তুই আমার প্রতিশোধের মোহর পর্ব ১

–বাবা………..প্লিজ ছাড়ুন আমাকে দয়া করে বাবার কাছে যেতে দিন৷
আমি চিৎকার দিয়ে কাঁদছি আর বাবাকে ডাকছি কিন্তু সামনে থাকা লোকটি আমার চুলের মুঠি ধরে ছ্যাচড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে চোখের সামনে বাবার রক্তাক্ত নিথর শরীর টা পরে আছে।
আমি এতো আকুতি বিনতি করছি তার কাছে কিন্তু সে শুনছে না। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে সজোরে একটা গাড়ির মধ্যে ধাক্কা মারলো৷ আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে ছিটকে যেয়ে পরি৷ মাথায় অনেক বেশি আঘাত পায়৷ চোখ দুটো কেমন বুঝে আসতে লাগলো। অনুভব হচ্ছে রশি দিয়ে শক্ত করে আমার হাত পা আর মুখ বাধা হচ্ছে। বাধা শেষ হলে গাড়ি চলতে শুরু করলো,
মাথাটা এক কোনে ঠেকিয়ে আবছা অনুভবে চোখ দুটো বুঁজে নি।
আমি আফিফা জান্নাত (মেঘ)। জমিদার সম্রাট খানের এক মাত্র কন্যা৷ এখানে এখনো জমিদারি প্রথা চলিত আছে। আমার দাদ ছিলেন এখান থেকে শুরু করে আসে পাশে আরো ৭ গ্রামের জমিদার। কিন্তু আমার বাবা সেগুলো মুক্তি করেছেন। কিন্তু সরকার বলতে তারা বাবাকেই মান্য করেন। আমার মা তিনি মারা গেছেন আমার বয়স তখন ১০ বছর। তখন থেকে বাবা নিজের হাজার কাজ সামলে শুধু আমার পিছে সময় দিতেন। বাবা আমার এক মাত্র বন্ধু৷ বাবাকে আমি খুব ভালোবাসি৷ মা হারাবার কোন অভাব আমাকে বুঝতে দেন নি৷ তিনি চাইলে বিয়ে করতে পারতেন কিন্তু অন্য জমিদারিনি আসলে জদি অহংকারে তার মেয়েকে কষ্ট দেন তার জন্য কখনো দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা ভাবেন নি আমার বাবা।
আমি তার একমাত্র রাজকন্যা। আমি দিল্লিতে (Collegiat public central university) তে পড়াশুনা করি। আজ ২ দিন বাসায় আসছি৷ এখানে ১২ বছর পড়াশুনা করার পর বাবা হায়ার এডুকেশন এর জন্য ইন্ডিয়া পাঠায়। সব ভালো চলছিলো৷ আমি এই ২ মাস হলো ইন্ডিয়া ছিলাম কালকে এসেছি কারন বাবাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না৷
আজ সকালে হটাৎ ঘুমেট মধ্যে গুলির শব্দ শুনতে পেলাম৷ ভেবেছিলাম বাবা বোধহয় practice করছে। কিন্তু আমার ঘোর কাটে তখন যখন বাবা জোরে জোরে আমাকে বলছিলেন, আফিফা যেখানে আছিস পালা৷ বাবার এ কথা শুনে এক দৌড়ে নিচে আসি। এসে দেখি বাবা বুকের পাশে হাত দিয়ে মাটির পরে আছে রক্তাক্ত অবস্থায় সামনে ৬.২ ইঞ্চির একটা মাত্রতিক সুন্দর ছেলে হাতে রিভলবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে মুখে একটা ডেভিল হাসি দিয়ে। চারি পাশের সমস্ত দেহ রক্ষি মারা পরেছে আমাদের ৷ ছেলেটির পাশে কালো পোশাক পরিধন কৃত লেক গুলো রিভলবার হাতে দাড়িয়ে আছে৷
আমি দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বাবকে ডাকতে থাকি কিন্তু বাবা উঠেন নি। তার কিছু সময় পর লেকটি আমার চুল ধরে টেনে উঠায়৷ আর নিয়ে আসে,
.
