জানি দেখা হবে পর্ব ২৭+২৮

#জানি_দেখা_হবে
Israt Jahan Tanni
#Part_27
..
চারিদিকটা নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে। বাইরে ফুরফুরে বাতাস বইছে। কিছুক্ষণ পর পর শীতল হাওয়া তারাকে স্পর্শ করে চলে যাচ্ছে। একটু একটু কেপে উঠছে তারা। ধ্রুব একভাবে তাকিয়ে আছে তারার দিকে। তারা গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ভাবলেশহীন ভাবে। ধ্রুব বুঝতে পারছে খুব ভালোভাবেই যে তারার মনটা ভালো নেই। তাই সেও কোনো কথা বাড়াচ্ছে না তারার সাথে। কিছুটা সময় দেওয়া দরকার তারাকে। তারার উপর দিয়ে যা গেছে, তা মেনে নিয়ে বেচে থাকা অনেক লড়াকু মানসিকতার ব্যাপার।
ধ্রুব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয়, এই মেয়েকে সে আর ছাড়বে না৷ যত কষ্ট পেয়েছে সে এখন পর্যন্ত তার সবটাই অনেকগুণ বেশি ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবে সে।
.
ধ্রুবর বাবা সকালে আকাশদের বাসা থেকে ফিরেই ঢাকা চলে গিয়েছিলো। তারা আর ধ্রুবর এখন কিছুটা একা সময় পার করা দরকার। সেটা ভেবেই উনি চলে গিয়েছিলেন। রাতে তারা কিছু না খেয়েই ছাদে গিয়ে বসে থাকে। আসার পর থেকে এই পর্যন্ত ধ্রুব আর তারার কোনো কথা হয়নি। তারা অনেকটা চুপচাপ হয়ে বসে আছে ছাদে। বাবার কথা খুব মনে পরছে আজ। না জানি কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে বাবা। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে তারার।
ধ্রুব ধীরপায়ে এগিয়ে এলো তারার দিকে। তারা ধ্রুবর উপস্থিতি বুঝতে পেলো, কিন্তু নড়লো না। ধ্রুব গিয়ে তারার একপাশে বসে পরলো।
কিছুক্ষণ সময় কাটলো নিরবতায়। ধ্রুব নড়েচড়ে উঠলো। তারার দিকে তাকিয়ে বললো..
— আই এম স্যরি তারা।
তারা কিছু বলছেনা। ধ্রুব আবারো বললো
— আমাকে মাফ করা যায়না? প্লিজ মাফ করে দাও।
তারা তাকালো ধ্রুবর দিকে। তারার দৃষ্টিতে আটকে গেলো ধ্রুব।
— তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি ভালো থাকতে পারিনি তারা। প্রকৃতি সেটা আমার কাছ থেকে হাড়ে হাড়ে উসল করে নিয়েছে। তুমি প্লিজ আমার উপর আর রেগে থাকোনা। তোমাকে হারিয়ে আমি বুঝেছি, তুমি কি ছিলে আমার জীবনে। আমার প্রতিটি পদক্ষেপেই তোমাকে মনে পরতো খুব, খেতে গেলে, ঘুমাতে গেলে, আমার কিছু প্রয়োজন হলে না চাইতেও তোমাকে মিস করতাম প্রচুর। যখন নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছি, তখন খুব দেরি হয়ে গেছিলো জানো তো। তবুও এই মন, তোমাকে খোজেছে। আমার বিশ্বাস ছিলো, তোমাকে আমি এক দিন না এক দিন খোজে পাবোই, আমি জানতাম, তোমার সাথে আমার দেখা হবেই। আর দেখো, দেখা হয়েই গেলো। আমি পেয়ে গেলাম তোমায়। জানো, তোমায় দেখে আমার কি হয়েছিলো তখন? মনে হচ্ছিলো আমি আর আমার মাঝে নেই। আমি বিলীন হয়ে যাচ্ছি তোমার মাঝে।
তারা কিছু বলছেনা। ধ্রুব বললো..
— কথা বলবে না আমার সাথে? এতোটাই রেগে আছো আমার উপর?
— কারো উপর আমার রাগ নেই। আমার ভাগ্যে যা ছিলো সেটাই হয়েছে আমার সাথে। শান্তভাবে আকাশ পানে তাকিয়ে বললো তারা।
তারার এই কথার মাঝে কতোটা অভিমান জমা সেটা বুঝতে বাকি নেই ধ্রুবর।
ধ্রুব তারার হাতটা নিজের হাতের মাঝে বন্দি করলো, তারা একটু নড়েচড়ে উঠলো ঠিকই, কিন্তু হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলো না। ধ্রুব আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলো তারার, তারাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিবে, ঠিক সেসময় তারা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ধ্রুবর কাছ থেকে। যথাসম্ভব দুরে গিয়ে দাড়ালো। আচমকায় এরকম করায় ধ্রুব কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। থতমত করে বললো
— কি হলো তারা? এভাবে সরে গেলে কেন?
