টক ঝাল মিষ্টি পর্ব -০৮

#টক_ঝাল_মিষ্টি (পর্ব ৮.১)
নুসরাত জাহান লিজা

“এইটা তুই কী বললি, অনি? তুই পুরুষ মানুষ না? তাইলে বউয়ের কাছে মাফ চাইলি কেমনে! তোর লজ্জা করল না? মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবি তা না, কয়দিন পরে তো বউয়ের পায়ে ধরে বসে থাকবি।”

শাহেদ যারপরনাই নাখোশ হলো অনিকেতের উপরে। সে অনিকেতের বন্ধু, সাথে কলিগও। অফিসে বিয়ের পর থেকে ঘটা ঘটনাগুলো বন্ধুর সাথে মাঝেমধ্যেই শেয়ার করত। আজও সেদিনের রাগারাগি, অবশেষে ভাব হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা বলেছিল, তাতেই শাহেদ টিপ্পনী কাটল বন্ধুকে।

“ধূর! কী বলিস এসব! দুই দিন থেকে তো খুব ভালো চলছে সব। লাবণ্য একটু বদমেজাজি কিন্তু মন থেকে তো ভালোই মনে হলো। এখন আর আগের মতো তেড়েফুঁড়ে চড়াও হয় না, পিছেও লাগে না।” শাহেদের কথায় একমত হতে পারে না অনিকেত।

“সব তোর বউয়ের গুটিবাজি। বুঝলি? মেয়েদের এসব তুই বুঝবি না, দোস্ত৷ এরা এভাবে টুপ ফেলে, দেখায় যে সব ঠিক আছে৷ যখনই তুই টুপ গিলবি মানে ভাব করবি আরকি, তখনই দেখবি কেমন করে ছিপ ধরে টান দেয়। তখন বন্ধু না পারবা গিলতে না পারবা ফেলতে। সারাজীবন ওই ছিপ যেদিকে তোরে নিয়ে যাবে তোর সেদিকেই দৌড় দেয়া লাগবে!”

অনিকেতের বিভ্রান্তি বাড়িয়ে আবার বলল, “সময় থাকতে সাবধান হ। তোর সাথে কী কী করেছে, সেটা দুইটা মিষ্টি মিষ্টি কথাতেই ভুলে গেছিস! আর আমারটারে দেখ, এমন ঝাড়ির উপরে রাখি যে যেকোনো সিদ্ধান্ত আমার পারমিশন ছাড়া নেয় না। এমনকি একটা কাপড় কেনার আগেও জিজ্ঞেস করে কোনটা কিনবে। কিন্তু তুই আমাকে হতাশ করলি দোস্ত। এমন ভেড়ুয়া হোস না এই বললাম। পরে পস্তাবি।”

“না রে, তুই দেখিস এমন কিছু হবে না। আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং গ্রো করছে কেবল, দু’জন যদি একে অপরকে বুঝতে পারি, তাহলে আর সমস্যা কী? একসাথে থাকব যেহেতু, বন্ধুর মতো থাকাই তো উচিত।”

“আমার বলার কথা তাই বললাম। তুই আমার বন্ধু৷ এইটুকু দায়িত্ব থেকে বললাম। মানা না মানা তোর ব্যাপার। তবে পরে আবার বলিস না যে সাবধান করিনি।”

