জেদ পর্ব -২২+২৩

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
জানালার ধারে চুপচাপ বসে আছি আমি ।চারদিক নিস্তব্ধ ।জানালার গ্রিলগুলো এখন বেড়ি জালের মত লাগছে।মনে হচ্ছে যেন কোন খাচায় আটকে আছি ।দম বন্ধ হয়ে আসছে ।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে কিন্তু কেন জানি কাদার ইচ্ছেটুকুও মরে গেছে এখন।নিজেকে কেমন অনুভূতিশূন্য মনে হচ্ছে।
টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল চোখ বেয়ে ।পেছন থেকে নার্স এসে ডাক দিলেন।
-Excuse me Ma’am .সকালের মধ্যে এই মেডিসিনগুলো এনে দিবেন ।
নার্স হাতে একটা ওষুধের লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।চারদিকে আবার সেই পিন পতন নিরবতা ছেয়ে গেল।কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে জানালার কাচে চোখ মেললাম।বাবার হাতে এখনো স্যালাইন লাগানো ।নার্স মাত্র এসে স্যালাইনের প্যাকেট চেঞ্জ করে দিয়ে গিয়েছেন ।এই নিয়ে বাবাকে তিনটে প্যাকেট স্যালাইন দেওয়া হল।কিন্তু বাবার অবস্থার কোন উন্নতি নেই।ডাক্তার বলেছেন মাইনর হার্ট এট্যাক ।তবে ডায়াবেটিস আর বিপি বেশি হওয়ার কারনে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।বাবার মুখটা বেশ শুকিয়ে গেছে ।মা বাবার একটা হাত দুহাতে ধরে সেখানেই মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন।বড্ড ক্লান্ত লাগছে তাকে।
আমি ওখান থেকে সরে এসে জানালার কাছে দাড়ালাম।ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে। মধ্যে।ফোনটা হাতের মধ্যে ঝড় তুলে শান্ত হয়ে গেল।আমি জানি এটাই শেষ কল ছিল ।আরদ্ধ আর কল দিবে না।এতক্ষনে ও জেনে গেছে আমি কোথায় আছি কি করছি ।একটা কালো গাড়ি এসে মিনিট পাচেক আগে হাসপাতাল টহন দিয়ে গেছে।আমি কোথায় যাই কি করি প্রতিটা খবর ও জানে ।ছায়ার মত ওর নজর থাকে আমার উপর।সব কিছু জেনেই সে আমাকে কল দিয়েছে। এইবার ধরা আরদ্ধ ১৩৪ বার কল দিয়েছে । ৩৭টা ম্যাসেজ ।আমি কোনটারই জবাব দেই নি ।সত্যি বলতে ইচ্ছে করেই দেইনি ।আরদ্ধকে এই মুহুর্তে ফেস করার শক্তি নেই আমার ।লাস্ট কয়েকটা ঘন্টায় আমার জীবনে যেন একটা বড় ধরনের ঝড় বয়ে গেছে।যে ঝড়ের বিন্দুমাত্র পূর্বাভাস আমি পাইনি।সব কিছু যেন এক নিমিষেই লন্ডভন্ড হয়ে গেল এই ঝড়ে।
.
.
বিকেল পাচটায় অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছি।গাড়ি থেকে নামার সময় আরদ্ধ পেছন থেকে হাট টেনে ধরল।আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ছেলেটা ছোট বাচ্চার মত মুখ ফুলিয়ে আছে।আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম
-কি হলো?
আরদ্ধ কিছু না বলে কপালে কপাল ঠেকিয়ে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে কাছে টেনে নিল।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-ইনা আমার লাইফে ভালোবাসা মানে শুধু তুমি।আমার যান্ত্রিক জীবনে তুমি ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছ ।আমি তোমাকে ছাড়া কখনো কাউকে ভালোবাসতে পারব না।
কথাটা বলেই আরদ্ধ আলতো করে আমার ঠোট দুটো মুখে পরে নিল।খুব যত্ন করে চুমু একে দিল ঠোটের কোনে।
বাসার পরিবেশ আজ কেন জানি বেশ থমথমে৷ কেউ কোন কথা বলছে না।বাসায় আসার পর থেকে বাবাকে একবারও দেখিনি।মাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই হ্যা না তে উত্তর দিয়ে এরিয়ে যাচ্ছে।হঠাত করে কি হল কে জানে।
রাত প্রায় ১১টা পার হয়েছে। আমি সব কিছু গুছিয়ে বসলাম আরদ্ধর সাথে একটা ডিজাইন ফাইনালাইজ করার জন্যে। দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে আরদ্ধ বলে উঠল
-কাজ শেষ হল সব?
