ছায়াবর্ণ পর্ব -২৬ ও শেষ

#ছায়াবর্ণ
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২৬(প্রথমাংশ)

সকাল সকাল বাপের বাড়িতে চলে এসেছি। কিন্তু আমার পোড়া কপাল! বাপের বাড়িটাও শশুরের আর সেটাও ওপর তলায়। মা আমার আসা টাকে স্বাভাবিক ভাবেই দেখেছেন। বললেন–

— কিরে ছায়া! একা একাই চলে এলি? বর্ণ এলো না? রাতে আসবে বুঝি?

মায়ের ভাবটা এমন যেন আমি তার পর আর বর্ণ তার আপন ছেলে! আশ্চর্য! আমি কোনো উত্তর দিলাম না। আমি ঠিক করেছি এক সপ্তাহের আগে এখান থেকে নড়বো না। গম্ভীর কণ্ঠে বললাম–

— আমি এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে এসেছি। এক সপ্তাহের আগে আমাকে এক পাও নড়াতে পারবে না। বলে দিলাম। আর আমি একা একাই থাকব।

মা এমন ভাবে তাকালেন যেন তিনি ভুত দেখলেন! কারণ বর্ণকে ছাড়া একটা দিনও আমি একা থাকিনি। মায়ের তাকানো কে পাত্তা না দিয়ে বাবাকে ফোন করে দ্রুত ফিরতে বললাম। তিনি মাকে ভালো মন্দ রান্না করতে বললেন। তিনি জানেন যে আজ আমার জন্মদিন। অথচ যাকে আগ বাড়িয়ে জানালাম তারই কোনো হেলদোল নেই। মা আমার জন্মদিন উপলক্ষে রান্না বান্না করলেন। দুপুরে আমরা তিনজন একসাথে খেলাম, আমি, বাবা আর মা। বাবার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিলাম। মনে হলো কতযুগ কথা হয় না!
দিনের বেলাটা তো কাটিয়ে দিলাম। বিপত্তি ঘটলো রাতে। বর্ণ তাঁর শশুর বাড়িতে সশরীরে হাজির। খেলেন না, বসলেন না দাঁড়ালেনও না। শুধু একটা কথাই বললেন–

— ও’কে নিতে এসেছি।

মা অবাক হলেও চেপে গেলেন। মা বিনয়ের সাথে বললেন–

— বসো বাবা। আমি ও’কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আমি বেঁকে বসেছি। যাব না তো কিছুতেই না। মা বিরক্ত হয়ে বললেন–

— সমস্যা কি ছায়া? ছেলেটা অফিস থেকে খেটে এসে তোকে আবার নিতে এসেছে। আর তুই যাবি না বলছিস? বিবেক বুদ্ধি কি সব ধুয়ে খেয়েছিস?

আমাকে আরও ধমকাধমকি করে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিলেন। বাপের বাড়ি শশুর বাড়ি ওপর নীচ হলে এমনই হয়। বাবা এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেননি। আর পক্ষে কথা বলতে এলেই মা তাঁকে চোখ রাঙানি দিয়ে রুমে বসিয়ে রেখেছে। আসার সময় মুখ গোমড়া করে হুমকি দিয়ে এলাম–

— আমাকে কেউ ভালোবাসে না। তোমরা ভালোবাসো না। আমি আর এখানে আসবই না।

মা আমার কথাটা হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন। তিনি জানেন এই কথাটা আমি বেশি দিন ধরে রাখতে পারব না। ফ্লাটে ঢুকে ওনার আগেই লম্বা লম্বা পা ফেলে রুমে প্রবেশ করলাম। ধপ ধপ পা ফেলে শব্দ করলাম, বোঝাতে হবে তো আমি রেগে আছি। রুমে ঢুকতেই হকচকিয়ে গেলাম। পুরো রুম অন্ধকারে ডুবে আছে। তিনি আমার পেছন পেছন এসে দরজা লক করলেন। কোনো কিছু দেখতে না পাওয়ার ফলে আমি এক জায়গাতেই ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে ওয়ারড্রব থেকে কিছু বের করলেন। এগিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললেন–

— যাও চেঞ্জ করে এসো।

আমি বোকার মত হাতে নিয়ে বললাম–

— রুম অন্ধকার কেন? আপনার রুমে ইলেকট্রিসিটি নেই?

