ঝরা ফুলের বাসর পর্ব ৭+৮+৯

পাট ৭-৯
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৭
#Mst_Liza

হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে, সিনেমা দেখে রাতে বাড়িতে ফিরে এলাম।সারাদিনে অনেক মজা করলাম।তাই বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে হাতের ইঁদুর মারা ওষুধটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পরলাম।

হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই শোয়া ছেড়ে লাফিয়ে উঠে পরি।আর নিজের কপাল চাপড়াতে থাকি। হায়! হায়! হৃদতো ওয়াশরুমের ভেতরে ছিলো।তখন দরজাটা লক করলাম আর তো খোলা হলো না।

আমি ছুটে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দিয়।দেখি ওয়াশরুমের ভেতরে এক কোণায় দেয়ালের সাথে চিপকে গুটিশুটি খেয়ে পরে আছে হৃদ।আর কাঁপছে।আমি হৃদের কাছে গিয়ে ওকে ছুঁয়ে দেখি ওর শরীরটা পুরো ভেজা।হয়তো সকালে আমাকে গোসল করানোর সময় ও ভিজে গিয়েছিলো।

হৃদ! এই হৃদ! শুনতে পারছেন আমার কথা?

হৃদ কোনো কথা বলে না।শীতে কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।আমি ওর কপালে হাত রেখে দেখি জ্বরে গা’টা পুরে যাচ্ছে। আমি ওর হাতটা আমার কাঁধে প্যাচিয়ে ওকে ধরে উঠিয়ে আমার রুমে নিয়ে আসি।

ওকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিয়ে পড়নের ভেজা প্যান্টটা খুলে দিয়।তারপর ওর ভেজা শরীর মুছিয়ে দিয়ে কম্বলটা টেনে দিয়ে নিচু হয়ে ওর কানের কাছে নিজের মুখটা এগিয়ে এনে বলি, আপনি এখানে শুয়ে থাকুন।আমি আপনার রুম থেকে আপনার কাপড় আর শীতে জ্যাকেট নিয়ে আসি।কথাটা বলে আমি যেতে লাগলে হৃদ আমার হাতটা পেছনের থেকে টেনে ধরে।আর শীতে কাঁপতে কাঁপতে আস্তে করে বলে, কোথাও যাস না ফুল।আমার কাছে থাক।

আমি কি করবো বুঝতে পারি না।পাশের টেবিলে গ্লাস ভর্তি পানি দেখে ওরনাটা গ্লাসে ডুবিয়ে ওর কপালে ছুঁইয়ে দিয়।অনেকক্ষণ ধরে ভেজা ওরনা ছুঁইয়ে দিতে থাকি ওর কপালে।কিন্তু ওর কাঁপুনি আরও বেড়েছে।

এখনো শীত করছে হৃদ? আমি কি গিয়ে আপনার রুম থেকে আরেকটা কম্বল নিয়ে আসবো?

হৃদ এখনো কাঁপছে। আমি উঠতে গেলে আবার আমার হাতটা টেনে ধরে বলে, কোথাও যাস না ফুল আমাকে ছেড়ে।

আচ্ছা ছাড়ুন আমি কোথাও যাচ্ছি না।আমাকে শুতে দিন।

ওর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে পাশের বালিশে গিয়ে শুয়ে পরি।তাকিয়ে দেখি হৃদের কাঁপুনি এখনো থামে নি।

আমি কম্বলটার ভেতরে ঢুকে যায়। আর হৃদকে বলি, কাছে আসুন।ওকে আমার কাছে টেনে নিয়ে আসি।তারপর খুব জোড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।আর বলি, এখনো কি খুব শীত করছে?

