ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড পর্ব ৮

#ডেন্জারাস_ভিলেন_হাজবেন্ড

#লেখিকা_তামান্না

#পর্ব_০৮

ফায়যান শরবতের গ্লাস উঠিয়ে মুখে নিতে গিয়ে থেমে যায়। মিসেস রাহেলা ফায়যানকে শরবত না খেতে দেখে বলে।

—“কি হলো বাবা খাচ্ছো না কেনো? শরবত কি মজা হয় নি!

—“খাইনি এখনো তাই টেস্ট কেমন বলতে পারছি না। তবে আমি টেস্ট এর জন্যে থামিনী।

—“তাহলে? মিস্টার নায়েমান ভ্রু কুঁচকে বলল।

—“না আসলে ভাবছি কি? মেহরান তো এতোক্ষণ আমার সামনে বসাছিল। তাহলে এতো সুস্বাদু সুগন্ধময় নাস্তার আয়োজন করেছে কে?

—“আরে এগুলো ত…..বলতে গিয়ে মিসেস রাহেলা মিস্টার নায়েমান কে থামিয়ে নিজেই বলতে লাগে।

—“আ..আব বাবা নাস্তা আগে থেকেই বানানো ছিল। মিসেস রাহেলা আমতা আমতা করে বলে। তিনি মুটেও চান না জারা ফায়যানের সামনে পড়ুক বা তার কথা একটুও জানুক।

—“উম না আপনি মিথ্যা বলছেন। শরবতের গ্লাসটা না খেয়ে ট্রের মধ্যে রাখতে রাখতে বলে।
এই শরবত এই নাস্তা আপনার মেয়ে বা সাভেন্টরা বানায় নি। এই খাবারগুলো হয়তো আগের বানানো কিন্তু এই মাএ গরম করে সেগুলো সুন্দর ভাবে প্লেট করে পরিবেশন করেছে অন্য কেউ! আর যতটুকু আমার ধারণা আপনার মেয়ে কিছুই পারে না। এম আই রাইট মেহরান?
মেহরানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে।

মেহরান মিসেস রাহেলার দিকে তাকিয়ে এক ঢোক গিলে আমতা করে হ্যা বলে।

ফায়যান বাঁকা হেসে মনে মনে বলে—“আই নো মিস দেরি তুমি এই বাসার মধ্যেই আছো। আমার জন্যে এই আয়োজন তুমিই করেছো। তবে কিছু বাঁধার (আড়চোখে জারার চাচি আর মেহরানের দিকে তাকিয়ে) কারণে আমার সামনে আসছো না। তোমাকে যেভাবেই হোক আমার সামনে পড়তেই হবে। আমার সামনে না পড়লে আমিই তাহলে
……..হাহ ভিলেন হয়ে তোমার উপর পড়ব। ঠোঁট উল্টিয়ে শয়তানি হাসি দিল।

নায়েমান ফায়যানকে ডাক দে।
ফায়যানের ধ্যান ফিরল সে সম্মানের সুরে বলে—“জ্বী আঙ্কেল বলেন? কি করতে পারি !

—“আরে না না বাবা আমার জন্যে কিছু করতে হবে না। তুমি কিছু ত খাও আর বলো কেমন হলো ! যাতে আমি কেমনের প্রশংসা তাকে জানাতে পারি। লাস্টের কথাটা তিনি মনে মনে বলে মুচকি হাসল।

—“ওহ হ্যাঁ অবশ্যই। ফায়যান মুচকি হেসে ট্রের মধ্যে থেকে পিয়াজের পাকোঁড়া একটুকরো,,হালিমের বাটি থেকে কিছু পরিমাণ নিল,,আলুর সপ দুইটুকরো খেয়ে পানি খেল।

খেয়ে সে মনের মধ্যে আলাদাই শান্তি পেল। সে আজ প্রথম যেনো এরকম সুস্বাদু বাঙালি মেয়ের হাতের রান্না খেলো। সে নায়েমানের দিকে তাকিয়ে বলে।

