ঝরাপাতা পর্ব ১৭+১৮

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৭

(যারা গঠনমূলক মন্তব্য করবেন তাদের কমেন্ট নিয়ে গ্রূুপে আলোচনা করা হবে😊)

মমতা খান এসে আয়াশ কে বলে,”দেখ অরিন আবারো ঐ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। ওর তো আমাদের বাড়িতে থাকার কথা তাই না বল।”

তারিফা পেছনে থেকে এসে বলে, “বিয়ের পর যদি মেয়ে বাবার বাড়িতে থাকতে না চাই তাহলে তাকে জোড় করতে নেই।বিয়ের পর মেয়েরা পর হয়ে যায়।তাই পরের বাড়ির সম্পদ নিয়ে এতো চিন্তার কিছু নেই আম্মাজান।”

অরিনের মামী বলে,”দেখছেন আপা আপনার বউমা বাড়িতে আসতে না আসতেই অরিন মামুনি কে পড় করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর হয়তো অরিনের নাম নিশানা বাড়িতে রাখবে না এই মেয়ে।”

আয়াশ এবার জোড়ে চিৎকার করে shut up guys বলে ওঠে।আয়াশের চিৎকারে পরিবেশটা পুরো থমথমে হয়ে যায়।

তারিফা আয়াশের কাছে এসে বলে,”আপনাদের কি কোনো সমস্যা হয়েছে?না মানে হঠাৎ করে আপনার মেজাজ এমন জ্বলন্তআগুন হলো কি করে?”

আয়াশ তারিফার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”that’s none of your business!”

তারিফা পেছন থেকে বলে ওঠে,”বর আমার,ননদ আমার মাথা তো আমার ব্যাথা করবেই।”

আয়াশ দু হাত দিয়ে তারিফার বাহু শক্ত করে ধরে বলে,”কোন সম্পর্কের জোড়ে এতো মাথা ব্যাথা তোমার!এই সম্পর্কটা আমি চুলাই দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিবো।না থাকবে বিয়ে না থাকবে আমার সমস্যা। ”

তারিফা প্রচণ্ড ব্যাথা সহ্য করেও মুখ থেকে একটা আহহ শব্দ না বাহির করে একটা মায়াবী দৃষ্টিতে আয়াশের চোখে চোখ রেখে বলে,”একবার কালিমা পাঠ করে যে বিয়ের সম্পর্ক হয় সেই সম্পর্কের মাঝে রহমত বরকত সব কিছু মহান আল্লাহ দান করেন।দুটি অপরিচিত মানুষের মাঝে একটা শব্দের মাধ্যমে ভালোবাসার সাগরের সৃষ্টি হয়।আপনি কে সেই সম্পর্ক নষ্ট করা?”

আয়াশে কানে কথা গুলো ঢুকেছে কি না তা সে জানে না।তবে মেয়েটার এই দৃষ্টি তাকে এটা বুঝিয়ে ঠিকি দিচ্ছে সে মেয়েটার সাথে অন্যায় করছে।আয়াশ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি হাত দুটো সরিয়ে নেয়।

তারিফা বলে ওঠে,”আমাকে স্পর্শ করার সম্পর্ক অধিকার আপনার আছে।এখন সিদ্ধান্ত আপনার ভালোবাসা দিতে স্পর্শ করবেন!না কি আঘাত দেওয়ার জন্য আমাকে স্পর্শ করবে।”

আয়াশ তারিফার চোখে আর চোখ রেখে তাকিয়ে থাকতে পারছে না।তারিফার চোখের দিকে তাকাতেই নিজেকে অপরাধী লাগছে তার খুব।আয়াশ সেখানে আর এক মূর্হত্ব না দাঁড়িয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।
আয়াশের পেছনে পেছনে ওর মা আর মামী মাও চলে যায়।

তারিফা থপ করে মেঝেতে বসে পড়ে।মেঝেতে দু হাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে বলতে থাকে,”মা গো আজ তোমার মেয়েটা বড়ই ক্লান্ত!একবার টি ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরো।মা গো কিসের এতো অভিমান যার জন্য আমাদের মাঝে এতো দূরত্ব আজ।
এমন সময় চোখ থেকে অবাধ্য অশ্রু গুলো একাই বাঁধন ভেঙ্গে বন্যার সৃষ্টি করছে।



অরিন শ্বশুরবাড়িতে ফিরে সোজা নিজের ঘরে চলে যায়।লাগেজ থেকে নিজের একটা হাতে করে সোজা বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে ড্রেস এনে সোফাসেটের উপর এলোমেলো করে রেখে বিছানার উপর চাদর গায়ে দিয়ে মাথার উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।

