ঝরা ফুলের বাসর ১০+১১+১২+শেষ পর্ব

পাট ১০-১২
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ১০
#Mst_Liza

হৃদ খালাম্মার কথার কোনো তোয়াক্কা করে না।মিউজিকটা চালিয়ে ফ্রেন্ডদের নিয়ে দাপিয়ে ঝাকিয়ে আবার ড্যান্স করতে থাকে।খালাম্মা না পেরে রেগে মেগে আমাকে নিয়ে রুমে চলে আসে।আর ওদিকে হৃদ পার্টি করে।পেটি থেকে মদের বোতল বের করে গ্লাসে ঢেলে চুমুক দিতে দিতে ড্যান্স করে।অবশেষে ওদের পার্টি শেষ হয় রাত ১টার দিকে।হৃদ এখন আমার রুমের সামনে এসে দরজায় নক করছে।আমি খুলছি না।অভিমান করে বসে আছি।

ফুল দরজাটা খোল খুব ঘুম পেয়েছে।

ঘুম পেয়েছে নিজের রুমে যান! আমার কাছে কেন এসেছেন?

দরজা খোল তাই বলছি।

আমি বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।

বলুন কি বলতে চান? তারপর আমার রুম থেকে বিদায় হোন!

মদের নেশায় হৃদ ঢুলে ঢুলে কথা বলছে।আমার কাছে এগিয়ে এসে আমাকে ঘুরিয়ে হুট করেই আমার চুলের ভাজে নিজের হাতটা ডুবিয়ে দেয়।তারপর আমার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এসে হৃদ আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে বসে।

খুব ভাব বেড়েছে তোর তাই না রে? তোর জন্য বিষ খেয়েছি, তোকে ভালোবেসেছি আরও যতো অপমান আর কস্ট আছে সব সহেছি।এজন্য তুই নিজের মধ্যে খুব গর্ব নিয়ে চলিস তাই না?

হৃদের কথা শুনে মুহূর্তেই আমার চোখের কোনো অশ্রু জমা হলো।হৃদ কি তাহলে এখনো আমাকে কথা শুনাতে এসেছে? কস্ট দিতে এসেছে?

হৃদ..তুমি এখনো এসব বলছো?

হৃদ আমার চুল ছেড়ে দিয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়।

চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা লাগছে।যা আমার জন্য লেবুর সরবত তৈরি করে নিয়ে আয়!

আমি এখনো হৃদের মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।তাই দেখে হৃদ আমায় জোড়ে একটা ধমক দেয়।

তোকে বলেছি না যেতে?

আমি চোখের পানি মুছে নিয়ে ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখি হৃদ নেই। হৃদ তাহলে গেলো কোথায়?

আমি সরবতটা নিয়ে আমার রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাকিয়ে দেখি হৃদের রুমে আলো জ্বলছে।এগিয়ে গিয়ে দেখি হৃদ ওর বিছানার উপরে বসে আছে।আমাকে দেখে ইশারায় সরবতটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। আমি এগিয়ে গিয়ে হৃদকে সরবতটা দিই।আর হৃদ ডগমগ করে পুরো সরবতটা খেয়ে নেয়। তারপর বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায়।

এবার দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।

মানে?

আমি ঘুমোবো তুই তোর রুমে যা।

আমি এখনো দাড়িয়ে আছি দেখে হৃদ জোড়ে আমাকে একটা ধমক দেয়। আর আমি ছুটে নিজের রুমে চলে আসি।এসেই শুয়ে পরি।বিছানায় শুয়ে থেকে অনেকক্ষণ কাঁদি।হৃদের আচারণের কথা ভেবে আর ঘুম আসে না আমার।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি ঘুম আসছে না।নিজে নিজেই ভাবছি, হৃদ কি তাহলে এখন থেকে ওর নিজের রুমেই ঘুমোবে? এতোটা বদলে গেছে হৃদ? কিন্তু আমি তো ওর প্রতি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।এখন তো ওকে ছাড়া আমার ঘুম হবে না।আর হৃদও তো বলতো আমাকে জড়িয়ে না ধরে রাতে ঘুমোতে পারে না।তাহলে এখন কি হয়েছে?

