জোড়া শালিকের সংসার পর্ব ১৯+২০

#জোড়া_শালিকের_সংসার
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_১৯

কয়েক মিনিট পর নির্ঝরকে জড়িয়ে রাখা খেয়ার হাত দুটো ঢিলে হয়ে আসতেই চমকে উঠলো সে।খেয়ার মুখটা সামনে এনে বুঝতে পারলো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।নির্ঝর তাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকলো।

রুম অন্ধকার।বিদ্যুৎ চলে গেছে।নির্ঝর খেয়াকে ভেজা অবস্থাতেই হাতড়ে হাতড়ে সোফায় বসাল।বেড থেকে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখল।শুকনো টাওয়াল নিয়ে খেয়ার হাত মুখ মুছে ওয়ারড্রব থেকে শাড়ি বের করলো।

এগুলো পড়াতে নিতেই বিপাকে পড়লো।অচেতন অবস্থায় পড়াবে কীভাবে?তাছাড়া সে শাড়িও পড়াতে পারে না।মিতুকে ডাক দিবে?

নির্ঝর খেয়ার গালে হাত রেখে মৃদুস্বরে বার কয়েক ডাক দিল।খেয়া রেসপন্স করলো না।

অগত্যা নিজের ট্রাউজার আর লং টিশার্ট বের করে রুম অন্ধকার করে নিজেই চেঞ্জ করে দিল।বিছানায় শুইয়ে গায়ে মোটা কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে দিল।বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে অন্ধকারেই খেয়ার অবয়বের দিকে চেয়ে রইলো।

শীত শীত অনুভব হতেই টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল।

২৬.

রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া তো আছেই!মনে হচ্ছে মেঘমল্লার আজ ইচ্ছে মতো জল ঝরাবে।বহুদিনের জমানো অভিমান আজ পৃথিবী ধুয়ে মুছে সয়লাব করে দিবে!

মিতু গলা অবধি কম্বল টেনে শুয়ে পড়েছিল।ঘন্টা খানেক বিছানায় এপাশ ওপাশ করেও ঘুম নামক বস্তুর দেখা মিলল না।সে অন্ধকারেই চোখ খুলল।

চোখ খুলতেই তার মনে পড়লো সে ঘুমকে বস্তু বলে আখ্যায়িত করছে।তাও আবার একবার না।বার, বার!ঘুম কি কোনো বস্তু হতে পারে?মোটেই নাহ!

ঘুম সম্পর্কে তার বিস্তারিত জানা নেই।তবে নিজে থেকে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালে মোটামুটি ঘুম নামক শব্দটাকে প্রশান্তি মূলক অনুভূতি বলা যায়।ঘুমালে শরীরের প্রতিটি পেশি শিথিল হয়ে যায়।মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনের সিন্যাপসিসের মধ্যে এক ধরনের সিকোয়েন্স তৈরি হয়।তারপর?তারপর কি হয় তা তার জানা নেই!

সে পাশ ফিরে ছোট্ট নুহার দিকে তাকালো।এ কদিনে নুহা একদম তার বাধক হয়ে গেছে।আজ রাতে বায়না ধরেছে তার সাথে ঘুমাবে।সে না করেনি!

কাছে কোথাও তীব্র বজ্রপাত ঘটলো।মিতু না চাইতেও চমকে উঠলো!দ্রুত কম্বল দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ফেলল।কয়েক মিনিট নিশ্চুপ থাকার পর উঠে বসলো।নুহার গায়ে ভালোমতো কম্বল জড়িয়ে বিছানা থেকে নামলো।

বাইরে বৃষ্টির সাথে সাথে প্রচুর বিজলি চমকাচ্ছে।তার আলোয় ঘন ঘন ক্ষণিক সময়ের জন্য ঘরটা আলোকিত করে যাচ্ছে।মিতু সেই আলোয় হাতড়ে হাতড়ে দেয়ালের সুইচে চাপ দিল।আলো জ্বললো না।বিদ্যুৎ এখনো আসেনি!