তারা নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো.
— আমি পারবোনা, আমি নিজেকে আর কোনো মায়ায় জড়াতে পারবোনা। যেই আঘাতটা আমি আগেও পেয়েছি, সেই একই আঘাত আমি দ্বিতীয় বার আর পেতে চাইনা। সেই আঘাতের জ্বালা আর সইতে পারবোনা আমি। আপনি আমায় মাফ করবেন। আমি শুধু আমার বাবার জন্য আপনার সাথে যাচ্ছি। আমি দ্বিতীয়বার আর কোনো কষ্ট পেতে চাইনা।
— তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তারা। আমি মন থেকে তোমাকে চাইছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি তারা, তোমাকে হারিয়ে সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
— সেই ভালোবাসা কতক্ষনের জন্য? তুরিনের সাথে যদি কখনো আপনার ঝামেলা মিটে যায় তখন আবারও আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে আপনার জীবন থেকে। এখন তো আমি একটা আশ্রয় পেয়েছিলাম, কিন্তু আবার যদি না পায়?
— ওই বেয়াদব টার নাম নিবেনা তারা। ও আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে। আমায় ঠকিয়েছে। আমার জীবনে ওর কোনো স্থান নেই। এখন থেকে এই ধ্রুব শুধু একজনেরই। আর সেটা হলে তুমি।
— কিন্তু..
— হুশশশ.. তারার ঠোটে আংগুল চেপে ধরলো ধ্রুব। তারার কানের কাছে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে পরম আবেশে বললো
— আর কোনো কিন্তু নয় তারা। যেটা হয়েছে সেটা একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও। নিজেকে আমার থেকে পালানোর চেষ্টা মোটেও করোনা। মনে রেখো, আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
ধ্রুবর এইরকম কথা শুনার পর তারা আর কিছু বলতে পারলোনা।
কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর ধ্রুব বললো..
— অনেক রাত হয়েছে। খেতে এসো।
.

রাতে খাওয়ার পর তারা কোথায় শুবে সেটা নিয়েই দ্বিধায় পরে যায়। ধ্রুব তারার এইরকম অদ্ভুত ব্যবহারে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। তারা অসহায়ভাবে তাকায় ধ্রুবর দিকে। হাসি কন্ট্রোল করে ধ্রুব বলে
— আমি তো তোমার পর নয় তারা। আমার পাশেই শুতে পারো তুমি।
তারা মাথা নিচু করে ফেললো ধ্রুবর কথায়। খুব অস্বস্তি লাগছে ওর।
ধ্রুব এসে আচমকায় তারাকে কোলে তুলে নিলো। তারার চোখদুটো যেনো এখনই বের হয়ে যাবে। ধ্রুব হাসতে হাসতে তারাকে বিছানায় ফেলো দিলো আচমকায়। তারা অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো। ধ্রুব ধীরে ধীরে তারার দিকে এগুতে লাগলো। তারা ভয় পেয়ে গেলো ধ্রুবর এমন আচরনে। ধ্রুবর চোখেমুখে এই মুহুর্তে সে প্রচন্ড নেশা দেখতে পাচ্ছে। ভয় পেয়ে ঢোক গিললো তারা। ধ্রুব এগিয়েই যাচ্ছে তারার দিকে। তারা নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়েই পিছাতে লাগলো, তারা যতই পিছাচ্ছে, তো ধ্রব ততোই এগুচ্ছে।
আচমকায় ধ্রুব একটা বালিশ আর একটা কাথা হাতে নিয়ে তারার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিলো। উল্টো দিকে ফিরে ফ্লোরে এসে কাথাটা বিছিয়ে সেখানে শুয়ে পরলো সে। তারা প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলো। সাথে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো একটা। এতোক্ষণ সে কি ভয়টায় না পেয়েছিলো।
ধ্রুব শুয়ে থেকে তারার দিকে তাকালো। তারাকে এখনো একভাবে বসে থাকতে দেখে বললো
– ঘুমিয়ে পরো তারা। এভাবে বসে থেকে রাত টা পার করোনা প্লিজ। আমি আছিতো, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরো। কাল সকাল সকাল রওনা দিতে হবে আবার।
তারা খানিকটা চমকে গিয়ে বললো
– কোথায় যাবেন কাল?
ধ্রুব হেসে দিলো। বললো
– ঢাকায় ব্যাক করবা না? এখানেই থেকে যাবা নাকি?
