ডাকপাড়ি পর্ব -৩+৪

#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৩
#আফনান লারা
________

ফারাজ চলে গেছে। মেয়েটার চোখের আড়ালে দূরের ঐ চায়ের দোকানে গিয়ে বসলো। একটুকরো কাগজ, কিছু পেন্সিল বের করে নিয়ে নিজের সবচেয়ে ভালো লাগা কাজটি শুরু করে। হ্যাঁ আঁকাআঁকিই তার সব চাইতে প্রিয় কাজ।
মেয়েটা একটু ডাকবাক্সের সামনে এসে, কি যেনো ভাবছে। নাহ, আর কোন সময় নষ্ট না করে ডাকবাক্সের ভেতরে হাত প্রবেশ করায়। লক্ষ্য চিঠি বের করে আনা। কিন্তু কিছু একটা অস্বস্তিও কাজ করছে তার মাঝে। অস্বস্তির কারণটা তার ছোট ছোট হাত। ডাকবাক্সের চিঠির প্রান্ত পযর্ন্ত তার হাত যাচ্ছে না।

‘এই মেয়ে!’

ধমক ভরা কণ্ঠটি শুনেই মেয়েটা মাথা উপরের দিকে তুলতে থাকে। কয়েকটি পা, পরনের জুতু, প্যান্ট, অতঃপর পোশাক। ভয় পেতে আর লোকগুলোর চেহারা পযর্ন্ত যেতে হয়নি তাকে। সে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে কিছু পুলিশ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঢোক গিলে ডাকবাক্স থেকে হাত বের করে রোবটের মত দাড়িয়ে থাকলো।

‘তুমি পাবলিক প্লেসে বসে ডাকবাক্সের চিঠির খেয়ানত করছো! এটা দন্ডনীয় অপরাধ!! হুক্কুর হক্কুর হক্কুর’

মেয়েটা ভয়ে থাকলেও মুখ থেকে বের হওয়া বিশ্রি শব্দে হেসে ফেলল, ‘হুক্কুর হুক্কুর মানে কি?’

‘চুপ !এটা কাশির আওয়াজ। আমার কাশির বিপুল সমস্যা আছে। পুরোনো কাশি বলে শুনতে হুক্কুর শুনা যায়। যাই হোক কথা ঘুরাবে না।
কথা ঘুরানো আমার পছন্দ না। তুমি যে এই অপরাধ করলে তোমাকে আমি এখন এরেস্ট করতেছি। জামিন ছাড়া বের হতে পারবে না।তোমার অভিভাবক থাকলে কল দাও”

মেয়েটা আঙ্গুল তুলে চায়ের দোকানের দিকে দেখালো। আঁকিবুকিতে ব্যস্ত থাকা ফারাজকে।

‘কে সে? তোমার মতন চোরাই কারবার তারও আছে নাকি?’

‘না। তবে উনাকে আমি চিনি, অনেক ভাল গান করেন আর একটা গম্ভীর টাইপের মানুষ।’

‘তো আমি কি করবো? মেয়ে বিয়ে দিব? তোমাকে বলছি তোমার অভিভাবক কে ডাকতে’

‘আরে আমি উনাকেই চিনি এই শহরে। আর কাউকে না’

পুলিশ মেয়েটির হাতে হাতকড়া পরিয়ে চললো ফারাজের কাছে।

ফারাজ যে মেয়েটির ছবি আঁকছিল তার চুল আঁকা শেষ সবেই। ঠোঁট আঁকবে, প্যাটার্নও রেডি।
ঠোঁট একটা চেহারার সবচাইতে মূল্যবান অংশ। সেটা আঁকতে আশেপাশে নিরবতা বিদ্যমান হতে হবে।কিন্তু চায়ের দোকানে চা বানানোর খটখট আওয়াজ সে নিরবতা পালনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।ফারাজ বিরক্ত হয়ে একবার চা বানানো দেখে নিলো।চা তার বড়ই পছন্দের পানীয়।কিন্তু এখন চায়ের শব্দটা অনেক অসহ্য লাগছে তার কাছে।বিরক্ত হতে হতে সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।

যাই হোক ঠোঁট আকঁতে হাত বসাবে এমন সময় পুলিশ এসে পড়ে। অমনি হুক্কুর হুক্কুর কাশির আওয়াজে তার মনযোগ সামনের দিকে গেলো। একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন ওর সামনে। ফারাজকে তাকাতে দেখে তিনি বললেন, ‘এই মেয়েটাকে চিনো?’

