ডাক্তার সাহেব পর্ব ২৭+২৮

#ডাক্তার সাহেব
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২৫

নীলের এ ডায়লগ কতটা রোমান্টিক ছিল জানি না তবে এ রোমান্টিকতরা মুর্ছনায় সবার হার্ট এটাক হবার উপক্রম। কারণ সেটা রোমান্টিক ডায়লগ ছিল নাকি কোনো জোরালো ভাষণ ছিল কেউ এই সেটার সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে পারছে না। নীলের জোরালো কন্ঠ যেন কান ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে।

– ভালোবাসলে ভালোবাসা দিতে হবে। কথা দিলে কথা রাখতে হবে৷ যদি কথার বরখেলাপ হয় তাহলে খুব বেশি না কয়েকটা ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে মুখ বাঁকিয়ে দিব তাহলে দ্বিতীয় কোনো যুবক সহজে পছন্দ করতে পারবে না। সব সময় সব কাজে পাশে থাকতে হবে৷ যদি তা না পারো তাহলে পা টা মুচরে দিয়ে ভেঙে লোলা করে আমার পাশে বসিয়ে রাখব। এ হাত শুধু আমার হাত ধরবে। আমার হাত ছাড়া অন্য কারও হাত ধরতে চাইলে হাত দুটো আলগা করে দাফন করে দিব৷ এ চোখ শুধু আমার দিকে তাকাবে..

বাকি কথা বলার আগেই আমি তার মুখ চেপে ধরলাম। কারণ যে হারে সে আমাকে লোলা,ল্যাংরা বানিয়ে দিচ্ছে এখন নিশ্চিত কানাও বানিয়ে দিবে। মুখটা চেপে ধরে বললাম

– হয়েছে… আর লাগবে না। এখন আমি আর কানা হতে চাই না। আমি আমার জীবনে এত রোমান্টিক ডায়লগ শুনিনি। বেশি কোনো কিছুই হজম হয় না। তাই এত রোমান্টিকতাও হজম হচ্ছে না।

এদিকে বাকি সবাই বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে অট্টহাসি দিয়ে নীরবতা ভেঙে হাসির শব্দের বিস্ফোরণ ঘটাল। রনক ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল

– তোর স্বভাব এখনও ঠিক হলো না। কলেজ জীবনে যেমন ছিলি তেমনই রয়ে গেলি।

নীল তার মুখে চেপে ধরা আমার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে রনক ভাইকে বলতে লাগল

– তোর কী আর এসব হজম হবে? তুই রোমান্টিকতার বুঝিস টা কী?

আমি কিছুটা রেগে রাগ গলায় বলে উঠলাম

– রনক ভাইয়া বুঝে না! তাই না? এমনি এমনি এক যুগ প্রেম করে বিয়ে করেছে। এক যুগ তো ঘাস খেয়ে প্রেম করেছে। নিজের মাথা তো গোবর ঠাসা বাকিদের ও তাই মনে করো।

আমার কথা শুনে তুষা আপু হাসিতে গড়াগড়ি খেয়ে নীলকে বলে উঠল

– বাচ্চা মেয়ে হলেও তোর থেকেও ভালো বুঝে৷ শুধু শুধু মেয়েটার সাথে মজা নিস। বাবারে বাবারে যে ডায়লগ বলা শুরু করেছিলি আমার তো আরেকটু হলে দম আটকে যেত, ভাগ্যিস সিঁথি মুখ চেপে ধরেছিল।

ঘরটায় বেশ হাসিমাখা পরিবেশ বিরাজ করছে। এর মধ্যেই খাবার চলে আসলো। হাসের মাংস, পালং শাক,ডাল,গরুর মাংস, ভর্তার সমাবেশ ও রয়েছে। খাবারের আইটেম দেখে জিভে জল চলে আসলো।

