গল্পঃ- ডাক্তার বর
পার্টঃ-…. ০৩
.
.
.
” রুদ্র বর্ষার কাছে যেতেই বর্ষা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। বর্ষার কানের কাছে ফিসফিসয়ে বললো;
– এমন দিনে বৃষ্টিতে কারো সাথে ভিজতে ভীষন ইচ্ছে ছিল।
” বর্ষাকে কথা গুলো বলেই সরে গেলে। বর্ষা কিছুটা লজ্জায় চোখ থেকে হাত সরাতে পারছে না। মনে করেছিলো হয়তো অন্য কিছু তবে নাহ। ভাবনার জগতে ছেদ পরে গেলো হঠাৎ করেই রুদ্র গাড়ির হর্ণ দিতেই । বর্ষা চোখ খোলে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে অপলক দৃষ্টিতে এতোক্ষণ যেনো কল্পনার জগতে হারিয়ে গেলো।
” বর্ষা বৃষ্টির তালে তালে গান গেয়ে যাচ্ছে হঠাৎ করেই রুদ্র থামিয়ে দিয়ে একগুচ্ছ নূপুর পায়ে পড়ে দিলো।
বর্ষার সমস্ত কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রুদ্র বলে উঠলো;
– এই যে মিস,আপনার বাসার সামনে এসে পড়েছি। এখন নামতে পারেন।
” বর্ষা কথা শুনেই রুদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলো। রুদ্রর দিকে সারাটি রাস্তয় তাকিয়ে থাকার ফলে বুঝতেই পারে নি কখনো যে বাসায় পৌঁছে গেলো। সেই সাথে বাহিরের বৃষ্টিতে যেনো বেশ রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলো। রুদ্রর চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সেই ডাকে ভীষণ সাড়া দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। যেনো সেই চোখের মাঝেই ভালবাসা টুকু খুঁজে ফিরছিলো। ভালবাসার তৃষ্ণায় আজ যেনো পিপাসিত হৃদয়।
– এই যে কোথায় হারিয়ে গেলেন?? বৃষ্টি নেই থেমে গেছে এখন বাসায় যেতে পারেন।
” রুদ্রর ডাকে শুনেই চোখের পলক পড়ে। কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ গুলো সরিয়ে নিলো। রুদ্র বাসার কথা বলতেই মনে মনে অসংখ্য বকা দিলো।
” অসভ্য, কু**, বান্দর, বিড়াল,হনুমান….এতো তাড়িয়ে দেওয়ার কি আছে?? যেনো মাথায় চড়ে বসে আছি। একদিন মাথায় নাহ ওই হৃদয়ে চড়ে বসবো সারা জীবনের জন্য দেখবো কেমন করে সরান। ওই হৃদয়ের ভাগ অন্য কাউকে নিতে দিবো না।
” বর্ষা গাড়ি থেকে নেমেই মুখে ভেংচি কেটে বললো;
– থেংকস……
– কেনো?
– বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
” বর্ষার কথা শুনেই রুদ্র বললো;
– এমন ভাবে কেউ মুখ ভেংচি কেটে থেংকস দেয় জানা ছিলো না। বাসার সামনে অথচ নিজের হাতে এক কাপ চা করে খাওয়ানোর কথাও বললো না।
– এই যে মিস্টার……
– জানি জানি কি বলবেন।
” রুদ্রর কথা শুনেই বর্ষা কিছুটা অবাক বিস্ময়ে বললো;
– মিস্টার কি বলবো?
” বর্ষা কিছুটা ঝুঁকেই রুদ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো। বর্ষার চোখের দিকে তাকিয়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলে। ওই চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না দু’জনের বেশকিছু সময় চোখাচোখি হয়ে গেলো।
” রুদ্র চোখ নামিয়ে বললো;
– আপনি যে চা তৈরি করতে পারেন না সেটাই বলবেন।
– আপনি কে বললো?
– কেউ বলতে হয় বুঝি?
” বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে। বর্ষা যে আসলেই চা টুকু করতেও জানে না সেটা জানলো কি করে ঠিক মাথায় আসছে না।
বর্ষার অবাক ভাবনার মাঝেই বলে উঠলো;
– আচ্ছা, অন্যদিন না হয় চায়ের কথা বললেন তবে….
– তবে কি…???