ফারাজ এবার তার পাশে দাঁড়ানো সেই মেয়েটিকে দেখলো। আরও বিরক্তির স্বরে উত্তর দিলো,’নাহ’

‘তবে ও যে বললো ও তোমায় চেনে?’

‘আরে আমি সেই সেই। চিনেননি আমায়? আমাকে যে ডাকবাক্সের খোঁজ দিলেন। ঐ যে ঝালমুড়িওয়ালার পেছনে। ভুলে গেলেন এত জলদি?’

‘ঠিকানা বলে দিলে মানুষকে চিনতে হয়?’

‘স্যার বিশ্বাস করুন, এই লোকটা আমাকে চিনে।’

‘দুঃখিত। আমি আপনাকে চিনি না’

পুলিশ এবার মেয়েটার হাতকড়া টেনে যেতে যেতে বললো, ‘এবার এমন কোনো অভিভাবকের নাম বলো যে এই শহরে থাকে। পথঘাটের যাকে তাকে নিজের চেনাজানা বলে চাপিয়ে দেবেনা’

মেয়েটি হাত ছাড়িয়ে বললো,’আশ্চর্য! কেউ না থাকলে আমি কি করে বলবো এই শহরে আমার কেউ আছে।আমাকে চেনার মতন যিনি ছিলেন তাকে তো দেখিয়েই দিলাম’

‘উনি তো অস্বীকার করছেন,তবে কি করবো এখন?’

ফারাজ ওদের চলে যাওয়া দেখে ব্যাগপত্র গুছিয়ে আবার পার্কের দিকে চলে গেছে।
ঠোঁট আঁকা শেষ সুন্দর ভাবে।এইবার সবচাইতে পছন্দের অংশ চোখ আঁকবে সে। মুখে হাসি ফুটিয়ে ব্রু আঁকছে ফারাজ, তখনই মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়ালো।কোমড়ে হাত রেখে বললো,’আপনি মানুষ নাকি এলিয়েন?এলিয়েনদের মাঝেও একতা বোধ আছে,কোনো এলিয়েন বিপদে পড়লে গুষ্টিসমেত বাঁচাতে আসে।”কয়ি মিল গেয়া” সিনেমাতে দেখেছি।আপনি তো এলিয়েন ও না।উদ্ভট একটা মানুষ!আমি বিপদে পড়েছি,আমাকে বাঁচানো কি আপনার ধর্ম না?’

‘না ধর্ম না।আপনার দায়িত্ব নিই নাই আমি।জামাই রাখেনা বউয়ের খোঁজ আর আমি রাখবো অচেনা একটা মেয়ের খোঁজ।দিনেদুপুরে মদ খেয়ে বেরিয়েছেন?ডেট ওভার মদ?’

মেয়েটি রাগে কটমট করতে করতে ফারাজের খাতাটা টেনে আঁকা ছবিটার পৃষ্ঠা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো।ফারাজ কিছুক্ষণ ছেঁড়া টুকরো গুলোর দিকে চেয়ে ছিলো।তারপর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো,’নিজের আঁকা বাজে একটা ছবি ছিঁড়ার সাহস পাইনা।ধন্যবাদ এটা ছিঁড়ে ফেলার জন্য।এমনিতেও এটা গ্রহণযোগ্য ছিলনা’

মেয়েটি আরও রেগে কাগজের টুকরো গুলোর উপর উঠে লাফালাফি করলো কিছুক্ষণ।ফারাজ অন্য একটা পেপার বের করে আঁকা শুরু করেছে নতুন করে।

