জলছবি পর্ব ২২+২৩

#জলছবি
#পার্ট_২২
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
শ্রেয়া, নিষাদ, সৃজন তিনজন ক্যাম্পাসে নিজেদের ভবনের সামনে বসে রইলো। শ্রেয়া রাহাতের সাথে নিচু স্বরে কথা বলছিল। নিষাদ নিশিতার সঙ্গে চ্যাটিং এ ব্যস্ত।
হঠাৎ-ই ফুঁসে উঠে বলল,
“ধুর ছাতারমাথা! কি করিস তোরা? এইখানে প্রেম-ট্রেম করার জন্য আসছিস? আমি অনাথের মতো বসে আছি চোখে দেখস না? ভালোয় ভালোয় পিরিতের আলাপ থামা কইলাম। নইলে সামনের থেইকা সর দুইটায়।”
সৃজনের হুংকারে শ্রেয়া প্রায় সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়ে অসহায়ের মতো করে চায়। অতি অল্পে ভয়ে ডুবে যাওয়াটাই মেয়েটার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নিষাদ নিজের কর্মকান্ডে পরিবর্তন না এনে, আগের মতো থেকেই বলে,
“কেন মনা? তোমার ইনা, মিনা, টিনারা বুঝি পাত্তা দিচ্ছে না? অবশ্য একসাথে এত লাইন মারলে কি আর পাত্তা পাওয়া যায়?”
সৃজন প্রতিবাদ করার আগেই লুবনা এসে উপস্থিত হলো। শ্রেয়ার পাশে বসতে বসতে বলল,
“ফয়সাল আসে নাই?”
সৃজন তার বিগড়ে থাকা মেজাজের ঝাজ মেটাতেই অমিষ্ট কন্ঠে বলে,
“আইছে আরেকজন ফয়সাইল্লারে খুঁজতে! ক্যান ভাই? আমাদের চোখে পড়ে না?”
ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল দৃষ্টিতে সবার দিকে একবার একবার চাইল। তারপর বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“কিরে ভাই? এই পাগলের আবার কী হইলো? এমন করে ক্যা?”
নিষাদ চোখ দু’খানা ফোনে আবদ্ধ রেখেই বলে,
“কারন তাকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। মনে দুঃখে পাগল হয়ে গিয়েছে বেচারা!” চোখমুখ জুড়ে মিটিমিটি হাসি। বন্ধুকে রাগাতে পারা যেন বড় আনন্দের বিষয়।
সৃজন ক্ষেপে গিয়ে, অনেকটা হুশিয়ার দেয়াএ মতো করে বলে,
“দেখ নিষাদ? বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু….!”

“চিল ব্রো! ওদের কথা কানে নিচ্ছিস কেন? জানিস না? ভালো ছেলেদের কেউ পাত্তা দেয় না!”
সৃজনের কাঁধে হাত রেখে কথাটা বলতে বলতেই সৃজনের পাশে বসে ফয়সাল। কৃষ্ণবর্ণ মুখটা হাসিতে চকচক করছে তখন।
লুবনা ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বলে,
“তুই কোন দলে? পাত্তা পাওয়ার নাকি না পাওয়ার।”
ফয়সাল শার্টের কলার উঁচিয়ে বলে,
“ডেফিনেটলি আমি যেহেতু ভালো মানুষ সেহেতু পাত্তা না পাওয়ার দলেই। তাই তো সৃজুর দুক্কু-টুক্কু বুঝি।”
“ওহ! রিয়েলি? তো কয়জনের সাথে ফ্লার্টিং করেছেন আর কয়জন পাত্তা দেয়নি শুনি?” লুবনার প্রশ্ন।
ফয়সাল ছন্নছাড়া ভাব নিয়ে বলে,
“কতজনই তো আছে। গুনে রাখছি নাকি?”
রাগে শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। কিছু বলবে তার আগেই ফয়সাল দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে একটু দূরের কাউকে ডাকে,
“এই দিয়া?”
সদ্য আঠারো পেরোনো ভীষণ স্মার্ট একটা মেয়ে। কারো মুখে নিজের নাম শুনে দাঁড়াল। প্রথমে চমকালেও ফয়সালকে দেখে স্বস্তি পেলো। র‍্যাগিং-ফ্যাগিং এর ভয় পেয়েছিল হয়তো।
ফয়সাল কাছে এসে বলে,
“কেমন আছ তুমি?”
“ভালো আছি। আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌। তো, এই কলেজে এডমিশন নিলা নাকি?”
“জ্বী ফিজিক্সে।”
ফয়সায় ভয় পাওয়ার মতো করে বলে,
“ওরে বাবা! ফিজিক্স!”
মেয়েটা মৃদু হাসে।
দূর থেকে দুজনকে বেশ হেসেখেলে কথা বলতে দেখে সামান্য হিংসে অনুভব করল লুবনা। তড়িত গতিতে এগিয়ে এসে বলল,
“ফার্স্ট ইয়ার? যাও ক্লাসে যাও। এখানে কিসের কথা? যাও যাও।”
দিয়া প্রথমে বুঝে উঠে পারেনি। যখন বুঝলো তখন কেবল একবার অসহায় দৃষ্টিতে ফয়সালের দিকে চাইল। ফয়সাল লুবনাকে বলে,
“আশ্চর্য! চলে যেতে বলছিস কেন? কথা বলছি দেখছিস না?”
লুবনা ফয়সালের কথা কোনোরূপ পাত্তা না দিয়ে পুনরায় মেয়ে টাকে বলল,
“কি হলো? যাচ্ছ না যে?”
মেয়েটা একটু কাঁচুমাচু করে চলে গেল।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লুবনা অগ্নিদৃষ্টিতে ফয়সালের দিকে চায়। ফয়সাল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
“আজব তো! এমনে তাকাস ক্যান?”
লুবনা একটু ঝুকে এসে বলে,
“নেক্সট টাইম শুধু তাকাব না। জাস্ট চোখ দুটো গেলে দিবো!”
বলেই বাকিদের দিকে চায়। ফয়সাল নিচের চোখে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“কি সাংঘাতিক কথাবার্তা!”
তারপর কি মনে হতেই হাঁক ছেড়ে জিজ্ঞেস করে,
“এই নোলক আসে নাই এখনও? কথা ছিলো ওর সাথে!”
.

