ঝরাপাতা পর্ব ১৫+১৬

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৫

এদিকে আরিফুল খান রোহানের বাবা রফিক সাহেবের কাছে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে উনি একটা বড় বউভাতের অনুষ্ঠান করবেন। সেখানে তার ছেলের বউ এবং মেয়ে জামাই কে সব আত্মীয়র সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে।

রফিক সাহেব তার বস কে না করেন না।কারণ বিয়েটা যে ভাবে হয়েছে তাতে তার বড় মুখ করে কোনো কিছু বলা মানাই না।তাই সে চুপচাপ বসের কথা মেনে নেয়।

রোহান এবং অরিন কে জানিয়ে দেয় আরিফুল সাহেবের কথা।রোহান একটু অমত প্রকাশ করতে চাইছিল কিন্তু বাবার মলিন চেহারা দেখে আর কিছু বলে না।

এদিকে অরিন তো সেই খুশি যাক অবশেষে দু পরিবারের মাঝে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে। দু পরিবার মিলে মিশে থাকলে আমার আর কোনো সমস্যা নেই।আমি তো ভাবতেও পারি নাই।সবটা এতো সহজে মেনে নিবে সবাই।

এদিকে রোহান অরিনের সাথে কোনো কথায় বলে না চুপচাপ থাকে।অরিন ও যেচে কথা বলতে যায় না।

দু দিকে বাতাস নিরবে বইছে।যখন প্রকৃতি শান্ত থাকে তখন বোঝা যায় না এখানে ঝড় উঠলে কতোটা ক্ষতি হতে পারে।এটা না অরিনের জানা আছে না তারিফার জানা আছে।

সময়ে স্রোতে ভেসে যায় কিছু সময়।দেখতে দেখতে ওদের বউভাতের অনুষ্ঠানের দিন চলে আসে।

আরিফুল খান অরিনের জন্য সব কিছু কেনাকাটা করে রোহানের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
রোহান শ্বশুরের দেওয়া কিছু নিতেই নারাজ। তবে তার বাবা বলে,”যা দিয়েছে চুপচাপ পড়ে না!আর অসম্মান করো না আমাদের।”

রোহান চুপচাপ থাকে।

অরিন কে বাবার বাড়িতে যাবার জন্য গাড়ি নিতে আসে তবে অরিন নিষেধ করে দেয়।কারণ রোহান অরিনের বাবার বাড়িতে যাবে না তাই।অরিন নিজের স্বামী কে ছাড়া বাবার বাড়ি যাবে না।তাই ওর সব কিছু এবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।এখান থেকে রেডি হয়ে সোজা অনুষ্ঠানে যাবে।

অরিন একটা সিঁদুরে লাল রং এর লেহেঙ্গা পড়ে তাতে গোল্ডেন সুতার কাজ করা।দু হাত ভরে লাল আর হলুদ রং এর কম্বিনেশনে চুড়ি পড়ে।সাথে হালকা মেকআপ চোখে গাড়ো কাজল ঠোঁটে হালকা লাল লিপিস্টিক। অরিন মাথায় সুন্দর করে হিজাব বাধে।হিজাবের সাথে মানাবে এমন কিছু জুয়েলারি পড়ে।হালকা সাজ হলেও কি হবে অরিন কে দেখতে একদম হুরপরির মতো লাগছে।যে কারো মনের মাঝে সে গেঁথে যাবে।

রোহান রেডি হয়ে অরিন কে রুমে ডাকতে এসে হা করে তাকিয়ে থাকে।লাল রং এ পুরো নতুন বউ বউ লাগছে।রোহানের মনে হচ্ছে থাক এতো সুন্দর বউ বাহিরের মানুষকে কেনো দেখাতে নিয়ে যাবো?ঘরে থাকলে ভালো।এ মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবো আর কিছু সময় তাকিয়ে থাকলে।ওর চোখের নেশায় আসক্ত হতে চাই না আমি।

