#ডায়েরি_পর্ব_১৩
জান্নাতুল জান্নাত
৯ই জানুয়ারি ২০১৬ রাত ৩:২৫
আচ্ছা আমি কাঁদছি কেন? কিসের কষ্ট আমার? তপুর জন্য কাঁদব? তাতো প্রায় এগারো বছর আগে ঝর্ণার জলে ধুয়ে ফেলেছি৷ তবে কিসের জন্য কাঁদব আবার? ঐ নামটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম৷ আজকের সন্ধ্যেটা না হয় দুঃস্বপ্ন ভেবে আবার ভুলে যাব৷
ফোনটা এতক্ষণ বন্ধ করে রেখে ছিলাম৷ এক ঘন্টা আগে খুলেছি৷ খুলতেই তপুর ফোন আসলো৷
সাইলেন্ট মুডে ড্রয়ারে ফোনটা রেখে দিলাম৷ একটু আগে ধরে দেখলাম ৫৫টা মিসড কল৷ সবগুলোই তপুর৷ কেন আমি ওর ফোন ধরব? আমাকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছে৷ আমি নিজে নিজেকে অপমান করলেও আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে অপমান করার সাহস পায়নি৷ শেষ পর্যন্ত আমাকে বলল শরীরের জ্বালা মেটাতে ওর কাছে গিয়েছি৷ আমার নাকি শরীরে জ্বালা? ও কি জানে এ শরীরে জ্বালা হওয়ার সুযোগই নাই৷ তুমি আর কী জ্বালা মেটাবে? আমার জ্বালা মেটানোর সাধ্য তোমার নেই৷ তুমি তো জানোনা আমি কিসের টানে তোমার কাছে গিয়েছিলাম৷ আমার কিসের অভাব? অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি সব আছে আমার৷ আমার তো শরীরে নয়, মনে জ্বালা৷ শরীরে তো কয়েকদিন পর পরই কেউ না কেউ হাত বুলায়৷ তাতে থাকে লালসা কিন্তু ভালোবাসা নেই৷ আমি তো শুধু একটু ভালোবাসার কাঙাল৷ একটু ভালোবাসার জন্য গিয়েছিলাম তোমার কাছে আর তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিলে৷ শুধু ফিরিয়ে দিলেও হত তুমি আমাকে চূড়ান্ত অপমান করে ফিরিয়ে দিলে৷ এই নাকি তুমি আমাকে ভালোবাসতে? তাহলে কি করে পারলে ঐ নোংরা কথাগুলো বলতে? একটুও বুকে বাঁধেনি? এই যে ফোন করছো কেন করছো? কেন এখনও ফোন করে চলেছো? ক্ষমা চাইবে? কোন ক্ষমা নেই তোমার৷ আমি আর তোমাকে ভালোবাসিনা৷
ফোন বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে রইলাম৷
অঞ্জু আমি জানি আমি ভুল করেছি অন্যায় করেছি তাই বলে একবারও ফোনটা রিসিভ করা যায় না? আমি তো না জেনে না বুঝে বলেছি৷ আমি শুধু আমার নিজের দিকটা দেখেছি৷ তোমার কথা একবারও ভাবিনি৷ এর শাস্তি এভাবে দিও না একবার ফোনটা ধরো?