রেস্টরন্টের কৃত্রিম আলোর ঝলকানির এক অংশ এসে পরে নোলকের মিষ্টি মুখটাতে। তার মন জুড়ে অস্থিরতা। কেন ডেকেছে তিনি? নোলকের কাছে কি তার? ওর খোঁজ-ই-বা কি করে পেলো?
হাতের ঘড়িটাতে একবার চোখ বুলিয়ে উঁকি মেরে দেখল, এলো কি-না! না আসেনি।
সেদিন হোস্টেলে আদ্রর বইটা ফেরত দিতে গিয়ে, এক পলক দেখেছিল কেবল। যদিও খুব ভালো মনে নেই মুখটা তবে দেখলে চিনতে পারবে। নোলক রেস্টরন্টের অন্য লোকদের দিকে চোখ বুলাচ্ছিল ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা কমল কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,
“তুমি নোলক?”
নোলক হকচকিয়ে তাকায়। সিল্কের হালকা কুরুকাজ করা শাড়ি পরিহিত স্নিগ্ধ এক রমনী। মুগ্ধ হওয়ার মতো স্নিগ্ধতা সারা মুখজুরে। নোলক সায় জানিয়ে বলে,
“জ্বী। নোলক আমি।”
মেয়েটা মিষ্টি করে হাসে। নোলকের সামনাসামনি বসে। নোলকের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি আমার ছোটই হবে, তাই তুমি করে বলছি। কিছু মনে করো না। আমি আরশি। তুমি চিনবে না সম্ভবত।”
“অসুবিধে নেই। তবে আমি ‘আপনায় চিনি না’ কথাটি পুরোপুরি ঠিক না। আমি আপনায় একটু চিনি।”
আরশি ভ্রুকুটি করে চাইলো। অবাক হওয়ার মতো মুখ করে জানতে চাইলো,
“চিনো? আদ্র বলেছে?”
“না। তিনি বলেননি।”
“আদ্র বলেনি? কখনো কিছুই বলেনি আমায় নিয়ে?”
নোলকের মন ক্রমশ আহত হতে আরম্ভ করেছে। সে মুখে বিষন্ন হাসি এঁকে বলে,
“না বলেনি, এবং না বলাটাই স্বাভাবিক। তার সঙ্গে আমার তেমন বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই, যার যের ধরে সে তার ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করতে পারে। বোধকরি আপনি তার জীবনের ব্যক্তিগত কেউ। যার ব্যাপারে সে যাকে-তাকে বলে বেড়াবে না। তাই নয় কি?”