– আপনাকে কিন্তু আজ অনেক সুন্দর লাগছে। নীল শাড়ি আর নীল চুড়ির অপূর্ব সুন্দর মানাবে।
“বর্ষাকে কথা গুলো বলেই গাড়ি টান দিলো। বর্ষা আর কোনো কথা বলার সুযোগ না পেলেও পিছন থেকে বলে যেতে থাকলো;
– কু** অসভ্য শয়তান………
” বর্ষা বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রুদ্র কিছুটা দূরে গেয়েই গাড়ি ব্রেক করে পিছনে ফিরে তাকালো। বর্ষা যেনো মনের সাড়া পেয়ে গেলো। দু’জনেই একসাথে হেঁসে উঠলো। বর্ষাকে হাত বাড়িয়ে বিদায় দিতেই চলে গেলো। বর্ষাও রুদ্র কে হাত বাড়িয়ে বিদায় দিলো।
আজ যেনো বর্ষার খুশির দিন। গুনগুন গান গেয়ে রুমে যেতে থাকে। বর্ষা তাঁর মনের মতোই মানুষ পেয়ে গেলো। ভাবতেই পারেনি এতো তাড়াতাড়ি খুব সহজেই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দিবে। তবে সেদিন কেনো না করেছিলো?
বর্ষার মনের মাঝে প্রশ্ন আসতেই তা দূরে সরিয়ে দিলো। হয়তো সেদিন এমনি বলেছিলো, লজ্জায় বলতে পারে নি। মনের খুশিতে আত্নহারা হয়ে যেনো সবকিছুই বেমানান ভুলে গেলো।
“মায়ের নজর কখনোই এড়িয়ে যেতে পারে না। হঠাৎ করেই মেয়ের এতো পরিবর্তন দেখে বেশ অবাক হলো। দুপুর বেলায় তো অন্য রকম ছিলো তাহলে কি?
” বর্ষার আম্মু দুটানায় থেকে বর্ষাকে ডাক দিয়েই বললো;
– কি ব্যাপার মামুনি আজ এতো হাসি খুশি যে…..
” বর্ষা তাঁর মায়ের ডাক শুনে সম্মতি ফিরে পেয়ে কিছুটা লজ্জায় মাকে গলায় গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো;
– মামুনি, আজ আমি অনেক খুশি।
– কেনো? সেটা তো বলবা?
– উহ! নো…সারপ্রাইজ দিবো।
” বর্ষা কথা গুলো বলেই মায়ের গালে চুমু দিয়ে রুমে চলে গেলো। মেয়ের কান্ড দেখে থ হয়ে গেলো। কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করেই কি এমন হলো যে এমন ভাবে হাসি খুশি।আর কি সারপ্রাইজ দিবে?
” বর্ষার আম্মু অনেক চেষ্টা করেও বুঝতে পারলো না। মনের মাঝে দুটানা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালো। একদিকে মেয়ের খুশিতে আত্মাহারা কেনো না অনেক দিন পর যেনো মেয়ের মুখে হাসি ফুটতে দেখলো অন্য দিকে কি সারপ্রাইজ সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
” বর্ষাকে তাঁর আম্মু বেশ কয়েক বার খাবার খেতে ডাকলেও আসেনি। রুদ্রর ছবি নিয়েই সারাক্ষণ, সেই হাসি মাখা ছবিটা দেখতে থাকে। অনেক চেষ্টায় রুদ্রর ছবি সংগ্রহ করেছে। সেটাও আবার জুইঁয়ের মাধ্যমে, রুদ্রর অনেক খবরই জুইঁ তাকে দিয়ে থাকে।
বর্ষার হৃদয়ে অনেক রকম কল্পনা হৃদয়ের মাঝে উড়ে বেড়ায়। সারাটি রাতের মাঝেও একবার ঘুম আসে নি। যেনো বার বারই এসে তাকে দেখতে থাকে ঘুমের মাঝে। কাছে এসেও আবার দূরে যায় যেনো। বর্ষা অপেক্ষায় থাকে আবার কখন সকাল হবে। কাল সকাল সকাল রুদ্র কে দেখতে যাবে।
” সকাল বেলায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে। এতো বেলা পর্যন্ত কখনোই মেয়েকে ঘুমাতে দেখেনি তবে অনেক বেলা হয়ে গেলেও যখন আসলো না তখন মেয়েকে গিয়ে ডাক দিলেন। বর্ষা কখন যে শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়লো কিছুই বুঝতে পারলো না। তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। সকালের নাস্তাও খেয়ে যায়নি দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে।
” রুদ্রকে চেম্বারে না পেয়ে একজনের কাছে জিজ্ঞেসা করতেই ক্যান্টিনে দেখিয়ে দিলো। সেখানেই গিয়ে বর্ষা রেগে অগ্নিশর্মা রুপ ধারণ করে ফেললো।
” বর্ষাকে বলে ছিলো নীল শাড়ি আর নীল চুরি পড়ে অসম্ভব সুন্দর লাগবে। বর্ষা রুদ্রর জন্য সেজে এসেছে। তবে সে এসে কি দেখছে?