হটাৎ মনে হলো গাড়িটা থেমে গেছে৷ আমি এখনো হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় পরে আছি। সেই লোকটি এসে আমাকে গাড়ি থেকে কোলে তুলে হাঁটতে শুরু করে। আমি হালকা চোখ মেলে দেখি এটা সাগর পাড়৷ আমরা একটা বড়ো জাহাজের মধ্যে উঠছি৷ ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে৷ কি হতে চলেছে আমার সাথে এরা কারা৷ আমি কিছু বুঝতে পারছি না৷ মাথার রগ গুলে টান টান অনুভব করছি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হলো।
লেকটি আমাকে ভেতরে এনে একটি কেবিনের মেঝেতে সজোরে ফেলে দেয়৷ এতে উঁচু থেকে হাত পা বাধা অবস্থায় পরে চোখ দুটো এমনি বুঝে এলো৷ এই বুঝি মৃত্যু হলো। ভালোই হবে বাবাও হয়তো না ফেরার দেশে চলে গেছেন তার সাথে দেখা হবে। বাবার মুখটা ভেষে আসছিলো আবছা করে। তখনি চোখ দুটো এক দম বুঁজে এলো। আর কিছু দেখতে পেলাম না৷
অন্ধকার সবকিছু।
.
চোখ খুলতে নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করলাম। অন্ধকারে আমার অনেক ভয় করে। আমি নড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম বুকের উপর কিছু একটা ভারি। কিন্তু হাত পা আমার বাধা৷ আমি আর একটু নড়ে উঠি তখনি বুঝতে পারি কেউ আমার বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে।
আমাকে নড়তে দেখে লোকটি উঠে বসে।
–কি হলো নড়ছিস কেন?
তার কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি৷
মুখটা বাধা কিছুই বলতে পারছি না।
লোকটি লাইট অন করলো আমি দেখতে পেলাম সেই লোকটা৷
–তোকে কিছু বলার সুযোগ দিলে মন্দ হয় না৷
বলেই আমার মুখের বাধন টা খুলে দিলেন,
আমি বলতে লাগলাম,
–আমাকে বাবার কাছে দিয়ে আসুন প্লিজ আমার বাবা কই৷ আপনি কে? কেন এমন করছেন কেন মারলেন আমার বাবাকে৷ (কাঁদতে কাঁদতে)
–হা হা হা
আমার কথায় লেকটি অট্ট হাসিতে মেতে উঠলেন।
–আমি কে জানতে চাস? আমি আহমেদ আমান খান। আজ থেকে তুই আমার কাছে বন্দি হলি। তোর বাবার করা প্রতিটা ভুলের মাসুল চুকাতে আজ তুই আমার কাছে। শুধু বাবার কেন বলছি তুই ও তো সামিল ছিলি। আমার সাথে আর আমার পরিবারের সাথে করা প্রতিটা ভুলের মাসুল তুই চুকাবি মেঘ।
তার মুখে মেঘ ডাক শুনে আমি আর এক দফা আবাক হলাম। আমাকে সবাই আফিফা বলে ডাকে মেঘ কেউ বলে না। আর এই মানুষ টা কে৷ কি বলছে এগুলা৷
–আমার জানা মতে আমার বাবা কখনো কারোর ক্ষতি করেন নি৷
আমার কথা শুনে উনি ঠাস করে আমার গালে ৫ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিলেন৷।
আমি এতোটা ব্যাথা পেয়েছি যে কিছু সময়ের জন্য গালের সেই অংশ অবশ হয়ে ছিলো৷
–নাটক অনেক নাটক জানিস তোরা এই নাটকের জন্য আজ আজ তুই এখানে এই তোর ভয় করে না এতো নাটক কি করে করিস তোরা৷
আমি কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না৷ নিজেকে গুটিয়ে এক জায়গায় বসে আছি।
উনি আমাকে ভয় পেতে দেখে বললেন,
–তোর চোখে এই ভয় তো দেখতে চেয়েছি । এই ভয় নিয়ে বাঁচতে শেখ৷ কারন আজ থেকে তোর জীবন জাহান্নাম বানিয়ে দিতে আমি এসেছি৷ আহমেদ আমান খান। তোর রেহায় নেই৷ নিজেকে এমন করে দেখতে শিখে নে৷ অন্ধকারকে বন্ধু বানা এখন যেমন আমি ৫ টা বছর বানিয়ে ছিলাম
আমান কথা গুলো বলে লাইট আফ করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে চলে যায়৷
এবার ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেছে রুমটা। ভয়ে আমার কান্নার শব্দ বার হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের মধ্যে কাঁদছি আমি৷ চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে বুকের মধ্যে। গালে অসহ্য যন্ত্রণা। মাথায় ও৷ হাত পা বাধা অবস্থায় পরে আছি৷বাবাকে অনেক মনে পরছে। বার বার বাবার সেই রক্তাক্ত শরীরের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসছে।
আজ বোধহয় পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মানুষ টা আমি৷
চলবে,
#অবাদ্ধ_যন্ত্রণা
#তুই_আমার_প্রতিশোধের_মোহর
#Megh_La

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here