জলপদ্ম পর্ব -০৩

#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন

|৩|
বাসায় বেশ তোরজোর চলছে নবান্ন উৎসবের।গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় দু’বস্তার মতো আমন ধানের চাল পাঠিয়েছে।মা,বড়মা,মেজোমা মিলে ফিরনি আর পায়েস রান্না করছে।আজকে,তনু আপু আর বাবলু ভাইয়া আসবেন।সাথে ফুপি আর ফুফাও আসবেন।মা’র মুখে শুনেছি এই নবান্নে নাকি জামাইদের নিমন্ত্রণ করা হয়,মেয়েদেরকেও বাড়িতে নাইওর আনা হয়।সেই হিসেবেই,ফুপি তনু আপু আর বাবলু ভাইয়াকে দাওয়াত করেছিলো বাড়িতে নাইওর আসার জন্য।তার উপর তাদের নতুন বিয়ে।তাদের আসার খবর পেয়ে বাবা,বড়বাবা আর মেজোবাবা মিলে ফুপি ফুফাসহ আমাদের বাসায় দাওয়াত করেছে।তনু আপু আর বাবলু ভাইয়ার আসার কথা শুনে আমি আর রিমি আজকে কলেজ যাই নি।মা একটু বকলেও বড়মা মা’কে সামলিয়ে নিয়েছে।তারপর মা আর কিছু বলে নি।

নতুন চালের পায়েসের গন্ধে চারপাশ যেনো মো মো করছে।পায়েস আমার কাছে তেমন একটা ভালো না লাগলেও আজকে খুব খেতে ইচ্ছে করছে।পায়েসের গন্ধে মাতাল হয়ে আমি মনে হয় দশবারের উপর রান্নাঘরে গিয়েছি।এবার যেতেই বড়মা আমার হাতে তড়িঘড়ি করে একটা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বললো,

‘রিমঝিম!এইটা রক্তিমের রুমে দিয়ে আয় তো।ঘুম থেকে উঠে কফি না পেলে বেশ চিল্লাচিল্লি করবে।’

বড়মা’র কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠার উপক্রম।রক্তিম ভাই এসেছেন অথচ আমি জানিই না।এক বাসায় থেকেও উনার আসার কোনো টেরই পেলাম না।হয়তোবা রাতে এসেছেন তাই বুঝতে পারি নি।ওইদিন তনু আপুর বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করেই রক্তিম ভাই আর তারিন আপু ঢাকায় ব্যাক করেছিলেন।রক্তিম ভাই চলে যেতেই মনে মনে আমি কি শান্তিটাই না পেয়েছিলাম।কিন্তু,এখন মনে হচ্ছে আমার শান্তিকে অশান্তি করতে চলে এসেছেন দ্য গ্রেট রক্তিম ভাই!

আমাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বড়’মা আগের ন্যায় তাড়া দিয়ে বললো,

‘রিমঝিম!মা আমার একটু দিয়ে আয় রক্তিমকে।গরম কফি না পেলে তার মাথা ঠিক থাকবে না।এমনকি,সকাল সকাল এর উপর ওর উপর রাগ দেখাবে।তুই একটু দ্রুত দিয়ে এসে আমাকে একটু চিন্তামুক্ত কর।’

আমি বড়মা’র কথা কর্ণপাত করে মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।বড়’মার কথা শুনেই আমি বাধ্য হয়ে যাচ্ছি রক্তিম ভাইয়ের রুমের দিকে।না হলে মরে গেলেও যেতাম না।অবশ্য,উনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন।ভালোই হয়েছে আমি শুধু কফি টা রেখে চলে আসবো।

রুমের দরজাটা আসতে করে খুলে মুখ ঢুকিয়ে দেখে নিলাম রক্তিম ভাইয়ের অবস্থান টা।উনি দিব্বি ঘুমিয়ে আছেন।মাথা পর্যন্ত কাঁথা দিয়ে ঢাকা।সিলিং ফ্যানটা হালকা গতিতে ঘুরছে।যার ফলে,সারারুম ময় মৃদু বাতাস বিরাজ করছে।পর্দা গুলোও সেই মৃদু বাতাসে নিজেদের মতো হেলছে আর দুলছে।

