ডার্ক ডায়মন্ড পর্ব ১৬

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৬
____________________

-ভয়ে মীরার কলিজা সহ কাঁপছে।
তবুও বহুকষ্টে নিজেকে সামলে মনে সাহস যুগিয়ে মীরা গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় উঁকি মেরে দেখলো দুটো অবয়ব মূহুর্তেই একটা বাদুড় আর একটা কুকুর ছানার মতো রূপ ধারণ করে আরো বেশি মারামারি শুরু করলো।

-মীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আর ভয় পেয়ে কাঁপছে।

হঠাৎ মীরার কাঁপা কাঁপিতে ফুলের টবটা ধাক্কা লেগে পরে যায়।

মূহুর্তে কুকুরের মতো জ্বলজ্বল চোখ বিশিষ্ট নেকড়ে টা ভয়ংকর ভাবে মীরার দিকে এক নজর তাকিয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। মীরা নেকড়ে টার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থেকে ঢোক গিললো।

– বাদুড় টার দিকে মীরার চোখ পরলো।

ভয় পেয়ে মীরা আস্তে করে পিছিয়ে গেলো।

-বাদুড় টা আস্তে আস্তে মীরার সামনে উড়ে আসলো।

বাদুড় বিশিষ্ট প্রাণীটা মাথা নিচু করে কালো হুডি পরিহিত মানুষ রূপে রূপ ধারণ করলো।
.

-মীরা চোখ বন্ধ করে আবার চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো এটা গ্র্যান্ডপার রুমের সেই অর্ধ মানব টা, কালো হুডি পরিহিত।
যাকে মীরা গাড়ি থেকে দৌড়াতে দেখেছিলো।
ভ্যামপায়ারটা মীরার বেশ কাছে এসে দাঁড়ালো।
ভয়ে মীরার হাত পা কাঁপছে, মীরা কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে, মীরা অনুভব করলো মীরার গলা দিয়ে ভয়ে কোনো কথা-ই যেনো বের হচ্ছে না।

-বহুকষ্টে অনেক চেষ্টার পর মীরা বলে উঠলো হু আর ইউ?

– কালো হুডি পরিহিত অর্ধ মানব টা উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো।

– মীরা চোখ বন্ধ করে ফেললো। মীরার বুক টা ভয়ে কেমন ডিপ ডিপ করছে। মীরা অনুভব করতে পারছে কারো শীতল নিঃশ্বাস মীরার ঘাড়ে এসে পরছে, মীরার খুব ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।
মীরার পুরো শরীর যেনো ঝাঁকিয়ে উঠলো।

কেউ মীরার কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ” প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড ”

কথাটা শুনবার সাথে সাথে মীরা চমকে উঠলো। চোখ মেলে তাকায়ে দেখলো লাল মনি বিশিষ্ট একজোড়া চোখ মীরা কে খুব গভীর নয়নে দেখে যাচ্ছে। মীরা ভ্যামপায়ার টা কে খুব ভালোভাবে গভীর মনোযোগে দেখতে লাগলো।
কিন্তু চারদিক টা এতোটাই অন্ধকারে ছেয়ে আছে যে, কিছুতেই কিছু দেখা যাচ্ছে না, শুধু লাল দুটি চোখ ছাড়া।

– ভ্যামপায়ার টা মীরার গালে আলতো করে হাত রাখলো।

– ঠান্ডা হাতের স্পর্শে মীরার অনুভূতি রা ছন্নছাড়া হতে লাগলো।
মীরার মনে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলো।

– প্রিন্সেস তুমি কি আমাকে খুব ভয় পাচ্ছো?
বিশ্বাস করো আমি তোমার ক্ষতি করতে আসিনি।
তাছাড়া আমি তা চাইবো কেনো?

-মীরা ছলছল চোখে ভ্যামপায়ার টার দিকে
তাকিয়ে আছে, আর দেয়ালে হাতের আঙুল দিয়ে মনে মনে অনেক কিছুই লিখে যাচ্ছে কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করতে পারছে না।

ভয়ে মীরার শিরদাঁড়া ভাঁজ পরতে শুরু করলো, তাই মীরা কোনো কথা না বলে চুপ করেই রইলো।

-প্রিন্সেস….

