জেদ পর্ব -২৪+২৫

#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৪
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
-ইনায়াত কায়া ,পিতা আব্দুল বারেক আপনার বিবাহ আরাজ ইবনে ওয়াসিম পিতা ইমতিয়াজ ইবনে ওয়াসিম এর সাথে দেনমোহর দশ লাখ একটা ধার্য করা হয়েছে।আপনি কি এই বিয়েতে রাজী ?বলেন কবুল ।
আমি চুপচাপ বসে আছি।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ।গলার মধ্যে যেন অজস্র কাটা বাসা বেধে আছে।বুকের ভেতরে চলছে রক্তক্ষরন।আমাকে চুপ থাকতে দেখে কাজী সাহেব আবার বলে উঠলেন
-বলেন মা কবুল।
আশেপাশের মানুষ মুখ চাওয়াচায়ী করছে।যদিও মানুষ বলতে দুই ফ্যামিলির যত সামান্য আত্মীয় ছাড়া কেউ নেই।তবুও বিয়ের পিড়িতে বসে কন্যার মত পাল্টানোর ঘটনা নেহায়েতে নেক্কারজনক আমাদের সমাজে।মা পিছন থেকে আমাকে খোচা দিয়ে বললেন
-কি রে ?কবুল বল।
.
ঠিক এই সময়টার জন্যে আমি অনেক অপেক্ষা করেছিলাম ।শুধু আমিই কেন প্রতিটা মেয়েই বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন সাজিয়ে রাখে।কত ইচ্ছা ,কত শখ থাকে এই দিনটাকে ঘিরে ।ঠিক আমিও ভেবেছিলাম একদিন আমারও বিয়ে হবে এমন একজনের সাথে যাকে আমি খুব ভালোবাসব।যে আমার জন্যে নিজের সবটা উজার করে দিবে।গা ভর্তি গয়না আর ভারী শাড়ী পরে আমি বিয়ের পিড়িতে বসব।আমার বর মুগ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।অপেক্ষায় থাকবে ঠিক কখন আমি লাজুক লাজুক স্বরে কবুল বলব ।অসংখ্য মানুষের ভীড়ে সে আমাকে নিজের করে নিয়ে যাবে।
হ্যা সব কিছুই ঠিক ছিল।একটা মানুষ যে আমাকে ভালোবাসে নিজেকে উজাড় করে,আমার সবকিছুতেই যার অধিকার ,যে সর্বদাই আমার দিকে মুগ্ধ পানে তাকিয়ে থাকে ।কিন্তু বাবার ছোট্ট একটা জেদ আমার সব স্বপ্ন সব পাওয়াকে ধুলোয় মিশিয়ে দিল।
.

বাবা চেয়েছিল ধুমধাম করে বিয়ে আয়োজন করতে ।একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা ।আত্মীয় স্বজনের একটা বড় সড় লিস্ট এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাবা বললেন
-লিস্ট টা চেক কর তো !বিয়েতে কোন কোন মেহমান আসবে তার লিস্ট ।দেখ কেউ বাদ পরেছে কিনা ।তোর বন্ধুদের নাম ও দিয়ে দিস।
বাবা একদফা কাগজটাতে চোখ বুলিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।আমি তখন পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যা তারার ডুবে যাওয়া টিমটিম আলো দেখতে ব্যস্ত ।আকাশের লালা আভা মুখে যাচ্ছে ক্ষানিকক্ষন হলো।আবার আবার কাগজটা নাড়ীয়ে বলল
-কি হল? নে!