আরশির মুখের লেগে থাকা হাসি মিলিয়ে যায় এবার। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। খানিক বাদে বুক ভরে শ্বাঃস নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
“ব্যক্তিগত কেউ? হ্যাঁ, ছিলাম হয়তো!”
এবার নোলকের অবাক হওয়ার পালা। জিজ্ঞেস করে,
“ছিলেন? আর এখন?”
আরশি হাসে। ব্যার্থতা মিশ্রিত হাসি। বলে,
“এখন কেউ নই।আমি তার। দু’বছর আগ অব্দি হয়তো ছিলাম কেউ একজন। একটা শান্তশিষ্ট ছেলের খুব কাছের কেউ।”
নোলকের কপালের ভাঁজ আরো বিস্তৃত হয়। চোখেমুখে প্রশ্ন খেলে। আরশি নিজ থেকে বলতে শুরু করে,
“আমাদের ডিপার্টমেন্ট একই ছিল। সেই সুবাদেই ওকে অনেকটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল, সখ্যতা গড়ে তোলার শুযোগ পেয়েছিলাম। ওর সবার থেকে ব্যাতিক্রমী স্বভাব। গুরুগম্ভীর ভাবটা আমায় খুব টানতে থাকে। ইশান আর দ্বীপ ছাড়া কারো সাথে খুব একটা কথা বলতেও দেখতাম না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কেবল জবাব দিত, টুকটাক কথা বলতো। যেন ওর কথা বলার পরিধি খুব কম! আমি লক্ষ্য করতাম সব। নোটিস করতে করতে একসময় মুগ্ধ হতে শুরু করি। আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই আগ বাড়িয়ে। বিভিন্ন নোট’স, সাজেশন ওর কাছ থেকে নিতে থাকি। আদ্রও কিন্তু খুব একটা বিরক্ত হতো না। কাছে যেতে বাঁধা দিতো না। যত সময় আগালো ততো ক্লোজ হলাম। ভালো বন্ধু অতঃপর কাছের কেউ একজন। বুঝতেই পারছ? ওর মতো ইনট্রোভার্ট একটা ছেলে কখনই মন খুলে মনের কথা বলবে না। আমিই বলেছিলাম। সে বলেছিল ‘ফ্যাসিনেইশন’। আমি জোর দিয়ে বলেছিলাম, ‘নো, দিস ইজ নট ফ্যাসিনেইশন!’
এর ঠিক এক বছর পরই তার উপর থেকে মুগ্ধতা হারিয়ে অন্যকেউতে আকৃষ্ট হলাম। তখন আদ্রর কম জোরে বলা কথাটাই সঠিক বলে প্রমাণ হলো। ওর যেই স্বভাবটা আমায় আকৃষ্ট করছিলো, যেই জিনিস গুলোতে মুগ্ধ ছিলাম সেই জিনিস গুলো বিরক্ত লাগতে আরম্ভ করলো। মনে হতে লাগলো যাকে নিয়ে আমি পসেসিভ সে আমায় নিয়ে উদাসীন! এর আগে কিন্তু মনে হয়নি এসব, বরং ও এমন বলেই ভালো লেগেছিল। কিন্তু এরপর থেকে ওর এই স্বভাবই আমার অসহ্য লাগতে শুরু হলো, অসহ্য লাগতো আদ্রকে। কারন ততদিনে ওর উপর আমার মুগ্ধতা কাটতে আরম্ভ করেছিলো। উল্টো মুগ্ধতাগুলো তিক্ততায় পরিনত হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল ওকে আমার ছেড়ে দেয়া উচিত। করলামও তাই। ছেড়ে দিলাম। ছেড়ে চলে এলাম। যেদিন তার কাছে নিজ থেকে গিয়েছিলাম সেদিনও বাঁধা দেয়নি যখন ছেড়ে চলে এলাম সেদিনও! ছেলেটা এমনই। কোনো কিছু নিয়েই তেমন রা-শব্দ করে না, মনে রাখে। এই মানুষগুলোর দুঃখের তেজ এত প্রখর হয় নোলক! তুমি কল্পনাও করতে পারবে না! চলে আসার সময় আদ্র’র সেই অদ্ভুত হাসির দুঃখ তখন বুঝিনি, এখন বুঝি।”