—“আঙ্কেল আপনাকে সত্যি করে একটা কথা বলি! প্লিজ বিশ্বাস করেন ! এই নাস্তাগুলো যিনি বানিয়েছেন তিনি বিশ্বের সুস্বাদু মিষ্টিময় রাঁধুনি। এতো এতো ভালো খাবারের টেস্ট হয়েছে। আজকের জন্যে এটুকুই এখন চলি। বাট আঙ্কেল এখন থেকে আপনার বাসায় প্রতিদিন আসা হবে।

প্রতিদিন আসা হবে কথাটা শুনে নায়েমান,,রাহেলা আর মেহরান অবাক প্লাস ঘাবড়ে যায়।

—“প্রতিদিন কেনো বাবা? মিসেস রাহেলা ভয়ে জট করে বলে ফেলে!

উনার এরকম ভয়ার্ত ভাব দেখে ফায়যান মনে মনে হাসল। সে এক্টিং এর মত করে বলে।

—“কিছু কিছু হৃদয়ের মধ্যে হচ্ছে এই ঘরের প্রতিটি কোণার ধারায়।

—“বুঝলাম না বাবা। মিসেস রাহেলা ঘামে একাকার হয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে জিগ্গেস করে।

—“এটা বুঝার ক্ষমতা আমি আর আমাকে বুঝার মত যিনি তিনি ঠিকিই বুঝবেন। কথাটা ফায়যান নায়েমান এর দিকে তাকিয়ে বলে। কিন্তু মিসেস রাহেলা আর মেহরানকে বুঝতে দে নি।

নায়েমান ফায়যানের সব কথা ঠিকিই বুঝলেন তিনিও মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন। কারণ ফায়যান জারাকে ঘিরে কথাটা বলতে চেয়েছে। সে জারাকেই দেখতে চাইছে কিন্তু রাহেলা আর মেহরানের জন্যে পারে নি। তিনিও নাছোড়বান্দা হাল ছাড়েন নি। মনের মধ্যে অটুট বুদ্ধি চেপে বলে।

—“বাবা তুমি যাই করবা একদম ঠিকিই করবা পদে পদে আমি তোমাকে রাস্তা দেখাব। তিনি কথাগুলো ফায়যানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন।

ফায়যান কথা শেষ করেই বেরিয়ে যায়। সে গাড়ির কাছে আসছে হাতের আঙুলে চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে।
গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে পিছের লুকিং গ্লাস ঠিক করতে লাগে। তখনই তার লুকিং গ্লাসে আলোর জ্বলক আসে। সে এক হাত দিয়ে আলো কে ঢাকার চেষ্টা করছে কারণ অলমোস্ট রাত হওয়ার টাইম হয়ে গেছে সন্ধ্যা সাতটা বাজছে। সেখানে ডিপ লাইটের আলো কেউ তার লুকিং গ্লাসের দিকে ছুঁয়ে দিচ্ছে।

সে হাত সরিয়ে এক চোখ দিয়ে লুকিং গ্লাস এ দেখার চেষ্টা করছে। পিছে আসলে আছে টা কে? যার কারণে লাইট চোখে পড়ছে! ভেবে ফায়যান পিছে ঘুরতেই দেখে
এক মেয়ের শাড়ির আচঁলে কাঁচের অলংকার ঝুলানো। সেই কাঁচে রুমের লাইট পড়ে আলোর সৃষ্টি হয়ে পিছের দিকে জ্বলক দিচ্ছে।

—“হয়ত ইনিই মিস দেরি যেয়ে…..না থাক আজ যাব না গেলেই আন্টি আর মেহরানের সন্দেহ হতে পারে। সকালে ব্যবস্থা নিমু তোমার মিস দেরি।
মুচকি হেসে সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে আগাতে আগাতে হর্ন দিয়ে চলে গেল।