রোহানের মা এসে চুপচাপ বিছানার উপর বসে অরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”বউমা তোমার কি খুব খারাপ লাগছে?তাহলে চলো তোমাকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসি।বলা তো যায় না রাতে যদি তোমার শরীরটা বেশি খারাপ করে।”

অরিন তাড়াতাড়ি উঠে খাটের সাথে বালিশ রেখে আধশোয়া হয়ে বসে বলে,”না আম্মা তেমন কিছুই হয়নি।আসলে মাথার মধ্যে খুব ব্যাথা করছে।
একটু শুয়ে থাকলে কমে যাবে সমস্যা নেই।”

রোহানের মা বলে,”আচ্ছা তুমি শুয়ে থাকো আমি তোমার জন্য কড়া করে এক কাপ চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।কড়া চা খেলে দেখবে অনেক ভালো লাগবে।”

অরিন একটা মলিন হাসি দিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।

একটুপর এককাপ চা হাতে করে রোহান রুমে এসে অরিনের পাশে বসে বলে,”মা তোমার জন্য চা বানিয়েছে।তা মহারানীর কী চা পছন্দ? ”

অরিন রোহানের কথার উওর না দিয়ে সোজা হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নেয়।রোহানের চোখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে পরম শান্তিতে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।একটুপর চায়ের কাপটা রোহানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অরিন বলে ওঠে,”ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকার জন্য একটু নিজেকে গুছিয়ে নিলে কিছুই সমস্যা মনে হয় না।শুধু সারাজীবন সুখে শাস্তিতে থাকার ইচ্ছা থাকতে হবে।সবাইকে একটু নিজ নিজ স্থানে থেকে চেষ্টা করা উচিত বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

রোহান বলে,”বড়লোকের মেয়ের মুখে দেখি মধ্যবিত্তদের মত কথা বেপার কি?Something something! ”

অরিন বলে,”রোহানের মাথা!”

রোহান কিছু না বলে চুপচাপ চলে যায়।অরিন আবারো আগের মতো চোখ বন্ধ করে আধশোয়া হয়ে থাকে।

একটুপর হঠাৎ নিজের কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই তাকিয়ে দেখে রোহান। অরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ঠোঁটের উপর হাত রেখে রোহান বলে,”একদম মুখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো,কোনো কথা বলবে না।”

রোহান অরিনের পাশে বসে ওর কপালের বাম লাগিয়ে ম্যাসেজ করে দিতে থাকে।অরিনের খুব ভালো লাগছিল। এর মাঝেমাঝে রোহান অরিনের চুলের মধ্যে বুলিয়ে দিতে থাকে।নিজের স্বামীর কাছে এতোটা যত্ন পেয়ে আজ অরিন সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করছে।
সত্যি সে রোহান কে পছন্দ করে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি।মধ্যবিত্ত হলেও সুখি হওয়া যায়।বড়লোক হলেই যে সুখি হবে মানুষেরা এমনা কোথাও লেখা নেই।
অরিন পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে যায়।বর এতো ভালোবেসে যদি মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তাহলে ঘুম কি দূরে পালিয়ে থাকতে পারে?

রোহান দেখে অরিন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।অরিনের গায়ে চাদর ঠিক করে দিয়ে সে মোবাইল টা হাতে নিয়ে বারান্দাতে চলে যায়।
.
.
.
রোহান সোজা তারিফা কে কল করে।তারিফা রোহানের কলটা রিসিভ করতেই রোহান ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝতে পারে ওর মন খারাপ। তারিফাকে কিছু বলতে না দিয়ে রোহান বলে,”তোমার মন খারাপের কারণ জানতে চাইবো না।তবে বলবো মন খারাপের দাম তুমি পাবে না।যতোদিন না স্বামীর ভালোবাসার ভাগীদার হতে পারছো।তাই আগে ভালোবাসার অধিকারটা না হয় ভালবাসার দিয়ে আদায় করে নাও।বলে কলের লাইন টা রোহান কেটে দেয়।”

তারিফা মেঝে থেকে উঠে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সামনে দিকে যাবার সময় একজনের সাথে থাক্কা খায়।

তারিফা লোকটা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”কিছু স্বার্থপর মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য কিছু সম্পর্ক অস্বীকার করে।সম্পর্ক ছিন্ন করে।আজ শুধু আপনার জন্য আমার জীবনের গল্পটা এমন ঝরা পাতার মতো।কোথাও নিজের সঠিক মূল্যায়ন করাতে পারি না।তার একটাই কারণ আপনি শুধু আপনি।আপনাকে কোনোদিক ও আমি মাফ করবো না। বলে চলে যায়।