এতটুকু বলে থামল আরশি। নোলকের কানে প্রতিটা শব্দ বিস্ফরণের মতো ফুটতে লাগলো। সামনে বসা অসম্ভব রূপবতী মেয়েটার প্রতি ভয়ানক রাগ হচ্ছে। কি আশ্চর্য, রাগ কেন হচ্ছে?
আরশি একটু দম নিয়ে আপন মনে বলতে লাগলো,
“বিয়ে করে নিলাম সেই ছেলেটাকে, যার প্রতি মুগ্ধতা তৈরি হওয়ার পর আদ্রর প্রতি মুগ্ধতা কেটে গিয়েছিলো। সে এখন আমার হাজবেন্ড। তাকে আমি সত্যিকার অর্থে ভালোবাসি। এই দুই বছরে তার শত অবহেলার পরও তাকে ছেড়ে আসতে পারি না, কারণ সে আমার ফ্যাসিনেইশন না। চাইলেই ছাড়া যায়া না, মায়ায় জড়ানো মানুষগুলোকে। আমার কি মনেহয় জানো? আদ্রকে করা সেই দুঃখের শাস্তি স্বরূপ আমার সুখ নেই। যার প্রতি মায়ায় জড়িয়ে আদ্রকে ছেড়ে এসেছি সে আমায় প্রতিনিয়ত হেয় করে বেড়ায়। ক্ষেত্র বিশেষে কাছে আসে। বোধহয় আমার প্রতিও তার মোহ কেটে গিয়েছে।”
আরশি একটু থেমে বলে,
“আমি জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন, তোমায় কেন এসব বলছি? আদ্রর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ-ই-বা কেন করছি? তোমাকে জানলাম কি করে? সব বলবো সব। মনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পাড়ছি না। ঘুমাতে পারি না শান্তিমতো। শুধু অপরাধবোধ তাড়া করে বেড়ায়।”……..(চলবে)
#জলছবি
#পার্ট_২৩
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
কৃত্রিম আলোময় রেস্টরন্টে তাদের টেবিলটায় কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো। ওয়েটার এসে কোল্ডড্রিংস দিয়ে গেলো। নোলক পুরো সময়টাতেই নির্লিপ্ত। আরশি কৃত্রিম হেসে আবার বলতে শুরু করল,
“আমি গত কয়েকমাস যাবত আদ্রর খোঁজখবর নিচ্ছি। ছেলেটা আসলে কেমন আছে তা জানার বেকুলতায় বলতে পারো।
ছেলেটা আসলে খুব একা। ঐ এক ইশান ছাড়া ওর কাছের কেউ নেই। মা-বাবা থেকেও না থাকার মতো। আমি ওর জীবনে যাওয়ার পর কিছুটা হয়তো ভরসা পেয়েছিল। সেই আমিটাও চলে এলাম আরো বেশি একাকীত্ব বাড়িয়ে দিয়ে। মানুষ অনেক স্বার্থপর, বুঝলে? শুধু নিজের সুখের ভাবনাতেই মত্ত থাকে। আমিও বোধহয় সেই স্বার্থপরদের একজন। বোধহয় বলছি কেন? এটাই তো সত্য!
আমি আমার অনুতাপ কমাতেই বারংবার আদ্রকে ফোন দিয়ে স্যরি বলতে থাকি। কারণ সবসময় মনে হতে থাকে আদ্ররে মনজুড়ে যেদিন শান্তি আসবে সেদিন আমার জীবনেও শান্তি আসবে।”
সামনে রাখা কোল্ডড্রিংসে এক চুমুক দিয়ে একটু জিরাল আরশি। দৃষ্টি নোলকের দিক থেকে সরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বলতে লাগলো,
“ইশানের থেকে শুনেছিলাম ওরা দ্বীপের বাসায় যাবে ওর বোনের বিয়ে উপলক্ষে। ইশানের থেকেই মোস্ট অব দ্যা টাইম আমি আদ্র’র খোঁজখবর নিয়ে থাকি। এতো অপ্রিয় মানুষ জনের মাঝে ঐ একটা ছেলেই এখন অব্দি সত্যিকারে প্রিয় হিসেবে টিকে আছে।
যদিও নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে চিট করার ফলে অনেক কঠিন কথা ইশানও শুনিয়েছে আমাকে। তবুও আমি একটুখানিও দুঃখ পাইনি, জানো? কথাগুলো তো আমার প্রাপ্য।
সে যাই হোক, ওদের একটু মাইন্ডফ্রেশ হবে ভেবে মনে মনে খুশি-ই হলাম। কিন্তু আদ্র ফেরত আসার পর ওর সঙ্গে তোমার মেলামেশা আমার চোখে বাজলো। পরে তোমাদের ব্যাপারে সব খোঁজখবর নিয়ে জানতে পাড়লাম, তুমি শ্রীতমার ফ্রেন্ড। তোমার খুঁটিনাটি খুনশুটি সবটাই জানলাম।
জানলাম, প্রথমে তোমাদের সাপেনেউলে সম্পর্কের কথা। সাপেনেউলে হোক কিংবা যেমনি হোক আমি ব্যাতিত কিন্তু ওর জীবনে এর আগে আর কোনো নারী সঙ্গ কিন্তু ছিল না। হওয়ার সুযোগই পায়নি, হবে কি করে? বেশির ভাগ মেয়েদের কাছেই ওর এই গুরুগম্ভীর স্বভাবটা অপছন্দের ছিল। তাদের ভাষ্যমতে, ছেলে মানুষের আবার এত ভাব কিসে? ওরা তো জানতো না, ওর এই স্বভাবটার পেছনে দীর্ঘকালীন একাকীত্বের বড়সড় দায়ভার রয়েছে। আমি নিজে থেকে ওর কাছে না গেলে হয়তো আমিও ওর সেই সঙ্গটা পেতাম না!
