#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৪
চোখের সামনে প্রাক্তনকে তার বউয়ের সাথে দেখলে অবশ্যই কষ্ট হয় কথাটা আবির ভুল বলে নি তবে উনি কি করে নিশ্চিত হচ্ছে নীলের সাথে সম্পর্ক ছিলো?
“আমি বুঝি প্রিয় মানুষকে হারানোর কতো কষ্ট তাই তোমার কষ্ট কিছুটা দূর করার জন্য তাকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি”
তিশ্মি ঘুমিয়ে গেছে, ওকে শুয়ে দিয়ে। আবিরকে জবাব দিলাম,
“আপনি কি করে জানেন নীলের সাথে আমার সম্পর্কে কথা আর কি ব্যাবস্থা করেছেন ”
“স্বামীর কাছে অতি সহজে প্রাক্তন ছিলো সেটা মেয়েরা স্বীকার করে না তুমি করলে কেনো? ”
“আমি তো বলি নি যে নীল আমার প্রাক্তন ছিলো আর ওই যে আপনি বললেন, আপনি আমার স্বামী তাই স্বীকার করতেই পারি ”
“ওহ্ আচ্ছা, তবে শুনো শেষ বারের মতো আমি আর ঐশী তিন মাস আগে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম সেখানে তুমি নীলের সাথে ছিলে তখন দেখেছি ”
“এক দেখাতে আমাকে মনে রেখেছেন”
“নীল তোমার মুখের উপর ফুলের তোড়া ছুড়ে না মারলে সেদিনের তোমার অসহায় মুখটা মনে থাকতো না ”
কষ্ট লাগতে দেয়ালের দিকে কাঁথ হলাম যাতে আমার কষ্টর স্বাক্ষী কেউ না থাকে। নীলের সাথে সম্পর্ক ছিলো একবছরের যদিও একবছর হওয়ার আগে থেকে নীল আমাকে এড়িয়ে চলেছে। তিন মাস আগে আমাদের সম্পর্কের একবছর ছিলো সেদিন রেস্টুরেন্টে নীল আর আমি বসে আছি। নীল আসার পর থেকে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। আমি কোনো কথা বললে হুম, হ্যাঁ বলে যাচ্ছে তারপর জোর করে ওর হাত থেকে ফোনটা টেনে নিতে,
“কোন অধিকারে আমার ফোনটা নিলো, জানো না কারো পারসোনাল জিনিসে হাত দিতে নেই ”
“ফোনে কি এমন কাজ করছো যে আমি দেখতে পারবো না”?
” সব কথা তোমার জানার দরকার নেই আর হ্যাঁ তোমার সাথে সম্পর্ক সামনের দিকে আগানো যাবে না ”
“কেনো? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? ”
“আমি বিদেশে চলে যাচ্ছি ”
নীলের ফোনে কল আসায় রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে যাবে তখন ওর হাতটা ধরে ফুলের তোড়া দিয়েছিলাম কিন্তু ও অনেক লোকের সামনে আমাকে অপমান করে চলে যায়।
আজকে কথাগুলো মনে পরে আবার কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ কেঁদে নিজের কষ্ট হালকা করলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে সকালের নাস্তা বানাতে তাকে সাহায্য করছি তখন বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে রুমে আসতেই,
“রুমে আসতে এতোখন সময় লাগে?কানে শুনতে পারো না নাকি যে ও কাঁদছে ”
“আমি কাজ করতেছিলাম ”
“কি যে কাজ করো জানা আছে। বাচ্চা সামলাতে পারে না আবার বড় বড় কথা ”
উনার কথার উওর না দিয়ে মিশ্মিকে কোলে নিলাম সাথে সাথে ওর কান্না বন্ধ হলো।
“এই মেয়ে এই তুমি নিজেকে কি খুব চালাক মনে করো হ্যাঁ? মিশ্মি করে নিয়ে চলে গেলে একটু পর তিশ্মি কাঁদবে তাতে আমার ঘুম হবে না তাই তিশ্মিকে রেখে যাচ্ছে? ”
“না মানে ও তো ঘুমোচ্ছে ”
“ও ঘুমাচ্ছে বলে কি ওকে দেখতে হবে না? যদি আমার মেয়েদের দায়িত্ব না নিতে পারো তাহলে বাড়ি থেকে বিদায় হও। সৎমা আজ পর্যন্ত ভালো হয় নি আর তো এযুগে উনি আসছে যত্তসব ”
মিশ্মি -তিশ্মিকে কোলে নিয়ে রুমে থেকে বেড়িয়ে গেলাম। সকাল সকাল উনার খারাপ ব্যবহার আবার নীলের মুখ দেখা মনে হয় আমার কলিজায় কেউ যেনো ছুরি ধরে আছে।
মীরা ঘুম থেকে উঠে আমার কাছে এস চোখে পানি দেখে বললো,
“আপু তুই কান্না করিস কেনো?”
“আরে না চোখে কি যেনো পড়েছে ”
“মিথ্যে বলছিস, আবির ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে তাই তো? কেনো শুধু শুধু এই বিয়েটা করলি? ”
“এই যে দেখছিস দুটি ফুল। তুই তো জানিস ছোট বাচ্চা দেখলেই আমার কোলে নিতে ইচ্ছে করে আর আমি তাকে দেখিয়ে দিতে চাই যে আমিও ভালো আছি ”
“সে কে ছিলো? ”
“বাদ দে, তুই একটু ওদের কাছে বস আমি একটু কাজ শেষ করে আসতে আছি”
“আচ্ছা ”
কলিং বেলের শব্দে শুনে শ্বাশুড়ি মা দরজা খুলে। আমি কাজ শেষ করে ড্রয়িং রুমের দিকে আসতেই দেখি আমার বাবা মা, মীরার বাবা মা এবং নীলের মা বাবা এসেছে। আমার বাবা মাকে দেখে তো আমার ভয় করছে, তারা নীলকে দেখলে তো মীরা সব জেনে যাবে এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না?
সবার সাথে দেখা না আমার নীলের কাছে যাওয়া উচিত ও যাতে আমার মা বাবার সামনে না যায় কিন্তু না যেয়েও তো উপায় নেই কি করবো?
আবির সাথে নীল ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই আমার বাবা বললো,
“তুমি আমার মেয়েকে ঠকিয়ে মীরাকে বিয়ে করেছো? ”
চলবে,,,,,