ঝরাপাতা পর্ব ৫+৬

#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_০৫

দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে আসে এদিকে সুমাইয়া ড্রাইভার কে দিয়ে বিকালে উপহার পাঠিয়ে দেয়।
ড্রাইভার যেতে চায়ছিল না।সে জোড় করে একপ্রকার বাধ্য করে পাঠিয়ে দেয়।

দুপুরবেলাতে অর্ণা সুমাইয়ার বাড়িতে চলে এসে আছে।রাইসা হঠাৎ করে কাকে যেনো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে।তার সাথে আজ ওর বিয়ে।তাই মামী মা চাইছে না অর্ণা রাইসার বিয়েতে উপস্থিত থাকুক।

সুমু বলে,”এগুলো কেমন ধরণের কথা জন্মদিনের দিন মেয়ের বিয়ের আয়োজন করছে।আর মেয়ে যদি আগুনে ঝাঁপ দিতে চাই তাকে কি সেই কাজ করতে দেওয়া উচিৎ? ”

অর্ণা বলে,”যদি কোনো মেয়ে বাবার সামনে নিজের বিয়ের কথা বলে,তুই বুঝতে পারছিস সে বাবা কতোটা অপমানিত বোধ করে।সেই অপমান সহ্য করে তার মেয়েকে সে বিয়ে দিয়ে মন থেকে বিতাড়িত করতে এই বিয়ের আয়োজন করেছে।”

সুমু বলে,”মামা এটা মোটেই ঠিক করছে না।
মেয়েকে মনের সুখে একটু বেত দিয়ে পিটাবে তাহলে মেয়ে সোজা পথে চলে আসবে।”

এদিকে ড্রাইভার উপহার দিতে রাইসাদের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখে এ বাড়িতে পুরো এলাহি কান্ড চলছে।

সে উপহার গুলো কোথায় রাখবে জানতে চাইলে একটা পিচ্ছি তাকে রাইসার রুম দেখিয়ে দেয়।

সে ভালো মনে রাইসার রুমে ঢুকতে কেউ বাহিরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।ড্রাইভার টেবিলের উপর সব কিছু রেখে পিছনে ঘুরতেই রাইসার সাথে ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।রাইসার শাড়ির কিছু অংশ এদিকে-সেদিকে হয়ে যায়।এমন অবস্থা রাইসা উপর ড্রাইভার সাহব পড়ে আছে।

ঠিক সে সময় বাহিরে থেকে দরজা খুলে একটা ছেলে ভেতরে এসে এমন অবস্থায় রাইসার কে দেখে বলে,”তোমার মতো চরিত্র খারাপ মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হবে কখনো না।বিয়ের দিন বিকালে অন্য পুরুষের সাথে ছিঃ ছিঃ!এতো দিন আমার সাথে প্রেম করে আজ এমন ভাবে অপমান না করলেও পারতে।!

রাইসা তার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”দেখো তুমি যা ভাবছো এমন কিছুই হয়নি। এটা একটা দূর্ঘটনা মাএ!
উনি পা পিছলে আমার উপর পড়ে গেছেন।
আর তুমি যেমনটা ভাবছো মোটেই তেমন কিছু না।
প্লিজ তুমি আমাকে বিশ্বাস করো।”

ছেলেটা বলে,”তোমাকে বিশ্বাস করা সম্ভব না রাইসা।
যে মেয়ে হুট করে বাড়ির মানুষকে বিয়ের জন্য রাজী করাতে পারে সে মেয়ের দ্বারা সব কিছু সম্ভব।
তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
এবার বাঁচাও নিজের সাথে নিজের পরিবারের সম্মান। তাই বলে ছেলেটা তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে যায়।”

রাইসা তার পিছু পিছু বাহিরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করে বলে,”এই লোকটা আমার ঘরে ঢুকে আমার সবকিছু শেষ করে দিলো।আমার হবু বর বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে গেলো গো! এখন আমার কি হবে গো।
আমাকে তারা তাদের বাড়ির বউ করবে না।
এখন আমাকে কে বিয়ে করবে গো।আমার সম্মানের সাথে বাবার সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে গো আজকে।
তাই বলে সুমাইয়া নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়ে সুইসাইডের চেষ্টা করতে যায়।”

বাড়ির সব মানুষজন মিলে রাইসাকে সুইসাইড করার হাত থেকে বাঁচাই!