হুমমমম বলে হৃদ আমাকে ঘুরিয়ে ওর শরীরের উপরে নিয়ে নেয়।

আমার শরীরের সবটুকু ভার ওর উপর।ও আমার পিটটা খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আর আমিও ওর বুকে শক্ত করে মুখ গুজে ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছি যেন ওর শীত না করে।আর এভাবেই রাতে ঘুমিয়ে পরি।

সকালে,,,
ঘুম ভাঙতেই আমি খেয়াল করি এখনো হৃদের বুকের উপরে শুয়ে আছি।উঠতে গেলেও পারছি না। হৃদ আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। মুখটা তুলে সামনে চেয়ে দেখি হৃদের চোখদুটো খোলা।

একি আপনি জেগে আছেন? কপালে হাত দিয়ে দেখি হৃদের শরীরে জ্বরটা আর নেই।

এবার আমি নিজেকে হৃদের থেকে ছাড়ানোর চেস্টা করি।

ছাড়ুন! ছাড়ুন আমাকে।

আর হৃদ আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে।

উফফ! এতো নরাচরা করিস না তো।শান্তিতে ঘুমা।

আমি উঠবো ছাড়ুন! উঠতে দিন আমাকে।

এতো সকালে উঠে কোথায় যাবি? বাবা-মা কেউ বোধহয় এখনও উঠেনি।তার চেয়ে বরং আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাক।

নাহ।আমাকে যেতে হবে ছাড়ুন।আপনার রুম থেকে কাপড় আনতে হবে।

হৃদকে জোড় করে ধাক্কা দিয়ে উঠে আসি আমি।তারপর হৃদের রুম থেকে কাপড় নিয়ে এসে হৃদকে শোয়া থেকে টেনে উঠিয়ে বসায়। হৃদের হাতে কাপড় দিয়ে বলি, এগুলো পরে নিন।

হৃদ হেসে উঠে আমার হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে পরতে পরতে বলে, আজ তোকে একদম আমার বউ বউ লাগছে ফুল।

মা..মানে? আমি কারও বউ টোও নই।আপনার সাথে আমি ভালোভাবে কথা বলছি বলে ভাববেন না যে আপনাকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।

কথাটা শুনে হৃদ আমার দিকে আড় চোখে তাকায়। কিছু না বলে চুপচাপ কাপড় পরতে থাকে।তারপর কাপড় পরা হয়ে গেলে আমার সামনে এসে দাড়ায়। আর আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, তুই আসলেই একটা জিনিস।

জিনিস মানে কি? ছাড়ুন! কি বলতে চান আপনি?

কি বলছি বুঝতে পারছিস না? ভেজা শরীরে তোকে দেখলে আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।আর কাল রাতে তোর কি হয়েছিলো হুমমম? মানলাম আমার জ্বর হয়েছে তাই বলে ভেজা প্যান্ট খুলে দিয়েছিস তারপর আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে শোবার কি ছিলো?

আমি ভাবলাম আপনার শীত করছে তাই।

হৃদ একটা মুচকি হাসি দেয়, শীত করছে তাই? আচ্ছা এমন একটা মানুষের বুকে নিজেকে জড়িয়ে ঘুমোলি কেন যাকে তুই ঘৃণা করিস?

হৃদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিই না আমি।কি বলবো সেটা ভাবতে থাকি এরই মধ্যে খপ করে হৃদ আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া বসিয়ে দেয়।আর চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে।আমি ওকে ধাক্কা দিতে যাবো ভেবেও পারি না।ওর এই অনুভুতির শিক্ত প্রশান্তির কাছে আমি হেরে যায়। নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নিই।আর ওর ঠোঁটের আলতো পরসে ডুবে যায় আমিও।

কিছুক্ষণ পর খালাম্মার কন্ঠে ধ্যান ফেরে আমার।দরজার কাছে এসে খালাম্মা আমাকে ডাকতে থাকে।

ফুল মা সকাল হয়ে গেছে, উঠেছিস?