রক্তিম ভাইকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আমি যেনো স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস নিলাম।দরজাটা আর একটু খুলে ধীর গতিতে উনার রুমে ঢুকে পড়লাম।জানালার পর্দাগুলো ঘনভাবে দেওয়া বলে রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে।আমি সাইড বক্সের উপর কফির মগটা রাখতে যাবো তখনই উনি ঘুমের ঘোরে কিছুটা কেশে উঠলেন।এমন হওয়ায় আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।সেই সাথে কেঁপেও উঠি।যার ফলে,মগ ভর্তি কফি থেকে কিছু কফি ছিটকে এসে আমার হাতের উপর পড়লো।হঠাৎ গরম অনুভব করায় আমি মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলাম।যার কারণে রক্তিম ভাইও ঘুম থেকে হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলেন।উনাকে উঠতে দেখে আমি জিহবায় কাঁমড় বসিয়ে দিলাম।কারণ,উনার ঘুম অনেক পাতলা।একটু শব্দ হলেই উনার ঘুম ভেঙে যায়।এখন যেমনটা হলো।
রক্তিম ভাই চোখ গুলো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।হয়তোবা ব্যাপার টা বুঝার চেষ্টা করছেন আমি কেনো চিৎকার দিয়েছে।রক্তিম ভাই কিছুক্ষণ থম মেরে বসে,সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো পিছনের দিকে সরিয়ে দিলেন।রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে বললেন,

‘তোর বেসুরা কন্ঠের চিৎকার শুনে আমার ঘুমটা ভেঙে গেলো।বাপরে!ঘুমের মধ্যে একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।মনে হয়েছিলো,কোথা থেকে ভাল্লুকের কন্ঠ ভেসে আসছে।’

যা ভেবেছিলাম তাই!উনি আমাকে কথা শুনাতে পিছুপা হবেন না।এই ভয়টাই তো পাচ্ছিলাম।এতো সাবধানে এসেও লাভের লাভ কিছুই হলো না।সেই উনার মুখোমুখি হতেই হলো।যাকে বলে বাঘের মুখোমুখি!আমি স্বাভাবিক ভাবেই রক্তিম ভাইয়ের কথার পিঠে বললাম,

‘আমার হাতে কফি পড়ে গিয়েছিলো রক্তিম ভাই।তাই তো ওইরকম ভাবে চিৎকার দিয়ে উঠেছি।’

আমার কথা টা মনে হয় রক্তিম ভাই বিশ্বাস করতে পারলেন না।আমার ডান হাত টা চেপে ধরে নিজের চোখের সামনে এনে উল্টে পাল্টে দেখে বলতে লাগলেন,

‘কই তোর হাতের তো কিছুই হলো না।না হলো লাল আর না হলো কালো।এইসব তোর ধান্দা রিমঝিম।তুই তো সবচেয়ে বড় ধান্দা বাজ।’

‘ডান হাত না রক্তিম ভাই বাম হাত।আপনার জন্য কফি আনতে গিয়ে হাত পুড়ালাম আর আপনি আমাকে ধান্দা বাজ বলছেন।এইজন্য কারোর ভালো করতে নেই।কথায় আছে না যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর।’

‘বাপরে!একদম চোর চুন্নিতে চলে গেলি।দে তো দেখি কেমন গরম কফিটা।যার জন্য তোর বাম হাত পোড়ালি।’

কথাটা বলেই রক্তিম ভাই আর দেরি না করে আমার হাত থেকে কফির মগ টা নিয়ে একচুমুকেই কফিটা সাবাড় করে দিলেন।আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রক্তিম ভাইয়ের দিকে।এতো গরম কফিটা একচুমুকে কীভাবে শেষ করলেন!ভালোই তো গরম ছিলো কফিটা,আমার হাতের তালু এখনো গরম হয়ে আছে।উনি,কফি শেষ করে আমার হাতে মগ টা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘তুই কি ঠান্ডা গরমও বুঝিস না রিমঝিম!বরফের মতো ঠান্ডা কফিটাকে তুই গরম বানিয়ে দিলি।আমার কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে এখন বাহানা করে লাভ নেই রিমঝিম।এর শাস্তি তোকে পেতে হবে।এমনকি তা এখনেই।’