অনিকেত প্রথমদিকে শাহেদের কথায় তেমন গুরুত্ব দিল না। লাবণ্যর সাথে সময়টা ভালো কাটছে, নতুন তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব কেমন ফুরফুরে একটা বিশুদ্ধ অনুভূতি মনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েটাকে প্রথমদিকে যতটা অসহ্য লাগত, এখন সেই তিক্ততা একদম নেই। তবে মেয়েটা ভীষণ ঠোঁটকাটা, মুখের উপরে অপ্রিয় কথা বলতে দ্বিধা করে না। অনিকেতও নিজে থেকেই টুকিটাকি জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে, এখন সেটা করতে খারাপও লাগে না আগের মতো। তবুও মাঝেমধ্যে খটমট লেগে যায়, আবার মুহূর্ত কয়েক পরে ভাবও হয়ে যায়। স্কুল, কলেজের স্মরণীয় স্মৃতি, প্রিয়-অপ্রিয় জিনিসপত্র এসব শেয়ার করা হয়ে গেছে। একে অন্যের অপছন্দের কাজগুলো সচরাচর এড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন মানুষকে ভালোভাবে জানার প্রগাঢ় আগ্রহ জন্মেছে। টোনাটুনির সংসারে অচেনাকে চিনে নেবার প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে চলমান রইল কিছুদিন।

এরমধ্যে লাবণ্য একদিন হলে গেল ওর জিনিসপত্র আনতে। কিন্তু কিছুতেই অনিকেতকে সাথে নিতে রাজি হচ্ছিল না। শেষে যেচেপড়ে অনিকেত নিজেই জোর করে ওর সিএনজিতে চেপে বসল। লাবণ্যকে হল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে সে অফিসে যাবার আগে বলল,
“তোমার গোছগাছ শেষ হলে আমাকে একটা ফোন কোরো। আমি অফিস থেকে আজ একটু আগে আগে ছুটি নিয়ে চলে আসব।”

অফিসে গিয়ে আগে আধা বেলা ছুটির বন্দোবস্ত করল, এরপর কাজে মন দিল। কিন্তু প্রায় সাড়ে ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরেও লাবণ্যর কল এলো না, তখন নিজেই কল করল। লাবণ্য কল ধরে বলল,

“অনিকেত, আমি বাসার দিকে রওনা দিয়েছি। তুমি যদি আসতে চাও তাহলে বাসায় চলে এসো।”

অনিকেত ফোন রেখে বেরোবার আগে পাশের ডেস্ক থেকে শাহেদ এসে বলল,
“কী হলো তোর? মুখ তিতা করে রাখছিস কেন?”

অনিকেত সব খুলে বলতেই শাহেদ বলল, “দেখছিস তুই? আসলে ওই মেয়ে তোরে পাত্তাই দেয় না। আমার কথায় তো বিরক্তি হইলি। দেখিস আরও কী কী হয়!”

অনিকেত কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেল। আসলেই কী এমন কিছু! লাবণ্য তো ওকে একবার জানাতে পারত, সে নিজে ফোন না করলে লাবণ্য হয়তো ওকে এখন বাসায়ও যেতে বলত না। অথচ অনিকেত একটু একটু করে লাবণ্যকে নিজের জীবনের একটা অংশ ভাবতে শুরু করেছিল। হুট করে নিজেকে কেমন অবাঞ্চিত মনে হলো! একটু অভিমানও হলো বুঝি!

বাসায় এসে দেখল লাবণ্যর জিনিসপত্র বহনকারী গাড়িটা এসে দাঁড়িয়ে আছে, লাবণ্য ব্যস্ত ভঙ্গিতে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। ড্রাইভারকে কিছু একটা বলছিল, তখন অনিকেতকে খেয়াল করে এগিয়ে এলো।

“রূম্পা আজ হলেই ছিল, একটা ইন্টারভিউ দিতে এসে হলে উঠেছে। আজ চলে যাবে, আমাকে দেখে সেই সব ঠিকঠাক করে দিল। তাই তোমাকে আর বিরক্ত করিনি। শুধু শুধু ছুটি নিতে গেলে।”

“আমি ছুটিটা আগেই নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার হয়তো আমাকে প্রয়োজন হবে। এখন দেখলাম তুমি নিজেই সব করতে পারো।”

অনিকেতের গলার অভিমানী সুরটা লাবণ্য বুঝতে পারেনি বলেই মনে হলো, হেসে হেসে বলল,
“এই মামা বললেন, কয়টা আর জিনিস, একটু কিছু টাকা বাড়িয়ে দিলে তিনিই ভেতরে দিয়ে আসতে পারবেন।”