অন্ধকার দু চোখে সয়ে আসতেই সে এগিয়ে জানালার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল।কাচের অপর পৃষ্ঠ দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে নামছে।চমৎকৃত হওয়ার মতো দৃশ্য!সে একদৃষ্টিতে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে রইলো।

কবি, সাহিত্যিকেরা বলে গেছে, বৃষ্টি নাকি মানুষকে নস্টালজিক করে দেয়!একাকী, ব্যথাবিধুর করে!অতীতের সুন্দর মুহুর্তগুলোর নবজাগরণ ঘটায়।প্রিয়জনের কথা মনে করিয়ে দেয়।তখন প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে বড্ড মন কাঁদে!মিতুর কি প্রিয়জন আছে?

সে দু চোখ বন্ধ করতেই বিপুল স্যারের মুখটা মনের মাঝে ভেসে উঠলো।সে দ্রুত চোখ খুললো।বিপুল স্যারকে এই বৃষ্টি বাদলার রাতে কেন মনে পড়বে?ছি!

বিপুল স্যার তাদের স্কুলে গেস্ট টিচার ছিল।মাত্র তিন মাস পড়িয়েছে।মিতুর নাইন টেনে ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স ছিল।বিপুল স্যার তাদের ফিজিক্স পড়াতো।সে বেশ আগ্রহ করে স্যারের মুখপানে চেয়ে পড়া বোঝার চেষ্টা করতো!

বিপুল স্যার যেদিন তাদের প্রথম ক্লাস নেয় সেদিনও এমন ঝুম বৃষ্টি ছিল।সাথে কিছুক্ষণ পর পর বিজলি।তিনি আধভেজা হয়ে প্রথম ক্লাসে এলেন।প্রথম দেখাতেই মিতুর তার প্রতি বড্ড মায়া জন্মাল।মায়া জিনিসটা এমন কেন?

স্যার কয়েক মিনিট নিজের পরিচয়পর্ব সেরে চুপ করে রইলেন।একটুপর মিতুর দিকে আঙুল তুলে বললেন,

__’পেছন থেকে দুই নাম্বার সারির সবুজ ড্রেস পড়া তুমি!হ্যাঁ,তুমি দাঁড়াও।’

মিতু প্রথমদিকে ভেবেছিল অন্য কাউকে দাঁড়াতে বলেছে।পরে যখন বুঝতে পারলো তাকে তখন বড় সড়ো ঝাটকা খেল।তার হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল।যেন ভূমিকম্পের ১০ নং সতর্কবাণী শুরু হয়েছে।

সে মাথা নিচু করে তোতলাতে তোতলাতে বলল,

__’জ-জ্বি স-স্যার?’

__’তোমার নাম কি?’

__’ম-মিতু!’

__’আচ্ছা বলো তো?বজ্রপাতের সময় আমরা শব্দের আগে আলো দেখি কেন?’

মিতু ঝট করে স্যারের মুখপানে এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করলো।মুহুর্তে তার চোখে অশ্রুরা এসে ভিড় জমাচ্ছে।যখন তখন বিনা নোটিশে ঝরে পড়বে যেন।সে ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।অতঃপর টলমল চোখে দ্বিতীয় বারের মতো স্যারের দিকে তাকাল।তার চোখে হাজারো অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।যেন সে চোখ দিয়েই স্যারকে প্রশ্ন করছে,আমায় এসব কেন ধরছেন?আমি পারি না কিছু!

স্যার হয়তো তার চোখের ভাষা,তার সকল অনুযোগ-অভিযোগ বুঝতে পারলো।মুচকি হেসে বলল,

__’পারো না?ঠিক আছে।আমিই বলে দিচ্ছি।’

মিতু কিছু বলল না।স্যার এবার সবার দিকে চেয়ে বলল,

__’মেঘ তো আকাশে ভেসে বেড়ায়।ভাসতে ভাসতে দুটো মেঘের টুকরোর যখন একে অপরের সাথে সংঘর্ষ লাগে তখন একই সাথে আলো এবং শব্দের সৃষ্টি হয়।কিন্তু শব্দের বেগের চাইতে আলোর বেগ বেশি বলে আলো তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে পৌঁছে।এজন্য আমরা আগে আলো দেখি।তার কিছুক্ষণ বাদেই শব্দ শুনতে পাই!বুঝতে পেরেছো?’

সবাই মাথা নাড়লো।স্যার মিতুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল!সেই হাসিতেই মিতুর ছোট্ট হৃদয়ে কেমন দোলা দিয়ে উঠলো।জীবনে প্রথম তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতির জন্ম হলো।কেমন অচেনা,অজানা,অবর্ণনীয় সে অনুভূতি!

