জানি দেখা হবে পর্ব ৩+৪

#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_03

– দুদিন পর তোর বিয়ে। আর আজ তুই অফিসে গেলি। আমি এই বয়সে সব একা সামলাই কি করে বলতো?
– ওহ sorry বাবা, আমি এখনই আসছি। তুমি কোনো চিন্তা করোনা।
– হুম তারাতা‌ড়ি আসিস।
– আচ্ছা বাবা।
.
ফোনটা রাখতেই তুরিনের কথা মনে হলো ধ্রুবর। তুরিনকে কল দিলো ও। তুরিন একটা ছেলের কাধে মাথা রেখে পার্কে বসে ছিলো। নানান ধরনের কথায় ব্যস্ত ছিলো ওরা। এমন সময় ধ্রুবর কল আশা করেনি ও। বেশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্কীনের দিকে তাকিয়ে থাকলো ও। ছেলেটি বললো..
– কি হলো, ফোনটা ধরো..
– ভাললাগে না কিছু। এমন একটা মুহুর্তে প্যারা দিতে খুব ভালো লাগে ওর।
ছেলেটি এক হাত দিয়ে তুরিনকে জড়িয়ে ধরলো। বললো.
– টাকার মেশিনকে এভাবে দুরে ঠেলে দিতে নেই। সেধে সেধে ধরা দিতে চাইছে, তাহলে তোমার প্রব্লেম টা কোথায়?
– টাকা না ছাই, ওই ছেলে তো আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। জানো, ওর মা বাবা এসে আমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে গেছে।
– Really? wow .. এমন একটা সুযোগ ইতো চাইছিলাম।
তুরিন ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো..
– তোমার মাথা ঠিক আছে তুষার? তোমার কথামত ওর সাথে রিলেশন করেছি যেনো ওর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারি.. কিন্তু বিয়ে করলে তো তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাবো।
– Don’t worry জানু, আমিতো আছি। তুমি ফোনটা ধরো।
তুরিন বেশ বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করলো..
– হ্যাঁ বলো..
– কোথায় আছো? কখন থেকে কল করছি ধরছোনা কেন?
– আমি কি সবসময় ফোনের কাছে বসে থাকি নাকি ?
– এভাবে কথা বলছো কেন? যাইহোক, আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে আজ?
– তোমার মাথা ঠিক আছে? আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। দুদিন পর আমাদের বিয়ে। এখন বাসা থেকে কি বের হতে পারবো?
– ওহ তাইতো। আচ্ছা আমি তাহলে এখন রাখছি।
– হুম bye
.
ধ্রুবর বাসায় খুব আয়োজন চলছে। যদিও তেমন কোনো জমকালো আয়োজন হচ্ছেনা। শুধু নিজেদের সব আত্মীয়দের নিয়েই বিয়ের আয়োজন টা সাজানো হচ্ছে। যেটাকে ঘরোয়া আয়োজন বলে আরকি।
ধ্রুব আর ধ্রুবর বাবা সবটা সামাল দিচ্ছে। সাথে ধ্রুবর বন্ধুবান্ধব রা সবাই আছে। রবি, রাব্বি, রাফসান, পিয়াস সবাই নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। যদিও ওরা বেশি একটা খুশি না এই বিয়ে নিয়ে। তবুও কেউ কিছু বলছেনা এ নিয়ে। কারণ সবাই জানে, ধ্রুবকে হাজার বলেও আর কোনো লাভ নেই।
ধ্রুব ডেকোরেশন টা ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা চেক করছিলো। কাজের একফাকে রবি ধ্রুবর হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো। আচমকা টান দেওয়ায় কিছুটা অবাক হলো ধ্রুব। বলল..
– কিরে? কি হয়েছে? এভাবে টানছিস কেন?
– দেখ ধ্রুব, এই বিয়েটা তুই করিসনা।
– কেনো? কপাল বাকা করে বললো ধ্রুব..
– ওই মেয়ে ভালোনা রে, বাজে একটা মেয়ে। সাথে লোভীও।
ধ্রুব রবিকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে বললো..
– দেখ, ওকে নিয়ে যদি তোর কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটা একান্তই তোর ব্যাপার। আমি যদি ওকে নিয়ে সুখে থাকি তাহলে তোদের সমস্যাটা কোথায়? আর তাছাড়া এইসব আজেবাজে কথা কোত্থেকে পেলি তুই?
– ভুলে যাস না তুরিস তোর ভাবির খালাতো বোন। আর খালাতো বোনের ব্যাপারে ও জানবে না তো কে জানবে?
– তোর বউ কি তুরিনের সাথেই থাকতো?
– সাথে থাকবে কেন? ও তো নিজের বাড়িতেই থাকতো।
– তাহলেই তুই বুঝ, নিজের বাড়ি থেকে আরেকটা শহরের মেয়ের সম্পর্কে কিভাবে কেউ সবটা জানতে পারে?
..