রোহানের এভাবে তাকিয়ে থাকাতে অরিনের কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিল। তারপর ও অরিন রোহান কে আড় চোখে দেখতে থাকে।গোল্ডেন কালারের হালকা কাজের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে।ফর্শা হাতে কালো ফিতার ঘড়ি পড়া।চুল গুলো সুন্দর করে কাপালে সাইডে স্টাইল করে রেখেছে।যে কোনো মেয়ের মনে গেঁথে রাখার মতো কিলার লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।

অরিন নিজেই বলে, “আমাদের এবার যাওয়া দরকার নয়তো দেড়ি হয়ে যাবে।”

রোহান কিছু না বলে বাহিরে চলে আসে।রোহানের পিছনে পিছনে অরিন ও চলে আসে।


অপরদিকে তারিফার রুমে মমতা খান কিছু ড্রেস আর জুয়েলারি রেখে দেয়।তারিফা বলে,”এসব দিয়ে আমি কি করবো?”

মমতা খান বলে,”একদম নেকামি করবে না আমার সাথে।আজকে তোমাদের ফালতু বিয়ের রিসপন্স!
তাই এসব পড়ে রং মেখে নিচে চলে এসো আমাদের যেতে হবে।”

তারিফা বলে,”পড়বো তো একটা ড্রেস তাহলে এতো ড্রেস কেনো?”

মমতা খান বলে,”তোমার মতো খ্যাত কে কোনো রং এ মানাবে না তা আমি জানি।তাই জন্য তো সব খ্যাত মার্কা রং এর ড্রেস এনেছি। যা মন চাই পড়ে তাড়াতাড়ি নিচে চলে এসো বলে সে চলে যায়।”

তারিফা বিছানার উপরে রাখা ড্রেস গুলো দেখে হাসতে থাকে।আল্লাহ আমার শাশুড়ি মা তার বাড়ির নতুন বউয়ের জন্য ড্রেস এনেছে কি সব রং এর!কালো,বেগুনী, সবুজ, শ্যাওলা কালার,যাক সে যদি আনতে পারে আমি কেনো পড়তে পারবো না।

তারিফা সবুজ রং এর লেহেঙ্গাটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”সবুজ রং এ কাউকে খারাপ লাগে কি না জানি না।তবে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমাকে পারফেক্ট লাগছে।”

সুন্দর করে ওড়না পড়ে।সাথে গোল্ডেন হিজাব পড়ে।চোখে হালকা কাজল।ঠোঁটে লালকা গোলাপি লিপবাম লাগাই। বিনা মেকআপেও নিজেকে তারিফা সাজিয়ে নিয়েছে সুন্দর করে।হাতে সবুজ আর গোল্ডেন চুড়ি পড়েছে।এইতো একদম সিম্পল নতুন বউ।

তারিফা আয়নাতে নিজেকে দেখে বলে,”যার মনে নেই রং!তার মুখে মিথ্যার রং মানাই না।কি দরকার মনের বিপক্ষে গিয়ে লোকদেখানো সাজের?”

আয়াশ রুমে এসে দেখে তারিফা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।বিছানার উপর সব উদ্ভট কালারের ড্রেস। তারিফাকে দেখে জিজ্ঞাস করে,আমার রুমে এসব কি হচ্ছে?

তারিফা পেছনে না ঘুরে উওর দেয়,”
মিথ্যা লোক দেখানো সুখের সম্পর্কের আয়োজন হচ্ছে।”

আয়াশ তারিফার সামনে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে সবুজ রং এর ড্রেসে সিম্পল সাজে তার সামনে একটা রাজকন্যা দাঁড়িয়ে আছে।এই সিম্পল সাজেও মেয়েটা মানুষ কে তার মায়াতে জড়াতে পারে সেই ক্ষমতা তার আছে।আচ্ছা মেয়েটা সত্যি সুন্দর না কি আমি চোখে শর্ষে ফুল দেখছি?এ মেয়ের মাঝে কিছু তো একটা মায়া আছে যা ওর দিকে আকর্ষিত করে।

তারিফা আয়াশের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”এই যে মিস্টার!আপনি কি কিছু বলবেন? এভাবে হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো? ”

আয়াশ তো আবুল হয়ে যায় তারিফার কথা শুনে তারপর নিজেকে ঠিক করে বলে,”আজ আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠান সবটা জানার পর ও এমন ভুত সাজার মানে কি?”