আমি ভয়ে জমে গিয়েছে রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে।মাথার মধ্যে শুধু খেলছে রক্তিম ভাই আমাকে কি শাস্তি দিতে পারেন।উনার শাস্তি কি হতে পারে তাই ভাবছি।ভেবে কিছুই পেলাম না।অসহায় মুখ করে তাকালাম রক্তিম ভাইয়ের দিকে।উনি আমাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে বললেন,

‘আপাতত!তোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমি কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না।তবে,আমার রুমটা সুন্দর করে গুঁছিয়ে,মুছে দিয়ে গেলে তোর শাস্তি কিছুটা কমে যাবে।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনা শেষ হতেই আমি মুখ ফঁসকে বলে ফেললাম,

‘এতো কাজ আমি করতে পারবো না।আপনার রুম আপনি গুঁছিয়ে নিন।’

‘উঁহুহু!নো মোর টক রিমঝিম।আমি ওর্ডার দিয়ে ফেলেছি।এবার তোর পালন করার পালা।একটু এদিক সেদিক হলেই তোর শাস্তির পরিণাম দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনার রুম গুছিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমার ছাড় নেই।তাই,অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি কাজে লেগে পড়লাম।উনি,বিছানায় আধশোয়া হয়ে আমার উপর নজরদারি করছেন।উনার কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিতে গিয়ে আমি বেশ হিমশিম খেয়ে গিয়েছি।সব কিছু করে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘রক্তিম ভাই!আপনার কথা মতো সব করে দিয়েছি।এবার আমি যাই।’

রক্তিম ভাই পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললেন,

‘কই সব করলি।এখনো তো রুম মোছা বাকি আছে।আমার কথা অনুযায়ী তো রুমও মোছার কথা ছিলো।’

‘রুম মোছার কাপড় থাকলে তো মুছে দিবো আপনার রুম।আসল জিনিসটাই তো নেই।’

‘আগে বলবি না।দাঁড়া আমি তোকে রুম মোছার কাপড় দিচ্ছি।’

রক্তিম ভাই বিছানা ছেড়ে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন।অনেক খোঁজাখুঁজির পর রক্তিম ভাই হাতে উনার একটা ছিঁড়া আন্ডারওয়্যার নিয়ে এসে আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,

‘নে এইটা দিয়ে মুছে দে।গেঞ্জির কাপড় তো খুব ভালো করে মোছা হবে।’

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ছিঁড়ে যাওয়া আন্ডারওয়্যার টার দিকে।তলার দিকে একদমই নেই বলতে গেলে।মনে মনে ভাবলাম,রক্তিম ভাই বাহিরে ফিটফাট হলেও ভিতরে একদম নাজেহাল অবস্থা।কেই বা বলবে এতো স্মার্ট,সুন্দর ছেলেটা ভিতরে ছিঁড়া,ফাটা আন্ডারওয়্যার পড়ে।যার,তলার কোনো অংশবিশেষেই নেই।কথাটা ভেবেই আমার খুব হাসি পেলো।
আমার ভাবনার মাঝেই রক্তিম ভাই আমার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললেন,

‘কিরে ধর।মোছা শুরু কর।’

আমি দু’আঙল দিয়ে আন্ডারওয়্যার টা ধরে এপিঠ ওপিঠ করে দেখে লাগলাম।এমতাবস্থায় রক্তিম ভাই বললেন,

‘এইভাবে দেখার কি আছে।কতো আগের এই আন্ডারওয়্যার টা।তেলাপোকায় খেয়ে ফেলেছে।ভার্সিটির হলে তেলাপোকার উপদ্রব অনেক বেশি।আরো যুক্ত হয়েছে শ্রাবণের টেবিল টা আনার পর থেকে।শ্রাবণের টেবিলের ড্রয়ারে হাজারো তেলাপোকার বাস রয়েছে।দিনের বেলায় তারা ঘাপটি মেরে বসে থাকে।আর,রাতের বেলা চন্দ্রবিলাস করতে বের হয়।তাদের একদিনের চন্দ্রবিলাসের বলি হয়েছিলো টানা চারদিনের পড়া ঘর্মাক্ত আমার এই আন্ডারওয়্যার টা।সকালে উঠে দেখি এই অবস্থা।তখন বুঝলাম আন্ডারওয়্যারের গন্ধ শুঁকে তারা খেয়ে ফেলেছে।বুদ্ধি করে রখে দিয়েছিলাম।আজকে কাজে লাগলো।নে নে!এবার তুই মোছা শুরু কর।’