ধ্রুবর কথায় হতাশ হলো রবি। তারপরও নিজেকে শান্ত করে বললো..
– দেখ ভাই, তোর জীবন, তুইই ভালো বুঝিস। তোকে আর কি বলবো। তবুও বলছি, যাই করিস, ভেবেচিন্তে করিস।
ও আরেকটা কথা, তোর বিয়েতে আমি থাকতে পারবো না রে,
– কেনো? ভ্রু কুঁচকে বললো ধ্রুব।
– তুই তো জানিসই, তোর ভাবী তুরিনের খালাতো বোন হয়। তাই খালাতো বোনের বিয়েতে ওকে দাওয়াত দিয়েছে। আর আমিতো এখন ওর বর। তাই আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে। ভেবেছিলাম যাবোনা। তোর সাথেই থাকবো। কিন্তু আমিতো ওখানকার নতুন জামাই। আর ওর ও এখন একা যাওয়াটা শোভা পায়না। তবে চিন্তা করিস না। কনে নিয়ে ফেরার পথেই আমি তোর সাথে চলে আসবো। আর বিয়ের দিন তুই যাওয়ার পর থেকে আমি তোর সাথেই থাকবো সারাক্ষন।
– Ok ..
– All the best. Bye..
.
সারাদিন অনেক পরিশ্রমের পর ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় হেলিয়ে দিলো ধ্রুব।
দুচোখের পাতা শুধু এক হতে চাইছে। তবুও এক হতে দিচ্ছেনা ধ্রুব। জোর করে তাকিয়ে আছে ও। মনের মধ্যে রবির বলা কথাগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে বারবার । ওরা সবাই কেন মানতে চাইছেনা এই সম্পর্কটা? আর রবি একি বলল? আসলে ও কোনো ভুল করছেনা তো? ভাবতে পারছেনা ধ্রুব। ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে গেলো। তুরিনের একটা পিক দেখতে লাগলো। কয়েকদিন আগেই অনেক বলার পির ইমুতে এই পিকটা দিয়েছিলো তুরিন। ছবিতে কতো কোমল দেখা যাচ্ছে ওকে। আসলে ও বাস্তবেও এতোটা কোমল। আর মনটাও অনেক কোমল। যে যাই বলুক, কারো কথাই আমি মানিনা।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো ধ্রুব।
.
পরেরদিন ছোটখাটো একটা আয়োজনের মধ্যে দিয়েই গায়ে হলুদ সম্পন্ন হলো ধ্রুবর।
শুক্রবার সকালে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজেরা সবাই তৈরি হয়ে নিলো। বরযাত্রী বেরোবে আর কিছুক্ষন পর। ধ্রুবর মা খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। আর ধ্রুবর বাবা আয়নার সামনে দাড়িয়ে পায়জামা পাঞ্জাবি ঠিকঠাক আছে কিনা দেখছে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে মাথায় সামান্য তেল দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে আবারও পাঞ্জাবি ঠিক আছে কিনা দেখলো। তখনই কারো হাসির আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো ধ্রুবর বাবা। ধ্রুবর মা হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে বললো..
– বাহ, তুমি কি ছেলেকে বিয়ে করাতে যাচ্ছো নাকি নিজে বিয়ে করতে যাচ্ছো?
– দেখি, আগে ছেলের বিয়ে করাই, তারপর নিজের কপালেও যদি একটা জোটে.. বলেই হাসিতে মেতে উঠল দুজনেই। তারপর ধ্রুবর বাবা বললো..
– তা হটাৎ এই কথা কেন বললে?
– যেভাবে সাজগোজ করছো, আমি কেন, সবাই বলবে।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ গো হ্যাঁ। তা বেরোবে কখন?
– এইতো এখনই।
– তাহলে ওখানে যাও। সবাই বসে আছে। দেখো কেউ বাদ পরেছে কিনা।
– আচ্ছা আসো নিচে।
..
ধ্রুব বর সেজে বসে আছে নিজের ঘরে। বার বার তুরিনের নাম্বারে ডায়াল করছে ও। কিন্তু ফোনটা অফ পাচ্ছে। কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে ওর। এমন সময় রাফসান ঢুকলো ঘরে।
– কিরে এখনো বসে আছিস। সবাই অপেক্ষা করছে, চল।
– হ্যাঁ আসছি। আনমনে বললো ধ্রুব।
– কিরে, কিছু হয়েছে? কিছু ভাবছিস তুই?
– না মানে, তুরিনের নাম্বার টা বন্ধ।
– ওহ এই কথা। কিছু ভাবিস না। বিয়ে বাড়ি, মানুষে ভর্তি। তাই হয়তো ফোনের দিকে খেয়াল নেই। কিংবা ফোনে চার্জ নেই।
– হতে পারে।
– হুম চল।
.