খাওয়ার পর্ব শুরু হলো ১ টা ৪৫ এ। সবাই মিলে বেশ আরাম করেই খাওয়া, দাওয়া শেষ করলাম। ঘড়ির কাটায় বেলা দুটো। হাতে খুব একটা সময় নেই। এ সময় রওনা দিলেও বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ৫ টা বেজে যাবে। নীলকে সবাই তাড়া দিতে লাগলাম বের হওয়ার জন্য। নীল ও ব্যপারটা বুঝতে পেরে তেমন দেরি করলো না। সবার কাছ থেকে বিদায় এবং কুশল বিনিময় করে সে বাড়ি থেকে বের হলাম। নীলের হাত ধরে আমি হাঁটছি বাকিরা পেছন পেছন। সবাই একে অপরের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। আমি আর নীল শুধু নিস্তব হয়ে একে অপরকে ধরে অনুভূতির সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাঁটছি।

ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৩ টা ৩০। নীল আমার বন্ধুদের সি এন জি করে দিল আর আমি নীলের পেছনে বসলাম। কিন্তু বিপাকে পড়লাম নিকাব নিয়ে। হট্টগোল আর ঝামেলায় নিকাব কোথায় পড়েছে বুঝতে পারছি না। মুখ গোমরা করে নীলের দিকে তাকিয়ে বললাম

– আমি নিকাব ছাড়া যাব কী করে?

নীল ভ্রুটা কুঁচকে বলল

– তোমার মতো পাগলের কোথায় কী থাকে সে খেয়াল তো থাকে না। সেলোয়ারকে উড়না বানিয়ে রাখো। উল্টা,জামা,পাজামা পরো, সেক্ষেত্রে নিকাব হারিয়ে যাওয়াটা খুব বেশি কিছু না। যাইহোক কোনোরকম উড়না দিয়ে মুখ প্যাঁচাও আর সানগ্লাস পরে হ্যালমেটটা পরে নাও।

আমি নীলের কথার প্রতিউত্তর দিলাম না। এ কথার হিসাব পরেও নেওয়া যাবে। আমি নিজেকে সামলে হালকা হেসে মুখটা কোনো রকম ঢেকে বাইকে উঠলাম। বাইকটা চলতে লাগল। হালকা হালকা বাতাস গায়ে এসে ঝাঁপটা দিচ্ছে। মাঝ রাস্তায় যেতেই তুমুল বৃষ্টি পড়া শুরু করল। গরম কালের এ এক মসিবত এই দেখা যাবে গা ফাটিয়ে রোদ পড়ছে আবার এই যেন বৃষ্টিতে সব ছেয়ে নিচ্ছে। নীল তাড়ুহুড়ো করে গাড়িটা এক বন্ধ দোকানের ছাউনি তলে নিয়ে দাঁড় করাল। আমি নিশ্চুপ হয়ে মনের খাতায় নীলকে চিঠি লিখছিলাম।

প্রিয় নীল

বাইরে ঝুপঝুপ বৃষ্টি। বৃষ্টি ফোটা গুলো মাটিতে পড়ে ছাতার মতো বলয় হয়ে মিশে যাচ্ছে। ফুটপাতে গড়ে উঠা একটা দোকানের ছাউনিতলে দাঁড়িয়ে আছি নিশ্চুপ তুমি আর আমি। কিয়ৎক্ষণ পর পর তোমার দিকে তাকাচ্ছি আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছি। তাকালেই যেন ঐ নেশা দ্রব্য মিশ্রিত চোখ গুলো আমাকে নেশার ঘোরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘোর কাটিয়ে উঠার অসীম সাহস আমার নেই। তাই অপলক দৃষ্টিতে না তাকিয়ে ক্ষণে ক্ষণে পলক ফেলে তোমাকে দেখছি। মাঝে মাঝে হেসে কথা বলছি আবার রসাতলে ডুবে যাওয়ার ভয় পাচ্ছি। আমি জানি আমি বড্ড আবেগী। আমার আবেগের বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে তোমাকে এখন ইতস্তত করতে একদম চাচ্ছি না। তুমি বৃষ্টি দেখা উপভোগ করছো আর আমি তোমাকে দেখে বৃষ্টি উপভোগ করছি। ক্ষণে ক্ষণে মনে হচ্ছিল অবাধে ঐ বৃষ্টিতে হাত দুটো মেলে ভিজব। আর ঠিক তখন তুমি আমার পাশে এসে আমার হাত ধরবে। চোখে চোখ রাখব আমি। আর তুমি অপলকভাবে তাকাবে আর আমি চোখের সে নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যাব কোনো এক অজানায়। তুমি কী তখন হাত ধরে আমাকে চেনা শহরটায় ফিরিয়ে আনবে নাকি তলিয়ে যেতে দিবে অজানা সে গন্তব্যে।

ইতি তোমার গন্তব্যহীন পথের এক পথিক

চিঠিটা মনের খাতায় লিখে আবদ্ধ করে ফেললাম। নীল আমার চোখের সামনে হাতটা নাড়াতে নাড়াতে বলল

– কী ব্যপার কোথায় হারালে? এত নিশ্চুপ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কী ভাবছো?