কথাগুলো ভাবতে গিয়ে আমি উঠে বসি।আমি বুঝতে পারি হৃদ আর আজকে আসবে না।আর আমারও ঘুম হবে না।তাই আমি আস্তে করে চুপিচুপি পা টিপে হৃদের রুমে গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরি।ওর কম্বলের ভিতরে ঢুকে কোলের ভিতর থেকে কোলবালিশটা সরিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে শুই।হৃদের মুখটার দিকে চেয়ে থাকি আর ভাবি যেই হৃদ আমাকে এতোটা ভালোবাসতো তার আজ এমন পরিবর্তন।

এমন সময়ে হৃদ আড়মোড়া ভেঙে চেয়ে দেখে আমি ওর কোলের মধ্যে।আর আমার চোখদুটো দিয়ে ওর মুখ পানে চেয়ে আছি। আমাকে দেখা মাত্র হৃদ ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর উঠে বসে বলে, তুই আমার রুমে কি করছিস? বেড়িয়ে যা এক্ষুনি।

নাহ! যাবো না।

মানে?

তুমি তো এবাড়িতে তোমার বেবিটার জন্যই আছো।

হুমমম।তো?

তাই বলছিলাম তোমার বেবিটার খুব শীত করছে।

ইয়ারকি করতে এসেছিস মাঝ রাতে আমার সাথে?

আগে আমায় বলতে তো দিবা তারপর রাগ দেখিও।

আচ্ছা, বল শুনি?

কথাটা বলে হৃদ নিজের কোলের উপর কোলবালিশটা নিয়ে মুখে হাত দিয়ে বসে পরে।আর আমি বলতে শুরু করি।

আমার মধ্যেই তো তোমার বেবিটা বেড়ে উঠছে।আমার শীত করা মানে তো তোমার বেবিরও শীত করা। আর আমি একটা কোম্বলের মধ্যে শুয়ে দেখেছি শীত মানাচ্ছে না।সেদিন যেমন তোমার জ্বর হলে শীত মানাচ্ছিলো না তেমন।তাই তোমার রুমে এসেছিলাম কম্বল চাইতে।খালু, খালাম্মাকে এতো রাতে কি আর জাগানো যায় বলো? আর তুমিও তো কম্বল ছাড়া শুতে পারবে না। তাই বুদ্ধি করে তোমার কোলের মধ্যে ঢুকে পরেছি।আমি কি কিছু ভুল করেছি বলো?

হৃদ আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।

আমার বেবিটার কি সত্যিই খুব শীত করছে?

হুমমম।খুব।

হৃদ চিৎকার দিয়ে বলে, ফাজলামো মারার আর জায়গা পাস না? এক্ষুনি বেড়িয়ে যা আমার রুম থেকে।

কথাটা বলে হৃদ নিজের কোলের উপরের কোলবালিশটা আমার মুখের উপর ছুড়ে মারে।

এখন তোকে দেখলেই আমার শুধু ঘৃণা হয় ফুল।তুই সত্যিই একটা স্বার্থবাদী মেয়ে।যেই আমি তোকে স্পর্শ করলেই তোর গা ঘিনঘিন করতো।আজ সেই আমার কাছেই এসেছিস? যেই বলেছি আমি আমার সন্তানকে নিয়ে চলে যাবো সেই এসেছিস নিজের অধিকার বোধ খাটাতে?এতোদিন কি হয়েছিলো ফুল? আমাকে তো কম কস্ট দিস নি।তাহলে আজ কেন?