‘এই মেয়ে!হুক্কুর হুক্কুর!তুমি পালিয়ে কত বড় ভুল করেছো সেটা জানো?আমি তোমায় এখনও জেলখানায় নিলাম না তার আগেই পালিয়েছো।এটা মস্ত বড় অপরাধ করেছো।কাল সকাল ছাড়া তোমার জামিন পাইবানা।’

কথাটা বলে পুলিশ ফারাজের সামনে দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে গেছে।ফারাজ আগের মতন মনযোগ দিয়ে ছবি আঁকছে।
——-
সারথি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রেলিং ছুঁয়ে চোখের পানি ফেলছিল।সজীবের আসার কথা ছিল এক মাস আগেই।কেন যে এলোনা।এই এক মাসে সে একবার ফোন করেছিল শুধু।বিয়ের পর মানুষ এমন বদলে যায়?যদি তার চোখই যত সমস্যার মূল কারণ ছিল তবে এক ঘর মানুষের সামনে কেন সজীব বলেছিল তার আমাকে পছন্দ হয়েছে?কেন সে একটা অন্ধ মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ে করে এনে দিনের পর দিন অবহেলায় ফেলে রেখেছে?কি দোষ করেছিলাম আমি সজীব?
আমি আপনাকে ভালেবাসি,অনেক বেশি!কিন্তু আপনি কেন বোঝেননা?
মাসে মাসে দশ/ বারোটা নতুন শাড়ী,প্রতিদিন মুরগী,পোলাও পাওয়ার চাহিদা থাকেনা আমার।আমার শুধু আপনার অভাব।শত চাহিদা আপনাকে ঘিরে!
যেগুলো আপনি আমায় আজ পর্যন্ত দেননি।কেন সজীব!

‘আপনার সজীব কি আকাশে থাকে?’

পাশ থেকে আসা আনাফের গলা শুনে সারথি চুপ করে গেলো।শব্দটা ডান পাশ থেকে এসেছে।সেদিকে ফিরে সারথি চোখ নামিয়ে বললো,’আপনার বারান্দা বুঝি এপাশে?’

‘আমার মায়ের রুম এটা।বারান্দা দেখতে এলাম,এখন বারান্দা বিলাসের সাথে সাথে সুন্দরীতমা বিলাস ও হয়ে গেলো’

‘আমি সুন্দর?’

‘অসম্ভব ‘

সারথি তাচ্ছিল্য করে হাসছে।আনাফ ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছেনা,কেন যেন ভীষণ লজ্জা করে।যদিও সে তাকালে সারথি দেখবেনা।তাও লজ্জা করে।অন্ধদের মাঝে মাঝে দেখলে মনে হয় তারা চোখে দেখতে পায়।পৃথিবীর মানুষের রুপ সইতে না পেরে অন্ধ হবার নাটক করে।
আনাফ চুপ করে আছে দেখে সারথি চলে যাচ্ছিল তখনই ওকে আনাফ বললো,’সজীব ভাইয়া কবে আসবেন?’

সারথি থেমে গেলো।আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেলো।আনাফ ওর চলে যাওয়া দেখছে।মেয়েটাকে দেখলে মনে হয় তার সব রহস্যে ঘেরা।রহস্য দেখলে সেটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে জানতে ইচ্ছে করে ওর।তবে যা বোঝা গেলো এই মেয়ে আর পাঁচজনের মতন না।কথা বলা তার বড়ই অপছন্দ কিংবা এড়িয়ে চলা!
অন্য কারোর থেকে এড়িয়ে চলা পেয়ে মানুষ সামনের মানুষটাকেই এড়িয়ে চলে।দুনিয়ায় সব বিপরীত কার্যকলাপ!’

চলবে♥#ডাকপাড়ি
#পর্ব_৪
#আফনান_লারা
——–
‘আমি থোমারে থুবি ভালাবাছি, বিসসসসাস করো মতিন’

‘এটা সম্ভব না মিনু’

‘ক্যান?’