– ওহ।
– তারা আর কোনো কথা বাড়ালো না। চুপচাপ শুয়ে পরলো ও।

মাঝরাতে হটাৎই ঘুম ভেংগে গেলো সীমার। প্রচন্ড পানি তেষ্টা পেয়েছে ওর। গলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে বোধহয়। গল ভেজানোর উদ্দেশ্যেই খাট থেকে নেমে রুমের বাইরে বের হলো সীমা। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখলো জগটা একদম খালি। তাই হতাশ হল কিছুটা। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা কিচেনে চলে গেলো পানি খেতে। পানি খেয়ে যখন৷ কিচেন থেকে বেরোবে তখনই ওর চোখ গেলো আকাশের রুমের দিকে। দরজাটা হালকা খোলা, লাইট জ্বলছে এখনো। ভ্রু বাকালো সীমা। এতো রাতে আকাশ কি করছে?
এই জিজ্ঞাসু মনের উত্তর পাবার আশায় আকাশের রুমের দিকে গেলো সীমা। ভেড়ানো দরজার এক পাশে দাড়িয়েই ওর রুমের ভিতরে উকি দিলো সে। রুম ফাকা। আকাশ নেই ভিতরে, হয়তো ওয়াশরুমে গেছে। এই ভেবেই চলে আসতে নিলো সীমা। কিন্তু না, ওয়াসরুমের দিকে চোখ যেতেই দেখলো সেটার ডোরটার খোলা। আর কিছু না ভেবেই ভিতরে ঢুকলো সীমা। কয়েকবার ডাকলো আকাশের নাম ধরে, কিন্তু না, কোনো রেসপন্স পেলোনা আকাশের।
কপালে চিন্তার ভাজ পরলো সীমার।
কিছু একটা ভেবে সোজা ছাদের দিকে হাটা ধরলো সে।
যা ভেবেছিলো তাই। ছাদের এক প্রান্তে দাড়িতে সিগারেট টানছে আকাশ।
বিস্ময়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেলো সীমা। যে ছেলেটা সিগারেটের ঘ্রাণ টা প্রর্যন্ত সহ্য করতে পারেনা সে কিনা, আস্ত একটা সিগারেট টানছে। এটা কি করে সম্ভব। প্রচন্ড রাগ হলো সীমার। রাগী মুডটা ধরে রেখেই আকাশের দিকে তেড়ে গেলো সীমা। আকাশ এখনো নিজমনে সিগারেট টেনেই যাচ্ছে। সীমার রাগ বেড়ে গেলো। সে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো..
– কি হচ্ছে কি আকাশ? এতো অধঃপতন হয়েছে তোমার আমি ভাবতে পারছিনা।
এতো রাতে নিজের ভাবীকে ছাদে দেখে অনেকটা অবাক হলো আকাশ৷ কিন্তু কিছু বললো না সে।
– আমার কথা কি কানে ঢুকছে না? কি এমন হয়েছে যে, এই রাত বিরাতে সিগারেট টানছো?
– কিছু হয়নি ভাবি, এমনিতেই ইচ্ছে করছে খুব, তাই।
– খুব ইচ্ছা করছে, তাইনা? দাড়াও দেখাচ্ছি মজা..
সীমা চট করেই আকাশকে নিজের দিকে ফিরালো। কয়েকটা কিল ঘুষি দিবে এই ভেবে হাতটাকে উচু করতেই থমকে গেলো সে।
আকাশের চোখগুলো লাল হয়ে আছে, সাথে ছলছল করছে খুব। আকাশ চোখ ফিরিয়ে নিলো।
সীমা হাত নামিয়ে শান্ত হলো। নরম গলায় বললো
– কি হয়েছে আকাশ? কাদছো কেন তুমি?
– কিছু হয়নি তো ভাবি। আমার আবার কি হবে? আর কাদবোই বা কেন আমি। ভেজা গলায় বললো আকাশ।
– আমার কাছ থেকে লুকাতে চাইছো তুমি? পারবে আমাকে লুকাতে?
– কি বলছো ভাবী। যাও রুমে যাও। অনেক রাত হয়েছে। ভাইয়া যদি এতো রাতে আমার সাথে তোমাকে দেখে তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।
– রসিকতা বন্ধ করো আকাশ। এদিকে তাকাও।
আকাশ তাকালো সীমার দিকে। সীমা শান্ত গলায় বললো
– তারার কথা মনে পরছে তোমার?
– আরে নাহ, কি বলো এইসব। ওর কথা আমি কেন মনে করবো। ও আমার কে হয়?