চলবে,,,,

রোজা থেকে দিনে গল্প লিখতে পারি না।আর সন্ধ্যার পর খেতে খেতে তারাবির টাইম হয়ে যায়। তাই রাতেও লেখা হয় না।এজন্য হয় গল্পটা লেট হয়ে যায় আর নয়তো ছোট।সবকিছুর জন্যই ছরি।তবে চেস্টা করি প্রতিদিন গল্প দিতে।আশা করছি আপনারা সমস্যাটা বুঝবেন।আগে তো এমনটা কখনো করি নি।একদিনে দুটো করে পার্টও দিয়েছি।

#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ১১
#Mst_Liza

হৃদ আর কিছু বলার আগেই আমি নিজের চোখদুটো খিচে বন্ধ করে ওর বুকের উপরে ঢুলে পরি।আচমকা আমি এভাবে পরে যাওয়ায় ও প্রথমে আমাকে একটা ধাক্কা দেয়। তারপর আমার কোনো সাড়া না পেয়ে টেনে আমার মাথাটা ওর বুকের সাথে চেপে ধরে আর কাঁদে।কান্না জড়িত কন্ঠে আমাকে ডাকে।

ফুল? এই ফুল ওঠ বলছি? এবার কিন্তু আমি সত্যি রেগে যাচ্ছি!

আমি চোখ বন্ধ করা অবস্থায় মনে মনে বলি, ওহহ তাহলে এতোক্ষণ যেসব কথা বলা হচ্ছিলো সেগুলো তোমার মনের কথা না! তুমি আমার উপর রেগে আছো তাই বলছিলে।ঠিক আছে আমিও আর উঠবো না।এভাবেই তোমার বুকে পরে থাকবো।

হৃদ আমাকে টেনে তোলে আমি আবার ওর বুকে এসে পরি।বারবার এমন হওয়ায় না পেরে ও আমাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়েই শুয়ে পরে।আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে, আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছি তোকে তাই না রে? এই অবস্থায় তোকে এতোটা কস্ট দেওয়া আমার ঠিক না।কিন্তু কি করবো? তুই তো আমাকে এর থেকেও বেশী কস্ট দিয়েছিস ফুল।দিনের পর দিন যেই কস্টটা আমাকে তুই দিয়েছিস তার কাছে তো এটা কিছুই না।খুব ভালোবাসি তোকে আমি।কিন্তু তোর অবহেলাকে নয়।

হৃদের কথাগুলো শুনে আমার মন ওর প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পরছে।খুব শক্ত করে ওর বুকে মাথাটা চেপে রেখে শুয়ে আছি আমি।আর হৃদ আমায় এক হাত দিয়ে পিঠে আর অন্য হাতে চুলের ভাজে বিলি কেটে দিচ্ছে।

এখন মনে হচ্ছে, হ্যাঁ এটাই রূহুর প্রশান্তি।এই বুকটায় মাথা রাখার জন্যই তো এতো সময় ধরে ছটফট করছিলাম আমি।

হৃদ আমার পিঠের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে পেছনের থেকে জামার চেইনটা খুলে দেয়।তারপর জামার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে পিঠে বিলি কাটতে থাকে। আমার কাতুকুতু লাগে তাই নরেচরে উঠি।অমনি হৃদ আমায় পাশের বালিশে শুইয়ে দিয়ে উঠে বসে।

কি হলো হৃদ ছেড়ে দিলে কেন আমায়? একটু ভালোবাসো না।আমি তো আজ নিজের থেকেই এসেছি তোমার কাছে।কথাগুলো আমি উঠে বসে হৃদের কাঁধে থুতনিটা রেখে বলি।

আমার কন্ঠ শুনে হৃদ চমকে ওঠে।আর ঘুরে আমাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।আর আমার দিকে চরম রাগি দৃস্টিতে তাকায়।আর দাঁতে দাঁত চেপে বলে, এতোক্ষণ তুই নাটক করছিলি ফুল?

হ্যাঁ, করছিলাম।কারণ এটা না করলে আমি তোমার ভেতরের সত্যিটা জানতে পারতাম না।ভালোবাসো তুমি আমায়।আমিও তোমায় ভালোবাসি।তাহলে আমরা কি পারি না পুরোনো ভুলগুলো সুধরে নিয়ে নতুন ভাবে আবার সবটা শুরু করতে?

