টক মিষ্টি ঝাল পর্ব -০৬ ও শেষ

গল্পঃ #টক_মিষ্টি_ঝাল
#পর্ব_৬ শেষ
লেখাঃ #Saifa_adnan
আদনান, আপনি তো জানেন, চাচী আর আবির কিরকম। সেদিন এই রুমে এসে কেমন করছে তা পুরোটাই তো আপনি জানেন। তারপর ও এমন করছেন কেন?”
–: হ্যা, আমি জানি। আর যা জানি সবটাই ভুল। তুমি সেদিন জানতে , ওয়াশরুমে আমি। আর তা জেনেই তুমি আবিরকে এসব কথা বলছিলে।
–: আপনাত হঠাৎ এরকমটা কেন মনে হলো?
–: মনে হওয়ার অনেক কারণ আছে। সবাই জানে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি। তাহলে আবির কি করে জানলো, আমি তোমাকে মেনে নেইনি।
–: বিশ্বাস করুন আমি বলিনি ওকে। সেদিন আনিলাকে বলার সময় ও শুনছিল।
–:দয়া করে নাটক বন্ধ করো।
সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। শেষ রাতে আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে বললাম,
” আল্লাহ দয়াময়, এই বিপদ থেকে রক্ষা করো।”
সকালে আনিসা আপু রুমে আসলো। আমাকে আর আদনানকে বললো,
” তোমরা মায়ের রুমে আসো। কথা আছে।”
মায়ের রুমে যাওয়ার পর দেখি, মোটামুটি সবাই আছে মায়ের রুমে।
আনিসা আপু বললো,
“তোমাদের সবাইকে এখানে আনছি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে। একটা শয়তানের মুখোশ খুলতে।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, আনিসা আপুর দিকে। কি বলতে চাচ্ছে আপু।
আনিসা আপু বললো,
” কাল দুপুরে আপনাদের জামাই কল দিয়েছিল। কথা বোঝা যাচ্ছিল না, লোকজনের শব্দে। তাই আমি চাচীর রুমের বারান্দায় গিয়েছিলাম, কথা বলার জন্য। কথা শেষ না হতেই কল কেটে যায়। তাই আমি ওখানেই বসে ছিলাম। হঠাৎ জুঁই আর আবিরের কথায় আমি চমকে উঠি। জুঁইকে নিয়ে নেতিবাচক ধারনা জন্মে আমার। তাই বারান্দাতেই চুপ করে বসে থাকি। কিন্তু পরক্ষণেই আমার ধারনা পাল্টে যায়। বদমায়েশ আবির ওর সাথে খারাপ কিছু করার কথা বলে। জুঁই ওকে অনুরোধ করে এমনটা না করার জন্য। কিন্তু ও জুঁইয়ের কথা শুনেনি। ও যখন জুঁইয়ের হাত ধরে, তখনই আমি রুমে যেতে নেই। যাতে আবির জুঁইয়ের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আর তখনি আদনান দরজা নক করে। ঠিক সে মুহূর্তেই আপনাদের জামাই কল দিয়ে কান্না করে, ওর মা খুব অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করছে। কথা শেষ করে দেখি, ওরা রুমে নেই। সেই সময়ই আমি চলে যাই হাসপাতালে, মাকে দেখতে। আদনানকে আর সত্যিটা বলা হয়নি। তাই হাসপাতালে গিয়ে আদনানকে সত্যিটা বলার জন্য অনেকবার কল দেই । কিন্তু ওর ফোন বন্ধ ছিলো। কতোটা বদমায়েশ এই আবির বুঝতে পারছেন। ”
সবটা শুনে আদনান আমার কাছে এসে বললো,
” শুধু শুধুই আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। ক্ষমা করে দাও , প্লিজ। ”
আমি কিছুই বললাম না। খুুব অভিমান কাজ করছে। পুরোটা ভালো করে না জেনেই, কিরকম আচরণ করলো আমার সাথে।
আদনান বললো,
” জানো, আনিসা আপু । আমি পুরোটা না বুঝেই জুঁইয়ের সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করেছি। সব এই আবিরের জন্য।