এমন সময় সবাই বলে,”এই ড্রাইভারের জন্য এমন কাহিনী হয়ছে। এখন রাইসা কে এই ছেলেটা বিয়ে করবে।যেমন একা একটা মেয়ের ঘরে ঢুকে ওর সম্মান সমাজে চোখে নষ্ট করেছে।এবার এরে ওদের জোড় করে বিয়ে দাও।বেয়াদব ছেলে!বাড়িতে মা বোন নাই,পরের ঘরে যখন তখন বিনা পারমিশনে ঢুকে পরার শাস্তি এমন হওয়া উচিৎ। তুমি আমাদের মেয়েটা কে বিয়ে করো নয়তো তোমাকে জেলের ভাত খাইতে হবে।সাথে সম্মানের চল্লিশা করবো।তাই বলে সকলে অনেক অপমান করতে থাকে ড্রাইভার কে “..

অবশেষে এতো অপমান সহ্য না করতে পেরে সে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়।আর সে তো ইচ্ছা করে রাইসার এমন ক্ষতি করতে চাইনি।ভুলটা তার জন্য হয়েছে।
এখন তাকে বিয়ে না করলে হয়তো মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।



হঠাৎ সুমু কি মনে করে জোর জবরদস্তি করে অর্ণাকে রেডি করে।নিজের সাথে করে রাইসাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।অর্ণা সুমু কে সবটা বলে,”মামী মা তাকে ঐ বাড়িতে দেখলে রাগ করবে।”

সুমু বলে,”তোর বোনের বিয়েতে তুই থাকবি না এটা কখনো হতে পারে না।তাই তো তোকে সাথে করে নিয়ে যাবো আমি।দেখি মামীর কতো সাহস!
সে তোকে অপমান করে কি করে?”

অর্ণার অনিচ্ছা সত্বেও দুজনে এ বাড়িতে এসে দেখে বিয়ের সব আয়োজন কমপ্লিট।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়াবেন।

এমন সময় রাইসা ছেলেটার সামনে এসে তাকে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”এই রকম রাস্তার ছেলেকে আমি কেনো বিয়ে করতে ।আমার আজকে বিয়ে ভাঙ্গলে সমস্যা নেই।
আবার পড়ে ভালো ছেলের সাথে বিয়ে করতে পারবো।যার ভুলের জন্য আমার ভালোবাসার মানুষের বিশ্বাস হারিয়েছি তাকে বিয়ে করে সারাজীবন মরতে রাজী নয় আমি।এই দুই টাকার ড্রাইভার কে বিয়ে করার কোনো মানে হয় না।সারাজীবন কষ্ট ভোগ করতে হবে আমাকে।”

রাইসার বাবা রাইসা কে কষে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,” সব কিছু রেডি আর তুই কিনা এমন সময় এভাবে পিছটান মারছিস। ”

রাইসা বলে,”তুমি কেমন বাবা।নিজের মেয়েকে এমন একটা রাস্তার মানুষের সাথে বিয়ে দিতে তোমার একটু বিবেকে বাঁধছে না?চেনা নেই জানা নেই!
যার জন্য আমাকে অপমানিত হতে হলো তাকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না।”

মামা রাইসার এমন কথা শুনে একদম হ্যাঁ হয়ে যায়।

এমন সময় অর্ণা রাইসা গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,”রাইসা বেয়াদবির একটা সীমানা থাকা উচিৎ।
তুই দিনে দিনে সব লিমিট পার করে ফেলছিস।
তুই নিজে জোর করেছিস বিয়ের জন্য।
তাহলে এখন বিয়ে হচ্ছে তখন কেনো না করছিস?”

