ডায়েরি পর্ব ১৫(শেষ)

#ডায়েরি_পর্ব_১৫ (#শেষ_পর্ব)

জান্নাতুল জান্নাত

অনিতার লকেট থেকে কিছু সূত্র বের করতে পেরেছি ঠিকই কিন্তু এখন এগুলো কাউকে বলা সম্ভব না৷ আমি নিজেই অনিশ্চিত আদৌ এর দ্বারা কিছু হবে কিনা৷ কিন্তু বাবাকে বাঁচাতে হবে৷ বাবা কিছুতেই মামনিকে খুন করতে পারে না৷ একটাই উপায় আমাকে দেশে ফিরতে হবে৷ অনিতা অর্ণবকে নিরাপদে রেখে যেতে হবে৷ কিন্তু আদৌ কি মামনির দেয়া সূত্রের জায়গায় কিছু পাবো? আমার তো মনে হচ্ছে বাসায় যোগাযোগ না করলেই ভালো হতো৷ আঙ্কেল যদি সবকিছু নষ্ট করে ফেলে? মামনি যেহেতু নেই সব ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে৷ মামনি তো আমার একাউন্টে বেশ কিছু টাকা আলাদা করে রেখেছিলো৷ সেখান থেকেই ব্যবস্থা করি৷ মামনিকে হয় সুব্রত আঙ্কেল নয়তো অঞ্জন আঙ্কেল মেরেছে৷ কিন্তু কি এমন হলো যার জন্য মামনিকে মেরেই ফেললো? বাবা আর মামনির সম্পর্কটা জেনে যায়নি তো সুব্রত আঙ্কেল?

তনিমা তাড়াতাড়ি দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করলো৷ তাতেও সাতদিন লেগে গেলো৷ সাতটা দিন খুব চিন্তায় কাটছে ওর৷ অনিতা আর অর্ণবকে স্কুল থেকে ছুটি এনে বাসায় রেখে যাচ্ছে৷ এ কটা দিন স্কুলে গিয়ে কোন ঝামেলা করে লাভ নেই৷ বাসায় থাকলে নিরাপদ থাকবে৷

সাতদিন পর ফ্লাইট তনিমার৷ অনিতা বারবার জানতে চেয়েও কিছু জানতে পারেনি তনিমা কোথায় এবং কেন যাচ্ছে? বাসার মধ্যে এ ক’দিনের জন্য খাবার মজুদ রেখে তনিমা বাহির থেকে দরজা লক করে দিলো৷ যদিও ওর মামনির পরিচিত এক আঙ্কেলের বাসায় চাবি রেখে গেছে৷ কোন সমস্যা হলে যাতে ওদের এসে দেখতে পারে৷ অনিতার লকেটটা তনিমা সাথে নিয়ে নিলো৷

১৮ই জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে ঢাকায় পৌঁছালো তনিমা৷ সরাসরি বাসায় গেলো৷ বাসার সবাই তো ওকে দেখে অবাক
-তুই এখানে?
-তুই তো দেশের বাহিরে ছিলি৷ অনিতা অর্ণব কোথায়?
-আমি একা এসেছি ঠাম্মি৷

-তা কেন এলে বাপু? বিদেশের হাওয়া বুঝি সহ্য হচ্ছিলো না?
-ভালোভাবেই সহ্য হচ্ছে৷ মামনির স্ট্যাডি রুমে যাবো৷
-ওখানে তোর কাজ কি?
-কাজ আছে৷
বলেই স্ট্যাডি রুমে গেলাম৷

-এ কি ঠাম্মি? এটা তো মামনির দেয়া তালা নয়, অন্য তালা৷ তারমানে এ রুমে কেউ ঢুকেছিলো৷
-হ্যাঁ ঢুকছে৷ তাতে কি হয়েছে? কি এমন সম্পত্তি আছে এখানে? শত শত বইয়ে ভরা আর কিছুই তো নেই৷
-আমি আঙ্কেলকে ফোন করে বলেছিলাম এ রুমে যাতে কেউ না ঢোকে আর তোমাদের ঢুকতেই হলো? চাবি দাও৷
-চাবি নাই৷
-দিবে না তো? আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি৷