এদিকে এসে দেখে আরিফুল খান এবং তার পরিবারের মানুষেরা ছাড়া আর কেউ নেই।

আরিফুল খান বলে,”বউমা অনেক রাত হয়ে গেছে!অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে।এবার আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।”

মমতা খান বলে,”তুমি চাইলে এই হোটেলে থেকে যেতে পারো।তোমার মতো মেয়েরা তো এসব করে বেড়াই। ”

তারিফা এবার নিজের অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কড়া দৃষ্টিতে বলে,”অন্যের দিকে একটা আঙ্গুল তুললে বাকি চারটা আঙ্গুল আপনার নিজের দিকে ফিরে আসবে।তাই মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের দিকে আঙ্গুল তোলার সময় সাবধানতা অবলম্ব করা উচিৎ। ”

আরিফুল ইসলাম বলে,”আহ মমতা তুমি সব সময় এমন কড়া কথা বলো কেনো?”

তারিফা বলে,”আসলে শাশুড়ি মাকে হয়তো কেউ জন্মের পর মিষ্টি খাওয়াতে ভুলে গিয়েছিল।”

মমতা খান বলে,”এই মেয়ে একদম চুপ।
বেশি কথা বলবা না।বাড়াবাড়ি পছন্দ না আমার।”

আরিফুল খান নিজের বউয়ের হাত ধরে সোজা গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়।এদিকে আয়াশ নেই সে অনেক আগের বাড়িতে চলে গেছে।তাই অনিচ্ছা শর্তেও শ্বশুরের গাড়িতে বসে তাকে বাড়িতে যেতে হচ্ছে।

তারিফা যাবার সময় ভাবতে থাকে,”কাপালে সুখ আছে তবে তা নিজের অর্জন করতে হবে।নিজের সুখের ব্যবস্থা মানুষের নিজের করতে হয়।বাকিরা তো দুঃখের গল্প শুনে মজা নেয়।সুখের পথে কাঁটা বেশি থাকে।”

‘#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_১৮

তারিফা বাড়িতে ফিরে নিজের রুমে প্রবেশ করে দেখো পুরো রুমের বেহালা অবস্থা। বিছানার কোনো চিহ্ন নেই।সব কিছু এদিকে সেদিকে রাখা।

বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বুঝতে পারে আয়াশ বাথরুমে আছে।

তারিফা পাশের রুমে গিয়ে দ্রুত কোনোরকম নিজের ড্রেস চেঞ্জড করে এসে বিছানা ঠিকঠাক করতে শুরু করে।

যতো যাই হোক রাতে আরামে ঘুমের দরকার আছে।নয়তো সারাদিন মানুষিক অশান্তি ভোগ করার শক্তি টুকু সে যোগার করতে পারবে না।

বিছানা ঠিকঠাক করে বাথরুমের দরজাতে কড়া নাড়তে শুরু করে দেয়।অনেক সময় ধরে কোনো সাড়া না পেয়ে নিজেই বলতে শুরু করে,”আগে অনেক গল্প আর সিনেমাতে দেখেছি নায়িকা রাগে দুঃখে বাথরুমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা পাড় করে।আমার ঘরে দেখছি একদম ভিন্ন কাহিনী! আমার স্থানে আমার বর বাথরুমে শাওয়ারের নিচে বসে আছে ভাবা যায়!”

আয়াশের এই কথাটা খুব ইগোতে লাগে।
এই ফাজিল মেয়ের এতো সাহস হয় কি করে আমাকে এমন কথা বলার!

শাওয়ার বন্ধ করে দরজা খুলে তারিফার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”এই শাঁকচুন্নি আমার জীবটা ধনেপাতা বানিয়ে হয়নি এখন শান্তিতে গোসল ও করতে দিবা না!”

তারিফা বলে,”তা কোথায় কি পাপ করে আসছেন?
যে মাঝ রাতে তা গোছস করে পরিষ্কার করতে হচ্ছে?”

আয়াশ ভিজা শরীরে নিজের কপালের চাপড়ে বলে,”এই কাপারের দোষে আজ নিজেই নিজের সিদ্ধান্তের বেড়াজালে আটকা পড়ে মরছি উনি আসছে খোঁচা দিতে।”

তারিফা আয়াশের দিকে ভ্রু নাচিয়ে বলে,”বডি তো মাশাআল্লাহ সেই সুন্দর এমন ভেজা শরীরে বউয়ের সামনে আসতে লজ্জা করলো না,,এই বডি দেখিয়ে বাকি চারটা বিয়ে করার শখ আছে না কি?”