আমি কোন ভাবান্তর দেখালাম না ।মাথা না ঘুরিয়ে বললাম
-কাজে সাহেব আর সাক্ষি মিলিয়ে যাতে দু পক্ষে জন দশেকের বেশি না আসে।না হলে আরাজের জন্যে হয়তো অন্য পাত্রী খুজতে হবে।
-দেখ ইনা বাড়াবাড়ি করিস না ।তুই আমার একমাত্র মেয়ে ।বিয়েতে আত্মীয় স্বজন এলাকাবাসীকে দাওয়াত না দিলে লোকে কি বলবে !আমার একটা মানসম্মান আছে।তাছাড়া বিয়ে তো শুধু তুই করছিস না ।আরাজও করছে।তার তো শখ আল্লাদ আছে নিজের বিয়ে নিয়ে।
-লোকে কি বলবে সেটা নিয়ে চিন্তা করা তোমার কাজ বাবা আমার না।সমস্যা যখন তোমার সমাধানও তুমিই করবে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে না।আমি যা বলেছি সেটাই আমার শেষ কথা।
-বাবা কিছু বলতে গিয়েও বললেন না।রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলেন।
.
.
পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্যে দামী গয়না আর ভারী কাজের বেনারসী পাঠিয়েছে।সকাল সকাল সব কিছু নিয়ে ঘরে আসলেন মা।নিজ থেকেই বলে উঠলেন
-আত্মীয় স্বজন কাউকেই বিয়ের দওয়াত করতে দিলি না।মানুষ বলে কি!পড়াশুনা করিয়ে এত বড় করেছি এতটুকু সেন্স নাই ।এই ভাবে লুকায় বিয়ে দিলে এলাকাবাসী কানাঘুষা করবে নিশ্চয়ই মেয়ের কোন সমস্যা আছে।আমাদের মান সম্মানের চেয়ে তোর জেদটাই বড়??ছোট থেকে নিজের মনমানি চালিয়ে এসেছিস…….
মা ঘর গোছাতে গোছাতে নিজ থেকেই বলে যাচ্ছেন কথা গুলো।আমার সেদিকে খেয়াল নেই।আমি বিছানায় শুয়ে কুরআন শরীফের আয়াত দেখছি ।আরদ্ধ একটা সব সময় বলত
-ইনা লাইফ হচ্ছে পাজেলের মত ।যেখানে ঢুকলে মনে হয় এখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই ।নেই কোন দরজা।কিন্তু মানুষের লাইফে কখনো একসাথে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় না ।একটা না একটা রাস্তা আল্লাহ সব সময় খোলা রাখেন।আমাদের শুধু দরকার সঠিকভাবে আল্লাহকে অনুসরন করে সেই দরজাটা খুজে বের করা।আল্লাহ তার বান্দাদেরকে অনেক ভালোবাসেন।যদি কখনো মন খারাপ থাকে,নিজেকে একা মনে হয় টুক করে কুরআন টা নিয়ে বসে যাবে।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
-কিরে কথা কানে যাচ্ছে না?কিছুক্ষন পর তোর বিয়ে।নামাজের পর পরেই বরযাত্রী চলে আসবে তুই এখনো নবাবজাদির মত শুয়ে আছিস?উঠ এখন রেডি হয়ে নে।
মার কথা শুনে আমি উঠে বসলাম।এই ক দিনে নিজের একটুও যত্ন নেওয়া হয় নি।যদিও আমার যত্ন আমি কখনোই নিতাম না ।নিত আরদ্ধ ।আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াতেই হালকা চমকে গেলাম আমি।চুল উষ্ক খুশক।চেহারার অবস্থা মলিন।চোখ গুলো কালো কোটতে ঢুকে গিয়েছে।মা পেছনে অনবরত বলেই চলছেন।হঠাত করে কেদে উঠলেন তিনি
-কত শখ ছিল মেয়ের ধুমধাম করে বিয়ে দিব ।আত্মীয় স্বজন আসবে।দশজনে হাত তুলে দোয়া করবে।পোড়া কপাল আমার ।….
-মা বাইরে গিয়ে কাদো ।আমি রেডী হব এখন ।
আমার কথা শুনে মা চুপ হয়ে গেলেন ।একরাশ রাগ আর অভিমান নিয়ে তিনি বের হয়ে গেলেন।আমি রুমের দরজা লাগিয়ে আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
দুপুরের দিকে বাবা একবার এসে দরজায় টোকা দিয়ে বলে গেলেন
-কি রে ইনা রেডি হস নি?বরযাত্রী চলে আসছে প্রায় ।রেডি হয়ে নে জলদি ।
আমি উঠে একবার বিয়ের শাড়িটাতে হাত বুলালাম ।
.