অনিকেত ভালো করে তাকিয়ে দেখল তোশক, কম্বল, দুটো বড় বস্তা, তাতে মনে হয় বইপত্র। আরেকটা চটের বস্তায় হাঁড়ি-পাতিল, অন্যান্য কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র মনে হয়। বড় একটা লাগেজ, এগুলোই। সেই লোকটাই সব নামিয়ে ঘরে দিয়ে গেলেন।

ভাড়াটাও লাবণ্যই দিল, এটা নিয়েও অনিকেতের মন খারাপ হলো। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারল না। আগে হলে অনায়াসে বলে ফেলত, এখন কোথা থেকে একগাদা সংকোচ এসে জমা হয়েছে। সে কী বদলে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে! লাবণ্য কী মনে করবে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে? এভাবেই কী একটু একটু করে হৃদয়ে নতুন অনুভূতি তৈরি হয়! একটা চাপা অভিমানী দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে অনিকেতও সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় উঠে ভেতরে গেল।#টক_ঝাল_মিষ্টি (পর্ব ৮.২)
নুসরাত জাহান লিজা

শফিক আঙ্কেল যাবার পর থেকেই লাবণ্য রান্নায় ঝালের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়েছে, অনিকেত যতটা খায় ততটা নয় যদিও, তবে লাবণ্যর সহনশীলতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব ততটুকু পরিমান। কিন্তু অনিকেত এমন বুদ্ধু, বিষয়টা গত তিন সপ্তাহেও ধরতে পারেনি! লাবণ্য ঠিক করেছে বন্ধুত্ব যেহেতু হয়েই গেছে তাহলে শত্রুতা জিইয়ে রেখে আর লাভ নেই৷ সমোঝতা স্মারকে স্বাক্ষর করে একটা পারিবারিক শান্তিচুক্তি করার সময় চলে এসেছে।

বসে বসে সে এই চুক্তির আওতায় কোন বিষয়গুলো আসতে পারে সেটার একটা তালিকা করতে শুরু করল। ‘নেই কাজ তো খৈ ভাজ’ কথাটা মনে পড়ল লিখতে লিখতে৷ আসলে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দিনের বেশিরভাগ সময় বাসায় একা একা থাকা খুব কষ্টের। রান্না, ফেসবুকিং, নেটফ্লিক্সের নতুন মুভি আর সিরিজগুলো দেখা, মাঝেমধ্যে গল্পের বই পড়া সাথে জব এক্সামের পড়াশোনা করে অনেকসময় একঘেয়েমি চলে আসে। ধরাবাঁধা জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্যই মূলত শান্তিচুক্তির তালিকা তৈরি করতে বসা।

তালিকার শুরুতেই জায়গা করে নিল, ‘ঝাল খাবার পরিমাণ একজনকে কিঞ্চিৎ কমাতে হবে, অপরজনকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ বাড়াতে হবে।’

এরপর দুই নাম্বার দিয়ে লিখল, ‘বাসের জায়গা যেহেতু ছেড়ে দিচ্ছি, তাই শোবার জায়গায় কোনো স্যাক্রিফাইস হবে না। বাস আর বিছানা মিলিয়ে কাটাকুটি। ভেব না তুমি ঠকেছ, আমার কিন্তু তোমার নাক ডাকা সহ্য করতে হচ্ছে। তাই হিসেব বরাবর।’

‘বাসায় ঢুকে যার যার জিনিসপত্র সে গুছিয়ে রাখবে। একান্ত প্রয়োজনীয় হলে বা সাহায্য লাগলে সেটা অন্য ব্যাপার।’

‘একজন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে অন্যজন অবশ্যই বিরক্ত করবে না। উদাহরণস্বরূপ, পড়তে বসলে বা ঘুমালে টিভির ভলিউম বাড়ানো নিষেধ।’