তারিফা বলে,”বিনা মেকআপের সাথে হিজাব পড়া যদি ভুত সাজা হয় তাতে আমার দুঃখ নেই।আপনার সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু এই সাজে আমি কম্ফোর্টেবল ফিল করছি।”

আয়াশ বলে,”অনেক মানুষ আপনাকে দেখতে আসবে।তাই নিজেকে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করতে শিখুন।”

তারিফা এবার রেগে বলে,”এই যে মিস্টার! আমি পরপুরুষের সামনে নিজেকে অযথা প্রেজেন্ট করতে যাবো কেনো?তাদের যদি আমাকে পছন্দ হয় তখন আমার দ্বিতীয় বিয়ে হবে বুঝি?আর রইলো সাজের কথা কোথায় কখন কেমন সাজের দরকার তা আমি খুব ভালো করে দিতে জানি।”

আয়াশ বলে,”সবুজ রং ছাড়াও অনেক রং ছিলো তা পড়লেই পারতেন। সবুজ পড়ার কী দরকার ছিলো?”

তারিফা এবার একটু স্টাইল করে বলে,”আমি জানি আমাকে এই সবুজ রঙে অনেক সুন্দর মানিয়েছে!চেহারার উপর সবুজবর্ণের একটা সিগ্ধ আভা পড়ছে যা আমার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। ”

আয়াশ বলে,”আপনি নিজেকে নিয়ে একটু বেশি ভাবছেন না?”

তারিফা বলে,”আমাকে যদি সুন্দর না লাগতো তাহলে কখনো আপনি এভাবে হা করে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইতেন না।জানি তো আমাকে দেখে আপনার মনের মাঝে ভালোবাসার গান বাজছে।(নিজ দায়িত্বে গান বসিয়ে নিবেন)”

আয়াশ বলে,”আপনার যতোসব ভালতু কথা।”

তারিফা এবার আয়াশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে মুখের উপর একটা ইম্প্রেশন এনে বলে,”Not bad! ভালোই তো সুট বুট ছেড়ে ক্রীম কালারে পাঞ্জাবী পড়ে চুল গুলো স্টাইল করে পাঞ্জাবীর দুই হাতা কনুই পর্যন্ত ফ্লোড করে হিরো সেজে দাঁড়িয়ে আছেন।”

আয়াশ বলে,”That’s none of your business okay!”

তারিফা বলে,”আমার কিছুই না!তবে আমার জামাই!”

আয়াশ তারিফা কে নিচে নেমে আসতে বলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

তারিফা রুমের মধ্যে হাসিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে।আমার পাগল বরটা রাগলে দারুণ লাগে।মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে যায়।

তারিফা হাসতে হাসতে নিচে নেমে আসে।
দেখে সবাই বাহিরে গাড়িতে বসে আছে।
তারিফা চুপচাপ গিয়ে আয়াশের গাড়ির পেছনে বসতে যায়।আয়াশ সামনে বসতে ইশারা করে।তারিফা আয়াশের পাশে বসে পড়ে।আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করে দেয়।#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৬

স্টেজের উপর দুই রাজকন্যা বধূ সেজে বসে আছে।অরিন আর তারিফা দুজনকে অনেক সুন্দর লাগছে।পাশাপাশি দুজনের মাঝে একটা মিল সব থেকে সুন্দর লাগছে যা এখানে উপস্থিত সবার নজর কেড়েছে।ভাবী আর ননদী দু জনে খুব সুন্দর করে হিজাব পড়েছে। দুজনে খুব সিম্পল সাজেও মাশাআল্লাহ অনেক মিষ্টি লাগছে।