.
বরযাত্রী এসেছে প্রায় মিনিট দশেক হয়েছে।মা এসে দরজায় নক করছেন ।আমি চুপচাপ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।মা আমাকে দেখেই সেকেন্ড কয়েক হা করে তাকিয়ে থাকলেন।আরাজের দেওয়া কোন কিছুই আমি পরিনি।আমার পরনের শাড়ীটা আরদ্ধ আমাকে জন্মদিনে গিফট করেছিল।গয়না বলতে আরদ্ধের দেওয়া পেন্ডেন্ট যেটা সব সময় আমার গলায় ঝোলানো থাকে আর দু কানে ছোট দুটো ইয়ারিং ব্যাস এই শেষ ।চোখে হালকা কাজল +ঠোটে ন্যুড লিপস্টিক ।আমাকে দেখে মা গর্জে উঠলেন।
-কি শুরু করছিস তুই?তোকে বিয়ের শাড়ি দিয়ে গেলাম।তুই ওটা না পরে এটা কি পরেছিস?এখনো রেডি হস নি কেন তুই?
-আমি রেডি মা চলো ।
-ইনা কি শুরু করলি?তুই এই কাপড়ে বিয়ে করবি?
-মা পূর্নবয়স্ক মেয়েকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোড় করে বিয়ে দেওয়াটা ইসলামে হারাম ।আমি চাইনা বিয়েটা হারাম হয়ে যাক একটা শাড়ীর জন্যে।চলো ।
মাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমি সেখান থেকে চলে এলাম।
বলা বাহুল্য আমাকে দেখে আরাজের পুরো পরিবার আর আত্মীয় সবার চোখ কপালে উঠেছে।তারা সবাই বেশ আড়ম্বর আর যাক জমকের সাথেই এসেছেন।আরাজকে বেশ যত্ন করে বর সাজানো হয়েছে।আমি চুপচাপ গিয়ে বিয়ের পিরিতে বসে পড়লাম।আরদ্ধর সাথে কাটানো দিন গুলো ,একসাথে মিশে থাকা মুহুর্তগুলো ,তার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে থাকার অনুভুতি গুলো,তার ঠোটের উষ্ম স্পর্শ আর তার ভুবন ভুলানো মায়াবী হাসি সব কিছুই এক এক করে ভেসে আসছে চোখের সামনে।আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে কাজি আমার বিয়ের সম্মতি নিয়ে চলে গেলেন।হয়তো আরদ্ধ আর ইনার পথ চলা এই পর্যন্তই ছিল।
বাবা ওপাশে সোফায় আরাজের পাশে বসে আছেন।আমাকে চুপ থাকতে দেখে গর্জে উঠলেন
-ইনা সময় যাচ্ছে।কবুল বলো তাড়াতাড়ি ।
বাবার কথা শুনে আমি মাথা নাড়ালাম।কাজী সাহেব মাশাল্লাহ বলে আমার সই নিয়ে চলে গেলেন।ওপাশ থেকে আরাজ কবুল বলে উঠল ।বাবা আর ইমতিয়াজ আংকেল গলাগলি করলেন ।তাদের বন্ধুত্ব আজ নতুন সম্পর্কে রুপ নিল ।আর হাওয়ায় মিলিয়ে গেল আমার অনুভূতিগুলো ।……#জেদ(A Conditional LoveStory)
#পার্ট২৫
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
প্রায় মিনিট ২০ এক আগে আরাজের বড় বোন মুনতাহা আপু আমাকে আরাজের রুমে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে।পুরো রুম গাদা ফুল আর রজনগন্ধ্যা স্টিক দিয়ে সাজানো ।আরাজের বিয়ে নিয়ে তাদের জাকজমকের শেষ নেই। বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা।আয়োজনের কোন কমতি নেই। শুধু আত্মীয়ের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য৷ গাড়ি থেকে নেমেই মুনতাহা আপু আর আরাজের ছোট বোন নিশিতা দরজা আটকিয়ে ধরল। কড়ায় গন্ডায় ১০ হাজার টাকা বুঝে নিয়ে তবেই রাস্তা ছাড়ল।