ঝরাপাতা পর্ব ১৩+১৪

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৩

আয়াশ রোহানদের বাড়ির বাহিরে তারিফার হাত ধরে সাথে করে নিয়ে চলে আসে।

আয়াশ তারিফার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,”এবার আপনি আপনার রাস্তায় যেতে পারেন!”

তারিফা বলে,”এই যে মিস্টার এটা কোনো সিনেমা অথবা ড্রামা সিরিয়াল চলছে না।আপনি আমাকে তিন কবুল বলে বিয়ে করে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে দিলেই তো আমি যাবো না।”

আয়াশ বলে,”আপনাকে বিয়ে করার আমার কোনো শখ ছিলো না।আমি তো শুধুমাত্র রোহানের জীবন থেকে আপনাকে সরাতে বিয়েটা করেছি।”

তারিফা অট্ট হাসি দিয়ে বলে,”হায়রে মানুষ!
আপনি চাইলে বুঝি বোনকে সুখ কিনে দিতে পারবেন?”

আয়াশ বলে,”আমি আমার বোনের জন্য সব কিছু করতে পারি!”

তারিফা বলে,”তাই বলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে মাঝরাস্তায় মরার জন্য ছুড়ে ফেলে দিবেন? আপনার বোনের জন্য বুঝি অন্য মেয়ের জীবনের কোনো মূল্য নেই?”

আয়াশ বলে,”না নেই!আমার বোন আমার সব কিছু!”

তারিফা বলে,”যার আপনি আমাকে বিয়ে করে ভালোই করেছেন। এখন আপনার বউ সেই পরিচয়ে রোহানের বাড়িতে সারাজীবন সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো।”

বলেই তারিফা রোহানের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে যাচ্ছিল সে সময় আয়াশ তারিফার হাত ধরে বলে,”এই সব কোন ধরনের বেয়াদবি। আমার বোনের সংসার শুরু হবার আগেই আপনি ভাঙ্গতে যাচ্ছেন কেনো?”

তারিফা বলে,”এই যে আপনি আপনার বউ কে রাস্তার মাঝে ছেড়ে দিচ্ছেন।এখন তো আমি বিবাহিত। বিয়ের আগে রোহানের বাড়িতে থাকলে লোকে খারাপ কথা বলতো এখন আর সে কথা কেউ বলবে না।এখন ভেবে দেখেন!আপনি আমাকে সাথে করে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবেন না কি আপনার বোনের ঘরে যেতে বাধ্য হবো।”

আয়াশ কোনো কথা না বলে সোজা তারিফার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।তারপর গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে দেয়।

গাড়ি চলতে শুরু করে ঠিক সে সময় তারিফা বলে,”আচ্ছা ড্রাইভার সাহেব আমার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছাতে কতো সময় লাগবে?”

আয়াশ গাড়ি থামিয়ে বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে আমাকে ড্রাইভার মনে হচ্ছে কোন দিক দিয়ে?”

তারিফা বলে,”আপনি ড্রাইভারের মতো গাড়ি ড্রাইভ করছেন।আর আমি মালিকের মতো পিছনে স্টাইল করে বসে আছি।আপনি যদি ড্রাইভার না হতেন তাহলে আমাকে আপনার পাশে বসতে বলতেন।”

আয়াশ গাড়ি থেকে বাহির হয়ে তারিফার হাত ধরে সামনে এনে বসিয়ে দিয়ে সোজা নিজের শিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করাতে মন দেয়।
.
.
.
এদিকে রোহানের কিছু কাজিন বোনেরা এসে অরিন কে তাদের সাথে করে রোহানের রুমে রেখে আসে।খাটের দিকে তাকিয়ে দেখে খাটের মাঝে কিছু ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।অরিন বলে,”যাক সেই রকম সুন্দর বাসরঘর না হলেও কি হবে!রোহানের রুমে তো আজ থেকে আমার অধিকার।উঁহু শুধু রোহানের রুমে না।রোহানের উপর এখন শুধু আমার অধিকার। যাক যেভাবে হোক না কেনো!রোহান কে তো নিজের জামাই বানাতে পেরেছি। আমি তো কতো কিছু প্লানিং করেছিলাম।কিন্তু এখানে আমার কিছুই করতে হয়নি।সবটা বাড়ির মানুষেরা করেছে।এখন রোহান কে রাজি করিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো।সারাজীবন বাবার বাড়িতে থাকবো।আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।এতো ছোট বাড়িতে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।আমাদের বাড়ির মতো এদের বাড়ি বিশাল বড় না।বাড়িটা একদম খারাপ না।তবে আমার জন্য পারফেক্ট না।”

অরিন এবার ভাবতে থাকে অনেক সময় হয়েছে আমার রুমে আশার! কিন্তু আমার বরটা কোথায়? তার বউ যে তার পথ চেয়ে বাসরঘরে বসে আছে! কি সেদিকে কি তার হুস জ্ঞান আছে?