নোড়া এনে তা দিয়ে পিটিয়ে তালা ভাঙতে লাগলাম
-আরে কি করছিস এসব? তালা ভাঙছিস কেন?
-আগের তালাটা কি করেছো? নিশ্চয়ই ভেঙেছো? তাহলে আমি ভাঙলে দোষ হচ্ছে কেন? এখান থেকে যাও৷
তালা ভেঙে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম৷

-ঘরের কি অবস্থা করে রেখেছে? সব এলোমেলো করে ফেলছে৷ সোনার তরী বইটা কোথায়? অনেক খুঁজে বইটা পেলাম৷ প্রতিটি পৃষ্ঠা একটা একটা করে উল্টিয়েও কিচ্ছু পেলাম না৷
এটা কি করে হয়? কিছু না কিছু তো থাকবেই৷ মামনি ওটা এমনিতে দেয়নি৷ জম্মদিনে মামনি বলেছিলো৷ “এটা শুধু লকেট নয়, লকেটের চেয়েও বেশি কিছু৷ সময় হলে বুঝবি৷ তুই না বুঝলেও দিদি রয়েছে ও ঠিক বুঝবে৷”

কিছুই তো আছে মাথায় আসছে না৷ সোনার তরী বইটার তো দু’টো কপি ছিলো৷ তাহলে আরেকটা? সেটা কোথায়? নিশ্চয়ই ওটাতে কিছু আছে৷

মনে আসতেই আবার ফেলে রাখা বইয়ের স্তুপে খুঁজতে লাগলাম৷ আরো একটা কপিও পেয়ে গেলাম৷ কিন্তু বইয়ের ভিতরে পৃষ্ঠাগুলো নেই৷ জাস্ট মলাটটা সোনার তরীর৷
-মামনির দেয়া লকেটের ভিতরটা যেহেতু খালি আর বইটাও খালি তার মানে বই এটাই৷ ভালো করে খুঁজতে গিয়ে দু’টো লাইন লেখা পেলাম৷
“তরী কি বৈঠাবিহীন চলে?
সোনার তরীর সোনার বৈঠা এবার হাতে তুলে নাও৷”

সোনার বৈঠা? সেটা পাবো কোথায়? বইয়ের মধ্যে খুঁজেও পেলাম না৷ শেষের দিকে আবার দুই লাইন লেখা
“সব সোনা সোনালী হলুদ নয়,
কিছু সোনা লালও হয়৷”
সোনালী হলুদ নয়? লালও হয়? বৈঠা?

” হায় ঈশ্বর আমাকে বোঝার শক্তি আর বুদ্ধি দাও৷ সোনা কি করে লাল হয়? তরী যদি অনিতার কাছে থাকে বৈঠা তবে কার কাছে? অর্ণবকে কিছু দিলেও তো আমি জানতাম৷ মামনি তো রহস্যজনক আর কিছু দেয়নি৷

তারপরও অনেক চিন্তা করে অর্ণবের কাছে ফোন করলো৷ কিন্তু না, ওদের থেকে কোন তথ্যই পেলাম না৷ হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পানি খেতে গিয়ে চোখ পড়লো ড্রেসিং টেবিলের দিকে৷ মামনির সিঁদুর কৌটোটা ওখানে রাখা৷ সবার সিঁদুর কৌটো ছোট আর মামনিরটা একটু বড়৷ ওখানে দু’টো সিঁদুর কৌটো কেন? সিঁদুর? সিঁদুর তো লাল৷

“সব সোনা সোনালী হলুদ নয়, কিছু সোনা লালও হয়৷”
লাল মানে সিঁদুর? মানে সিঁদুর কৌটোর ভিতরে কিছু আছে?

ঝটপট উঠে গিয়ে একটা বইয়ের উপর সিঁদুর ঢাললাম৷ অনেকখানি সিঁদুর৷ এরমধ্যেই পেলাম বৈঠা আকৃতির একটা ছোট্ট চাবি৷ হাসি ফুটে উঠলো আমার ঠোটের কোণে৷ একটু পরেই হাসি মিলিয়ে গেলো৷
“চাবি তো পেলাম কিন্তু চাবি দিয়ে যে তালা খুলবো সে তালা কোথায়?”