আরাজ বেশ হাসি মুখেই সব সামলাচ্ছে।মুনতাহা আপু চলে যেতেই আমি রুমের দরজা লাগিয়ে দিলাম।ফ্রেশ হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালাম।আরাজের রুমের ব্যালকনিটা খুব একটা বড় না।তিন হাত লম্বা আর দেঢ় হাত চওড়া।ওপাশের কোনে ধুলো জমে একাকার অবস্থা।আমি আর সামনে এগোলাম না।ওখানেই গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।বাইরে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে।আরাজের বোন আর অন্য আত্মীয়রা নাচ গান করছে।
আরও ১০ মিনিট দেরী করে আরাজ এল ।দরজা আগে থেকেই খুলে রেখেছিলাম ।অযথা সীণ ক্রিয়েট করার কোন ইচ্ছে নেই আমার।আরাজ রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েই যেন একটা বড় সড় ঝটকা খেল ।পুরো রুম এর সব ফুল আমি ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি ।বিছানার উপর বড় একটা ফুলের ঝালর লাগানো ছিল ।সেটাও খুলে ফেলেছি।ঘরের এক কোনে সেটা গড়াগড়ি খাচ্ছে।আরাজ পুরো রুমটাতে চোখ বুলিয়ে আমার দিকে তাকাল ।ঠিক ভুত দেখার মত চমকে উঠল সে ।উঠারই কথা ।বাসর রাতে নতুন বউ কে লাল শাড়ী পরে লজ্জা পাওয়ার পরিবর্তে কেউ যদি কালো জামা পরে শোক করতে দেখে তাহলে অবাক হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না
পরিস্থিতি সামলাতে আরাজ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল
-ইনা ।তুমি ওখানে ওভাবে …..
আমি ধুলো ঝারতে ঝারতে এগিয়ে এলাম।
-আরাজ বাবা তোমাকে কি বলেছে আমি জানি না।কিন্তু আমি তোমাকে পরিষ্কারভাবে একটা কথা বলতে চাই এই বিয়েটা আমার ইচ্ছেতে হয়নি।হয়েছে বাবার জেদের জন্য।তুমি বিয়ে নিয়ে আনন্দ করতেই পার ।আমার তাতে কোন আপত্তি নেই ।কিন্তু আমার উপস্থিতি কামনা করলে সেটা তোমার বোকামি ছাড়া আর কিছু না ।আর হ্যা আরেকটা কথা।আমার নাম ইনায়াত ।সুতরাং প্রয়োজন হলে ইনায়াত বলেই ডাকবে ।ইনা নয়।
আমার কথা শুনে আরাজ বিরক্ত হয়েছে বেশ বুঝা যাচ্ছে ।পাগরিটা মাথা থেকে খুলে একদিকে ছুড়ে মেরে দুই কদম এগিয়ে এসে বলল
-Come on Ina.I’m your husband.I have the right .আর তাছাড়া বিয়ের জন্যে আমিও প্রস্তুত ছিলাম না।ইনফ্যাক্ট আমি তো সবকিছু ছেড়ে চলেই গিয়েছিলাম ।বাবা একদিন হুট করে ফোন করে আমাকে জানালেন মা নাকি খুব অসুস্থ ।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি যেন ফিরে আসি ।আমি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দেশে এসে শুনি তুমি নাকি সব মেনে নিয়েছ।আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছ।আমাদের বিয়ে দুই সপ্তাহ পর।বিয়ের চার দিন আগে আংকেল এসে জানালেন উনি ভেবেছিলেন হয়তো তুমি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ের জন্যে রাজী হয়েছ।তাই ধুমধাম করে তোমার বিয়ে দিবেন ।কিন্তু তোমার জেদের জন্যে he kept it simple.