এদিকে রোহান বাড়ির ছাদের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে।ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেছে।কাল সকালে সমাজের মানুষের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো কি আর?আমার পরিবারের সাথে এমন কাহিনী না হলে কি চলতো না?

রোহানের এক কাজিন এসে বলে,”রোহান তোমার বউ ঘরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!তাকে ফেলে এভাবে ছাদে বসে থাকার কোনো মানে হয় না।মেয়েটা কি দোষ করেছে।এটা হয়তো তোমাদের নিয়তি তাই এভাবে বিয়েটা হয়েছে।আর বিয়েটা ছেলে খেলা নয়।”

রোহান চিৎকার করে বলে,”আমি কি দোষ করেছি?আমার কি ভুল ছিলো?বিয়েটা ছেলেখেলা না!এখন এভাবে কেউ বিয়ে করে?কোনো কাজ করি না!
বউকে খাওয়াবো কি?বউয়ের খরচ যোগার করবো কি করে?”

রোহানের কাজিন বলে ,”তোর বউ কি রাক্ষস যে ওর খাওয়া পড়া নিয়ে চিন্তায় মরে যাচ্ছিস!তোরা আগে যেভাবে চলতিস সে ভাবে চলবি!বোন বিদায় করে বউ বাড়িতে আসলে এখানে আহামরি কিছুই হয়নি।আল্লাহ যা রাখছে নসীবে তাই হবে।”

রোহান আর কথা না বাড়িয়ে সোজা নিজের রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে আল্লাহ গো রুমের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আছে।আল্লাহ আমাকে প্লিজ রক্ষা করিও এই ঝড়ের হাত থেকে।

রুমের ভেতর আস্তে আস্তে প্রবেশ করে।
দেখে ওর রুমের বারান্দার সামনে অরিন দাঁড়িয়ে আছো।

রোহান চুপচাপ নিজের বিছানার উপর বসে থাকে।অরিনের হঠাৎ করে হাত তাকিয়ে দেখে রোহান বসে আছে।

অরিন হাসিমুখে রোহানের সামনে দাঁড়ায়।

রোহান অরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আজকের তামাশা টা না করলেও পারতেন মিস অরিন খান!”

মূর্হত্বের মাঝে অরিনের মুখের বিজয়ের হাসিটা বিলীন হয়ে বির্ষন্নতার মেঘেরা এসে হানা দেয়।

অরিন রোহান চোখে চোখ রেখে বলে,”পরিস্থিতি মোটেই আমার অনুকূলে ছিলো না।আর আমি চাইলেও সবাইকে সত্যিটা বিশ্বাস করাতে পারতাম না।”

রোহান বলে,”সত্যি যদি বিশ্বাস করাতে না পারবে তাহলে অযথা নেকামির নাটকের কি দরকার ছিলো।”

অরিন নরম কন্ঠে বলে,”দেখুন আপনার বোনের বিয়েটা কিন্তু ঠিক মতো সম্পন্ন হয়েছে।তাহলে এতো বাড়াবাড়ির কি আছে?”

রোহান অরিনের দু কাধ শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলে,”আপনার সাথে খারাপ আচরণ করার মিথ্যা আরোপ লেগেছে আমার উপর তা আপনি বোঝেন?আর অনিচ্ছা সত্বেও আপনাকে বিয়ে করতে হয়েছে।”

অরিন চোখ বন্ধ করে বলে,”দেখুন পুরাতন কথা ভুলে যান।আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।এই সম্পর্কটা আপনি আমি কেউ অস্বীকার করতে পারবো না।তাই নিজেদের মধ্যে আর সমস্যা সৃষ্টি না করে সুখে শান্তিতে থাকতে চেষ্টা করি না।”