সারা ঘরময় চষে বেড়াচ্ছি কিন্তু কোথাও কিছু পেলাম না৷ আবার বইটা হাতে নিলাম৷ খুঁজতে লাগলাম কোথাও কিছু আছে কিনা৷ মলাটের উল্টোপিঠে আবার লেখা পেলাম
“সজ্জাতেই নাকি নারী সুন্দর,
তাই সজ্জাতেই থাক যত গোপনীয়তা মোর৷”

সজ্জা মানে সাজ, সেজে থাকা৷ এর মধ্যে কি গোপনীয়তা থাকতে পারে? আলমারি? ওয়ারড্রোব? নাকি ড্রেসিং টেবিল? আলমারি ওয়ারড্রোবে তো কাপড় থাকে মানুষ সাজে তো ড্রেসিং টেবিলে বসে৷ তারমানে এবার মিশন ড্রেসিং টেবিল?

এগিয়ে গেলাম ড্রেসিং টেবিলের দিকে৷ পুরোটা খুঁজলাম কিন্তু তেমন কিছু পেলাম না৷ এবার ড্রয়ার খুলে ফেললাম৷ সবকিছু বের করে দেখলাম ড্রয়ারেও কিছু নেই৷ বসে বসে ভাবতে লাগলো কোথায় থাকতে পারে? হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার যেখানে ছিলো সেই ফাঁকা স্থানে কিছু চকচক করে উঠলো রোদ পড়ে৷

মোবাইলের ফ্লাশ লাইট মারতেই ওখানে ছোট্ট দরজার মতো দেখতে পেলাম৷ সাথে চাবি দিয়ে খোলার ছিদ্র৷ চাবি ঘুরাতেই দরজা আলগা হলো৷ ছোট্ট হাতলটা আঙ্গুল দিয়ে টেনে খুলতেই ভিতরটা বেশ বড় দেখালো৷

মোবাইলের লাইট দিয়ে দেখলাম অনেকগুলো ডায়েরি আর কলম৷ একে একে সবগুলো বের করলাম৷ একটা অরনামেন্টস বক্স পেলাম৷ বের করে খুলতেই দেখলাম সোনার কিছু গয়না আর টাকা৷ সাথে চিরকুট৷
“এগুলো তোর বিয়ের গয়না অনিতা৷”

মামনি!! হাসি ফুটে উঠলো আমার মুখে৷
“মামনি পেলাম তো তোমার গুপ্তধন কিন্তু তুমি কেন হারিয়ে গেলে? এগুলো নিয়ে এ বাসায় থাকা ঠিক হবে না৷

এক বান্ধবীর কাছে ফোন করে ওদের বাসায় থাকার কথা বললাম৷ ডায়েরি গয়না টাকা সব সাথে নিয়ে নিলাম৷ “ভাগ্যিস ট্রলিব্যাগ সহ রুমে ঢুকেছিলাম৷” গোপন কুঠুরিতে তালা মেরে সব গুছিয়ে রাখলাম৷ ফাঁকা সোনার তরীর বইটাও সাথে নিয়ে নিলাম৷ বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে৷

একটু রাগ রাগ ভাব দেখাতে হবে আর অন্য তালা মারতে হবে৷ কিছুতেই যাতে তারা বুঝতে না পারে যা নিতে এসেছি তা পেয়ে গেছি৷ তাহলে সাবধান হয়ে যাবে৷ অন্য তালা রুমে লাগিয়ে বান্ধবীর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি এখন৷ জানিনা বাবা কি অবস্থায় আছে৷

বাবা আমাকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো
-তুই কবে দেশে আসলি?
-আজই বাবা৷
-আমি…..
-জানি তুমি মামনিকে খুন করোনি৷ তুমি খুন করতে পারো না৷ তুমি যে তোমার অঞ্জুতে মগ্ন৷ কেউ না জানুক আমি তো জানি৷ আমি তোমাকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছি৷