না পারি না।

কথাটা বলে হৃদ আমার হাত ধরে টেনে হিচরে ওর রুম থেকে বের করে দেয়। তারপর আমার মুখের সামনে ঠাসসস! করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমি হৃদকে অনেকবার ডাকি হৃদ শোনে না।হৃদের রুমের দরজায় দু’হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করি তবুও খোলে না।আমি হৃদকে ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে নিচেই বসে পরি।দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে এখনো বিরবির করে বলছি, আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও হৃদ আর কখনো তোমাকে কস্ট দেবো না।প্লিজ হৃদ, আমাকে দূরে সরিয়ে রেখও না।

রুমের ভেতরে হৃদ কি করছে আমি জানি না।ওর কি কস্ট হচ্ছে না? আমাকে নাকি ও ভালোবাসে, তাহলে কস্ট কেন দিচ্ছে?

সকালে ঘুম ভাঙলো খালাম্মার ডাকে।চোখ মেলে চেয়ে খেয়াল করি হৃদের রুমের দরজার সামনে ফ্লোরে বসেই ঘুমিয়ে আছি।একটু নরেচরে পিছনে ফিরতেই দেখি হৃদ দরজা খুললো।আমাকে রুমের সামনে দেখতে পেয়ে হৃদের চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেলো।

খালাম্মা আমার কাছে জানতে চায়লো, কি হয়েছে ফুল? এখানে, এভাবে কেন পরে আছিস?

আমি কিছু না বলেই ছুটে নিজের রুমে চলে আসি।ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বারবার চোখে মুখে পানির ছিটা দিতে থাকি।তারপর পানি ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পরে কাঁদি।কাঁদতে কাঁদতে নিজেই নিজেকে বলি, আমি কি হৃদের ক্ষমা পাওয়ারও যোগ্য না? হৃদ তুমি এমনটা করতে পারলে আমার সাথে?

অনেকক্ষণ এভাবে ভিজতে থাকি।তারপর চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়ায়।পানি বন্ধ করে খেয়াল করি আমার পুরোটা শরীর ভেজা।শুকনা কোনো কাপড়ও ওয়াশরুমে নেই।তাই তোয়ালেটা আগে থেকে এখানে থাকায় ভেজা কাপড়গুলো খুলে কোনো মতে তোয়ালেটা শরীরে জড়িয়ে রুমে এলাম।আলমারি থেকে একটা সাদার উপরে কালো হালকা সাপা থ্রীপিচ বের করলাম।তারপর আলমারিটা বন্ধ করে যেই না পিছনে ঘুরে তাকালাম চোখের সামনে ভুত দেখার মতোন হৃদকে দেখলাম।আচমকা সামনে এভাবে হৃদকে দেখে আমি ভয় পেয়ে হাত থেকে থ্রীপিচটা ছেড়ে নিচে ফেলে দিলাম।আর হৃদ এক হাত দিয়ে আমাকে কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।আমি নিজের চোখদুটো বন্ধ করে রাখলাম।আর তখন আমার ভেজা চুলের পানি কপাল গড়িয়ে মুখ থেকে থুতনি পর্যন্ত এসে পরেছে।যেই না টপ করে এক ফোটা পানি আমার বুকের উপরে এসে পরলো তখনই হৃদ নিজের ঠোঁট দুটো আমার বুকের সাথে চেপে রেখে গভীর চুম্বন করলো।আমি হৃদের চুলের ভাজে হাত ডুবিয়ে দিয়ে মাথাটা শক্ত করে ধরি।কিছুক্ষণ পর আমি চোখ মেলে হৃদের মুখটা তুলে আমার সামনে আনি।হৃদ তুমি…আমি আর কিছু বলার আগেই হৃদ আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

আমার মুখের সামনে কিছু পেপারর্স ধরে।

কি এটা হৃদ?

নিজেই পরে দেখ!