জারা গাড়ির হর্ন পেয়ে পিছে ঘুরে দেখে বলডোজার তাহলে চলে গেল! বাহ্ বড় বাঁচা বাচ্চি। নইতো আজিই আমার আখরি দিন হত। বাঁ পাশে হাত রেখে জোরে নিশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলল।

__________________

ফায়যান বাংলো……

বাসায় এসে ফায়যান স্ট্যান্ট মেরে মেরে হাসছে। সে ঘুরে একবার বক্সিং ব্যাগের উপর দাঁড়িয়ে লাফ দিচ্ছে ত আরেকবার দুইতলার রেলিং থেকে সিল্প করছে।

রাহুল বসে বসে ফায়যানের আনন্দ দেখছে। স্যারের মনে লাড্ডু ত অবশ্যই ফুটছে এর আগে কখনো এরকম হেপ্পি হতে দেখি নি ! অলটাইম উদাসী ফেস করে রাখত। কোন একটা গাবলা ত অাছেই?

রাহুল ফায়যানের সামনে গিয়ে তুড়ি বাজায়। সে চট করে বাস্তবে ফিরল।

—“কি রে ভাই অনেক ঘণ্ঠা ধরে তোরে দেখতেছি! কি এমন হলো যে মনে রঙ লাগছে?

—“ধুর হালা কিছু না। ব্লাশিং হয়ে সে অন্য দিকে ফিরে বাস্কেটবল হাতে নিয়ে নাড়ানাড়ি করতে থাকে।

—“আমার সাথে চুপিয়ে লাভ নেই ব্রো আমি সবববব ডিটেলস জানি। তুমি এক মেয়ের প্রেমে পড়েছো। ঐ যে মুভি তে বলে না “Love at first side”। তোমারও তেমনই হয়েছে। কাকে দেখে লাভ ডাব হলো হুমম?

ফায়যান তখন গেঞ্জি পড়ে ছিল স্ট্যান্ট দৌড়াদৌড়ি লাফিং সিল্পিং করতে করতে ঘেমে যায়। সে রাহুলের কথা শুনে হাতে থাকা বাস্কেটবল নাড়ানো স্টপ করে মুচকি হেসে রাহুল এর দিকে তাকিয়ে বলে।

—“Nope you are wrong.

—“হেই হেই ব্রো কিভাবে আমি রং??? তোমার Love at first side ই হয়েছে।

—“নোপ আমার Love at 1st side না বরং আমার ত Married at 1st side হবে।

—“আচ আহ রাহুল হালকা কাশি দিয়ে বলে। কি কি বললি? জীবনে প্রথম শুনতেছি ম্যারেড এট ফাস্ট সাইড! এরকম কোনো সাইডও আছে।

—“হুম অবশ্যই আছে। সবার না থাকলেও আমার মতে ত অবশ্যই আছে।

—“যেমন?

—“যেমন সবাই লাভ এট ফাস্ট সাইড বলে রিলেশনে জড়ায় থাকে বা রিলেশনশিপ করে ভালোবাসে। সেটাও তাদের ক্ষেএে ঠিক। তবে ইসলামের মতে একটা মেয়েকে বিয়ের আগে ভালোবাসা টা জায়েজ না হয়তো চিনে রাখব তবে আমি প্রেম ভালোবাসাটা করব বিয়ের পর। সো মিস দেরি কে আমি বিয়ে করেই ভালোবাসব।
বাঁকা হেসে।

—“ওয়েট ওয়েট মিস দেরি কে আর তুই সিউর নাকি যে বিয়ের পর ভাবি তোরে মেনে নিবে?

—“মিস দেরি হচ্ছে ঐ দিন তোকে বলেছিলাম না আমার কার এক্সিডেন্ট হলো। সে দিন এক মেয়ে আমাকে বাঁচিয়ে ছিল সাথে গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ক্ষতিও করেছিল। সেই মেয়ে আরকি। কেন মানবে না? বিয়ে হলে বর ত হবো।

রাহুল শেষের কথা শুনে হুট করে হেসে দে। হাসতে হাসতে বলে তারপর?