-অনিতা অর্ণব ওরা কোথায়?
-ওরা বিদেশে৷ নিরাপদেই আছে৷ তুমি কেমন আছো বাবা?
-ভালো৷ কিন্তু অঞ্জুকে কে মারলো? কেন মারলো?
-কি ঘটেছিলো আমাকে তাড়াতাড়ি বলো৷ সবটা বলো৷

রেকর্ডার অন করে রাখলাম৷ সব রেকর্ড করে বললাম
-তোমার উকিল কে ছিলো? ঠিকানা দাও৷
বাবা উকিলের নাম ঠিকানা আমাকে দিলেন৷
-মা রে এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে যদি ওরা তোর কোন ক্ষতি করে?
-যা হয় হোক বাবা৷ মামনির আশির্বাদ আছে আমার সাথে৷ অনিতা অর্ণব বড় হওয়ার আগে আমার কিচ্ছু হবে না৷ আমি ওদের দিদি হই না?
-দেখিস ওদের৷ অঞ্জুর বড় ভরসার স্থান ছিলি তুই৷
-আসি বাবা৷

এখান থেকে বান্ধবীর বাসায় গেলাম৷ একে একে সবগুলো ডায়েরি পড়লাম৷ পড়ছি আর কাঁদছি
” এতো যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখে মামনি তুমি হাসতে? তুমি এতো ঘুমের ঔষুধ খেতে? কেন আমার সাথে এগুলো বলোনি?”

ডায়েরির সাথে চুক্তিপত্রের কপিও দেখতে পেলাম৷ কি করে মামনির জীবনের বারোটা বছর শেষ করলো ওরা৷ কিন্তু কোথাও তো মৃত্যু রহস্য নেই৷ আসলেই তো সেটা কি করে থাকবে মামনি কি জানতো সে মারা যাবে?” শেষের কথাগুলো আবার পড়লাম৷ হ্যাঁ সন্দেহের তীর সুব্রত আঙ্কেলের দিকেই কিন্তু প্রমাণ দরকার৷

পরেরদিন বেরুলাম উকিলের সাথে দেখা করতে৷ সবকিছু খুলে বললাম৷ তিনিও বললেন কিভাবে প্রমাণগুলো পেয়েছিলেন৷ বাড়তি টাকা দিয়ে বললাম
-আশা করি এতো পারিশ্রমিক আপনি পান না৷ এই মুহুর্তে কেসটা আপনাকে রি ওপেন করতে হবে এবং জিততে হবে৷
-জিততে হলে প্রমাণ লাগবে কিন্তু সব প্রমাণ তপুর বিরুদ্ধে৷

-অপরাধী অপরাধের চিহ্ন অবশ্যই রেখেছে হয়তো ছোট্ট প্রমাণ আপনাদের নজরে আসেনি৷ আমি আর আপনি স্থানগুলোতে যাবো আর দেখবো তবে তা তারা জানার আগে৷ তারা জানার পর আমরা কিচ্ছু করতে পারবো না কারণ তখন আমরা তার নজরে থাকবো৷
-তাহলে? রি ওপেনের আবেদন করলেই তো তারা জেনে যাবে৷

-হ্যাঁ তাই আপনি রবিবার আবেদন করবেন৷ আজ বৃস্পতিবার৷ তিনদিন সময় আছে আমাদের হাতে৷ আমরা ছদ্মবেশে ঘটনাস্থলে যাবো৷ আমি পোশাক নিয়ে এসেছি৷ আমরা প্রেমিক প্রেমিকা সেজে যাবো৷
-সব বুঝলাম কিন্তু আপনি কিসের ভিত্তিতে এতোটা জোর দিচ্ছেন৷ ডায়েরিতে তো সরাসরি কিছু লেখা নেই৷
-কেসের সাথে জড়িত প্রতিটা লোককে আমি ভালোভাবে চিনি তাই সন্দেহটা বেশি হচ্ছে৷ প্লিজ দেরি করবেন না, চলুন৷ আপনি তৈরি হোন আর আমাকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন৷
-জ্বী৷