‘কারণ বিয়ার সময় হুজুর কবুল বলতে কইলে তুমি কইবা “থবুল’

‘একি থো!’

‘না একি না।আগে উচ্চারণ ঠিক করো।আমি হলাম শিক্ষিত চাকর।আমার লগে কি যার তার জুটি বাঁধবে?’

মিনু ছলছল চোখে চেয়ে থেকে বললো,’আমিও কম চিক্কিত না।আমার যথেষ্ট চিক্কা আছে।কেলাস ১ পাশ আমি’

মতিন মাথায় হাত দিয়ে বললো,’আর আমি ফাইভ পাশ।তুমি অশিক্ষিত।যাই হোক,ওসব সমস্যা না।আমি হাবিজাবি বাড়ির একমাত্র চাকর।তুমি আমারে বিয়া করলে তোমার আমার সাথে রান্নার কাজে হাত দিতে হইবো।সেখানে আরেকটা সমস্যা হলো তুমি নুন চিনির তফাৎই জানোনা।চিনির জায়গায় নুন দাও,নুনের জায়গায় চিনি।আমারে তো নুন দিয়া শরবত বানাই খাওয়াইছিলা।ছেঃ!!এখনও মনে পড়লে মুখটা লবণাক্ত হইয়া আসে’
——-
পুলিশ অফিসার মেয়েটাকে রেখে চলে গেছেন একটা ফাইলের কাজে।মেয়েটা চেয়ারে বসে এদিক সেদিক দেখছিল তখন একজন মধ্যবয়স্ক কন্সটেবল এসে দাঁড়ালো ওর পাশে।মুখে এক গাদা পান পুরে চিবিয়ে যাচ্ছেন আর মেয়েটাকে দেখছেন।মাঝে মাঝে ঠোঁটের কোণা দিয়ে পানের রস বের হয়ে আসা ধরে,তিনি আবার আঙ্গুল দিয়ে রসটাকে ভেতরে পুরে দেন।মেয়েটা ওনার এমন খাচ্চর স্বভাব দেখে ঠিকটাক হয়ে বসে থাকলো।

‘কি কেস?হোটেলে বয়ফ্রেন্ডের সাথে থাকতে গিয়ে ধরা পড়েছো বুঝি?আরে হয় হয়!এমন হয়।ঐ যে দেখছো জেলের ভেতর তিনটা মেয়ে?ওরাও তোমার মতন ধরা পড়েছে।নাইট স্ট্যান্ড হোটেলে মন্ত্রীর ছেলের সাথে ধরা পড়েছে।ছেলে তো জামিন দিয়ে বেরিয়ে গেছে আধ ঘন্টার মধ্যেই।কিন্তু ওদের কে বের করবে?হাহাহাহা। ‘

মেয়েটা ব্র‍ু কুঁচকে বললো,’আমি ওসবের জন্য আসিনি এখানে’

‘তবে কি ব্যাপার?চুরি করেছো নাকি?কি চুরি করছো?দেখে তো ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হয়’।নাকি খুন!!অবশ্য খুন হলে স্যার চেয়ারে বসাতো না তোমাকে।তবে কি করছো?ডাকাতি করছো?’

পুলিশ অফিসার আনিসুর হক এসে বসলেন মেয়েটার সামনে বরাবর।একটা ফাইল খুলে বললেন,’তোমার নাম বলো’

‘সামান্য ডাকবাক্সে হাত ঢুকানোর জন্য এত বড় শাস্তি?আবার ফাইল ও খুলছেন?’

‘এ শহরে অপরাধীর অভাব,ঘুষের ও অভাব।পাকাপোক্ত চোর পেয়ে হাতছাড়া কেন করবো ম্যাডাম?’

