তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি পর্ব ১

বাসর ঘরে সাতদিনের যমজ মেয়ে বাবুর মুখে আমার দু হাত দিয়ে দুটো ফিটার ধরে আছি।বাসর ঘর শুধু নামে কারণ কোনো ফুল নেই, আমার সাজ নেই বললেই চলে জামদানী লাল শাড়ি আর চুড়ি এটাই অনেক সাজ এই বাসর ঘরে। কি অদ্ভুত নিয়তি কার সাথে আজকে থাকার কথা আর কার সাথে আছি তাও জানি না, এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর মুখ দেখি নি। তবে হ্যাঁ আমাকে কেউ জোর করে নি এই বিয়েটা করার জন্য নিজে ইচ্ছে করে বিয়েতে রাজি হয়েছি। একজন আমার লাইফ থেকে চলে গিয়ে ভালোই করেছে তাই আমি আজ এতো গুলো কিউটের বক্স বেবি পেয়েছি। আমাকে এখন পর্যন্ত আমার মা ভাত খাইয়ে দিছে আর আমি কি না দুটো বাচ্চা সামলাবো ভাবতে হাসি পাচ্ছে,আবার মন খারাপও হচ্ছে কারন জেদ করে মস্তবড় লড়াইয়ে নেমেছি জানি না কতোটা সফল হতে পারবো।

“ইভা তোমার সারাদিন অনেক কষ্ট হয়েছে, এখন আমি ওদের নিয়ে যাই ”

আমার শ্বাশুড়ি মায়ের কথা শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে চোখের ছলছল পানি মুছে বললাম,

“না আন্টি ওরা আমার কাছে থাকবে আমার কোনো অসুবিধা হবে না”
“কালকে থেকে না হয় তোমার কাছে থাকবে আর তুমি আমাকে আন্টি বলবে না মা বলবে ”
“আচ্ছা কিন্তু ওরা আমার কাছে থাকবে ”
“খুব জেদি মেয়ে তো, আমার ছেলেটাকেও তোমার জেদ দিয়ে নিজের করে নিও ”
“হুম ”
“তোমার খাবারটা রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিও ”
“আপনি কি খেয়েছে ?”
“না এখন খাবো আর হ্যাঁ যতো রাত হোক ওদের সামলাতে তোমার কষ্ট হলে আমাকে ডাকতে ভুলবে না ”
“আচ্ছা ”

শ্বাশুড়ি মা চলে যাওয়ার পর আমি বাচ্চাদের ঠিক মতো শুইয়ে দেই। তখন আমার স্বামী রুমে ঢুকে দুম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আমি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললাম,
“বাচ্চারা ঘুমোচ্ছে তাই আস্তে শব্দ করবেন ”
“তোমার থেকে এখন আমার জ্ঞান নিতে হবে কি করবো না করবো? ”
“ভুল কাজ করলে অবশ্যই সঠিক পথ দেখাবো ”
“এই শুনো আমার থেকে স্বামী অধিকার আশা করো না ভেবো না তোমার সুন্দর মুখ দেখে আমার,,,,,,, ”
“আমার ভালোবাসার মানুষের জায়গায় তোমাকে দিতে পারবো না কোনোদিন ভালোবাসা পাবার আশা করো না। ব্যাস আর সিনেমার ডায়লগ দিতে হবে না ”
“তুমি তো বড্ড বাঁচাল ”
“আপনি যা বলতে চেয়েছেন তা আমি বলে দিলাম যাতে আপনার কষ্ট কম হয় ”
“ধ্যাত্ সামনে থেকে সরো আমি ঘুমাবো ”
“বিছানায় আপনার জায়গায় হবে না নিচে ঘুমান ”
“আজকে আমার বাসায় তোমার প্রথম দিন বলে কিছু বললাম না ”

আমার স্বামী নিজেই নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়েছে। আমি খাটের এক কোণে বসে আছি, চোখ গেলো শ্বাশুড়ি মা খাবার রেখে গিয়েছে। আমার ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু উনি বোধ হয় খায় নি। খাবারের প্লেট নিয়ে উনার সামনে বসে আঙ্গুল দিয়ে হাতে খোঁচা দিয়ে বললাম,
“এই যে শুনেন, একটু উঠে বসেন ”
“মহা জ্বালা তো ”
“কিছু খেয়েছেন? ”
“নাহ্ খাবো না ”
“খাবো না বললেই তো হবে না খেয়ে নেন”
“বলছি তো খাবো,,,,,,,,,
আর কিছু বলার আগে আমি উনার মুখে ভাতের লোকমা দিলাম।
” আর একটাও কথা বলবেন না চুপচাপ খেয়ে নেন ”

বাধ্য ছেলের মতো উনি খেয়ে নিলো, পেটে ক্ষুধা তাই রাগটা কাজে লাগাতে পারে নি। আমিও একটু খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। উনি একটু রাগী প্রকৃতির মানুষ কিন্তু বেশ ভালো সেটা বুঝেছি। বউকে অনেক ভালোবাসতো নয়তো নতুন সদ্য বিয়ে করা বউয়ের দিকে ঠিক মতো তাকালেনও না। প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায় না ঠিক কিন্তু নতুন করে জীবন সাজিয়ে নেওয়া যায় আর যারা বেইমানি করে তাদের কথা আলাদা। সে একদিন বলেছিলো আমি তার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা কিন্তু আজ তার বুকে অন্য কেউ। আমার কাছে সে এখন দীর্ঘশ্বাস আর বাচ্চারা আমার নতুন জগৎ।
ঘুমে চোখটা লেগে আসছে তখন কান্না শব্দ পেয়ে তাড়াতাড়ি তোয়ালের মধ্যে ফিটার মোড়ানো ছিলো সেটা বের করে বাচ্চাদের মুখে ধরি আর এক নিমিষে কান্না বন্ধ হলো। ওদের খাইয়ে আমি ঘুমালাম।

সকালে আমি উঠে উনাকে ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আস্তে করে ধাক্কা দিলাম সাথে সাথে উনি আমার হাত ধরে বলছে,
“সকাল বেলা তোমার মিষ্টি কন্ঠে না আমার ঘুম ভাঙ্গে না”
“ছাড়ুন আমি ভুল করছেন ”
“নাহ্ তুমি আমার কাছে শুয়ে থাকবে ”

পাশে একটা পানির গ্লাস রাখা ছিলো। গ্লাসের মধ্যে আঙ্গুল ডুবিয়ে উনার মুখে পানি ছিটিয়ে দিলাম। উনি লাফিয়ে উঠে বসে। আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ওয়াস রুমে গেলো। ভেবেছিলাম বকাবকি করবে কিন্তু না চুপচাপ চলে গেলো। পুরোনো অবভ্যাস ছিলো তা মনে গেঁধে রয়েছে।

“ইভা ড্রয়িং রুমে এসে দেখো তোমার বোন এসেছে ”

শ্বাশুড়ি মায়ের ডাক শুনে আমি বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলাম এ তো আমার প্রাক্তনের বউ।

চলবে,,,,

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here