পাল্টা প্রশ্ন করায় বিরক্ত হলেন। বললেন–

— তোমাকে যা বললাম তাই করো। যাও!

থমথমে মুখে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলাম। দেখলাম শাড়ি এবং ব্লাউজ পেটিকোট। শাড়িটা দেখে চোখ ছানাবড়া! এটা তো সেই শাড়িটা, যেটা মামনির সাথে শাড়ির দোকানে দেখেছিলাম। উনি কি তাহলে সেদিনই আমার জন্য কিনে রেখেছিলেন? মুহূর্তেই মন ফুরফুরে হয়ে গেল। সকল মন খারাপ গায়েব! কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না। দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বললাম–

— শুনছেন?

— হ্যাঁ, কি হলো?

ঠোঁট উল্টে বললাম–

— আমি শাড়ি পরতে পারি না।

তিনি সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বললেন–

— কোনো রকম পেঁচিয়ে এসো। আমি দেখছি।

তার কথা মতো শাড়ি পেঁচিয়ে বের হলাম। পুরো রুম জুড়ে মোমবাতি! বিছানার ওপর গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো! হা করে চেয়ে রইলাম। উনি আমাকে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করালেন। পেঁচানো শাড়ি খুলে নিজে পরাতে শুরু করলেন। বললেন–

— শাড়ি পরাটা শিখে নেবে। আমি মাঝে মধ্যে শাড়ি পরা দেখতে চাই।

কথা খুঁজে পেলাম না। তিনি শাড়ি কুঁচি করে কোমরে গুজতে গিয়ে থমকে গেলেন। আমার কোনো দিকে খেয়াল নেই রুম সাজানোর কথা মাথার মধ্যে ভনভন করছে। হঠাৎ এতো আয়োজন কেন? উদরে উষ্ণ ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠলাম। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি কুঁচি গুজে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিলেন। আপাদমস্তক একবার দেখে নিয়ে আবারও টেনে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন। টেবিলের ওপর ছোট্ট একটা চকলেট কেক রাখা। আর একটা মোমবাতি। ফ্লোর জুড়ে রঙ বেরঙের বেলুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অবাকের ওপর যেন অবাক হচ্ছি। চকচকে চোখে তাকিয়ে বললাম–

— এসব আমার জন্য?

উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন। ছোট্ট একটা ছুরি হাতে দিয়ে বললেন–

— না, আমার আঠারোতে পা দেওয়া বউ এর জন্য। এবার কাটো এটা।

আমি ছুরি দিয়ে কেকটা কেটে ওনার মুখের সামনে ধরলাম। উনি আমার হাত থেকে কেক নিয়ে আমার মুখে দিয়ে বললেন–

— শুভ জন্মদিন জানাই আমার ছোট্ট অবুঝ শুভ্র গোলাপকে!

প্রশান্তির হাসি হাসলাম। বাচ্চাদের মতো বললাম–

— আমার গিফট্ কই?

তিনি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তার দৃষ্টিতে গুটিয়ে গেলাম। হুট করে কোলে তুলে নিলেন। হকচকিয়ে তার পরিহিত টি শার্ট মুঠো করে ধরলাম। ফুলের পাপড়ি ছড়ানো বিছানায় শুইয়ে দিলেন। হৃদস্পন্দন লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটতে লাগল। কানের কাছে ওষ্ঠদ্বয় ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললেন–

— আজ সম্পূর্ণ স্ত্রীর অধিকার দেব তোমায় উপহার হিসেবে। এই আমি টাকে সঁপে দেব তোমায়।

শীর দাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। নিঃশ্বাস ভারি হলো। ভয়ংকর ভাবে বুক কেঁপে উঠল। আমার দেহের কম্পনকে তিনি তোয়াক্কা করলেন না। উষ্ণ স্পর্শে ভরিয়ে তুললেন।‌ শরীর কাঁপিয়ে দেওয়া ঝলসানো স্পর্শ তার। গলায় গভীর ভাবে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে নেশালো কন্ঠে বললেন–

