#তাহারেই_পড়ে_মনে
পর্ব ৪
মিষ্টির মেজাজ সকাল সকালই খারাপ হয়ে আছে। মিঠির ফিডার সেদ্ধ করা হয়নি। চুলা বন্ধ। জাফরিন রান্না বসিয়ে চুলা বুক করে রেখেছে৷ মিষ্টি বারদুয়েক একটা চুলা খালি করে দিতে বলে ঝাঁড়ি খেয়েছে। জাফরিনের কেন জানি মিঠির প্রতি উদাসীনতা আছে, অবহেলাও’
‘ফিডার ভালো করে ডিশওয়াশ দিয়ে, ক্লিনিং ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। ওতেই চলবে, আজকে আর বয়েল করা পানিতে ডোবাতে হবে না। মিঠিকে নিয়ে এতো, বেশি লুতুপুতু করার দরকার নেই – বস্তিতে যেসব বাচ্চা থাকে তারা দাঁড়িয়ে থাকে না, নাকি মরে যায়?’ বস্তির বাচ্চার সাথে মিঠিকে তুলনা করায় মিষ্টির রাগ হয় জাফরিনের উপর। এক পাতিল পানি ফুটে ফিডার সেদ্ধ হতে কতটা সময় লাগে ও ভেবে পায় না! এত কষ্ট আর এত রাগ যখন হবে তখন মেহমান আপ্যায়নে এত আয়োজনেরই বা কী দরকার!
ও আর একটু সময় অপেক্ষা করবে ভাবলো, জাফরিনের রান্নাটা আরেকটু গুছিয়ে এলেই ফিডার সেদ্ধ করে ফেলবে। এখনো খিদেটা অত বেশি না মিঠির। ফিডিং টাইমের এখনো আধাঘন্টা বাকি আছে। ও মিঠিকে কোলে নিয়ে বাইরের লনে হাঁটতে গেলো। দেওয়ান মঞ্জিলের কুঞ্জলতা বেঁয়ে বেঁয়ে এপাশে চলে এসেছে, বরই গাছের ডালও একটা ডেইজি হাউসে এসে ফলভারে ভেঙে পড়ে পড়ে। পাখিরা প্রায়ই এপাশে কিচিরমিচির করে। এসব দেখিয়ে কিছুক্ষণ মিঠিকে ভুলিয়ে রাখা যায়।
বড় লোহার গেইটটা সবসময় খোলাই থাকে বারবার খুলতে আসা ঝামেলা আবার অনেকসময় কেউ গেইট নক করলে ঘরের ভেতর থেকে শব্দ পাওয়া যায় না, তাই এই বাইরের এই গেইটটা ওরা খোলাই রাখে।
মিনিট দুই হয়তো পার হয়েছে এমনসময় গেইট ঠেলে দেওয়ান মঞ্জিলের বড়মেয়ে লিপিকে ঢুকতে দেখা গেলো। ওর হাতে লোহার বঁটি একটা, উদ্ধতভাবে উঁচু করে রাখা যেন এখনই কোপ বসিয়ে দেবে কারও গলায়- আতঙ্কে, ভয়ে মিষ্টি জমে গেলো। লিপির রাঙা চোখের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো ‘আম্মু?’