বেলা ২ টার দিকে বরযাত্রী গিয়ে পৌছেছে তুরিনদের গ্রামের বাড়ি। তুরিনদের সমস্ত আত্মীয় থাকে গ্রামের বাড়ি, তাই বিয়েটাও সেখানেই হচ্ছে। বিয়ে বাড়ি যতোটা হইচই থাকার কথা ততোটা হইচই নেই। কেমন যেনো থমথমে ভাব। যেটা সবাইকে ভাবাচ্ছে। স্টেজে নিয়ে বসানো হয়েছে ধ্রুবকে। ধ্রুবর বন্ধুরা ওর চারপাশে ঘিরে বসেছে। ধ্রুব অপেক্ষা করছে রবির। কিন্তু ওর কোনো খবর নেই। ধ্রুবর বাবাকে দেখা গেলো হাসিমুখে ভিতরে ঢুকতে। কিন্তু বের হলো তুরিনের বাবার সাথে। তবে মুখে নেই কোনো আনন্দ, হাসি।
অনেক্ষন পর রবি এলো ধ্রুবর কাছে। রবির মুখটাও কেমন থমথমে। ধ্রুব কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
– কিরে, কোথায় ছিলে এতোক্ষন?
– ভিতরেই ছিলাম। কাজ করছিলাম আরকি.
– বাহ, বাবু দেখছি খুব কাজের হয়েছে। পাশ থেকেই রাব্বি আর পিয়াশ বলে উঠলো।
– নিজের উপর পরলে তুইও কাজের হবি।
– রবি শোন.. (ধ্রুব)
– বল..
– কিছু হয়েছে কি? সব ঠিকঠাক আছেতো?
– ভয় হচ্ছে?
– না মানে, কেমন যেনো লাগছে সবকিছু।
– ভয়ের কিছুই নেই। সব কিছু ঠিকঠাক ই আছে।
রবির কথায় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ধ্রুব।
..
বিয়ের কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সন্ধ্যের দিকেই কনেকে নিয়ে রওনা করলো সবাই। কনের মুখে লম্বা করে ঘোমটা দেওয়া, তাই এখন পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বধুবেশে দেখতে পারেনি ধ্রুব।
..
রাত ১১:০০ টা,,
ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো ধ্রুব। পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝখানে লম্বা করে ঘোমটা টেনে বসে আছে নববধূ। ধ্রুব রুমের দরজাটা ভালভাবে আটকে খাটের একপাশে গিয়ে বসলো। বললো.
– তুরিন, আজ আমাদের দুজনের স্বপ্নের রাত। আজ আমাদের দুজনের ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে। জানো, আজ আমি খুব খুশি। খুব..
তুমি জানো , এই দিনটার জন্য আমি কতো অপেক্ষা করেছি?
.
– তুরিন, তুরিন কথা বলছো না কেন? তুরিন..
তুমি কি খুশি হওনি? ঘোমটা টা তুলো প্লিজ.. তুরিন।
বারবার ডাকার পরেও কোনো সাড়া পেলোনা ধ্রুব। তাই নিজেই এগিয়ে গেলো ওর কাছে। আস্তে আস্তে নিজের হাতে ঘোমটা টা টেনে তুললো ধ্রুব।
মুহুর্তেই থমকে গেলো ধ্রুব। আচমকাই যেনো ধ্রুবর মাথায় বাজ পরলো। একি দেখলো ও? এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন? ভাবতে পারছে না ধ্রুব। একটা ঘোরের মধ্যে চল গেলো ও.। গলা কাঁপছে। কন্ঠ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।
আচমকাই একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো..
– তুমি কে?
.
To be Continue…..#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_03

– দুদিন পর তোর বিয়ে। আর আজ তুই অফিসে গেলি। আমি এই বয়সে সব একা সামলাই কি করে বলতো?
– ওহ sorry বাবা, আমি এখনই আসছি। তুমি কোনো চিন্তা করোনা।
– হুম তারাতা‌ড়ি আসিস।
– আচ্ছা বাবা।
.
ফোনটা রাখতেই তুরিনের কথা মনে হলো ধ্রুবর। তুরিনকে কল দিলো ও। তুরিন একটা ছেলের কাধে মাথা রেখে পার্কে বসে ছিলো। নানান ধরনের কথায় ব্যস্ত ছিলো ওরা। এমন সময় ধ্রুবর কল আশা করেনি ও। বেশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্কীনের দিকে তাকিয়ে থাকলো ও। ছেলেটি বললো..
– কি হলো, ফোনটা ধরো..
– ভাললাগে না কিছু। এমন একটা মুহুর্তে প্যারা দিতে খুব ভালো লাগে ওর।
ছেলেটি এক হাত দিয়ে তুরিনকে জড়িয়ে ধরলো। বললো.
– টাকার মেশিনকে এভাবে দুরে ঠেলে দিতে নেই। সেধে সেধে ধরা দিতে চাইছে, তাহলে তোমার প্রব্লেম টা কোথায়?