আয়াশ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।সত্যি তো খালি গাঁয়ে তাও ভেজা অবস্থায় এভাবে কোনো মেয়ের সামনে আসা উচিৎ হয় নি।

এবার তারিফার দিকে তাকিয়ে রাগী দৃষ্টি তে বলে,”আপনিও কম নির্লজ্জ না, এভাবে আমাকে দেখার কি আছে।এমন ভাবে সব মেয়েরা দেখলে অনেক বিয়ে কপালে আছে হয়তো বলেই দরজা বন্ধ করে দেয়।”

তারিফা বলে,”হ্যাঁ আপনি একশো বিয়ে করবেন, আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো।আপনার বিয়ের ঘরে যদি আগুন না দেই তবে আমার নাম বদলে রাখবো। ”

একটুপর আয়াশ বাথরুম থেকে বাহির হয়ে সোজা বারান্দাতে চলে যায়।
তারিফা পেছনে থেকে বলে,”ঐ মেয়েটার সাথে এমন না করলে চলতো না?মেয়েটা শেষ পর্যন্ত মারা গেছে।আপনার আফসোস হয় না?”

আয়াশ চমকে উঠে বলে,”কেনো আফসোস হবে আমার?আমি তো গুনাহ করি নাই।”

তারিফা বলে,”শুনেছি যাদের প্রথমে বউ মরে যায় তাদের সব বউ বরের আগেই মরে যায়।হায় আল্লাহ!
হায় আল্লাহ! আমার কি হবে?”

আয়াশ একটা ধমক দিয়ে বলে,”একদম চুপ!একদম নাটক করবে না আমার সামনে?আমি মেয়েটা কে বলেছিলাম যাও সুইসাইড করে মরে যায়।আমার থেকে মুক্তি একাই পাবে?”

তারিফা ভেংচি কেটে বলে,”আপনি অন্যায় না করলে সে এমনি কবরে চলে গেছে?”

আয়াশ একদম তারিফার এতোটা কাছে চলে আসে যে আয়াশের প্রতিটা নিশ্বাস তারিফার মুখের উপর পড়ছে!

আয়াশ চোখ বন্ধ করে বলে,”ঐ মেয়েটা মরে তো আমার জীবনটা শেষ করে দিলো।যদি সম্ভব হতো ওকে কবর থেকে উঠিয়ে এনে সব প্রশ্নের উওর নিতাম। কেনো কি কোন ভুলের শাস্তির ভাগিদার করলো আমাকে।”

আয়াশের প্রতিটা নিশ্বাস তারিফার বুকের মাঝে অন্য রকম এক ঝড়ের সৃষ্টি করছে।না এমন অনুভূতির সাথে সে আগে থেকে পরিচিত নয়।এটা অন্যরকম অনুভূতি।
নিজের বর যখন এতোটা কাছে থাকে তখন হয়তো এমন অনুভূতিরা দোলা দেয়।

আয়াশ চোখ খুলে রুমে এসে বিছানার উপর থেকে চাদর নিয়ে সোফাসেটের উপর ধপাৎ করে শুয়ে পড়ে।

তারিফা নিজেকে বলে,”যে মেয়ের কোনো স্মৃতি নেই এর জীবনে তাকে নতুন করে আর জায়গা পেতে দিবো না, আমি আমার অধিকার নিয়ে থাকবো।”



এদিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে অরিন রান্নাঘরে শাশুড়ি মা’র পেছনে পেছনে ঘুর ঘুর করছে।শাশুড়ি যখন যেখানে যাচ্ছে সেখানে গিয়ে অরিন উপস্থিত হচ্ছে।

একটুপর শাশুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আম্মাজান কি আমার উপর বিরক্তিপ্রকাশ করছেন? ”

শাশুড়ি মা রাগি দৃষ্টি তে বলে,”চুপচাপ বসে কাজ করা দেখে,,এতো পেছনে পেছনে ঘোড়ারঘাস কাটার কি দরকার? ”

অরিন ন্যাকামি করে বলে “আম্মাজান! ”

শাশুড়ি মা বলে,”আরে বাবা দুদিন আসছো বাড়িতে এতো রান্নাবাড়া শেখার কি দরকার তা তো বুঝতেছি না।যাও না মন দিয়ে লেখাপড়া করো।সংসার করার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে।”