– চিঠি লিখছি।

নীল বিস্ময় কন্ঠে বলে উঠল

– মানে?

– মানে চিঠি লিখছি। তোমাকে এত বুঝতে হবে না। চুপ করো তো। বৃষ্টি কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব না। বাসায় চলো। ভিজেই যেতে হবে নাহয় রাত হয়ে যাবে।

নীল বাইরের দিকে তাকিয়ে, দৃষ্টির এ কোণ ও কোণ করল। তারপর হালকা দম ছেড়ে বলল।

– কী আর করা চলো।

বাইকটা চলতে শুরু করল। বৃষ্টির ফোটা গুলো গায়ে এসে পড়ছে। আমি নীলকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি। সারা শরীর আমার থরথর করে কাঁপছে ঠান্ডায়। নীল আমার কাঁপুনি অনুভব করে বলল

– কাঁপছো কেন? ঠান্ডা কী বেশি লাগছে?

– একটু লাগছে।

– আজকে কেমন লাগল বললে না তো?

– ভীষণ ভালো।

– তুমি খুশি তো?

– অনেক খুশি।

গাড়িটা চলতে লাগল আপন গতিতে। বৃষ্টি কখন থেমে গেছে খেয়াল নেই। চোখ বন্ধ করে নীলের কাঁধে মাথা রেখেই ছিলাম এতক্ষণ। এর মধ্যেই নীলের কন্ঠ ভেসে আসলো

– গন্তব্যে চলে এসেছি। বাইক থেকে দ্রূত নামো। অলরোডি ৫ টা ৩০ বাজে। নিশ্চয় আন্টি রেগে আছে। যাওয়ার আগে বোরকা খুলে যেও।

নীলের কথায় কিছুটা ভয় মনে বাসা বাঁধল। বেশ তাড়াহুড়ো করে নেমে এক কোণায় গিয়ে কোনোরকম বোরকাটা খুলে নিলাম। সে বাইক নিয়ে চলে গেল। আর আমি ভেজা কাপড় নিয়ে মূল রাস্তায় কাঁপতে কাঁপতে আসলাম। চারদিকে চোখ বুললাম। চোখের সীমানায় কোনো রিকশা দেখতে পেলাম না। তাই হেঁটেই বাসার পথে রওনা দিলাম। পরিবেশটা শীতল সে সাথে বাতাস ও বইছে। ভেজা শরীরে হাঁটলে যেন বাতাসটা গায়ে আরও বেশি লাগে সে সাথে কাঁপুনি দিয়ে শিহরণ জাগে। পা যেন চলছে না। তবুও শক্তি খাটিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছি।

ঘড়ির কাঁটায় ৬ টা ছুঁই ছুইঁ। বাসার দরজায় ধাক্কা দিতেই নানু দরজা খুলল। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই মায়ের সম্মুখীন হলাম। তাড়াহুড়ো করে আমার রুমে যেতে নিলে মা পেছন ডাকল। মায়ের ডাক শুনে ভেজা কাপড় নিয়ে কুঁকড়ে দাঁড়ালাম মায়ের সামনে। কড়া দৃষ্টিতে মা আমার দিকে তাকিয়ে।

– কোথায় গিয়েছিলে? এত দেরি কেন হলো?

– মা একটা এক্সট্রা ক্লাস ছিল। তাই দেরি হয়ে গেছে। দেখতেছই তো ভিজে গেছি। তাই আরও আসতে দেরি হয়েছে।

– সত্যিই কী ক্লাস ছিল?

– তাহলে কী তোমাকে আমি মিথ্যা বলছি?