– টাকা না ছাই, ওই ছেলে তো আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। জানো, ওর মা বাবা এসে আমার সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে গেছে।
– Really? wow .. এমন একটা সুযোগ ইতো চাইছিলাম।
তুরিন ব্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললো..
– তোমার মাথা ঠিক আছে তুষার? তোমার কথামত ওর সাথে রিলেশন করেছি যেনো ওর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারি.. কিন্তু বিয়ে করলে তো তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাবো।
– Don’t worry জানু, আমিতো আছি। তুমি ফোনটা ধরো।
তুরিন বেশ বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করলো..
– হ্যাঁ বলো..
– কোথায় আছো? কখন থেকে কল করছি ধরছোনা কেন?
– আমি কি সবসময় ফোনের কাছে বসে থাকি নাকি ?
– এভাবে কথা বলছো কেন? যাইহোক, আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে আজ?
– তোমার মাথা ঠিক আছে? আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। দুদিন পর আমাদের বিয়ে। এখন বাসা থেকে কি বের হতে পারবো?
– ওহ তাইতো। আচ্ছা আমি তাহলে এখন রাখছি।
– হুম bye
.
ধ্রুবর বাসায় খুব আয়োজন চলছে। যদিও তেমন কোনো জমকালো আয়োজন হচ্ছেনা। শুধু নিজেদের সব আত্মীয়দের নিয়েই বিয়ের আয়োজন টা সাজানো হচ্ছে। যেটাকে ঘরোয়া আয়োজন বলে আরকি।
ধ্রুব আর ধ্রুবর বাবা সবটা সামাল দিচ্ছে। সাথে ধ্রুবর বন্ধুবান্ধব রা সবাই আছে। রবি, রাব্বি, রাফসান, পিয়াস সবাই নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। যদিও ওরা বেশি একটা খুশি না এই বিয়ে নিয়ে। তবুও কেউ কিছু বলছেনা এ নিয়ে। কারণ সবাই জানে, ধ্রুবকে হাজার বলেও আর কোনো লাভ নেই।
ধ্রুব ডেকোরেশন টা ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কিনা চেক করছিলো। কাজের একফাকে রবি ধ্রুবর হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো। আচমকা টান দেওয়ায় কিছুটা অবাক হলো ধ্রুব। বলল..
– কিরে? কি হয়েছে? এভাবে টানছিস কেন?
– দেখ ধ্রুব, এই বিয়েটা তুই করিসনা।
– কেনো? কপাল বাকা করে বললো ধ্রুব..
– ওই মেয়ে ভালোনা রে, বাজে একটা মেয়ে। সাথে লোভীও।
ধ্রুব রবিকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে বললো..
– দেখ, ওকে নিয়ে যদি তোর কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটা একান্তই তোর ব্যাপার। আমি যদি ওকে নিয়ে সুখে থাকি তাহলে তোদের সমস্যাটা কোথায়? আর তাছাড়া এইসব আজেবাজে কথা কোত্থেকে পেলি তুই?
– ভুলে যাস না তুরিস তোর ভাবির খালাতো বোন। আর খালাতো বোনের ব্যাপারে ও জানবে না তো কে জানবে?
– তোর বউ কি তুরিনের সাথেই থাকতো?
– সাথে থাকবে কেন? ও তো নিজের বাড়িতেই থাকতো।
– তাহলেই তুই বুঝ, নিজের বাড়ি থেকে আরেকটা শহরের মেয়ের সম্পর্কে কিভাবে কেউ সবটা জানতে পারে?
..
ধ্রুবর কথায় হতাশ হলো রবি। তারপরও নিজেকে শান্ত করে বললো..
– দেখ ভাই, তোর জীবন, তুইই ভালো বুঝিস। তোকে আর কি বলবো। তবুও বলছি, যাই করিস, ভেবেচিন্তে করিস।
ও আরেকটা কথা, তোর বিয়েতে আমি থাকতে পারবো না রে,
– কেনো? ভ্রু কুঁচকে বললো ধ্রুব।
– তুই তো জানিসই, তোর ভাবী তুরিনের খালাতো বোন হয়। তাই খালাতো বোনের বিয়েতে ওকে দাওয়াত দিয়েছে। আর আমিতো এখন ওর বর। তাই আমাকেও দাওয়াত দিয়েছে। ভেবেছিলাম যাবোনা। তোর সাথেই থাকবো। কিন্তু আমিতো ওখানকার নতুন জামাই। আর ওর ও এখন একা যাওয়াটা শোভা পায়না। তবে চিন্তা করিস না। কনে নিয়ে ফেরার পথেই আমি তোর সাথে চলে আসবো। আর বিয়ের দিন তুই যাওয়ার পর থেকে আমি তোর সাথেই থাকবো সারাক্ষন।
– Ok ..
– All the best. Bye..
.