—“তারপর কি আমি নাম জিগ্গেস করছি কিন্তু মেয়েটা হয়ত ভয়ে আমাকে তার নাম বলছে দেরি।

—“ওহহহ এখন বুঝছি। আচ্ছা তাহলে তুমি আজ তার বাসায় গিয়েছিলে?

—“হুমম কিন্তু তার বাসায় গিয়ে যা বুঝলাম তা আমার একদম সহ্য হয়নি।

ফায়যান রাহুলকে জারার চাচা চাচি মেহরান সবার কথা বলে এমনকি চাচাই শুধু একজন যিনি জারার পক্ষে এ কথা বলে শেষ করে।

—“আয় রে শাকচুন্নীর দল এর কথা শুনলাম দেখি! মা কেন এমন? মা এমন বলেই ত মেয়েটাও মায়ের রক্ত পাইল।

—“হুম যাক বাদ দে কাল সকালে একটা ইম্পোটেন্ট কাজ আছে। চল ঘুমায় যায়।

—“কি কাজ সেটা ত বল?

—“মিস দেরির জাসুসী।

—“ওহ আচ্ছা গুড নাইট।

_____________

In morning………

জারা ফ্রেশ হয়ে সবার জন্যে নাস্তা রেডি করে নিজে খেয়ে বেরিয়ে যায়। সে আজ নিজের মনের মত হেঁটে যাচ্ছে ভার্সিটির দিকে। যাওয়ার সময় অর্পানেজ এ ও বাচ্চাদের সাথে দেখা করে যাবে। তার প্রিয় জায়গার মধ্যে একটা হলো অর্পানেজ। সবার ভিন্ন ভিন্ন জায়গা প্রিয় হয়। কিন্তু জারার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এতিম বাচ্চাদের বাসস্থান।

জারা যাচ্ছে আনমনে হেঁটে খুশি মনে মুচকি হেসে হেসে। তবে সে এটা জানে না তার পিছে কে পড়েছে?

জারা যত সামনে যাচ্ছে তাকে ফলো করা ছেলেটাও তত আগাছে। অবশেষে জারা অর্পানেজে ঢুকে পড়ে। ছেলেটা সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়। সে অর্পানেজটা দেখে খানিকটা ভাবান্তর হলো।

—“এটা কি হলো? মিস দেরি অর্পানেজে কেন ঢুকল? আমিও যেয়ে দেখি…..আহ না এভাবে গেলে ত ইজ্জত নিশ্চিত যাবে তারপর যে ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে। আমার সামনে থেকে আবার পালিয়ে যাবে। আলাদা কিছু হয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে।

হ্যা জারাকে ফলো করছিল ফায়যান। সকাল সকাল জারাকে নিজ চোখে সেই বাসা থেকে বের হতে দেখার জন্যে ফায়যান তাড়াতাড়ি সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। কারণ গতকাল জারা নিজেকে ঠিকিই আড়াল করেছিল তবে আজ সে নিজে বাসা থেকে বের হলো।যা ফায়যান দেখে ফুললি সিউর হয়ে গেল যে জারাও সেই বাসার একজন মেম্বার।

—“আহ এবার ঠিক লাগছে আমাকে! হ্যান্ডসাম ডেশিং বয় হয়ে ভেতরে যাব আর চমকিয়ে দেব মিস দেরিকে।

ফায়যান তখন জগিং এর টিশার্ট গায়ে দিয়েছিল। এখন সে একদম বিজনেস ম্যান মিস্টার ফায়যান হাসান হয়ে নিল।

ফায়যানকে দেখে অর্পানেজ এর দারোয়ান তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে স্যালুট করল। ফায়যানও মুচকি হেসে দারোয়ানকে কপি করে স্যালুট দিল। সে ভেতরে যেতেই তার পরিচিত সব বাচ্চারা তার দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। অবশ্যই ফায়যানের কাছে অর্পানেজটা নতুন কিছু নয়। কারণ সে এই অর্পানেজে প্রতিবছর বাচ্চাদের জন্যে বিভিন্ন জিনিসপএ খাবার দাবার,,খেলনার সামগ্রী আর টাকা পে করে।