– তোমার কলেজ প্রিন্সিপাল কল দিয়েছিল। বেশ কয়েকদিন তুমি কলেজে যাও নি তাই খু্ঁজ নিতে, আমিও অসুস্থ তাই কলটা বেশ গুরুত্ব নিয়েই দিয়েছিল। তিনি বললেন আজকে তুমি কলেজে যাওনি। তাহলে কে মিথ্যা বলছে তিনি নাকি তুমি?

আমার গলা শুকিয়ে আসতে শুরু করল মায়ের কথা শুনে। এমনিতে মা সবসময় আমাকে তুই করে বলে। মায়ের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটা দিক হলো মা যখন কোনো বিষয় নিয়ে আমাকে চরম সন্দেহ করে তখন মা আমাকে তুমি নামক সুন্দর সর্বনামে ডাকতে শুরু করে। আমি চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মা পুনরায় বলে উঠল

– কী হলো চুপ কেন? তুমি কী কলেজে গিয়েছিলে নাকি না? উত্তরটা দাও।
#ডাক্তার সাহেব
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২৬

– কী হলো চুপ কেন? তুমি কী কলেজে গিয়েছিলে নাকি না? উত্তরটা দাও।

কী উত্তর দিব বুঝতে পারছি না থরথর করে কাঁপছি আমি। নিজেকে একটু গুছিয়ে উত্তর দিতে যাব এমন সময় একটা শব্দ পেলাম। শব্দটার উৎস খুঁজতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম নীলের দেওয়া লাল মোবাইলটা ব্যাগ থেকে ছিটকে নীচে পড়ে গেছে। মা মোবাইলের দিকে শুকুনের মতো চেয়ে আছে। মায়ের নজর এড়াতে মোবাইলটা ঝটপট হাতে নিতেই মা বলে উঠল

– ওটা কী এদিকে আনো।

মায়ের কথায় কাঁপতে কাঁপতে বললাম

– মা ক্যালকুলেটর, তোমার দেখতে হবে না।

– আরে আনো দেখি। এরকম ক্যালকুলেটর তোমার ছিল নাকি? এদিকে আনো বলছি।

পড়ে গেলাম আরও বিপাকে। শরীর তো কাঁপছেই সে সাথে বুক ও কাঁপছে ভীষণ। কাঁপা হাতে মোবাইলটা এগিয়ে দিলাম। মা মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাগী চোখে আমার দিকে তাকাল।

– তোমার তো মোবাইল ভেঙে গেছে। এ মোবাইল কোথায় পায়েছো? কে দিয়েছে তোমায়? বা তুমি টাকা পেলে কোথায় মোবাইল কেনার?

কোনো বুদ্ধিই যেন মাথায় আসছে না। চট করে বলে উঠলাম

– মোবাইলটা মিহুর ভুল করে আমার ব্যাগে রেখে গেছে।

আমার মুখের বচনে মা বেশ বুঝতে পেরেছিল আমি মিথ্যা বলছি। মা কিছুটা বিলম্ব করে উত্তর দিল

– মিহুর ফোনে তোমার সিম ভরা কেন? আমি তোমার পেট থেকে জন্ম নিছি নাকি তুমি আমার পেট থেকে জন্ম নিছো? ঠিক করে বলো কোথায় ছিলে।

আমি একদম চুপ। কথা বলার অবকাশ যেন পাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মা আমার মোবাইলটা ঘেটে বলতে লাগল একটা নম্বর থেকে বেশ অনেকবার কল দেওয়া নেওয়া হয়েছে। এখানে লিস্টে এ একটা নম্বরেই আছে। সেভ নেই যদিও। বলেই মা নীলের নম্বরটা ডায়াল করে লাউড দিয়ে বলল

– কল ধরলে হ্যালো বলবে।

আমার শরীর মাত্রারিক্ত কাঁপছে। মনে মনে চাচ্ছিলাম নীল যেন কল না ধরে। তবে আমার চাওয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী রইল না। এর আগেই ওপাশ থকে হ্যালো শব্দ চলে আসলো। বিষাদের সুর মনের গহীনে বাজছে আমার। মা আমাকে ইশারা করতে লাগল হ্যালো বলতে। আমি ঢুক গিলে হ্যালো বলতেই নীল বলে উঠল

– ঠিক মতো বাসায় পৌঁছাতে পেরেছো তো! তোমাকে আন্টি কিছু বলেনি তো? সব স্বাভাবিক তো? ভেজা কাপড় পাল্টে নিয়েছো কী?