কতো মানুষের আনাগোনা চলছে এখানে।সবাই ওদের সাথে দেখা করছে ছবি তুলতে ব্যস্ত। ওদের যে এসবে বিরক্তিকর লাগছে তা কেউ বুঝতেই চাইছে না।

এদিকে অরিনের মামা মামী আসে।মমতা খান তার ভাইকে সাথে করে মেয়ে জামাই আর না মানা ছেলের বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সাথে করে নিয়ে আসে।

অরিনের মামা রোহান কে দেখে বলে,”আপা তোমার জামাই কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ রাজকুমারের থেকে কম না।যাক তোমার ভাগ্য ভালো এতো সুন্দর জামাই পেয়েছ। দুজনকে মাশাআল্লাহ সেই সুন্দর মানিয়েছে।”

মমতা খান একটু খুশি প্রকাশ করে।কারন রোহান কে তার বেশ পছন্দ হয়েছে।তা ছাড়া ছেলেটার রেজাল্ট ও অনেক ভালো।মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর মমতা খানের ইচ্ছা ছেলের সাথে জামাই কেও তাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে বলবে।তাহলে মেয়ের জীবটা সেটেল্ট হয়ে যাবে।মেয়ের জামাই আর ছেলে মিলেমিশে একসাথে কোম্পানি সামলাবে।

এদিকে অরিনের মামা তারিফা কে দেখে কোনো মন্তব্য করে না।অরিনের মামী বলে,”আপা এই মেয়ের বাড়ির লোকজন কোথায়?আপনার কি শেষ পর্যন্ত বংশপরিচয় হীন রাস্তার মেয়েকে বাড়ির বউ করে আনলেন? এইসব রাস্তার মেয়েদের চরিএ কিন্তু ভালো হয় না।সাবধানে দেখে শুনে থাকবেন। ”

কথা গুলো মামী তারিফার সামনে বলছিল! তারিফার কথা গুলো শুনে চোখ দুটো লাল টুকটকে হয়ে যায়।পাশে রোহান দাঁড়িয়ে ছিলো সে প্রতিবাদ করে বলে,”এই সম্পর্কে তো মামী শাশুড়ি হন!তা আসতে না আসতেই নিজের শাশুড়ি মার্কা রুপ প্রকাশ করলে চলছিল না?এখানে আশেপাশে অনেক মানুষ।তারা এমন কথা শুনলে তারিফা কে যতোটা না খারাপ ভাববে তার থেকে বেশি খারাপ ভাববে এই পরিবার কে।”

এমন সময় আয়াশ এসে বলে,”যে স্বামী তার স্ত্রীকে মানুষের সামনে অসম্মান হতে দেখে সেই স্বামীর আত্মমর্যাদা কমে যায়।তাই আমি চাইনা মামী আপনার জন্য এখানে আমার আত্মমর্যাদা কোনো ভাবে নষ্ট হোক।”

মমতা খানের রোহানের কথা গুলো ভালো লাগে।
সত্যি তো এখানে অনেক মানুষ। মেয়েটাকে অপমানিত করতে গিয়ে নিজের সম্মানের বারোটা বাজানোর কোনো মানেই হয় না।

এরপর নিজের ভাইয়ের বউকে নিয়ে মমতা খান সেখানে থেকে চলে যায়।

এদিকে কেউ একজন বার বার তারিফার দিকে আড় চোখে দেখছে আর এই হালকা শীতের মাঝেও প্রচুর পরিমাণে ঘামছে। হয়তো তারিফাকে নিয়ে সে খুব ভয় পাচ্ছে।