আমি জবাব দিব তার আগেই মা এসে রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলে গেলেন
– তোর বাবা তোকে ডাকছে।
আরদ্ধের কথার জবাব না দিয়ে
-I’ll call you back
বলে ফোনট কাটে দিলাম।
.
বাবা নিজের রুমে ইজি চেয়ারে বসে আছে।মা পাশের বেডে কাপড় গোছাচ্ছেন। আমি রুমে গিয়ে ছোট্ট করে নক করলাম
– বাবা ডেকেছ?
বাবা কোন ভনিতা ছাড়াই বললেন
– তুই কি জানতি অই ছেলের বাবা আহমেদ রেজান?
আরদ্ধর ফ্যামিলি ইনফরমেশন জানলে এরকম প্রশ্নের সম্মূখীন হতে হবে এটা আমার জানা ছিল আগে থেকেই।বাবা এসব জিনিসকে খুব বড় মনে করেন৷ তাই হঠাত এরকম প্রশ্নে অবাক হলাম না৷ আমি স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিলাম
– জ্বি জানতাম।
– সব কিছু জানার পরেও ওই ছেলের সাথে তুমি সম্পর্ক রেখেছ?
-জ্বি।
-কেন?
-কারন ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে।আমার কেয়ার করে৷ আমাকে সম্মান করে।
-কেন আমরা কী তোমাকে কেয়ার করিনি?যত্ন করে মানুষ করিনি?
-বাবা তুমি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
-কোথাও নিয়ে যাচ্ছিনা। তুমি ভালো করেই জানো ওই ছেলের ফ্যামিলি ঠিক নাই।ওর বাবা ওর মাকে খুন করেছে।তারপরেও অই ছেলের সাথে তুমি কীভাবে সম্পর্ক রাখতে পার?
বাবার কথা শুনে যেন থমকে গেলাম আমি।কি বলব ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। এদিকে বাবা বলেই চলছেন
-খালি পড়াশুনা করলে আর দেখতে সুন্দর হলেই মানুষ হওয়া যায় না।ফ্যামিলিটাই আসল।
বাবার সাথে তাল মিলিয়ে মাও বলে উঠলেন
– ওরা হাইক্লাস ফ্যামিলির ছেলে। ছোট থেকে আয়ার কাছে বড় হয়েছে।ওদের চরিত্রের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।আজ এই মেয়ে তো কাল অই মেয়ে৷ বিয়ে করলেও দেখবি ব্যববসার নাম করে অন্য দেশে যায়ে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করছে।জানতে পারবি তুই?
-জানলেও কি করবে? ডিভোর্স দিবে?আবার তো অই বাপের ঘাড়ে এসেই পড়বে। মানুষ কি বলবে?সমাজে তো মুখ দেখানো বন্ধ হয়ে যাবে।…..
বাবা মা দুই জনেই অনবরত বলেই চলছেন লাগামহীন ভাবে।আমার দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি বেয়ে পরছে। ঠিক কতটা নিচু মানসিকতার হলে মানুষ এসব চিন্তা করতে পারে আমি জানি না।
-…….একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ ইনা।আমি বেচে থাকতে অই ছেলের সাথে আমি কখনো তোর বিয়ে দিব না।তুই যদি অই ছেলেকে বিয়ে করতে চাস তাহলে আমার লাশ ডিংগিয়ে যেতে হবে৷
বাবার কথা শুনে যেন আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি চোখ তুলে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম
-তাহলে কার সাথে বিয়ে দিবে?
বাবা কিছুটা দম নিয়ে বললেন
-আরাজের সাথে। ইমতিয়াজ সাহেব আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উনি আমাকে বলেছেন “ভাই আপনার মেয়েকে আমি নিজের মেয়ের মত করে রাখব।”কোন সমস্যা হলে আমি নিজে গিয়েই সমাধান করে দিতে পারব।তোর বিয়ে হলে আরাজের সাথেই হবে।এটা আমার শেষ কথা।
– আমি আরদ্ধ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না বাবা।বাবা আরদ্ধ অনেক ভালো ছেলে। আরদ্ধর ফ্যামিলি নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। তাছাড়া ওর বাবা ওর মাকে খুন করেনি। ওটা এক্সিডেন্ট ছিল।
-চুপ কর।একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না। তুই কি ভাবিস আমরা তোর বাপ মা হয়ে তোর খারাপ চিন্তা করব?কামাই করে খাওয়াস বলে তুই যা বলবি তাই হবে?