নীলের কথা গুলো শুনে আমার শরীর কাঁপতে লাগল আরও। শক্তি যেন পাচ্ছিলাম না। আমার নীরবতা শুনে নীল বলে উঠল

– পাগলি বুড়িটা কথা কেন বলছে না।

মা এবার ফোনটা নিজের কানে নিয়ে বলল

– তুমি তো অনীল তাই না? আমি তোমার পাগলি বুড়ি না পাগলি বুড়ির মা।

নীলের তুতলানোর আওয়াজ কানে আসতে লাগল। নীল গলাটা ভারী করে মুখে জড়তা এনে বলল

– সরি আন্টি বুঝতে পারিনি আমি।

– তোমাকে সব না বুঝলেও চলবে। এটুকু একটা মেয়ের সাথে তুমি কেনই বা এমন সম্পর্কে জড়ালে? তুমি কী তাকে ভালোবাসো?

নীল চুপ। নীলের এ চুপ থাকাটা আমাকে ভীষণ নাড়া দিচ্ছে। কেন সে বলছে না সে আমাকে ভালোবাসে। মা আবার জিজ্ঞেস করল। এবারও নীল চুপ। মা বিরক্ত মুখে বলল

– তুমি সন্ধ্যার পর আমাদের বাসায় আসবে তোমার সাথে আমার কথা আছে।

নীল হালকা গলায় জবাব দিল

– ঠিক আছে আন্টি।

মা এবার আমার দিকে তাকাল। রাগী গলায় বলে উঠল

– তোর বয়স কত হয়েছে যে তুই এখনই এসবে জড়ালি। নীল আর তোর বয়সের ডিফারেন্স তুই জানিস? পাগল তুই? তোদের কে মেনে নিবে? তোর বাবা জানলে তোর হাড় গুড় ভেঙে পড়ালেখা বন্ধ করে দিবে।

মাথাটা নীচু করে বেশ সাহস নিয়েই বললাম

– মা আমি নীলকে ভালোবাসি।

মা আমার কাছে এসে আমার গালে কষিয়ে চড় দিয়ে বলল

– লজ্জা থাকা দরকার। কার সামনে দাঁড়িয়ে কী বলছিস সেটা বুঝা দরকার। নীল যোগ্য ঠিক আছে তবে তোর সাথে পারফেক্ট না।

চড় দেওয়া গালে নিজের হাতটা চেপে ধরে বললাম

– একটা ডাক্তার কীভাবে পারফেক্ট না হয় মা।

জানি না আমি এত সাহস নিয়ে কীভাবে কথা বলছিলাম। তবে কথাগুলো বেশ অকোপটেই বলে ফেলছি। কোনো জড়তা যেন কাজ করছে না। মা আমার মোবাইলটা মাটিতে আঁচড়ে ফেলে দিয়ে বলল

– প্রেমের সম্পর্ক সবচেয়ে তিক্ত সম্পর্ক। এ সম্পর্কে কষ্ট ছাড়া কিছু দেয় না৷ তোর ছোট খালা প্রেম করে বিয়ে করেছিল এক ব্যারিস্টারকে। বিয়ের এক বছরের মাথায় আত্মহত্যা করে মারা যায়। তোর খালাকে দেখেও শিক্ষা হয় না। এসব ছেলেরা আসেই আবেগী মেয়েদের মনে জায়গা করে নিতে। একটা সময় তাদের আবেগ কাজ করে তখন সব বাধা পার করে বিয়েও করে। আবেগ শেষ তো সব ভালোবাসা ও শেষ। মেয়েটার উপায় থাকে না, উপায় না পেয়ে তখন করে আত্মহত্যা। শুন বিয়ে হওয়া লাগে সমানে সমানে। নীলের পরিবার অনেক উচ্চ। ওর বাবার টাকা,পয়সা আমাদের থেকে কয়েক গুন। বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো ঠিক না। সব কিছুর নিয়ম নিতী আছে।

– নীল যদি আমাকে মেনে নেয় তাহলে তো সমস্যা দেখছি না। আর নীল তো এর আগে বলেছে তার পরিবারে এখন আয়ের উৎস একমাত্র নীল। তার বাবা নিশ্চয় তার কথা মেনে নিবে।

