তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ৬

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৬
“একটার পর একটা সিগারেট টেনে কি নিজেকে মহা পুরুষ মনে করেন? ঘরে দুটি বাচ্চা আছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ”

আবির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনে যাচ্ছে আমার শুনে পিছনে ঘুরে তাকাতে ওর হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলাম।

“তুমি এটা কি করলে?এখন এতো রাতে সিগারেট কোথায় পাবো আর মাত্র একটা সিগারেট আছে? ”
“যা করেছি বেশ করেছি, এখন রুমে গিয়ে ঘুমান ”
“মুডটায় খারাপ করে দিলো ”
“আপনার মুড ভালো থাকে নাকি ? সব সময় তো গোমড়া মুখ নিয়ে ঘুরে বেরান”
“যতো সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে ঐশীকে ভুলে থাকি ততোক্ষণ আমার ভালো লাগে “৷
” সত্যি কি ভুলে থাকা যায়?সারাদিনে ভুলে থাকলেও দিন শেষে তাকে মনে পরবেই, কেনো এমন হয়? ”
“নিয়তির খেলা ”
“বড্ড নিষ্ঠুর নিয়তি, আপনজনকেও চিনিয়ে দেয়”
“শুনো ”
“বলেন? ”
“চিঠিটা পড়ো ”
“মুখে বললেই তো পারেন আবার চিঠি লেখার কি দরকার ছিলো? ”
“বেশি কথা বলো না ”

বারান্দার লাইট অন করে চেয়ারে বসে চিঠিটা পড়া শুরু করলাম,

“ইভা আমি জানি না কি করে বললে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তবুও প্রথমে বলছি আমাকে ক্ষমা করে দেও। আমি চেয়েছিলাম তোমাকে মীরার ব্যাপারে বলতে কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যায়। তোমাকে ভালোবাসি না ভালো লাগা ছিলো সেটা মীরা আমাকে বার বার বুঝিয়েছে তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি মীরাকে বিয়ে করার পর বুঝেছি এবং মীরা তোমার খালাতো বোন সেটা বিয়ের পর জেনেছি। মীরা তোমার মতো করে আমাকে বুঝতে পারে না তোমার মতো ও কোনোদিন ভালোবাসতে পারবে না। তুমি বিশ্বাস করো মীরাকে ইচ্ছে করে বিয়ে করি নি সারাদিন রাত আমাকে কল করে আমার মাথা পাগল করে দিয়েছে। তোমাকে দেখে আমার কষ্ট হয় অনেক বেশি। দুটো দিন তোমার বাসায় আমার যে কতোটা কষ্ট হয়েছে তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।তোমাকে আর কিছু বলার ভাষা নেই আমার। শুধু বলবো তুমি আমার মতো বেইমানের জন্য কষ্ট পেও না, নিজের সংসার নিয়ে ভালো থাকো ”

চিঠিটা পড়তে আমার চোখ থেকে টপ টপ পানি পরছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কেনো আমার সাথে এমন হলো? কখনো কারো ক্ষতি করি নি তাহলে আমার মনে ক্ষত বিক্ষত করলো কেনো?
আবির আরেকটা সিগারেট খাচ্ছে সেটা আমার হাতে এনে মুখে দিলাম। সিগারেট একটা টান দিতে কাশতে কাশতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসলো।

“ইভা তুমি কি পাগল হলে, জানো না সিগারেট কতো ক্ষতিকর”
“আপনিও তো খান আপনার কিছু হয় না ”
“আমি আর তুমি এক না ”
“কষ্টগুলো কিছুটা এক ”

আবির আমার হাত ধরে রুমে এনে বললো,
“আমাদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে দুটি ফুল ”

আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি মা।সন্তানদের জন্য মায়েদের সব কষ্ট ভুলে থাকতে হয়। আমি আর কারো জন্য কষ্ট পাবো না, চোখের পানি মুছে রান্না ঘরে গিয়ে দুধ হালকা গরম করে ফিটারে ভরে রুমে আসতেই আবির আমাকে দেখে হাসছে।
“আপনি হাসছেন কেনো? ”
“রাত দুটো বাজে এখন ওদের জন্য দুধ গরম করে এনেছো কিন্তু ওরা তো ঘুমাচ্ছে ”
“ওদের ক্ষুধা লেগেছে মায়েরা জানে কখন সন্তানের ক্ষিধে পায় বুঝছেন এতে হাসি পাওয়ার কিছু হয় নি হুহ”
“তাই বুঝি, দেখি ওদের ক্ষুধা লেগেছে নাকি?

মিশ্মি -তিশ্মির মুখের ফিটার ধরতে ওরা দিব্যি দুধ খাচ্ছে। আবির ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি উনাকে বললাম,
” দেখলেন তো মায়েরা বুঝতে পারে কখন সন্তানের ক্ষিধে পায়”
“হুম, সাথে এটাও বুঝলাম যে তুমি অনেক ভালো ”
“আচ্ছা আপনি ঘুমান সকালে অফিসে যেতে হবে ”
“হুম”

বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়ে আমিও ঘুমালাম। রাতে প্রচন্ড গরম লেগেছে, অস্তিত্ব লাগছে তাই সকাল সকাল গোসল করেছি।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুঁচি ঠিক করি তখন আবির ফ্রেস হয়ে রুমে এসে আমাকে দেখা মাত্র গালে ঠাসসসস্ করে থাপ্পড় লাগিয়ে দিয়ে শাড়ির আঁচল ঘাড় ফেলে দিলো,,,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here