স্যার হাসিমুখেই তাকে বলল,

__’মিতু বসো!’

কিন্তু মিতুর যেন হুশ নেই।সে আছে অন্য ভুবনে।স্যারের কোনো কথাই তার কানে যেন ঢুকছিল না।তার পাশে বসা টুম্পা মেয়েটা যদি তাকে টেনে না বসাতো সেদিনই হয়তো সে অপমানে শেষ হয়ে যেত!

বিপুল স্যার তাদের তিন মাস পড়িয়েছিল।স্যারটা তার নামের মতোই বিশাল মনের অধিকারী ছিল।তিনি তিন মাস পর ফিনল্যান্ডে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায়।মিতু পরে লোকমুখে শুনে স্যার নতুন বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে গেছে।সেখানেই একদম সেটল হবে।মিতুর ছোট্ট হৃদয়ে সেদিন কোথা থেকে যেন হাজারো অভিমান এসে জড়ো হয়েছিল!

মিতু বড় করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তার সতেরো বছরের জীবনে প্রাপ্তির খাতা শূন্য!

অল্প করে জানালার কাচ সরিয়ে সে ডান হাতটা বাইরে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা স্পর্শ করলো।মুহূর্তে তার শরীরে ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল।যেন বৃষ্টির ফোঁটা তার সকল মন খারাপ জোঁকের মতো শুষে নিয়ে তার মন ভালো করে দিল।মিতু বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হেসে উঠলো।

নিজের হাসির শব্দ কানে যেতেই তার দুপুরের কলেজের ছেলেটার কথা মনে পড়লো।ছেলেটাও এভাবে শব্দ করে হাসে।শুনতে ভালো লাগে!

আচ্ছা, ছেলেটা এখন কি করছে?ঘুমাচ্ছে? নাকি তার মতো নিশাচর হয়ে রাত জাগছে?খুব জানতে ইচ্ছে করছে!

২৭.

মাঝরাতে খেয়ার হাঁসফাঁসের শব্দে ঘুম ভাঙলো নির্ঝরের।ঘুমের রেশ কাটতেই সে বুঝতে পারলো তার বাহুডোরে খেয়া কেমন যেন ছটফট করছে!মস্তিষ্ক সচল হতেই বুঝতে পারলো খেয়ার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।তার তাপমাত্রা ইটের ভাটার উত্তপ্ততাকেও হার মানাচ্ছে যেন!

নির্ঝরের মনটা কেমন করে উঠলো।সে চিন্তিত মুখে বালিশের নিচ থেকে মোবাইল নিয়ে লাইট অন করে ধরলো খেয়ার মুখের উপর!খেয়ার মুখটা কেমন নীল হয়ে গেছে।ঠোঁট দুটো শুকনো।অনবরত কেঁপে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে অবিরত জল ঝরছে!

সে পরম মমতায় খেয়ার সারা মুখে হাত বুলিয়ে বলল,

__’খেয়াতরী?এই খেয়াতরী?চোখ খুলো!কথা বলো!’

নির্ঝর খেয়ার মাথায় পানি ঢালতে চাইলো।দ্রুত উঠে আসতে নিতেই খেয়া তার একদম কাছে ঘেঁষে তার বুকে মুখ লুকালো।

সে একপ্রকার জোর করে খেয়াকে নিজের থেকে ছাড়াল।রুমের লাইট অন করতেই বুঝতে পারলো সেই যে সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ চলে গেছে!আর আসেনি!

নির্ঝর ব্যাটারি চালিত টেবিল ল্যাম্প জ্বালাল।

কয়েক মিনিটের মধ্যে খেয়ার মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করলো।খেয়ার মাথাটা নিচু করে বেশ কিছুক্ষণ পানি ঢাললো!

ল্যাম্পের মৃদু আলোয় খেয়াকে কেমন জানি লাগছে!নির্ঝর শুকনো টাওয়াল দিয়ে খেয়ার মাথা মুড়ে দিল।শুকনো কাপড় ভিজিয়ে খেয়ার হাত মুখ মুছে নরম গলায় বললো,

__’খেয়াতরী, এখন কেমন লাগছে?একটু ভালো লাগছে?’

খেয়া এলোমেলো ভাবে কিছু একটা বলল যা নির্ঝর বুঝতে পারলো না।

নির্ঝর খেয়ার পাশে বসে বেলকনি দিয়ে বাইরে তাকাল।এখনো তুমুল ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে।সারারাতই হবে নাকি?