রাতের আকাশে আজ হাজারো তারার মেলা। সেইদিকে তাকিয়েই বলল আকাশ।
সীমা বললো
– দেখো আকাশ, সব মানুষেরই কিছু না কিছু একটা গুন থাকে, তারার মাঝেও ছিলো। ও কত সহজেই আমাদের সাথে মিশে গেছিলো, এই কয়দিকে ওকে আমরা নিজেদের ফ্যামিলি মেম্বার ও ভাবতে শুরু করেছিলাম। ইনফ্যাক্ট, তুমি জানো আকাশ, মা আর আমি তো তারা আর তোমার ব্যাপারে কথাও বলেছিলাম।
– কি কথা বলেছিলে তোমরা? ভ্রু কুচকে বললো আকাশ।
– তুমি ভালো করেই জানো আকাশ, তুমি যে তারাকে ভালোবাসো সেটা আমি জানতাম। আর তোমার হাবভাবে মাও সেই বিষয়টা ধরতে পেরেছিলো। আমরা তোমাদের বিয়ের ব্যাপারেই কথা বলেছিলাম। কারণ, তারা মেয়েটা যথেষ্ট ভালো, ইনফ্যাক্ট অনেক ভালো। কিন্তু ভাগ্য বলে একটা কথা আছে, আল্লাহ সবকিছু আগে থেকেই নির্ধারন করে রাখেন আকাশ। আমার কেউই তার বাইরে যেতে পারবোনা। তোমার সেটা মানতে হবে।

আকাশ চুপচাপ শুনলো সীমার কথা। ধরা গলায় বললো
– কিন্তু আমার সাথেই কেন এমন হল ভাবী? কি অন্যায় করেছিলাম আমি? ভালোই তো বেসেছিলাম শুধু। তাহলে কেন আমার ভালোবাসার বীজ বপন করার আগেই তা অঙ্কুরে বিনষ্ট হলো? কেন আমার প্রেমের ফুলটা ফুটার আগেই ঝরে গেলো? আকাশের চোখদুটো আবারও ভিজে গেছে। সীমার এই মুহুর্তে কি বলার আছে বুঝতে পারছেনা। তবুও নিজেকে শক্ত করে বললো
– তুমি চাও না তারা সুখে থাকুক?
– নিজের সুখের থেকেও বেশি আমি ওর সুখ চাই ভাবী।
– তাহলে মিছে মিছে আর কষ্ট পেওনা, তারা ওর হাজবেন্ডের সাথে সুখে থাকবে, ইনফ্যাক্ট সুখে আছে, সেটা ভেবেই পুরোনো সবকিছু ভুলে যাও আকাশ। তাতে সেও সুখী হবে তুমিও শান্তি পাবে মনে।
– পারছিনা ভাবী৷ আমি কিছুতেই সেটা মানতে পারছিনা।
– চেষ্টা করো আকাশ, তুমি পারবে।
আকাশ নিজেকে সামলে নিলো যথাসম্ভব। শান্ত গলায় বললো
– তাই হবে।
সীমা হাসলো। বললো
– অনেক রাত হয়েছে। এবার রুমে চলো। ঘুমাও গিয়ে। তোমার জন্য আমার ঘুমটাও চলে গেলো।
– তুমি যাও ভাবী, আমি আসছি।
– আমার সাথে এসো। তোমায় এখানে রেখে আমি যাচ্ছিনা।
আকাশ হাসলো। বললো..
– কোনো দুর্ঘটনা ঘটায় কিনা, সেটার ভয় পাচ্ছো?
– ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
– ভয় পেওনা ভাবী, আমি এমন কিছুই করবনা, বিশ্বাস করো।
– ওকে, করলাম বিশ্বাস। এইবার আসোতো আমার পিছু পিছু। আমার বরটা আবার আমাকে না পেয়ে কি জানি করছে।
অগত্যায় আকাশকে সীমার পিছু পিছু চলে আসতে হলো।
এই মুহুর্তে নিজেকে খুব হালকা লাগছে আকাশের কাছে। সীমার মতো ভাবী পাওয়া অবশ্যই ভাগ্যের ব্যাপার। আসলেই সীমা যা বলেছে সত্যিই বলেছে। আল্লাহ সবকিছু আগেই নির্ধারন করে রাখেন। উনি আগে থেকেই ছক কষে রেখেছেন। সেই ছক বানচাল করে এর বিপরীত করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা আকাশের মনে ছিলোনা, সীমা সেইই বীজটা বুনে দিয়েছে আকাশের মনে। আকাশের মনটা কৃতঙ্গতায় ভরে যাচ্ছে। সেই কৃতঙ্গতাটা সীমার প্রতি।
.