ঘন্টাকয়েক পর ছদ্মবেশে আমরা প্রথমে গেলাম যেখানে মামনিকে পাওয়া গিয়েছিলো৷ সেখানে কোন ক্লু পেলাম না৷ তারপর গেলাম যেখানে গাড়ি পাওয়া গিয়েছিলো৷ সেখানে হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় একটা সিগারেটের শেষ অংশ পেলাম৷ আমরা তৈরি হয়েই এসেছিলাম৷ ক্লু প্যাকেটে নিয়ে নিলাম আমাদের হাতে গ্লাভস পড়া৷ আশেপাশে আরো ভালো করে খুঁজতেই সিগারেটের প্যাকেট পেলাম৷ প্যাকেটটা আমার চেনা Twenty Cigarettes Marlboro৷ একটু আগেও সন্দেহ ছিলো এখন নিশ্চিত হলাম৷ খুনের সাথে সুব্রত আঙ্কেল জড়িত৷

-বুঝলেন উকিল আঙ্কেল এ সিগারেটটা সুব্রত আঙ্কেল খায়৷ আমি জানি৷ এতে নিশ্চয়ই আঙ্কেলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যাবে৷
-দেখা যাক৷ আগে তো নিয়ে নেই৷

অনেক খুঁজে আর কিছু পেলাম না৷ গাড়িতে যেতে যেতে বললাম
-মায়ের পাকস্থলিতে কি যেন পাওয়া গিয়েছিলো?
-হার্ড ড্রিংকস ও ঘুমের ঔষধও ছিলো৷
-মা তো ড্রিংকসই করতেন না৷ হার্ড তো পরের বিষয়৷ ঘুমের ঔষধ তো মা বাসায় ঘুমানোর জন্য খেতেন৷ আমার বাবার কাছে দু’টোর কোনটারই থাকার কথা নয়৷

-কিন্তু তোমার বাবার বাসা থেকেই ড্রিংকস আর ঔষধ পাওয়া গেছে৷
-ড্রিংকসের বোতলে বা গ্লাসে, ঔষধে বাবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছেন?
-না৷
-তাহলে?
-ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে ফেলতেই পারে৷
-কেউ তো বাসায় রেখেও আসতে পারে৷

উকিল তাকালো আমার দিকে৷
-আঙ্কেল আমাদের বাসায় চলুন৷ দেখা দরকার৷ যেহেতু কেস ক্লোজ কোনকিছুতেই বাঁধা নেই৷
-এতোদিন পরে কিছু পাবে?
-বলা তো যায় না পেতেও তো পারি?

চিরুনী তল্লাশি করেও তেমন কিছু পেলাম না৷
-আঙ্কেল ড্রিংকসের গ্লাস কোথায় ছিলো?
-পিছনের বাগানে৷
-গ্লাসটা কেমন ছিলো?
-চারকোণা বেশ সুন্দর গ্লাস৷ দামী হবে!!
-দু’টো?
-হ্যাঁ৷
-চলুন বাসায় গিয়ে খুঁজবেন৷ এমন গ্লাস এ বাসায় আছে বলে আমি জানিনা৷

বাসায় গিয়ে খুঁজে উকিল বললো
-আর তো নেই৷
-তাহলে বাবা দু’টো গ্লাস কিনেছিলেন?
উকিল কিছু বললো না৷ হেঁটে গেলাম পিছনের বাগানটাতে৷ কিছু একটাতে পায়ে লেগে পড়ে যাচ্ছিলাম৷
‘ওখানে তো পাতা ছিলো তাহলে পড়ে যাচ্ছিলাম কেন?’

পাতা সরাতেই ঠোটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো৷ আরেকটা প্রমাণ পেলাম৷ উকিলকে ডেকে এটাও নিয়ে নিলাম৷ যেতে যেতে উকিলকে বললো
-যা পেয়েছি এগুলোর ফরেনসিক টেষ্ট করলে আসল খুনীর সন্ধান অবশ্যই পাবেন৷ এগুলো খুব সযত্নে রাখবেন৷ পারলে এই ক’দিনের মধ্যে টেস্টটা করিয়ে ফেলুন৷

বাসায় গেলাম মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যে আসল খুনী ধরা পড়বে যদি না প্রমাণগুলোতে কারচুপি করা হয়৷ পরেরদিন গেলাম অঞ্জন দত্তের সাথে দেখা করতে
-তুমি এখানে? তুমি ঐ তপুর মেয়ে না? অঞ্জনাদের বাসার আশ্রিতা?
-হ্যাঁ৷
-এখানে কেন?