– ভ্যামপায়ার টা মীরার গালে আরেকটা হাত দিয়ে খুব যত্ন করে ধরে বললো, তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না কতটা ভালোবাসি আমি তোমায়।
বুকের বাঁ পাশে ইশারা করে ভ্যামপায়ার টা বললো, বিশ্বাস করো এ জায়গায় আছো তুমি।
তুমি হয়তো জানো না প্রিন্সেস খুব শীঘ্রই তোমাকে মানুষের জায়গা ছেড়ে দিয়ে প্যালেসে ফিরে যেতে হবে।

– প্যালেসে যাওয়ার কথা শুনে মীরা চমকে উঠে বললো..
প্যালেশ ?

– ভ্যাম্পায়ার তাঁর মায়া ভরা আকুতি নিয়ে মীরার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, কেনো প্রিন্সেস তোমার কি সত্যি পুরনো কিছু মনে নেই?

-মীরা অবাক হলো, ভ্যামপায়ারের কথা শুনে।
তাছাড়া মীরার তো সত্যি কিছু মনে নেই।
মীরা অস্ফুটে স্বরে বললো কি মনে থাকার কথা?
সত্যি আমার কিছু মনে নেই।

” ভ্যাম্পায়ার তাঁর মাথা টা নিচু করে বললো হয়তো মনে না থাকারই কথা।
কিন্তু তুমি কি এতোদিনে এটাও বুঝতে পারোনি তুমি যে একজন সাধারণ মানুষ নয়?”

– মীরা কে এ-ই কথাটা গ্র্যান্ডপাও বলেছিলো। কিন্তু তখন মীরার বিশ্বাস হয়নি।
কিন্তু এখন এই ভ্যামপায়ার টার কথা শুনে সত্যি কিছুটা হলেও মীরার বিশ্বাসযোগ্য লাগছে।

– ভ্যামপায়ার টা তাঁর জ্বলজ্বল করা দু’টো চোখ কাছে এনে বলতে লাগলো, প্রিন্সেস তোমাকে বহুদূর নিয়ে যাবো আমি।
আমাদের আরো অনেক কাজ বাকি।
আমাদের রাজ্য আজ অন্যদের হাতে।
তোমাকে আমাকে যেতে হবে রক্ষা করতে।
মুনস্টোন আমাদের কে আবার জাগ্রত করতে হবে।

ভ্যামপায়ার টা চরম কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো, যাঁরা আমাকে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করেছে তাদের মাথা এবার ঘাড় থেকে আলাদা করা হবে।

আমি যাচ্ছি এখন..
খুব সময় বাকি নেই আমার।
রৌদ্ররৌদ্রময় বাতাস আমার গায়ে এসে লাগছে।
ভ্যামপায়ার টা মীরার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো, প্রিন্সেস খুব ভালো থেকো।
তোমার অজান্তে আমি আছি তোমার চারপাশে।
তোমার মধ্যে আমার বিচরণ সারাক্ষণ বলে অর্ধ মানব টা অদৃশ্য হয়ে গেলো।

-মীরা ভ্যামপায়ার টার যাওয়ার পানে তাকিয়ে না বলা অনেক কথা জমিয়ে রাখলো।

______________

মীরার মাথা টা কেমন যেনো ঘুরছে।
মীরা ভাবতে পারছে না, এতোক্ষণ কি হলো এগুলো।
মীরা খাটে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে একটু চিন্তা করতে লাগলো, ভ্যামপায়ার টা কেনো মীরার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মীরার ভালোর জন্য এতো গুলো কথা বলে গেলো।
ভ্যামপায়ার টা কে মীরার খুব চেনা কেউ আপনের চাইতেও আপন মনে হচ্ছে।
যেনো যুগ যুগ ধরে তারই অপেক্ষায় বেশ কয়েক হাজার যুগ মীরা অপেক্ষা করে আছে।