ফোন করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা৷ তনুর ঐ চিঠিটা কেন আরেকটু আগে আমার হাতে পড়লো না? তাহলে তো অঞ্জুকে এমন করে অপমান করতাম না৷ কাল যাব অঞ্জুর শ্যুটিং স্পটে৷ কিন্তু কী করে জানবো যে কোথায় শ্যুটিং হচ্ছে? ঝামেলার দরকার নেই৷ খুব সকালে উঠেই রওনা দেবো ওদের বাসার উদ্দেশ্যে৷ কিন্তু বাসায় কি তখন অঞ্জু থাকবে? যদিও থাকে এসব কথা বলার পরিবেশ কি থাকবে? ওর শাশুড়ি বাসায় থাকলে যদি কিছু মনে করে? যা হয় হোক কাল ওদের বাসায় যাবই৷ বলব তনুর খবর নিতে এসেছি৷
১০ই জানুয়ারি রাত ১০টা বেজে ২০ মিনিট
ব্যক্তিগত ফোন নম্বর বন্ধ থাকার কারণে অঞ্জনদা বাসার টেলিফোনে ফোন করে আমাকে চাইলেন৷ আমার শ্রদ্ধ্যেয়া শাশুড়ি পি.এ আমাকে ডেকে দিলেন৷ একটা হোটেলের ঠিকানা দিলেন৷ আমি সামনে থাকা কাগজে লিখে রাখলাম৷ ফ্রেশ হয়ে ঠিকানার ছবি মোবাইলে তুলে নিয়ে হোটেলে চলে গেলাম৷
পরিপাটি সাজ আমার একটু পরেই অগোছালো হবো, হবো অশুচি৷ আর প্রায় একটা বছর৷ তারপর আমার মুক্তি৷ আসলে কি মুক্তি মিলবে? এদের হাত থেকে কখনো কী ছাড়া পাব নাকি এভাবেই কাটবে সারাটা জীবন? ছাড়া পেয়েই বা কোথায় যাব? যে সম্পর্কে শ্রদ্ধ্যা বা ভালোবাসা নেই সে সম্পর্ক রেখে কি লাভ? সুব্রতর সাথে এ সম্পর্কটা কি আসলে কোন সম্পর্ক? কেন বয়ে নিয়ে যাব? বের হবো আমি এ সম্পর্ক থেকে৷ আমি ডিভোর্স নেবো৷ তপুর কাছেও যাব না৷ আমার জীবনে কাউকে দরকার নেই৷ আমি একা থাকব তিনটি সন্তান নিয়ে৷ ওরা একদিন আমার বুকে ফিরে আসবে৷ ওরাই আমার জীবনে বেঁচে থাকার অণুপ্রেরণা হবে৷ আত্মহত্যা আমি কখনো করব না৷ আত্মহত্যা তো করে ভীতুরা৷ এগারোটা বছর যেহেতু সহ্য করে বেঁচে আছি আর একটা বছরও না হয় পারবো৷ নিজের মতো করে বাঁচব বাকিটা জীবন৷
প্রায় একঘন্টা পর হোটেলে পৌঁছালাম৷ দেশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মনোরঞ্জন করতে হবে আজ৷ আমি আমার কর্তব্যে নিয়োজিত৷ এ সময় কারো রুমে আসার অনুমতি নেই৷ কিন্তু কেন যে কেউ নক করছিলো বুঝতে পারছিলাম না৷ ভদ্রলোক আমাকে বসিয়ে রেখে নিজেই দরজা খুলে বললেন—
‘কে আপনি? কাকে চাই? এখানে কেন?’
‘অঞ্জুকে চাই৷ অঞ্জু আছে?’
‘অঞ্জু কে? এটা কি কাউকে খোঁজার জায়গা?’
‘অঞ্জু মানে অঞ্জনা রায় চৌধুরী৷ আমি জেনেই এসেছি ও এখানে আছে৷’
ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন৷
‘এই যে মিসেস অঞ্জনা৷ তুমি একসাথে দু’টো সিডিউল রাখো সেটা তো ঠিক নয়৷ আজ সন্ধ্যে পর্যন্ত তুমি আমার জন্য বুক করা৷ টাকাগুলো কি অঞ্জনকে এমনি দিয়েছি? আর এই যে মিষ্টার এসেছে এর তো এক বছরের ইনকামও আমার অঞ্জনকে দেয়া টাকার চেয়ে কম মনে হচ্ছে৷’
এবার তপু ভিতরে তাকালো
“আমার চোখে চিরচেনা মুখটি দর্শন হলো৷ আমরা উভয়েই আপত্তিকর অবস্থায় ছিলাম৷ আজ যেন মরমে মরে গেলাম আমি৷ এ কথাগুলো শুনে নিশ্চয়ই সব বুঝে গেছে তপু৷ কিন্তু তপু এখানে কি করে এল? কেনই বা এল? হোটেলের ঠিকানা কোথায় পেল?”
