টক্সিক_রিলেশনশীপ পর্ব ১৬

#টক্সিক_রিলেশনশীপ
||১৬তম পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
বাসন্তী মন মরা হয়ে বিশাল বারান্দার দোলনায় বসে আছে। এমন সময় আকস্মিক গোলাগুলির শব্দ শুনে ভয়ে শিউরে উঠে সে। ধীরে ধীরে রেলিংয়ের দিকে চোখ রেখে এগিয়ে যেয়ে নিচে তাকালে দেখতে পায় তুমুল মারামারি হচ্ছে নিচে। এত মানুষ যে বাড়ির সামনের বিশাল উঠান ভরে গেছে। কারো হাতে চাপাটি, তো কারো হাতে পিস্তল, তো কারো হাতে হকিস্টিক, ব্যাট।

“হায় আল্লাহ! এসব কী হচ্ছে!”
আঁতকে উঠে বাসন্তী, জীবনে প্রথম টেলিভিশজ জগতের বাহিরে মারামারি দেখছে সে।

একটু বাদেই খেয়াল করে মুখে রুমাল বেঁধে হাতিয়ার সমেত নায়িমও এই রক্তের খেলায় সমান তালে মেতে উঠেছে। মুখ বাধা থাকার পরও নায়িমকে চেনার কারণ হলো তার নীল মণি বিশিষ্ট রক্তিম দুটো চোখ। বাসন্তীর ভাবনাগুলো গুলিয়ে যাচ্ছে।

“নায়িম ছুড়ি, পিস্তল…! কিন্তু ও তো সাধারণ এক গায়ক। আর এ লোকগুলোই বা কে?”

ঝড়-ঝামেলার মাঝেই নায়িম দেখতে পায় বাসন্তী বারান্দায়। এমন স্থান মানেই যে কোনো সময় গুলি লাগতে পারে তার।

“হ্যাভ ইউ গন নাটস্? তুমি এইখানে কী করো? ভিতরে যাও! এক্ষন ভিতরে যাও!”
চেঁচিয়ে উঠে সে।

বাসন্তী কেঁপে উঠে ছুটে চলে যায় বারান্দা থেকে। ভীতিগ্রস্ত রমণী গুটিসুটি মেরে বসে থাকে সে, থরথম কাঁপছে গোলাগুলির শব্দে।

ঘণ্টা খাণেক পর সবকিছু থেমে যায়। শুধু নীরব নয়, নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবেশ। সেই নিস্তব্ধতা কাটাচ্ছে নায়িম ও কিছু মানুষের কথোপকথন এবং কণ্ঠস্বর।

বাসন্তী ধীরপায়ে বেডরুম থেকে বের হয়। হলওয়ে হয়ে নিচে যাওয়ার পথে স্টাডি রুম থেকে অনিমেষের কণ্ঠ শুনতে পায়। কী একটা ভেবে যেন সেদিকেই এগিয়ে যায় সে নায়িমের কাছে যাওয়ার ভাবনা বাদ দিয়ে।

ঠকঠক শব্দ শুনে কল কেটে দরজা খুলে দেয় অনিমেষ। বাসন্তী উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“নিচে এসব কী হচ্ছে অনিমেষ দা? নায়িম কী করে পাক্কা গুন্ডাদের মতোন মারামারি করছে? আর এই লোকগুলোই বা কারা? আমরা এই বাড়িতে কেন এসেছি?”

বাসন্তী রীতিমতো অস্থির হয়ে পড়েছে। এমনিতেই সদ্য বাচ্চা জন্ম দিয়েছে দুর্বল দেহমন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও চাপে তো একবার জ্ঞান হারিয়েছেই, আবারও তেমনই পরিস্থিতি। যুবতীকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অনিমেষ

“আপনি শান্ত হন ভাবী। সবকিছু ঠিক আছে।”

“কিন্তু ঐ যে গোলাগুলি, মারপিট…?” বড্ড স্তব্ধ, কনফিউজ, ভীতিগ্রস্ত গলা তার।

“এগুলো সামলে নিবে নায়িম। আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। শুধু নিজের খেয়াল রাখুন।”

“আপনি লুকাচ্ছেন সত্য তাই না অনিমেষ দা? আমি প্রস্তুত, হয়তো একটু ব্যথিত হব, তবুও বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকাই শ্রেয়।”

ছলছল চাহনি বাসন্তীর, কথায় স্পষ্টতা। শঙ্কিত হয় অনিমেষ। আনমনেই ভাবে,

-নারী যেমন কোমলমতি, মায়াবতী তেমনই নারী সর্বগ্রাসী, সর্বনাশী। এ কথা কেন যে ভুলে জীবনে তাণ্ডব বয়ে আনে পুরুষ!