বহুদিনপর আবারও আমার মতোই চট করে এলে তুমি ওর জীবনে! যাকে আমি বহুদিন হাসতে দেখিনি, সে তোমার সংস্পর্শে এসে মন খুলে হাসতে শিখলো পুনরায়। প্রথম যেদিন আমি এই দৃশ্য দেখেছিলাম সেদিন আমার যেমন ভালো লেগেছিলো তেমনি একটু হিংসেও লেগেছিলো।”
বলেই হাসলো আরশি। তারপর বলল,
“নিশ্চই ভাবছো হিংসে কেন হয়েছিল? কোনো কারণ নেই, অযথাই। ভেব না আদ্র’র প্রতি আমার পুরোনো মুগ্ধতা জেগে উঠেছে বলে এমন লেগেছে। তেমন কিন্তু কিছু নয়। মানুষের সহজাত বৈশিষ্ঠের মধ্যে একটি হলো, যে জিনিস একবার তার ছিলো, সে জিনিস অন্যকারো দখলদারিত্বে চলে গেলে সামান্য হিংসে অনুভব করে। আমিও তাই করেছিলাম। এর বেশি কিছু নয়।
এবার শেষ কথাটায় আসি। তোমায় এত কিছু বলার কারণ! হ্যাঁ, কারণ একটা অবশ্য আছে। সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছে আদ্ররে প্রতি তোমার খানিক মুগ্ধতা আছে। আই মিন তৈরি হচ্ছে। যেহেতু আদ্রও অযথা কোনো মেয়েকে নিজের সংস্পর্শে আসতে দেয়না, সেহেতু তোমার প্রতিও যে ওর অল্প হলেও টান আছে তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। অন্ততপক্ষে আমার তাই মনে হচ্ছে। হয়তো আমি ভুল, হয়তো নয়। কিন্তু এই হওয়া, না হওয়া সম্ভাবনাটা বাস্তবে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই কিছু কথা তোমায় বলে রাখা আমার উচিত বলে মনে হয়েছে। আমি বলছি না তোমাদের মাঝে বিশেষ কিছু আছে, ইনফ্যাক্ট আমি জানিও তোমাদের মাঝে বিশেষ কোনো বন্ধন নেই। সে কারণেই বলতে চাই, আদ্রকে সত্যিকার অর্থে ভালো বেসে না থাকলে, তোমার প্রতি ওর মায়া বাড়িও না। সত্যি বলছি, ছেলেটা তবে মরেই যাবে নোলক।
যাদের প্রিয় মানুষের সংখ্যা খুব কম, তারা প্রিয় মানুষ হারানোর ভয় পায় বলে সংখ্যা বাড়াতে পারে না। ঐ অল্পসংখ্যক মানুষদেরকেই নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসে আগলে রাখে। হয়তো সবসময় নিজের ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে পারে না, কিংবা চায়না। কিন্তু তাদের মতো করে ভালো কেউ বাসতে পারে না, ট্রাস্ট মি!
তুমি আর আদ্র দুটি ভিন্ন স্বভাবের মানুষ। দুদিন পর ওর উপর তোমার বিরক্তি চলে আসবে না তো? ঠিক আমার মতোই মাঝপথে ছেড়ে আসবে না তো?”
নোলক কিছু বলে না। বলতে পারে না। আসলেই তো! আদ্র’র প্রতি শুধুই যে ওর ভালোলাগা কিংবা মোহ নয়, তার কি নিশ্চয়তা? পরক্ষণেই ভাবে, ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসার জন্ম।
নোলককে চুপ থাকতে দেখে আরশি তার নরম হাত দু’খানা নোলকের বাচ্চাবাচ্চা দেখতে হাতদুটোর উপর রাখে। তারপর খুব সুন্দর করে বলে,
“আমি কিন্তু তোমার অনুভূতিতে আঘাত করছি না। শুধু অনুরোধ করছি, যা করবে একটু ভেবে করবে প্লিজ।
মুখ ফুটে মনের কথা বলতে না পারা ছেলেটার মনের দুঃখ আর বাড়িয়ে দিও না। বারবার অনুভূতিতেই আঘাত পেতে থাকলে ছেলেটা অনুভূতি শুন্য হয়ে যাবে।
তুমি খুব মিষ্টি, চঞ্চল একটা মেয়ে। এই দূরন্তপনায় ভরপুর মানুষগুলো চারপাশের মানুষগুলোকে ভালো রাখার প্রবল ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। চারপাশের সব কিছু প্রাণবন্ত করে দিতে পারে এক নিমিষে। আমার বিশ্বাস তুমিও তেমন-ই একজন।”
এটুকু বলে আরশি উঠে দাঁড়ায়। তৃপ্তির কন্ঠে বলে,
“আজ অনেকটা হালকা লাগছে। অনুতাপ বোধের থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ বোধহয় পেতে চলেছি। ভালো থেকো, ভালোবেসে আগলে রেখো ভালোবাসার মানুষটাকে। আসি তবে!”

