তবুও তোমায় ভালোবেসেছি পর্ব ৭

#তবুও_তোমায়_ভালোবেসেছি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৭
“আমার উপর স্বামীর অধিকার দেখাবে না এবং আমার রুমের কোনো কিছুতে আমার অনুমতি ছাড়া হাত দিবে না সেটা বিয়ের প্রথমদিন বলে দিয়েছি তাহলে কোন সাহসে এই শাড়ি পড়েছো? ”
“না মানে,,,, ”
“না মানে কি হ্যাঁ, তোমাকে বিয়ে করেছি আমার মেয়েদের মায়ের স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে বড় করতে। দামি শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে থাকার জন্য না ”
“আমার কথাটা শুনেন ”
“তোমার কি কথা শুনবো? ঐশীর সাথে আমার পাঁচ বছরের সম্পর্ক সেখানে তুমি এসে ওকে ভুলিয়ে দিতে পারবে না। আর কোনো দিন যেনো দেখি না ঐশীর শাড়ি, গহনা পড়তে ”
“আমি জানতাম না এটা ঐশী আপু শাড়ি ”
“জানো না মানে কি, মিথ্যে বলার জায়গায় পাও না?আলমারিতে আমার আর ঐশীর জামা কাপড় ছাড়া আর কারো জামা নেই ”
“সত্যি বলছি বিয়ের সময় যেকয়টা শাড়ি দিয়েছেন সেগুলো ওয়াড্রবের ভিতরে রেখেছি সেখান থেকে এই শাড়িটা নিয়েছি।আলমারি থেকে শাড়ি বের করি নি আমি ভেবেছি এটাও হয়তো আপনি দিয়েছেন। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে যাওয়া হয় নি তাই আমার কোনো জিনিস নিয়ে আসতে পারি নি নয়তো এই শাড়ি পরতে হতো না ”
“মায়ের থেকে শাড়ি নিতে পারো নি ”
“মা ঘুমাচ্ছিলো আর বৃষ্টিতে শাড়ি শুকায়নি ”
“যত্তসব ”

ঐশী আপুর শাড়ি পড়ে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, আমার জন্য উনি আজকে আবার কষ্ট পেলো।হয়তো বিশ্বাস করে নি যে আমি জেনে বুঝে শাড়ি পড়ি নি । ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে কখনো ভালোবাসা পেতে পারবো না। নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে রেখে মাকে কল দিলাম,

-হ্যালো মা।
-হ্যাঁ কি হয়েছে তোর?
-কিছু না, তুমি কাউকে দিয়ে আজকেই এখনি আমার সব জিনিস পাঠিয়ে দেও।
-আচ্ছা কিন্তু তোর কি হয়েছে, কন্ঠ কেমন জানো লাগছে?
-মা কিছু হয় নি, বাসার সবাই ভালো আছে?
-হ্যাঁ
-এখন রাখছি পরে কথা হবে।

মায়ের সাথে বেশি কথা বললে নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারতাম না। মা ঠিক বুঝে গেছে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমার চোখের পানি দেখে তিশ্মিও কেঁদে দিলো। ওর কান্না দেখে আমি চোখ মুছে কোলে নিলাম,
“আমার সোনা মা কাঁদে না, দেখো তোমার মা হাসছে। তুমি আমার ভালো মেয়ে তো হাসো ”

তিশ্মির সাথে কথা বলতে বলতে মিশ্মি ঘুম থেকে উঠে গেছে। বাচ্চাদের শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে দিয়ে দুধ গরম করে ওদের খাইয়ে দিতে দিতে মা আমার সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে।
ঐশী আপুর শাড়ি চেঞ্জ করে নিজের থ্রিপিস পড়ে নিয়েছি।
আবির সকালে না খেয়ে অফিসে চলে গেছে হয়তো সারাদিনে রাগ হয়ে কিছু খায় নি। আমার ভুলের জন্য উনি শাস্তি পাচ্ছে তাই আমি না খেয়ে আছি।
সারাদিন রুমে ভালো লাগছে না সন্ধ্যায় বাচ্চাদের নিয়ে মায়ের রুমে তার সাথে বসে গল্প করছি।

“মা ও মা, কোথায় তুমি?”
“সন্ধ্যা বেলে কি এ বাড়িতে ডাকাত পরেছে যে তুই চিল্লাপাল্লা শুরু করেছিস”
“বাসাটা পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেনো আর সবাই কোথায়? ”
“আমার রুমে আছে, চল ”

মায়ের রুমে আবির আমাকে দেখে বিছানার উপর অনেক গুলো শপিং ব্যাগ রেখে বললো,
“ব্যাগে কয়েকটা ড্রেস আছে, সেগুলো দেখে নেও চয়েজ হয় কি না নয়তো চেঞ্জ করে আনবো ”
“মা আপনার ছেলেকে বলে দেন আমার ড্রেস লাগবে না ”
“তোরা তোদের রুমে গিয়ে যতো ইচ্ছে ঝগড়া কর আমার রুম থেকে এখন যা “(মা)
” মা আমি আপনার কাছে ঘুমাবো ”

আমার কথাটা শুনে আবির বাচ্চাদের কোলে করে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো, ওমনি আমার মেয়েদের কান্না শুরু হলো।
শ্বাশুড়ি মা মুচকি হেসে শপিং ব্যাগগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
সকালে আমাকে রাগ দেখিয়ে থাপ্পড় পর্যন্ত মেরেছে তাই আমিও এখন একটু রাগ দেখাবো হুম।
শপিং ব্যাগগুলো বিছানার উপর ছুরে মেরে আবিরকে বললাম,
“দামি শাড়ি পড়ে সেজেগুজে বসে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। আমার অনুমতি ছাড়া আমার জন্য কোনো জিনিস কখনোও আনবেন না”
“আমার সাথে রেগে কথা বলবে না ”
“আপনার সাথে কথাই বলবো না তাহলে হবে তো ”
“বেশি বুঝবে না ”
“কথা বললেও দোষ আবার কথা না বললেও দোষ ”
“হ্যাঁ কথা না খাবার বাড়ো যাও ”

কথার উওর না রুমে বেড়িয়ে গিয়ে টেবিলে খাবার বেড়ে রেখে আবার রুমে চলে আসি।
একটু পর দেখি আবির রুমে এক প্লেট খাবার নিয়ে এসেছে।
“খেয়ে নেও ”
“খাবো না ”
“আমাকে দিয়ে বেশি কথা বলিও না”
“আপনাকে তো বলি নি আমার সাথে কথা বলতে ”
“বুঝেছি কথা বলে কথা হবে না ”

উনি এক হাত দিয়ে আমার গাল চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে মুখে খাবার দিলো।
“চুপচাপ খেয়ে নেও, কথা বললে সারারাত বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখবো ”

আমি কথা না বলে খেয়ে নিলাম। বিছানায় শুয়ে আছি তখন আবির বললো,
“সকালের খারাপ ব্যাবহারের জন্য সরি ”
“ঠিক আছে কিন্তু আপনার দেওয়া কোনো জিনিস আমি নিবো না ”
“কেনো কেনো? আমি সরি বললাম তো”
“যেদিন আপনি নিজে থেকে ভালোবেসে জিনিস দিবেন, আপনার উপর আমার অধিকার থাকবে সেদিন আপনার দেওয়া জিনিসগুলো নিবো ”

আবির আর কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আমার কথাগুলো হয়তো কখনোও সত্যি হবে না তাই কোনো উওর দিতে পারে নি।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here