রোহান বলে,” কিসের চেষ্টা করবো?আরে আমি তো এভাবে বিয়ের জন্য মোটেই রেডি ছিলাম না।আপনার মতো বড়লোকের মেয়ের সাথে তো কোনোদিন ও না।দুদিন পর বাবার বাড়ির সাথে শ্বশুরবাড়ির তুলোনা শুরু করবেন
কিছুদিন পর তো আমাকে কথা শোনাতে ছাড়বেন না।কাজ কাম করি না।বউ পালবো কি করে।”

অরিন আস্তে করে চোখ মেলে রোহানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাকে কি হাতির বাচ্চা মনে হয়?যে আমাকে পালতে পারবেন না?হতে পারি বড়লোক বাড়ির মেয়ে তার মানে এই নয় যে আমি ভুলে যাবো আমার বরের পায়ের নিচের মাটি কতোটা।”

রোহান বলে,”থাক,অনেক হয়ছে! আপনার এসব কথারঢং আমাকে শোনাতে হবে না।দু দিন পর ঠিকি গিরগিটির মতো নিজের রং বদলাবে।সাথে আমার পরিবারের জীবনটাকে জাহান্নম করে ছাড়বে।”

অরিন বলে,”একটু ভালোবাসা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দেখতে পারেন হয়তো আপনার সব ভাবনা গুলো মিথ্যা প্রমাণ করে দিতে পারি।”

রোহান বিরক্ত হয়ে অরিন কে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বিছানার একপাশে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

অরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে থাকে।সত্যি কি আমি অন্য সবার মতো?আমার মাঝে সত্যি ভালো কিছু নেই!বড়লোকের মেয়ে হওয়া কি আমার ভুল?



এদিকে খান বাড়ির সামনে এসে আয়াশ গাড়ি থামিয়ে দেয়।তারিফা বুঝতেই পারে এটাই তার শ্বশুরঘর। এখানে আজ থেকে তার নতুন যুদ্ধ শুরু।
তারিফা গাড়ি থামার সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির সদর দরজার সামনে দাঁড়ায়।

(কি মনে হয় এদের বিবাহিত জীবনের শুরুটা সুন্দর হবে)

‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৪

তারিফা খান বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বলে,” mother in law তাড়াতাড়ি আমাকে বরণ করে ঘরে তুলুন প্লিজ!বাড়ির নতুন বউ কত সময় ধরে হেংলার মতো সদর দরজাতে দাঁড়িয়ে থাকবে।”

মমতা খান এসে বলে,”তোমাকে বরণ আমার জুতাও করবে না।চেনা নেই জানা নেই,বংশের নাম ঠিকানা নেই।সেই মেয়ে কোনোদিন ও আমার বাড়ির বউ হতে পারে না।”

তারিফা বলে,”আপনার ছেলে আমাকে জোড় করে বিয়ে করেছে mother in law! আমি আপনার ছেলেকে ফাঁসিয়ে তার গলায় ঝুলে পড়ি নাই।তাই আপনার ইচ্ছা না থাকলেও আমাকে বাড়ির বউয়ের সম্মান দিতে হবে।নয়তো আপনার মেয়েটা কিন্তু সুখি হবে না, এটা মনে রাখবেন। ”

মমতা খান বলে,”আরে রাখো আমার মেয়ের কথা।ঐ ছোটলোক দের বাড়িতে আমার মেয়েকে সংসার করতে দিলে তো।দুদিন পর ডির্ভোস করিয়ে দিয়ে আমার মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে চলে আসবো।”

তারিফা একটা তাচ্ছিল্যময় হাসি দিয়ে বলে,”আপনি যার ডির্ভোসের স্বপ্ন দেখছেন! সে হয়তো স্বামী নিয়ে সুখে সংসার করার স্বপ্নে বিভোর আছে।আপনি ডির্ভোস দিতে বললেও আপনার মেয়ে দিবে কি না তাতে সন্দেহ আছে।এখন এসব নিয়ে আমি মোটেই ভাবতে চাইছি না
আপনার ছেলের সাথে যেভাবে হোক বিয়েটা হয়েছে!তাই আমি এখন সুখে সংসার করতে চাই।প্লিহা আম্মাজান আমাকে সুখে সংসার করতে দিবেন। ”

মমতা খান বলে,”এই খান বাড়িতে তোমার কোনো জায়গা হবে না!”