সারাদিন অনেক পরিশ্রমের পর ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় হেলিয়ে দিলো ধ্রুব।
দুচোখের পাতা শুধু এক হতে চাইছে। তবুও এক হতে দিচ্ছেনা ধ্রুব। জোর করে তাকিয়ে আছে ও। মনের মধ্যে রবির বলা কথাগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে বারবার । ওরা সবাই কেন মানতে চাইছেনা এই সম্পর্কটা? আর রবি একি বলল? আসলে ও কোনো ভুল করছেনা তো? ভাবতে পারছেনা ধ্রুব। ফোন টা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে গেলো। তুরিনের একটা পিক দেখতে লাগলো। কয়েকদিন আগেই অনেক বলার পির ইমুতে এই পিকটা দিয়েছিলো তুরিন। ছবিতে কতো কোমল দেখা যাচ্ছে ওকে। আসলে ও বাস্তবেও এতোটা কোমল। আর মনটাও অনেক কোমল। যে যাই বলুক, কারো কথাই আমি মানিনা।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো ধ্রুব।
.
পরেরদিন ছোটখাটো একটা আয়োজনের মধ্যে দিয়েই গায়ে হলুদ সম্পন্ন হলো ধ্রুবর।
শুক্রবার সকালে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজেরা সবাই তৈরি হয়ে নিলো। বরযাত্রী বেরোবে আর কিছুক্ষন পর। ধ্রুবর মা খুব ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। আর ধ্রুবর বাবা আয়নার সামনে দাড়িয়ে পায়জামা পাঞ্জাবি ঠিকঠাক আছে কিনা দেখছে। সবকিছু ঠিকঠাক হলে মাথায় সামান্য তেল দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে আবারও পাঞ্জাবি ঠিক আছে কিনা দেখলো। তখনই কারো হাসির আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো ধ্রুবর বাবা। ধ্রুবর মা হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে বললো..
– বাহ, তুমি কি ছেলেকে বিয়ে করাতে যাচ্ছো নাকি নিজে বিয়ে করতে যাচ্ছো?
– দেখি, আগে ছেলের বিয়ে করাই, তারপর নিজের কপালেও যদি একটা জোটে.. বলেই হাসিতে মেতে উঠল দুজনেই। তারপর ধ্রুবর বাবা বললো..
– তা হটাৎ এই কথা কেন বললে?
– যেভাবে সাজগোজ করছো, আমি কেন, সবাই বলবে।
– তাই নাকি?
– হ্যাঁ গো হ্যাঁ। তা বেরোবে কখন?
– এইতো এখনই।
– তাহলে ওখানে যাও। সবাই বসে আছে। দেখো কেউ বাদ পরেছে কিনা।
– আচ্ছা আসো নিচে।
..
ধ্রুব বর সেজে বসে আছে নিজের ঘরে। বার বার তুরিনের নাম্বারে ডায়াল করছে ও। কিন্তু ফোনটা অফ পাচ্ছে। কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে ওর। এমন সময় রাফসান ঢুকলো ঘরে।
– কিরে এখনো বসে আছিস। সবাই অপেক্ষা করছে, চল।
– হ্যাঁ আসছি। আনমনে বললো ধ্রুব।
– কিরে, কিছু হয়েছে? কিছু ভাবছিস তুই?
– না মানে, তুরিনের নাম্বার টা বন্ধ।
– ওহ এই কথা। কিছু ভাবিস না। বিয়ে বাড়ি, মানুষে ভর্তি। তাই হয়তো ফোনের দিকে খেয়াল নেই। কিংবা ফোনে চার্জ নেই।
– হতে পারে।
– হুম চল।
.
বেলা ২ টার দিকে বরযাত্রী গিয়ে পৌছেছে তুরিনদের গ্রামের বাড়ি। তুরিনদের সমস্ত আত্মীয় থাকে গ্রামের বাড়ি, তাই বিয়েটাও সেখানেই হচ্ছে। বিয়ে বাড়ি যতোটা হইচই থাকার কথা ততোটা হইচই নেই। কেমন যেনো থমথমে ভাব। যেটা সবাইকে ভাবাচ্ছে। স্টেজে নিয়ে বসানো হয়েছে ধ্রুবকে। ধ্রুবর বন্ধুরা ওর চারপাশে ঘিরে বসেছে। ধ্রুব অপেক্ষা করছে রবির। কিন্তু ওর কোনো খবর নেই। ধ্রুবর বাবাকে দেখা গেলো হাসিমুখে ভিতরে ঢুকতে। কিন্তু বের হলো তুরিনের বাবার সাথে। তবে মুখে নেই কোনো আনন্দ, হাসি।
অনেক্ষন পর রবি এলো ধ্রুবর কাছে। রবির মুখটাও কেমন থমথমে। ধ্রুব কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
– কিরে, কোথায় ছিলে এতোক্ষন?
– ভিতরেই ছিলাম। কাজ করছিলাম আরকি.
– বাহ, বাবু দেখছি খুব কাজের হয়েছে। পাশ থেকেই রাব্বি আর পিয়াশ বলে উঠলো।
– নিজের উপর পরলে তুইও কাজের হবি।
– রবি শোন.. (ধ্রুব)
– বল..