আমার কথা শেষ না হতেই মা গর্জে উঠলেন।আমাকে তারা কথা বলার কোন সুযোগ দিচ্ছেন না।আমার ভালোর চেয়ে বাবার জেদটাই বড় তার কাছে।মা অনবরত কথা শুনাচ্ছেন আমাকে।তার মাঝখানেই বাবা হঠাত করে বুকে হাত দিয়ে বসে পরলেন।আমি আর মা ছুটে গেলাম তার কাছে।বাবা বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন। আমি কাপাকাপা হাতে ফোন বের করে এম্বুলেন্সকে ফোন দিলাম।বাবা হাসফাস করতে করতে জ্ঞান হারালেন।
.
.
দিন তিনেক কেটে গেছে।এই তিনদিন আমার খাওয়া ঘুম কাজ সব কিছুই থমকে ছিল।মা বাসায় যেতেন। ঘন্টা খানেকের মধ্যে খাবার আর কাপড় নিয়ে ফিরতেন। আমি প্রতিটা মুহুর্তে বাবার বেডের পাশে বসে থাকতাম। আজ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হল।ডাক্তার ডিসচার্জ দিতে নারাজ। কিন্তু বাবা হাসপাতালে থাকতে চান না। উনার বক্তব্য বাসাতে থাকলে উনি জলদি সুস্থ হবেন। শেষমেষ উনার জেদের কাছে হেরে ডাক্তার ডিসচার্জ দিতে বাধ্য হলেন। তবে উনি বার বার করে বলে দিয়েছেন যাতে বাবাকে কোন প্রকার স্ট্রেস যাতে না দেওয়া হয়। উনি যাতে সব সময় হাসি খুশি থাকেন।নাহলে পরের বার হয়তো আর তাকে ফিরে নাও পাওয়া যেতে পারে।
বাবাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলাম।তিনদিনে বেশ কাজ জমে গেছে।বিকালের মধ্যে সব কাজ গুছিয়ে সন্ধ্যার আগে আগে বাসার জন্যে রওয়ানা হলাম।
.
.
মা এখনো আমার সাথে কথা বলছেন না। উনার সম্পূর্ন মনযোগ এখন বাবার দিকে৷হবেই না বা কেন!ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্টটা যে কি বেদনাদায়ক সেটা এই মুহুর্তে আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।
ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা বাজে।আমি জানালার ধারে বসে আছি। বাইরে থেকে হালকা বাতাস আসছে।কখনো বা গুমোট হয়ে যাচ্ছে।এই তিনদিনে আরদ্ধ একবারও কল দেয় নি। কিন্তু আমি জানি ও রাগ করে নেই।আমার প্রতিটা নিশ্বাসের খবর ও জানে।ফোনটা হাতে নিলাম। একবার রিং পরতেই ওপাশ থেকে ফোন তুলল সে।যেন জানতো ঠিক এই সময়েই আমি কল দিব তাকে।
– খেয়েছ তুমি?
আরদ্ধর কথার জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না এখন। আমি আকাশের পানে চেয়ে বললাম
– গান শুনবে একটা?
আরদ্ধ কিছু বলল না। শুধু ছোট্ট করে হু বলল।
আমি চোখে পানি আটকিয়ে সুর ধরলাম..#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৩
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
ঠিক ২৭ দিন ৫ ঘন্টা ৩৪ মিনিট পর আমি আর আরদ্ধ মুখোমুখি।বাবার অনিচ্ছায় নয় বরং অনুমতি নিয়েই এসেছি আজ ।আরদ্ধর মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই আমার।আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছি।আরদ্ধ চুপচাপ ফোন টিপছে।অফিস আওয়ার শেষ ।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আরদ্ধর ড্রাইভারকে ফোন করে জানতে পারলাম সে এখনো অফিসেই আছে। ।আরদ্ধ ইদানিং দেরী করে বাসায় ফিরে।নিজের কষ্ট লুকাতে কাজে ডুবে থাকে সে ।
আমি এক পা দু পা করে অফিসে ঢুকলাম।আরদ্ধ কেবিনে বসে ফাইল চেক করছে।দরজায় নক করতে যাব তখনি ভেতর থেকে আওয়াজ এল
-দুনিয়া ওলট পালট হয়ে গেলেও আমার কেবিনে ঢুকার জন্যে তোমার পারমিশন লাগবে না।
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ ওর সামনে গিয়ে বসলাম।এই ক দিনে সব কিছু কেমন যেন পালটে গেছে।আরদ্ধ আর মার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে হাজারো প্রশ্ন ভীর করছে।উত্তর জানতে চাচ্ছে সব অজানার ।আমি ছোট্ট একটা দম ফেলে আরদ্ধের দিকে তাকাতেই আরদ্ধ বলে উঠল
-জব ছেড়ে দিয়েছ?
