ঝরাপাতা পর্ব ২

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_০২

” ঝরা পাতা”
আজ আমি ঝরা পাতার মতো অবহেলিত,
আমি আজ পদ দলিত!
নেই কোন জীবনের রশ,
আমি আজ হাওয়ার বশ,
চলেছি হাওয়ার দোলায়,
ঠিকানা হীন রাস্তায়!
পাইনি কারো দেখা,
যে তুলে নিয়ে যাবে আমায় ভালোবাসে তার বাসায়!
স্বার্থক কী হবে না মোর জীবন!
শুধু কি রইবো পরে একলা এভাবে,
এ জনহীন রাস্তায়! (সংগৃহীত করা)

কবিতা পাঠ করে স্টেজের উপর থেকে নেমে আসতেই অর্ণার একমাত্র প্রিয় বান্ধবী সুমাইয়া এসে সোজা অর্ণা কে জড়িয়ে ধরে বলে,”ওহ মেরী জান!তুমি রাস্তায় কেনো পড়ে থাকবে বলো তো!তোমাকে তো রাজকুমার এসে, ভালোবেসে তার হৃদয়ের রানি বানিয়ে রাখবে! এরপর সে তোমাকে সাথে করে তার রাজ প্রসাদে নিয়ে যাবে।সারাজীবন সেই রাজকুমারের চোখে পাতায় বন্দী থাকবে তুমি।”

অর্ণা বলে,”থাক সুমু! তোকে আর ঢোপ দিতে হবে না!আমি জানি আমি কে?আমার মতো অনাথ মেয়ের জন্য এই কবিতা ঠিক আছে।যার এপৃথীবতে মা নেই তার সত্যি কোনো স্বপ্ন দেখতে নেই।স্বপ্নের মাঝেও রাজকুমার মাঝ রাস্তায় পালিয়ে যায়।
আর বাস্তবে তো ভুল করেও এমন কথা কল্পনাও করি না।”

সুমাইয়া বলে,”উফফ অর্ণা তুই সব সময় নেগেটিভ কথা ভাবতে শিখেছিস। বসন্তের শেষে গাছের সব পাতা গুলো ঝরে যায়। তার মানে কিন্তু এটা নয়! যে গাছের মূল্য কমে যায়।গাছের পুরাতন পাতা গুলো ঝরে যায় বলেই কিন্তু গাছ আবারো নতুন রূপে নতুন পাতার সমারোহ নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলে।ঠিক এমন করে তোর সব কষ্ট গুলোর ও একদিন সমাপ্তি হবে।”

অর্ণা বলে,”রাখ এসব কথা! তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।জানিস তো মামী মা কেমন!
এমনি কলেজের অনুষ্ঠানে এসেছি তাকে বলা হয়নি! বাড়িতে যেতে এতোটা দেড়ি হয়ে যাবে ভাবতেও পারি নাই!বাড়িতে বলতেই ভুলে গেছি কলেজ অনুষ্ঠান হচ্ছে।যদি সে জানতে পারবে তাহলে আজ আমার বেতের বারি খেতে হবে শিউর।আর বাড়িতে যাবার পর সব কাজ তো আমাকেই কমপ্লিট করতে হবে। ”

সুমু অর্ণার কাধে হাত রেখে বলে,”তুই তো লেখাপড়ায় অনেক ভালো! একটা পার্ট টাইম জব শুরু করেছিস।নিজের যোগ্যতায় একা থাকতে তো পারস।কি দরকার রোজ এতো অপমান অবহেলা সহ্য করে ঐ বাড়িতে পড়ে থাকার?নিজে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারিশ তো।”

অর্ণা বলে,”দেখ ছোট বেলা মা মারা যাবার পর থেকে মামার বাড়িতে বড় হয়েছি। তারা তো আমার আপন তাই না।মামী মা যতোই রাগ করুক না কেনো।আমাকে এতো বড় এতো শিক্ষিত কিন্তু তারাই করেছে।তাই চাইলেও তাদের অবহেলা কে অবহেলা মনে না করে ভালোবাসা মনে করে চলতে শিখেছি। তাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাদের ছেড়ে একা থাকার কথা চিন্তাও করতে পারি না।জানিস তো মামু জান ছোট একটা জব করে কতো কষ্টে সংসারের হাল ধরে আছে।আমি চাইনা তাদের এমন কোনো কষ্ট দিতে।আমি যতোদিন থাকবো পরিবারের সাথে থাকবো।”