– কিছু হয়েছে কি? সব ঠিকঠাক আছেতো?
– ভয় হচ্ছে?
– না মানে, কেমন যেনো লাগছে সবকিছু।
– ভয়ের কিছুই নেই। সব কিছু ঠিকঠাক ই আছে।
রবির কথায় একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ধ্রুব।
..
বিয়ের কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সন্ধ্যের দিকেই কনেকে নিয়ে রওনা করলো সবাই। কনের মুখে লম্বা করে ঘোমটা দেওয়া, তাই এখন পর্যন্ত নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে বধুবেশে দেখতে পারেনি ধ্রুব।
..
রাত ১১:০০ টা,,
ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকলো ধ্রুব। পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝখানে লম্বা করে ঘোমটা টেনে বসে আছে নববধূ। ধ্রুব রুমের দরজাটা ভালভাবে আটকে খাটের একপাশে গিয়ে বসলো। বললো.
– তুরিন, আজ আমাদের দুজনের স্বপ্নের রাত। আজ আমাদের দুজনের ভালোবাসা পূর্নতা পেয়েছে। জানো, আজ আমি খুব খুশি। খুব..
তুমি জানো , এই দিনটার জন্য আমি কতো অপেক্ষা করেছি?
.
– তুরিন, তুরিন কথা বলছো না কেন? তুরিন..
তুমি কি খুশি হওনি? ঘোমটা টা তুলো প্লিজ.. তুরিন।
বারবার ডাকার পরেও কোনো সাড়া পেলোনা ধ্রুব। তাই নিজেই এগিয়ে গেলো ওর কাছে। আস্তে আস্তে নিজের হাতে ঘোমটা টা টেনে তুললো ধ্রুব।
মুহুর্তেই থমকে গেলো ধ্রুব। আচমকাই যেনো ধ্রুবর মাথায় বাজ পরলো। একি দেখলো ও? এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন? ভাবতে পারছে না ধ্রুব। একটা ঘোরের মধ্যে চল গেলো ও.। গলা কাঁপছে। কন্ঠ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা।
আচমকাই একটা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো..
– তুমি কে?
.#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_04
..
– তুমি কে?
বিছানায় বধুবেশে বসে থাকা শ্যাম বর্ণের মেয়েটি ভয়ার্ত চোখে ধ্রুবর দিকে তাকালো। কিন্তু কিছুই বললো না।
ধ্রুব আবারও ধমকের সুরে বললো..
– বলছো না কেনো কে তুমি? শুনতে পাওনা আমার কথা? আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি নাকি?
– আ আমি … আমি তারা.. তুললাতে তুতলাতে বললো মেয়েটি।
– তারা মানে? এখানে তো তুরিনের থাকার কথা। তুমি কি করছো এখানে?
– তুরিন আমার ছোট বোন। ওর সাথেই আপনার বিয়ে হবার কথা ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় বললো।
– What the hell … 😡 আমার সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?
.
মা, বাবাআআ.. চিল্লাতে চিল্লাতে ঘর থেকে বের হলো ধ্রুব। ধ্রুবর চিৎকারে মা বাবাসহ বাকি আত্মীয়রা নিজেদের রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। মা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো..
– কি হয়েছে বাবা? এভাবে চিৎকার করছিস কেন?
– কি হয়েছে? কি হয়নি সেটা বলো? তোমরা কার সাথে আমার বিয়ে করিয়েছো?
– কেনো? তুই যাকে ভালোবাসিস তার সাথেই তো।
– না, তার সাথে না। ও অন্য মেয়ে। ও তুরিন না। ও তুরিনের বড় বোন। রাগি গলায় বললো ধ্রুব।
– বড় বোন! কি বলছিস এইসব? অবাক হয়ে ধ্রুবর বাবার দিকে তাকালে ধ্রুবর মা। ধ্রুবর বাবা অপরাধীর মতো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
ধ্রুবর মা ওর বাবার সামনে গিয়ে দাড়ালো। বললো..
– ধ্রুব এইসব কি বলছে?
– ও ঠিকই বলছে। ওই মেয়ের সাথে ধ্রুবর বিয়ে হয়নি, যাকে ও ভালোবাসতো। আর যার সাথে আমরা ওর বিয়ে ঠিক করেছিলাম।
– কেনো বাবা? কেনো? কেনো এমন করলে? আমার ভালোবাসার কি কোনো দাম নেই তোমাদের কাছে?
– আমাদের কাছে তোর ভালোবাসার দাম আছে। কিন্তু তুই যাকে ভালোবেসেছিলি, ওই মেয়ের কাছেই তোর ভালোবাসার কোনো দাম ছিলোনা, আর এখন পর্যন্ত নেইও.. ।বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললেন ধ্রুবর বাবা।
– মানে কি? ও আমাকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে। আর তোমরা বলছো ওর কাছে আমার ভালোবাসার কোনো দাম নেই??