‘কি হলো মিসেস? উত্তর দিন৷’
‘উনি আমার পরিচিত কিন্তু ওনাকে কোন সিডিউল দেয়া হয়নি৷ উনি আমার বন্ধু হোন৷’
‘বন্ধু হোক আর যাই হোক আজকের বিকেল পর্যন্ত তুমি শুধু আমার আর এ লোকের জন্য আমার সময় নষ্ট হল৷ কে দিবে আমাকে সে সময়? তুমি কেন ওনাকে এ ঠিকানা দিয়েছো?’
‘আমি দেইনি৷ আমাকে ওনার সাথে কথা বলতে দিন৷’
আমি তপুর দিকে এগিয়ে গেলাম৷ তপু আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল৷
‘এখানে কেন এসেছো? কে দিয়েছে তোমাকে এ ঠিকানা?’
‘তোমার সাথে আমার কথা আছে অঞ্জু৷ তোমাকে ফোন করছিলাম তুমি ফোন ধরছিলে না তাই তোমার বাসায় গেলাম৷ সেখানে তোমার শাশুড়ি একটা কাগজ দিলেন৷ সেখানেই এ ঠিকানাটা লেখা ছিল৷’
‘দেখা করতে এসেছো৷ দেখা তো হয়েছে৷ এখন চলে যাও৷’
‘তোমার সাথে আমার কথা আছে৷ আধঘন্টার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন৷’
‘পেমেন্ট করবে?’
তপু বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে৷
‘এসব দেখেও তোমার এখনও আমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে আছে তপু?’
‘হ্যাঁ আছে৷ তবে পেমেন্ট করার সামর্থ আমার নেই৷’
‘আচ্ছা৷ দাঁড়াও৷’
আমি রিসিপশনিষ্টকে ফোন করলাম৷ তপুর নামে একটা রুম বুক করে তপুকে বললাম
‘তোমার নামে রুম বুক করেছি৷ ওখানে থাকো যা খেতে ইচ্ছে করে অর্ডার দিয়ে খাও৷ আমি সন্ধ্যার পর তোমার রুমে আসবো৷ এখন যাও এখান থেকে৷’
তপু চলে যেতেই আমি দরজা বন্ধ করে দিলাম৷
‘আপনার যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে সেটুকু আমি পুষিয়ে দেবো৷’
‘তাহলেই হবে৷ তবে আমার ব্যক্তিগত সময়ে কেউ আমাকে বিরক্ত করুক সেটা আমার ভালো লাগে না৷ এছাড়া এই লোকটা যদি বাইরে গিয়ে আমার এ কীর্তিগুলো ফাস করে দেয় আমার ইমেজ কোথায় গিয়ে নামবে সেটা বুঝতে পারছো?’
‘তপু কাউকে কিছু বলবে না৷’
উনার সাথে নির্দিষ্ট সময় ছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত৷ তপু আসাতে সময় বাড়িয়ে সাড়ে ছ’টা করতে হল৷
এখান থেকে বেরিয়ে তপুর রুমে গেলাম৷
‘বলো কেন দেখা করতে চেয়েছো?’
‘এই লোকটার সাথে এভাবে সময় কাটানো কি খুব জরুরি ছিল?
‘হ্যাঁ৷ আর কিছু বলবে?’
‘তুমি কেন এসব সহ্য করছো?’
‘আমি কিছু সহ্য করছি না৷ এটা আমার কর্তব্য৷’
‘মানে কি?’
‘তোমার জানার প্রয়োজন নেই৷ কেন দেখা করতে চেয়েছো সেটা বলো৷’
তপু আমার হাত দু’টি নিজের হাতে ধরে বলল—
‘যাবে আমার সাথে আমার ছোট্ট কুটিরে?’
‘তুমি তো জানো আমার শরীরের জ্বালা বেশি আর সেটা মিটাতেই এখানে এসেছি৷ তোমার কাছে গিয়ে আমার চলবে না৷’
‘অপমান করছো? তুমিই তো গত সন্ধ্যায় গিয়েছিলে৷ তবে?’