সে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার এনে খেয়ার জ্বর মাপলো।দেখল ১০২°! কপালে হাত রেখে বুঝতে পারলো আগের থেকে জ্বর একটু কমেছে।মেডিসিন খাওয়াবে কি না বুঝতে পারছে না।রাত দশটার দিকে সে খেয়াকে খাওয়ানোর পর মেডিসিন খাইয়েছে।তারপরও জ্বর এসেছে!এখন রাত দুটো প্রায়!

নির্ঝর ল্যাম্পের আবছা আলোয় খেয়ার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।সে খেয়ার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।হঠাৎ করেই খেয়া চোখ খুললো।

নির্ঝর ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

__’খেয়া, এখন কেমন লাগছে?ঠিক আছো তুমি?’

খেয়া তার দিকে অপলক চেয়ে রইলো।একটুপর ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,

__’নি-র্র-ঝ!’

__’হুঁ, বলো!’

__’আমায় জড়িয়ে ধরো!’

নির্ঝর চমকালো।খেয়ার মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়া হাতটা থেমে গেল।খেয়া তাকে তুমি করে বলছে?জ্বরের ঘোরে বলছে এসব?

__’কি হলো?আমায় জড়িয়ে ধরো!শীত লাগছে।’

খেয়ার জড়ানো কন্ঠ কানে আসতে নির্ঝর তার চোখে চোখ রাখলো।খেয়ার চোখ কেমন লাল হয়ে রয়েছে।সে বলল,

__’এখন কেমন লাগছে খেয়া?’

__’ভালো।’

__’কতটুকু ভালো?’

__’অনেক ভালো।’

নির্ঝর তার দিকে একটু ঝুঁকে চিন্তিত গলায় বললো,

__’আমাকে তো একদম ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে!শরীরের তাপমাত্রা একদম বেড়ে গিয়েছিল।তুমি কি কিছু খাবে এখন?’

খেয়া অগোছালো দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,

__’খাবো।’

বলেই নির্ঝরের ঠোঁটদুটো আকড়ে ধরলো।নির্ঝর প্রথমে চমকে উঠলেও একটুপর খেয়াকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।হয়তো জ্বরের ঘোরে সব করছে।সে চাচ্ছে না তাদের প্রথম কাছে আসাটা এভাবে হোক!

কিন্তু পারলো না।খেয়ার অদমিত ইচ্ছের কাছে হার মেনে নিজেও খেয়ার গলায় মুখ ডুবাল।

২৮.

তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে,
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নব প্রেমজালে।

যদি থাকি কাছাকাছি
দেখিতে না পাও ছায়ার মতন আছি না আছি___
তবু মনে রেখো।।

_____(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সকালবেলা রবীন্দ্র সংগীতের সুরেই ঘুম ভাঙলো খেয়ার।তার মাথাটা কেমন ভার ভার লাগছে।পাশ ফিরে অভ্যাস বশত নুহাকে খুঁজলো।নুহা,নির্ঝর কেউ নেই!

রবীন্দ্র সংগীতের উৎস খুঁজলো।তার জানামতে এ বাসায় কেউ রবীন্দ্র সংগীত শোনে না।তাহলে আজ হঠাৎ বাজানোর রহস্য কি?

রবীন্দ্র সংগীতের মৃদু মধুর সুর ভেসে আসছে সেন্টার টেবিলে রাখা নির্ঝরের ফোন থেকে।নির্ঝর আবার কবে থেকে রবীন্দ্র সংগীত শোনা শুরু করলো?আজব তো!তবে তার এই শুভ্র সকালে রবীন্দ্র সংগীত শুনতে বেশ ভালো লাগছে!

ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠে বসলো সে।গায়ের কম্বল টেনে সরাতেই তার চোখ বড়বড় হয়ে গেল।ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল!রাতের বেলা…. ছি!