রাইসা বলে,”তোমার যখন এতো বাঁধছে তাহলে তুমি করো ঐ ড্রাইভার কে বিয়ে।আমি তো তাকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি না।”

আয়না বেগম এসে নিজের মেয়েকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমরা গরীব হতে পারি।আমাদের ও মান-সম্মান, ইচ্ছা, সব কিছু আছে।তাই আমার মেয়ের এমন পথের মানুষের সাথে আমি কখনো বিয়ে দিবো না।”

ড্রাইভার এবার জোড়ে চিৎকার করে বলে,”তোমাদের এতো সাহস হয় কি করে?আমাকে অপমান করে বিয়ের জন্য রাজি করিয়ে এখন পিছটান দেওয়ার?
আর কিসের ড্রাইভার বলে অপমান করছেন?”

ড্রাইভার বলে, “আমি মানুষ না?আমাকে পশু মনে হয় সবার।এখানে কেউ যদি আর একটা কথা বলেন তাহলে তার লাশ এখানে এখুনি পড়বে।আজ তো বিয়ে হবেই। ছোট বোনের সাথে না হোক বড় বোনের সাথে হবে।
বলে অর্ণার হাত ধরে নিয়ে চলে যায়।”

মামী মা বলে,”ঠিক আছে আমার মেয়েকে থাপ্পড় দেওয়া এবার দেখ কেমন মজা।”

অর্ণা মুখে নেকাব বাধাই ছিলো তখনো।
সে বার বার বলে,”দেখুন ও ছোট মানুষ ভুল করেছে।
তার জন্য আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারেন না।
ক্ষমা করা মহৎ গুন।”

ড্রাইভার বলে,”আমার মহৎ ব্যক্তি হবার শখ নাই।
বিয়ে যখন করবো বলেছি আজকেই করবো আর আপনাকে করবো।এই বাড়ির মেয়ে তো।”

মামু জান বিয়েটা আটকাতে যায়।কিন্তু সবাই বলে,”আরে তোমার ঘাড় থেকে ফ্রি তে আপদ বিদায় হচ্ছে।তুমি কেনো এই বিয়েতে অমত করছো।”

আয়না বেগম তার স্বামী কে বলে,”সে যদি অর্ণার বিয়েটা আটকাতে চেষ্টা করে তাহলে অর্ণাকে সে বিষ খাওয়াই মেরে দিবে নয়তো।নিজে দুই মেয়েকে সহ বিষ খেয়ে মরে যাবে।”

বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে শাহেদ মিয়াঁ আর কিছুই বলে না।নিজের সামনে অনাথ মেয়েটার সাথে হওয়া অন্যায় দেখতে থাকে।

অর্ণা তাকে অনেক রিকুয়েস্ট করে কিন্তু সে কোনো কিছুতে রাজি হয় না।এখান অর্ণার জীবনের গল্পটা বদলে যাওয়াতে কিছু মানুষ মনে শান্তিপায়।
তারা অর্ণার কষ্টে আনন্দিত হয়।
এরপর বাকিটা সবার জানা!!

এরপর হঠাৎ করে জোড়ে গাড়ির ব্রেক হওয়া জন্য অর্ণা অতীত থেকে বেড়িয়ে আসে।অর্ণা ভাবে এরপর লোকটা জোড় করে আমাকে বিয়ে করে তার সাথে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। অর্ণা বাহিরে তাকিয়ে দেখে চারিধার অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। রাস্তার ধারে গাড়িটা হঠাৎ করে থেমে আছে।তার বর গাড়ির ভেতর থেকে নেমে বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অর্ণা অনেক সময় গাড়িতে বসে থাকে।কিন্তু তার ফিরে আসার আর কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছিল না।তাই সেও গাড়ি থেকে নেমে বরের কাছে যায়।
এরপর রাতের অন্ধকার কেটে নতুন সকালের আলো ফুটে ওঠে।অন্য কোনো গল্পের জন্য।