___

বড় সাহেব তথা সাদিক সাহেব বৈঠক ঘরে বসে পায়ে পা তুলে আয়েশ করে চা পান করছে। তাঁর মনে আজ রঙধনুর সাত রঙ লেগেছে। আশেপাশের সকল গ্রামে মিষ্টি বেলাবে সে, শুধু সুসংবাদ মানে ফাজ খানের মৃত্যু সংবাদ আসার অপেক্ষা।

“বড় সাহেব! বড় সাহেব! সব্বনাশ হয়ে গেছে গো, সব্বনাশ!”
হাঁপাতে হাঁপাতে মোস্তফা ভিলাতে ঢুকে সাদিক সাহেবের বিশ্বস্ত এক ত্রিশ উর্ধ্ব লোক। নায়িমের চোখের আড়ালে পালিয়ে এসেছে সে।

কপালে ভাজ স্পষ্ট হয় সাদিক সাহেবের। ত্রাসিত হয়েছেন না কি বিরক্ত বোধগম্য হলো না।

“আহা! কী বলতে চাচ্ছিস? হয়েছে কী সোজাসুজি বল না?”

“বড় সাহেব ঐখানে যাওয়ার পর ফাজ খানের ছেলেপেলেরা একদম বেলে দিয়েছে আমাদের লোকগুলোতে। আমি বহু কষ্টে নিজের জান বাঁচিয়ে ভেগে এসেছি। ওরা মনে হয় এদিকেই আসছে।”

বিচলিত হয়ে পড়লেন সাদিক সাহেব। একটু দূরে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিলেন তার পিতা শামসু মিয়া। যৌবন পেরিয়ে জীবনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। বয়স পেরিয়ে গেলেও মাথার মাদকের নেশা, লোভ, হিংসা একটুও কমেনি। তাঁক লাগানো বুদ্ধি তাঁর।

“আরে ব্যাটা, এতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নাই। এক মাঘে শীত যায় না, ওদেরও দিন এসেছে আজ ভেবে নে। তাছাড়া বুদ্ধিমান তো সেই নাবিকই যে হাওয়ার দিক পরিবর্তনের সাথেই তাল মিলিয়ে চলে।”

খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসলেন তিনি। সাদিক সাহেব বাবার কথার ভাবসম্প্রসারণ অনতি দেরিতেই বুঝে ফেললেন। কুটিল হাসি ফুটে উঠল তাঁর চেহারায়।

___

নায়িম রক্তমাখা হকিস্টিক হাতে ডাইনিংরুমে সোফায় আধশোয়া হয়ে আছে। তার দিকে নজর ঠেকিয়ে রেখেছে তিন জোড়া কৌতূহলী চোখ। কিন্তু কেউই কিচ্ছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না। নায়িম তাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

“আমার কী রূপ বেড়ে গেছে না কি? এভাবে তাকায় আছো কেন সবগুলো?”

“নায়িম দেখ আমরাই তোর আপন জন, আমাদের সব জানার অধিকার আছে। বিশেষ করে বাসন্তী ভাবী। তোকে এটাক করতে আসা লোকগুলো কারা? আর কী-ই বা তাদের উদ্দেশ্য? তুই তো একজন গায়ক মাত্র, এসব গান-টান তোর কাছে কেন? আর এত পারদর্শীই বা কীভাবে এসব চালাতে?”
অনেকটা সাহস জুগিয়ে প্রশ্ন করেই ফেলে অনিমেষ। বাসন্তীকে যে আজ একজন বড় ভাই হয়ে ওয়াদা করেছে সব সত্য তুলে ধরবে তার সামনে।

অনিমেষের আমতা আমতা কথা শুনে ছোট্ট এক শ্বাস নির্গত হয় নায়িমের দেহ থেকে, বিষাক্ত শ্বাস। নায়িমের জন্মের সাথেই জুড়ে আছে বিষাক্ততা, তাই তো সে নিজে বিষাক্ত, তার সাথে জুড়ে থাকা প্রতিটি সম্পর্ক সহ সবকিছুই বিষাক্ত৷ তার অতীত, বাস্তবতাও নিশ্চয়ই এর বাহিরে নয়। তাই তো সবার আড়ালে রেখেছে সে নিজের বিষাক্ত বাস্তবিকতাকে নায়িম, তবে আজ মনে হয় সত্য উন্মোচিত হবেই।

চলবে…
পরবর্তী পর্বে হবে রহস্য উন্মেচন📣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here