দরজার কাছে কারো পায়ের আওয়াজ হতেই খেয়া সটান শুয়ে মাথা ঢেকে শুয়ে পড়লো।ছি!সে কিভাবে নির্ঝরকে মুখ দেখাবে?
#জোড়া_শালিকের_সংসার
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_২০

দরজার কাছে কারো পায়ের আওয়াজ হতেই খেয়া সটান শুয়ে কম্বল দিয়ে মাথা ঢেকে ফেলল।ছি!সে নির্ঝরকে মুখ দেখাবে কি করে?

নির্ঝর হাতের নাস্তার প্লেটটা সেন্টার টেবিলে রেখে খেয়ার দিকে তাকালো।খেয়া মাথা ঢেকে এখনো শুয়ে আছে।নির্ঝরের সারামুখে হাসি ছড়িয়ে পড়লো।

__’খেয়া!এই খেয়া?’

খেয়া মরা কাঠের মতো ঘাপটি মেরে আছে।সে উত্তর দিল না।

নির্ঝর আলতো হাতে কয়েক পা এগিয়ে খেয়ার মাথার কাছের কম্বল টেনে সরাতে চাইলো।কিন্তু পারলো না।খেয়া হাত মুঠ করে শক্ত করে কম্বল ধরে রইলো।সে কিছুতেই নির্ঝরকে মুখ দেখাবে না।ইশ!কি লজ্জা!

খেয়া যে জেগে রয়েছে তা বুঝতে নির্ঝরের অসুবিধা হলো না। সে কম্বলের উপর দিয়েই খেয়ার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর মুচকি হেসে সরে আসলো।সে বেশ বুঝতে পারছে আজ সারাদিন খেয়া লজ্জায় তার সামনে আসবে না।আজব তো!এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে?তারা তো স্বামী-স্ত্রী!

সে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।শেষ রাতে বৃষ্টি থেমে গেছে।এখন ঝকঝকে আকাশ।গাছ-গাছালীর সব পাতা একদম পরিষ্কার।আকাশের মতোই ঝকঝকে!প্রকৃতির সবুজ রঙ যেন ঠিকরে পড়ছে।সে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলো।আজ সব কিছুই তার ভালো লাগছে।অনেক বেশি ভালো লাগছে!সত্যিই জীবন এত সুন্দর কেন?

এত সুন্দর জীবন!অথচ কত ক্ষনস্থায়ী সময়ের জন্য আসা!সৃষ্টিকর্তা মানুষের আয়ু আর একটু বাড়িয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?কচ্ছপের মতো ধীরস্থির একটা প্রাণী আড়াই’শ বছর বাঁচে।আর মানুষ এত বুদ্ধিমান প্রাণী, সৃষ্টি জগতের সেরা জীব হয়েও এত অল্প আয়ুর কেন?

পরমুহূর্তে নির্ঝরের মনে হলো মানুষের জীবন অনেক স্বল্প সময়ের বলেই প্রতিটা ক্ষণে ক্ষনে আনন্দ, সুখ কুড়াবার চেষ্টা করে।জীবন অনেক দীর্ঘ হলে তার প্রতি বিরক্ত এসে যেতো।প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান মনে হতো না।

নতুন একটা মিষ্টি সকাল শুরু হয়েছে।নির্ঝর মনে মনে প্রার্থনা করলো, বাকি জীবনটাতে প্রতিটা সকাল যেন আজকের মতোই সুন্দর আর ভালোবাসায় ভরপুর থাকে।প্রতিটি সকাল যেন তার খেয়াতরীকে পাশে পায়!

সে বিড়বিড় করে বলল,ভালোবাসায় এত সুখ কেন?এত সুখ পেলেই তো হারানোর বড্ড ভয় হয়!তার খেয়াতরীকে সে হারিয়ে ফেলবে না তো?

সে পারবে না খেয়াকে ছাড়া বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে।খেয়াকে ছাড়া সে সত্যিই ডাইনোসরের মতো বিলীন হয়ে যাবে এ পৃথিবী থেকে!

খেয়া সামান্য একটু কম্বল সরিয়ে এক চোখ বের করে পুরো রুমে চোখ বুলালো।নির্ঝর রুমে নেই।হয়তো বেলকনিতে!

নির্ঝর আসার আগেই সে এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।ওয়াশরুমের ছিটকিনি লাগানোর পর মনে পড়লো ওয়ারড্রব থেকে ড্রেস বের করতে হবে!