সুমু বলে,”এটা পরিবার না ছাই!যার অনাথ মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ ঠিকি করে তবে সঠিক নিয়ম পালন করে না।অবহেলা অযত্ন সহকারে মানুষ করে।”

এমন সময় রাইসা এসে বলে,”এই যে বড় মেডাম আপা!আপনার বড়লো বান্ধবীর সাথে গল্প করা শেষ হলে এবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া উচিৎ।
নয়তো বেশি দেড়ি করে গেলে আমাকে কিছু না বললেও তোমাকে কথা শোনাতে ছাড়বে না আমার মা জননী। ”

সুমু বলে,”এই রাইসা!তুই কথা একটু সুন্দর করেও তো বলতে পারিশ! এতো পেঁচিয়ে বলার কি আছে?”

রাইসা বলে,”এই সুমু আপু আমাদের ব্যক্তিগত বেপারে নাক গলাবেন না বুঝতে পারছেন।সব সময় আমাকে কথা শেখাতে আসবে। ”

অর্ণা বলে,”এই তোরা থাম তো!তোরা যে এমন কেনো তা আমি বুঝতে পারি না। সব সময় দেখা হলেই বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করবে।আচ্ছা বাদ দে আমরা যাচ্ছি সুমাইয়া। এমনি তে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে আজকে।”

সুমু বলে,” এই অর্ণা দাঁড়া একটু!আজ আমি তোদের আমার গাড়িতে করে ছেড়ে দিয়ে আসি।আজ অনেক দেড়ি হয়ে গেছে তোদের।এমনি অন্য কিছুতে করে গেলে তোদের সময় বেশি লাগবে।”

এমন সময় গেটের সামনে বড় একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়।

সুমু বলে,”এই অর্ণা, রাইসা গাড়িতে ওঠো তাড়াতাড়ি!”

রাইসা বলে,”সুমু আপু এই নতুন গাড়িটা তোমাদের?”

সুমু বলে,”হ্যাঁ! আমাদের পারসোনাল গাড়ি।পারসোনাল ড্রাইভার ও আছে।আমাদের গাড়ির ড্রাইভার কিন্তু সেই সুন্দর। তোরা দু জন ইচ্ছা করলেই চান্স মারতে পারিস।ছেলেটার বেতন কিন্তু মোটামুটি ভালোই। তাকে বিয়ে করলে ভালো মতো সংসার করতে পারবি।”

অর্ণা বলে,”আমার এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।তুই এই সব ফালতু কথা বাদ দে।”

রাইসা তাড়াতাড়ি করে গাড়ির সামনে ড্রাইভারের সিটের পাশে সিটে বসে পড়ে।এদিকে পেছনে সুমাইয়ার সাথে অর্ণা বসে।অর্ণার খুব সুন্দর করে হিজাব পড়া।সাথে হিজাব দিয়ে সুন্দর করে নেকাব বানিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।শুধু অর্ণার সুন্দর কাজল কালো চোখ দুটো বাহিরে আছে।যে কোনো ছেলে এই চোখের মায়াবী চাহনি তে আহত হতেই পারে।

ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে দেয়।
রাইসা তো ড্রাইভার কে দেখে ক্রাশ খাই।
মনে মনে ভাবতে থাকে,আহারে বেচারা ড্রাইভার হলে কি হবে দেখতে কিন্তু মাশাআল্লাহ সেই রকম সুন্দর।
পুরা সিনেমার হিরোর মতো!সুমু আপু তো বলছে টাকা ভালোই ইনকাম করে।তাহলে আমার আর কষ্ট করে লেখাপড়া করার কি দরকার! আর বাবার ঐ কষ্টের সংসারেও থাকতে ভালো লাগে না।ড্রাইভার তো কি হয়েছে। গ্রামের মানুষেরা তো আর আমার শ্বশুর বাড়িতে দেখতে আসবে না।তাহলে সমস্যা নেই!
আমি সবার কাছে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে পারবো আমার বরের অনেক বড় গাড়ি বাড়ি আছে।
উফফ রাইসা তোর আর কি চাই বলতো।
এখন এই লোকটাকে পটাতে পারলেই হলো।