আমি হৃদের হাত থেকে পেপারর্সগুলো নিয়ে পরতে শুরু করি।পেপারর্সগুলো পরার সময় আমার পায়ের নিচের থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিলো।হৃদ আমার চোখের সামনে একটা পেন ধরে।আর বলে, শোই করে দে ফুল।

আমি খুব অসহায় দৃষ্টিতে হৃদের দিকে তাকায়। হৃদ বলে, এই পেপারর্সগুলো দেখে চমকে যাবার কিছু নেই। বাচ্চাটার উপর শুধু আমার একার অধিকার থাকবে।ডিভোর্সের পর আমি চাইলেই শুধু তুই আমার সন্তানের সাথে দেখা করতে পারবি না হলে পারবি না।কিরে? দেরি করছিস কেন? তাড়াতাড়ি সই করে দে! আমাকে উকিলের কাছে যেতে হবে।

আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে।কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।আমি চোখের পানি মুছে পেপারর্সগুলো হৃদের চোখের সামনো টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ওর মুখের উপরে ছুড়ে মারি।তারপর ওর কলারটা টেনে ধরে বলি, অনেক সহ্য করেছি আর না।যখন ইচ্ছা হবে কাছে এসে ভালোবাসবে আবার কস্টও দিবে।এখন বলছো আলাদা হয়ে যাবে? একটু আগেও তুমি আমায় আদর করলে হৃদ।আমাকে ছাড়া কি পারবে তুমি থাকতে? আর আমাদের সন্তান? ওতো আমাদের দুজনেরই অংশ।তাহলে ওকে একা তুমি কেন নিবে?

হৃদ আমার হাতদুটো ওর কলার থেকে নামিয়ে নেয়। তারপর বলে, এই রকম কস্ট আমাকেও তুই দিয়েছিলি ফুল? এর থেকেও অনেকগুণ বেশি কস্ট।তুই বুঝিস নি আমার ভালোবাসাকে।সেদিন বিষ না খেলে আজও তুই আমার সাথে অমন ব্যাবহারই করতিস।তাই আমি আর কিচ্ছু চায় না তোর কাছে।তুই শুধু আমার সন্তানটাকে দিয়ে দিস।ওকে নিয়ে আমি চলে যাবো অনেক দূরে।তোর সাথে মা আছে বাবা আছে।আমার তো কেউ নেই।আমি আমার সন্তানটাকে নিয়ে চলে যাবো এবাড়ি ছেড়ে। অনেক দূরে।

কথাটা বলে হৃদ আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।আর আমি হৃদকে পিছনের থেকে চিৎকার করে ডাকি।ও শোনে না।আমি ড্রেসটা পরে হৃদের রুমে গিয়ে দেখি হৃদ কারও সাথে ফোনে কথা বলছে।কথা শুনে মনে হচ্ছে কেউ আসবে।ফোনকলটা শেষ হলে হৃদ ঘুরে আমাকে দেখলো।কিন্তু কোনো কথা বললো না।তারাহুরো করে আমার পাশ কেটেই চলে গেলো।

চলবে,,,,
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ১২(শেষ)
#Mst_Liza

খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি আমি।হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করছি।কিন্তু খেতে পারছি না।ভালোবাসলে যে খুদা লাগে না তা আজ বুঝলাম।হৃদ যে সেই সকালে বের হলো কই আর তো ফিরলো না।কোথায় আছে ও আর কখন ফিরবে? ভাবতে ভাবতেই কলিং বেলটা বেজে উঠলো।আমি ছুটে গিয়ে দরজাটা খুলে দেখি হৃদের হাত ধরে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।আমার পাশ কেটে মেয়েটিকে নিয়ে হৃদ ভেতরে আসতে লাগলে আমি হৃদের কাছে জানতে চাই, কে ওই মেয়েটি?

হৃদ আমার দিকে রাগী দৃস্টিতে তাকালো।আর দাঁত কটমট করে উত্তর দিলো, আমার বউ কোনো সমস্যা তোর?

বউ মানে? তুমি কি বিয়ে করেছো? এটা তুমি করতে পারলে? কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম আমি।

আমার কথা শুনে মেয়েটি জোড়ে হেসে উঠলো।তারপর বললো, তুমিই কি ফুল?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম হ্যাঁ।মেয়েটা আরও কিছু বলতে যাবে হৃদ ওকে টেনে আমার সামনে থেকে নিয়ে যায়।





আমি দরজার কাছে দাড়িয়ে ওদের কথা শুনছি,,

হৃদ মেয়েটিকে বলছে, তোকে এখানে আমি কেন এনেছি, ভুলে গেছিস?