আরশি চলে যায়। নোলক সেদিকে চেয়ে থাকে। নোলকের মন ভারি হয়ে আসে। তার সারা মনজুড়ে দ্বিধা। কি অদ্ভুত অনুভূতি। মস্তিষ্কজুড়ে কতশত প্রশ্ন ঘুরে বেড়াতে লাগলো অনায়াসে। প্রশ্নবিদ্ধ হতে লাগলো নিজের সুপ্ত অনুভূতি।
.
এরপর কেটে গেলো দশদিন।
ইশান তৈরি হচ্ছিল কোথাও বের হবে বলে। রুমের দেয়ালের সাথে সেট করা মাঝারি ধরনের একটা আয়নায় খানিক নিচু হয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে গোছ করছে।
আদ্র ডেকে বলল,
“এই ইশু? আমার চশমাটা দেখেছিস?”
“তোর দুইটা আধ-কানা চোখ ছাড়া, বেচারা চশমাকে তো আর কোথাও দেখি না।”
আদ্রর দিকে না তাকিয়েই খানিক হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতেই কথাটা বলল ইশান। মুখ জুড়ে হাস্যজ্জ্বল ভাব।
“একটু খুঁজে দে দোস্ত, পাচ্ছি না।”

আদ্র’র কন্ঠে দুর্বলতা স্পষ্ট। নিজের চুলে হাতের আঁচড়ে বাহারি নকশা করা বন্ধ করে এবার ইশান আদ্র’র দিকে চাইলো। আদ্রকে মাথায় হাত রেখে বসে থাকতে দেখে কাছে এলো। এবং কাছে আসতেই টেবিলের উপরে চশমাটা দেখলো। চমশাটা নিয়ে আদ্র’র পাশে বসলো। তারপর আদ্র’র চশমা আদ্র’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“তোর পাশেই তো চশমা। এতো কাছে থেকেও দেখিস না?”
আদ্র কিছুই বলল না। চোখে চমশাটা পরে ইশানের দিকে চাইলো। একটু ঝাপসা দেখার ফলে চশমাটা খুলে নিয়ে পরিষ্কার করে আবার পড়লো।

ইশান কিঞ্চিৎ চমকানোর মতো করে বলে,
“এই? চোখ লাল কেন? দেখি দেখি?”
“লাল? অ্যালার্জি হবে হয়তো। দেখতে হবে না। ঠিক হয়ে যাবে।”
“দোস্ত তোর কি শরীর খারাপ? দূর্বল দেখাচ্ছে।”
আদ্র মৃদু হেসে বলে,
“নাহ। কই যাচ্ছিলি, যা।”
“আচ্ছা আজ তো পারছি না। তবে কাল হসপিটাল যাবো। তুই খুব বেশি কেয়ারলেস আদ্র। মানুষ বলে ইন্ট্রোভার্ট ছেলেগুলো খুব যত্নশীল হয়। তুই এত অযত্নশীল কেন? এক্সট্রোভার্ট হয়ে আমিও তো এতটা অযত্নশীল নই। আমি কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করছি তোর মাথা আর চোখে বেশ প্রেসার দিচ্ছিস। আই থিংক মাইগ্রেনের খুব উৎপাত বেড়েছে। দুই-তিনদিন দেখেছি রাতে উঠে বসে থাকিস! আমারও ভুল এতদিন ডাক্তারের কাছে না যাওয়া। শেষ কবে চোখের ডক্টর দেখিয়েছিস বল তো? নোলককে তো খুব ইমম্যাচিউর ইমম্যাচিউর বলতে থাকিস। তুই কতুটুকু ম্যাচিউর বল তো? কালই ডক্টরের কাছে যাবো। নো হাংকি-পাংকি ওকে?”
ইশানের বলার ভঙ্গিতে যন্ত্রনা নিয়েও আদ্র হেসে ফেলল। বলল,
“শাসাচ্ছিস?”
“তা মনে হলে তাই।”
আদ্র মুখে, ঠোঁটে, চোখে তখনও হাসি লেগে রইলো। তবে কিছু বলল না। কারন এই ছেলেটার প্রভাব তার জীবনে অনেক। ওর কোনো কাজে খুব একটা বাঁধা দেয় না। বাঁধা দিলেও অবশ্য বিশেষ লাভ হয় না। কখনো কখনো তো মনেহয়, আদ্র নিজেকে যতটুকু বুঝে, ইশান তার থেকেও বেশি ওকে বুঝে।