” শাড়ি পড়ে রুদ্রর সামনে বসে আছে। দু’জনেই কফি হাতে একসাথে হেঁসে উঠছে। বর্ষার চোখ বেয়ে যেনো পানি বেড়িয়ে আসতে চাইছে। নিজেকে রুখতে না পেরে সরাসরি রুদ্রর সামনে গিয়ে বললো;
– who is she??
” হঠাৎ করেই বর্ষার কথায় চমকে উঠে। কথার খেই হারিয়ে বর্ষার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বর্ষার চোখে অভিমানী আর চোখের কোণে পানি গুলো যেনো পানি জমে আছে। এই মূহুর্তে যেনো ভীষণ সুন্দর লাগছে। রুদ্রর প্রিয় রং যে নীল, আর সেই প্রিয় রংয়ের শাড়ি আর নীল চুড়িঁ।
” রুদ্র কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই বর্ষা বলে উঠলো;
– কে ওনি আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
” বর্ষার রাগ আর অভিমান দেখে আরেকটু রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বললো;-
– She is my………
বর্ষা ঠিক তখনি রুদ্র কলার ধরে বললো;-
– কে সে? তোর ভালবাসা? কখনোই এ হৃদয়ে অন্য কাউকে জায়গা দিতে পারবি না। এই খানে শুধুই আমার বসবাস থাকবে।
” বর্ষার কথা শুনেই সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষণ নীলিমাও কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। যখনই রুদ্রর সাথে সিনক্রিয়েট ব্যবহার করতে দেখলো নিজেকে সামলে নিয়ে নীলিমা রুখে দাঁড়িয়ে বললো;
– এই মেয়ে কে তুমি? আর কি করে সাহস হলো রুদ্রর কলার ধরার??
– আপনি কে আমাদের দুজনের মাঝে কথা বলার?
” বর্ষা অনেক টা রাগী গলায় জানতে চাইলো। নীলিমাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই। আর ছাড়বেই কি করে? অনেক দিন ধরেই সে যে রুদ্র কে বেশ ভালো করেই জানে।
– আমি কে মানে? সেটা রুদ্র কেই জিজ্ঞেসা করেন?
“নীলিমার কথা শুনেই রুদ্র দিকে তাকিয়ে বর্ষা বললো;
– কে ওনি?
– সেটা কি জানা খুব দরকার?
– হে…..
” বর্ষার রাগী গলায় জানতে চাইলে রুদ্র বললো;
– প্রিয় জন কেউ….
– তুই থাক তোর প্রিয়জননিয়ে। আর কখনো আমার সাথে কথা বলবি না।
” রুদ্র কে কথা গুলো বলেই বর্ষা রাগে চলে গেলো। রুদ্র কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না। বর্ষার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
” রুদ্র দিকে তাকিয়ে নীলিমা বললো;
– কে ওনি? আর কেনোই তোমার সাথে এমন করলো?
” নীলিমার কথা শুনে সবকিছুই খোলে বললো। রুদ্রর প্রথম ভাললাগা কখন ভালবাসায় পরিণতি হয়েছে বুঝতেই পারেনি।
– তোর কেমন ভালবাসার মানুষ সে তো বুঝতেই পারছি। বাহবা এতে রাগী আর জেদি মেয়ে।
রুদ্রর ভালবাসার গল্প টা নীলিমাও জানে। রুদ্রর কাছেই জানার সৌভাগ্য হয়েছিলো। তবে এমন ভবাে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি। এই নিয়ে অবশ্য রুদ্রকে অনেক কথাই বলেছে।
” নীলিমার কথা গুলো শুনেও চুপ করে ছিলো রুদ্র। কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলো না। কাকে কি বলবে? দুজন মানুষ হলেও দুজনের জায়গায় গুরুত্ব যে সমান। বর্ষা কান্না করেই চোখের পানি গুলো মুছে সেখান থেকে চলে যায়।
” রুদ্র বর্ষাকে ডাক দিতে গেলে নীলিমা বাঁধা দিয়ে বললো;
– কে ডাকছিস?