‘এই বাসা বর্তমানে নো স্মোকিং জোন। সিগারেট ধরানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই দণ্ডনীয় অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করবেন স্বয়ং অভিভাবকগণ।’ এটা লিখে লাল সাইনপেন দিয়ে মার্ক করে দিল৷ অর্থাৎ এটা কোনোমতেই শিথিল যোগ্য নয়।

‘অকারণে কেউ কারোর পেছনে লাগব না। এক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই সচেষ্ট থাকতে হবে।’

‘একদিন মশারী টাঙানো হবে, আরেকদিন কয়েল ধরানো হবে। এক্ষেত্রে দু’জনকেই কিছু জিনিস ছাড় দিতে হবে।’

‘বন্ধুত্বকে পরের ধাপে উন্নীতকরণের চেষ্টা করা।সারাজীবনের জন্য যেহেতু একসাথে জুড়ে গিয়েছি, এই বিষয়টা এখন ভাবার সময় এসেছে বোধহয়৷’

লাবণ্য এই পয়েন্টটা লিখতে গিয়ে সলজ্জ হলো, রক্তিম আভা ফুটে উঠল মুখে। সে বরাবরই ডাকাবুকা স্বভাবের মেয়ে, তার জন্য এই লজ্জা লজ্জা অনুভূতি পুরোপুরি নতুন। অনায়াসে যেকোনো কথা মুখের উপরে বলে দেওয়া যতটা সহজ, নতুন এই অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো তার জন্য কঠিন, ভয়ংকর কঠিন!

শাশুড়ি ফোন করলেই বারবার বলেন, “এবার তোরা দুইটা একটু সুবোধ হ তো। তবে আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হই।”

লাবণ্য তার কথা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ভাবছিল, পরে মনে হলো, তিনি তো ঠিকই বলেছেন। সম্পর্ক তো এমনই তো হওয়া উচিত।

আগের পয়েন্টগুলো লিখতে লিখতে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কী সব বোকা বোকা কথাবার্তা লিখছে! অবশ্য যেই সুন্দর গাধাটাকে সে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তাকে এভাবে না বললে তার মোটা মাথা ভেদ করে মগজ অবধি কথারা পৌঁছুবে না। এই লোক ‘ন’ বললে ‘নিরানব্বই’ বুঝবে, কিন্তু ‘ন’ তে তো ‘নয়’ হয়, নব্বই’ও হয়, এটা তার মাথায় ঢুকে না। ঠিকই বেশি বেশি বুঝবে, কিন্তু যা বোঝার সেটা বুঝবে না। তাই এসব বোকাবোকা কথাবার্তা লিখতে হয়েছে।

হো হো করা হাসির মুহূর্ত আর কিছু সলজ্জ অনুভূতিকে সঙ্গী করে সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম সাংসারিক চুক্তিপত্র লেখা শেষ হলো। নিচে সিগনেচার করল, আরেকপাশে অনিকেতের জন্য জায়গা রাখল। পরে মনে পড়লে যেন আরও কিছু যুক্ত করা যায়, তাই মাঝের জায়গাটা ফাঁকা রইল।

এটা সে এখন কোনোভাবেই অনিকেতকে দিতে পারবে না, শেষ পয়েন্টটা এত সহজে বলা যায় না। আরও কিছুদিন যাক, সম্পর্কটা আরেকটু সহজ হোক, তখন এটা হাতে ধরিয়ে দেবে। অদ্ভুত পাগলাটে ছেলেটা ওর এই অনুভূতির মূল্য দিতে পারবে তো! কিছুটা যেন শঙ্কা জমা হলো লাবণ্যর হৃদয়ে!