এদিকে আয়াশের বাবার বন্ধুকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে স্ব-পরিবারে তারা পৌঁছে গেছে।তাদের পৌঁছানোর কথা শুনে আয়াশের মুখটা শুকিয়ে শুটকি মাছের মতো হয়ে যায়।

আয়াশ আর রোহান, তারিফা আর অরিনের পাশে বসে আছে।আরিফুল খান তার বন্ধু এবং তার বউকে সাথে করে স্টেজের উপর নিয়ে আসে।অরিন কে দেখে খুব প্রশংসা করতে থাকে।এমন সময় হঠাৎ করে একটা পিচ্চি চকলেট খেতে খেতে বউ দেখতে এসে তারিফা ড্রেসের উপর ফেলে দেয়।তারিফা কিছু না বলে ড্রেস ক্লিন করতে বাথরুমে চলে যায়।তাদের সাথে তারিফার আর দেখা হয় না

অরিন তার বাবার বন্ধুর বউকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আন্টি আপু আসে নাই!না কি আমার ভাইয়ের বউ দেখতে আসার সাহসে কুলাই নি তার?”

আন্টি একগাল হেসে বলে,”অরিন মামুনি কী যে বলো না তুমি!আমার মেয়ে এসেছে তো পেছনে আছে চেনা কারো সাথে হয়তো কথা বলছে।ঐ তো আমার মেয়ে আসছে তোমরা গল্প করো আমরা বরং অন্যদিকে যায়।”

অরিন নিজের আসন থেকে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”তবে শেষ পর্যন্ত যে আবারো তোমার সাথে দেখা হবে এটা কখনো ভাবতে পারি নাই সুমু আপু।”

সুমাইয়া বলে,”উঁহু সুমু নয়!কথাটা সংশোধন করে সুমাইয়া আপু বলো।আমি তোমার অনেক বড় কথাটা ভুলে যাবে না।আর যাই হোক তোমার থেকে ভালো কিছু আমি আশা করি না।”

অরিন বলে,”তোমার মতো ফালতু মেয়ের কাছে থেকে কোনো রকম জ্ঞান নেওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।তা এতো কাহিনী হবার পর ও তুমি আমাদের সামনে আসলে?”

সুমাইয়া বলে,”আরে অরিন শুনলাম তোমার ভাইয়ের ও না কি বিয়ে হয়েছে? তা তোমার ভাইয়ের বউ কে তো দেখছি না!না কি আগের বউয়ের মতোপালিয়ে গেছে গো?”

অরিন বলে,”সুমু আপু কথা ঠিক করে বলো!
আগের বউ মানে কী?ভাবী ফ্রেশ হতে বাথরুমে গেছে।”

সুমু আয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”তা ড্রাইভার সাহেব কেমন আছেন?নতুন বউ নিয়ে বেশ মজাই আছেন। আগের বউয়ের খবর বাড়ির মানুষকে বলেন নাই দেখছি।তা অর্ণা কে কোথায় লুকিয়ে রাখছেন? ”

আয়াশের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে দেয়।আয়াশ বলে,”একদম ঐ মেয়ের নাম নিবে না।আমি অতীত ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাই।ওসব পুরাতন গান বাদ দাও।”

সুমু বলে,”ওরে ড্রাইভার সাহেব আমার কলিজার টুকরো বান্ধবীর জীবনটা নষ্ট করে আপনি তো মহা সুখে আছেন দেখছি!তা বাড়ির মানুষকে সুখবর টা দিতেই আমি আসছি।”

অরিন সুমুর হাত ধরে স্টেজ থেকে দূরে একপাশে নিয়ে আসে যেখানে মানুষের আনাগোনা কম।

সুমু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”আরে অরিন সোনা তোমার চেহারার রং এমন বদলে গেছে কেনো?ভাইয়াদের দুইটা বউয়ের খবর শুনে বুঝি?”