তার চিৎকার করে কান্না করতে মন চাচ্ছে।এবার যদি নির্ঝরের মুখোমুখি হয়ে পড়ে?নির্ঝরের সামনে কেমনে যাবে?

পুনরায় ছিটকিনি খুলতেই ভালো করে ওয়াশরুমে তাকিয়ে দেখে টকটকে লাল রঙের সিল্কের শাড়ি ঝুলছে।

খেয়া বুঝতে পারলো নির্ঝর তার প্রয়োজনীয় সব জিনিস ওয়াশরুমে আগে থেকেই রেখে দিয়েছে।

এক চিলতে হাসি ঠোঁটে উৎপন্ন হয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো!

২৯.

মিতুর কলেজে যাওয়ার আগে নুহাকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পড়েছে।তার খেয়া আপার হালকা জ্বর।সেজন্য সে নিজে থেকেই দায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছে।

নুহার স্কুল আর তার কলেজের মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি নয়।খেয়া তবুও আজ দেড় ঘন্টা আগে রওনা দিয়েছে।

__’আন্টি,তুমি মায়ের মতো সাজুগুজু করো না।কেন করো না?’

নুহার প্রশ্নে মিতু তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়।বলে,

__’কেন?সাজুগুজু না করলে কি ভালো লাগে না আমাদের?খেয়া আপা তো এমনিতেই কত সুন্দর!জানো, আমার প্রথম দিন তোমার মায়ের চেহারা দেখে হিংসে হয়েছিল।মানুষ এত সুন্দর কিভাবে হয়?’

নুহা খিলখিল করে হাসে।মিতুও তার হাসিতে তাল মেলায়।

কয়েক মিনিটের মাথায় ড্রাইভার গাড়ি থামায়।নুহার সাথে সাথে মিতুও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।নুহার স্কুলে সে আজ প্রথম এসেছে। বাইরে থেকে স্কুল দেখেই অবাক হয়ে যায় সে!বাচ্চাদের স্কুলও এত সুন্দর হতে পারে?গেটের সামনে কি সুন্দর ফুল গাছ!সে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে।

__’চাচা,আপনি গাড়িটি পাঁচ মিনিটের জন্য একটু সাইড করুন।আমি নুহার স্কুলের ভেতর থেকে ঘুরে আসি!’

মিতুর কথায় ড্রাইভার মাথা নেড়ে বলে,

__’আচ্ছা!’

মিতু খুশিমনে নুহার হাত ধরে ভেতরে পা রাখে।স্কুলের ভেতরের পরিবেশ দেখে সে আরো মুগ্ধ হয়।
কিছু মানুষ আছে যারা জগতের সবকিছুতেই মুগ্ধতা খুঁজে পায়।তাদের সামনে কর্কশ গলার কাকও অবিরত কা কা করে গেলে তারা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে!ক্ষণে ক্ষণে বিস্ময় প্রকাশ করে।

আর কিছু মানুষ আছে জগতের সবকিছুতে তাদের অনীহা।বড় বড় ঘটনাও তাদের বিন্দুমাত্র বিস্মিত করে না।তাদের সামনে যদি সহস্র কোটি বছর আগের বিলুপ্ত ডাইনোসর এনেও রাখা হয়,তারা বিচলিত হবে না।মুগ্ধ হবে না!মুখটা স্বাভাবিক রেখেই বলবে,”অহ, আচ্ছা!এটা ডাইনোসর।’এমন ভাব করবে যেন জীবন্ত ডাইনোসর দেখা কোনো বিশাল কোনো ঘটনা নয়!

এদের মধ্যে মিতু প্রথম ক্যাটাগরির।সে মানুষটাই এমন।বিস্মিত হওয়ার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে।যা দেখে তাতেই বিস্মিত হয়!

নুহাকে ক্লাসে পাঠিয়ে সে স্কুলের বেশ কিছু অংশ ঘুরে ঘুরে দেখল।ঘড়ির দিকে নজর দিতেই আঁতকে উঠলো।কলেজ শুরু হওয়ার আর বেশি দেরি নেই!