আনিসা আপু শ্বাশুড়ি মাকে বললো,
” মা, তুমি কিছু বলবানা। আমি সেদিনই বলছিলাম, চাচী বা আবির কেউই সুবিধার নয়। ওদেরকে বাড়িতে থাকতে দিতে না। এরা যেখানে যায়, সেখানেই অশান্তি সৃষ্টি করে।
চাচী বললো,
” অনেক হয়েছে। খুব অপমান করছো তোমরা। আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই মেয়েটার। ওদের মতো মেয়েকে খুব ভালো করেই চিনি আমি। ভাবছিলাম কিছুদিন থাকবো। কিন্তু তা আর হলো না। এই মেয়ের জন্য আমাকে কথা শুনাইছো। দেখবা এই মেয়েও ওর শ্বাশুড়ির মতো অন্য ছেলের সাথে পালাবে।
এ কথা বলাতে আদনান প্রচুর রেগে যায়। আবিরকে বলে,
–: এই মুহুর্তে তোর মাকে নিয়ে বের হয়ে যা। উনি খুবই বাজে মহিলা।
চাচা চাচীকে বললো,
” তুমি আমার জীবনটাতো ধ্বংস করছোই। এখন যেখানে যাও, সেখানেই অশান্তি সৃষ্টি করো। তোমাকে নিয়ে কোনো শান্তি নেই।”
বের হও এই বাসা থেকেে।”
চাচী আর আবিরকে নিয়ে চাচা চলে গেল। আনিসা আপু বললো,
” অবশেষে আপদ দূর হলো। যেখানে যায় , সেখানেই ঝামেলা করে।
আর আদনান ,
যা কিছুই ঘটুক না কেন, পুরোটা যাচাই না করে কাউকে কথা শুনাবি না। মাত্র তো কয়দিন। জীবন চলার পথে অনেক বাধা আসবে। বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে। আনিলা আমাকে সবটা বলছে। তুই ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস।
আর তুই জুঁইকে এখনো মেনে নিস নি কেন?
আদনান বললো,
” আমার আপন মা , আমাকে কতো ছোটো রেখে অন্য লোকের সাথে চলে গেলো। তার শোকেই আমার বাবা মারা গেল। তাই আমি চেয়েছি ওকে কিছুদিন সময় দিতে, যাতে ওর আমাকে ভালো না লাগলে সহজেই চলে যেতে পারে। তাহলে , আমার মতো আর কোনো সন্তানকে কষ্ট পেতে হবে না।
আনিসা আপু বললো,
” ভাই , সব মেয়ে লোক এক না। আমার মাকে দেখ। উনি এই সংসারে যখন তোর বাবার দ্বিতীয় বউ হয়ে আসে, তখন আমি অনেক ছোটো। তুই তো আরো ছোটো। বিয়ের এক বছর পরই আনিলার জন্ম হয়। তার পরের বছর বাবা মারা যায়। তারপর তো মা একাই সবটা সামলিয়েছে। উনি তো অন্য কারো হাত ধরে চলে যায়নি। সংসার নিয়েই নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে। আমাদের তিনজনকে সমানভাবে দেখছে। জুঁইকেও মা কতোটা আদর করে। কেউতো কখনো বুঝতেই পারেনি, আমরা সৎ ভাই-বোন।
জুঁইকে আর কষ্ট দিস না । ওকে এবার মেনে নে। ওর সাথে তুই অন্যায় করছিস।
আদনান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–: ওর সাথে আমি অনেক খারাপ আচরণ করছি। ও কি আমাকে মাফ করবে?
–: মাফ না করার কি আছে। সংসার জীবনে রাগ-অভিমান হতেই পারে।
আর শোন, আনিলাকে নিয়ে মারুফ সিলেট যাবে। তুই গিয়ে ওদেরকে আমাদের বাসায় নিয়ে আয়।
আনিলা আর মারুফ আমাদের সাথে দেখা করেই চলে যাবে।
” এই আনিলা, আমাকে নিবি না, হানিমুনে।” আমি গিয়ে আনিলাকে বললাম।
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
ও বললো,
–: আমার হানিমুনে তোকে নিব কেন?