– মীরার মাথায় চিন্তায় উদয় হলো ঐ ক্ষতিকর প্রাণী টা-ই বা কেনো মীরার পেছনে লেগে আছে।
মীরা এটার কী ক্ষতি করেছে নিজেও জানে না।

– হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল।

ফোনের শব্দে মীরা নড়েচড়ে উঠলো।

মীরা স্কিনে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো, তাকিয়ে দেখলো অপরিচিত নাম্বার।
তাই মীরা ভাবলো ফোন টা ধরবে কি না?
মীরা মনে মনে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক করলো দরকারী কিছু তো হতে পারে।
তাই মীরা আর দেরি না করে ফোন টা ধরে হ্যালো বললো।

– কিছুক্ষণ পর মীরা যা শুনলো চোখে ঝাপসা হতে লাগলো।

– হ্যালো এমনভাবে বলছিস যেনো হেলতে হেলতে আমায় ফেলে দিচ্ছিস!

– রুদ্র ভাই আপনি?

– হ্যাঁ আমি কেনো তুই কি ভাবছিস আমার আত্মা তোর সাথে কথা বলছে?

– মীরা আস্তে করে বললো, তা নয় রুদ্র ভাই, আসলে আমি প্রথমে চিনতে পারিনি।
তাছাড়া আমি ভাবিইনি কখনো আপনি আমায় ফোন দিবেন।

– হ্যাঁ ভাববি কেনো এখন তো তোর ভাবনা অন্যরকম ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কে বিয়ে করা।

– মীরা রুদ্র ভাইয়ের কথা শুনছে, আর মনে মনে বলছে, রুদ্র ভাই আপনাদের কাছ থেকে দূরে আছি সেই অনেক দিন হয়ে গেলো কিন্তু আপনি সেই আগের মতোই আছেন, একটুও চেঞ্জ হননি।
জানি আপনি হয়তো কখনো হবেনও না।
আর হবেন বা কেনো আমি তো আর আপনার কিছু নই।
আপনি হলেন আমার ইরা আপুর বাগদত্তা।

সবার অজান্তে এ-ই মীরার মনের ক্যানভাসের রাজকুমারের নাম টা না হয় রুদ্রই থাকলো।

-কিরে সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি এখন তো দেখছি ইংল্যান্ডে গিয়ে ভারী দামও দেখাচ্ছিস আমার সাথে।

– মীরা গভীরভাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, রুদ্র ভাই আপনি কেমন আছেন?

– তোর কি মনে হয়?
আমি তোকে ছাড়া নাওয়াখাওয়া বন্ধ করে দম আঁটকে বসে আছি।
আর এখন তোর সাথে কথা বলে দম ফেলছি।
তোর কেনোই বা মনে হলো আমি খারাপ আছি।

– মীরা রুদ্র ভাইয়ের কথা শুনে অবাক হচ্ছে, সামান্য একটা কথা নিয়ে রুদ্র ভাই মীরা কে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।
কিন্তু মীরা কিছুই বলতে পারছে না, একটাই কারণ মীরা যে তাঁর রুদ্র ভাই কে ভীষণ রকম ভালোবাসে।

মীরা মনে মনে হাসি দিয়ে বললো, রুদ্র ভাই আপনি যেমন হোন না কেনো, কেনো জানি সেই ঘুরেফিরে আপনাকেই ভালো বাসতে চায় এ মন।
কারো চিৎকারে মীরার ঘোর ভাংলো।

জ্বি রুদ্র ভাই বলুন আমি শুনছি।

– মীরা তুই এমনভাবে বলছিস যেনো তোকে বলা ছাড়া আমার পেটের ভাত হজম ই হচ্ছে না।
শুন আগামী সপ্তাহে আমার আর ইরার বিয়ে।
মা বললো খবর টা তোকে যেনো জানিয়ে দেই।
তাছাড়া ইরাও বললো তোকে না-কি আজ কয়েকদিন হলো লাইনে পাচ্ছে না, তাই আজ আমি লাইনে পেলাম তোকে নিমন্ত্রণ করে ফেললাম।