কারো উষ্ণ নিশ্বাস চোখেমুখে পড়ায় ঘুম ভেংগে গেলো তারার। প্রথমে ঘোরের মধ্যে থাকলে বাস্তবে যখন সম্ভিত জ্ঞান ফিরলো বেশ অবাক হয়ে গেলো তারা। ধ্রুবর বাহুডোরে বন্দি আছে সে। ধ্রুব তারাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে মহাশান্তিতে ঘুমোচ্ছে। এটা কি স্বপ্ন, নাকি বাস্তব? ভাবাচ্ছে তারাকে।
তারার বিস্ময় কাটছেনা। ধ্রুব তো নিচে শুয়েছিলো, এখানে আসলো কখন? আর এভাবে ওকে জরিয়েই বা ধরেছে কেন?
তারা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ধ্রুবর দিকে। হটাৎই চোখমুখে বিরক্তিভাব ফুটে উঠলো ওর। এভাবে ঘুমের ঘোরে থাকা একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো, এটা কোন ধরনের বদমাইশি?
আচমকায় তারা ধ্রুবকে এমন এক ধাক্কা দিলো, যে ধ্রুব ছিটকে গিয়ে পরলো রাতে ঘুমানোর জন্য মেঝেতে বিছানো সেই বিছানায়। আচমকা এইরকম করায় ঘুম ভেংগে ককিয়ে উঠলো ধ্রুব। সারা শরীরে ব্যাথা পেলো খুব, সামনে তাকিয়ে দেখে তারা বসে আছে অগ্নিমূর্তির ন্যায়। কিছুক্ষণ বুঝার চেষ্টা করলো সে কি হয়েছে। যখন সবটা বুঝতে পারলো, তখন ব্যাথার চাইতে বেশি অবাকই হলো সে। তারা কিছুটা রাগমিশ্রিত চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni
#Part_28
.
কোনো স্টেশনে থামার আগ মুহূর্তে ট্রেন যেমন একটা ঝাকি দেয়, ঠিক সেইরকম একটা ঝাকি যেনো ধ্রুব পেলো কিছুক্ষণ আগে। ঘুম মিশ্রিত চোখে বিস্ময়ে বিস্ফোরিত হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো তারার দিকে। থতমত খেয়ে বললো..
-কি করলে এটা? ফেলে দিলে কেন এভাবে? যদি আমার কিছু হয়ে যেত? হাত পা ভেংগে গেলে কি হতো তখন? তুমি কি পাগল হলে নাকি?
ধ্রুবর মুখে এমন কথা শুনে তারার রাগ আগের তুলনায় আরও বেড়ে গেলো। চোখমুখ শক্ত করে কড়া গলায় বললো
-পাগল তো আপনি হয়েছেন। লজ্জা করলো না এইভাবে একটা মেয়েকে ঘুমের ঘোরে জরিয়ে ধরতে? আমার ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন! কেন শুনি? জরিয়ে ধরলেন কেন আমাকে? আর নিজের বিছানা ছেড়ে এখানেই বা এলেন কোন সাহসে?
আমারই ভুল হয়েছে। যাকেতাকে বিশ্বাস করাটা উচিত হয়নি। চোখমুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো তারা। অস্ফুটে বলে উঠলো
– চোর কোথাকার।

তারার এমন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ধ্রুব। থতমত করে বললো
– চো. চোর মানে? কি চুরি করেছি?
-চোরের মতো নিজের বিছানা ছেড়ে অন্যের বিছানাতে চলে এসেছেন, এটা চুরি নয়তো কি?
-হে আল্লাহ, একরাতের মধ্যেই কি হলো ওর? আগেতো এমন ছিলোনা, হটাৎ কি হয়ে গেলো? ওকে আগের মতো ঠিক করে দাও প্লিজ। উপরের দিকে তাকিয়ে মোনাজাতের ভংগিতে বললো ধ্রুব।
তারা রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো ধ্রুবর কথায়। মুখে অগ্নিবর্ণ ধারণ করে বললো..
-ন্যাকামি করবেন না একদম। সহ্য হয়না। আর একটা শব্দও উচ্চারণ করবেন না বলে দিলাম। মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকুন, নইলে এই মুখ কথা বলার অবস্থায় থাকবেনা বলে রাখলাম। আংগুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল তারা।
এই তারাকে ধ্রুব চিনে না। ওর কাছে মনে হচ্ছে এটা তারা নয়, ওর মাঝে থাকা কোনো অতৃপ্ত আত্মা।
ধ্রুব নিজেকে ঠিক করতে করতে কিছু একটা ভাবলো। বাকা হাসি দিয়ে তারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো..