ইশান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
“বুঝলি? আজ প্রথমে বোনের জন্য কিছু টাকা পাঠাবো। তারপর একটা কাজে যাবো। কি কাজ, বলা যাবে না। টপ সিক্রেট।”
“আচ্ছা যা।”
ইশান উঠে দাঁড়ায়। শান্ত স্বরে বলে,
“শুধু একটা কথা বলি, তুই আমার জন্য যতটুকু বিসর্জন দিতে পারবি, তার থেকে বেশি বিসর্জন তোর জন্য আমি দিতে পারবো। তুই আমার বন্ধু, তুই আমার ভাই। তোর থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট আমার কাছে কিছু না, কেউ না।”
আদ্র উঠে দাঁড়ায়। ইশানকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তোর মতো করে ভালো কেউ বাসতে পারেনা দোস্ত। তুই ছাড়া আমার এত আপন আর কেউ নাই। তুই ছাড়া আমার সব কিছু অন্ধকার। আই লাভ ইউ মোর এন্ড মোর।”

সুখানুভূতিতে সারা মন জুড়িয়ে যায় দুজনের। এমন ঈর্ষান্বিত হওয়ার মতো সুন্দর মজবুত বন্ধুত্ব দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে, সুখানুভূতি অনুভব করবে।
ইশান চলে যাওয়ার পর আদ্র রুমের বাতি নিভিয়ে দিলো। চোখের চশমা খুলে পাশে রাখলো। মাথাটা আজকাল খুব জ্বালাচ্ছে, সঙ্গে চোখ। ইচ্ছে করে চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। আর চোখ দুটো? চোখ দুটোকে একেবারে নিষ্প্রয়োজন বোধ হয়। একটু দূরের জিনিস বুঝতে হলে খুব পরিশ্রম করতে হচ্ছে আজকাল।
.

“হ্যালো নোলক?”
“হুম।”
“একটা কথা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
“বলুন।”
“অন্ধকার বেশি সুন্দর নাকি আলো?”
নোলক ফোন কানে নিয়েই দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়।। ঠিক দশদিন পর আদ্র’র কন্ঠ শুনতে পেলো। নিজের মন পরিক্ষার জন্যই সে এই কয়েকদিন আদ্রর থেকে দূরে দূরে রইলো। অবশ্য ঠিক দূরে ছিলো তাও বলা যায় না। পথের দূরত্ব তো আসল দূরত্ব নয়, যতক্ষণ না মনের দূরত্ব বাড়ে। নিচের দিকে চেয়ে পায়ের নখ দিয়ে মেঝেতে আঁচড় কাটতে কাটতে বলে,
“আপনাকে আমি অন্ধকারে বেশি অনুভব করি লেখক সাহেব।”
আদ্র এক কান থেকে ফোন অন্য কানে নেয়। শোয়া থেকে উঠে বসে। শরীরটাকে মৃদু কাঁপিয়ে হেসে বলে,
“হা হা! ভূত হিসেবে? কামড়ানো ভূত?”
নোলক বলে,
“যাহ! তা কখন বললাম?”
আদ্র’র মুখের হাসি, শরীর দুলানো হাসি হঠাৎ-ই মিলিয়ে গেল। কেমন করে যেন বলল,
“অন্ধকারের অনেক তেজ নোলক। ঠিক আপনার মতো। আজকাল অদ্ভুত এক ভাবনা আসছে। অন্ধকারে হারিয়ে যেতে মন চায়। অনর্থক ইচ্ছে।”
“আমায় নিবেন সাথে? আমিও একটু হারাই!”
আদ্র আর কিছুই বলে না। একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বঃস বের হয় কেবল। ফোন কেটে দিয়ে চশমা খোঁজে। এপাশ-ওপাশ। চশমা কই?

নোলক কান থেকে ফোন নামিয়ে নেয়। দুঃখ লাগে ভারি! এমন করে ফোন কাটা কি খুব প্রয়োজন?