(যারা বলছিলেন অতীত শেষ হচ্ছে না।তাদের বলছি আজ অতীত শেষ।সামনের পর্বে গল্পে কাহিনী বদলে যাবে।)
.
.#ঝরা_পাতা🍂🍂
#Nishi_khatun
#পর্ব_০৬

ভার্সিটির গেটের সামনে হাটু গেড়ে একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে বসে আছে রোহান রায়হান।
উদ্দেশ্য আজ কোনো যে মেয়ে আসবে তাকে সে আই লাভ ইউ বলবেই।

এমন সময় একটা ভদ্র মার্জিত পোশাক পরিহিত মেয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

মেয়েটা নিজের সামনে এমন ভাবে কাউকে বসে থাকতে দেখে একটু লজ্জা পেয়ে ফুলটা গ্রহণ করতে হাত বারাতেই কেউ একজন এসে রোহানের হাত থেকে ছোঁ দিয়ে ফুলটা নিয়ে নেয়।

কাবাবের মাঝে হাড্ডি কে হলো তা দেখতে তারার দু জন সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আরেকটা মেয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

রোহান উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটার হাত থেকে ফুলটা এক টান দিয়ে কেড়ে নিয়ে বলে,”এই মেয়ে তোমার তো সাহস কম না!তুমি আমার হাত থেকে ফুলটা কেড়ে নিচ্ছ? ”

রাগি মেয়েটা রোহানের সামনে চেঁচিয়ে বলে,”এটা ভার্সিটি! এখানে সবাই লেখাপড়া করতে আসে!
এমন রাস্তার মাঝে প্রেম পিরিতি করার কি দরকার? ”

রোহান বলে,”এটা যে ভার্সিটি তা আমিও জানি।আমার যা ইচ্ছা তাই করবো তাতে তোমার সমস্যা কোথায় বেদ্দপ মেয়ে।”

এবার রাগি মেয়েটা রোহানের শার্টের কলার ধরে বলে,”how dare you? তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে বেদ্দপ মেয়ে বলার?এই অরিন খান কে কি তোমার রাস্তার মেয়ে মনে হয়?”

রোহান অরিনের হাত থেকে নিজের শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”এই মেয়ে বুঝি না তোমার সমস্যা কী!আজ দুই তিন বছর আমার পেছনে জোঁকের মতো লেগে আছো কেনো?”

অরিন হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলে,”oh,hello mister আমি আপনার পেছনে কবে থেকে জোঁকের মতো লেগে আছি। নিজের ভুল ধারণা গুলো বদলে ফেলুন।”

রোহান বলে,”কিসের ভুল ধারণা হ্যাঁ?সব সময় আমার পথে কাটার মতো ঘাড়ে এসে পড়ো।এই তোমার জন্য আমি মেয়েটাকে ঠিক মতো প্রপোজ করতে পারলাম না।”

অরিন বলে,”বড়দের দেখানো পথে আমরা ছোটরা হাটবো!আপনারা যদি এই সব প্রেম পিরিতি শেখান তাহলে সমাজ তো রসাতলে যাবে।”

রোহান বলে,”এই মেয়ে ভার্সিটি তে পড়তে আসছো পড়ো! আমার বেপারে নাক গলাতে আসবে না।”

অরিন এবার রোহান কে কিছু না বলে সামনে থাকা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ঐ মাইয়া ভার্সিটি তে নতুন আমদানি মনে হচ্ছে। তা আসতে না আসতেই এমন সুন্দর পোলার প্রপোজাল দেখে গলে যাওয়ার কি আছে?”