— ভালোবাসি না।

তৃপ্তির সাথে সাথে লজ্জায় চোখ বন্ধ হলো। উন্মাদ হয়ে ভালোবাসলেন পুরো রাত ধরে, এমন ভালোবাসার সাথে আমি পরিচিত নই। সর্বাঙ্গে নিজের আধিপত্য বিস্তার করলেন। যন্ত্র’ণাময় সুখে রাত অতিবাহিত হলো তার নিবিড় আলিঙ্গনে।

চলবে..#ছায়াবর্ণ
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ২৬(শেষাংশ)
#অন্তিম_পর্ব

সকালের ঘুমটা ওনার পরেই ভাঙলো। কটায় বা বাজে? ছয় কি সাড়ে ছয়? পিটপিট করে চোখ মেলে তার সুদর্শন মুখ খানি দর্শন হলো। তিনি আধশোয়া হয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। উদা’ম শরীর তার! রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম। গায়ে থাকা চাদরে মুখ ঢেকে ফেললাম। ইশ্! ওনার সামনে আমি আর দাঁড়াতেই পারব না। কি লজ্জা! কি লজ্জা! উনি চাদর টেনে সরিয়ে ফেললেন। আমি এবার দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। উনি মৃদু হেসে হাত টেনে নিয়ে উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। বললেন–

— গিফট্ কেমন লেগেছে মিসেস?

দ্বিগুণ লজ্জায় হাঁসফাঁস করে উঠলাম। গিফট্ চাওয়াই ভুল হয়েছে আমার। এমন ভয়ংকর গিফটের কথা আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। মিনমিন করে বললাম–

— সরুন আপনি! অ’স’ভ্য লোক একটা।

আমার পরনে নিজের টি শার্টের দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললেন–

— আমি এতোই যখন অ’স’ভ্য তখন আমার জিনিস আমি খুলে নিচ্ছি। দাও।

চোখ বড় বড় করে তাকালাম। ঠোঁটের কোণে তার বাঁকা হাসি। এগিয়ে এসে টি শার্টে হাত দিতে নিলেই আমি মৃদু চেঁচিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা দিলাম। বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলাম। কি ব’দ লোক রে বাবা! ওয়াশ রুমের আয়নায় তাকাতেই চোখ কপালে উঠল! গলা, কাঁধ এবং বুকে লাল হয়ে আছে। পেটের মধ্যে সুড়সুড় করে উঠল। আবারও দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললাম। আমি যে একান্তই তাঁর, সেই সিলমোহর লাগিয়েছেন শরীর জুড়ে। শাওয়ার অন করতেই শরীরের কিছু অংশ জ্বলে উঠল। তার পাগলাটে ভালোবাসার ফল এটা। মুচকি হাসলাম। শাওয়ার শেষে দেখলাম কাপড় নিয়ে আসিনি। অসহায় হয়ে দরজা সামান্য খুলে উঁকি দিলাম। উদা’ম দেহে আধশোয়া হয়ে ফোন চালাচ্ছেন। গায়ে এখনও কিছু জড়াননি। গলা শুকিয়ে কাঠ! ঢোক গিলে বললাম–

— শুনছেন?

তিনি তাকালেন। ভ্রু নাচিয়ে বললেন–

— কি দরকার? কাপড়?

আমি মুখ ছোট করে মাথা দোলালাম। তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে শুয়ে বললেন–

— কি দরকার কাপড়ের? আমার টি শার্টে তো তোমাকে দারুণ লাগছিল। তোমার আরও একটা রুপ দেখে আমি বাকরুদ্ধ! কাপড় টাপড় দরকার নেই ওভাবেই থাকো।

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। লজ্জা শরমের মাথা খেলেন নাকি! কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম–

— প্লিজ একটা জামা দিন। আর কতক্ষন ভেজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকব? আমার ঠান্ডা লাগছে।

তিনি বুঝলেন যে আমার সত্যিই ঠান্ডা লাগছে। উঠে ওয়ারড্রব থেকে একটা সাদা রঙের জামা এনে দিলেন। এর আগে এটা আমি দেখিনি। অবাক কন্ঠে বললাম–

— কার জামা এটা?

তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন–

— তোমার জন্য এনেছিলাম গতকাল। দেওয়া হয়নি। তাছাড়া তোমার একটা সাদা জামা আমি নষ্ট করেছিলাম, ইচ্ছে করেই। এটা তার বদলে দিলাম। আমি ছাড়া সাদা জামা পরে তুমি টো টো করে বেড়াবে সেটা খুব বাধছিল আমার, তাই রং ঢেলে দিয়েছিলাম।

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম। ইচ্ছে করে! উনি আমার হতবাক হওয়ার সুযোগ নিলেন। বলিষ্ঠ হাতে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলেন। আমি ভড়কে পিছিয়ে দেওয়ালে লেগে গেলাম। উনি জামা রেখে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। এই অবস্থায় ওনার সামনে! প্রচন্ড লজ্জায় গাল গরম হলো, কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম–

— আ আপনি ঢ ঢুকলেন ক কেন? বের হন। আ আমি চেঞ্জ করব।

এগিয়ে এসে কোমর চেপে হেঁচকা টানলেন। আমার ঠাই হলো তার বুকে। কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বললেন–

— তোমাকে এই অবস্থায় ঠিক কতটা আবেদনময়ী লাগছে জানো? ভয়ংকর ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছি তোমাতে! এ কেমন মোহের জালে আটকালে আমায়?

শরীর অবশ হয়ে এলো। কথাগুলো কন্ঠ নালীতে জড়িয়ে গেল।‌ মনে হলো অন্য জগতে প্রবেশ করলাম। উনি এটারও সুযোগ নিলেন। সম্পূর্ণ ভাবে সুযোগের সৎ ব্যবহার করলেন। বিছানায় পিঠ ঠেকতেই হুঁশ ফিরল। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ঠোঁট নাড়িয়ে শুধু এইটুকুই বলতে পারলাম–

— বিছানা ভিজে যাচ্ছে!

___
পর পর দু’বার শাওয়ার নিয়ে আমার অবস্থা কাহিল। হাঁচির ওপর হাঁচি দিয়ে যাচ্ছি। এই যে এখন ডাইনিং টেবিলে বসে আমি এক নাগাড়ে হাঁচি দিচ্ছি। মামনি করুণ কন্ঠে বললেন–

— ঠান্ডা কীভাবে লাগালে ছায়া? দেখো দেখি! হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে!

লজ্জায় জড়সড় হয়ে বসলাম। মামনি কে কীভাবে বলি? যে তার সুপুত্রের জন্য আমার আজ এই অবস্থা! ব্যাটা ব’দ! তার কোনো হেলদোল নেই। তিনি নিজের মতোই খেয়ে চলেছেন। আমি নাক টেনে বললাম–

— ও কিছু না মামনি। সিজন চেঞ্জ হচ্ছে তো। তাই ঠান্ডা লেগেছে।

মামনি কথা বাড়ালেন না। তবে আমার ভেজা চুল তাঁর দৃষ্টি এড়ালো না। লজ্জায় হাঁসফাঁস করে দ্রুত খাবার গিলে রুমে চলে এলাম। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। কিছুক্ষণ পর বর্ণ রুমে আসলেন। এসেই ধপ করে শুয়ে পড়লেন। ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বললাম–

— আপনি শুয়ে পড়লেন যে! অফিসে যাবেন না?

তিনি চোখ বন্ধ করে বললেন–

— আজ ছুটি নিয়েছি। রেডি হও। আজ সারাদিন ঘুরব।

আনন্দে আটখানা হয়ে গেলাম। সত্যি বলতে তার সাথে খুব কম ঘোরাঘুরি হয়েছে আমার। ইচ্ছে হলো শাড়ি পরে ঘুরব। গদগদ হয়ে বললাম–

— শাড়ি পরিয়ে দিবেন? আর আপনি পাঞ্জাবি পরবেন? প্লিজ?