মেয়েটা দাঁত খিঁচিয়ে বললো,’তবে যদি তাই হয়, বলে রাখি আমার কাছে একটা টাকা ও থাকেনা।দিন আনি দিন খাই।’

‘মিথ্যে কথা বন্ধ করে অভিভাবক পাঠাও, দশ হাজার টাকা আনতে বলো তবেই ছাড়া পাবে।নাহলে ঐ যে দেখছো,পতিতা তিনটা।ওদের সাথে বসিয়ে রাখবো।আচ্ছা আগে নাম বলো’

মেয়েটা চুপ করে থাকলো।দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অনেক ভেবে
ব্যাগ হাতিয়ে ফোন বের করে একটু দূরে গেলো কথা বলতে।
——
‘হ্যালো প্রেমা,আমি বলছি’

‘কিরে?হঠাৎ এসময়ে।কাজে যাসনি?’

‘না আসলে বিরাট বড় একটা ফ্যাসাদে পড়ে গেছি।একটা ঘুষখোর পুলিশের পাল্লায় পড়েছি।বাঁচা প্লিজ’

‘কি করে বাঁচাবো?’

‘তিশাকে নিয়ে আয়।ও থাকলে হয়ত বেঁচে যাবো’

‘তিশা জীবনেও পুলিশ স্টেশন আসবেনা।ওর ভয় তো পুলিশকে নিয়েই’

‘কিছু একটা বল, রাজি করানা প্লিজ প্লিজ!১০হাজার টাকা চাইতেছে।আমার কাছে তো দশ টাকার নোট ও নেই।কিছু একটা করনা প্রেমা’
——–
আজ কেন যেন ছবিতে মন বসাতে পারছেনা ফারাজ।এমনিতে ছবি আঁকা চাইলেই হয়না।গভীর মনযোগ দিতে হয়,তবুও কেন যে আজ মনযোগ বসছেনা।সব দোষ ঐ উড়ে এসে জুড়ে বসা মেয়েটার।কি দরকার একটা অচেনা,অপরিচিত মানুষকে ডিস্টার্ব করার।তার জন্য কি দুনিয়ায়ই কেবল আমিই আছি?আর কেউ নেই?সব কিছুতে আমাকে জড়ানো।সারথির বাসায় ও যেতে ইচ্ছে করেনা।গেলেই জামাই আদর শুরু করে।আরেহ আমি সাধারণ, যাকে বলে অতি সাধারণ।মোরগ,পোলাও আমার ভাল্লাগেনা।আমি খাই ধনেপাতার ভর্তা,আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত।এগুলো খেয়ে খেয়ে সেই আঠারো বয়স থেকে এখন ছাব্বিশে পা রেখেছি।দু মাস পর সাতাশ হবে।মুখে আমার বড়লোকি খাবার রচেনা।কে বোঝাবে সারথিকে।নিজে তো খায়না।সব আমাকে খাইয়ে শান্তি পায়।বড়লোকেরা কি জানে এই খাবারগুলোর স্বাদ।

‘ভাইয়া!!’

ফারাজ ভাবনা থেকে বের হয়ে সামনে চেয়ে দেখলো একটা মেয়ে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।বয়স ছয় /সাত বছর হবে।মেয়েটাকে ফারাজ চিনে।এখানে অনেকবার দেখেছে।ফারাজ দীর্ঘ এক বছর ধরে আসছে এই পার্কে।অথচ মেয়েটা আজ পর্যন্ত ওর ধারের কাছেও ঘেঁষেনি।সে শুধু ঘেঁষেছে যাদের পোশাক দামী তাদের পিছু।ফারাজ হালকা পাতলা পাঞ্জাবি পরে সারাদিন পার্কে বসে থাকে,কোনো কাজে যায়না বলে তার কাছে ওকে গরীব মনে হয়।কে জানে কি মনে হয়।তবে ফারাজের এটাই ধারণা।
তবে আজ আসার কারণটা কি!তাই সে আগে পরিচয়টা নিয়ে নিচ্ছে।

‘তোমার নাম কি?’

‘অন্বেষা’

‘কঠিন নাম।কে রাখলো?’

‘একজন দিয়েছিল।’

‘তোমার মা বাবা দেয়নি?’