– ওর সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি রে?
” রুদ্রর কথা শুনেই নীলিমা রেগে গিয়ে বললো;
– তে কেমন ব্যবহার করবো? তকে ভালবাসে বলেই যা ইচ্ছে তাই করবে? ন্যূনতম শ্রদ্ধা টুকু নেই? আর বিশ্বাসের কথা কি বলবো?
” নীলিমার কথা শুনেই চুপ হয়ে যায় রুদ্র। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। কি বলবে? আজ যে বর্ষা তাঁর সাথে এমন ব্যবহার করবে ঠিক জানা ছিলো না। আর কোনো কিছু না জেনেই কারো সম্পর্কে মন্তব্য করা একদম পছন্দ করে না রুদ্র।
” বর্ষাকে কান্না করে আসতে দেখে বর্ষার মায়ের বুকটা ধুকধুক করে উঠে। কি হয়েছে? সকাল বেলায় এতো হাসি খুশি গেলো আর এখন কি-না কান্না করে বাসায় চলে আসলো। অনেক চেষ্টা করেও দরজা খোলতে পারলো না। বর্ষার কাছ থেকে না পেয়ে বর্ষার বান্ধবী জুইঁকে ফোন করলো। হয়তো জুইঁ কিছু জানে কেনো না সকাল বেলায় জুইঁয়ের সাথে দেখা করবে বলে গিয়েছে।
” বেশ কয়েক বার ফোন হতেই জুইঁকে পেলো। জুইঁ সবকিছুই শোনে টেনশন না করার জন্য বললো। জুইঁ ঠিক বুঝতে পারছে না কেনো বর্ষা এমন ভাবে কান্না করছে?
” বর্ষার আম্মুর ফোন পেয়ে ছুটে গেলো হাসপাতালে। রুদ্রর চেম্বারে সোজা গিয়ে রুদ্র কে পেয়েই বললো;-
– ভাইয়া, কি ব্যাপার? তুই বর্ষাকে কান্না করালি কেনো??
” হঠাৎ করেই ছোট বোনকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। আর অবাক হবেই না কেনো? সবে মাত্র নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে আর তাঁর আপন ছোট বোন হলো জুইঁ। তবে সেটা নেহাতেই কম মানুষের জানা শোনা। এই প্রথম জুইঁ তার চেম্বারে এসেছে, বোনের জন্য কি করবে ঠিক বুক উঠতে পারছে না।
” জুইঁকে দেখেই রুদ্র বললো;
– আরে তুই? কখন আসলি? বস বস……
” জুইঁকে দেখাই হাতের কাজ ফেলে রেখে কাছে দৌড়ে গেলো। নিজের হাতে চেয়ার মুছে নিচের চেয়ার টায় বসিয়ে দিলো। জুইঁ তখনো কিছুটা রেগে আছে।
” ভাইয়ের দিকে রেগে তাকিয়ে বললো;
– আমি জানতে চাচ্ছি কেনো আমার বান্ধবীকে কান্না করলো??
” জুইঁয়ের কথা শুনেই রুদ্র বললো;
– বাহরে তোর বান্ধবী না জেনে শুনে কান্না করলি আমার কি দোষ?
– মানে?
” জুইঁয়ের কথা শুনেই রুদ্র তখন বলতে শুরু করলো;
– তুই তো জানিস আসিফ ভাইয়ের বোন আমার কলিগের সাথে বিয়ে ঠিক। সকাল বেলায় হাসপাতালে আসার পর দেখা হলো। হাতে তেমন কোনো কাজ না থাকায় দুজনে একসাথে ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছি তখনই বর্ষার আবির্ভাব আর কোনো কিছু না জেনেই সবার সামনে বাজে ব্যবহার শুরু করলো।
” জুইঁকে একে একে সব কথা খোলে বললো। রুদ্র সব কথা শুনে বেশকিছু তাকিয়ে থেকে বললো;
– তুই তো জানিস বর্ষা কেমন রাগী আর অভিমানী মেয়ে। সব জেনে শুনেও তুই কেনো কান্না করালি? সত্যি টা বললি না কেনো?
” জুইঁয়ের কথা শুনেই বললো;
– বাহ’রে আমার থেকেও দেখি বান্ধবীর জন্য দরদ বেশি। তোর বান্ধবীর অহংকার বেশি তাই কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করার নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছি। যেনো এতো অহংকার না থাকে। বুঝলি…
– ভাইয়া, আমি তরে খুন করে ফেলবো আমার বান্ধবীর নামে আর একটা কথা বললে।
– আচ্ছা, বলবো না। তা বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি? কি খাবেন? চা না কফি…..