খালাম্মার ডাকে শুনে আমি নিজের ঠোঁট দুটো শক্ত করে নিয়।আর হৃদ থেমে যায়। আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকায়।

কি হলো ফুল? থেমে গেলি কেন? এখন ভালো লাগছে না তোর?

খালাম্মা হৃদের কন্ঠ শুনে ফেলে আর জোড়ে জোড়ে দরজা ঘা দিতে থাকে।

ফুল দরজা খোল দ্রুত।তোর সাথে কে আছে? হৃদ কি তোর রুমে?

খালাম্মার চিৎকার শুনে আমি খুব ভয় পেয়ে যায়। আর শক্ত করে হৃদকে জড়িয়ে ধরি। তারপর কান্না জড়িত কন্ঠে বলি, কথা কেন বললেন আপনি? এখন খালাম্মা এসে আপনাকে এখানে দেখলে আবার কালকের মতোন মারবে।

হৃদ খুব খুশি হয় আমাকে এভাবে ওর জন্য ভাবতে দেখে।হৃদ আমায় ছাড়িয়ে নিজের সামনে এনে মুখটা ধরে বলে, তুই আমায় ভালোবেসে ফেলেছিস ফুল?

জানি না।প্লিজ আপনি কোথাও লুকিয়ে যান।

হৃদ মুচকি হেসে বলে, নাহ! আজ আমি জিতে গেছি।বাবা-মা যদি আমাকে ক্ষমা নাও করে আমি তোকে নিয়ে এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো তবুও আর লুকিয়ে থাকবো না।

কথাটা বলে হৃদ রুমের দরজাটা গিয়ে খুলে দেয় আমি ওকে বাঁধা দেওয়ার সময়টুকুও পাই না।

দরজা খুলতেই খালাম্মা চোখের সামনে হৃদকে দেখে অনেক রেগে যায়। হৃদকে কিছু না বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছে আসে।আর আমার গালে ঠাসসস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

হৃদ মা বলে ছুটে এসে আমাকে খালাম্মা সামনে থেকে টেনে ওর পিছনে নেই।

ওকে কেন মারলে মা? তোমার সব রাগ তো আমার উপর মারতে হয় আমাকে মারো মা।মেরে তোমার সব রাগ ঝেড়ে ফেলো।কথাটা বলে হৃদ খালাম্মাকে ছুতে যাবে খালাম্মা হাত উঁচু করে হৃদকে থামিয়ে দেয়।

একদম ছুবি না আমাকে।আর কি বলছিলি ওকে কেন মেরেছি? ওকে মেরেছি কারণ ও আমার আপন।তুই কে যে তোকে মারবো? হৃদকে কথাটা বলে খালাম্মা ঘুরে আমার কাছে আসে। আর আমাকে টেনে ধরে ঝাকিয়ে বলে, ভুলে গেছিস ফুল ও তোর মায়ের খুনী? কি কি অন্যায় করেছে তোর সাথে? মনে কর ওকে কি ক্ষমা করা যায়।

খালাম্মার কথা হৃদ ধরে না।ও নিশ্চিত হয়ে থাকে।কারণ ও ভালো করে জানে আমি এখন খালাম্মার কোনো কথায় আর গলবো না।কারণ আমার চোখে ও আজ নিজের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে।হৃদ শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললো।

ফুল আমাকে ভালোবাসে মা।ওর মাথায় এখন এসব কথা ঢুকবে না।তোমরা যদি আমার সাথে এমন করো তাহলে ফুলকে নিয়ে আমি এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

হৃদের কথাটা শুনে আমি চোখদুটো বড়বড় করে হৃদের দিকে তাকায় আর নিজের অতীতটা মনে করতে থাকি।মনে মনে ভাবি, খালাম্মা তো ঠিকই বলছে হৃদকে ক্ষমা করা যায় না।আবেগের বসে আমি কেন সব ভুলে যায়?

