ডাক্তার বর পর্ব ২

গল্পঃ ডাক্তার বর

পার্টঃ- ০২….
.
.
– বর্ষা বস্তার মুখ কি খোলবো?
– হ্যা খোল, শালার ব্যাটা কে অনেক কাবু করে ধরে এনেছি। আজ বিয়ে না করে যাবে কোথায়? আমাকে পছন্দ হয়নি নাহ…..

” বর্ষার কথা শুনেই দ্বিগুণ উৎস নিয়ে বস্তার মুখ খোলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। বর্ষাকে যখন রিয়ার মাধ্যমে সরাসরি না করে দিলল বর্ষা রেগে খাওয়া দাওয়া সবকিছু বন্ধ করে দিলো। কত বড় সাহস তাকে পছন্দ হয়নি। তাঁর জন্য কত ছেলে পিছনে পিছনে ঘুরে আর তাকে কি-না পছন্দ হয়নি?

” বর্ষা অনেক ভেবে চিন্তে করে প্ল্যান করলো। বর্ষার অবস্থা দেখে মা-বাবা আর কিছু বলে নি। ছেলের সাথে দেখা করে কি এমন হলো যে বর্ষা এমন করছে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।

” বর্ষার বান্ধবীরা প্ল্যান করে ডাক্তার রুদ্রর উপর বেশ কড়া নজর রাখে। কোথায় যায় কি করে? সবকিছুই নজর রেখেছিলো। বর্ষা ও তার বান্ধবীরা লক্ষ্য করেছে ডাক্তার রুদ্র প্রতিদিন বিকালে এক কফি শপে কফি খেতে যায়। জায়গা টা বেশ নির্জন সেই সুযোগ টা নিলো।

“ডাক্তার রুদ্র তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে এসে যেই গাড়ির দরজা খোলতে যাবে তখনি পিছন থেকে আগে থেকেই ক্লোরোফিল মেশানো রুমাল দিয়ে নাক মুখে ধরে ফেলে। ব্যাস কেল্লাফতে আর চিৎকার দিতে পারে নি। সেখাই হুস হারিয়ে ফেলে। তারপর এই রিয়াদের বাড়িতে নিয়ে আসে। রিয়াদের বাসায় কেউ নেই যদি উল্টো পাল্টা কি করে তার ব্যাবস্তা আগে থেকেই প্ল্যান করা।

” বর্ষা আর রিয়া কথা বলছে আজকে কেমন জব্দ হবে ডাক্তার সাহেব অন্য দিকে অন্যজনরা বস্তার মুখ খোলায় ব্যাস্ত।

হঠাৎ করেই বর্ষাকে ডাক দিয়ে বললো;-

– বর্ষা, এ কি? ওনি কে?

” বর্ষা কথা শুনেই চমকে উঠে ফিরে তাকালো। ভূত দেখার মতোই নিজেই চমকে উঠলো। বর্ষা তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো;

– কাকে নিয়ে এসেছিস অন্ধকারে?

” বর্ষার কথা শুনেই একে অপরের দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে। জব্দ করতে এসে নিজেরাই জব্দ হয়ে বসে আছে। অন্ধ্যকারে ডাক্তার রুদ্র কে আনতে গিয়ে ভূল করে অন্য জনকে নিয়ে আসে। একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বর্ষা রাগে নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারে না।

” সবার নীরবতা ভেঙে রিয়া বললো;

– এখন কি করবো?

” বর্ষাকে ভয়ে ভয়ে অন্য জনরা বললো;

– যেভাবে এনেছি সেভাবেই কোথায় ফেলে আসি।

” বান্ধবীদের কথা শুনে সবাই সায় দিলেও বর্ষা বলে উঠলো;

– না! এটা করা যাবে না। তাহলে যদি লোকটি মারা যায় আমাদের ধরে পুলিশ নিয়ে যাবে।

” বর্ষার কথা শুনে সবাই ভয়ে চুপ হয়ে গেলো। কারো মুখে কোনো কথা নেই। যদি পুলিশ ধরে তাহলে তাদেরকে জেলের ভাত খেতে হবে। এই নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারছে না। কেউ বুঝতে পারছে না যাকে নিয়ে আসলো সে কে? আর ডাক্তার রুদ্র কোথায়? অন্ধকারে হয়তো মিসটেক হয়ে যায়।

” সবার উদ্বিগ্ন তা দেখে বর্ষাকে তাঁর বান্ধবী সাদিয়া বললো;

– চল, ওনার চোখে পানি দিয়ে সুযোগ করি। তারপর সব খোলে বলি।

” সাদিয়ার কথা শুনেই অন্যজন বলে উঠলো;

– না না এটা করা যাবে না। তাহলে চিৎকার সুরে করে দিবে। সবাই ব্যাপার টা জেনে যাবে।

” বর্ষা ধমক দিয়ে বললো;

– একটা কাজও তো ঠিক মতো করতে পারিস না। এছাড়াও কোনো রাস্তা নেই। ওই রিয়া তুই পানি নিয়ে আয়।

” বর্ষার কথা শুনেই পানি আনতে চলে গেলো রিয়া। রিয়া পানি নিয়ে আসলো পানি ছিটিয়ে দিলো লোকটির মুখে। পানি ছিটিয়ে দিতেই হুস হয়। তারপর আমতা আমতা করে বলতে থাকে;

– আমি কোথায়?

