তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ২

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_২

“আপু তুই শেষ পর্যন্ত দুই সন্তানের বাবা তাকে বিয়ে করলি, দেশে কি ছেলের অভাব ছিলো নাকি?”
” আমি কারো সংসার ভেঙ্গে বিয়ে করি নি আর দুই সন্তান আছে তাতে কি হয়েছে, কতো লোক আছে সন্তানের জন্য হাহাকার করে সেক্ষেত্রে আমার ভাগ্য অনেক ভালো ”
” সৎ মা কখনো আপন হয় না ”
“আমাকে নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবে না আমার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে তখন কিছু করতে পারি নি তবে এখন আমার সংসারে এসেও কেউ কুট কাঁচালি করলে সহ্য করবো না ”
“আপু তুই আমাকে অপমান করছিস কিন্তু ”
“তুই আমার শ্বাশুর বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে অপমান করবি, আমার সন্তানদের অপমান করবি তা হবে না।”
“তুই অনেক পালটে গেছিস, ভেবেছিলাম তোর বাড়িতে দুটো দিন থাকবো কিন্তু তা হবে না”
“আমার বাড়িতে কেনো থাকবি? তোর শ্বাশুড় বাড়ি চলে যা”
“তারা আমাদের এখনো মেনে নেয় নি, পনেরো দিন ধরে কয়েক জায়গায় ঘুরেছি তুই আমাদের থাকতে দিয়ে আমার বাবা মাকে বুঝিয়ে বলবি আমাদের মেনে নিতে। প্লিজ আপু এতোটুকু কর ”
“তোরা বিয়ে করার সময় কি আমাকে জানিয়ে বিয়ে করেছিলি যে এখন আমাকে এসবের মধ্যে টানছিস ”
“আপু তুই আমাদের এক মাত্র ভরসা তোর কথা সবাই শুনে তাই তুই আমার মা বাবার সাথে কথা বললেই তারা মেনে নিবে। আপু আমাকে ফিরিয়ে দিস না ”

আর কিছু বলার আগে আমার শ্বাশুড়ি মা বাচ্চাদের জন্য ফিটার নিয়ে এসে বললো,

“বউ মা ওদেরকে আমার কাছে দেও আমি খাইয়ে দিচ্ছি তুমি গিয়ে টেবিলে নাস্তা বেড়ে রাখো, কাজের মেয়ে কয়েকদিন পরে আসবে তাই যদি আমার সাথে একটু কাজ করে দিতে ”
“আচ্ছা মা আমার কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু একটা কথা আছে কি করে যে বলবো বুঝতে পারছি না ”
“জানি গো মা মীরা কয়েক দিনের জন্য থাকতে এসেছে তাই তো”
“হুম ”
“সমস্যা নেই ওরা কয়েক দিন থাকুক ”
মীরা আমার শ্বাশুড়ি মাকে বললো,
“আন্টি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ”
“তোমার স্বামী কোথায়? ”
“আপনারা থাকতে দিবেন কি না তাই ও বাইরে আছে”
“যাও গিয়ে ডেকে নিয়ে আসো ”

আমার প্রাক্তনের বউ হচ্ছে আমার আপন খালাতো বোন মীরা। বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে, আঙ্কেল মীরাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে চেয়েছে কিন্তু মীরা তো নীলকে (আমার প্রাক্তন) ভালোবাসে তাই বাধ্য হয়ে নীল মীরাকে বিয়ে করে।

নীলের সাথে ব্রেকআপ হওয়ার পর ওর সব স্মৃতি মুছে দেই যদিও মন থেকে স্মৃতি মুছে দেওয়া সম্ভব না আর কোনো দিন যেনো ওর মুখ দেখতে না হয় তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই কিন্তু আজ ওকে আবার দেখতে হবে তাও বউয়ের সাথে জানি না নিজের কষ্ট কতোক্ষণ চেপে রাখতে পারবো।

টেবিলে খাবার বেড়ে মাকে ডেকে আনতে যাবো তখন আবির (আমার স্বামীর নাম) এসে আমাকে বললো,
“বাসায় ফিরতে রাত হবে মাকে বলে দিও ”
“আগে খেয়ে নেন তারপর যেখানে খুশি সেখানে যান “?
” বাইরে খেয়ে নিবো ”
“চুপচাপ খেতে বসুন নয়তো রাতের মতো জোর করে খাইয়ে দিবো ”
“এই মেয়ে আমার উপর একদম স্বামীর অধিকার খাটাতে আসবে না ”
“আমার নাম আছে ইভা, এই মেয়ে এই মেয়ে বলবেন না আর হ্যাঁ অধিকার কেউ কাউকে দেয় না আদায় করে নিতে হয়”
“তোমার সাথে কথা বলা,,,, ধুরো খেতে দেও ”

আবির নাস্তা খাওয়ার জন্য বসে। মা বাচ্চাদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসে আমাকে বললো,
“মীরা এখনো আসে নি কেনো? আবার চলে গেলো নাকি? ”
“মা আমি দেখে আসি আপনি বসুন ”

বাসার মেইন দরজা কাছে যেতে চেনা চোখে চোখ আটকে গেলো। একমাস পরে নীলকে দেখলাম, আমার বুকের ভিতরটা কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। মীরাকে কিছু বুঝতে দিলে চলবে না তাই নীলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে মীরার উদ্দেশ্য বললাম,
-তোরা ভিতরে আয়
-এই ইভা তুমি সত্যি বিয়ে করেছো আমি ভাবতেই পারছি না
নীল হঠাৎ করে সবার সামনে এমন কিছু বলে ফেলবে বুঝতে পারি নি। মীরা আমার আর নীলের সম্পর্ক কিছু জানে না আর আমিও চাই না ও জানুক। আমি কি বলবো তা বুঝে উঠার আগেই মীরা বললো,
-তোরা দুজন দুজনকে আগে থেকে চিনতিস?
-কলেজে কয়েক বার দেখা হয়েছে সেই থেকে পরিচয়।
-নীল তুমি তো আগে কখনো বলো নি ইভা আপুর সাথে তোমার পরিচয় আছে?
নীল চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তাই আমি উওর দিলাম,
-আরে ও হয়তো ভুলে গেছে তাই বলে নি, এখন আর কথা না বাড়িয়ে, গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।

আবির খেয়েদেয়ে বাইরে চলে গেলো। নীল আর মীরাকে আমার শ্বাশুড়ি মা খেতে দিলো। আমি ইচ্ছে করে নীলের সামনে যেতে চাই না ওকে যতো দেখবো ততো কষ্ট বাড়বে। ওদের এখানে থাকা চলবে না, নীলের সাথে কথা বলে মীরাকে নিয়ে চলে যেতে বলবো।
বাচ্চাদের সামলাতে আমার সময় যাচ্ছে। রুম থেকে বের হতে হয় নি।সব কাজ শ্বাশুড়ি মা করেছে, উনিখুব ভালো সেটা বিয়ের আগে থেকে জানি কারণ আমার ফুপির ননদ হলো আমার শ্বাশুড়ি মা।
সন্ধ্যা মাথাটা ঝিমঝিম করছে তাই চা খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হবো তখন শ্বাশুড়ি মা চা দিয়ে গেলো আর বাচ্চাদের তার কাছে নিয়ে গেলো। এই সুযোগে একটু ঘুমের দেশে যাই। বিছানায় শুতে দরজায় ঠকঠক শব্দ পেয়ে উঠে বসি।

“আসতে পারি? ”

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here