নাহ! মেয়েটি ঘুরে দাড়াতে দরজার কাছে আমাকে দেখে ফেলে আর ডাকে।একি ফুল ওখানে কেন দাড়িয়ে আছো? ভেতরে এসো।

মেয়েটি কথাটা বলতে হৃদ আড় চোখে মেয়েটির দিকে তাকায়।

মেয়েটি বলে, আরে হৃদ যা হয়েছে ভুলে যা না।আমি রুমের ভেতরে আসলে মেয়েটি আমাকে ধরে হৃদের সামনে দাড় করায়। আর বলে, তুই আমাকে বলেছিলি তোর সাথে বউয়ের অভিনয় করতে।কিন্তু ফুলকে দেখে আমার বড্ড মায়া লেগে গেল।ওকে আর কস্ট দিস না হৃদ।তুই তো বলেছিস এখন ফুলও তোকে ভালোবাসে।তাহলে আর রাগ কিসের? ফুলের চোখ মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ। তোর কথা ভাবতে ভাবতে দুশ্চিন্তায় কি হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তোদের সন্তানটার যত্ন কিভাবে নিবি? আমার কথা শোন! মেনে নে ফুলকে।

মেয়েটির কথা শুনছি আর আমি অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি।

হৃদ আমার থেকে উল্টো দিকে মুখ করে দাড়িয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বলে, চলে যা নূর।তোর কোনো কথায় আমি আর শুনতে চাই না।

নূর হৃদের কাঁধে হাত রাখে।আর বলে, তুই ঠিকভাবে রাগতেও জানিস না।এটাও তোর অভিনয়। ফুল বড্ড বোকা তাই বোঝে না।কথাটা বলতে গিয়ে নূরের দু’চোখে পানি টলমল করছে।মনে হচ্ছে দু’চোখের পানি আটকে রেখেছে।নিচে গড়াতে দিচ্ছে না।নূরের দু’চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

হৃদ নূরের হাতটা ওর কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে, তুই কি যাবি?

হুমমম।যাচ্ছি বলে নূর ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

নূর চলে যাবার কিছুক্ষণ পর হৃদ নিরাবতা ভেঙে বলে ওঠে, ফুল?

আমি একটু কেঁপে উঠে বলি, হুমমম?

তুই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস? আমাকে কখনো কস্ট দিবি নাতো আর?

হৃদের কথা শুনে আমার যে কেমন লাগছে আমি নিজেই বুঝে উঠতে পারছি না।শুধু ভাবছি হৃদ কি মন থেকে আমাকে মেনে নিয়েছে?

আমার কোনো উত্তর না পেয়ে হৃদ ঘুরে এসে আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আর আমার কাছে জানতে চায় কি হলো কিছু বলছিস না কেন?

আমি ভয়ে কেঁদে দিয়।

আবার কাঁদছিস? আমার প্রশ্নের উত্তর দে?

হ্যাঁ বাসি তো।তোমার মতোন অতোটা বাসি না।কিন্তু বাসি।

আমার কথাটা শুনেই হৃদ ঝট করে আমায় জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলে, কেন আমায় এতো কস্ট দিলি তুই? কেন এতোদিন ধরে আমার ভালোবাসাকে অবহেলা করছিলি ফুল?

হৃদের কান্না দেখে আমিও কেঁদে দিয়।আমিও ওকে জড়িয়ে ধরি আর বলি, তুমিও আমাকে অনেক কস্ট দিয়েছো হৃদ।

এমন সময়ে আমি চোখ তুলে দেখি খালাম্মা দরজার কাছে দাড়ানো।

আমি হৃদকে বলি, হৃদ সামনে খালাম্মা।

কথাটা বলতেই হৃদ আমাকে ছেড়ে দেয়। আর খালাম্মার দিকে তাকায়। সেও কাঁদছে। একটু এগিয়ে এসে বলে, শুধু ফুলকে মেনে নিলি। ওকে ভালোবাসিস বলে? আর আমি, তোর বাবা? আমাদেরও কি ক্ষমা করা যায় না?