তখন আরিফুল খান এসে বলে,”মমতা তুমি ভুলে যাবে না।এটা যেমন তোমার শ্বশুরঘর ঠিক তেমন ঐ মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি। আর মেয়েটা যেচে আসে নাই তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে।তোমার ছেলে জোড় করে তাকে বিয়ে করেছে।তাই খারাপ ব্যবহার করতে হলে তোমার ছেলের সাথে করো।এই মেয়েটার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করবে না।”

মমতা খান রেগে আগুন হয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।তিনি মোটেই এটা আশা করেন নাই।যে তার স্বামী ঐ মেয়েটাকে সার্পোট করে কথা বলবে।কেনো বাহিরের একটা মেয়েকে এতোটা সার্পোট করবে সে?কে হয় মেয়েটা তার?

আরিফুল খান বলে,”দেখো জানি না তুমি কোন বাড়ির মেয়ে!তবে যার বাড়ির মেয়ে হওনা কেনো আজ থেকে আমার বাড়ির বউ।তাই সারাজীবন একথা মাথায় রেখে সংসার করবা।”
“আজ থেকে এটাও তোমার ঠিকানা। আজ বউ হয়ে প্রবেশ করলে এ বাড়িতে!এ বাড়ি ছেড়ে যেদিন যাবে সেদিন কিন্তু লাশ হয়ে নিজের আরেক বাড়ি যাবার জন্য বাহির হবে বুঝলে বউমা।”

এমন কথা সে শ্বশুরবাবার কাছে আশা করে নাই।তবে না চাইতেও এতো ভালোবাসার কথা শুনে চোখেরজল গুলো বাঁধন হারা হয়ে বইতে শুরু করে দেয়।তারিফা মাথা নাড়িয়ে শ্বশুরের কথায় সম্মতি প্রকাশ করে।

আরিফুল খান কাজের মহিলা কে ডেকে বলে তারিফা কে আয়াশের রুমটা দেখিয়ে দিতে।

তারিফা কাজের মানুষের সাথে চুপচাপ আয়াশের রুমে সামনে এসে দাঁড়ায়। কাজের মেয়েটা চলে যায়।

তারিফা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আজ থেকে এটাই আমার পৃথিবী! এই পৃথিবী কে আপন করার জন্য যুদ্ধজয় করতেও রাজী আছি আমি।সব কষ্ট গ্লানি মাথা পেতে সহ্য করবো।শুধু এই জন্য যে আমি বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে বাধা পড়েছি তাই।”

তারিফা ডান পা প্রথমে দিয়ে রুমে প্রবেশ করে।রুমের ভেতরে প্রবেশ করে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারে আয়াশ একজন শৌখিন মানুষ।সে তার রুমটা খুব সুন্দর করে পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে।রুমের প্রতিটা জিনিশে সৌখিনতার ছোঁয়া।আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব কিছু একদম চোখ জুড়িয়ে দেওয়ার মতো সুন্দর। এসব কিছু দেখতে দেখতে তারিফা একটা ঘোরের মাঝে চলে যায়।

এমন সময় আয়াশ রুমে এসে বলে,”জীবনে হয়তো স্বপ্নে কল্পনাতেও দেখো নাই।”.

তারিফা নিজের ঘোর কাটিয়ে উঠে বলে,”হ্যা, সত্যি এমন কিছু কোনোদিন ও দেখি নাই।আসলে আমার স্বপ্নের এতো বিলাসিতা করার অধিকার নেই।”

এতো জিনিশ দিয়ে কি হব?আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি!আমার কবরে এসব কিছুই যাবে না।তাই যতোটুকু বেঁচে থাকার জন্য দরকার আমি ততোটা ব্যবহার করি।

আয়াশ বলে,”আরে বিলাসিতা করার জন্য সামর্থ্য লাগে,এসব নেই তোমার!এখন এসেছো আমাকে বড় বড় কথা শোনাতে। ”

তারিফা বলে,”আপনাকে এখন বোঝানোর মতো মন মানুষিকতা আমার নেই।আমি খুব ক্লান্ত। একটু শান্তিতে ঘুমানোর দরকার।”

আয়াশ বলে,”রাগ আর জিদের বসে বিয়েটা করেছি।তাই এই সম্পর্ক নিয়ে বেশি স্বপ দেখো না!”