-কে তুমি? আমার বউকে ধরেছো কেন? কি করেছে ও? ছেড়ে দাও বলছি ওকে। বেচারি এতোদিন পর স্বামীকে ফিরে পেলো, স্বামীর কাছে আসতে চাইছে সে। তো ওকে আসতে দাও আমার কাছে। এভাবে ওকে ভর করোনা বলছি। নইলে ওঝা ডেকে ছাল ছাড়িয়ে হাতে ধরিয়ে দিবো।
-পাগল নাকি!! ছ্যাচড়ামি বন্ধ করুন। আমি আপনার বউকে ধরতে যাবো কেন? আপনার বউই তো অন্যকাউকে ধরে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। অসহ্য হুহ।
রেগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তারা।
ধ্রুব সামান্য হেসে একা একাই বললো
-এ ছ্যাচড়ামো বন্ধ করার নয় বউ, এ ছ্যাচড়ামি টা দিন দিন বাড়বেই। ওয়েট করো। তোমার উপর এখন থেকে এইসব ছ্যাচড়ামো থ্যাড়াপিই এপ্লাই করবো।
বাকাভাবে হাসতে হাসতেই ধ্রুব ওয়াসরুমের দিকে গেলো।

নিজের কাজে নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে তারা। একি করেছে সে? ধ্রুবর সাথে কড়া গলায় কথা বলেছে, ওকে শাসিয়েছে,, যা নয় তাই বলেছে, এও কি সম্ভব?
আসলে ঘুম থেকে উঠেই ওইরকম একটা পরিস্থিতিতে নিজেকে দেখে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো তারা। তখন নিজের মধ্যেই ছিলোনা সে। এখন সে বুঝতে পারছে কি ভুলটাই না করেছে তখন।
কিভাবে যাবে ওই লোকটার সামনে ও? লোকটা? না না, উনি তো ওর নিজেরই স্বামী, ভালোবাসার মানুষ। আর উনার সাথেই কিনা, ছিঃ কি বাজে ঘটনাটাই না ঘটলো।
যখন নিজের সেন্সে ফিরে এলো তারা, তখন থেকে দরজা লক করে রুমে বসে আছে সে। ধ্রুবর সামনে সে কোনোমতেই পড়বেনা। কিভাবেই বা যাবে ওর সামনে। তখনকার ঘটনার পর না জানি সে কি ভাবছে আমার সম্পর্কে। ছিঃ ছিঃ. ভাবতেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে তারার।
ধ্রুব কয়েকবার দরজায় এসে নক করলো, তারার নাম ধরে ডাকলো, কিন্তু কোনো লাভ হলোনা। দরজা খোলা তো অনেক দুরের কথা, তারার কোনো রেস্পন্সই পেলোনা সে। ধ্রুব আরো কয়েকবার দরজায় নক দিয়ে বললো..
-দরজা খোলবে, নাকি আমাকেই ভাংতে হবে।
-খ খুলছি, কাপা কাপা গলায় বললো তারা।
-গুড, তারাতাড়ি খোল। আমাদের আবার ব্যাক করতে হবে ঢাকায়। ব্রেকফাস্ট করে গোছগাছ করে নাও।

তারা আস্তে আস্তে দরজার কাছে এলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে ওর। দরজা খুলে ধ্রুবর মুখটা ফেস করবে কিভাবে সে? ভাবতেই গলায় কাটা আটকাচ্ছে। কাপা কাপা হাতে দরজার লকটা খোললো তারা।
নাহ, ধ্রুব নেই এখানে। চলে গেছে সে। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে চলে এলো সে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে ডাইনিং এ গেলো তারা।
ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তারা অবাক হয়ে গেলো। এতো এতো খাবার টেবিলে সাজানো। কে বানালো এতো খাবার?
এই বাসাতেতো কোনো কাজের বুয়াকেও দেখতেও পায়নি তারা। তাহলে?
তারার বিস্ময় কাটিয়ে ধ্রুব কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। কিচেন ড্রেস গায়ে পড়া ওর, ঘাড়ে একটা তাওয়াল ভাজ করে রাখা, হাতে একটা বড় বাটি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে আসছে সে। তারার অবাক হওয়ার পালা যেনো শেষ ই হচ্ছেনা।
তারাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধ্রুব মুচকি হাসলো। এতে তারার কোনো ভাবাবেগ হলোনা। হাতের বাটিটা টেবিলে রেখে তারার চোখের সামনে একটা তুড়ি বাজালো ধ্রুব। তারা থতমত খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বললো
-এত খাবার কত্থেকে আনলেন?
-আমি বানিয়েছি। টেবিলের খাবারগুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে জবাব দিলো ধ্রুব।
-মজা করবেন না প্লিজ, আমি সিরিয়াস। এতোটুকু সময়ে এতো খাবার পেলেন কোথায়?
-ও হ্যালো, আমিই বানিয়েছি এইসব খাবার। আর এইটুকু সময় বলছো কেন?
