ব্লাক ডায়মন্ড পর্ব ১৭

#ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-১৭

______________________

-মীরা প্যালেসে দিকে যতো পা বাড়াচ্ছে পা যেনো নিজ থেকেই আগে আগে চলে যাচ্ছে সামনে।
মীরার কাছে কেমন অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে যেনো প্যালেস টা তাকে হাতছানি দিয়ে খুব আপন ভাবে কাছে টানছে।

-মীরা প্যালেস টার কাছাকাছি গিয়ে থমকে দাঁড়ালো।
মীরা প্যালেস টাকে কেমন অদ্ভুত ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
মীরার চোখে ধরা পরলো সেই দু’টো ভ্যামপায়ারের ছবি মূর্তি।
যা গ্র্যান্ডপার কক্ষে দেখেছিলো।

– এখানেও মূর্তি কালো হুডি পরিহিত করে নিজেদের আবদ্ধ করে একে অপরের হাত খুব গভীরভাবে ধরে রেখেছে।

মীরা হাত দুটোর দিকে বেশ ভালো করে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো ওদের মধ্যে খুব বেশি ভালোবাসা বিদ্যমান ছিলো।

-হঠা কেউ মীরা……. বলে ডেকে উঠলো।

– মীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো সানা ডাকছে।

মীরা খুব বেশি অবাক হলো এটা ভেবে সবাই কতো পেছনে কিন্তু মীরা প্যালেসের দরজা অবধি এসে দাঁড়িয়ে আছে।

– সানা খুব দ্রুত দৌড়িয়ে মীরার কাছে এসে ইংলিশে বললো, মীরা আগে আগে ঢুকতে প্রফেসর নিষেধ করেছেন, তাছাড়া এটা একটা ভ্যামপায়ারের প্যালেস।
এন্ড্রে মেসিস আমাদের সবাই কে বলে দিয়েছেন এই প্যালেসে একা কেউ প্রবেশ করলে কেউ আর ফিরে আসতে পারে না।

– সানার কথা শুনে মীরা একটুও চমকালো না। কারণ মীরা নিজেও জানে মীরা একজন সাধারণ মানুষ নন।
তাছাড়া সেই প্রথম থেকেই মীরার কেমন যেনো লাগছে এই প্যালেস টা কে।এটা যে শুধু দর্শনীয় প্যালেস তা কিন্তু মীরার কাছে মনে হচ্ছে না। এ প্যালেস সম্পর্কে জানবার জন্য মীরার মন বড্ড বেশি ব্যাকুল হয়ে আছে ।
.
.
.

হঠাৎ কারো চিৎকারে দু’জনের ঘোর কাটলো।
সানা মীরার দিকে এক নজর তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে দেখলো চোখ মুখ লাল করে নিউ প্রফেসর মেথিস দাঁড়িয়ে আছে।

– মেথিস চিৎকার করে ইংলিশে বলে উঠলো, তোমাদের কি কান্ডজ্ঞান কিছুই নেই নাকি?
তোমাদের সবাই কে বার-বার করে বলা হয়েছে এই প্যালেস কোনো সাধারণ প্যালেস নয়। এখানে সবাই একসাথে থাকতে হয়, একা একা এই প্যালেসে যাওয়া যাবে না।

– মীরা খুব বেশি অবাক হলো নিউ প্রফেসর মেথিস কে খুব সাধারণ মানুষ মনে করলেও উনি বেশ রাগী একজন মানুষ।
উনার ফর্সা রং রাগে একদম লাল বর্ন ধারণ করেছে।

– সানা মেথিসের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে সরি বললো।

– মেসিস মীরার দিকে এক নজর তাকিয়ে
সব স্টুডেন্টদের ভেতরে প্রবেশ করলো।

“সবাই ভেতরে প্রবেশ করে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
প্যালেস টা এতোটাই সুন্দর যে যে কেউ এর সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে যাবে ।
প্যালেস টার জায়গায় জায়গায় স্বর্ণ রৌপ্য আরো দামী দামী হিরা,পান্না দিয়ে কারুকার্য করা। ”
.