— বেশ! আজ তুমি যা বলবে তাই হবে। আজ দিনটা তোমায় দিলাম।

আমি ছুটে গিয়ে ব্লাউজ পেটিকোট পরে শাড়ি পেঁচিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি উঠে ঠিক ঠাক ভাবে পরিয়ে দিলেন। এক পর্যায়ে আমার গলার দিকে ইশারা করে ভ্রু নাচিয়ে বললেন–

— সব তো ঠিক আছে। কিন্তু এটার কি হবে?

মনে পড়ে গেল লালচে দাগের কথা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললাম–

— সব দোষ আপনার! এখন আমাকে এক গাদা ফাউন্ডেশন কনসিলার ঘষতে হবে। অ’স’ভ্য লোক!

উনি মৃদু হেসে পাঞ্জাবি বের করে পরে নিলেন। আমার পাশে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছেন। আয়নায় দুজনকে দেখলাম। আমার খয়েরী পাড়ের সাদা শাড়ি আর তার খয়েরী পাঞ্জাবি। বের হওয়ার সময় শাড়ির আঁচল সুন্দর করে মাথায় তুলে দিলেন, বললেন–

— এবার ঠিক আছে। একদম আমার বউ এর মতো লাগছে।

লাজুক হাসলাম। মামনি আমাদের দেখে চোখ কপালে তুলে বললেন–

— কি সুন্দর লাগছে তোদের দুটিকে! দোয়া করি আমার ছেলে মেয়ে দুটোর যেন কারোর নজর না লাগে।

মৃদু হেসে তাকে আলিঙ্গন করে বের হলাম। সারাটা দিন দু’জনে খুব ঘুরলাম। রিকশা করে অলি গলি চষে বেড়ালাম। আজ পুরো দিনটা আমার হওয়ার ইচ্ছে মতো রাস্তার খাবার খেলাম। উনি বারন করতে যেয়েও পারলেন না। কারণ আজ দিনের আমিই মালিক!
রাস্তার কয়েকজন লু’চি মেয়ে ওনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। আমি রেগে ফুঁসে উঠে বললাম–

— কত্ত বড় সাহস! আমার পার্সোনাল জামাইয়ের দিকে তাকায়! এই শুনুন?

তিনি ঠোঁট চেপে হেসে বললেন–

— বলো।

— আপনার পকেটে মাস্ক আছে?

— না তো। কেন?

আমি লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে বললাম–

— এক্ষুনি মাস্ক কিনতে হবে।

ওনাকে টেনে দোকান থেকে মাস্ক কিনে সেটা ওনার মুখে ঝুলিয়ে তবেই আমি ক্ষান্ত হলাম। বর্তমানে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে আছি। সূর্য ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করেছে। আঁধারে ছেয়ে যাচ্ছে চারপাশ। তিনি মিটিমিটি হেসে কানের কাছে ঝুঁকে বললেন–

— খুব জ্ব’লে?

মুখ থমথমে করে গম্ভীর কণ্ঠে বললাম–

— অবশ্যই জ্ব’লে। একশো বার জ্ব’লে। ইচ্ছে তো করছিল ওই মেয়েদের চোখ খুলে দান করে দেই। যে চোখ অন্যের জামাইকে গিলে খায় সে চোখ দান করে দেওয়ায় ভালো।

শব্দ করে হেসে উঠলেন। দু হাতে আগলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললেন–

— ওহো! আমার জেলাস বাচ্চা বউটা!

বুকে মাথা ঠেকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললাম–

— আপনার এই বাচ্চা বউটা আপনাকে খুব ভালোবাসে।

তিনি মাথায় পর পর কয়েকবার ঠোঁট ছুঁইয়ে তার সেই মিথ্যে কথাটি আওড়ালেন–

— আমি কিন্তু ভালোবাসি না।

মুচকি হাসলাম। তার বুকের মধ্যে ঢুকে যেতে চাইলাম। এই লোক জীবন দিয়ে ভালোবাসে, তবুও সে আজীবন মিথ্যে বলে যাবে। এই মানুষটাকেই আমি ভালোবাসি, বড্ড ভালোবাসি!

সমাপ্ত!
{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here