এমন সময়ে হৃদ এসে আমাকে ধরলে আমার চোখের সামনে নিজের মায়ের মৃত মুখটা ভেসে ওঠে।আর রেগে গিয়ে আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলি, চলে যান এবাড়ি ছেড়ে।

ফুল এখন আবার কি হলো তোর?দেখ একদম মাকে খুশি করার দরকার নেই। তোর মনে যেটা আছে সেটা বল।কথাটা বলে হৃদ আমাকে ছুতে যাবে আর আমি একটা চিৎকার দিয়ে হৃদকে ধমকের স্বরে থামিয়ে দিয়।

শুনতে পান নি আপনি? আমি চলে যেতে বলেছি আপনাকে।একটা দুশ্চরিত্র, নারী দেহ ভোগী আর খুনীকে কখনোই আমি ক্ষমা করবো না।আপনার ভুলের জন্যই আমার মা আমাকে ভুল বুঝেছে, আত্নহত্যা করেছে।যান! চলে যান আমার সামনে থেকে।

হৃদ আবার আমাকে বোঝাতে চায় সে ভুল করেছে কিন্তু আমি এবার ওর কোনো কথাই শুনি না।ওকে অনেক কিছু বলে অপমান করে বলি, এবাড়ি থেকে চলে যেতে।

আমি বুঝতে পারি হৃদের খুব কস্ট হচ্ছে আমার মুখে এসব কথা শুনতে। কিন্তু কি করবো! ওর ভুলের যে কোনো ক্ষমা হয় না।আমি চোখের পানি আটকিয়ে হৃদকে আবার বলি, আপনার ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না।তাই আপনি ক্ষমা পাওয়ার কথা ভাববেনও না।

আমার লাস্ট কথাটা বলতেই হৃদ কষিয়ে আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলে, তোর মা আমার জন্য বিষ খেয়েছিলো তাই না ফুল? হৃদ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে টেবিলের উপরে ইঁদুর মারা ওষুধের শিশিটা দেখতে পাই।হৃদ গিয়ে শিশির মুখটা খোলে।আর আমাকে বলে, এখন আমি মারা গেলে এর জন্য দায়ী হবি তুই, মা আর বাবা সবাই।আমার একটা ভুলের জন্য আজ তোরা আমাকে এতোটা পর করে দিলি? এতোটা কস্ট দিলি? ক্ষমা করা যায় নারে আমাকে।হ্যাঁ, আমি নিজের ভুলের মাষুল দিবো।তোর মায়ের মতোন আত্নহত্যা করে।

তোকে আমি বলেছিলাম ফুল তুই ছাড়া আমি একটা রাতে ঘুমোতে পারি না।এটা তোর দেহ ভোগ করার জন্য নয় তোকে ভালোবাসি তাই তোকে জড়িয়ে ঘুমায়। আর মা কি যেন শিখাচ্ছিলে ফুলকে তুমি? আমি ওর মায়ের খুনী, আমাকে ক্ষমা করা যায় না।আচ্ছা মা আমি তো তোমারই ছেলে ধর এই বিষটা খাওয়ার পর আমি মারা গেলাম তখন কি আমার মৃত্যুর জন্য তোমার নিজেকে একটুও অপরাধী, খুনী মনে হবে না?

আমি খালাম্মা কেউ কোনো কথা বলছি না।শুধু হৃদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছি আর ভাবছি হৃদ তো ঠিকই বলছে।আমি কিছু বলতে যাবো এরই মধ্যে হৃদ ডগমগ করে এক শিশি ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ফেলে।

চলবে,,,,,
#ঝড়া_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৮
#Mst_Liza

আমি নাআআআ বলে একটা চিৎকার দিয়ে ছুটে হৃদের কাছে এলাম।হৃদ নিজের গলাটা চেপে ধরে ওয়াক টানতে থাকলো।খালাম্মা এখনো থ হয়ে আছে।সে বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে তাই ওখানেই দাড়িয়ে আছে।হৃদ ওয়াক টেনে বমি করতে থাকলো।আর আমি চিৎকার দিয়ে খালাম্মা, খালুকে ডেকে চলেছি।খালু নিজের রুম থেকে ছুটে আসে।

কি হলো? কি হলো ফুল? ওভাবে চিৎকার কেন করছিস?