দরজায় বেল বাজে। নবনী বাসায় নেই। নিজে গিয়ে দরজা খোলে। নমনীয়তার সঙ্গে ভদ্রলোক বলে,
“আপনার নামে এই পার্সেলটি এসেছে।”
নোলক ভাবে, তাকে কে পার্সেল পাঠিয়েছে?
ভাবনা আর কৌতূহল নিয়েই সই করে, পার্সেল নিয়ে ভেতরে আসে। নামধাম কিছু লেখা নেই। কে পাঠালো?
কৌতুহল নিয়েই পার্সেল খুললো। একটা নূপুর, একটা চিঠি আর একটা ছবি। ছবি না ঠিক, জলছবি। শুন্য পায়ের জলছবি। যেই নূপুরটা আছে সেটা তার-ই। হারিয়ে যাওয়া নূপুর! নোলক চিঠিটা নিয়ে জানালার কাছে এলো। বিস্ময় নিয়েই চিঠিটা খুলল,
“শ্রাবণের শেষ সময়টা। প্রকৃতির ঘন বর্ষণের মাঝে খাঁ খাঁ রোদ হয়ে এলো সে! তীব্র রোদে মানুষের যেমন কপাল কুঁচকে যায়, আমার বেলাতেও হলো ঠিক তাই। তার তুরতুর করা স্বভাবটায় একেবারে শুরুতেই বিরক্ত, মহাবিরক্ত, অতিবিরক্ত হয়ে বিরক্তির মাত্রা অতিক্রম করে ফেললাম। তারপর যে হঠাৎ কি হলো! বিরক্ত হওয়া ভুলে গেলাম!

তারপর কত কি হলো! কত রাগ, কত বিরক্তি! তার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকা ভীতু ভীতু!
সেই রাতে ছাদে গল্প করতে করতে তার ঘুমিয়ে যাওয়া! গল্প করতে করতে যে কেউ ঘুমিয়ে যেতে পারে এর আগে আমি কল্পনাও করতে পারিনি নোলক। সেই ঘুমুঘুমু মুখ দেখে কেউ ভাবতেও পারবে না, মেয়েটা এক সেকেন্ডও স্থির থাকতে পারে না। পুরো বাড়ি, সারা শহর, কারো কারো মস্তিষ্ক দাঁপিয়ে বেড়ায় দিন-রাত, অনবরত!

নোলক? আপনার এই নূপুরটা আজ বহুদিন আমার কাছে। শুরুতে আমার মনে হয়েছিল আপনার এক পা খালি-ই থাকুক! আমি ইচ্ছে করেই দেইনি তাই। এর অবশ্য একটা বড়সড় কারন এতদিন ছিল। যেদিন থেকে নূপুরটা পেলাম সেদিন থেকে, সেই মূহুর্ত থেকে কানের কাছে বেজে চলতে শুরু হলো, ঝুম-ঝুম-ঝুম চঞ্চল এক শব্দ।
এই ছন্দময়ী মেয়েটা কেবল অন্ধকারে আসে। প্রথমে সে খুব দূরে ছিল। কিন্তু…কিন্তু ইদানিং খুব কাছে এসে পড়ছে। নোলক? সত্যি বলছি, আমি চাইনা এই ছন্দময়ী চঞ্চলাবতী আমার আরো বেশি কাছে আসুক। আমি আর চাচ্ছি না আমার অন্ধকারের ঐ ছন্দময়ী শব্দ আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হোক। কিছু শব্দ, কিছু ছন্দ, কিছু মায়া নাহয় দূর থেকেই অনুভব করি?

শুনুন? চিঠি লিখার জন্য প্রয়োজনে রাগ করবেন। চিঠির শুরুতে এবং শেষে ‘প্রিয়-অপ্রিয়’ বিশেষণ জুড়ে দেইনি বলেও রাগ করবেন। রাগ করতে বলছি বলে অবাক না হয়েও রাগ হবেন প্লিজ!
হুটহাট রেগে যাওয়াটাই আপনার বিশেষত্ব। আপনার রাগ দেখার ভীষণ লোভ আমার। আপনার রাগ আমার ভীষণ প্রিয় নোলকরানী। তবুও চাই, এই প্রিয় জিনিস আমার দূরেই থাকুক। অন্ধকারে দূরের ঐ ছন্দময়ী চঞ্চলাবতী হয়ে দূরে-বহুদূরেই থাকুক, কাছে না আসুক।”

নোলক পরপর তিনবার পড়লো চিঠিটা। গাল বেয়ে টসটসে এক ফোটা দুঃখ চিঠিটাতে পড়লো। চিঠির সাথের নূপুরটা এক হাতে রেখে জানালা ভেদ করে বাহিরে তাকালো। কী হবে কাছে গেলে? কেন এত ঘটা করে দূরে রাখার বায়না?
(চলবে)……..

(আজকেও যে বলবে, পার্ট ছোট। তাকে জাস্ট গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো।)
(রিচেইক দেইনি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here