অরিন বলে,”কিসের বিয়ে!আর এই অর্ণা টা কে?
বিয়ে হবার কথা ছিলো তোমার সাথে তুমি রিজেক্ট করে দিয়েছিলে!তো মাঝে এই অর্ণা আসলো কোথায় থেকে।”

সুমু বলে,”তোমার ভাই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আমার একমাএ কলিজার টুকরো বান্ধবীকে পছন্দ করে।অনাথ ছিলো মেয়েটা, মা,বাবা,পরিবার বলতে কেউ ছিলো না,সব কিছু জানতে পেরে তোমার ভাই কয়েকদিনের মধ্যেই অর্ণা কে পটিয়ে বিয়ে করে।
বেচারি কে ধোঁকা দিয়ে ভোগ করে পালিয়ে চলে আসে।বেচারি এসব সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করে মারা যায়।”

অরিন বলে,”তোমার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করি না বুঝলে সুমু আপু।”

সুমাইয়া একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে বলে,”যাও তাহলে তোমার ভাইকে জিজ্ঞাস করো সে অর্ণা নামের মেয়েকে চিনতো কি না?আর তাকে বিয়ে করেছিল কি না।”

অরিন বলে,”তোমার মিথ্যা কথা শুনে কখনো আমি আমার ভাইয়া কে সন্দেহ করবো না বুঝলে?”

সুমাইয়া বলে,”হ্যা তা কেনো করবে?তোমরা তো পারো শুধু অন্যদের দিকে আঙ্গুল তুলতে।এছাড়া আর কিছুই শেখো নাই।যদি এতোই সাহস থাকে ডাকো তোমার ভাইকে। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তা আজ এখনি যাচাই হয়ে যাবে।”

অরিন সুমাইয়া কে রেখে সোজা আয়াশ কে ডেকে এনে সুমাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”ভাইয়া অর্ণা নামের মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছিল? ”

আয়াশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে!

অরিন অগ্নিদৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইয়া কথা বলো!তুমি অর্ণা নামের মেয়েটা কে চিনতে?বিয়ে করেছিলে?”

আয়াশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচু স্বরে বলে,”হ্যাঁ! ”

অরিন বলে,”তার মানে সুমাইয়া আপুর বলা সব কথা সত্যি। ভাইয়া তুমি একটা মেয়ের জীবন কীভাবে নষ্ট করতে পারো?তোমার তো বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো না।সেখানে এমন কাহিনী করে আসতে তোমার বিবেক বাধলো না?ছিঃ ছিঃ ভাইয়া!তোমার জন্য আজ আমার মাথাটা নিচু হয়ে গেলো।”

সুমাইয়া অরিনের কানের কাছে এসে বলে,”কী আর হলো!এসবের মধ্যে এতিম মেয়েটার জীবটা শেষ হয়ে গেছে।এটাই তো চেয়েছিল তোমার ভাই।আমি আজ এখানে এসেছি শুধু মাএ সত্যি বলে আমার বান্ধবীর রুহ কে শান্তি দিতে।তাই বলে সুমাইয়া চলে যায়।

অরিনের রাগে কষ্টে নিজের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।ভাইয়া যে সুমুদের বাড়িতে গিয়ে এমন কাহিনী করে আসবে তা কখনো আমরা কল্পনাও করি নাই।

অরিন আর কিছু না বলে সোজা স্টেজের উপর গিয়ে রোহানের হাত ধরে সোজা শ্বশুর শ্বাশুড়ি কে সাথে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।যাবার সময় বলে যায় ওর শরীর খারাপ লাগছে বাড়িতে যেতে চাই।তবে বাবার বাড়িতে নয়!

(আস্তে আস্তে আরো কাহিনী সামনে আসবে তবে তার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে)



চলবে….

(ইনশাআল্লাহ কালকের পর্বে নতুন টুইস্ট পেতে পারেন আশা করছি।কালকে হয়তো অর্ণার সম্পর্কে কিছু তথ্য পাবেন)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here