তপুর হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে বললাম
‘অভিনয় করেছি৷ এই অভিনয়টুকু বুঝতে পারোনি? আসলে অনেক বছর যাবৎ করছি তো তাই আয়ত্বে এসে গিয়েছে৷ তাই আমার অভিনয়টাকে তুমি সত্যি ভেবে ধরে নিয়েছো৷’
‘আমাকে ক্ষমা করো অঞ্জু৷ আমি ভুল করেছি৷ চল আমরা নতুন জীবন শুরু করি৷’
‘তোমার কথা শেষ হয়েছে?’
‘চল আমার সাথে৷’
‘তোমার পথে তুমি যাও৷ রাত হয়ে গেছে৷ হোটেলটা ভালো নয়৷ থাকলে অন্য কোথাও গিয়ে থাকো৷ আমি পেমেন্ট করে দিয়ে যাচ্ছি৷ আমি যাওয়ার পর তুমিও বেরিয়ে যেও৷’
আমি বেরুনোর জন্য উদ্যত হলে তপু জড়িয়ে ধরলো৷
‘ছাড়ো তপু৷ আমি অশুচি৷’
‘আমি জানি৷ সব অশুচি ভুলে চলো ঘর বাঁধি৷ ছোট্ট কুড়েঘর৷ তুমি আমি আর আমাদের তিন সন্তান৷’
‘আরো অপমানের বাকি আছে তপু? আমি অঞ্জনা রায় চৌধুরী, নায়িকা অঞ্জনা রায় চৌধুরী তোমার দরজায় ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আর তুমি? তুমি আমাকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছো৷ আবার কেন এসেছো?’
‘আমাকে ক্ষমা করো৷ কালী মায়ের দিব্যি করে বলছি আমার দ্বারা তুমি আর কখনোই কষ্ট পাবে না৷ এই তপু আর কোনদিন তোমাকে ভুল বুঝবেনা৷’
এক ঝটকায় তপুকে ছাড়িয়ে বললাম—
‘স্বার্থপর ছেলে কোথাকার!!! চিরটাকাল নিজে যা ভালো মনে করেছো তাই করেছো৷ কখনো কারো মন দেখতে চেয়েছো? তোমার ইচ্ছে হল তুমি আমাকে ছুড়ে ফেললে আবার ইচ্ছে হল ফিরে এলে? তোমরা ছেলেরা এমন কেন?’
এবার তপু আমার পায়ের সামনে হাঁটুগেড়ে বসলো
‘তুমি গিয়েছিলে আমার দুয়ারে ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে৷ আজ আমি এসেছি৷ দু’হাত তুলে ভিক্ষে চাইছি তোমায়৷ ফিরিয়ে দিও না৷ যা করেছি তার জন্য যে শাস্তি দাও সব মেনে নেবো শুধু তুমি আমার হয়ে যাও৷ এগারো বছরে আমার বুকটা ধূ ধূ মরুভূমি হয়ে আছে৷ দেবে না তাতে একটু শীতল জলের ছোঁয়া? বলো না অঞ্জু? শিউলি রক্তজবা দিয়ে পূজিবো তোমায়৷ আমি অশুচি অঞ্জুকে চাই৷ আমার ভালোবাসার জলে তোমায় স্নান করিয়ে শুচি করবো৷’
আমার চোখ বেয়ে জল পড়ছে৷ তপুর চোখের জল আমার পায়ে পড়লো৷ মনে খুব অপরাধবোধ হচ্ছিলো৷ তপু আমার স্বামী তার চোখের জল পায়ে পড়লো?
হাত ধরে উঠাতে উঠাতে বললাম
‘তোমাকে দেয়ার মতো যে অবশিষ্ট কিছু নেই আমার৷’
‘যা ছিল আমার তা শুধু আমারই৷ আমার সম্পত্তিতে তো আজ পর্যন্ত কেউ হাতই দিতে পারেনি৷ নেবে কী করে?’
‘কি বললে বুঝলাম না৷’
‘সবাই তো তোমার শরীর নিয়ে খেলেছে৷ আজ পর্যন্ত কেউ কি তোমার মনের সন্ধান পেয়েছে অঞ্জু? সেটার মালিক তো একমাত্র আমি৷’
‘আমি এতদিন…….’