—“আঙ্কেল আপনাকে দেখে খুব খুশি লাগছে। এক বাচ্চা ফায়যানকে জড়িয়ে ধরে বলে।

—“আঙ্কেল আমারও। আরেক বাচ্চাও এভাবে বলে জড়িয়ে ধরল। সব বাচ্চারা তার কাছে এসে ভীড় জমাল।

ফায়যান বাচ্চাদের সাথে তেমন একটা ফ্রি আজৌও হয়নি তবুও তাদের জন্যে সব করতে পারে। ফায়যানের থেকে কিছুটা অস্বস্তিকর লাগছে সবাই তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে বলে। কিন্তু মনে আবার স্বস্তিও লাগছে। কারণ শুধু সে নয় জারাও এদের পছন্দ করে।

ফায়যান দেখল জারা মাঠের মধ্যে বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। সে তাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। কারণ জারা ক্রিকেট খেলছে তার পরনে পরা শাড়ির আঁচল কোমরে বাঁধা,,চুলগুলো খোলা কানের দুল যেনো রোদের সাথে মিলে উজ্জ্বলতা প্রকাশ করছে,,কপালে বিন্দু বিন্দু পানি এসে বির জমিয়েছে যা দূর থেকে সূর্যের আলোতে দেখতে চিকচিক করছে। ফায়যানের কাছে জারার এরকম রুপটা বাচ্চাদের মত লাগলেও কোনো পরী থেকে কম লাগছে না।

ফায়যান বাকি বাচ্চাদের চুপ থাকতে বলে ধীর পায়ে এ গিয়ে মিস দেরি এর পিছে দাঁড়াল।

—“ইয়াপ বেটিং আমি করব সো তোমরা যাও বলিং করো। জারা বাচ্চাদের বলে টার্গেটে বেট রেখে দাঁড়ায়।
ফায়যান স্বাভাবিক ভাবে পিছেই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু জারা তাকে খেয়াল করল না।

যখন বাচ্চা টা বল ছুঁড়ে মারল। জারা জোরছে বেটিং করে এক দু পা পিছাতেই শাড়ির নিচের কুচিজোড়ায় পা লেগে জট করে পড়ে যেতে লাগে তখনই।

—-“ও আল্লাহ গো ও আল্লাহ গো আমি তোমার কাছে চলে এলাম ও আল্লাহ গো”। বলে বলে জারা পড়ে ব্যাকসাইড ভাঙ্গবে ভেবে “আল্লাহু আল্লাহু” বলতে থাকে।

—“কি রে আমি কি স্বর্গে পৌঁছে গেছি! এখনোও কোনো ব্যথা লাগছে না যে? ঠোঁট উল্টিয়ে জারা ভাবে। কারণ সে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল তখন। আর বন্ধ করেই কথাগুলো বলছিল।

জারার ভাবান্তরের বিচ্ছেদ ঘটে যখন ফায়যান তার শাড়ির ভেতরে কোমর বেদ করে হাত রাখে পিঠে। সে জট করে চোখ খুলে আহামরি ভাবে তাকায়।

—“আল্লাহ রে তুমি কি সবসময় আমার কপালে এই বলডোজার রেই রাখছো? যেখানে দিকে সেখানেই টপকায় পড়ে। উফফ আল্লাহ কিভাবে উঠি?
জারা ফায়যানের চোখে মগ্ন হয়ে তাকাল। ফায়যান ত সেই জারাকে পড়া থেকে বাচাঁতে গিয়ে ধরল তখনই তার দিকে চেয়ে থেকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল।

—“অপূর্ব লাবণ্য।
—“কিইইইই? জারা ফায়যানের মুখে এমন কথা শুনে মনের ভেতর লাড্ডু কিন্তু বাস্তবে ভোল্টেজের শক খাওয়ার মত চোখজোড়া রসগোল্লার মত করে তাকিয়ে বলল।

—“ঐ এতো জোরে কেন চিৎকার দাও? উঠাই নিয়ে যাচ্ছি না কোথাও!