” জুইঁ রেগে গিয়ে রুদ্রর গলায় ধরতে গেলেই রুদ্র কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলো। রুদ্র বেশ ভালো করেই জানে তাঁর পাগলী বোন টাকে রাগালে চুল গুলো টেনে ছিড়ে ফেলবো। না রাগালেই সব থেকে বেশি ভালো এই মূহুর্তে।
” জুইঁ চেয়ার নিজের ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যেতে যেতে বললো;
– কিছুই খাবো না। তবে তাড়াতাড়ি বান্ধবী কে ভাবী হিসেবে যেনো পাই তাঁর ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।
– এই শোন……
” কে শোনে কার কথা। জুইঁ বেরিয়ে গেলো, রুদ্র ডাক দিলেও পিছনে ফিরে তাকালো না। বড্ড পাগলী তাঁর জন্যই যে তাঁর ভালবাসাকে ফিরে পেতে যাচ্ছে। না জানি বাসায় গিয়ে করে করে বসে।
” ওহ! তাদের পরিচয় তে দেওয়া হয়নি রুদ্র আর জুইঁ দু’জনেই আপন ভাইবোন। যদিও রুদ্র হোস্টলে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। একদিন বর্ষাকে দেখে ভীষন ভালো লাগে তখন ভালবাসার কথা বলতে না পারলেও গিফট পাঠিয়ে ছিলো। বর্ষা বেশ অহংকার করেই তা ফিরিয়ে দিয়েছিলো। বর্ষার কথা শুনে আর এগিয়ে যায় নি। তবে যখনই পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে জয়েন করলো তখনি বিয়ের কথা বললো। যখন রুদ্র রাজি হচ্ছে না তখনই রুদ্রর কাছে বর্ষার ছবি দেখতে পেয়ে জানতে চাইলো জুইঁ।
” জুইঁয়ের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে জানতে চাইলো। যখন জুইঁয়ের বান্ধবী শুনলো তখন জুইঁ সবকিছুই ব্যবস্থা করলো। আর ঠিক তখন থেকেই যেনো বর্ষা অন্য রকম হয়ে গেলো। রুদ্র কে ছাড়া যেনো কিছুই বুঝতে পারে না।
– এই যে আপনার চা……
” রুদ্র বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে টিভি দেখতে দেখতে চায়ের কথা বলতেই কেউ একজন চা এগিয়ে দিলো। রুদ্র কোনো কিছু না ভেবেই চায়ের কাপ হাতে নিয়ে টিভিতে মনোযোগ দিলো। তখনই বলে উঠলো;
– চা খেয়ে বলেন তে আমার হাতের চা চলবে কি-না?
” রুদ্র কন্ঠ শুনেই চমকে উঠলো। টিভির থেকে নজর সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখেই চমকে ওঠে। কোনো রকমে ডুক গিলে বললো;
– আ আ তুমি এখানে?
– হে আমি নয়তো কে থাকবে?
” রুদ্র দেখেই তাঁর আম্মাকে জোরে জোরে ডাকতে শুরু করলো। রুদ্রর ডাক শুনেই তাঁর আম্মু আর জুইঁ চলে আসলো। রুদ্র কে দেখে তাঁর আম্মু বললো;
– কি হয়েছে? এতো চিৎকার করে ডাকছিস কেনো?
– এ এখানে কে?
– কাজের মেয়ে এসেছে। এখন থেকে এখানেই থাকবে।
” মায়ের কথা শুনেই চৎমকে ওঠে। বলে কি? রুদ্রর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কাজের মেয়ে মানে? তখনি রুদ্র তাঁর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো;
– আম্মু তুমি কি জানো কাকে কাজের মেয়ে বলছো??
” রুদ্রর কথা শেষ না হতেই জুইঁ তাঁর ভাইয়াকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বললো। এতোক্ষণে রুদ্র বুঝতে পারলো যে সবটাই জুইঁয়ের কারসাজি। এই খানে জুইঁ কাজের মেয়ে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
– হে,কাজের মেয়ে। বাসায় আর একা কত কাজ করবো? তুই তো বিয়ে করিস না।
” রুদ্র মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। তাই বলে জুইঁ কাজের মেয়ে করে সাজিয়ে নিয়ে আসবে?
– দেখো মা আমি…….
– আমি দেখতে পারবো না। ভাবছি………………………………(চলবে )