‘কিচ্ছু শুনতে চাই না৷ আজ থেকে তুমি শুধু আমার৷ বাকি সব ভুলে যাও৷’
‘আরো একটা বছর আমাকে এদের সাথে থাকতে হবে৷ তবে আমি ডিভোর্সের জন্য কেস করতে পারি৷’
‘তবে তাই করো৷ কিন্তু এক বছর কেন?’
‘বারো বছরের চুক্তিবদ্ধ আমি৷ এগারো বছর চলছে আরো একটা বছর আমাকে থাকতেই হবে৷ পারবে অপেক্ষা করতে?’
‘পারব৷’
সত্যিই আজকের দিনটা আমার কাছে অন্যরকম লাগছিলো৷ তপুকে ফিরে পেলাম৷ ফিরে পেলাম আমার হারানো ভালোবাসা৷
তপু আর আমি একসাথেই বের হলাম৷ আমাকে বাসায় নিয়ে যাবার পর ড্রাইভারকে বললাম তপুকে পৌঁছে দিতে৷ আবার রাতেই ফিরতে বললাম৷ আজ বাসায় এসে স্নান করে সিঁদুর পড়লাম৷ মনটা খুব ফুরফুরে৷ উকিলের সাথে ফোনে কথা বললাম৷ চিন্তা হচ্ছে সুব্রত কী আদৌ আমাকে ডিভোর্স দিতে রাজি হবে?
২৫শে এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২টা ৪৫ মিনিট
কাজের প্রয়োজনে প্রায়শই আমি বাইরে থাকি তাই শাশুড়ি স্বামীর সন্দেহের উর্ধ্বে৷ বাইরে থাকলেই তারা ভাবে অঞ্জনদার সাথে আছি৷ আসলে আমি কাজ সেরে তপুর কাছে যাই৷ সম্পর্কটা ভালোই চলছে৷ মাঝেমধ্যে তপুর সাথে থাকি৷
না, আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি৷ সুব্রতকে ডিভোর্সের পর তপুকে আবার বিয়ে করব৷ তারপর আমরা স্বামী স্ত্রীর মতো থাকব৷ এখন আর আগের মতো ডায়েরি লিখি না৷ আসলে সময়ও পাই না৷ আমার কষ্টগুলো তো এখন নেই৷ বেশ ভালো আছি৷ ছেলেমেয়েগুলোও ভালো আছে৷ সুব্রতের সাথে ডিভোর্সের কেস করেছি৷ ওর আচরণে কিছুই বুঝতে পারছি না ডিভোর্স দিবে কি দিবে না৷ না দিলে আমি একতরফা ডিভোর্স দিয়ে আসবো৷
২৯শে আগস্ট রাত ৯টা বেজে ৫০ মিনিট
অঞ্জনদা এর আচরণ অন্যরকম লাগছে৷ ইদানিং মনে হয় আমার উপর নজরদারি করছে৷ প্রায় প্রতিদিনই জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাই, কোথা থেকে আসি, কোথায় থাকি? আমার কি তপুর কাছে ঘন ঘন যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে? সুব্রতকে কি কিছু বলেছে অঞ্জনদা? সুব্রত ইদানিং কেমন করে যেন তাকায়? আবার এও তো হতে পারে ডিভোর্স চেয়েছি বলে এমন করছে৷ যাই হোক আমি এই নরকে আর থাকতে চাই না৷ আগামি ৩০শে নভেম্বর আমাদের ডিভোর্সের তারিখ ঠিক হয়েছে৷ সুব্রত রাজি না হলেও আমি মুক্ত হয়ে যাব ওর থেকে৷
২৯শে নভেম্বর সকাল ৮টা ২০ মিনিট
আজ আমি ভীষণ খুশি৷ কালই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব৷ আমি একটা ছোট্ট বাড়ি কিনেছি৷ আমরা পাঁচজন থাকব৷ আমি, তপু, তনিমা, অনিতা আর অর্ণব৷ কবে যে ওরা ফিরবে৷ আমার বইগুলো আর ডায়েরিগুলোও আমি নিয়ে যাব৷ সুখের দিনের কথাগুলোও তো লিখতে হবে৷ একসময় তপুকে দেবো সব ডায়েরিগুলো পড়তে৷ ডিভোর্স কাল হলেও চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ফেব্রুয়ারিতে৷ সমস্যা নেই এ কয়েকটাদিন দেখতে দেখতে কেটে যাবে৷ উফফফ কেন ফোন বাজছে?