ফায়যানের কথা শুনে জারা চুপ মারল।

—“নাম বল? এবার কিন্তু রিয়াল নেইম শুনতে চাই! যদি আউল ফাউল নাম বলো তাহলে একদম কুলে উঠিয়ে ড্রেনে মালা দিব।

জারা বাচ্চাদের মত ফেস করে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে ন্যাকা কান্না শুরু করে দে। ফায়যান হকচকিয়ে যায়। সে উওেজিত হয়ে বলে।

—“কি হলো কাঁদছো কেনো? এখনো ত মালাও দে নি!

—“এ্যআআআআআ আপনি আমায় এসব কথা বলতে পারলেন? আমি একটা মাসুম নিষ্পাপ মেয়ে। জীবনে এভাবে আর কত বকা খাবো? এ্যআআআআ!

ফায়যান জারার কান্ডে না হেসে পারল না। সে জারাকে ধরা অবস্থায়ই কান্না থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জারা ত জারা সে একবার যে বিষয় নিয়ে শুরু হয় সেটা শেষ না করা পর্যন্ত চালু রাখে। সে ন্যাকা কান্না করতেই থাকে।

এবার ফায়যান ধমক দিয়ে উঠল।

—“এই মেয়ে চুপ কতক্ষণ ধরে তোমার ন্যাকামু দেখছি এবার সোজাসুজি আমার প্রশ্নের উওর দাও না হলে আমি সত্যি সত্যি স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।

জারা ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলে।

—“আ….আমার নাম জারা। এ..বার ছা….ছাড়েন।

ফায়যান মুচকি হেসে জারাকে টেনে নিজের মুখ বরাবর এনে বলে।

—“না ছাড়লে?

—“কেন ছাড়বেন না ছাড়েন এখনোই,, না ছাড়লে আমি কিন্তু চিৎকার দিব।

—“দাও বারণ করলাম কবে! আর বাই দ্যা ওয়ে এখানে কেউ নেই ও।

জারা আশপাশ তাকিয়ে দেখে মাঠে যে বাচ্চারা ছিল সবাই চলে গেছে। সে অবাক চোখে ফায়যানের দিকে তাকিয়ে বলে।

—“আপনি কি এদের কে?

—“বাহ ! ভেরি ইন্টেলিজেন্ট আমিই ত কিছুক্ষণ আগে সব বাচ্চাদের ভেতরে পাঠিয়ে দিলাম। যখন তুমি আমার কোলে পড়লে।

—“দেখেন প্লিজ ছাড়েন আমার না কেমন কেমন জানি লাগছে। আমতা আমতা লজ্জায় ফায়যান এর দিকে না তাকিয়ে বলে।

—“তাহলে ত আরো ছাড়া যাবে না! টেডি স্মাইল দিয়ে ফায়যান বলল।

—“আয় রে খোদা বলে কি কত বড় লুইচ্চা। (মনে মনে বলে) প্লিজ আমার লেইট হচ্ছে ভার্সিটির জন্যে !

ফায়যান মুচকি হেসে জারাকে দাঁড় করিয়ে বলে।

—“আমার সাথে যাবা।

—“না থাক আ…..ফায়যান রাগী চোখে জারার দিকে তাকায়। এতেই জারা চুপ মেরে যায়। সে আলগা করে কথাটা শেষ করে বলে।

—“নাহ আপনার সাথেই যাব।
মনে মনে রাগে ফুসতে থাকে।

—“হুম গুড গার্ল।

ফায়যান জারাকে নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা দে।

_______________

অাবরার ক্লাসে ঢুকে পড়ল। প্রিয়া বার বার ঘড়ি দেখছে আর মনে মনে ভাবছে কখন জারা আসবে? স্যার ত এসেই পড়ল। বালডি তাড়াতাড়ি আয় !