আমি খুকখুক করে কেশে উঠলাম রক্তিম ভাইয়ার লম্বা কাহিনী শুনে।সেই সাথে চরম অবাকও হয়েছি।উনি,চারদিন ধরে আন্ডারওয়্যার টা ব্যবহার করে একদম ঘর্মাক্ত করে ফেলেছিলেন!কথাটা ভেবেই আমার গা গুলিয়ে আসলো।রক্তিম ভাইয়া যে এমন তা আমার একদন্ডও জানা ছিলো না।
—-
টেবিলে গোল হয়ে বসে আছি আমরা।মা,বড়মা,মেজোমা মিলে আমাদের খাবারের তদারকি করছে।দুপুরের একটু আগেই তনু আপুরা এসে পৌঁছছে।মা,মাছের মাথাটা বাবলু ভাইয়ার পাতে তুলে দিলো।শুধু তাই নয়,আরো বাহারি রঙের খাবারও সাজিয়ে দিয়েছে।বাবলু ভাইয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মা’র দিকে।আর,এদিকে তনু আপু মুচকি মুচকি হাসছে।আমি তাদের দিকে একপলক তাকিয়ে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম।তনু আপু আর বাবলু ভাইয়ের জুটিটা আমার কাছে বেশ লেগেছে।দু’জনের ঠোঁটেই প্রশান্তির হাসি।

আমাদের খাওয়ার মাঝেই রক্তিম ভাই মাঝারি সাইজের একটা কার্টুন নিয়ে বাসায় ঢুকলেন।বড়মা কার্টুন টা দেখে রক্তিম ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘এইটা কিসের কার্টুন রে রক্তিম।আর!কিই বা আছে এই কার্টুনে?’

রক্তিম ভাইয়া সোজাসাপ্টা উত্তরে বললেন,

‘মা!এইটা হলো মুলার কার্টুন।শীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় সবজি মুলা।যকৃত আর পাকস্থলী পরিষ্কারের জন্য এনেছি।মুলা খাবে আর পেট পরিষ্কার করবে।তাছাড়া,শীতও তো বলতে গেলে এসে পড়েছে।তখন,মুলার ডিমান্ড অনেক বেড়ে যায়।মুলা বেটা এইদিক দিয়ে একদম ঠিক আছে।বাজারে গিয়ে দেখলাম মুলা উঠেছে তাই,কম দামে এক কার্টুন নিয়ে এসেছি।’

রক্তিম ভাইয়ের কথা শুনে খাবার টেবিলে একদফা হাসির রোল পড়ে গিয়েছে।আবির ভাই তো চেয়ার ছেড়ে পড়ে যাবে এই অবস্থা।তনায়া আপুরও সেইম অবস্থা।সবাই হাসলেও বড়মা কিছুটা রেগে আছেন রক্তিম ভাইয়ের উপর তা ঠিকই বুঝতে পেরেছি বড়মা’র মুখের মতিগতি দেখে।হয়তো,রক্তিম ভাইয়ের এই কাজ টা বড়মা’র কাছে বিন্দুমাত্র পছন্দ হয় নি।

রক্তিম ভাই আমার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লেন।আমার দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে বললেন,

‘রিমঝিম!ভাতের সাথে একটা কাঁচা মুলা চিবিয়ে খেয়ে দেখতো মুলাটার টেস্ট কেমন?এতে তোরও ভালো হবে আর আমারও।এই যেমন ধর!তুই খেলে তোর পেট পরিষ্কার হবে আর আমিও বুঝতে পারবো মুলার দম কতোটুকু।’

আমার গলায় খাবার আঁটকে গিয়েছে।খাবার টেবিলের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।এমনকি বাবলু ভাইয়াও।ইশশ!নতুন দুলাভাইয়ের সামনে রক্তিম ভাই যে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিবেন তা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।সবার দিকে তাকাতেও কেমন লজ্জাবোধ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে ছুটে পালাই।সামনে থেকে তনায়া আপু রক্তিম ভাইকে কিছুটা ঠেস দিয়ে বললো,