এদিকে সুমু অর্ণা কে বলে,”এই গাড়িতে মুখ ঢেকে রাখার দরকার নেই।তোমার চেহারা দেখতে বাহিরের কেউ আসবে না গাড়িতে বুঝলে সুন্দরি।”

অর্ণা বলে,”আমাকে কারো দেখার দরকার নাই।
তোদের দরকার সেজেগুজে চিরিখানাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাক।মানুষ টিকিট কেটে পশুপাখি না দেখে তোদের দেখতে যাবে।”

সুমু বলে,”তোর সাথে কথা বলাই উচিৎ না।
পুরা একটা নিরামিষের খনি।”

রাইসা বলে,”শুধু নিরামিষ না!পুরাই নিরামিষভোজী।এসবের কিছুই বোঝে না।”

ড্রাইভার এদের কথা শুনে অবাক হচ্ছে।আর বার বার লুকিং গ্লাসে সে অর্ণার ঐ মায়াবী চোখ দুটো দেখছে।

কিছু সময় পর রাইসা ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনি কি বিবাহিত? ”

ড্রাইভার এমন প্রশ্ন শুনে বিরক্তির সাথে বলে,”জ্বি না পিউর নিরামিষ আমি!মানে একদম পিউর সিঙ্গেল!”

রাইসা ওমনি বলে,”কাজী অফিস চলেন আমরা সিঙ্গেল ধেকে মিঙ্গেল হয়ে যায় আজকেই।”

রাইসার মুখে এমন কথা শুনে ড্রাইভার খুব জোড়ে গাড়ির ব্রেক করে।সুমু বলে,”এবারো নামো তোমরা গাড়ি থেকে তোমাদের বাড়ি ঐ যে সামনের দেখা যায়।”

গাড়ি থেকে নেমেই রাইসার মাথার একটা গাট্টা মারে অর্ণা।

সুমাইয়া বলে,”অর্ণা রে তোর বোনের মাথা গেছে।
শেষে কিনা ড্রাইভার পছন্দ হলো বিয়ের জন্য।
আরে রাইসা তোমার মতো সুন্দরির জন্য তো কোনো রাজার কুমার আসবে এসব ড্রাইভারের চিন্তা বাদ দাও”

অর্ণা ড্রাইভারের সামনের গিয়ে বলে,”প্লিজ কিছু মনে করবেন না!আমার বোন ছোট মানুষ কি বলতে কি বলেছে।”

রাইসার কান ধরে অর্ণা বলে,”আমার মামু জান গরিব হতে পারে।এতোটা গরিব না!যে তার মেয়ের একটা ড্রাইভারের সাথে বিয়ে দিবে।”

এরপরে সুমাইয়া দুই বোনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

এদিকে বাড়িতে আসতেই মামী মা অর্ণা কে বলে,”তা মহারানীর বাড়ির কথা মনে পড়েছে? এতো তাড়াতাড়ি আসার কি দরকার ছিলো!আজ রাতটা না হয় কলেজে কাটিয়ে আসতে পারতেন। ”

রাইসা বলে,”মা এসব কথা বাদ দাও!তোমার সাথে কিছু ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। ওরে না হয় পড়ে বকাবকি করবে!”

অর্ণা নিজের রুমে যায়,ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে,মামী মা ওর জন্য রেখে যে কাজ রেখে দিয়েছে।সে সব কাজ কমপ্লিট করে তাড়াতাড়ি রান্নাবান্না করতে শুরু করে দেয়।রাতের রান্না তাকেই করতে হবে।

সে রান্না কমপ্লিট করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে যায়।

এদিকে সুমাইয়া বাড়িতে….

(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি সবার কাছে)




চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here