-হ্যা
-কেন?
-যেখানে অস্তিত্বের ঠিক নাই সেখানে যোগ্যতা নিয়ে টানাটানি করা বেমানান।
আরদ্ধ নিষ্পলক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
বাবা ছোট থেকে আমার সব বিষয়েই আমার ইচ্ছার চেয়ে নিজের জেদকে প্রাধান্য দিয়েছেন।ভেবেছিলাম হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাতে হয়তো তিনি আমার মতামত জানতে চাইবেন।আমার ভালোলাগা মন্দ লাগাটাক প্রাধান্য দিবেন।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ।বাবার কাছে আমার ভালোবাসার চেয়ে তার জেদ বড় ।
-ডাক্তার কি বলেছেন?
-বাবাকে কোন প্রকার স্ট্রেস না দিতে।নেক্সট টাইম বাবার মেজর এটয়াক হতে পারে।তখন আর বাবাকে বাচানো জাবে না।
গলা ভারী হয়ে আসছে আমার।ঠিকিভাবে শব্দ বের হচ্ছে না মুখ থেকে।কান্না দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায় ।
-ইনা।
আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে দেখি ও ঠোটে একটা হাসি ধরে রেখেছে।কিন্তু সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে আছে বেদনা।না পাওয়ার যন্ত্রনা।
-আরদ্ধ…
-আরাজ ফিরে এসেছে?
-হ্যা সপ্তাহ খানেক আগের ফ্লাইটে ঢাকা এসেছে।বাবা ইমারজেন্সী কলে ওকে ডেকে পাঠিয়েছে।
আরদ্ধ কোন কথা বলল না।চুপচাপ সে উঠে গিয়ে গ্লাসের পাশে দাড়াল।আমি গিয়ে তার কাধে হাত ছোয়ালাম।
-বিয়েটা কোনভাবে আটকানো যায় না ইনা?
-প্লিজ চলো অন্য কোথাও চলে যাই ।এই দেশ এই শহর ছেড়ে দূরে।যেখানে কেউ থাকবে না তুমি আর আমি ছাড়া।আরদ্ধ প্লিজ চলো সব কিছু ছেড়ে চলে যাই।আমার টাকা পয়সা গাড়ী বাড়ি কিচ্ছু চাই না।শুধু তুমি থাকলেই হবে।
আরদ্ধ পিছন ফিরে ছোট্ট একটা হাসি দিল।খুব কষ্ট করে হাসিট ফুটালেও আরদ্ধের মায়াবী চেহারাটা দেখেই আমার মন ভরে গেল।আরদ্ধ আমার দুগালে হাত দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-এরকম যদি করতেই হতো তবে কবেই তোমাকে নিজের করে নিতাম।এত অপেক্ষা করতাম না!
-তোমার আর বাবার এই জেদের মাঝে আমার লাইফ আটকে আছে।আমি কি চাই এইটা কেউ দেখে না।
-Hey Ina.Listen.I know তুমি কি চাও ।Trust me তুমি যেটা চাও আমিও সেটাই চাই।But the thing is you owe to your parents.They love you right?They have raised you .
