ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর পর্ব ৯

#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ

পর্ব-৯

কল্লোলের কাশি দেখে পুতুল দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।কল্লোল এক নিশ্বাসে সব পানি খেয়ে ভয়ে ভয়ে সূর্যের দিকে তাকায়।সূর্য তার দিকে তাকিয়ে এক টুকরো বিফ মুখে নিয়ে কচমচ করে চিবাচ্ছে। ভাবটা এমন বিফ নই সে কল্লোলকে চিবাচ্ছে।কল্লোল ভয়ে কয়েকটা ফাঁকা ঢোক গিলল।সেই মূহুর্তে পুতুল বলল,
-” ভাইয়া আর ইউ ওকে?”
কল্লোল মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে বলল,
-” ইয়াহ, আম ওকে।(সূর্যর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল) কিন্তু আর কতক্ষণ যে ওকে থাকতে পারবো উপর আল্লাহই জানে।”

কল্লোলের কথার মাঝেই সূর্য তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” তো পুতুল কী যেন বলছিলে, কল্লোলের বজ্জাত বিগ বস সম্পর্কে? ”
পুতুল হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-” ক্যাপ্টেন, ভাইয়ার যে বসটা আছে না সে নাকি খুবই খচ্চর।সব সময় ভাইয়াকে গাধার মতো ঘুরায়, আর ভাইয়াকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেই।”
সূর্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” আচ্ছা তাই নাকি?”
পুতুল আরো উৎসাহ নিয়ে বলল,
-” হ্যা তো, আমার সাথে কল্লোল ভাইয়ার যখন দেখা হলো তখনও তো বজ্জাত বসটা ভাইয়াকে কাজ চাপিয়ে দিয়ে নিজের গার্লফ্রেন্ডের কাছে গেছিল। তাইনা ভাইয়া?
পুতুলের কথায় কল্লোলের ফ্লোরে হাত-পা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।সে তো মজা করে সূর্যের কথা বলেছিল পুতুলকে, আর এখন সেটা বাঁশ হিসেবে তার ঘাড়ে চাপলো।কেন যে মেয়েটার সাথে দেখা হলো ভেবে মনে মনে হাজার বার আফসোস করছে কল্লোল।ঠিক তখনই সূর্য হেসে বলল,
-” কিরে কল্লোল তোর বসটা যে এতো খচ্চর আমাদের কে তো আগে জানাস নি।”
সূর্যের কথায় কল্লোল অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় যার অর্থ দোস্ত ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো ছেড়ে দে।
সূর্য সেদিকে না তাকিয়ে ফট করে উঠে দাড়ায়। তারপর কল্লোলের হাত ধরে বলল,
-” দোস্ত চল তো তোর সাথে আমার ভীষণ দরকারী কথা আছে।জাস্ট পাঁচ মিনিট।” সূর্যের কথা শুনে কল্লোল অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকায়।
তার তাকানো দেখেই রক্তিম, পিয়াস আর সামির মাথা নিচু করে ফটাফট খেতে শুরু করে। আর শ্রেয়া সে তো কল্লোলের দিকে তাকানো দূরে থাক, এমন গভীর মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে যেন একটু চোখ সরালেই খাবার গুলো পালাবে।সূর্যকে কিছু বলবে তার আগেই সূর্য তাকে টেনে ধরে নিয়ে যায়।

দুজনকে একসাথে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে পুতুল।সবার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
-” দুজন ওয়াশরুমে কেন গেল?”
শ্রেয়া একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে আবার মনযোগ দিয়ে খেতে খেতে বলল,
-” ওরা ওয়াশরুম ছাড়া জরুরি কথা বলতে পারে না।”
শ্রেয়ার কথায় পুতুল আরো অবাক হয়ে যায়।মনে মনে ভাবছে এই ইডিয়ট ক্যাপ্টেনটা দ্বারাই এরকম স্টুপিড কাজ করা সম্ভব।
সকলের খাওয়া শেষে সূর্য আর কল্লোলের দেখা পাওয়া যায়।ছোট বেলায় যেমন প্রাণের বন্ধুর কাঁধ ধরে স্কুলে যায় বাচ্চারা, ঠিক তেমন ভাবে সূর্য কল্লোলের কাধ ধরে টেবিলের কাছে আসে।কল্লোল বসতেই পুতুল মৃদু চিৎকার করে বলল,
-” ও মাই গড ভাইয়া, আপনার নাক এতো লাল হলো কি করে?”
উত্তরে কল্লোল জোর পূর্বক হেসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল,
-” আসলে কি বলোতো বেবিডল, সিরিয়াস কথা শুনলে আমার কান,নাক লাল হয়ে যায়।আর তোমার ক্যাপ্টেন ভীষণ সিরিয়াস কথা বলেছে তো তাই এই অবস্থা।”
কল্লোলের কথায় সকলে মিটিমিটি হাসছে আর পুতুল ভাবছে এরা সবাই মনে হয় এরকম অদ্ভুত, সিরিয়াস কথা বলতে ওয়াশরুমে যায় আবার সিরিয়াস কথা শুনে নাক, কান লাল হয়ে যায় কি অদ্ভুত ব্যাপার।

তারপর কল্লোল তার ওয়ালেট টা বের করে পেমেন্ট কার্ডে বিল রেখে দেয়।এটা দেখে পিয়াস, সামির আর রক্তিম হুহা করে হেসে উঠে। কল্লোল ওদের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় যার অর্থ মনে আছে তো আমি তোদের সিনিয়র। কল্লোলের তাকানোর অর্থ বুঝতে পেরে তিনজনই একসাথে হাসি বন্ধ করে দেয়।