.
– হ্যাঁ নেই, ওর কাছে তোর ভালোবাসার কোনো দাম নেই। যদি থাকতো তাহলে বিয়ের আগেই ওই মেয়ে পালিয়ে যেতোনা।
– পালিয়ে গেছে? তুরিন বিয়ের আগেই পালিয়ে গেছে?? অবাক হয়ে বললো ধ্রুব।
– হ্যাঁ পালিয়ে গেছে। আর তাই বাধ্য হয়ে ওদের আর আমাদের মানে আমাদের দুই পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে ওরই বড় বোনের সাথে আমরা তোর বিয়েটা করিয়েছি।
– বাহ বাবা, এই মেয়েকে বিয়ে করানোর আগে আমাকে একবার বলার প্রয়োজন ও মনে করলে না?
– না করিনি। প্রয়োজন মনে করিনি। তোর ইচ্ছামতো বিয়ে করাতে গিয়েই আজ অপমানিত হতে গেছিলাম। ভাগ্যিস, এই মেয়েটা আমাদের সম্মান বাচিয়েছে।
.
ধ্রুব আর ধ্রুবর বাবার কথাগুলো অবাক হয়ে শুনছিলো ধ্রুবর মা। কথার একফাকে তিনি বললেন..
– তাহলে আমি কেন এই মেয়েকে চিনলাম না ও তুরিনা না?
– তুমি কি বোকা হয়ে গেছো ধ্রুবর মা? তুমি চিনবে কি করে, ওই মেয়ে কি যেনো নাম, হ্যাঁ তুরিন ওতো সেদিন বাসাতেই ছিলোনা। তাই ওকে দেখোনি তুমি। আজ বুঝতে পারছি কেনো এই মেয়ে সেদিন বাসায় ছিলোনা। আসলে ওই মেয়ে একটা ক্যারেক্টারলেস। তা নাহলে আমরা যাওয়া স্বত্বেও ওই মেয়ে সেদিন বাসাতে ছিলোনা কেন..
..
ধ্রুব এতোক্ষন বাবার কথাগুলো নিরবে শুনছিলো। হটাৎ করে বলে উঠলো..
– এখন বুঝতে পারলাম, কেনো তুরিনের সাথে আমার বিয়েটা হয়নি।
– কেনো? অবাক হয়ে বললো ধ্রুবর বাবা।
– কারনটা হলো রাগ,, সেদিন তুরিন বাসায় ছিলোনা। তাই ওর প্রতি তোমাদের নেগেটিভ ধারণা জন্মেছে। আর সেই নেগেটিভ ধারণা থেকে রাগ। আর সেই কারণেই তোমরা চাওনি ওর সাথে আমার বিয়েটা হোক। আসলে সবকিছুই তোমাদের প্ল্যান। আর এখন বলছো পালিয়ে গেছে। ছিঃ বাবা ছিঃ।
– ধ্রুব 😡 কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা কি তুই ভুলে গেছিস? ভুলে যাস না, উনি তোর বাবা। আর কোনো বাবা মা চায়না তার সন্তান অসুখী হোক। বেশ গর্জে কথাগুলো বললো ধ্রুবর মা। ধ্রুবর বাবা অবাক হয়ে গেছে নিজের ছেলের কথা শুনে।
.
ধ্রুব বললো..
– হ্যাঁ, তোমরা চেয়েছো আমি সুখী হয়। হ্যাঁ আমি সুখী হবো। তবে এই মেয়েকে নিয়ে না। আমি আমার তুরিনকে নিয়েই জীবন সাজাবো। ওকে কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে খোঁজে বের করবোই। কথাটা বলেই ঘরের দিকে পা বাড়ালো ধ্রুব। কিছুদুর গিয়ে আবারও থেমে গেলো। বললো..
– আর হ্যাঁ একটা কথা.. তোমরা কিছু যেনো বলেছিলে,? এই মেয়েটা তুরিনের বড় বোন। ও কেমন বোন যে নিজের ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষকে কৌশলে নিজে বিয়ে করে নিলো? ক্যারেক্টারলেস তুরিন না, ক্যারেক্টারলেস এই মেয়েটা। আর আরেকটা কথা, তোমরা সবাই কান খোলে শুনে রাখো,,, আমি এই বিয়েটা মানিনা। হুহ.. হনহন করে চলে গেলো ধ্রুব। সবাই যেনো পাথর হয়ে গেলো। ধ্রুবর বাবা মাথায় হাত দিয়ে পাশে রাখা সোফায় বসে গেলেন।
.