ক্ষীপ্রপায়ে গেট দিয়ে বের হতে গিয়ে আজকেও কারো সাথে ধাড়াম করে বাড়ি খেল।কপাল কুঁচকে সামনে তাকিয়ে দেখে রাহাত নামক সাড়ে ছয় ফিট লম্বা বাঁদরটা!মুহুর্তে মিতুর মনটা খারাপ হয়ে গেল।এই মানুষটা এখানেও?

সে আরেক নজর রাহাতের দিকে তাকাল।রাহাতের ডান হাতে প্যাকেট।আর দু চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।হয়তো তাকে এই জায়গাটাতে এক্সপেক্ট করেনি।

সে বিস্ময় মাখা কন্ঠেই বলল,

__’তুমি এখানে?’

মিতু উত্তর দিল না।পাশ কাটিয়ে এক পা হাঁটতেই বুঝতে পারলো আজকেও এক পায়ের স্লিপার ছিঁড়ে গেছে।কোন কুক্ষণে এই মানুষটার সাথে তার দেখা হয়?আর হলেই কি এভাবে জুতা ছিঁড়তে হবে?ধুর ছাই!

__’কি হলো?তুমি এখানে কি করছো মিতু?’

মিতু কাঠ কাঠ গলায় জবাব দিল,

__’কিছু না।’

__’বিজ্ঞানের ভাষায় নাথিং বলতে কোনো ওয়ার্ড নেই।নাথিং শব্দটা আপেক্ষিক।নিশ্চয়ই তুমি এখানে কিছু করতে এসেছিলে।’

মিতু বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

__’আমি যদি কিছু করতেও আসি সেটা কি আপনাকে বলতে বাধ্য আমি?’

রাহাত থতমত খেয়ে বলল,

__’না, মানে সেরকম কিছু নয়।আসলে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে আমাদের।একটু পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু তুমি তো!আচ্ছা মিতু,আমার জন্য কি তোমার হার্টে একটুও লাভ নেই?’

__’জি না!আপনার জন্য আমার হার্টে হেট আছে!’

বলেই মিতু ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গাড়ি সাঁই করে রাহাতের সামনে দিয়ে চলে গেল।

যতক্ষণ গাড়ি দেখা গেল,রাহাত ততক্ষণ তার দিকে চেয়ে রইলো।দৃষ্টির অগোচর হতেই সে মুচকি হেসে গেট দিয়ে স্কুলে ঢুকলো।সকাল সকাল বেলা তার রাগিনির সাথে দেখা হয়েছে।আজকের দিনটা তার অনেক ভালো যাবে।ভালো যেতেই হবে!

সে খুশিমনে হেঁটে দিশানের ক্লাসে ঢুকলো।দিশানের এবার ক্লাস ওয়ানে থাকার কথা।কিন্তু এত দুষ্টু হয়েছে!পড়াশোনা কিছুই করে না।প্লে তে রয়েছে দু বছর হলো!

সে দিশানের টেবিলে একটা প্যাকেট রেখে বলল,

__’তেলাপোকা, তোর টিফিনের খাবার।খেয়ে নিস।আর খবরদার কাল থেকে আমাকে জ্বালাবি না।তোর স্কুলে আমি আর আসতে পারবো না।’

দিশান খাবারের প্যাকেটটা সরিয়ে বলল,

__’কাকু, তোমায় আজ হাসিখুশি লাগছে।ব্যাপার কি?’

__’তোর কাকির সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল রে।’

__’কাকি?’

__’কিছু না।এমনিই বললাম।পড়তে থাক।’

__’তোমার হাতের বাকি খাবারের প্যাকেটটা দিয়ে কি করবে কাকু?আমায় দিয়ে যাও!আমি খাই!’

রাহাতের দিশানের মাথায় চাটি মেরে বলল,

__’তেলাপোকা, তুই এত খাবার একা কেমনে খাবি?এটা তোর টিকটিকি ফ্রেন্ড নুহার জন্য।দেখ তো ক্লাসে এসেছে কি না।’

দিশান পুরো ক্লাস মাথা উঁচু করে এক নজর দেখে খুশি হয়ে বলল,

__’কাকু,ওই তো আমার টিকটিকি!জানালার পাশে বসে।’

রাহাত বিরক্ত হয়ে বলল,

__’তোর টিকটিকি মানে?মেরে পিঠের ছাল তুলে দিবো।ওকে আর টিকটিকি ফিকটিকি বলবি না।ওর বাপ অনেক ড্যানজারাস মানুষ।জানতে পারলে আমার হালুয়া টাইট করে দিবে।যাকে বলে রাম ক্যালান ক্যালাবে।’