সঙ্গে সঙ্গে হৃদ খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরে আর বলে, হুমমম।





ওই দিনের পর থেকে হৃদ আমার অনেক যত্ন নিতো।আমাকে খুব ভালোবাসতো।নূরকে আর দেখিনি এই শহরে।হৃদের কাছে শুনেছি নূর হৃদের অনেক ভালো বন্ধু ছিলো।বিদেশে লেখাপড়া শেষে ভালো জব পেয়েও ছেড়ে দিয়ে
দেশে এসে জব করতো।

সবকিছুই ভালো চলছে এখন।ভালোবাসা আর সুখে ভরে উঠেছে আমাদের জীবন।একটা রাতেও হৃদ আমাকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমোতে পারে না।আমাকে গোসল করিয়ে দেওয়া।খাইয়ে দেওয়া সব দিকে হৃদ খেয়াল রাখে।আর খালাম্মা তো শ্বাশুড়ি কম মা বেশি আমার কাছে।আমার খুব ভয় করে। মাঝে মাঝে ভাবি, এতো সুখ কি জীবনে সইবে? দেখতে দেখতে সাত মাস পেরিয়ে গেলও।কিছুদিনের মধ্যে বাবুটাও এসে যাবে।কতোই না মজা হবে। আহ আর ভাবতে পারছি না আমি। গোলুমোলু নাদুস নুদুস দুস্টু একটা কিউটের ডিব্বা পরী আমার কোলে আসবে।





ডায়েরির পাতার শেষ লাইটা পরে আরও বেশি খারাপ লাগছে মায়ার।ছোট্ট মায়ার দু’চোখ বেয়ে শুধু অশ্রু ঝড়ছে।এখন ডায়েরিটা বুজিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে কাঁদছে।হৃদ মায়ার হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে পাশে রেখে মায়াকে কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদে। হঠাৎ হৃদের কাঁধে একটা হাত স্পর্শ করে।হৃদ ঘুরে তাকিয়ে দেখে নূর।হৃদ নূরের হাতটা নিজের কাঁধের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। নূর চলে যেতে লাগলে হৃদ নূরের হাতটা আবার ধরে বসে।নূর অবাক হয়ে হৃদের দিকে তাকায়। আর মনে করে পাঁচ বছর আগের কথা,,,,,


ফুলকে যখন ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো হৃদ কিছুতেই ফুলকে ছাড়তে চাচ্ছিলো না।ফুলের অনেক কস্ট হচ্ছিলো।হৃদের হাতটা শেষবারের মতো ছেড়ে দেওয়ার সময় ফুল বলেছিলো, সে যদি মারা যায় নূরকে যেন হৃদ বিয়ে করে নেয়।কারণ ফুল নূরের চোখে হৃদের প্রতি ভালোবাসা দেখেছিলো।যেই ভালোবাসাতে কোনো স্বার্থ ছিলো না।এজন্য ফুলের মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র নূর ছুটে আসলে হৃদ নূরকে ফুলের শেষ ইচ্ছাটার কথা বলে।আর নূর হৃদকে ভালোবাসায় বিয়ে করে নেয় এবং হৃদ ফুলের সন্তানকেও মায়ের স্নেহ দেয়। তবে হৃদ আজও সম্পূর্ণ ভাবে নূরকে স্ত্রীর অধিকার সমার্পন করে নি।বিয়ের প্রথম রাতে হৃদ নূরকে বলে দিয়ে ছিলো #ঝরা_ফুলের_বাসর কখনো হয় না।তবে আজ হৃদের খুব মন চাইছে নূরের ধৈর্য আচারণ আর ব্যাবহার দেখে তাকেও ভালোবাসতে।ছোট্ট মায়া কাঁদতে কাঁদতে হৃদের কোলে ঘুমিয়ে পরে।নূর এসে বিছানা ঠিক করে মায়াকে শুইয়ে দিতে বলে।হৃদ মায়াকে শুইয়ে দিলে নূরও মায়ার পাশে শুয়ে পরে মায়ার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।হুট করে হৃদ নূরকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।নূর কিছু বলবে হৃদ উসসস! চুপপপ! বলে থামিয়ে দেয়।নূর আবার বলে আজ তুই সোফায়… নূর আর কিছু বলার আগেই হৃদ নূরের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়।কিছুক্ষণ পর নূরকে ছেড়ে দিলে নূর হৃদকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।

নূর হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, এটা কি হলো?