খাটের উপর বসে বাইরের সবকিছুই এতোক্ষন শুনছিলো তারা। এতোক্ষনে অঝোর পানি বয়ে যাচ্ছে তার চোখ দিয়ে। শুধুমাত্র বাবার সম্মান বাঁচানোর জন্য এই বিয়েটা করেছে ও। ছোট বোনের ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়েটা হচ্ছে, ঝামেলা হবে এইরকম কিছু একটা আগেই বুঝতে পেরেছিলো তারা। কিন্তু এর পরিণতি যে এইরকম কিছু হবে ভাবতে পারেনি ও।
– এইরকম ন্যাকা কান্না কাদবেন না প্লিজ। সহ্য হয়না এগুলো।
ধ্রুবর এই কটু কথায় ছলছল চোখে সামনের তাকালো তারা। কিছু একটা বলতে চাইছে ও ।কিন্তু পারছে না।
ধ্রুবই বললো..
– কি ভেবেছেন আপনি, ঢ্যাং ঢ্যাং করে বোনের পয়শা ওয়ালা ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে শান্তিতে থাকবেন? কেমন বোন আপনি? লজ্জা করলোনা এভাবে নিজের বোনের সাথে বেইমানি করতে? ছিঃ
তারা কিছু বলছে না। ধ্রুবর বলা কথার জবাব দেওয়ার মতো সামর্থ্য ওর নেই। তাই নিরবে চোখের পানি ফেলছে।
ধ্রুব আবারও বলতে লাগলো..
– একটা কথা কান খোলে শুনে রাখুন, বিয়ে করে স্বামী বানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু স্বামীকে কখনো পাবেন না আপনি। সে অধিকার আমি আপনাকে দিবোনা। কারণ, আমার উপর অধিকার শুধুমাত্র তুরিনের। আর কারো না। আশা করি আপনিও কখনো আমার উপর অধিকার খাটাতে আসবেন না। যদি কখনো ভুলেও আমার উপর অধিকার ফলাতে চান, তাহলে এর ফল খুব খারাপ হবে এই বলে রাখলাম হুহ.. ।
কথাটা বলেই রাগে হনহন করে পাশের রুমে চলে গেলো ধ্রুব। বেচারি তারা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ধ্রুবর যাওয়ার পথে।
..
ভোর পৌনে পাঁচটায় ঘুম ভাংলো তারার। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো জানা নেই ওর। ধীরে ধীরে উঠে এক পাশে রাখা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এক রাতেই চোখগুলো কেমন ফুলে গেছে। শ্যাম বর্ণের হলেও কাঁদতে কাঁদতে মুখ লাল হয়ে গেছে ওর। কিছুক্ষন আয়নার সামনে দাড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে ওয়াসরুমে গেলো তারা। শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আবারও কাঁদতে লাগলো ও। না চাইতেও কাঁদছে। চোখগুলো বাধ মানছে না ওর। শুধুমাত্র বাবার সম্মানের জন্য নিজেকে কুরবানী দিয়ে হয়েছে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে। আজ যদি মা বেচেঁ থাকতো তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হতোনা ওর। এইসব ভাবতে ভাবতেই আবারও কেদে উঠল ও।
ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজঘরে গেলো তারা। যদিও নামাজঘর কোনটা ওর জানা ছিলোনা। খোজতে খোজতে পেয়েছে। ফজরের নামাজ সেড়ে কুরআন পড়তে বসলো ও।
..
ধ্রুবর বাবার সবেমাত্র ঘুম ভেঙ্গেছে। এখনো বিছানাতেই শুয়ে আছে। এমন সময় কারো মিষ্টি কন্ঠে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের সুর ভেসে আসলো কানে। কিছুটা অবাক হলেন তিনি। কারণ এই বাড়িতে ধ্রুবর মা ছাড়া আর কেউই কুরআন তেলাওয়াত করেন না। কিন্তু ধ্রুবর মা তো এখনো ঘুমিয়ে আছে। কাল অনেক ধকল গেছে, তাই হয়তো এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি। কিন্তু এখন কে তেলাওয়াত করছে? নতুন বউমা?? ওতো সবেমাত্র এই বাড়িতে এসেছে। তাছাড়া আসার পরেই তো ওকে নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়ে গেলো। তাহলে কে?
এইসব ভাবতে ভাবতেই নামাজ ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো ধ্রুবর বাবা। নামাজ ঘরের সামনে গিয়েই খুশিতে জ্বলজ্বল করতে লাগলো উনার চোখগুলো।
নাহ, উনি ভুল কাউকে ছেলের বউ করে এই বাড়িতে আনেন নি। নিজের ছেলের জন্য এর চেয়ে পার্ফেক্ট বউ আর হবেনা।
..
কিছুক্ষন কুরআন তেলাওয়াত করে সেটা বন্ধ করে বাইরে বের হতে যাবে এমন সময় দেখলো নিজের শশুর দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে।
মাথার ঘোমটা টা আরেকটু সামনে টেনে শশুরের পায়ে সালাম করলো তারা। ধ্রুবর বাবা তারাকে দুহাতে ধরে উপরে উঠিয়ে বললো..
– তুই কি দিয়ে তৈরি রে মা??
.
To be Continued ….
To be Continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here