বলেই রাহাত নুহার দিকে এগিয়ে গেল।নুহার টেবিলে খাবারের প্যাকেট রেখে বলল,

__’নুহা পরী!কাকু খাবার দিয়ে গেল।টিফিনে খেয়ে নিয়ো।’

নুহা রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল,

__’কাকু,মা তো বাসা থেকে টিফিন দিয়ে দিয়েছে।’

__’তাতে কি!আমি যেটা দিলাম এটাও খাবে।’

নুহা মাথা নেড়ে হুঁ বললো।রাহাত মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে দিশানকে হাত নেড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।

নুহা খাবারের প্যাকেটটা টেবিল থেকে সরিয়ে বই বের করলো।ফের খাতা বের করতেই দিশান ব্যাগ নিয়ে এসে তার পাশে বসলো।নুহা মুখ ফুলিয়ে তার দিকে তাকাল।

দিশান খিলখিল করে হেসে বলল,

__’টিকটিকি।আজ থেকে ডেইলি তোমার সাথে বসবো।’

__’কেন?তুমি আমার সাথে বসবে কেন?’

__’কারণ টিকটিকিকে জ্বালাতে আমার অনেক ভালো লাগে।আমি ভেবে রেখেছি বড় হয়ে টিকটিকি কে বিয়ে করবো।’

নুহা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বলে,

__’আমি কিন্তু মাকে আর বাবাইকে সব বলে দিবো দিশান।’

দিশান হেসে কুটিকুটি হয়।

৩০.

নির্ঝর অফিস থেকে ফিরেছে বিকেল বেলা।উপরে উঠার সময় নুহার রুমের দরজায় এক নজর খেয়াকে দেখেছিল।চোখে চোখ পড়তেই লজ্জা মিশ্রিত মুখে দরজা বন্ধ করেছে।আর দেখা মেলেনি।

সে ভেবেছিল ডিনারের সময় দেখা পাবে।কিন্তু না!ডিনারের সময়ও তার থেকে লুকিয়ে থেকেছে।নুহাকে সাথে নিয়ে সে ডিনার শেষ করেছে।

এখন রাত দশটা বাজে প্রায়।নির্ঝর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।খেয়া কি রাতেও রুমে আসবে না?অন্তত ঘুমানোর জন্য আসার কথা!

সত্যি সত্যি আজ সারাদিন খেয়া তার মুখোমুখি হয়নি।অফিস যাওয়ার সময় সে বেশ কয়েকবার তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে।কিন্ত খেয়া নাছোড়বান্দা।কথা বলা তো দূরে থাক।দেখাও করেনি।সে যেন ছায়ামানবীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে।এক নজর দেখে তো, চোখের পলক ফেললেই উধাও!

সে দিনে বিশটার মতো মেসেজ দিয়েছে তাকে।পুনরায় জ্বর এসেছে কি না জানার জন্য।কিন্তু খেয়া উত্তর দেয়নি।পরে বাসায় ফেরার পর জমিলা খালার থেকে শুনেছে আর জ্বর আসেনি এবং এখনো মেডিসিন খাচ্ছে।

আস্তে করে দরজা ভেড়ানোর শব্দে নির্ঝর বেলকনি থেকে রুমে তাকাল।খেয়া নখ কামড়াতে কামড়াতে রুমে ঢুকেছে।তার চোখ এদিক ওদিক কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।কয়েক পা এগিয়ে খেয়া ওয়াশরুমের দরজায় কান পাতলো।হয়তো সে ভেতরে আছে কি না বোঝার চেষ্টা করছে।

খেয়ার কর্মকান্ডে নির্ঝরের বড্ড হাসি পেল।সে পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো।

খেয়ার পেছনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে তাকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

__’কাকে খুঁজছে আমার খেয়াতরী?’

খেয়া লজ্জায় লাল,নীল,বেগুনি হয়ে চোখ বন্ধ করলো।

(চলবে)

আসসালামু আলাইকুম।গল্পটা বেশি বড় করবো না।কয়েক পর্বের মধ্যে গল্পের ইতি টেনে দিবো ইনশাআল্লাহ।🥰
(চলবে)

আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here