হৃদ শুধু একটা কথায় বলল, ভালোবাসলাম।

কিন্তু তুই তো ফুলকে ভালোবাসিস।দেখ হৃদ! তুই না চাইলে আমার কাছে আর আসিস না।আমি তোকে বিয়ে করেছি।তোর সন্তানকে দেখছি তার মানে এই নয় যে আমি আমার অধিকার দাবি করবো।

নূর আর কিছু বলার আগেই হৃদ নূরের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে থামিয়ে দেয়।

কে বলেছে ভালোবাসা জীবনে একবার আসে? ফুলকে আমি ভালোবেসেছি আর এখনো বাসি।ওর জায়গাটা কেউ চাইলেও নিতে পারবে না আমার কাছ থেকে। কিন্তু তোকে আমি ওর মতোন না হলেও ভালোবেসে ফেলেছি।এখন তুই আমার অভ্যাস নূর।।তোকে ছাড়া আমার একটা দিনও সম্পূর্ণ হয় না।মানুষ চলে যায় এটা প্রকৃতির নিয়ম কিন্তু তাই বলে জীবনটা থেমে থাকে না।এই দীর্ঘ জীবন কাটাতে হাতটা ধরার জন্য স্রষ্টা কাউকে না কাউকে অবশ্যই পাঠায়।তেমনি আমার জীবনেও তোকে পাঠিয়েছে।এখন আমার সুখ বল, দুঃখ বল সবকিছুর ভাগই তোকে নিতে হবে।আমার জন্য এতোকিছু করলি, এতো অপেক্ষা করলি আর আজ আমি যখন চাইছি তখন দূরে থাকতে চাচ্ছিস? তুই কি সত্যি আমাকে ভালোবাসিস না?

নূরের চোখে পানি চলে আসে হৃদের কথা শুনে।হৃদের প্রশ্নের উত্তরে নূর বলে, বাসি তো।আর সারা জীবন বাসবো।তোর থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি আমি তোকে।
কথাটা বলে নূর হৃদের বুকে নিজের মাথাটা ঠেকায় আর বলে, আচ্ছা #ঝরা_ফুলের_বাসর কি আজ হবে?

হৃদ মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরে বলে, হ্যাঁ হবে।

।।।।।।সমাপ্ত।।।।।।

বিঃদ্রঃ প্রিয় পাঠকগণ জীবনের গল্পগুলো নিজের মনের মতোন করে সাজানো যায় না।আমি বাস্তবতা দেখেছি আর সেই প্রক্ষীতেই গল্পটা লিখেছি।তাই আমি চাইবো গল্পের বাস্তবতাটুকু আপনারাও মেনে নিবেন।আমি সব সময় চেস্টা করেছি পাঠকদের প্রত্যাশা সরূপ গল্পের এ্যাডিং দিতে।তবে এই গল্পটাতে আমি নিজের মতো করে এ্যাডিং দিয়েছি।জানি না আপনাদের কার কেমন লাগবে।তবুও বলবো, জীবনটা এমনও হতে পারে।আমরা শুধু সুখ খুঁজি গল্পের মাঝে।চারিপাশে ফুলের মতো মানুষও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যাদের জীবনের গল্পটা একটু ভিন্ন।আজ ফুল নেই।তাই বলে এটা না যে হৃদ সারাজীবন ফুলের কথা ভেবে পাগলের মতো বসে থেকেই জীবনটা কাটিয়ে দেবে।জীবন প্রকৃতির নিয়মে চলে।ভালোবাসাটা অমর তাই ওটা থেকে যায়।তবে ব্যাক্তি ভেদে, সময় ভেদে মানুষ পারে নিজেকে গুছিয়ে নিতে।জীবনে কিছু হারিয়ে ফেললে কস্ট না পেয়ে সবকিছুর জন্য শুকরিয়া আদায় করবেন।কারণ এটাই জীবন।আল্লাহ হাফেজ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here