মেয়েটা বলে,”Excuse me!নিজের ভাষা সংযোত রেখে কথা বলতে শেখো।আমি কি করবো না করবো তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না বুঝলে অসভ্য মেয়ে।বড়দের সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তা বুঝি বাড়ির মানুষেরা শিক্ষা দেয়নি? ”

অরিন বলে,”একদম আমার পরিবারের মানুষ কে টেনে কথা বলবেন না।নয়তো একদম আলুরদোম বানিয়ে ছাড়বো।”

মেয়টা বলে,”আমাকে দেখে কি তোমার অসহায় মেয়ে বলে মনে হচ্ছে?তুমি হতে পারো বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া মেয়ে।আমি বড়লোক বাড়ির মেয়ে না।যথেষ্ট সুশিক্ষা নিয়ে আমি বড় হয়েছি।”

অরিন বলে,”দেখতেই তো পারছি কতোটা সুশিক্ষায় শিক্ষিত।একটা অপরিচিত ছেলের কাছ থেকে গোলাপ নিতে হাত বাড়িয়ে দিতে তো লজ্জা করছিল না।”

তুমি অনেক সময় ধরে অযথা বক বক করছো মেয়ে।আর একটাও যদি বাড়তি কথা বলেছো তোমার ফ্যামিলির কাছে বিচার দিতে বাধ্য হবো।

রোহান মাঝে এসে বলে,”ভাইয়ের আদুরী বোন।বাড়িতে বিচার দিতে গেলে উল্টা আপনার বিচার করতে বসবে ওর ভাই।”

অরিন বলে,”রোহাইইইইন আর একটা কথায় যদি বলছেন আমার ভাইকে নিয়ে তাহলে গোবরের পুকুরে চুবিয়ে আনবো।”

রোহান একটু চিন্তার ভঙ্গীতে বলে,”তুমি ঢাকা শহরে গবরের পুকুর কোথায় পাবে?”

অরিন :-আমার ভাইকে বলে তৈরি করাবো শুধু মাএ আপনাকে চোবাতে।

রোহান অরিনের সামনে একটু ঝুকে বলে,”আমি স্পেশাল কেউ না কি? যে আমার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করবে?”

অরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর কলিজার টুকরো বান্ধবী পিংকী এসে বলে,”ওরে আমার মা!তুই এইবার চুপ যা।আর কতো পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবি?”

অরিন রাগী দৃষ্টিতে বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,”ওই কুত্তী তুই আমার বান্ধবী না ঐ পোলার প্রেমিকা?”

পিংকী বলে,”এমন ভাবে কেউ তার বান্ধবী কে বলতে পারে?ছিঃ ছিঃ!”

অরিন -বান্ধবী না ছাই!শত্রুর থেকেও বেশি খারাপ! ওদের সামনে আমাকে অপমান করছিস কেনো ডায়নি বুড়ি।

মেয়েটা মাঝে বলে ওঠে, “বাহ তোমার মুখের ভাষা তো অনেক সুন্দর! ”

অরিন -এই মেয়ে তোমাকে তো আমি…

মেয়েটা রোহানের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে ওঠে,”ওহে মিস্টার আমি তারিফা ইসলাম, একাউন্টিং এ মাস্টার্স এর স্টুডেন্ট। ”

রোহান তাড়াতাড়ি হাতে হাত মিলিয়ে বলে,” আমি রোহান রায়হান, আমিও একাউন্টিং এ মাস্টার্স করছি।যাক পরিচিত হয়ে খুশি লাগলো।”

ওদের দু জনের এমন কাহিনী দেখে অরিনের কলিজায় আগুন লেগে গেছে।সে পারলে এখুনি রোহানের হাত ভালো করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।

এদিকে রোহানের দিকে তাকিয়ে তারিফা একগাল হেসে ধন্যবাদ বলে।

রোহান লাজুক ভাব নিয়ে মাথা নিচু করে বলে,”তা ঐ
গোলাপ ফুলের বেপারটার কিছু ভাবলে?”