” বর্ষা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বললো;-

– আপনি আমাদের বাসায় কোনো ভয় নেই।

” বর্ষার কথা শুনেই লোকটি চমকে ওঠে। আরে এই মেয়েটিই তো তাকে শেষ বার বলেছিলো-

– কাজ হয়েছে। তাড়াতাড়ি বস্তায় ওঠা।

” আসতে আসতে সব মনে হতেই বুঝতে পারি লেডি কিন্ডনাপারের হাতে পড়েছে। তখনি লোকটি চিৎকার করে বলতে শুরু করলো ;-

– বাঁচাও বাঁচাও কে আছো। আমাকো মেরে ফেলবে….

” লোকটির চিৎকার শুনেই রিয়া এসে দৌড়ে মুখ চেপে ধরলো। তখনো হাতপা বাঁধা, তাই নড়াচড়া করতে পারছে না। চিৎকার করতে গিয়ে চিৎকার করতে পারছে না। অনেক রকম চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না। শেষে বর্ষা ধমক দিয়ে বললো;

– একটা চিৎকার দিলে সত্যি সত্যি খুন করে ফেলবো।

” বর্ষার ধমক শুনে ভয়ে চুপ হয়ে যায়।তখন রিয়া মুখের হাত সরায়। রিয়া হাত সরাতেই বললো;

– আমি সবাইকে পুলিশে দিবো।ওহ আমিই তো পুলিশ, কাকে ধরে এনেছে বুঝতে পারবে?

” লোকটির কথা শুনেই সবার চোখ চড়কগাছা হয়ে গেলো। এ কি করেছে শেষ মেষ তারা ভুল করে পুলিশ ধরে নিয়ে আসলো। সবার গলা শুকিয়ে গেলো। সবাই এসে হাত পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে লাগলো। সব দোষ বর্ষাকে দিতে থাকে। বর্ষা সবাইকে বলে আমি একা নাহ তোরা বুঝি কিছু করিস নি।

” তারপর নিয়ে বর্ষা সবাই কে শান্ত থাকতে বলে পুলিশের হাত ধরে সব বলতে শুরু করে। বর্ষা বললো;-

– আমাকে একজন ডাক্তার দেখতে এসেছিল। তবে……….

তাই বিয়ে করার জন্য এই প্ল্যান। সবকিছুই খোলে বললো।

” বর্ষা কান্না চোখে একে একে সবকিছুই খোলে বললো। বর্ষার চোখের পানি দেখে মনে হলো কিছুটা দয়া হলো। তখন বর্ষার দিকে রেগে গিয়ে বললো;-

– যদি আমার কিছু হতো তাহলে আমার বউ বাচ্চার কি হতো? আমিও তো ভালবেসে বিয়ে করেছি।

” পুলিশ অফিসারের কথা শুনে একে অপরের মুখের দিকে সবাই তাকিয়ে রইলো। একসময় সবাই জুইঁয়ের দিকে তাকাতেই জুইঁ তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বললো;

– নাহ কিছু হতো না। আমি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই বুঝেই নিয়েছি।

” জুইঁয়ের কথা শুনে সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো। তখন পুলিশ অফিসার আশ্বাস দিয়ে বললো;

– আমি ভালবেসে বিয়ে করেছি বলে বুঝতে পেরেছি। অন্য কেউ হলে এখনি জেলে যেতে হতো। এই বারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। পরের বার যেনো এমন কিছু না শুনি। আর কোনো হেল্প লাগলে আমাকে বলো। যতটুকু দরকার সাহায্য করবো।

” পুলিশের কথা শুনেই বর্ষা আনন্দ আত্নাহারা হয়ে বললো;

– জ্বি স্যার মনে থাকবে। এমন ভুল কখনো হবে না।

” পুলিশ অফিসার এগিয়ে দিয়ে এসে সবাই বসে পড়লো। সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচলো বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। যত কোনো কিছু হয়ে যেতো তাহলে কি হতো?ভাবতেই সবার গা শিউরে উঠলো।

” রিয়া সবার নীরবতা ভেঙে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো;

– এখন কি করবি?

” বর্ষা রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো;

– এমন স্টুপিড আইডিয়া কোনো কিছু করা যাবে না।

” ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো;

– তোরা থাক,আমি এখন যাচ্ছি।
– কই যাচ্ছিস?
– ডাক্তার সাহাবের চেম্বারে….