বোনের চিৎকার শুনে মিঠিও জোরে কেঁদে দিলো আর সেই কান্নার শব্দেই যেন হুঁশে ফিরলো মিষ্টি আর দৌঁড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করলো। ততক্ষণে ওর চিৎকার শুনে জাফরিন, প্রিন্স, রাজুও বেরিয়ে এসেছে আর রণচণ্ডীরূপে লিপিও পেছন পেছন! চিতার তাড়া খেয়ে পালানো হরিণীর মতো অসহায় হয়ে মিষ্টি এসে পড়বি তো একেবারেই প্রিন্সের বুকেই এসে পড়লো আর সব ভুলে ওর সাথে মিশে গেলো। প্রিন্সের তখন প্রেয়সীর আলিঙ্গনে রোমাঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই, ও তড়িৎ প্রত্যুৎপন্ন বুদ্ধিতে ক্ষীপ্রগতিতে মিষ্টিকে আড়াল করে লিপির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রিন্স লিপির বঁটিধরা ডানহাতের কবজিতে ধরে মোচড় দিলেই ও বঁটি ছেড়ে দেয়। বটি ধরে ফেলে সেটাকে সাইডে রেখে প্রিন্স ওর হাত পিঠমোড়া করে ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে এসে ডাইনিং এর চেয়ারে বসিয়ে দেয়। ততক্ষণে লিপি একদম শান্ত নদীর রূপ নিয়েছে। মাথার এলোমেলো চুল আর কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম ছাড়া মূহুর্ত আগের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কিঞ্চিৎ আভাসও নেই ওর মুখ জুড়ে। বরং খিলখিল শব্দে উচ্চস্বরে হেসে সবাইকে আরও বিভ্রান্ত করে দিলো ও। কয়েকদিন ধরেই আড়ালে আবডালে ফিসফাস চলছিলো লিপির মানসিক ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারে। কেউ কেউ বলে পড়তে পড়তে পাগল হয়ে গেছে কেউ আবার অন্য গল্পও শোনায় – ওর পছন্দের ছেলের সাথে অভিভাবকরা বিয়ে দিতে না চাওয়ায় মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি ওর। সেই মাথা খারাপ যে এতোটা তা কেউ ভাবেইনি। প্রিন্স সামনে না থাকলে এতক্ষণে বঁটির কোপে মিষ্টি নইলে মিঠি কেউ একজন দুভাগ হয়ে যেতো!
জাফরিন পিরিচে করে দুটো মিষ্টি এনে লিপির সামনে দিলো। লিপি সাথে সাথেই তা ফিরিয়ে দিয়ে চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়ার মতো করে বললো ‘আমি দুটো মিষ্টি খাবো না, আমার তিনটে মিষ্টি চাই।’
প্রিন্সের ততক্ষণে লিপির প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেছে, এই পাগলটার জন্যই মিষ্টি ওর এতোকাছে এসেছিলো একটু আগে। ও জাফরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো ‘খালা, আমারও মিষ্টি চাই।’ আড়চোখে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে হেসেকেশে তাড়াতাড়ি কথা পাল্টে দিলো ‘এ যদি তিনটে মিষ্টি খায়, আমাকেও ছয়টা মিষ্টি দিতে হবে।’
‘তুমি কি আসলেই পাগল নাকি পাগলের নাটক করো? একটু আগে যা করতে গিয়েছিলে তা কী জেনে করেছো? কোপ কি আসলেই দিতে নাকী ভান করো?’ লিপির দিকে ঝুঁকে আসে প্রিন্স।
ওর প্রশ্নের জবাবে শুধু সুন্দর করে হাসে লিপি।
জাফরিন এদিকে বাবলুর মাকে তাড়াতাড়ি পাঠায় দেওয়ান মঞ্জিলে খবর দিতে, তাদের পাগল মেয়েকে যেন এসে নিয়ে যায়। বাবলুর মাকে চুপিচুপি দরজা দিয়ে বের হতে দেখে লিপি আবার হিংস্র হয়ে ওঠে। ‘মাত্র তেত্রিশ দিন পড়ে আমি ছয়টা লেটার পেয়েছি। কয়টা?’ মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আঙুল ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করলে মিষ্টি ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় ‘ছয়টা।’
‘তাহলে আমাকে ফাঁকি দেওয়া কি এতো সহজ? এই বেটি, আসো তুমি, কেউ কোথাও যাবে না। আমিও কোথাও যাবো না। না না না। নো। নো মানে না। না নেভার, বুঝেছো?’ এবার মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ছন্দে ছন্দে বলতে শুরু করে লিপি।
সবাই একদম টাইট হয়ে, নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকে – না জানি এই পাগল আসলেই কী করে বসে আবার! মিঠির ক্ষুধা পেয়ে গেছে, ও ছটফট করে বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকে। মিষ্টি খুব আস্তে করে দরজার দিকে যেতে থাকে, ঠিক এইসময়ে লিপি ভয়ংকর করে চিৎকার করে মিষ্টিকে ধরে ফেলে, ‘বলেছি না, কেউ কোথায় যাবে না। আমাকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ! মাত্র তেত্রিশ দিন পড়ে আমি ছয়টা লেটার পেয়েছি। কয়টা?’