– আচ্ছা।

– আচ্ছা কি রে, এমন ভাবে আচ্ছা বলছিস যেনো তোর আচ্ছার জন্য আমাদের বিয়ে আঁটকে যাচ্ছে।

– বিয়ের খবর শুনে মীরার চোখে জল এসে ভিড়ে গেলো।
মীরা অনেক কষ্টে কানার শব্দ লুকানোর চেষ্টা করলো।
রুদ্র ভাই পারবো না আমি কিছুতেই, আপনাদের বিয়েতে থাকতে।
কখনো দেখতে পারবোনা আপনাকে অন্যজনের জন্য বর সাজতে।
আমার এ-ই বিরহ থাক না সাদা আকাশে ধূসর কালো মেঘ হয়ে।
সবাই তো আর সব পায় না, আমিও না হয় কিছু পাওয়া নাই বা পেলাম।
তবুও চাই আমার রুদ্র ভাই ভালো টা অন্তত থাকুক।

– শুন মীরা তুই আসবার সময় আমার বউয়ের জন্য ভালো একটা গিফট আনবি।
দেখিস কিন্তু ভুলে গিয়েছি বলে বিনা গিফটে খেতে চলে আসিস না।

– রুদ্র ভাই রাখছি এখন একটু কাজ আছে বলে মীরা ফোন টা রেখে দিলো।

– মীরা বেশ উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো আর বলতে লাগলো, রুদ্র ভাই আমি যাবো না আপনার বিয়েতে।
আমি পারবোনা আপনাকে ছেড়ে বাঁচতে।
আপনি ভালো থাকুন ইরা আপু কে নিয়ে।

______________________

– আজ খুব সকাল সকাল ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিলো।
তাঁর একটাই কারণ আজ সবার ট্যুরে যাওয়ার কথা।
যদিও মীরার আজ মন খারাপ তবুও মীরা রুদ্র ভাই কে ভুলে থাকতে চায়।
থাকুক না রুদ্র ভাই রুদ্র ভাইয়ের মতো করে।
মীরা কেনোই বা কারো খুশির মাঝে গিয়ে বাঁধা দেবে।
মীরা ব্যাগে যে-ই হাত দিলো হাতে কিছু একটা লাগলো।
মীরা বের করে দেখলো সেই পায়েল টা, যেটা মীরা ঘুম থেকে উঠে নিজের পায়ে দেখতে পেয়েছিল।
মীরা পায়েল টার দিকে পায়েল টা আবার রেখে দিলো।

– সান্ড্রা মীরা কে দেখে বার-বার জিজ্ঞেস করলো চোখ মুখ এমন ফোলা কেনো?

– কিন্তু মীরা কিছুই বললো না।

– সান্ড্রা মীরার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি তে চলে আসলো।

ভার্সিটির গেইটে পা দেওয়ার পর পরই সানার সাথে মীরার দেখা হয়ে গেলো।

– সানা মীরা কে দেখে জড়িয়ে ধরলো।

তারপর সবাই একসাথে রওয়ানা হলো ট্যুরের উদ্দেশ্যে।

– মীরা বাসের জানালার পাশে বসে আছে।
মীরার অদম্য মনটা বার বার রুদ্র ভাই কে মনে করতে ব্যাস্ত।
মীরা হাত দিয়ে চোখের জল মুছছে।
মীরা রুদ্র ভাই কে নিয়ে আর কিছুতেই ভাবতে চায় না।
তবুও অবাধ্য মন কিছুতেই মানতে চাইছে না।

-বাসটা হঠাৎ থেমে গেলো।
মীরা চারদিকে তাকিয়ে সামনে একটা বিশাল বড়ো প্যালেস।
প্যালেস টা কেমন যেনো মীরা কে কাছে ডাকছে।
প্যালেস টা যেনো মীরার বহুকাল আগ থেকেই পরিচিত।

#চলবে—

বিদ্রঃ সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
গল্প আবার ৬ তারিখ আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here