যখন আমাকে খাট থেকে ফেলে দিছিলা, ঠিক তার পর থেকেই অনেক কষ্টে এই খাবারগুলো বানিয়েছি আমি। যদিও ক্রেডিট ইউটিউব টিউটোরিয়াল এর।
তারা কিছু বলছেনা। তারাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ধ্রুব আস্তে আস্তে ওর কাছে এগিয়ে এলো। তারার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো
-এই স্পেশাল আইটেম গুলো বানিয়েছি, শুধুই আমার বউটার জন্য।
ধ্রুবর কথায় তারা কেপে উঠলো, বিস্ময়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব কিচেন ড্রেসটা খুলতে খুলতে বললো
-খাবারগুলো খেয়ে মহারানীর যদি আমার প্রতি একটু দয়া হয়। এইবার আপনি বসুন, আমি ড্রেসটা রেখে ফ্রেশ হয়ে আসি।
তারা মাথা নাড়িয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো।।

কিছুক্ষণ আগেই ঢাকার ফ্লাইট থেকে নেমেছে ধ্রুব আর তারা। সিলেট থেকে সোজা ফ্লাইটে করেই ঢাকায় ব্যাক করেছে ওরা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে একটা টেক্সি নিলো ধ্রুব। বাসায় জানায়নি, ওরা আসছে, জানালে গাড়ি পাঠিয়ে দিতো ওদেরকে নিতে। ধ্রুব ইচ্ছে করেই সেটা এড়িয়ে গেছে। সে চায় তারার সাথে একটু অন্যরকম সময় কাটুক। টেক্সি যখন অন্য রাস্তায় মোড় ঘুরালো, ঠিক তখনই তারার টনক নড়লো। তারা ব্যাতিব্যস্ত হয় ধ্রুবকে বলতে লাগলো
-গাড়ি ভুল রাস্তায় যাচ্ছে।
-ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি আমরা। সামনের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো ধ্রুব।
তারা অবাক হয়ে বললো
-মানে?
-গেলেই দেখতে পাবে।
তারা আর কোনো কথা বাড়ালো না।
দীর্ঘ সময় পর টেক্সি এসে থামলো তারার পূর্বপরিচিত একটা জায়গায়। পরিচিত বললে ভুল হবে। তারার ফেভারিট প্লেস এটা। কলেজে পড়ার সময় প্রায়ই প্রিয় বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে আসতো এই ধানমন্ডির লেকটাতে। এই লেকটাতে একটা মায়া মায়া ভাব খুজে পায় তারা। নীলিমার ও খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিলো এটা। দুই বান্ধবীর বন্ধুত্বটাও খুব গভীর হয়েছিলো এই লেকটার কারণে। দুজনেরই যে প্রিয় জায়গা ছিলো এটা।

লেকের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত খুব ভালোভাবে দেখলো তারা। আজ নীলিমার কথা খুব মনে পড়ছে তারার। এই নীলিমাই ছিলো তার সবকিছু। সুখ দুঃখের সাথী। তুরিনের বিয়েতে এসে আকস্মিক দূর্ঘটনায় ওরা দুই বান্ধবীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। একটার পর আরেকটা দূর্ঘটনায় আর যোগাযোগ করা হয়ে উঠেনি আর।
তারাকে গভীর ভাবনায় দেখে ধ্রুব তারাকে ডাকলো। তারা তাকালো ধ্রুবর দিকে। ওর চোখদুটো পানিতে ভরে গেছে।
ধ্রুব পরম আবেশে চোখের পানিগুলো মুছে দিলো। ভারী গলায় বললো
-এমন দিনে কাদতে মানা, কাদছো কেন?
-এখানে নিয়ে এলেন কেন আমাকে? জড়ানো গলায় বললো তারা।
-ভালো লাগছেনা?
-আমার কথার উত্তর দিন।
-ইচ্ছে করলো তাই।
-শুধুই ইচ্ছে?
-তো আর কি?
-বাসায় যাবো আমি, চলুন।
-জায়গাটা দেখে আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে তোমার? দৃঢ় গলায় বললো ধ্রুব।
তারা অবাক হয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। সে কি করে জানলো আগের কথা? গম্ভীরমুখে তারা বললো
-মানে?