– সিঁথি বিষয়টা মেনে নেওয়া না নেওয়া না। বিষয়টা সমান্জস্যতার। নীলের পরিবারের সাথে আমাদের কখনও মিলবে না। আর ওর পরিবার মেনে না নিলে তুই কী ভেবেছিস নীল ডাক্তার তাই তোকে ওর হাতে তুলে দিব। অসম্ভব। তোকে বেঁধে ঘরে রেখে দিব তবুও ভুল সিদ্ধান্ত নিতে দিব না।

– মা আমি নীলকে ভালোবাসি।

কথাটা বলার সাথে সাথে মায়ের চড় একটার পর একটা পড়তে লাগল। মাকে, নানু ধরে বেশ জোর গলায় বলল

– থাম তুই। ওরে কী মেরে ফেলবি নাকি?

– মা তুমি কী জানো না তোমার ছোট মেয়ের কী হয়েছিল। এসব ছেলেরা আবেগে পড়ে বিয়ে করে তারপর আবেগ শেষ হলেই অত্যাচার শুরু করে দেয়। তখন মরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। তুমি কী চাও আমার মেয়ের একই দশা হোক।

– তাই বলে এভাবে মারবি। তুই এখন ঘরে যা। অনীলকে বুঝাইয়া বললেই হবে৷ ওকে না করে দিলেই হবে। একে আর মারিস না। ওর বয়সেই বা কত। এগুলো বুঝার বিবেক কী তার হয়ছে। থাম তুই এবার।

মা চেঁচাতে চেঁচাতে নিজের রুমের দিকে গেল। আমি ভেজা কাপড় নিয়ে থরথর করে কাঁপছি। নানু আমাকে ধরে ঘরে নিয়ে গেল। কাপড় পাল্টে আনমনে বিছানায় বসে পড়লাম। ছোট খালার আত্মহত্যার কথা জানতাম তবে কেন করেছে সেটা জানতাম না। কেন জানি না চোখ বেয়ে জল পড়ছে। এ সম্পর্কের শেষ কী এখানেই হয়ে যাবে। যতবার একথা ভাছিলাম ততবারেই কলিজা ফেটে কান্না আসছিল। নানু আমার হাতটা ধরে হালকা কেঁদে দিয়ে বলল

– বু… রে কান্দিস না। ভালোবাসা মারাত্মক খারাপ জিনিস। তোর মা তোরে মারছে তোর ভালোর জন্য। বয়স ও কম তোর। বিয়ের বয়সও হয়নি এখন এসব নিয়ে ভেবে নিজেরে কষ্ট দিস না।

নানুর কথাটা শুনে আমি নানুকে জড়িয়ে ধরে বললাম

– আমি যে ওরে ছাড়া ভাবতে পারব না। ওরে ছাড়া যে আমার কষ্ট হয়। আমি থাকব কেমনে? মনের গহীনে আগলে রাখা মানুষটাকে ভুলবই বা কী করে। আমাকে বলো গো নানু। আমি যে পারছি না সইতে এ মরণ ব্যথা। নীলকে ছাড়া আমি মরেই যাব।

নানু আমার মুখটা চেপে ধরে বলল

– এমন কথা বলিস না। তুই শান্ত হ। এর মধ্যে তোর মায়ের মন পরিবর্তন হতে পারে। আর নীল তো সন্ধ্যার পর আসতেছেই। তখন নীলের কথাতেও গলে যেতে পারে। তুই সবুর কর। সবুরের ফল মিঠা হয়।

নানুর কথায় কান্না যেন আরও বাঁধ ভেঙ্গে আসলো। কাঁদতে কাঁদতে অস্থির আমি। সময় যেন কাটছে না। কখন যে সন্ধ্যা হবে সে চিন্তায় বুক ধরফর করছে।

বিয়োগ যন্ত্রণার রেশ নিয়েই সন্ধ্যা নেমে আসলো। আনুমানিকে ৭ টা বাজে। নীল বাসায় উপস্থিত হলো। নীল আর মা মুখোমুখি বসে আমি কিছুটা দূরে। কী হতে চলেছে এখনও অজানা। অদৃষ্ট কোথায় কাহিনি নিয়ে ঠেকাবে জানি না।

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)
চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here