” বর্ষার কথা শুনেই সবাই চুপ হয়ে গেলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। বর্ষা আর কোনো কথা বললো না। তখন একে অপরের দিকে তাকাতেই রিয়াকে উদ্দেশ্য করে জুইঁ বললো;

– বর্ষা পাগল হয়ে গেছে। কয়েকদিন পর দেখবি সব ভূত মাথা থেকে পালাবে।

” জুইঁয়ের কথা শুনে সবাই সায় দিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠলো। বর্ষা সিএনজি করে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো। এক নার্সের কাছে জানতে চাইতে ডাক্তার রুদ্রর রুম দেখিয়ে দিলো।

” বর্ষা সোজা গিয়ে টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে বললো;

– এই যে মিস্টার এতে ভাব কিসের?

” বর্ষার কথা শুনেই একনজর চোখ তুলে তাকালো রুদ্র। সরাসরি চোখ গিয়ে পড়লো বুকের উপর। বর্ষা ঝুঁকে থাকায় বুকের উড়না টা সরে যাওয়াতে অনেকটা অনাবৃত অংশ দেখা যাচ্ছে। একনজর দেখেই কাশি দিয়ে উঠলো। বর্ষা সেটা বুঝতে পেরে বুকের উড়না ঠিক করে বললো;

– এমন ভাবে কি দেখেন? লাজ সরম নেই….?

” বর্ষার কথা শুনেই বুকের অনাবৃত অংশ থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। একনজর বর্ষার চোখে দিকে নজর পড়ে গেলে নিজের কাজে মনোযোগ দিতে দিতে বললো;

– চোখের সামনে এমন ভাবে প্রদর্শন করলে তো যে কারো নজর পড়বেই।

” ডাক্তার রুদ্রর কথা শুনেই ইচ্ছে হচ্ছে চুল গুলো ছেড়ে ফেলে দিতে। তবে সেটা আপাতত মাথা থেকে সরাতে হবে, নয়তো ডাক্তার রুদ্র কে পাবে না। যে করেই হোক ডাক্তার রুদ্রকে চাই তাঁর। এতো অহংকার আর ভাব মাঠিতে মিশিয়ে দিতে চাই।

” বর্ষা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো;

– আমি রুমে এসেছি আর আপনার কাজ বেশি হয়ে গেলো? এতো অহংকার কিসের?

” বর্ষার রাগী কন্ঠ শুনে রুদ্র বুঝতে পারলো বর্ষা অনেক রেগে আছে। কাজ রেখে এই বার বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো;

– অহংকার নেই। জরুরি রোগী তো তাই ফাইল চেক করছি। আপনি রাগলে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগে।

” বর্ষা কথাটা শুনেই কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলো। কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই রুদ্র রোগী দেখার জন্য রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্র বেশ ভালো করেই জানে বর্ষা কেনো এসেছে। রুদ্র কে চলে যেতে দেখে রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে কলার টা ধরে বলুক;

– আমাকে কিছু না বলে কথাই যাচ্ছিস?

” তবে এই ইচ্ছে টাও আপাতত পূরণ পাচ্ছে না। রুদ্র কে হারাতে চাই না। প্রথম দেখায় রুদ্র কে ভালো লেগে যায়। সেই ভালো বাসায় কখন যে ভালোবাসায় রুপ পায় বুঝতেই পারে নি। রুদ্রর পিছু পিছু রুমে যায়। রুদ্র কথা না বললেও রুদ্রর পিছন ছাড়া না। রাত হয়ে যাওয়াতে বাসায় যাওয়ার কথা বললে পৌঁছে দিতে বলে। একে যেতে পারবে না বলে জানায়। রুদ্র আর কিছু না বলে কাজ শেষ করতে কাজে মন দেয়।

” রুদ্র একসময় কাজ শেষ করে যেতে বলে। বর্ষার কষ্ট লাগায় রুদ্রর রুমে বসে ছিলো। রুদ্রর রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। অনেক কিছু পায় সে। তাঁর মাঝে একটা গল্পের বই। ” প্রিয়তাম” গল্প টা পড়তে পড়তেই কখন যে ঝিমিয়ে পড়ে বুঝতে পারে নি।

” হঠাৎ করেই রুদ্র এসে বললো;

– এই যে ম্যাম এখন চলেন। বাসায় গিয়ে ঘুমান….

” রুদ্রর কথা শুনেই ঘুম ভাঙ্গে। রুদ্র কে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। রুদ্রকে অনেক ভালো লাগে। আবার রুদ্রর কথা শুনে কিছুটা লজ্জায় তড়িঘড়ি করে সাথে বেড়িয়ে পড়ে। সারা রাস্তায় কথা না বললেও আড়চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো।

” হঠাৎ করেই বৃষ্টি এসে পড়ে। রুদ্র গাড়িটা স্লো করে বর্ষার দিকে একনজর তাকিয়ে রইলো। বর্ষা কিছুটা লজ্জায় চোখে নামিয়ে নিলো। রুদ্র আসতে আসতে কাছে আসলে বর্ষা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

রুদ্র বর্ষার কাছে এসে ফিসফিসয়ে বললো;

– এমন দিনে যদি…………………….(.চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here