আমি কান্না করতে করতে উত্তর দিলাম হৃদ বিষ খেয়ে নিয়েছে।আমার উপর রাগ করে বিষ খেয়েছে হৃদ।

খালু ছুটে হৃদকে এসে ধরে।ওর অবস্থা দেখে কেঁদে দেয়। আর কাঁদতে কাঁদতে বলে, এটা তুই কি করলি হৃদ?

খালাম্মা নিজেকে সামলে উঠে দাড়ায়। আর হৃদের কাছে এসে কেঁদে উঠে বলে, তোরা এখনো কেন বসে আছিস? ওকে হসপিটালে নিয়ে চল।আমার ছেলেটাকে বাঁচা।

খালু এ্যাম্বুলেন্সে ফোন দিতে যায় খালাম্মা দিতে দেয় না।খালাম্মা বলে, এখন যে অপক্ষা করার সময় নেই।যতো দ্রুত সম্ভব ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।নইলে যদি আমার বোনটার মতো ছেলেটাও….তারপর কান্নায় ভেঙে পরে খালাম্মা।

আমি, খালু ধরে হৃদকে গাড়িতে নিয়ে বসায়।আর খালাম্মা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের পেছনে পেছনে আসে।গাড়িতে উঠে হসপিটালে যাচ্ছি।সারাটা রাস্তা হৃদ বমি করেছে।এখন হৃদ ও.টি তে আছে।খুব টেনশন হচ্ছে আমাদের।আবার কান্নাও আসছে।কান্নার মাঝে মাঝে পেটে হাত রেখে ভাবছি, হৃদের কিছু হয়ে গেলে ওর সন্তানটার কি হবে? নাহ! শুধু ওর সন্তানের জন্য না আমারও যে ওকে খুব প্রয়োজন।আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু ভালোবাসার তো কথা ছিলো না।কেন হৃদ আমাকে এতোটা ভালোবাসলো? ও যদি আমায় ভালো না বাসতো। এতো পাগলামি না করতো তাহলে তো আজ আমিও ওকে ভালোবাসতাম না।

দু’ঘন্টা পর,,, ও.টি থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসে।ডাক্তার বলে অপারেশন সাকসেসফুল বাট প্রেশেন্টের এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।কেবিনে শিফট করা হচ্ছে কেউ প্রেশেন্টের কাছে আপাতত জাবেন না।

হৃদকে কেবিনে শিফট করার পর একজন নার্স হৃদের কাছে সব সময় আছে।হৃদের সেবা করছে আর আমাদেরকে হৃদের থেকে দূরে রাখছে।

ডাক্তারের সাথে কথা বলেও কাজ হয় নি।ডাক্তার, নার্স কেউ আমাদেরকে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না।আমরা অনেক চেস্টা করি কিন্তু হৃদ চাই না আমাদের সাথে দেখা করতে।

আজ তিনদিন হতে চললো হৃদের সাথে একটু দেখাও হলো না।ওর কেবিনের সামনে বসে তিনটা দিন শুধুই অপেক্ষা করেছি।

প্রতিবারের মতোন খালু এবারও খাবার কিনে এনেছে আমাদের জন্য।

না খালু আজ আমার গলা থেকে খাবার নামবে না।হৃদকে না দেখলে।

পাগলামি করিস না মা বাচ্চাটার জন্য তোকে খেতে হবে।

আমি ভেবে দেখি, এটা যে হৃদের সন্তান।এর অযত্ন করা চলবে না।তাই না চাইতেও আমাকে খেতে হলো।