-আমার মনে হচ্ছে বাবা মামনিকে খুন করেনি আপনি কিছু জানেন এ বিষয়ে?
-দেখো প্রমাণ আদালতে হয়ে গেছে৷ তোমার মামনি আর বাবার যে চরিত্র তা মেয়ে হয়ে তুমি না জানলেও হবে৷
-কিন্তু…..
-কোন কিন্তু নয় যাও এখান থেকে৷
-আচ্ছা৷
বেরিয়ে গেলাম ওখান থেকে একগাল হাসি নিয়ে৷

রবিবার আবেদন করলো কেস রি-ওপেনের৷ তিনদিন পর আবেদন স্বীকৃতি প্রদান করা হলো৷ কেস রি-ওপেন হলো৷ প্রমাণ নিয়েই প্রথম শুনানীতে হাজির হলো তপুর উকিল৷ সে এ ক’দিনেই টেস্ট করে রিপোর্ট পেয়ে গেছে৷ প্রমাণের কপিগুলো জাজের কাছে দিয়ে শুধুমাত্র সুব্রতকে ডাকলেন জেরা করতে৷

-আপনার তো সিগারেটের অভ্যেস আছে৷ তা কি সিগারেট খান আপনি?
-যখন যেটা পাই…
-কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে লাভ নেই৷ আমি জানি আপনি শুধু এক ব্র্যান্ডের সিগারেটই খান৷ এখন আপনার পকেটে সার্চ করলে Twenty Cigarettes Marlboro পাওয়া যাবে৷ আমি কি ঠিক বলছি?
-না মানে…

জাজ পুলিশকে অর্ডার দিলেন সার্চ করতে৷
-ঠিক আছে খাই৷ কতোজনেই তো খায়৷ তো এতে কি প্রমাণ হয়?
-মহামান্য আদালতের সামনে একটি সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ ও একটি Twenty Cigarettes Marlboro সিগারেটের প্যাকেট রাখা আছে৷ দু’টি জিনিসই যেখানে অঞ্জনার গাড়ি পোড়ানো হয়েছে সেখান থেকে পাওয়া গেছে আর এতে সুব্রত সাহেবের ফিঙ্গারপ্রিন্টসও পাওয়া গেছে৷

সুব্রত কপালের ঘাম মুছলেন৷
-জনাব সুব্রত আমাদের জানামতে জনাব তপু গরীব লোক৷ এতো দামি ড্রিংকস কেনার সামর্থ তার কি করে হলো? তাছাড়া ডাক্তারি রিপোর্টে তার শারিরীক সমস্যাও নেই যাতে তার ঘুমের ঔষধ খেতে হবে৷ কি করে তপু সাহেবের বাসায় এগুলো গেলো?
-সেটা তো পুলিশের বিষয়৷ আমি কি করে জানবো?

-হ্যাঁ কিন্তু তপু সাহেব ড্রিংকস করার জন্য শুধু দু’টি গ্লাস কিনেছিলেন? যা এতো দামী? ঠিক আছে আপনাকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা? এটা খুঁজতেই তো খুনের পরের রাতে তপু সাহেবের পিছনের বাগানে গিয়েছিলেন তাই না? আমরা জিজ্ঞেস করতে বলেছিলেন যেখানে অঞ্জনাকে পাওয়া গেছে সেখানে গিয়েছিলেন৷

-মহামান্য আদালত এটা একটা লাইটার ব্র্যান্ডেড লাইটার৷ Dragon USB Rechargeable Plasma Electric Lighter৷ বিদেশি লাইটার এটি৷ এটা আমাদের সুব্রত সাহেব ব্যবহার করেন৷ তার বাসায় থাকা তনিমা এটা আমাদের বলেছেন৷ সুব্রত সাহেব আপনি এবার বসতে পারেন৷ মহামান্য আদালত আর কিছু না বলে একটা ভিডিও দেখাতে চাই৷