তারিফা বলে,”just shut up okay!আপনি এই রাগ,জিদ,এসব কথা অন্য কাউকে বলবেন। এই তারিফার কানের কাছে বলবেন না।বিয়ে যখন করেছেন তখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মর্যাদা রাখতেই হবে।”

আয়াশ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা বিছানার এক পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে যায়।আয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।তাতে তারিফার কিছুই না।কারণ রাগের বসে ভুল সিদ্ধান্ত একজন নিবে।আর তার ফল কেনো অন্যদের ভোগ করতে হবে।সিদ্ধান্ত যখন নিতে পেরেছে সম্পর্ক তখন মেনে নিতেই হবে।


এদিকে ফজরের ওয়াক্তে দু বাড়িতে দুই নতুন বউ ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিজেদের বিবাহিত জীবনটা যে সুখে শান্তিতে পাড় করতে পারে সেই দোয়া করে।

তারিফা রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোরের অন্ধকার আলো ঘুচ নতুন সকালের সূর্য ওঠা দেখছে।

এদিকে অরিন চুপচাপ নিজের রুম থেকে বাহিরে এসে দেখে তার শাশুড়ি মা রান্নাবান্না করতে ব্যস্ত।
অরিন আস্তে করে তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
রোহানের মা পাশ ফিরে অরিন কে দেখে বলে,”আরে বউমা যে!এতো সকালে এখানে কি করছো?তুমি রুমে গিয়ে বিশ্রাম করো,,নাস্তা রেডি হলে ডাক দিবো।”

অরিন বলে,”জ্বি সমস্যা নেই!আমি এখানে থাকলে আপনার যদি সমস্যা হয় তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। ”

রোহানের মা বলে,”না বউমা!আমার কোনো সমস্যা নেই! আসলে তোমার বাবার অফিসের বেতনভুক্ত কর্মচারী রোহানের বাবা।কালকের এমন ঘটনার জন্য আমরা সবাই সত্যি লজ্জিত তোমার কাছে।তারপর ও যে আমার মেয়েটার বিয়েটা সঠিক ভাবে সম্মানের সাথে দিতে পেরেছি এই অনেক।তবে তোমাকে এবাড়িতে মানাই না।”

অরিন একটা মলিন হাসি দিয়ে বলে,”আল্লাহ আমার নসীবে আমার রিজিকের ব্যবস্থা যেখানে করে রেখেছে সেখানে যে ভাবে হোক আমার তো আশারি ছিলো তাই না আম্মা! ”

নিজের বড়লোক বউমার মুখে আম্মা ডাক শুনে রোহানের মা ইমোশনাল হয়ে ছেলের বউকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা এই ছোট সংসার টা আজ থেকে তোমার।জানি তোমার বাবার বাড়ির মতো ওতো সুবিধা এখানে নেই তারপর ও তুমি নিজের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিও।”

অরিন বলে,”আমি সংসারের কোনো কাজ পারি না।আপনি আমাকে সব কিছু প্লিজ শিখিয়ে পড়িয়ে দিবেন।”

রোহানের মা সম্মতি প্রকাশ করে অরিনের কথায়।

রোহান সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে অরিন রুমে নেই।রোহান ভাবে যাক তাহলে আপদ নিজ দায়িত্বে বাবার বাড়িতে চলে গেছে।আমি বেঁচে গেছি।আমার কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।



সকালে আয়াশের সাথে তারিফার কোনো কথা হয় না।কারণ তারিফা বারান্দায় ছিলো আয়াশ তাকে দেখেও না দেখার ভান করে নিচে চলে যায়।

এদিকে সকালে খান বাড়ির ড্রাইনিং টেবিলে খাবার খেতে বসে সবাই একসাথে। আরিফুল ইসলাম খবার টেবিলের সবাই কে উদ্দেশ্য করে বলে,”তোমাদের বিয়েটা যে ভাবেই হোক তাতে সমস্যা নেই।এখন বিয়ের ইতিহাস কানাঘুষো হবার আগেই আমি বউভাতের অনুষ্ঠান করে সব আত্মীয়দের মেনেজ করতে চাইছি।আয়াশ আর অরিনের রিসিপশনের ব্যবস্থা একসাথে করবো।এর জন্য রফিকের সাথে আমি কথা বলে নিবো।কয়েকদিন পর তোমাদের রিসিপশ।তাই যাদের দাওয়াত দেওয়ার দরকার দাওয়াত দিয়ে দাও।আর এই বিষয়ে কোনো কথা আমি শুনতে রাজী না।”

আয়াশ বাবার সিদ্ধান্ত মানতে না পারলেও তার বিরোধিত করে না।

(দেখাযাক গল্পের কাহিনী আবারো কোন দিকে যায়)



চলবে…..

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here