খাওয়ার শেষে চোখ তুলে দেখি সামনে হৃদ দাড়ানো।আমি খুব অপলক দৃষ্টিতে হৃদকে দেখে যায়।তারপর এক দু’পা করে ওর কাছে আগায়। ওর সামনে গিয়ে দাড়ানোর পর আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার পাশ কেটে হৃদ চলে যেতে লাগে।আমি হৃদের পেছনে পেছনে যায় আর হৃদকে ডাকি।হৃদ ঘুরে তাকায় তারপর আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই ও আমার গালে ঠাসসসস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।

সঙ্গে সঙ্গে আমি হৃদের পা জড়িয়ে ধরি আর ওর কাছে ক্ষমা চায়। ওকে বলি, আমি ভুল করেছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।হৃদ আমার কোনো কথার গুরুত্ব দেয় না।আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যায়।

খালাম্মা এতোক্ষণ ঘুম ছিলো।হৃদের কেবিনের সামনের বেঞ্চটাতে ঘুমিয়ে ছিলো।ঘুম ভাঙতে খালাম্মা আমাকে নিচে বসে কাঁদতে দেখে ছুটে আসে।আর বলে, কি হয়েছে ফুল এরকম করছিস কেন?

চলে গেছে হৃদ।ও হয়তো আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।আমার সাথে কথাও বলবে না।

কথাটা শুনে খালাম্মাও ভেঙে পরে।অনেকক্ষণ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। তারপর খালু এসে আমাদের উঠিয়ে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।

বাড়ি ফিরে এসে দেখি দরজাটা খোলা।ভেতরে গিয়েই আমরা সবাই অবাক হই।

হৃদ সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে টিভি দেখছে।ওকে বাড়িতে দেখে আমরা খুশি হই।খালাম্মা এগিয়ে গিয়ে হৃদকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুই এসেছিস বাবা? জানতাম আমাদের উপরে রাগ করে থাকতে পারবি না।

হৃদ খালাম্মাকে আচমকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় আর বলে, তোমাদেরকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।যতোটা কস্ট আমাকে দিয়েছো তার কোনো ক্ষমা নেয়।আর আজ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে তো তোমরা খুব খুশি হতে তাই না?

খালাম্মা এগিয়ে হৃদের মুখটা ধরে বলে, কিসব বলছিস তুই হৃদ?

চুপ করো।তোমার মুখে আর আমার নাম নিও না।ভেবেছিলাম আর এবাড়িতে, তোমাদের কাছে আসবো না।কিন্তু না আসতে হলো।যদিও তোমরা আমার পর হয়ে গেছো কিন্তু আমার সন্তানটাতো আছে।ওর তো কোনো দোষ না।তাই ওর জন্যই চলে এলাম।কথাটা বলে হুর মুর করে হৃদ আমার হাতটা ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসে।

রুমের দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে।

কি ভাবছো?

কিছু না।ওওও হ্যাঁ মনে পরেছে।তুই আমাকে তুমি করে বলার সাহশ কোথায় পেলি? তোকে সেই অধিকার কে দিয়েছে?

এটা কেমন কথা? ছোটবেলায় তোমাকে তো আমি তুমি করেই বলতাম।

আবার তুমি বলছিস? তুই কি বুঝিস না? ছোটবেলা আর এখনের মধ্যে কতো পরিবর্তন হয়েছে? যাই হোক বার বছর আগের মতোই তুই বলদা বয়ে গেছিস।

বলদা মানে? যান ভুল হয়েছে আমার।আমি আর কখনো আপনাকে তুমি বলবো না।

আবার? যা মন চাই তাই বলে ডাকবি? কেন? নিজেকে কি মনে করিস? আমার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিস না?