একনাগারে কথা গুলো বলে থামল আরাজ ।বেশ বুঝতে পারছে মাথা গরম করে ফেলেছে সে।নিজেকে শান্ত করে বলল
-দেখ ইনা…।
-ইনায়াত
-ওকে ইনায়াত ।দেখো ইনায়াত এভাবে হুট হাট ডেকে এনে বিয়ে নিয়ে আমারও কোন আইডিয়া ছিল না।আমি যদি একটূ হলেও জানতাম যে বিয়েতে তোমার মত নেই তাহলে হয়তো আটকানোর চেস্টা করতাম। ।বিয়ে নিয়ে আমিও প্রস্তুত ছিলাম না।হ্যা বিয়েতে আমি হাসি মুখে বিয়েটা করেছি but you can’t blame me for that আমরা যা চাই সব সময় তা হয় না।অনেক সময় আমরা ভুল জিনিসের প্রতি মোহজালে আটকে পরি।আমরা ভাবি হয়তো সেটাই ঠিক।বিয়ে আর জীবন মৃত্যু আল্লাহর হাতে।You can’t do anything over that.
-আমি তোমাকে কোন কিছুর জন্যেই ব্লেম করছিনা আরাজ।যদি ব্লেম করতেই হত তাহলে এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম না।আমি আরদ্ধকে ভালোবাসি।প্রচন্ড ভালোবাসি।আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শুধু তাকেই ভালোবাসব। তার জায়গা কেউ কখনোই নিতে পারবে না।কিন্তু বিয়েতে আপত্তি শুধু আরদ্ধের সাথে না হওয়ার কারনেই ছিল না আমার।বিয়েটা ঠিক করা হয়েছিল আমাকে না জানিয়েই। বলতে পার আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার অস্তিত্বকে বিলিন করে শুধু উপস্থিতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷এই বিয়েটা আমি করেছি শুধু বাবার মান রাখতে। আমাদের বিয়ে হয়েছে।আইন এবং ধর্ম উভয় মতেই তুমি আমার স্বামি।কিন্তু আমাদের মধ্যাকার স্বামী স্ত্রীর যে বন্ধন সেটাতে বাধতে পারব না আমি৷
এতটুকু বলেই থামলাম আমি। আরাজ হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যা হয়েছে তাতে হয়তো আরাজের কোন দোষ ছিল না।হয়তো বা ছিল।আমার কথাগুলো হয়তো আরাজের জন্যে অযৌক্তিক হয়তো সেও আমার মত পরিস্থিতির হাতে বাধ্য। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি মাথা পেতে চুপচাপ সব মেনে নিব। আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে আর আমি সেটা মুখ বুঝে সহ্য করব।
আরাজ আমার কথাগুলো কোনভাবে হজম করে আরও দুই কদম এগিয়ে এসে বলল
-ইনা আমি তোমার সিচুয়েশন বুঝি।হুট করে একটা নতুন সিচুয়েশনে কোপ আপ করা ইজি না।তোমার যতটা সময় লাগে নিতে পারো আমার কোন আপত্তি নেই বাট শুধু একটা রিকুয়েস্ট।In the meantime আমরা কি বন্ধু হয়ে থাকতে পারি না?
আরাজের কথা শুনে আমি হালকা হেসে বললাম
-অনেক বড় বড় সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে পরেছি আরাজ। যতবেশি সম্পর্ক বাড়বে আমার দম নিতে ঠিক ততটাই কষ্ট হবে। আমি এখন সম্পর্ক গড়তে নয় ভাংতে বিশ্বাসী।আশাকরি উত্তর টা পেয়ে গেছ।
আরাজ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল।আমি সেটা উপেক্ষা করেই সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আরাজ এখনো হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ফ্রেশ হয়ে লাইট টা অফ করে দিও। আলো বড্ড চোখে লাগে আমার।
কথাগুলো বলে আমি উলটো দিকে মুখ ফেরালাম।ঘড়িতে কেবল ১২টা বাজে। আজকের রাতটা অনেক বড়। আমার জীবনের ইতিহাসের এক জঘন্যতম কালো সময়।…
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here