___________________________________________

পুতুল তার বইপত্র গুলো সারা বিছানায় ছড়িয়ে, উবু হয়ে শুয়ে হাতের উপর থুতনি রেখে গভীর মনোযোগে ফিজিক্স বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার মনযোগ অন্য কোথাও, সে তো ভাবছে সূর্যের কথা।ইডিয়ট ক্যাপ্টেনটা তাকে সবসময় ধমক দিলেও বেশ কেয়ার করে।বাইরে গেলে সবসময় বাচ্চাদের মতো হাত ধরে রাখে।আবার আজ কি সুন্দর হেলমেট পড়িয়ে দিল, আবার আসার সময় সিট বেল্ট লাগিয়ে দিল।একদম অর্ক ভাইয়ার মতো তাকে আগলে রাখে।অর্কর কথা মনে হতেই পুতুল দ্রুত ফোন টা নিয়ে কল লাগাই অর্কর ফোনে।

অর্ক সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই তার ফোন টা চিৎকার করে উঠে।বিরক্তি নিয়ে ফোন টা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ‘পুতুলসোনা’ নামটা দেখেই হাসি ফুটে ওঠে মুখে।ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই পুতুল মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠে,
-” এই অক্কো ভাইয়া, আমি তোমার উপর রেগে আছি ভীষণ রেগে আছি।”
পুতুলের ডাক শুনেই হেসে ওঠে অর্ক।ছোট থাকতে পুতুল অর্কর নাম উচ্চারণ করতে পারতো না অক্কো ভাইয়া বলতো।বড় হয়েও কখনো সে শুদ্ধ করে ডাকে না।অবশ্য অর্কর তার পুতুলসোনার মুখে এই ডাকটা শুনতেই ভালো লাগে। অর্ক চিন্তার ভঙ্গি করে বলল,
-” কেন, কেন আমার পুতুল কেন রাগ করেছে?”
পুতুল অভিমানী সুরে বললো,
-” তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো,একটু ফোনও দাও না। আমি চলে আসাতে তোমার খুব ভালো হয়েছে তাইনা।এখন তো আর আমাকে রোজ কলেজ দিয়ে আসতে হচ্ছে না নিয়েও আসতে হচ্ছে না আবার ঘুরতে নিয়ে যেতে হচ্ছে না। তাই অনেক মজাই আছো তাইনা।”

পুতুলের কথায় অর্কর বুকটা ধুক করে উঠে।সে তো তার পুতুলসোনাকে ছাড়া একদম ভালো নেই।ষোল টা বছর সে তো তার ছোট পুতুল বউ টাকে আগলে রেখেছিল, সে দূরে যাওয়ায় তার বুকটা যে কতটা ফাঁকা হয়ে গেছে সে তো তার বোকা পুতুলসোনা বুঝবে না।কবে যে তার পুতুলসোনা টা বড় হবে আর তাকে একদম পুতুল বউ করে নিবে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল অর্ক।
-” হ্যালো,অক্কো ভাইয়া শুনতে পাচ্ছো।” শুনতেই অর্কর ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে।হেসে বলল,
-” হুম মজা তো হচ্ছেই, এখন মা,খালামনি সবার আদর তো আমি একা পাচ্ছি। মজা তো হবেই।”
-” ঠিক আছে থাকো তুমি আদর নিয়ে, থাকো।আমি আর কখনো ফোন দিব না।” বলতেই অর্ক হেসে উঠে বললো,
-” আচ্ছা আচ্ছা সরি, এখন একটু ভিডিও কলে আই তো দেখি আমার পুতুলের নাকটা ফুলে লাল হয়ে গেছে কিনা।”অর্কের কথায় পুতুল আরো রেগে চেচিয়ে বললো,
-” ভাইয়া ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
-” আচ্ছা সরি সরি আর কিছু বলছি না তুই ফোন রাখ আমি কল দিচ্ছি।” বলে অর্ক কলটা কেটে পুতুলকে ভিডিও কল দেয়।

সূর্য অনেকক্ষণ হলো প্রিয়ন্তিকা জামান আইডিতে ঘুরছে।কিন্তু সে দাঁতে নিচের ঠোঁট চেপে ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। কান আর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে আর মাঝে মাঝে নাকটা ফুলিয়ে তুলছে।এবার সে জোরে মোবাইল টা বেডের কোণায় ছুড়ে ফেলে উঠে দাড়ায়।কিছুক্ষণ রুমের ভেতর ফোঁসফোঁস করে এদিক ওদিক হাটলো তারপর আবার ফোনটা তুলে ট্যাগ করা আইডিতে ঢু মারে।আইডির নাম অভিক আহমেদ, প্রোফাইল পিকচারে পুতুল আর ছেলেটার হাস্যজ্বল কেনডিড ফটো যেখানে পুতুল হেসে ছেলেটার মুখে আইসক্রিম লাগাচ্ছে।পুরে টাইম লাইনে শুধু পুতুল আর ছেলেটার ফটো অবশ্য মাঝে মাঝে ছোট মায়ের সাথেও দেখা যাচ্ছে।

ফোন হাতে আরো কিছুক্ষণ রেগে পায়চারি করলো।তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত বারোটা বাজে প্রায়।কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে আবার দাড়িয়ে যায় সূর্য। পুতুল কি এতো রাতে জেগে থাকবে, ঘুমিয়ে গেছে মনে হয়।পরক্ষণেই মনে হলো, ঘুমবে মানে! কিসের ঘুম! আমার ঘুম উড়িয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমবে হতেই পারে না।আগে আমাকে বলতে হবে কে এই অভিক না ডভিক!

চলবে

কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন। হ্যাপি রিডিং 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here