আসলে হয়েছে কি তাই বলে তারিফা রোহানের হাত থেকে গোলাপ ফুলটা নিয়ে বলে,”ভার্সিটির প্রথম দিন এমন গোলাপ ফুল পাওয়া ভাগ্যের বেপার।তবে আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে আমি আপনার প্রস্তাবে রাজী না।তবুও আপনাকে সবার সামনে অপমান করবো না তাই গোলাপ ফুলটা নিতে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।”

রোহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আজ পাঁচ টা বছর এই ভার্সিটিতে পড়ছি কোনো মেয়ে আমার জিএফ হতে রাজী হয় না।আল্লাহ জানে আমি এতো সুন্দর এতো কিউট,স্মার্ট হওয়ার পর ও কেনো কোনো মেয়ে প্রেম করতে চাই না।

তারিফা বলে,”একদম আফসোস করবেন না।চেষ্টা করে দেখেন কেউ না কেউ ঠিকি পটে যাবে।একদম হাল ছাড়বেন না।”

রোহান তারিফার কথা শুনে বলে,”তার মানে you are me,something something তাই না।”

তারিফা বলে,”মোটেই না!”

তারিফা অরিনের সামনে এসে বলে,”এই মেয়েটা মনে হয় আপনাকে পছন্দ করে।এই গোলাপটা দিয়ে তাকে প্রপোজ করে দেখতে পারেন।”

রোহান বলে,”এই জীবনে একলা থাকলেও তো ভাইয়ের আদুরী ডায়নির সাথে রিলেশনশিপ করতে যাবো না।”

অরিন বলে,”আমাকে পাগলা কুত্তায় কামড়াই নাই যে তোর মতো বান্দরের লগে প্রেম করতে যাবো।উগান্ডার ভাল্লুক কোনেকার হুহ।”

অরিন পিংকীর হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে রোহান তারিফা কে সাথে করে পুরো ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাতে থাকে।তারিফা আর রোহান একসাথে ক্লাসে যায়।ক্লাসের বেশ কিছু ছেলে মেয়ের সাথে তারিফার ভাব হয়ে যায় মানে বন্ধুত্ব্ব হয় আরকি।

এদিকে পিংকী অরিন কে বলে,”আচ্ছা অরিন সত্যি করে একটা কথা বলতো তুই কি ঐ রোহান কে পছন্দ করিশ!মানে ওরে ভালোবাসিস না কি?”

অরিন বলে,”তোরে তেলাপোকায় কামড়াইছে না কি? এমন গাঁজাখুরি প্রশ্ন করছিস কেনো?”

পিংকী বলে,”তাহলে তোর এতো চুলকাই কেনো রোহানের আগে পিছে কোনো মেয়ে ঘুরঘুর করলে?”

অরিন বলে,”ঐ সাদা বানরের পিছনে কোনো মেয়ে ঘুরঘুর করলেও আমার সমস্যা নাই।কিন্তু ওরে কোনো মাইয়ার সাথে দেখলে মেজাজ বিগড়ে যায়।”

পিংকী বলে,”হুম বুঝতে পারলাম! তুই যে ঐ সাদা ভাল্লুকের কাছে মন হারিয়ে ফেলেছিস তা বুঝতেই পারছি।”

অরিন পিংকী কে পিটাতে উঠে!পিংকী ভৌ-দৌড় দেয় মাঠের দিকে।

অরিন অনেক সময় দৌড়ানি দিয়ে পিংকীকে ধরে আচ্ছা মতো কিল দেয়।তারপর ওর ঘাড় ধরে কেন্টিনের দিকে যাচ্ছিল!

হঠাৎ অরিন দেখে রোহান আর তারিফার সাথে কেন্টিনের বসে হেসে হেসে কথা বলছে।

ওদের এমন হাসাহাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছিল অরিনের। অরিন আর ওখানে না দাঁড়িয়ে সোজা পিংকীর হাত ধরে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।




চলবে…..
.
.
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here