-কিরে ভাই সুব্রত আমাদের উকিল চুপ কেন?
-আঙ্কেল টাকা কথা বলে৷
বলে হেসে দিলাম (তনিমা)৷ আদালত অনুমতি দিলো৷ ভিডিওতে দেখানো হলো আমি বেরিয়ে যাচ্ছি আর অঞ্জন দত্ত সুব্রতকে ফোন করলো
-তপুর মেয়ে এসেছিলো তার নাকি সন্দেহ হচ্ছে খুনটা তপু করেনি৷ তুই আয় তোর সাথে কথা আছে৷

কিছুক্ষণ পর সুব্রত এলো৷ সুব্রত আর অঞ্জন গ্লাসে ড্রিংকস নিয়েছে৷
-মহামান্য আদালত এখানে পস করে গ্লাসগুলো আর ড্রিংকস দেখুন৷ ঠিক এরকম গ্লাসই সেদিন তপুর বাসা থেকে আমরা পেয়েছিলাম৷ আবার চালু করুন৷
-অঞ্জন যদি আমরা ধরা পড়ে যাই?

-বাদ দে৷ কে জানে যে খুনটা আমরা করেছি? ঐ পিচ্চি মেয়ে কিছু পারবে না৷ আর এ কথাগুলো আগে ভাবা উচিত ছিলো৷
-এখানে থামাতে পারেন স্যার৷ অঞ্জন দত্তকে ডেকে তারমুখ থেকেই আমরা সবটা শুনি?
-হ্যাঁ অঞ্জন দত্তকে কাঠগড়ায় আসার আদেশ দেয়া হলো৷
-আপনি নিজেই সব বলবেন নাকি আরো অপেক্ষা করবেন?

এবার সব খুলে বললো অঞ্জন দত্ত৷ নিজেদের খুনের দায়ও স্বীকার করলো৷ দু’জন আদালতে উপস্থিত এখানেই গ্রেফতার করা হলো৷ তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে৷ অন্যজনকে খোঁজার নির্দেশ দেয়া হলো৷ তপুকে মুক্তি দেয়া হলো৷ তপু সুব্রতর কাছে গিয়ে বললো
-বিশ্বাস আর ভরসার সহবাস কি আদৌ কখনো হয়েছে?
সুব্রত তাকিয়ে রইলো৷

মামনির ডায়েরিগুলো এনে বাবাকে দিয়ে বললাম
-বাবা এগুলো মামনির৷ আমি ফিরে যাচ্ছি অনিতা আর অর্ণবের কাছে৷ ভালো থেকো নিজের যত্ন নিও৷

এগারো বছর পর অনিতা অর্ণবকে নিয়ে দেশে ফিরলাম৷ বাবাকে নিয়ে শ্মশানে যেখানে মামনির মঠ করা হয়েছে সেখানে গেলাম৷
-মামনি তোমার ছেলে মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে এনেছি৷ আজ আমার দায়িত্ব শেষ হলো৷ তুমি খুশি তো? বাবা ডায়েরিগুলো আর গয়নাগুলো কোথায়?
-এই ধর৷

-অনিতা অর্ণব এগুলো মামনির৷ তোমাকে সোনার নৌকোর লকেটে এরই সন্ধান দিয়েছিলো মামনি৷ আমি সেটাই খোঁজ করেছিলাম তখন দেশে এসে৷ আর বাবাকে মুক্ত করি৷ গয়নাগুলো তোমার বিয়ের জন্য৷ টাকাও আছে৷ এগুলো নিয়ে আমাকে দায়মুক্ত করো৷
-করবো না দিদি৷ এগুলোর যথার্থ ব্যবহার শুধু তুমিই করবে৷

পিছন ফিরে চলে যাচ্ছে অনিতা অর্ণব আর তনিমা৷ তপু একবার ফিরে চাইলো৷ শূণ্যতায় অস্তিত্বহীন হয়ে আছে সেলিব্রেটি অঞ্জনা৷

🔯🔯 সমাপ্ত 🔯🔯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here