টি তো খুবই এনজয় করছি । কাল রাতে যে আমি জ্বরে কাতর হয়ে পরে ছিলাম কেউ দেখলে বলবেই না।

#চলবে….
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here