—“গুড মনিং স্টুডেন্টস সবাই কেমন আছেন?

—“গুড মনিং স্যার। আমরা ভালো আপনি কেমন আছেন? (সবাই একসাথে জোরে বলে)

—“আমিও ভালো আছি। সো সব স্টুডেন্টস ক্লাসে চলে এসেছে ত নাকি কেউ বাকি আছে? থাকলে বলো আমি কিন্তু লেইট করে ক্লাস করানো আর লেইট করে ক্লাসে আসা স্টুডেন্টস কে একদম পছন্দ করি না।

প্রিয়া জারার কথা আবরার স্যারকে বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মেহরান তার আগেই বলে।

—“না স্যার সবাই ক্লাসেই আছে প্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিল।

প্রিয়া মেহরানের করা কাজটা ঠিকিই বুঝতে পারল যে সে জারাকে ক্লাসের সবার সামনে মানহীন করার চেষ্টা করছে।

—“দোস্ত প্লিজ চলে আয় স্যার হাজিরা শুরু করবে। প্রিয়া সবার চোখের আড়ালে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে জারাকে মেসেজ করল।

জারা ফায়যানের সাথে গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে। কিন্তু পরে ফায়যান নিরবতা ভেঙ্গে বলে।

—“ভালোবাসা কি জানো?

কারো মুখে এমন কথা শুনে জারা কিছুটা অবাক হয়। সে মুচকি হেসে বলে।

—“হয়ত জানি হয়ত জানি না। কখনো ভালোবাসা নামক জিনিস টার সাথে পরিচয় হয়নি।
ফায়যান আড়চোখে জারার দিকে তাকাল। জারার চোখে ভালোবাসাহীন নয়ন ফুটে উঠছে।

—“কেনো? তোমার বাসার বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই তোমাকে ভালোবাসে না?

জারা তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে বলে।
—“বাবা-মা-ভাই-বোন এগুলো কি বা কাকে নিয়ে গড়ে উঠে এখনো ঠিক জানিনা। এদের ব্যাপারে সব সময় বইয়ের পাতায় পড়তাম। এদেরকে পরিবার বলে। কিন্তু আমার ত পরিবার নামক জিনিসটা নেই শুধু আমার প্রিয় চাচু ছাড়া।

ফায়যান মুচকি হেসে ভার্সিটির গেইটের সামনে আসল।
তখন জারা ফোন চেক করে দেখে প্রিয়ার মেসেজ।
সে তড়িঘড়ি ফায়যানকে বিদায় জানিয়ে দৌড়ে ভেতরে গেল। ফায়যান মুচকি হেসে সানগ্লাস চোখে দিয়ে রওনা দে।

জারা ক্লাসের বাহিরে এসে ভয় পাচ্ছে। আজ নতুন স্যার আমাদের ক্লাস নিবে আর আমি উনার ক্লাসেই লেইট! না জানি স্যারটা কেমন?

আবরার সবার হাজিরা নিচ্ছে হঠাৎ তার হাত লেখার থেকে থেমে যায়। চোখজোড়া কেমন যেনো রক্তিম বর্ণের হয়ে যায়। তার নাকে কেমন একটা সুঘ্রাণ আসতে লাগে।

আবরার ঘ্রাণটা দীর্ঘভাবে শ্বাসে নিয়ে মনে মনে বলে —“সেই স্বাদ,,সেই খুশবু আবার ঘ্রাণ হয়ে নাকে জড়াচ্ছে। সে আছে কোথাও ত আছে।
আবরার আড়চোখে সবখানে তাকাছে তখন দরজার বাহিরে কারো ছায়া দেখতে পেয়ে সে এসে দরজা খুলে দেখে শকড।

—“Sir?

আবরার—“You?

………চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here