আমি চুপ করে আছি।আমার উত্তর না পেয়ে হৃদ ঘুরে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে জগটা উঠিয়ে জোড়ে ফ্লোরে ছুরে মারে আর ভেঙে গুরোগুরো হয়ে নিচে কাচের টুকরোগুলো ছড়িয়ে থাকে। হৃদ আমাকে এসে বলে, এগুলো পরিষ্কার কর।

আমি হৃদের মুখের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকি।হৃদ এমন কেন করছে?

শুনতে পাস নি আমি কি বলেছি? কাচের টুকরোগুলো হাত দিয়ে উঠিয়ে পরিষ্কার কর। কথাটা হৃদ চিৎকার দিয়ে বলে।হৃদের চিৎকারে আমি কেঁপে উঠি আর ভয়ে ভয়ে নিচে পরিষ্কার করি।তারপর হৃদের সামনে এসে দাড়িয়ে বলি, হয়ে গেছে।

চলবে,,,,
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৯
#Mst_Liza

হৃদ আমার দিকে এক অপলক দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকে, কিচ্ছু বলে না।আমি ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের চোখদুটো নিচে নামিয়ে নিই।আর হৃদ আমার মুখটা ধরে উঁচু করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, অনেক কস্ট দিয়েছিস আমাকে। আমার ভালোবাসাটাকে বুঝিস নি তুই।আজ যদি আমি মারা যেতাম তুই তো ঠিকই অন্য কাউকে নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতি ফুল।

হৃদ আমি তোমার কাছে ক্ষমা…

হৃদ জোড়ে একটা ধমক দেয় আমাকে। ক্ষমা? তোকে ক্ষমা করা যায় ফুল? কি দিয়েছিস তুই আমাকে? দিনের পর দিন চোখের সামনে আমার সন্তানকে তুই অবৈধ বলে চালিয়েছিস।মা যখন তোকে নস্টা বলতো।আমাদের সন্তানকে অবৈধ বলে গালাগাল করতো তখন আমার যে খুব কস্ট হতো।তোকে বলতাম আমি সবাইকে সবটা খুলে বলি।তুই আমার কোনো কথা শুনতি না।ঘৃণা করতি আমাকে তাই না? আজ যদি আমি বিষ খেয়ে আমার ভালোবাসাটাকে প্রমাণ না করতাম তাহলে তুই আজও আমাকে একইভাবে ঘৃণা করতি।আজ তো আমি মারাও যেতে পারতাম ফুল।তুইতো একবারও আমাকে বাঁধা দিলি না।মানছি একটা ভুল করে ফেলেছি আমি।কারণ ছোট বেলা থেকে তোকে খুব ভালোবাসি।বিদেশে গিয়েও সারাটাক্ষন তোর কথা ভেবেছি।আমার মনের রং তুলিতে তোর ছবি এঁকেছি।জানতাম না তুই দেখতে কেমন হয়েছিস কিন্তু কল্পনায় তোকে নিয়ে ভাবতাম।সেদিন মাঝরাতে যখন তোকে ওই অবস্থায় দেখি তখন আমি নিজের হুস জ্ঞান সব হারিয়ে ফেলে।শুধু ভাবি তুই আমার আর তাই তোকে নিজের করে নিই।সকালে তোকে অনেক খুঁজেছি।তুই সামনে এলে চেস্টা করেছি তোকে আমার ভালোবাসাটা বোঝানোর কিন্তু তুই বুঝতে চাস নি।নানান ভাবে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস।তাই রাগ করে আমি আবার তোকে…

আমি হৃদের মুখটা চেপে ধরলাম।

এসব কথা এখন কেন বলছো হৃদ? আমি বিশ্বাস করি তুমি আমাকে ভালোবাসো।তোমার আর কোনো প্রমাণ দেওয়া লাগবে না।

হৃদ নিজের মুখ থেকে আমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে আমাকে খুব জোড়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।