–: আমার বিয়ের আগে বাজি ধরেছিলি মনে নেই।
–: অতো আগের কথা মনে থাকে বুঝি।
আমি বললাম,
” থাক , আর মনে থাকতে হবে না। একাই যাও। আর ভালোভাবে এনজয় করো।
–: তোমাকে তো ভাইয়া মেনে নিয়েছে। এবার তোমাকেও হানিমুনে পাঠানোর ব্যাবস্থা করবো।
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
“থাক আর পাঁকামো করতে হবে না।
সারাদিনের কাজ শেষে রুমে আসলাম মাত্র। রুমে আসতেই আদনান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–: বউ, সরি। ওর সাথে তোমাকে দেখে আমার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। সঠিকটা বিচার-বিবেচনা না করেই , তোমার সাথে খারাপ আচরণ করছি। বউ, আমাকে মাফ করে দাও।
আমার খুব অভিমান কাজ করছে। তাই বললাম,
–: আপনি যা করছেন, তা আমার প্রাপ্য ছিলো। মাফ চাওয়ার মতো কিছুই হয়নি।
–: উহু, তা বললে হবে না। মাফ করতেই হবে। এই দেখো বউ, আমি কান ধরেছি।
ওর কান ধরা দেখে আমার হাসিঁ পেলো খুব । কিন্তু কিছুই বললাম না। ও আমার কানের কাছে এসে বললো,
” কান ধরেছি, মাফ চেয়েছি,
ক্ষমা করো আমায়-
সব অভিমান ভুলে,
নাও না কাছে টেনে আমায়।”
ওর পাগলামো দেখে সত্যিই সকল অভিমান চলে গেলো।
আদনানকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
–: আপনি তাহলে আমাকে মেনে নিয়েছেন।
–: এমন পুতুল বউকে না মেনে নেওয়ার উপায় আছে। যে আমার পরিবারের জন্য এতো কিছু করছে, যে আমার শত অপমান মুখ বুঝে মেনে নিয়েছে, তাকে তো মানতেই হবে।
আর জানো, ভালবাসায় একটু রাগ-অভিমান থাকলে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়।
সবার আগে আমার পরের গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
–: হ্যা, তবে এমন রাগ করা যাবে না, যাতে সম্পর্কই নষ্ট হয়ে যায়।
–:জানো, প্রথম দিনই তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তোমার বোকা বোকা ঝগড়াগুলো শুনে আমার খুব হাঁসি পাচ্ছিল। তুমি এখনো বাচ্চাদের মতো আচরণ করো। এখনো বড় হতে পারোনি।
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–: আমি বাচ্চা, তাই না। তো বাচ্চাকে এখন ঘুমোতে দিন। ঘুম আসছে খুব।
–: এখনতো ঘুমাতে দিব না। বাচ্চাটাকে একটু আদর করে নেই।
আমি লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে রাখছি। ও আমার মাথাটা উচু করে, চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
” তোমার ওই মায়াবী চোখ, কাঁপা কাঁপা ঠোট,
করেছে ব্যাকুল আমায়-
পরম আবেশে, হারাতে চাই তোমাতে,
দাওনা একটু ভালবাসতে আমায়।”
আমি বললাম,
” একটু বাসলে হবে না। অনেকটা ভালবাসতে হবে। কালকের ব্যাবহারে আমার ভিতরটা জ্বলে গিয়েছে। এখন তা দূর করতে হবে।
আদনান কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
” হ্যা, এ কয়দিন যে কষ্টগুলো দিয়েছি, আজ রাতে না হয় ভালবাসার মিষ্টতায় সব দূর করে দিব। ”
–: শুধু আজ রাতে কেন, আপনার কাছ থেকে সবসময় মিষ্টি আচরণ পেতে চাই।
আদনান হঠাৎ করে ওর ঠোট দিয়ে , আমার ঠোট ছুয়ে দিলো। আমি লজ্জ্বায় মুখ ডেকে ফেললাম।
ও আমার আরো অনেকটা কাছে এসে বললো,
” আজ রাত শুধু তোমার- আমার,
আজ রাতটা হবে, শুধুই ভালবাসার।
ওর তপ্ত নিঃশ্বাস, ওর এতোটা কাছে আসা, ওর এতোটা ভালবাসা, আমাকে ব্যাকুল করে ফেলেছে। পৃথিবীর সব সুখ যেন ওর বুকেই লুকিয়ে আছে।
সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here