-মীরা প্যালেস টার প্রতিটা জিনিস হাত দিয়ে দিয়ে স্পর্শ করে দেখছে। প্যালেস টাকে মীরা কাছে এমনই মনে হচ্ছে যেনো প্যালেস টায় মীরা কয়েক কোটি বছর কাটিয়েছে।
প্যালেস টার ভেতর এসে মীরার অদম্য মনে আজ যেনো শান্তির পরশ লাগলো।
ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ মীরার ছোঁয়া লেগে একটা পর্দা সরে গিয়ে কিছু একটা দেখা গেলো।
মীরা পর্দা টা বেশ ভালো করে সরিয়ে যা দেখলো থমকে দাঁড়ালো।

মীরা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারলো গ্র্যান্ডপার রুমের সেই দু’টো ভ্যামপায়ারের মধ্যে যে মেয়ে ভ্যামপায়ার টা কে মীরা দেখেছিলো, সেই মেয়েটার ছবিই আঁকা এখানে।
সেই একই রকম ভাবে কালো হুডি পরিহিত কালো পোশাকে পুরো শরীর আবৃত করা।
তবে এই ছবিটায় মেয়ে টার হুডি টা নাক বরাবর সামান্য একটু ঠোঁট দেখা যাচ্ছে।

– ছবিটা কে মীরা বেশ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ঠোঁট গুলোর দিকে তাকিয়ে নিজেই চমকে গেলো।
অজান্তে নিজের ঠোঁট গুলোতে হাত বুলালো।

মীরা ছবিটার কাছ থেকে সরে গিয়ে আবার ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।

মীরার হাত লেগে দু’টো ছবির পর্দা সরে গিয়ে দু’টো মানুষের ছবি দেখা গেলো।

ছবি দু’টো দেখে মীরার চোখ দিয়ে আপনা-আপনি জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।
মীরা চোখে হাত দিয়ে অবাক হলো চোখের পানি বের হয়েছে বলে।

ছবিগুলো দেখে মীরার ভেতর টা কেমন যেনো কেঁদে উঠলো।

দু’জন রাজা -রানীর ছবি আঁকা।

রানী টা দেখতে অপরূপ সুন্দরী।
রানী টার চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখগুলো যেনো ইশারা করে মীরা কে কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে কিন্তু মীরা বুঝতে পারছেনা।

মীরা রাজা টার ছবির মধ্যে নিজের দু’টো হাত বুলিয়ে দিলো।
মূহুর্তেই মীরার শরীরে যেনো এক অদ্ভুত অনূভুতি খেলে গেলো।
যেনো পৃথিবীর অদম্য সুখগুলো মীরা আজ ধরতে পেরেছে।

মীরা রানী টার হাতে নিজের হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
মূহুর্তেই মীরার মন প্রাণ আজ ভরে গেলো।
জীবনের পাওয়া না পাওয়ার সুখগুলো যেনো আজ মীরা কে পুরোপুরি পরিপূর্ণ করে দিলো।

মীরা চোখ বন্ধ করবার সাথে সাথে চোখে অনেক কিছু ভেসে উঠলো।

-মমতাময়ী দু’টো পুরুষ হাত মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে মীরা কে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললো মা-ই ডটার্স ডোন্ট ওয়ারী, এন্ড ডোন্ট ক্রায়িং প্লিজ।

মীরা অভিমান করে যে-ই চোখ ফিরিয়ে নিলো কেউ একজন এসে মমতাময়ী পুরুষ টার পিঠ দিয়ে ছুরি টা বসিয়ে দিলো।

-মীরা পেছন ফিরে তাকিয়ে আঁতকে উঠল।
মমতাময়ী পুরুষ টা মূহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেলো।

.
.
.

ঘাড়ে হঠাৎ কারো স্পর্শে মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো সানা দাঁড়িয়ে আছে।

-মীরার ভেতর টা এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
মীরার বুকের হার্টবিট ভীষণ ভাবে উঠানামা করছে।
দু-চোখ বেয়ে অশ্রু জল গড়িয়ে পরছে।

সানা মীরা কে দেখে বললো মীরা কাঁদছো কেনো?

– মীরা নিজেও অবাক হচ্ছে, মীরার চোখে অশ্রু পরতে দেখে।
মীরা সানার দিকে তাকিয়ে বললো, ও কিছু নয়, হঠাৎ চোখে কিছু একটা পড়েছে হয়তো।
চলো সামনে এগিয়ে যা-ই।

– মীরা চলে গেলে সানা ঐ দু’টো ছবির দিকে তাকিয়ে ছবি দুটোয় কোমল হাত বুলিয়ে , দু ফোঁটা চোখের জল মুছে নিলো।

.
মেথিস খুব সুন্দরভাবে প্যালেস টা কে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।

হঠাৎ মেথিসের চোখ আঁটকে যায় মীরার পানে। মীরা একটা কক্ষে একা একা দাঁড়িয়ে আছে।

মেথিস মীরার বিমর্ষ মুখ দেখে মীরার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো কোনো প্রবলেম?