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে” না “জানালো।ফারাজ এবার ওর হাতে কাঠগোলাপের মালা দেখে বললো,’গন্ধ আছে এমন ফুল বিক্রি করবা।শুধু সুন্দর হলেই হয়না,গন্ধ ও থাকতে হয়।সুন্দরের ভাত নাই।বুঝলে?’

‘কেন ভাত নাই?’

‘কারণ তুমিও সুন্দর,তোমার ভাত আছে?দিনে কয় বেলা খেতে পাও?’

মেয়েটা মাথা নিচু করে ফেললো।ফারাজ তখন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,’আমার পকেটে টাকা নেই।বোনের বাসায় গেলে ও দিবে।এখন আমি ফুল কিনতে পারবোনা।’

‘আমি বেচতে আসিনি।একটা কথা বলতে এসেছি।ঐ যে কিছুক্ষণ আগে এক আপাকে পুলিশে নিয়ে গেলোনা?’

‘হুম।কি হয়েছে তাতে?’

‘আপনি ওনারে বাঁচালেন না কেন?’

‘আমি কোনো সিনেমার নায়ক না।আর আমি ওনার কিছু হইনা,তবে তাকে কেন বাঁচাবো?’

‘আপনে তো আমারেও চিনেননা।তবে ঐ বেঞ্চিতে একটা পাউরুটির প্যাকেট প্রতিদিন কেন রেখে যান?কারণ আপনি জানেন ওটাতে আমি বসি।আমাকেও তো চিনেন না, তাহলে আমার রোজ সকালের খাবারের ব্যবস্থা কেন করেন?’

ফারাজ গম্ভীর চোখে চেয়ে আছে মেয়েটার দিকে।কথা বলার ভাষা নেই।কি করে যে ধরে ফেললো মেয়েটা।অথচ ফারাজ খুব ভোরে এসে প্যাকেটটা রেখে যেতো,যখন মেয়েটা বেঞ্চির নিচে চাদর মুড়িয়ে ঘুমন্ত থাকতো।এখন জবাব তো দিতেই হবে।তাই দম ফেলে বললো,’তোমার দুনিয়ায় কেউ নেই বলে তোমার এক বেলার দায়িত্ব নিয়েছি।’

মেয়েটা হেসে মালা গুছিয়ে যেতে যেতে বললো,’খোঁজ নিয়ে দেখেন ঐ আপারও কেউ নাই।কেউ থাকলে আপনার কাছে ছুটে আসতো না বার বার’

কথাটা ফারাজের বুকে গিয়ে আঘাত হানলো।পথশিশুরা মাঝে মাঝে খুব কড়া কথা বলে।একেবারে মাংশপেশি ছেদ করে ভেতরে গিয়ে লাগে।
সেই ছবিটার সবে চুল এঁকেছিল ফারাজ।রাগের বশে সেটা ছিঁড়ে ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করলো।তাতে কিছু একটা লিখলো।লেখাটা হয়ত কারোর ঠিকানা।এরপর চিঠির জন্য একটা পৃষ্ঠা নিয়ে লিখতে বসলো।কাউকে সে চিঠি দিবে।
———–
‘নাম বলবে নাকি ঠাটিয়ে এক চড় দেবো?’

মেয়েটা পানির গ্লাস টা রেখে টেবিলে হাত রেখে বললো,’পূূর্ণতা’

‘আগে পরে কিছু নেই?তুমি তো আচ্ছা বেয়াদব মেয়ে।বড়দের সাথে ঠিক করে কথা বলাও শেখোনি।দেখে তো কচি খুকি মনে হয় না।কমপক্ষে তোমার বয়স তেইশ/ চব্বিশ হবে।একটা কথাও সুন্দর করে বলতেছোনা’

‘আমি ঘুষখোরদের সম্মান দিই না’

‘তবে তোমার বাবা মা আসা পর্যন্ত পতিতাগুলোর সাথে বসো যাও।তোমার শাস্তি এটা।রবিনন্দন ওকে নিয়ে যাও’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here