এবারে মিঠির সাথে মিষ্টিও কেঁদে ফেলে ভয়ে। প্রিন্স আবার মিষ্টিকে আড়াল করে দাঁড়াতেই লিপি হুট করে সজোরে কামড়ে ধরে ওর বাহুর উপরের দিকে। জাফরিন এগিয়ে এসে লিপির চোয়াল জোরে টেনে ধরে মুক্ত করে প্রিন্সকে, রাজু লিপির দুইহাত ধরে পিঠের পেছনে নিয়ে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেছে। লিপি চেয়ারে বসে হাঁপাচ্ছে। অল্প সময়ের ব্যবধানেই রক্তারক্তি ব্যাপার। প্রিন্সের হাতে লিপির কামড়ে রীতিমতো রক্ত ঝরছে। ও তাড়াতাড়ি ডাইনিং সিঙ্কে গিয়ে কাঁধ ঝুঁকিয়ে রক্ত ধুয়ে ফেলে হাত চেপে ধরে রাখলো। কেউ বুঝতেই পারছে না কী করবে!
এদিকে লিপি আবার ভালোমানুষের মতো মুখ করে মিটিমিটি হাসছে। রাজু ওকে চেয়ারের সাথেও বেঁধে দিয়েছে, কখন, কী কারণে যে ভায়োলেন্ট হয়ে যাচ্ছে তার তাল পাওয়া মুশকিল। জাফরিন খানিকটা হলুদগুঁড়ো এনে প্রিন্সের ক্ষততে লাগিয়ে দিলো – যন্ত্রণায় চোখমুখ কুঁচকে রাখলো ও। বাবলুর মা গিয়ে তাড়াতাড়ি দেওয়ান মঞ্জিলে খবর দিলে লিলি আর পলি এসে গেলো লিপিকে নিতে। লিপিকে হাইডোজ স্লিপিং পিল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো। ও কখন উঠেছে, কীভাবে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে তা নিয়ে বারবার দুঃখ প্রকাশ করতে থাকলো। প্রিন্স রেগে ছিলো। রাগে গজগজ করতে করতে বললো ‘এসব পাগল ছাগলের ওষুধ হচ্ছে মাইর। মাইর ছাড়া কোনো ওষুধ নেই। ও পাগল না, ভং ধরেছে। ভালোমতো একটা আগামাথা বেতের ডলা দিলেই ও সোজা হয়ে যাবে।’
লিপি ওর দিকে তাকিয়ে উপর নিচে দুলিয়ে এপ্রিশিয়েট করার ভঙ্গিতে বলে উঠলো ‘রাইট। হি ইজ এবসলিউটলি রাইট। আই লাইক হিম, আ নাইস বয়! এই লিলি, আমাদের ফোন নাম্বারটা ওকে লিখে দেনা? তুমি আমাকে ফোন করবে বুঝেছো? অবশ্যই করবে! আমার তোমাকে খুবই পছন্দ হয়েছে। কই কেউ কাগজ কলম দাও। তাড়াতাড়ি।’ মিষ্টি চোখের পলকে একটা খাতা আর কলম এগিয়ে দিলো লিলির দিকে। লিপি সেটা কেড়ে নিয়ে নিজেই ওদের বাসার টিএন্ডটি নাম্বার লিখে দিলো ‘মেমোরি অনেক শার্প, বুঝেছো? মাত্র তেত্রিশ দিন পড়ে আমি ছয়টা লেটার পেয়েছিলাম। কয়টা?’