***
চুক্তিপত্র লেখার আরও সপ্তাহখানেক পরের এক সকালে বান্ধবী নিশি ফোন করে ওর বাসায় যেতে বলল। বেচারি প্রেগন্যান্ট, ওর হাজব্যান্ড অফিসে থাকে এই সময়। সে নাকি ইদানিং কী সব দুঃস্বপ্ন দেখছে, তাই উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় চেপে বসেছে। ওর মা এসে সাথে থাকছে, তবুও লাবণ্যকে বলেছে, “তোর বাসা তো খুব বেশি দূরে না। আজ একটু আয় প্লিজ। তোরও ভালো লাগবে। যদি মরে টরে যাই আর দেখা হবে না।”

মেয়েটা এমনভাবে বলল, লাবণ্য আর না করতে পারল না। তৈরি হয়ে বের হওয়ার সময় দেখল অনিকেত আজ বাসার চাবিটা নিতে ভুলে গেছে, কিংবা লাবণ্য বাসাতেই থাকে বলে ইচ্ছে করেই নেয়নি। সে অনিকেতকে কল দিল, কিন্তু ফোন বন্ধ। ভাবল এখন বের হলে অনিকেত ফেরার আগে আগেই সে ফিরতে পারবে। তাই আর কিছু না ভেবে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল।

***
অনিকেত ফিরল কাক ভেজা হয়ে। দুপুর থেকেই কেমন ফ্যাসফ্যাসে বৃষ্টি পড়ছে, খুব ঝড়ো কিছু নয়, কিন্তু পানিটা হিমশীতল। অসময়ের বৃষ্টি বলে ছাতা নেওয়া হয়নি। বাসায় এসে দেখল তালা দেওয়া, ফোনটায় চার্জ নেই, বন্ধ হয়ে গেছে। রাতে চার্জ দেয়নি, সকালেও তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। অফিসে আজ এত ব্যস্ত ছিল যে চার্জ দেবার কথা মাথায়ই আসেনি। দশ মিনিট দরজার বাইরে অপেক্ষা করে গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো। বৃষ্টির মধ্যেই পাঁচ মিনিট হেঁটে গিয়ে রহিম চাচার চায়ের দোকানে বসল। সেখানে বসে চা খেয়ে, কিছুক্ষণ এটা-সেটা গল্প করে পয়তাল্লিশ মিনিট পরে আবার বাসায় চলে এলো। ঘড়িতে তখন পৌনে ছ’টা বাজে।

একটুতেই ঠান্ডা ওকে কাবু করে ফেলতে পারে, আজ তো বেশ কয়েকবার ভিজেছে। নাক দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে এরইমধ্যে। কাশি তো আছেই।

হুট করে পুরোনো অভিমানটা তীব্র রাগ হয়ে মাথায় ভর করল। লাবণ্য ওকে ছিটেফোঁটা মূল্যও দেয় না। পাঁচটায় তার অফিস ছুটি হয়, আজ শরীরটা একটু খারাপ লাগছিল বলে হাতের কাজ শেষ করে আধাঘন্টা আগে বেরিয়েছিল।

অপেক্ষা করতে করতে শাহেদের মন্ত্রণা ওর মাথায় চেপে বসল। লাবণ্য ওর কাছ থেকে সেদিন সুযোগ সন্ধানী বলার প্রতিশোধই নিচ্ছে তাহলে! একটা অন্ধ রাগ মাথায় চেপে বসল, ঠিক-ভুলের বিবেচনাবোধ ভাসিয়ে সে প্রবল আক্রোশে ভেসে গেল।

প্রতিজ্ঞা করল, লাবণ্য ফিরুক, একটা এসপার-ওসপার আজই করতে হবে! এভাবে আর সহ্য করা যায় না, কিছুতেই নয়! বন্ধুত্ব করে সে অনিকেতের মাথা কিনে নেয়নি, অনিকেতের মাথা অমূল্য, কয়টা মাত্র মিষ্টি কথাতে তা বিক্রিযোগ্য নয়!
…….
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here