অরিন নাক মুখ খিঁচে বলে,”বিয়ের পর কিসের লেখাপড়া? ”

রোহানের মা অরিনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,”বউমা আমার বাড়িতে এমন ফাঁকিবাজের কোনো স্থান নেই!তোমার শ্বশুরের কাছে দাঁড়াও তোমার নামে বিচার দিবো।তখন দেখো কি হয়।”

অরিন মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”আচ্ছা দেখা যাবে কি হয়।”

সকালের নাস্তার টেবিলে রফিক সাহবে অরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”বউমা বিয়েটা হঠাৎ করে যে ভাবে হোক সম্পন্ন হয়েছে।তাই বলছিলাম যে তোমাদের দু জনের উচিৎ নিজেদের লেখাপড়া কমপ্লিট করা।”

শ্বশুরের মুখে লেখাপড়ার কথা শুনে অরিনের গলা দিয়ে আর খাবার নিচে নামতে চাইছে না।তবুও ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখাংশ ফুটিয়ে রেখেছে।

রোহানের বাবা আবারো বলে ওঠে,”দেখো মা রোহানের লেখাপড়া এখনো কমপ্লিট হয়নি! এমনকি তোমার ও লেখাপড়া কমপ্লিট হয় নি।তাই আমি চাইছি রোহান মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা চাকুরী করে তোমার দায়িত্ব নেওয়া যোগ্যতা অর্জন কুরুক। ততোদিন না হয় তুমি তোমার বাবার বাড়ি গিয়ে থাকলে।মাঝেমধ্যে না হয় এখানে বেড়াতে আসবে।”

শ্বশুরের কথা শেষ হবার আগেই অরিন বিষম খেয়ে নিজের অবস্থা খারাপ বানিয়ে ফেলে।তাড়াতাড়ি সবাই অরিনের মাথায় ফুঁ দিতে শুরু করে,রোহান পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।

অরিন মনে মনে বলে,”ও শ্বশুর আব্বা আপনে এ কি কথা বলছেন! যাকে পাবার জন্য এতো বছর ধরে সাধনা করছি তাকে পাবার পর তার থেকে দূরে যাবো এটা কি করে মেনে নেই।এখন হেংলার মতো এখানে থাকবো সে কথা তো বলতেই পারবো না।শেষে কি না এমন জ্বালাই পড়বো আগে ভাবি না।আল্লাহ তুমি মোরে বাঁচাও। ”

রোহান বলে,”আচ্ছা বাবা!আমি তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজী আছি!কারণ সত্যি আমি এখনো সবার দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা নেই।আমি চাই নিজের পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত করে তারপর সব সম্পর্ক গুলোকে গুছিয়ে নিবে পারবো।নিজের যোগ্যতা ছাড়া কি করে বাবা মা আর বউয়ের দায়িত্ব নিবো।নিজে রোজগার করে সবাইকে সুখি করতে চাইছি!”

অরিন চুপচাপ সব কথা শুনে বুঝতে চেষ্টা করছিল তখন রফিক সাহেব বলেন,”বউমা সংসারে মায়াজন্ম নেওয়ার আগেই তুমি তোমার বাবার বাড়িতে যাও।আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি।তুমি রুমে গিয়ে সব কিছু গুছিয়ে নাও।রোহান বিকালে তোমাকে ঐ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে!”

রোহান বলে,”জ্বি বাবা আমি অরিন কে বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবো।”

অরিন চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে সব কিছু সব কিছু গোছাতে থাকে।আর ভাবতে থাকে সত্যি তো রোহানের কোনো রোজগার নাই।কিছুদিন পর হয়তো যখন আমার হাতখরচের টাকা দিতে পারবে না তখন আমি নিজেই ওর সাথে ঝগড়াফসাদ শুরু করে দিবো।
আমাদের বিয়ে যখন হয়ে গেছে তখন তো আর চিন্তার কিছু নাই।
ওরে অরিন আমি তো এবার ভার্সিটি তে গিয়ে জমিয়ে বরের সাথে প্রেম করতে পারবো।এই কথাটা ভাবতেই মজা লাগছে।তবে ঐ বাড়িতে গেলে তো আমাকে আবারো ভাইয়ার সামনে দাঁড়াতে হবে।উফফ সব কিছু গোলমেলে লাগছে রে।

তবুও শত মন খারাপ নিয়ে অরিন বাবার বাড়িতে যাবার জন্য রেডি হয়।অরিন চাইছে না তার জন্য রোহানের ফিউচারের কোনো ক্ষতি হোক।শ্বশুরবাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।



চলবে….


চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here