মিষ্টি তাড়াতাড়ি জবাব দিলো ‘ছয়টা।’
লিলি আর পলি সবার কাছে মাফ চাইতে চাইতে, কাঁদতে কাঁদতে বোনকে টেনে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময়ও লিপি প্রিন্সকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকলো ‘এই ছেলে তুমি অবশ্যই ফোন করবে আমাকে। প্রতিদিন তিনবার ফোন দেবে। তিন আমার খুব প্রিয়।’
সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। মিষ্টি খস করে খাতার পাতা ছিঁড়ে প্রিন্সের দিকে এগিয়ে দিয়ে হেসে কুটিকুটি হতে হতে বললো ‘প্রিন্স ভাইয়া, এই নাও তোমার নতুন গার্লফ্রেন্ড এর নাম্বার। অবশ্যই ফোন দিও। দিনে তিনবার!’
হাতের ব্যথায় কষ্ট পেতে পেতে প্রিন্স হেসে ফেললো। ওর মন ভালো হয়ে গেছে। মিষ্টি ওকে তুমি করে বলছে!
একটু হলেও নিজের পঁচা ইমেজের পরিবর্তন করা গেছে। রাজু গোপনে চিমটি কাটলো ওকে ‘ভাই, পাগলটাকে তো সত্যিই তোর দিনে তিনবারের বদলে ছয়বার ফোন দেওয়া দরকার।’
হাসতে থাকা মিষ্টিকে উদ্দেশ্য করে রাজু বললো ‘দেখোতো বুন্ডি, কুমিল্লার কোনো মেয়েকে আমাদের ভাই’র গলায় বেঁধে দেওয়া যায় কীনা!’
মিষ্টি জবাব দেওয়ার আগেই একটু আগের তুমি সম্বোধনে গলে যাওয়া প্রিন্স ফট করে বলে আসলো ‘অন্য কাউকে লাগবে কেন, তুইতো আছিস।’
মিষ্টির থমথমে মুখ দেখে রাজু কষে একটা লাথি মারলো প্রিন্সের পিঠ বরাবর। ‘এতো ইয়ার্কি করিস ভাই, ও ছোটমানুষ, বুঝবে এসব?’
এরকম ইয়ার্কির সাথে আসলেই পরিচিত না মিষ্টি। একটু ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো। ও যেতেই প্রিন্স লাথিটা ফিরতি দিলো রাজুকে ‘আমি আর কতদিন মনের কথা চেপে রাখবো রে?’
‘তাই বলে এভাবে বলবি? মেয়েটা আলাদা, আমাদের দেখা অন্য সব মেয়েদের মতো না। উল্টে যাবে একেবারেই দেখবি।’
‘জানিনা অতকিছু। আমার ওকে চাই, সেটুকুই ওর জানা দরকার। তারপরে আর উল্টানোর সুযোগ পাবে?’
‘কি জানি, আমার মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে।’
‘তাড়াহুড়ো ছাড়া আর কিছু তো করারও নেই এখন। তুই থাক আমি দেখে আসি আমার বিবিজান কই?’