‘আমাদের সবার পেট পরিষ্কারই থাকে রক্তিম ভাই।যেহেতু!তুমি এনেছো তাহলে তুমিই আগে খেয়ে দেখো তোমার কিনে আনা মুলার দম কতোটুকু।

তনায়া আপুর কথায় খাবার টেবিলে আরেকদফা হাসির রোল পড়ে গেলো।এবার আমিও না হেসে পারলাম না।এমন হওয়ায় রক্তিম ভাই সবার দিকে একবার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,তনায়া আপুর দিকে বড় বড় চোখ নিক্ষেপ করে তাকালেন।হয়তো,তনায়া আপুর কথাটায় কিছুটা অবাক হয়েছেন।অবাক হওয়ারই কথা,তনায়া আপু তো সবসময় রক্তিম ভাইয়ের পক্ষ হয়ে কথা বলে,আজকে বিপক্ষে গিয়ে কথা বলার জন্যই এইভাবে একেরপর এক চোখ নিক্ষেপ করে তাকাচ্ছেন।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রক্তিম ভাই সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘আমার মুলা আমি নিজেই খেয়ে দেখবো।তোদের কারোর খেতে হবে না।যখন,পেট পরিষ্কারের জন্য আমার কিনে আনা মুল দরকার হবে তখন আমাকে বলেও লাভ হবে না।’

অপর পাশ থেকে আবির ভাই বলে উঠলেন,

‘এইরকম যদিও হয়!তাহলে,রকেট ব্যবহার করে পেট পরিষ্কার করে নিবো।’

‘তোর জন্য রকেট পোষাবে না আবির।যে কঠিন হয় তোর।’

আমার চোখ,মুখ অন্ধকার হয়ে আসছে।কি কথার ছিরি আবির ভাই আর রক্তিম ভাইয়ের।বড়’মা ধমকের সুরে রক্তিম ভাইকে বললেন,

‘খাবার টেবিলেও তোর এইরকম ফাইজলামি করতে হবে রক্তিম।বাবলু কি ভাবছে বল তো।আজকেই ছেলেটা প্রথম এলো আর আজকেই তোর এইসব কথা বলতে হচ্ছে।’

বড়মা’র কথা শুনে রক্তিম ভাই আর কিছু বললেন না।চুপ করে বসে রইলেন।আবির ভাইও চুপচাপ খেতে লাগলেন।
—-
রাত প্রায় বারোটার উপরে বাজে।ছাঁদে বসে আড্ডা দিতে দিতে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।আরো আড্ডা চলতো কিন্তু,তনু আপু ঘুমের কারণে আর বসে থাকতে পারলো না।কয়েকবারই বাবলু ভাইয়ার কাঁধে ঢলে পড়েছে।তাই,আমরাই আড্ডা থামিয়ে দিয়েছি।কারণ,আড্ডার আসল লোকেই যদি ঘুমিয়ে যায় তাহলে,সেই আড্ডায় আমরা বসে থেকে আর কি করবো।বাসার বড়োরা সবাই ঘুমিয়ে আছে।তাই,তো এতো রাত পর্যন্ত আড্ডা দিতে পেরেছি।

রুমে এসে দরজা টা বন্ধ করে বিছানা দিকে চোখ পড়তেই আমার চোখজোড়া যেনো কপালে উঠে গিয়েছে।রক্তিম ভাই আমার বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছেন।আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।রক্তিম ভাই কেনো উনার রুম ছেড়ে আমার রুমে এসে শুয়ে ঘুমিয়ে আছেন তাও আমার জানা নেই।কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানার সামনে এগিয়ে গেলাম।রক্তিম ভাই মশারির কুশন জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন।চুল গুলো এলোমেলো হয়ে চোখের সামনে পড়ে আছে।ঠোঁট টাও কেমন বাচ্চাদের মতো হয়ে আছে।আমার খুব ইচ্ছা করছে রক্তিম ভাইয়ের চোখের সামনে থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিতে।অনেকক্ষণ রক্তিম ভাইয়ের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থেকে আর ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না।হাত টা এগিয়ে দিলাম রক্তিম ভাইয়ের চুলের দিকে।চোখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিবো তার আগেই রক্তিম ভাই আমার হাত টা আঁকড়ে ধরলেন।আমি ভয়ে চমকে উঠি।শুধু তাই,নয় রক্তিম ভাই আমার হাতের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে হেঁচকা টান মেরে নিজের কাছে টেনে নিলেন।এমন হওয়ায় আমি রক্তিম ভাইয়ের বুকের উপরে গিয়ে পড়ি।আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।বুকের ভিতরে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে।সেই সাথে,ঘন ঘন নিঃশ্বাসও পড়ছে।রক্তিম ভাই আমার থুঁতনীটা উঁচু করে ধরলেন।যার ফলে,উনার নাকের সাথে আমার নাক ছুঁইছুঁই করছে।আমার মাথায় কিছুতেই কাজ করছে না হঠাৎ করে,রক্তিম ভাই কেনো এইরকম আচরণ করছেন।রক্তিম ভাই আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন।যে চাহনি দেখে আমার যায় যায় অবস্থা।মনে হচ্ছে এখনেই হার্টফেল করবো।ইশশ!কি চাহনি উনার।দেখলেই অন্যজগতে চলে যেতে ইচ্ছে করে।আমি আমতাআমতা করে বললাম,