আমাকে কি তোর এখনো বোকা মনে হয়? তুই কি ভাবিস? আমি তোর কাছে এখনো ভালোবাসার কাঙাল? নাহ ফুল নাহ! ভুল ভাবছিস তুই।অনেক কস্ট দিয়েছিস আমায়।অনেক পরীক্ষা নিয়েছিস আমার।কিন্তু আর না।তুই, বাবা-মা সবাই আমাকে এতোটা কস্ট দিয়েছিস।যা আমি কখনো ভুলতে পারবো না।আমার তখন আরও বেশি কস্ট লেগেছে যখন আমাকে মাও আটকায় নি বিষ খাওয়ার থেকে।উল্টো তোকে আমার প্রতি কানপরা দিয়েছে।

তুমি ভুল ভাবছো হৃদ।আমার কথাটা একটু বোঝার চেস্টা করো।

হৃদ আমায় আরো জোড়ে একটা ধমক দেয়।

চুপপপ! একটাও কথা শুনতে চাই না আমি।কেউ নেই আমার। আমি এখানে এসেছি শুধু আমার সন্তানের জন্য।ও ভূমিষ্ট হলেই আমি ওকে নিয়ে চলে যাবো।তোরা কেউ আমার কিচ্ছু না।

কথাটা বলে হৃদ দরজাটা খুলে হুরমুর করে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।

এখন আমি কিভাবে হৃদকে বোঝাবো যে আমিও ওকে ভালোবাসি? এটা কি ওর একার সন্তান? আমারও সন্তান।হৃদকে ছাড়া আমার সন্তানকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? কথাগুলো ভাবতেই আমার চোখের কোণে দু’ফোঁটা অশ্রু জমা হলো।
.
.
.
.
.
.
.
🌼
.
.
.
.
.
.
.
.
সেই যে বেড়িয়েছে হৃদ।সন্ধ্যা হতে চললো এখনো বাসায় ফেরে নি।খালাম্মা আমার চুল আঁচড়ে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছিলো।এমন সময়ে হৃদের আগমন ঘটে।তবে ও একা আসে নি।সঙ্গে করে পনেরো বিশ জন ফ্রেন্ডকে নিয়ে এসেছে।ওরা এসেই জোড়ে মিউজিক চালিয়ে ড্যান্স করতে শুরু করে।আর আমাদের চারপাশে ঘেঁষে ঘেঁষে চলে।

বাড়িতে এতো জোড়ে মিউজিক খালাম্মা সইতে পারে না।তাই রেগে গিয়ে মিউজিকটা বন্ধ করে দেয় আর বলে, কি হচ্ছে এসব?

হৃদ এসে খালাম্মার কোনো কথার তোআক্কা না করে আবার মিউজিক অন করে আর ড্যান্স করতে থাকে।অন্যদেরও ইশারা করে তোমরাও ড্যান্স কর।হৃদের ইশারা পেয়ে তারাও পুনরায় ড্যান্স করতে শুরু করে।খালাম্মা চিৎকার করে হৃদকে থামতে বলে।কিন্তু হৃদ কোনো কথায় গায়ে লাগায় না।খালাম্মা হৃদকে নিশেধ করতে করতে হাঁপিয়ে যায়।তারপর না পেরে আমাকে ধরে উঠায় আর বলে রুমে যেতে।

আমি চলে আসতে লাগি হৃদ আমার হাতটা ধরে বসে আর আমাকে ঘুরিয়ে টেনে টেনে ড্যান্স করায়।হৃদের টানাটানির কারণে আমি পা পিছলে পরে যেতে লাগি আর হৃদ আমাকে ধরে বসে।তখন একজন মিউজিকটা অফ করে দেয় আর হৃদ আমাকে ছেড়ে দেয়।আমি পরে যেতে লাগলে খালাম্মা আমাকে ধরে বসে।

খালম্মা হৃদের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, তোর মাথার ঠিক আছে হৃদ? ফুল প্রেগনেন্ট পরে গিয়ে ওর যদি একটা অঘটন ঘটে যেতো?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here