– মীরার এখনো কান্না আসছে বুক টা ফেটে ভীষণ কান্না পাচ্ছে মীরার।
মীরা কথাগুলো কাকে কিভাবে বলবে কিছুই যেনো বুঝতে পারছেনা।
মীরা নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মেথিস কে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললো।

– মেথিস খুব বেশি চমকে উঠলো, মীরার এভাবে জড়িয়ে ধরাতে।

– রুদ্র ভাই আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমার কেনো জানি খুব কষ্ট হচ্ছে বুক ফেটে কান্না আসছে।
এই প্যালেস কে আমার খুব বেশি চেনা মনে হচ্ছে।
কেনো জানি মনে হচ্ছে এই প্যালেসে আমার প্রিয়জনদের বিমূর্ত কিছু স্মৃতি আমাকে বার বার মনে করিয়ে কিছু বুঝাতে চাইছে।
চোখের সামনে বার-বার প্রিয় কিছু মুখ ভেসে উঠছে।
কারা যেনো আমায় আদর মাখা দুইজোড়া হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কিছু একটা বলে বুঝাতে চাইছে।
কিন্তু আমি অভিমানে বার-বার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।

মীরা রুদ্র ভেবে মেথিস কে আরো বেশি কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে রাখলো।

কোথাও একটুখানি ফাঁকা জায়গা নেই।

– মেথিস কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, এদিকে কেউ এসে দেখলে মেথিস কে খারাপ ভাববে।

মেথিস আর কোনো উপায় না পেয়ে মীরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ডোন্ট ক্রাই মীরা, প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।

-হঠাৎ কারো ইংলিশ ভাষা শুনে মীরা চমকে চারদিকে তাকিয়ে দেখলো।
কারো বুকের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে মীরার ঘোর ভাংলো।
মীরা এতোক্ষণ রুদ্র ভেবে মেথিস কে কথাগুলো বলেছে।

তাছাড়া মীরা কি করেছে, কি বলেছে এতোক্ষণ ধরে নিজেও জানে না কিছু
হঠাৎ মীরা মেথিসের বুক থেকে সরে দাঁড়িয়ে মেথিসের চোখ থেকে চোখ নামিয়ে সরি বললো।

– মেথিস ইট’স ওকে বলে হনহন করে চলে গেলো।

– মীরা চোখের জল মুছে নিয়ে মনে মনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
কারণ মীরা মনে মনে এটা ভেবে নিয়েছে, মেথিস মীরার বলা কথাগুলো বুঝতে পারেনি। মীরা এতোক্ষণ ধরে যা বললো তা সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় বলেছিলো।
আর মেথিস তো সম্পূর্ণ বিদেশি, সে বাংলা ভাষা কখনো বুঝবে না।

কিন্তু মীরার এটা ভেবে খারাপ লাগছে, রুদ্র ভাই ভেবে মেথিস কে এভাবে জড়িয়ে ধরা টা।

এটা মনে হলে লজ্জায় মীরার মাথা কাটা যাচ্ছে।

মীরা মনে মনে এটা ভেবে নিলো, আমি সত্যি চরম বোকা রুদ্র ভাই তা না হলে কেন ই বা আমি আপনাকে ভাববো।.
.

মীরা রুমে আলো নেবাচ্ছে আর জ্বালাচ্ছে।
বাহিরের থেকে এসে যেই রুমে এসে ঢুকেছে মীরা আর বের হয়নি।

মীরা বসে বসে ভাবছে প্যালেস টা কি সত্যি মীরার চেনা। ইংল্যান্ডের এমন একটা প্যালেস মীরার চেনা হবে কেনো?

– হঠাৎ কেউ একজন কালো আবছায়া থেকে ইংলিশে বলতে লাগলো ,
তুমি মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করো কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।
মন যখন যা বলে তাঁর মধ্যেও অনেক কিছু থাকতে পারে।

মনের ভাষা যে বুঝতে পারে সে সকল কিছুর সমাধান জানে।

#চলবে ——-

বিদ্রঃ আজকের থিম মেলাতে খুবি কষ্ট হয়েছে, সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
এই গল্পটা শেষ করে গল্প প্রতিদিন দেওয়া হবে, তাছাড়া গল্পের থিম মেলাতে নিজে খুব বেশি হিমশিম খাচ্ছি। ৮ তারিখ গল্প আসবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here