‘রক্তিম ভাই!আপনি এখানে কেনো শুয়ে আছেন।এইটা তো আমার রুম।’

রক্তিম ভাই নিভু নিভু চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এতে যেনো আমার অস্বস্তি দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।আমি রক্তিম ভাইয়ের উপর থেকে উঠতে নিলেই রক্তিম ভাই আমাকে উনার পাশে শুইয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।আমি যেনো ভয়ের সাথে আরো জমে গিয়েছি।শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে এক টুকরো মুচকি হেসে বললেন,

‘রিমঝিম দিনদিন এতো সুন্দর হচ্ছিস কীভাবে!কি মাখিস তুই মুখে।তোর গাল টা কেমন তুলতুলে দেখা যায়।খেয়ে ফেলতে মন চায়।একটু কাছে আয় খেয়ে দেখি তো।’

আমি এবার নিশ্চিত হলাম রক্তিম ভাই পাগল হয়েছেন।না হলে,এইসব কথা কখনোই বলতেন না।তার উপর আমাকে!কখনোই না!আমি রক্তিম ভাইকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু,কিছুই হলো না!বরং,রক্তিম ভাই উনার আস্ত ওজনের একটা পা আমার পা’য়ের উপর তুলে দিয়ে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।নাকে নাক ঘঁষে বললেন,

‘এতো নড়াচড়া করছিস কেনো।তুই একটুও আমার কাছে আসতে চাস না।কেমন যেনো দূরে দূরে থাকিস।একটু কাছে আয় না!খেয়ে দেখি তোর গালের টেস্ট কেমন।আমার মুলার থেকে টেস্টি কিনা।’

‘রক্তিম ভাই আপনি নির্ঘাত পাগল হয়েছেন।আপনি তো এইরকম ছিলেন না।’

রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বিস্তর এক হাসি দিয়ে বললেন,

‘পাগল তো আমি তোর জন্মের পর থেকেই হয়েছি রিমঝিম।আস্তে আস্তে বড় হয়ে আমাকে যেনো আরো পাগল করে তুলেছিস।আমি ঠিকই বলি রিমঝিম!!তুই একটা ধান্দা বাজ রে।’

রক্তিম ভাই মিহিয়ে আসা কন্ঠে কথাটা বলেই আমার মুখের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।যা দেখে আমি অনেকটাই চমকে যাই।মাথাটা পিছিয়ে নেওয়ার আগেই রক্তিম ভাই আমার গালের কাছে মুখ এনে বেশ বড়সড় একটা কাঁমড় বসিয়ে দিলেন।মুহুর্তেই আমার চোখ,মুখ ব্যথায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।সেই সাথে,চোখের কার্ণিশ বেয়ে পানিও গড়িয়ে পড়ছে।ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই মুচকি হেসে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলেন।যা দেখে আমার রাগ মাথায় চড়ে গেলো।কিছু বলতে যাবো তার আগেই রক্তিম ভাইয়ের নাক ডাকার শব্দ পেলাম।মানে,কি উনি এই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলেন!!

চলবে..

(রক্তিম ভাইয়ের উপর অনেকেই ক্ষেইপা আছে রে!😑)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here