-আজ তোমার জন্য একটা স্পেশার সারপ্রাইজ আছে বউ।
-আমার কোনো সারপ্রাইজ চাইনা। বাসায় যাবো আমি।
-না চাইলেও সারপ্রাইজটা তোমাকে দিবো আমি।
-বললামতো আমি কোনো সারপ্রাইজ চাইনা। চেচিয়ে বললো তারা।
-ওঁকে। তাহলে চলো..বলেই উল্টোদিকে ঘুরলো ধ্রুব। ওকে অনুসরণ করে তারাও পিছন দিকে ঘুরলো যাওয়ার জন্য। মুহুর্তেই থমকে গেলো সে।

হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে কেউ ঠিক তারার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। হাতে একটা চিমটি কাটলো সে। নাহ এটা স্বপ্ন নয়, সত্যি। অতি আবেগে তারার চোখদুটো ভিজে টুইটুম্বুর হয়ে গেছে। মুহুর্তেই ঝাপিয়ে পরলো সে সামনে থাকার মেয়েটির উপর। মেয়েটিও অতি উৎফুল্লে জড়িয়ে ধরলো তারাকে। ধ্রুব কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে শান্তির হাসি লেগে আছে তার।
তারা এখনো মেয়েটিকে জরিয়ে ধরে কাদছে। মেয়েটি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো
-শুধু কি কেদেই যাবি নাকি? কথা বলবিনা রে তারু সোনা।
-চুপ কর তুই। কোথায় ছিলি এতোদিন? একবারের জন্যও কি খবর নিয়েছিলি আমার? আজ আসছিস কথা বলার জন্য।
অভিমানের স্বরে বললো তারা।
-নিজে যে বিয়ে করে নিলি, আমাকে বলছিলি একবার। এখন ঢং করছিস কেন?
-স্যরি রে। আসলে আমার বিয়েটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আর কিছুইনা। মুখটা মলিন করে বললো তারা।
-ইটস ওকে বেবি। এখন বল কেমন আছিস?
-ভালো আছি। তুই কেমন আছিস নীল?
-গেস কর, কেমন আছি।
তারা ভালো করে তাকালো নীলিমার দিকে। ব্লু কালারের একটা শাড়ি পরনে ওর, চোখে টানা কাজল। মুখে সামান্য ক্রিম মাখা শুধু, ঠোটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক, হাতে একটা ওয়াচ। সাজ বলতে শুধু এতোটুকুই। এতেই এতো গর্জিয়াস দেখা যাচ্ছে ওকে।
নীলিমা মিটমিট করে হাসতে হাসতে বললো
-কিরে, কি দেখছিস এভাবে?
-তোকে দেখছি।
-আমাকে আবার দেখার কি হলো?
-তোকে একদম নীল পরি লাগছে রে নীল। তোর নামের সাথে তোর সাজটা একদম পারফেক্ট মিলে গেছে।
-বাড়িয়ে বলবিনা একদম। আর নামের সাথে মিললো কিভাবে? আমার নাম কি নীল? আমার নাম তো নীলিমা।
-সে যাইহোক, আমার কাছে তুই নীল ছিলি, নীল আছিস, আর নীল ই থাকবি।
-হয়েছে হয়েছে। এখন থাম বাপ।
তুই বান্ধবী হাসি তামাশায় মেতে উঠলো। এতোদিন পর এভাবে প্রিয় বন্ধুটির সাথে দেখা হয়ে যাবে সেটা ভাবতেও পারেনি তারা।
কথার মাঝে থেমে তারা বললো
-এখানে কেন এসেছিস? কোনো দরকার?
-এমনি এসেছি।
-ভালো করেছিস এসে। তা নাহলে তোর সাথে আমার কি দেখা হতো নাকি।
নীলিমা হাসলো। তারা বললো..
-চল তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
-কার সাথে?
-আয় আমার সাথে।

দূরে একটা গাছের কাছে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব। তারা নীলিমাকে নিয়ে ওর সামনে গেলো। ধ্রুব তাকিয়ে আছে সোজা লেকটার দিকে৷ তারা কিভাবে ডাকবে ধ্রুবকে, সেই চিন্তায় পরে গেলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সামান্য কাশলো তারা।
কাশিটা কাজে দিলো। ধ্রুব ফিরলো ওদের দিকে। তারার দিকে তাকিয়ে বললো
-কিছু বলবে?
-হ্যাঁ
-বলো..
-আমার বান্ধবী, নীলিমা। নীলিমাকে দেখিয়ে বললো তারা।
ধ্রুব হাসলো। তারা ভ্রু বাকালো ধ্রুবর হাসি দেখে। কপাল কুচকে বললো
-হাসছেন কেন?
ধ্রুব পরম আবেশে তাকালো তারার দিকে। শান্তগলায় বললো
-তারা..
-জ্বী..
-বলেছিলাম না তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?
-হুম বলেছিলেন তো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো তারা।
ধ্রুব লেকের দিকে তাকালো আবার। খানিকক্ষণ চুপ থেকে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো
-এই নীলিমাই তোমার সারপ্রাইজ।

To be Continue……
To be Continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here