তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ৩

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৩

“নীল তুমি এখন আমার ভালোবাসার মানুষ না আমার বোনের স্বামী আর আমিও অন্য জনের বউ। পুরোনো কথা ভুলে আমার সংসার নতুন ভাবে সাজাতে চাই ”
” তুমি বিশ্বাস করো আমি তোমার শ্বশুর বাড়ি আসতে চাই নি মীরা জোর করে এনেছে। ”
“মীরা আমাদের সম্পর্কের কথা কিছু জানে না, কোনোদিন যেনো জানতে না পারে সেদিকে তোমারও লক্ষ্য রেখে চলতে হবে ”
” আমি জানি তোমার সাথে অন্যায় করেছি আর মীরাকে কিছু না বললেও অন্যায় হবে ”
“আগেই মীরাকে কিছু বলতে পারো নি আর এখন বলে কি হবে? তারথেকে নতুন জীবন সুখময় করো ”
” ইভা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও, তুমি ক্ষমা না করলে মরেও শান্তি পাবো না ”
“অন্যায়ের কিছু নেই, ক্ষমা করার মতো কোনো কাজ করো নি কারন আমার ভাগ্যে তুমি ছিলে না তাই আমাদের সম্পর্ক নেই ”
“জানি না কেমন যেনো সেদিন রাতে মীরার সাথে কথা বলে মনে হলো আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি তোমার প্রতি শুধু ভালো লাগা,,,,,,, ”
“নীল প্লিজ আর কিছু বলো না, এবার আমার রুম থেকে চলে যাও ”
“ইভা আমার কিছু কথা আছে সেগুলো বলতে চাই ”
“না না না তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না ”

নীল রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি রুমের দরজা বন্ধ করে নিজের কষ্ট হালকা করবো তাই দরজার কাছে যেতে আবির রুমে আসে। নীলের সাথে কথার বলার সময় আমার চোখে পানি ঝলঝল করেছে। আবির আবার আমাদের সম্পর্কে কথা বুঝে যাবে না তো? না বুঝতে দিলে চলবে না তাই আমি রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলাম তখন আবির বলে উঠলো,

“আমার কষ্টের মাঝে তোমার কষ্ট দেখতে ভালো লাগবে না। আমার না হয় ক্ষমতা ছিলো না প্রিয় মানুষকে ধরে রাখার তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখি নি কিন্তু তুমি তো চাইলে প্রিয় মানুষকে নিজের করতে পারতে ”

আবির এখন আমার স্বামী। আমার অতীত তার জানা উচিত মানুষটাকে মিথ্যে বলতে পারবো না। তাই জবাব দিলাম,
“ভাগ্যে ছিলো না তাই ধরে রাখতে পারি নি ”
“কেনো তাকে কি ভালোবাসতে না যে ধরে রাখার ক্ষমতা নেই ”
“দেহের মৃত্যু আর কারো প্রতি মনের মৃত্যু দুটো আলাদা ”
” তুমি তো বলো অধিকার খাটাতে হয় কেউ কাউকে অধিকার দেয় না আদায় করে দিতে হয় ”
“ধুর যা হয়েছে ভালোই হয়েছে নয়তো এতো কিউট বেবি পেতাম নাকি? ”
“সৎ মা আপন হয় না নিশ্চয়ই জানো ”
“হুম চেষ্টা করে দেখি আপন হয় কি না? ”
“হুম করো ”
“এখন পর্যন্ত বেবিদের নাম রাখা হয় নি সেদিকে আপনার কোনো খেয়াল আছে? ”
“ঐশী জানতো যমজ মেয়ে হবে তখনই ও নাম ঠিক করে রেখেছিলো, ওর মৃত্যুতে বাচ্চাদের নামের কথা ভুলে গিয়েছি, তুমি মনে করে ভালোই করেছো ওদের নাম মিশ্মি -তিশ্মি হবে ”
“খুব সুন্দর নাম তো আপুর চয়েজ আছে যেমন সুন্দর স্বামী তেমন সুন্দর বেবি আর ওদের নাম ”
“এই মেয়ে আমি সেই কখন থেকে এসে বসে আছি জানো না আমি বাসায় এসে চা খাই ”
“বাসায় নতুন এসেছি তাহলে জানবো কিভাবে? ”
“এতো কথা না বলে যাও গিয়ে চা নিয়ে আসো ”

যাহ্ বাবা হঠাৎ করে রেগে গেলো কেনো বুঝলাম না। একটু ভালো করে কথা বললে কি হয়? কথা না বাড়িয়ে রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে উনাকে দিয়ে রুমে থেকে চলে গেলাম শ্বাশুড়ি মায়ের রুমে।
“মা ”
“হ্যাঁ বউমা আসো ”
“ঐশী আপু বাচ্চাদের নাম ঠিক রেখেছিলো মিশ্মি -তিশ্মি এটা বলতে এসেছি ”
“খুব ভালো, মেয়েটা অকালে চলে যাবে বুঝতে পারি নি”
“আপুর ঠিক কি হয়েছিলো? ”
“ডেলিভারি ডেটের আগে হঠাৎ করে প্রসব ব্যাথা শুরু হয় তারপর হসপিটালে নিতেই নরমালে বাচ্চা হয় কিন্তু অনেক ব্লাড যায়। ডাক্তার বলে তাড়াতাড়ি এবি নেগেটিভ ব্লাড দিতে হবে, কোথাও এবি নেগেটিভ ব্লাড পাওয়া যায় না শেষে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেলো”

কথাগুলো বলে শ্বাশুড়ি মা কেঁদে দেয়। তাকে কি বলে সান্ত্বনা দিবো সে ভাষা আমার নেই । শ্বাশুড়ি মা কেঁদে কেঁদে আমার হাত ধরে বললো,

“তুমি বাচ্চাদের সৎমা না আপন মা হয়ে থেকো কখনো যেনো ওরা মায়ের অভাব বুঝতে না পারে। ”
“মা আপনি কিছু চিন্তা করবেন না আমি ওদের মা। পেটে ধরি নি তাতে কি মা হাওয়া যায় না? জানেন মা আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করেছি শুধু মাত্র এই বাচ্চা দু’টির কথা শুনে ”
“তুমি খুব ভালো, দ্বিতীয় বার আমার ঘরে এতে ভালো বউ আসবে ভাবতে পারি নি ”
“মা আমি ওদের নিয়ে যাই ”
“আচ্ছা ”

বাচ্চাদের আমার রুমে এনে শুয়ে দিয়েছি তারপর খালাম্মাকে কল দিয়ে বলেছি কালকে সকালে যেনো আমাদের বাসায় আসে।
রাতে খাবার টেবিলে নীলকে মীরার সাথে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই না খেয়ে রুমে আসি।
আবির খেয়েদেয়ে রুমে এসে নিচে বিছানা করে ঘুমানোর জন্য আমি উনাকে বললাম,
“আজকে আপনি বাচ্চাদের কাছে ঘুমান আমি নিচে ঘুমাবো ”
“তার কোনো দরকার নেই ”
“তাহলে নিচে বিছানা করতে হবে না খাটে চারজন ঘুমানো যাবে ”

আবিরের নিচে ঘুমাতে অসুবিধা হচ্ছে তাই কথা না বাড়িয়ে খাটের এক কোনায় শুয়ে পড়ে। তিশ্মি কান্না করছে ওকে কোলে নিয়ে রুমের মধ্যে হাঁটছি তখন আবির বললো,

“চোখের সামনে প্রাক্তনকে তার বউয়ের সাথে দেখতে তোমার বুঝি খুব কষ্ট হচ্ছে? ”

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here