অঞ্জনদা ফোন করেছে৷ করো করো৷ আর মাত্র কয়েকটা মাস তারপর আর আমাকে পাচ্ছ না৷ কথা বলে আসলাম৷ আবার রাতে লিখব৷ এখন শ্যুটিংএ যাচ্ছি৷
‘অঞ্জনা আজ বিশেষ জুস বানানো হয়েছে তোমার জন্য খেয়ে যাও৷ সুব্রতও আসছে৷’
‘ও কেন আসছে?’
‘তোমাকে নিতে৷’
‘আমাকে নিতে? কাল ডিভোর্স আর আজ ওনার প্রেম জেগে উঠেছে?’
ঈষৎ হাসি দেখলাম অঞ্জনার ঠোটে৷ আমার মধ্যেও হাসি আছে কিন্তু অঞ্জনাকে দেখাচ্ছি না৷ অঞ্জনা সরবত খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বলল—
‘দাদা মাথাটা যেন কেমন করছে৷’
‘চল রেষ্ট নেবে৷’
‘না, বাসায় যাব৷ ড্রাইভারকে একটু ফোন দিন৷’
আসলে ড্রাইভারকে আমি চলে যেতে বলেছিলাম৷ আমিই ড্রাইভ করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু এখন তো শরীর খারাপ লাগছে ড্রাইভ করতে পারব না৷
এরমধ্যে সুব্রত আসলো৷
‘কাজ হয়েছে অঞ্জনা?’
‘ওর নাকি মাথা ঘুরাচ্ছে?’
হাসির রোল উঠলো আমাদের মধ্যে৷
‘সবাইকে যেতে বলেছো অঞ্জন? স্পট খালি তো?’
‘হ্যাঁ৷’
‘চল তাহলে কাজটা সেরে ফেলি৷’
তিনজন মিলে অঞ্জনাকে ধরলাম৷ একজন হাত দু’টো, আরেকজন পা দু’টো আর আমি ওর কন্ঠনালী সজোরে টিপে ধরলাম৷ একবার চোখ মেলে তাকালো অঞ্জনা৷ হাত পা ছোড়ার বৃথা চেষ্টা করছে আমরা আরো জোরে টিপে ধরলাম৷ সবাই হাতে গ্লাভস পড়ে নিয়েছি৷ যাতে কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া না যায়৷ কয়েকমিনিটের মধ্যে কাজ শেষ হল৷
লাশ নিয়ে তপুদের বাড়ির কাছাকাছি গেলাম৷ প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে একটা ঝিলের পাড়ে ফেললাম অঞ্জনার লাশটাকে৷ আমরা অঞ্জনার গাড়িকে ঝিলের কাছাকাছি নিয়ে পুড়িয়ে দিলাম৷ গাড়িটা কার সেটা যাতে অন্তত বোঝা যায় এমনভাবে পোড়ালাম৷ অন্য গাড়িতে করে আমরা বাসায় গেলাম৷ অঞ্জনাকে মারার একটু আগে ওর ফোন দিয়ে তপুকে মেসেজ করে রেখেছিলাম৷ “তপু আমি আসছি৷”
সকাল হতেই আমি (সুব্রত) চিন্তায় আছি কেন কাল সারারাত অঞ্জনা বাসায় ফিরল না৷ এর মধ্যে পুলিশের ফোন মুন্সিগঞ্জে এক ঝিলের পাড়ে অঞ্জনার লাশ পাওয়া গেছে৷ খবরটা পেয়ে আমার হাত থেকে ফোন পড়ে গেল৷
“আমার অঞ্জনা আর বেঁচে নেই?”
চলবে…..
(গল্পটা উত্তম পুরুষে লেখা৷ তাই লেখার নিয়মানুযায়ী সবটুকুই উত্তম পুরুষে লিখতে হবে৷ তাই অন্য কথাগুলোও উত্তম পুরুষে লিখতে হয়েছে৷)
#