-Aroddho Please.I don’t wanna hear those parenting things.সন্তান লালন পালন আর গুড প্যারেন্টীং এর মধ্য huge difference আছে।এটা তুমিও ভালো করে জানো ।আমার লাইফের স্ট্রাগল সম্পর্কে তুমি ভালো করেই জানো।ইভেন জব জয়েন করার জন্যে কতটা কাঠ খড় পুড়িয়ে বাবাকে রাজী করাতে হয়েছে সেটাও তমার অজানা না।শুধু বাবার জেদের জন্যে আমি নিউইওর্কের জবটা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছি।বাবা ছোট থেকেই আমার চেয়ে বেশি ইমতিয়াজ আংকেলের কথাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।মানুষ কি বলবে ,ইমতিয়াজ আংকেল কি ভাববে এর জন্যে বাবা আমাকে কখনো বাসা থেকে বের হতে দিত না ।আমার কখনো কোন খেলার সাথী ছিল না।কোণ ভালো ফ্রেন্ড ছিল না ।দুই দিন কারও সাথে ঘুরতে দেখলেই বাবা নিষেধাজ্ঞা জারি করত যাতে তার সাথে আর কখনো কথা না বলি।কত রাত আমি নিরবে কেদেছি এটা শুধু আমিই জানি ।
কাদতে কাদতে মাটিতে বসে পরলাম আমি ।আরদ্ধ তাড়াহুড়া করে আমার কাছে এসে বসল।দু হাতে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
-ইনা তুমি সব সময় নিজের দিক থেকে চিন্তা করেছ।তাই হয়তো আংকেলের দিকটা দেখোনি।তার দিক থেকে একবার চিন্তা করে দেখ ,তার কনসার্নটা একবার বুঝে দেখ।সবকিছু নরমাল মনে হবে।
আরদ্ধর কথা শুনে প্রচন্ড রাগ উঠছে আমার ।হাত ছাড়িয়ে চেচিয়ে উঠলাম
-কিছু চেঞ্জ হবে না আরদ্ধ ।আমি চাইলেও আমার অতীত বদলাতে পারব না।কিচ্ছু পাল্টাবে না।আর বাবা যখন আমার দিকটা চিন্তা করেনি আমি কেন তার দিক চিন্তা করব?তার চেয়েও বড় কথা কি জানো ?I thought out of the entire world আমার মা আমাকে সাপোর্ট দিবে।বাট না।আমি ভুল ছিলাম ।সেও পরে আছে বাবার মত তার জেদ নিয়ে ।ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড নিয়ে ।
-ইনা ইনা ইনা রিলাক্স।শুহহহহহহহ…..Relax My girl relax.
আরদ্ধ দু হাতে আমাকে আগলে নিল।খুব শক্ত করে হড়িয়ে মিশিয়ে নিল নিজের সাথে।

-Ina দুনিয়া এদিক হোক বা ওদিক আমি সব সময় তোমাকে ভালোবাসছি।আরদ্ধ সব সময় ইনার ছিল ইনারই থাকবে ।কিন্তু হয়তো আরদ্ধের ভাগ্যে ইনা লেখা ছিল না !
আরদ্ধর কথা শুনে আমি চোখ খুলে তাকাল্ম।আমি কিছু বলার আগেই আরদ্ধ বলে উঠল
-ইনা আমি জানি আমরা চাইলেই অনেক দূরে কোথাও গিয়ে নিজেদের ম করে থাকতে পারব।কিন্তু ইনা ট্রাস্ট মি তাতে তোমার মা বাবা কষ্ট পাবেন ।তুমি নিজেও হ্যাপি থাকবা না।ইনা আমি চাইনা আমার জন্যে তোমার বাবা মা তোমাকে হারাক ।আমি এত বড় দায় কখনোই নিতে পারব না।তোমার বাবার কিছু হয়ে গেছে তুমি নিজেকে মাফ করতে পারবে?
-বাট আরদ্ধ…
আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিল না সে।টুপ করে ঠোট দুটো মুখে পুরে নিয়েছে সে।তার গরম নিশ্বাস এসে পরছে আমার মুখে ।ঠোট ছেড়ে আরদ্ধ কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
-ভালোবাসি ইনা।তবে হয়তো পূর্নতার প্রাপ্তি ছিল না ।
আরদ্ধর কথা শুনে আমি সরে আসলাম।উঠে দাঁড়িয়ে চোখমুখ মুছে নিজেকে সামলে নিলাম।ব্যাগ থেকে বিয়ের লাল কার্ডটা বের করে এগিয়ে দিলাম আরদ্ধর টেবিলের উপরে।এক তরফা আরদ্ধের দিকে তাকিয়ে চলে আসতে লাগলাম।আরদ্ধ পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলল
-ইনা হয়তো এই দুনিয়ায় আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন নি ।কিন্তু খুব করে চাইব যাতে ওপার দুনিয়ায় তোমাকে পাই।
টুপ টুপ করে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে আমার ।আর একমুহুর্তও থাকা সম্ভব না আমার।আমি একছুটে বেরিয়ে এলাম অফিস থেকে।পেছনে পড়ে রইল আমার ভালোবাসা,একটা দীর্ঘশ্বাস আর অনেক অপূর্নতা।…….
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here