‘বিবিজান?’ খিকখিক করে হাসিতে ফেটে পড়লো রাজু।
মিষ্টি এসে ওর পড়ার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দাতে দাঁড়িয়েছে। বারান্দার গ্রিল আর ওয়ালের সাথে সাপোর্ট দিয়ে মাচা বানানো হয়েছে। সেখানে দুটো দুর্বল স্বাস্থ্যের পুঁইশাকের ডগা উঁকি মেরে আছে। এই দুটো গাছই এইবাড়িতে মিষ্টিদের অবদান। ফেলে দেওয়া ডাঁটা থেকে পাতা লতিয়ে উঠলে দয়া করে ওরা একটা ডালপালা জড়োকরা মাচা বানিয়ে দিয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে মিষ্টি চিন্তার সাগরে ডুব দিয়েছে। এমন না যে ও কিছু বোঝে না। হয়তো পড়ার বই বাদে জাগতিক ব্যাপারগুলো একটু কমই বোঝে তবুও প্রিন্সের চোখের দৃষ্টি যে অন্যরকম কিছু তা ঠিকই ও পড়তে পারে কিন্তু একদম ঠিকঠাক জিনিসটা ধরতে পারে না। এইবয়সের মেয়েরা বান্ধবি বা বোন, ভাবিদের কল্যাণে প্রেম- কাম, মোহ জাতীয় বিষয়গুলোতে বিশেষভাবে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয় – এই মানুষগুলোর অভাবে এই জ্ঞানেরও সম্যক অভাব রয়েছে ওর জীবনে। প্রিন্সের চোখের তারায় আঁকা অব্যক্ত কথা বা মুখ ফসকে বলা বাক্যগুলো ওকে ভাবনায় ফেলে দেয়। এমন সময় প্রিন্স এসে কখন ওর পেছনে দাঁড়িয়েছে ও জানে না। প্রিন্স আস্তে করে ওর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে ‘চুল খুলে রাখতে নেই, পাগল। চুলের ঘ্রাণে নেশা হয়, জানিস মেয়ে!’
মিষ্টি চমকে উঠে সামনে তাকাতেই প্রিন্স মুখোমুখি একেবারে। ও চোখ নামিয়ে নেয়। প্রিন্স ওর গালে আস্তে করে হাত ছুঁইয়ে দেয়, মিষ্টি ঘটনার আকস্মিকতায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে গিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে। ‘শোন, ভালো ভালোই বলছি। ভালোবাসার কথা কিভাবে বলতে হয় আমি জানিনা, শিখিও নি। তোকে আমি ভালোবাসি। তুই আমার, এইকথাটা শুধু তোর মাথার ভিতর ঢুকিয়ে রাখ।’ অবাক তাকিয়ে থাকা মিষ্টির গালে আস্তে আঙুলের টোকা দেয় ও।
মিষ্টিকে হতভম্ব করে রেখে প্রিন্স চলে এলো। রাজুর কাছে ফিরে এসে ওরও আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। একটু আগে ও মিষ্টিকে কী কী বলে এলো তা ওর মাথায় নেই। মাথা ফাঁকা হয়ে আছে। কানের ভিতর বোঁ বোঁ শব্দ হচ্ছে। ও মনের কথা বলতে চেয়েছে অবশ্যই কিন্তু এভাবে নয়। মিষ্টি যখন একদম কাছেকাছি, মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো, মাত্র ইঞ্চিকয়েকের দূরত্ব মাঝখানে, ওর ভিতর তখন অন্য কেউ ভর করেছিলো। ও নিজে আর সামনে মিষ্টি, ওর প্রিয়া – এছাড়া ওর মাথায় আর কিছু ছিলো না। মিষ্টি কী করবে, কী ওর রিএকশন হবে এতোকিছু ভাবেও নি। এখন হাত পা কাঁপতে লাগলো, গলা শুকিয়ে যেতে লাগলো। মিষ্টি যদি হইচই লাগিয়ে দেয়, জাফরিন খালাকে, আর সবাইকে সব বলে দেয়, যদি ঝামেলা বাঁধায় কোনো! ওর প্রেমে মিষ্টি সাড়া দেবে কীনা সেই ভাবনার বদলে এখন এখানে কোনো অপমানের ভাগীদার হতে হবে কীনা সেই ভাবনায় ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো! ও রাজুকে উঠিয়ে একটানে জাফরিনের সামনে গিয়ে বললো ‘খালা, আর একমিনিট ও দাঁড়ানো যাবে না। আব্বার জরুরি একটা কাজ ফেলে এসেছি। আব্বা মেরেই ফেলবে। আমি গেলাম। পরে আবার আসবো।’
জাফরিনকে মাথাও নাড়ানোর সুযোগ না দিয়ে ওরা ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলো!
চলবে….